অনুভবে তুমি পর্ব ২
লিজা মনি
সৌন্দর্য একটি গভীর অনির্বাচনীয় অনুভূতি। যা সংসারের সকল সীমাকে অতিক্রম করতে পারে।কখনো সেইটা বাহ্যিকভাবে বা অভ্যন্তরিন কিন্তু তার অবস্থান সংসারে নিবির। কিছুটা সৌন্দর্য এতটই মোহনীয় যে তার মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ সবকিছু ভুলে যায়। হিতাহিত ঙ্গান যেন মিলিয়ে যায় এক অদ্ভুত ঘোরের জগতে। আহান ইয়ানাকে দেখে চমকে উঠে। এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছে জীবন থমকে গেছে। সে একদৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইয়ানা ভিতু মেয়ের মত হাসফাস করছে।তা এতসময় ধরে কান্নার জন্য খেয়াল ছিল না সে কোথায় আছে। এখন নিজের অবস্থান অনুভব করতে পেরে হালকা ভয় পেয়ে যায়। আশেপাশের লোকেদের থেকে শুনেছে এই জায়গাটা ভালো না। ইয়ানা দেখে প্রায় শেষ বিকালের কাছাকাছি ভার্সিটি ছুটি হয় দুইটাই , এখন প্রায় অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। এখন বাড়িতে গিয়ে নিশ্চিত বকা খাবে। ইয়ানা তাড়াতাড়ি করে আহানকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। আহান এখনো ইয়ানার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। দেখতে দেখতে ইয়ানা আহানের দৃষ্টির সীমানা অতিক্রম করে। কিন্তু তার এদিকে কোন খেয়াল নেই। তার ধ্যান ভাঙ্গে রায়ানের ডাক শুনে,,,,
-“–এইখানে কি আজ রাত কাটাবি নাকি। মেয়েটা চলে গেছে এখনো ওইখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস।
আহান মনে মনে ভাবে,,,, তুই এখনো একটা মেয়ের ধ্যানে পড়ে আছিস ছেহ্। আহান চৌধুরির ভাবনায় কোনো মেয়ে নেই”
নিজেকে নিজে ধিক্কার জানিয়ে রায়ানের কাছে চলে যায় । রায়ান বাধ্য ছেলের মত গাড়ি স্টার্ট দেয়।
আর এইদিকে ইয়ানা বাড়িতে এসে ভয়ে ভয়ে কলিংবেলে চাপ দেয়।
রুয়ানা এসে দরজা খুলে দেয় একটু কপাল কুচকানো ভাব করে বলে,,,,
– কোথায় ছিলেএতক্ষণ? তোমার ভার্সিটিতো অনেক আগেই ছুটি হয়ে যায় তহলে এত দেরী হয়েছে কেনো?
আপাতত রুয়ানার এই নন স্টপ মার্কা বকবক কথাবার্তা কানে যাচ্ছে না।
সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,,,, আম্মু কোথায়?
রুয়ানাঃ আম্মু আলিয়াদের বাড়িতে গেছে কাকি মনি অসুস্থ।
ইয়ানা এবার বুকে হাত দিয়ে বলে,,, যাক বাবা বাঁচলাম।
সামনে থেকে সর ফ্রেস হবো । এই বলে ইয়ানা রুমে চলে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রুয়ানা : যাক বাবা ছোট বোন হয়ে একটা দায়িত্ব দেখালাম।, খোঁজখবর নিলাম একবার ধন্যবাদ দিয়ে গেলো না। থাক কোনো ব্যাপার না। রুয়ানা নিজেকে নিজেই সান্তনা দিয়ে ও ওর রুমে চলে যায়।
ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে গিয়ে বিছানায় বসে মোবাইল অন করে।
-হায় আল্লাহ চল্লিশটা মিস কল। আজ আমি শেষ। এক কাজ করি আলাদা আলাদা গালি শোনার চেয়ে একবারে গ্রুপ ফোন দিয়ে গালি শুনি। আজ তো আমার গালি খাওয়া দিবস। ইয়ানা কিছু করার নাই তোর। কষ্ট করে হজম করে নিস। এইসব ভাবতে ভাবতেই ইয়ানা ফ্রেন্ড গ্রুপে ফোন দেয়। ফোন দিতেই সবাই ফোন রিসিভ করে।
এতক্ষন ধরে যেন ইয়ানার ফোনের অপেক্ষায় ছিলো তারা। ফোন রিসিভ হতেই,,,,,
সুমাইয়া: শয়তান, বানর, বিড়াল, কুত্তা কই ছিলি এতক্ষণ। তুই জানিস তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা হয়রান।
আকাশ: এখন আন্টিকে ফোন দিতাম পরে দেখি তোর মিসকল । আচ্ছা বলতো যেখানেই যাস বলে গেলে সমস্যা কি ছিলো। আর ফোনই বা সুইচ অফ রাখছোস কেনো।
আয়াত: ও বলে যাবে কেনো বলে গেলে তো আর জামাইয়ের সাথে সময় কাটাতে পারবে না। তরে মনে চাইতেছে নর্দমায় গিয়ে চুবাইতাম শয়তান ছেরি।একবার বলে গেলে কি হতো।
আরোরা : আরে থাম সবাই রাগ দেখানোর সময় পরে ও পাওয়া যাবে। ইয়ানা বেবি বলতো কি হইছে। প্রিন্সিপালের সাথে দেখা করে কোথায় গিয়েছিলি? আর আমাদের জানিয়ে যসনি কেনো?
রুহান এইবার আরোরাকে ভেঙ্গিয়ে লে,,,,
– হে বেবি বলো।
ইয়ানা ঠোট উল্টে বলে,,,,কিভাবে বলব ফোন দিয়েছি পর থেকে তো গালি শুরু করেছিস তোরা।
আয়াত: ঢং না করে বল। না হলে মোবাইলের ভিতরে ডুইকা পিটানো শুরু করমু শইতান মাইয়া।
ইয়ানা বুঝতে পারে সবাই তার উপর ভীষন রেগে আছে বেশি কথা বলা ঠিক হবে না।
এইবার ইয়ানা একটা স্বস্থি ফেলে এক এক করে সব বলতে থাকে।
আকাশ : কিন্তু ওই ছবিগুলো তোললো কে?আর প্রিন্সিপাল স্যারকেই বা কে দিল? এতে কি লাভ হতে পারে।
রোহান : হয়তো রায়হানেই তুলেছে।
আয়াত : আরে না রায়হান হবে না যদি ইয়ানাকে ওর সবার সমনে খারাপ করার ইচ্ছেই থাকতো তাহলে সে অনেক আগেই করতে পারতো তার জন্য প্রিন্সিপালের প্রয়োজন হতো না ও নিজেই করতে পারতো।আমার মনে হয় না রায়হান ইয়ানার কোনো ক্ষতি করবে।
সুমাইয়া : আয়াত আমি যা ভাবছি তুই ও কি তাই ভাবছিস।
আয়াত : হুম। পেয়ে গেছি কে ছবিটা তুলেছে এখন শুধু সিউর হওয়া দরকার।
আকাশ : কে ? আর কার কথা বলছিস?
আয়াত : ইয়ানার বয়ফ্রেন্ড যে ছিলো তার এখনকার প্রেমিকা মৌ।
রুহান : what!
সুমাইয়া : হুম সে ইয়ানাকে সবসময় হিংসে করে পড়ালেখা থেকে শুরু করে সব কিছুই। এমনকি সায়মনের সাথে যে সম্পর্কে জড়িয়েছে তা হিংসা থেকেই। এখন তাদের সম্পর্কের অধপতন। বেচারা সৌন্দর্যের মোহে পরে মৌ এর কাছে গেয়েছিল তাই ইয়ানার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করছে। কিন্তু এখনো সে ইয়ানাকে পছন্দ করে। তাই মৌ ইয়ানাকে আগের থেকে আরো বেশি সহ্য করতে পারে না। এখন মৌ কোনোভাবে হয়ত রায়হান আর ইয়ানাকে দেখে নিয়েছিল তাই ছবি তুলে নিয়েছে আর প্রিন্সিপাল স্যারকে দিয়ে দেয়। ইয়ানাকে ছোট করার এত বড় একটা সুযোগ হাতছারা কিভাবে করবে বল।
রায়ান : এই মেয়েকে না আমার দেখেলেই মনে হয় কয়েকটা দেয়। কিন্তু মেয়ে বলে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে রাখি। গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে একটা।
তাদের এইসব কথার মাঝে ওর মায়ের ডাক পরে,,,,
– কিরে খাবার খায়ে যা।
ইয়ানা সকলের থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে যায় খাবার খেতে।
ইয়ানা : আম্মু কাকিমনির শরীর এখন কেমন?
আম্মু : হুম আগের চেয়ে একটু ভালো। তুই গিয়ে একটু দেখে আসিস।
ইয়ানা : ঠিক আছে ভার্সিটি যাওয়ার সময় দেখে যাব নে। এখন তারাতারি খাবার দাও খুদা লাগছে। ইয়ানা খাবার খেয়ে ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
কিন্তু ও যে কোনো একজনের ঘুম হারাম করে দিয়ে এসেছে সে কি তা যানে।
এইদিকে আহান বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে গেলে কিছুতেই সে ঘুমাতে পারছে না শুধু বার বার ইয়ানার ভীত কান্নামিশ্রিত মোখ খাণা ভেসে উঠছে। কজল কালো এই ডাগর ডাগর চোখে কি আছে। আমার চোখে কেনো বার বার এই মেয়েটার ভীত চেহারা ভেসে আসছে।আহান এইবার অস্ফূর্ত ভাষায় বলে উঠে ,,,,, আমার হৃদয়হরিনী। হঠাৎ করে ও ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে দুহাতে নিজের চুল আকড়ে ধরে।
” নো নো অগ্নি চৌধুরির ভাবনায় কোনো মেয়ে আসতে পারে না।এই নারী কেনো বার বার চোখের সামনে আসছে”
এইসব ভাবতে ভাবতে সে ও একসময় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়।
রাতের প্রহর শেষে সকালে সূর্য মামা উকি দেয়। কিন্তু এখনো ইয়ানা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এই শান্তির ঘুম ভাঙ্গে তার মায়ের রাগান্বিত হুংকারে ,
– ইনু আর এক মিনিট ও যদি দেরি করিস ঘুম থেকে উঠতে একটা মাইর ও কিন্তু নিচে পরবে না। সুমু কখন থেকে ফোন দিচ্ছে ভার্সিটি যেতে আর নবাবজাদির কোনো খেয়াল নেই।
মায়ের কথা শুনে ইয়ানা ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে দেখে আর মাত্র বিশ মিনিট আছে ভার্সিটি শুরু হবার ।
কয়েকদিন পর নবীন বরণ ভার্সিটিতে কোনো একটা সমস্যার কারণে নবীন বরণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সে তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। নিশ্চিত আজ সুমুর হাতের মাইর আছে। এ আর নতুন না মা আর সুমুর রাগের শিকার প্রতি দিন হতে হয়।
গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রোদে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সুমাইয়া। গরমে গেমে একা কার অবস্থা। ফর্সা মুখ খানায় রক্তিম আভা ধারণ করছে। বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু ইয়ানা এখনো আসার নাম গন্ধ নেই। কিছুক্ষণ পর দেখতে পাই ইয়ানা দৌড়ে তার দিকে আসছে।
সুমাইয়া নিজের মুখের কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলল,,,,,,
– আমি এই রোদের মধ্যে ৩০মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছি আর এখন তোর আসার সময় হলো।
– আচ্ছা সরি আর দেরি হবে না। তাড়াতাড়ি চল ক্লাসে যেতে হবে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।
সুমাইয়া : এইটা তোর প্রতিদিনের কথা এ আর নতুন না। এরপর থেকে যদি আসতে দেরি করিস তাহলে তোকে রেখে চলে যাবো।
ইয়ানা : আমার কিউট বেবি রাগ করিস না এরপর থেকে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো। তোরা জানিস তো ঘুমিয়ে গেলে কোনো রাজ্যের খবর থাকে না।
সুমাইয়া : হয়েছে আর তেল মারতে হবে না। তাড়াতাড়ি চল ক্লাসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইয়ানা : হুম চল।
তারা দুইজন ক্লাসে চলে যাই। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে শুরু হয় তাদের ননস্টপ মার্কা বকবকানি। তবে মৌকে কথা শোনাতে তারা ভুলেনি।
ভার্সিটি শেষে যে যার মত বাড়িতে চলে যায়। সুমাইয়া আর ইয়ানা বাড়ি যেহেতু একসাথে তারা সব সময় একসাথে যাওয়া আসা করে। ইয়ানা ভার্সিটি থেকে বের হতে নিবে এমন সময় বেখেয়ালিভাবে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে। পায়ে হালকা কিছুটা ব্যাথা পায়।
সে পায়ে হাত দিয়ে কান্না করতে করতে বলে,,
অনুভবে তুমি পর্ব ১
“কোন উগান্ডা থেকে পালিয়ে আসা খাম্বারে আমারে ধাক্কা মারছস । আমার পাটা মনে হয় গেলো। কত শখ ছিল জামাই এর সাথে রাতের বেলা হাইটা হাইটা চন্দ্র বিলাস করমু আর এই খাম্বা এসে আমার পা টা ভেঙ্গে দিলো । সে কান্না করতে করতে সুমাইয়ার দিকে তাকায় দেখে সে সামনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। সুমাইয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে ইয়ানাও সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায়…….
