অনুভবে তুমি পর্ব ৪২
লিজা মনি
আহান ইয়ানার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে পাজা কোলে নেয়। কিন্তু নিজের হাতে ঠান্ডা কিছু অনুভব করতে পেরে হাতটাকে নিজের চোখের সামনে আনে। হাতের দিকে তাকাতেই আহান থমকে গিয়েছে। মনে হচ্ছে কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। আবার ও হারিয়ে ফললে জীবনের একটা মহামুল্যবান অংশ। আহান হাতের দিকে তাকিয়ে অস্ফূর্ত ভাষায় বলে।,,,,,
“” র.. রক্ত।”
আহান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,,,,
“না এটা হতে পারে না। আমার বেড়ে উঠা অস্তিত্ব এইভাবে মুছে যেতে পারে না “”
ইয়ানার আর্তনাদ আহানের কানে আসতেই ইয়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে নিচে নেমে আসে। দাদুমনি আর আহিয়া আর সাজিদ চৌধুরি তখন ভিবানে বসে ছিলো।
আহান এইভাবে ইয়ানাকে আনতে দেখে দাদুমনি অধৈর্য গলায় বলে।,,,,
“” দাদুভাই কি হয়েছে ইয়ানার? কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ওকে? “”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু আহানের কোনো রেসপন্স নেই। সে আতঙ্কে ভিতর থেকে শেষ হয়ে গেছে। আহান দ্রুত ইয়ানাকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। বাড়িতে এক প্রকার হট্টগোল লেগে যায়। কিন্তু কেউ জানে না ইয়ানার কি হয়েছে। আহিয়া এক প্রকার কান্না শুরু করে দেয়। তারা কখনো আহানকে এতটা অধৈর্য হতে দেখেনি।
আহান গাড়ি স্ট্রাট দিতে গিয়ে ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,,
“” শেষ হয়ে যাক আমার সবকিছু তোমার যাতে কিছু না হয়। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না”
ইয়ানার চিৎকার আহানের ভিতরে তোলপার করে দিচ্ছে। সহ্য করতে পারছে না এই মেয়ের আর্তনাদ।
আহান ইয়ানাকে নিয়ে চলে যেতেই আহিয়া ইউভিকে ফোন দেয়। ইউভিকে ফোন দেওয়া সাথে সাথে রিসভ হয়ে যায়। মনে হচ্ছে ইউভি ফোনের কাছেই ছিলো।
আহিয়া —- হ.হ্যালো ইউভি ভাইয়া কোথায় তুমি?
ইউভি — আমি তো বাসায়। কেনো কি হয়েছে? তোর গলা এমন দেখাচ্ছে কেনো?
আহিয়া কান্না করতে করতে বলে,,,,
“” ভাইয়া বউমনির যেনো কি হয়েছে। দাদাভাইকে জিজ্ঞাসা করলে কোনো রেসপন্স করে নি। শুধু একটা কথায় বলছিলো কিছু হতে দিব না তোমার।ভাইয়া বউমনি কিছু একটা হয়েছে। এখন দাদাভাই ওকে কোথায় নিয়ে গেছে আমরা কিছু জানি না। তুমি একটু দেখো না””
ইউভি — ওকে কান্না করিস না আমি এক্ষনি বের হচ্ছি।
আহিয়া — হুম
ইউভি ফোন রেখে বাসার জামা পরেই বেরিয়ে পরে আহানের উদ্দ্যশ্যে। আহান, ইউভি আর রায়ানের কাছে গোপন ক্যামেরা রয়েছে। কখনো যদি বিপদ আসে যাতে একজন আরেকজনের লোকেশন ট্র্যাক করে তাকে সাহায্য করতে পারে। ইউভি সেই ক্যামেরার সাহায্যে আহানের গন্তব্য খুজার প্রয়াস চালচ্ছে। ইউভি ভেবে পায় না কি হতে পারে কিছু সময়ের মধ্যে। একটু আগে ওতো মেয়েটা কত প্রনবন্ত ছিলো।একদম সুস্থ ছিলো কি হয়ে গেলো কিছুক্ষনের মধ্যে।
আহান ইয়ানাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। কিন্তু রাত দশটার উপরে হয়ে যাওয়ায় তেমন কোনো ডক্টর নেই। আর যারা আছে তারা অন্য কাজে ব্যস্ত। আহান ইয়ানাকে পাজাকোলে নিয়ে হসপিটালে প্রবেশ করে। ইয়ানা নিভু নিভু চোখে আহানের পাগলামি দেখছে। কতটা উন্মাদ হয়ে পড়েছে ছেলেটা। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” চোখ একদম বন্ধ করবে না “”
আহান ডক্টরকে ডাক দিতেই একজন নার্স এসে বলে,,,,,
“” সরি স্যার এখন আমাদের হসপিটালে কোনো ডক্টর নেই। আর যারা আছে তারা রেস্ট নিচ্ছে।সিনিয়র ডক্টর অপরেশন শেষ করে মাত্র রেস্ট রুমে গিয়েছে। আপনি ওনাকে নিয়ে কেবিনে সিফ্ট করুন সময় আসলে ডক্টর গিয়ে চিকিৎসা করবে””
আহান রক্তচক্ষু তাকিয়ে বলে,,,,
“” আপনার স্যারকে গিয়ে বলুন তারাতারি আসতে যদি নিজের হসপিটাল বাঁচাতে চায়। “”
আহানের কথা শুনে নার্স বলে,,,
“” আরে আপনি দেখি থ্রেট দিচ্ছেন। বললাম না স্যার এখন রেস্ট নিচ্ছে। আপনি কেবিনে যান ওনি এসে চেকআপ করবে। “”
আহান রাগের বশে নিজের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে।সে আকস্মিক নার্সের কন্ঠনালি চেপে ধরে বলে,,,,
“” কি বলেছি শুনতে পাস নি। এখনি তোর স্যার কে নিয়ে আয়। অগ্নি চৌধুরির কথা অমান্য করার সাহস আসে কোথা থেকে মেয়ে। ভাগ্য ভালো তুই মেয়ে নাহলে এতক্ষনে রুহ আলাদা করে দিতাম “”
মেয়েটি অগ্নি চৌধুরি নাম শুনতেই ভয়ে কাপা শুরু করে। নিজের ব্যথা ভুলে গিয়ে আহানের কাছে ক্ষমা চাওয়া শুরু করে। ইয়ানা আহানের কর্মকান্ড দেখে মৃধু আওয়াজে বলে,,,,
“” আহান করছেন কি? প্লিজ ছাড়ুন। আপনি তো কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুলেন না তাহলে এখন এমন করছেন কেনো?”
ইয়ানার কথা কানে আসতেই আহান নার্সকে ছেরে দেয়। মেয়েটি যেনো নিজের জীবন ফিরে পায়। গলায় ধরে কাশতে কাশতে চলে যায় সিনিয়র ডক্টরকে আনতে।
দুই এক মিনিটির মধ্যে ডক্টর এসে ইয়ানাকে কেবিনে নিয়ে যায়।
আহান নিস্তব্ধ হয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। একটু পর ডক্টর এসে আহানের কাছে মাথা নিচু করে বলে।,,,,
“” সরি মি. চৌধুরি আপনার বাচ্চাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নি। হাই ডোজের এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে ওনাকে ফলে বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। যেহেতু বেবির ২৮ সপ্তাহ হয় নি তাই এটাকে আমরা মিসক্যারেজ হিসাবেই গন্য করি। “”
আহান ডক্টরের কথা শুনে নিজের চোখ বন্ধ করে নেই। অজান্তেই চোখ থেকে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পরে।
ইয়ানার কথা মাথায় আসতেই আহান ডক্টরকে বলে,,,,
“” বাচ্চা যেখানে ইচ্ছে যাক আগে বলুন আমার ওয়াইফ কেমন আছে? ওর কিছু হয় নিতো? ”
ডক্টর — শান্ত হন মি. চৌধুরি আহামরি তেমন কিছু হবে না। ভাগ্য ভালো ছিলো সঠিক সময় নিয়ে এসেছেন। দেরী হয়ে গেলে প্রচুর ব্লিডিং হতে পারত ফলে রোগীর বেঁচে থাকা আসঙ্খা জনক হয়ে পড়ত। কিন্ত আমি এইটা বুঝতে পারছি না এত হাই ডোজের এন্টিবায়োটিক ওনাকে সেবন করালো কে? রোগী নিশ্চয় জেনে শুনে করবে না।
এতক্ষনে ইউভি এসে হসপিটালে পৌছে যায়। ইউভি আহানকে দেখতে পেয়ে দ্রুত সে জায়গায় পৌছায়। আহানেকে এমন ভাবুক দেখে ডক্টরকে জিজ্ঞাসা করে,,,,
“” ডক্টর কি হয়েছে? ”
ডক্টর — আসলে মিসেস চৌধুরির বাচ্চা মিসক্যারেজ হয়ে গেছে।
ইউভি — হুয়াট! মিসক্যারেজ মানে? কিছুক্ষন আগে ও তো ঠিক ছিলো তাহলে?
ডক্টর কিছু বলতে যাবে তখন আহান বলে,,,,
“” ইউভি তুই ইয়ানার কাছে থাক আমি এক্ষনি আসছি। “”
ইউভি আহানের দিকে তাকাতেই ভড়কে যায়। চোখগুলো প্রচন্ড লাল হয়ে গেছে। কপালের রগগুলো ফুলে নীল আকার ধারন করেছে। ইউভি ভয়ে ঢুক গিলে বলে,,,,,
“” আহান শান্ত হ। সব আল্লাহর ইচ্ছা। ভুলভাল কিছু করিস না প্লিজ।
আহান কিছু না বলে সোজা চৌধুরি ভিলায় চলে যায়।
বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই আহিয়া প্রশ্ন করে,,,,
“” দাদাভাই কিছুতো বলো? কি হয়েছে খুব চিন্তা হচ্ছে”
আহান সবাইকে এড়িয়ে নিজের রুমের ভিতর গিয়ে ল্যাপটপ ওপেন করে। এইদিকে আহিয়া ইউভির সাহায্যে দাদুমনি আর সাজিদ চৌধুরিকে নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে চলে যায়। আহান ল্যাপটপ ওপেন করে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা শুরু করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। এখানে কিছু না পেলে ইয়ানাদের বাড়িতে যে সিসিটিভি আছে ওইখানে চেক করবে। আহান নিজের হাতে ইয়ানাকে খাইয়ে দেয়। এমনকি সময়মত ঔষধ সে নিজের হাতে দিত। আর আহানের রুমে কোনো হাই ডোজের এন্টিবায়োটিক নেই তাহলে ইয়ানা কোথা থেকে সেবন করবে। আহান কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করার পর একটা দৃশ্য দেখে চোখ আটকে যায়। ঝর্না ইয়ানার রুমে ইয়ানার সাথে কথা বলছে। ইয়ানার মুখটা খুবই বিরক্ত বুঝা যাচ্ছে। আহান কোনো কিছু না ভেবে ভিডিও পিছিয়ে দেয়। ব্যাস আহানের মাথায় রক্ত টগবগ করে ফুটতে থাকে। চোখ দুটি হিংস্র হায়েনার রুপ ধারন করে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ধ্বংস করে দিতে। হাতের কাছে ল্যাপটপ কে সজোরে আছার মারে। রাগে নিজের হাতটাকে দেয়ালে ঘুরি দিয়ে গর্জন করে বলে,,,,,
“” ঝর্না “”
DNC করানোর প্রায় অনেক্ষন পর ইয়ানা নিভু নিভু নেত্র মেলে তাকায়। ইয়ানা বিরবির করে বলতে থাকে আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা। ইয়ানার ঙ্গান ফিরেছে দেখে নার্স তারাতারি করে গিয়ে সবাইকে খবর দেয়। দাদুমনি আহিয়া আর ইউভি সবাই ইয়ানার রুমে প্রবেশ করে। আহিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,,,
“” বউ মনি তুমি ঠিক আছো তো? আমাদের কিছু চাই না তুমি ঠিক তাকলেই হবে। “”
ইয়ানা আহিয়ার কন্ঠস্বর পেয়ে পুরোপুরিভাবে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে। শুয়া থেকে উঠে নিজের পেটে হাত রেখে বলে,,,
“” আমার বাচ্চা। আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো?
দাদুমনি শাড়ির আচলে নিজের চোখের পানি মুছে বলে,,,,
“” সব আল্লাহর ইচ্ছে। দেওয়া – নেওয়ার মালিক মহান আল্লাহ। ওনি যা করেন সবার ভালোর জন্যই করেন “”
ইয়ানা — কি বলতে চাইছো তুমি ভালোভাবে বলো। এইসব বলছো কেনো তুমি?
ইয়ানা সবার কান্না দেখে বুঝে যায় কি হয়েছে। ইয়ানা পাগলের মতো বিরবির করে বলতে থাকে,,
“” না এটা হতে পারে না, এইটা হতে পারে না। আল্লাহ আমাকে এতটা নিষ্ঠুরতার পরিচয় করাতে পারে না। আমার বাচ্চার কিছু হতে পারে না””
ইয়ানার চিৎকার হসপিটাল এক হৃদয়বিধারক অবস্থার রুপ ধারন করেছে।
দাদুমনি — শান্ত হ। এইভাবে ভেঙ্গে পরলে হবে না। তুই অসুস্থ এউভাবে কান্না করলে তোর ক্ষতি হবে।
ইয়ানা কান্না করতে করতে বলে,,,,,
“” ও আমার সন্তান ছিলো দাদুমনি। দুনিয়ার আলো দেখতে না পেয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। কেনো করলো ও আমার সাথে এইরকম? ওকে দিয়ে আমি প্রথম মাতৃত্ব অনুভব করেছি।আমার জরায়ুতে বেড়ে উঠা প্রথম অস্তিত্ব ছিলো ও। আমার মমতাকে বিদায় জানিয়ে কেনো চলে গেলো দাদুমনি? কেনো? “”
ইয়ানা আর কান্না করতে পারছে না। ইয়ানার কান্না দেখে সবাই কান্না করে দেয়।
ইয়ানা দাদুমনির বুক থেকে মাথা তুলে বলে,,,,,,
“” দাদুমনি আহান কোথায়? ওনি আমাকে ভুল বুঝবে তাই না? ওনি আমার উপর রাগ করেছে তাইতো আসে নি। কিন্তু এতে আমার কি দোষ?
ইউভি — আহান তোমার উপর রাগ করে নি ইয়ানা। ও এখন ওই চলে আসবে। তোমার উপর রাগ করবে কেনো পগল মেয়ে। আসলে আহান একটু চিন্তিত তাই হইত আসে নি। কিন্তু ইয়ানা তুমি এন্টিবায়োটিক নিয়েছো কখনো ”
ইউভি নিজে ও জানে না আহান কোথায় গিয়েছে। কিন্তু আহানের অবয়ব দেখে বুঝতে পেরেছে নির্ঘাত কিছু হয়েছে।
এন্টিবায়োটিকের কথা শুনে ইয়ানা চমকে উঠে।
ইয়ানা — না ভাইয়া আমি এন্টিবায়োটিক নিতে যাব কেনো? প্রেগনেন্সিতে তো এন্টিবায়োটিক নেওয়া ঠিক না। কিন্তু আপনি এইটা কেনো বলছেন?
আহিয়া — আসলে বউমনি ডক্টর বলেছে হাই ডোজের এন্টিবায়োটিকের কারনে মিসক্যারেজ হয়েছে।
ইয়ানা আর ভাবতে পারছে না। ইয়ানা কান্না করতে করতে বলে,,,,,,
“” আমি এন্টিবায়োটিক নেই নি। আমি কেনো এইটা নিতে যাব?
প্রায় অনেক্ষন পর আহান ইয়ানার কেবিনে ডুকে। ইউভি আহানকে দেখে চমকে উঠে। কোথায় ছিলো ও এতক্ষন। আহান ইয়ানাকে এই অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যাওয়ার ব্যক্তি না। ইয়ানা এক দিকে পুরো দুনিয়া একদিকে ওইটা ইউভি খুব ভালো করে যানে। তাহলে কোথায় গিয়েছিলো? আহানের গায়ে এখন ও টি- শার্ট আর পেন্ট। আহানের অবস্থা দেখে ইউভি বুঝতে পেরেছে কিছু একটা হয়েছে।
আহানকে দেখে দাদুমনি বলে,,,,,,
“” কোথায় গিয়েছিলি তুই? ওকে সামলাতে পারছি না। কখন থেকে কান্না করে যাচ্ছে””
ইয়ানা আহানের আগমন টের পেয়ে মাথা তুলে তাকায়। ইয়ানার চোখ দেখে আহান রেগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। কিন্তু সেটা ইয়ানার জন্য নয় অন্য কারোর জন্য। আহান সামনে এগোতেই ইয়ানা আহানের বুকে হামলে পরে। ইয়ানা কান্না হাউমাউ করে কান্না করতে করতে বলে,,,,,,
“” আহান আমাদের বাচ্চা। ওরা বলছে ও নাকি আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে। তুমি ওদের বলো না আমাদের বেবির কিছু হয় নি। ও মারা যায় নি সে এখন ও আর গর্ভে বড় হচ্ছে। “”
আহান ইয়ানার কান্না দেখে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়। ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করে দিতে। আহান ইয়ানার মাথায় হাত রেখে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,,
“” ইয়ানা শান্ত হও। কিছু হয় নি তুমি ঠিক আছো এই অনেক। বাচ্চার যা খুশি হোক। লাগবে না আমার বাচ্চা তুমি থাকলেই হবে””
ইয়ানা অবাক হয়ে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে,,,,,
“” এইটা আপনি কি করে বলতে পারেন আহান। আপনার কি একটু ও খারাপ লাগছে না। হ্যা মানছি বাচ্চাটা আমি আপনার বিরুদ্ধে গিয়ে কনসিভ করেছি। কিন্তু ওতো আপনার অংশ ছিলো। এইভাবে কি করে গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলতে পারলেন বাচ্চা যা খুশি হোক””
আহানের কি বলা উচিত সত্তিই জানা নেই। এই মেয়ে আমার ভালোবাসা নিয়ে আঙ্গুল তুলছে। আহান জানে বাচ্চাটা তার জন্য কি ছিলো। কতটা খুশি ছিলো তার অনাগত বাচ্চা নিয়ে। কিন্ত আল্লাহ হয়ত চাই নি বাচ্চাটা না থাকুক। বাচ্চা হারিয়ে কি ওর কষ্ট হচ্ছে না। মাকে হারিয়ে সে লাস্ট চোখে পানি ফেলেছো আর আজ সে পুনরায় চোখের পানি ফেলেছে। আর এই মেয়ে বলছে সে বাচ্চাটাকে ভালোবাসত না। ভালোবাসা কি কান্না করে প্রকাশ করতে হয়। আহান ইয়ানার দিকে একবার তাকিয়ে সবার দিকে ইশারা করে বাহিরে যেতে। আহানের ইশারা পেয়ে সবাই এক এক করে বাহিরে চলে যায়। আহান এইবার ইয়ানার সামনে বসে বলে,,,,,,
“” তুমি আমার ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তুলছ ইয়ানা। তুমি নিজে ও জানো বাচ্চাটা আমার কতটা ইমোশন ছিলো।
ইয়ানা — তাহলে বললেন কেনো বাচ্চার যা খুশি হোক?
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” আমি এই কথা কেনো বলেছি একবার চিন্তা করে দেখ। আর কিছু খেতে হলে সেটা ভালোভাবে দেখে খেতে হয়। খাবার সময় যদি খাবারটা অন্যরকম লাগে তাহলে অনেকে সেটা পরখ করে কিন্তু তুমি সেটা ও করলে না আহাম্মক। “”
ইয়ানা আহানের কথা বুঝতে না পেরে বলে,,,,,
“” কি বলতে চাইছেন আপনি? “”
আহান নিজের কথা এড়িয়ে ইয়ানার গালে হাত রেখে বলে,,,,,
“” পেইন হচ্ছে কি বেশি। অতিরিক্ত কষ্ট হচ্ছে। একটু সহ্য করে নাও প্লিজ। যদি একজনের কষ্ট অন্যজনে ধারন করতে পারত তাহলে প্রমিস ইয়ানা এক চুল কষ্ট ও তোমাকে সহ্য করতে দিতাম না। সবটা নিজের হৃদয়ে ধারন করতাম। “””
আহান কথা বলতে বলতে খেয়াল করে ইয়ানার কোনো সারা শব্দ নেই। আহান আলতো করে ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে অতিরিক্ত কান্না আর টেনশনে ঙ্গান হারিয়েছে। আহান ইয়ানার এই অবস্থা দেখে হৃদয়টা হাহাকার করে উঠে। পুনরায় রাগে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে ফেলে। ইয়ানাকে বুকে রাখা অবস্থায় নিজের মোবাইল বের করে অহান ফোন দেয়।
আহান — আরিফ সব কিছু রেডি রাখিস আমি এক্ষনি আসছি। অগ্নি চৌধুরির এক একটা রুপ আর হিংস্রতা দেখবে।
সাথে সাথে আহানের মুখ অগ্নিবর্ণ ধারন করে।
এর মধ্যে ইয়ানার মিসক্যারেজের খবর সবার কাছে পৌছে যায়। আসাদ হোসেন সেলিনা হোসেন আর হল্লা পার্টি হসপিটালে হাজির। সবাই এক প্রকার কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। সেলিনা হোসেন ইয়ানার কাছে এসে বলে,,,,,
“” কিভাবে এমন হলো? তুই ঠিক আছিস তো মা?
কিন্তু ইয়ানা এখন ও ঙ্গান হারানো অবস্থায় শুয়ে আছে। সেলিনা হোসেন কান্না করতে করতে বলে,,,,
“” কি হয়েছে আমার মেয়ের কথা বলছে না কেনো”?
নার্স — অতিরিক্ত মানসিক চাপে রোগী ঙ্গান হারিয়েছে। ওনাকে একটু রেস্ট নিতে দিন। রক্তক্ষরনে ওনি অনেকটা দুর্বল।
আহান সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু আকস্মিক ইউভি সামনে এসে সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,,
” কি হয়েছে আর কোথায় গিয়েছিলি তুই? এখন আবার কোথায় যাচ্ছিস? দেখ আহান ভুলভাল কিছু করবি না “”
আহান — কে বলল তোকে ভুলভাল কিছু করব। চাপ নিস না ভুল কিছুই করব না।
এরপর আহান ইউভির মনে হাজারটা প্রশ্ন রেখেই বেরিয়ে পড়ে হসপিটাল থেকে।
উপরের দিকে বাধা অবস্থায় রয়েছে এক সুন্দরী যবতী। আর তার নিচে রয়েছে হাজার ও বিষধর সাপ বিচ্ছু। যা মেয়েটার দিকে বার বার ফনা তুলছে রক্ত চুসে খাওয়ার জন্য। মেয়েটার কপাল আর গলা দিয়ে অনবরত লোহিত রক্তকনিকা বের হচ্ছে। আর তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিংস্র অগ্নিমূর্তি ধারন করা এক যুবক। যে এই মুহূর্তে তলোয়ার নিয়ে এক এক করে তীর মেয়েটির দিকে ছুরে মারছে। মেয়েটি ভয়ে শিউরে উঠে। ভয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বলে।,,,,,,,
“” এইসব কি আহান? আমার সাথে এমন করছো কেনো? আর এইটা কেমন জায়গা দেখলেই গা গুলিয়ে আসছে। আমাকে এইভাবে বেধে রেখেছো কেনো? কত সাপ – বিচ্ছু এখানে। প্লিজ আমাকে এখান থেকে মুক্ত কর প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। মেয়েটা কথা বলা শেষ হতেই আহান হাতের মাঝে এক তীর ছুড়ে মারে। মেয়েটা ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে।
আহান রেগে মেয়েটির সামনে গিয়ে রাগে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,,,
“” অগ্নি চৌধুরিকে দেখেছিস মেয়ে কিন্তু তার হিংস্রতার সাথে পরিচিত হতে পারিস নি। কত বড় কলিজা হলে তার অস্তিত্ব কে ধ্বংস করার মত দুঃসাহস দেখাস।””
মেয়েটি অবাক হয়ে তাকায়। আহান এতকিছু জানল কিভাবে তখন তো ও রুমে ছিলো না।মেয়েটি ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,
“” কি,, কি করেছি আমি? তোমার অস্তিত্বকে শেষ করেছি মানে?
মেয়েটা কথা শেষ করতেই আহান হাতের ধারালো ছুড়ি দয়ে মেয়েটির এক হাতে কোপ বসায়। সাথে সাথে মেয়েটির দেহ থেকে হাত আলাদা হয়ে যায়। হাতের কাটা অংশ গিয়ে নিচে থাকা সাপ- বিচ্ছুর উপরে পরে। তারা হামলে পরে সেই হাতের দিকে আহার করার জন্য। মেয়েটির চিৎকারে মাটি পর্যন্ত কেঁপে উঠে।
আহান রেগে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,
“” অভিনয় করিস আমার সাথে বি*চ। কি ভেবেছিলি অগ্নি চৌধুরির অস্তিত্ব কে শেষ করে দিয়ে মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াবি। বাট আফসোস নিজেই সিংহের গুহায় ঝাপ দিয়েছিস। যে হাত দিয়ে তুই দুধে ঔষধ মিশিয়েছিলি দেখ সেই হাত তোর সাথে নেই।
অনুভবে তুমি পর্ব ৪১
তিলে তিলে মরবি তুই ঝর্না। মেয়ে ভেবে ভাবিস না ছেড়ে দিব। তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস এখন তোর কলিজা আমি ছিরে দেখব। আমার স্ত্রীর এক একটা আর্তনাদ আমি তোকে দ্বীগুন ফিরিয়ে দিব। আমার অনাগত বাচ্চা যে কষ্ট নিয়ে এই পৃথিবী ছেড়েছে তার চেয়ে হাজার গুন কষ্ট আমি তোকে দিব। কিন্তু এত বড় একটা কাজ তুই একা করিস নি আমি সিউর। তোর সাথে কেউ ছিলো যে তোকে এইটা করতে সাহায্য করেছে। সেটা ও আমি খুজে বের করব। নরকের চেয়ে ও নিকৃষ্ট মৃত্যু দিব আমি তোদের।