অনুভবে তুমি পর্ব ৪৩

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৩
লিজা মনি

সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে প্রতিটি মুহূর্ত। দেখতে দেখতে কেটে যায় এক মাস। এই এক মাসে অনেক কিছুর পরিবর্তন আসে। ইয়ানাকে হসপিটাল থেকে তিন দিনের মধ্যে রিলিজ করে দেয়। অবশ্য আহান ওই ইয়ানাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে।বাড়িতে নার্সের ব্যবস্থা করে দেয়। হসপিটালের পরিবেশে শুধু কান্না কাটি করত।আহান ভালোবেসে বা হাজার ধমক দিয়ে ও থামাতে পারত না। আহান ধমক দিলে আরো বেশি করে কান্না করে দিত। আর নার্স বলে দিয়েছে ইয়ানা এখন মানসিক ভাবে ডিস্ট্রাব।

নিজেকে নিজে সামলাতে প্রচুর সময় লাগবে। তাই ওকে ভালোভাবে দেখাশুনা করতে হবে। মানসিকভাবে শান্তি দিতে হাবে। আর এই কারনেই আহান ইয়ানাকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে আসলে অন্তত সবার সামনে থাকবে। ইয়ানা পুরোপুরিভাবে সুস্থ না হলে মুটামুটি সুস্থ। তবে মেয়েটা অনেক চুপচাপ হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বসে বসে কান্না করে আর আহান বাড়িতে আসলে আহানের ভয়ে কান্না বন্ধ করে দেয়। আহান ইয়ানার মুখ দেখেই বুঝতে পারে মেয়েটা কান্না করছিলো। ইদানিং মেয়েটাকে ধমক দিলে নিজের ওই কলিজা কেঁপে উঠে।আহান শুধু তপ্ত শ্বাস ফেলে ইয়ানার কাপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ঝর্না নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে এইটা প্রত্যেকটা নিউজে দেওয়া হয়েছে। ঝর্নার মা রেশব তারা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলো আহান ঝর্নাকে খুঁজার জন্য সাহায্য করছে।
এই এক মাসে ঘটে গেছে আর ও একটি ঘটনা। আহান যখন হসপিটালে নিজের পরিচয় দিয়েছিলো তখন কে জেনো লুকিয়ে ক্যামেরা বন্ধী করে ফেলে। এরপর এইটা সোশাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেয়। এরপর থেকে শুরু হয় এই নিয়ে তুমুল আলাপন। এখন সকল নিউজে শুধু এক প্রশ্ন

“” বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাজিদ চৌধুরির ছেলে আহান চৌধুরি আর মাফিয়া ডন অগ্নি চৌধুরি কি এক ব্যক্তি। সেই মাফিয়া ডন যার নাম শুনলে খারাপ লোকদের আত্না কেঁপে উঠে। যিনি এই পর্যন্ত নিজেকে আবৃত করে রেখেছেন। কখনো নিজের মুখ সোশাল মিডিয়ায় দেখান নি। তাহলে ওনিই কি চৌধুরি গ্রুপের মালিকের ছেলে আহান চৌধুরি । যদি তাই হয় তাহল ওনি নিজের পরিচয় গোপন কেনো রেখেছেন? দুই পরিচয় নিয়ে কেনো ধরা দিয়েছেন? এক দিকে একজন মাফিয়া যাকে সবাই যমের মত ভয় পায় আরেক দিকে একজন সফল ব্যবসায়ী। দুই পরিচয় নিয়ে ওনি কি ওনার কোনো সার্থ হাসিল করতে চেয়েছিলেন। নাকি মাফিয়া হয়ে ও মানুষের লোক দেখানো সেবা করে গেছেন। অনেক শিরোনামে উঠে এসেছে ওনি যাকে খুন করে তার অস্তিত্ব পর্যন্ত কেউ খুজে পায় না। ওনি নরক যন্ত্রনা দিয়ে ওনার সত্রুদের খুন করেন এই সংবাদ কি তাহলে সত্যি। অগ্নি চৌধুরি রাতের আধারে মানুষ খুন করেন আর দিনের আলোতে মানুষ সেবা । এইটা ওনার কেমন রুপ।””

এমন পসেটিভ নেগেটিভ নিউজে আহান রেগে নিজের হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে ফেলে। কার এত সাহস হলো এইসব নিউজ ছড়িয়েছে । ইউভি আর রায়ান আহানের পাশে থেকে চব্বিশ ঘন্টা বুঝিয়েছে। ইউভি রায়ান না থাকলে হয়ত তাদের খুঁজে এনে হলেও ইচ্ছে মত পিটাত। কিন্তু তার আগেই আহান শান্ত হয়ে যায়। ঠোঁটের কোনে দেখা যায় এক কূটিল হাসি । সংবাদ যখন উঠেছে তখন আরেকটু বাড়ানো যাক। আহান ও সব কিছু স্বীকার করে নেয় মিডিয়ার সামনে। কিন্ত চোখে ছিলো জলন্ত আগুনের শিখা।
আহান মিডিয়ার সামনে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

“” আমি আহান আর অগ্নি দুই পরিচয় পরিচিত । অগ্নি চৌধুরিকে সবাই ভয় পাই তাকে দেখলেই মাথা নিচু করে ফেলে। ফলে সে সাধারন মানুষের সাথে মিশতে পারে না। তাই অগ্নি চৌধুরি নিজের পরিচয় লুকিয়ে সাজিদ চৌধুরির ছেলে আহান চৌধুরি হয়ে সবার সাথে মিশে যায়। এতে লোকেদের সম্পর্কে সে জানতে পারে । কিন্ত অগ্নি চৌধুরি সেটা পারত না কারন অগ্নি চৌধুরির সামনে কথা বলার সাহস তাদের নেই। তবে সাজিদ চৌধুরির ছেলের সামনে সেই সাহস আছে “””
একজন সাংবাদিক ফের প্রশ্ন করে,,,,,
“” ঠিক আছে এই বিষয়ে আমারা ক্লিয়ার হলাম। কিন্ত স্যার এইটা কি সত্যি আপনি খুন করেন?
আহানের কানে কথাটি আসতেই রক্ত চক্ষু নজরে তার দিকে তাকায়। সাংবাদিক আহানের চোখ দেখে ভয়ে চুপসে যায়।
তবে আহান অবস্থা বুঝে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

“” প্রশ্নটা করার জন্য ধন্যবাদ । এই প্রশ্ন করার জন্য একদিন অগ্নি চৌধুরির রাজত্যে আপনাকে অথিতি আপ্যায়ন করা হবে। সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন করেছেন আপনি।
এরপর আহান সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,
“” আমি মনে হয় কোনো মানুষ খুন করি না। তবে যাদের শেষ করি ওরা মানুষ নয়।””
আহানের এই কথার মর্মার্থ অনেকে বুঝলে ও কেউ কিছু বলে নি। কারন তাদের অগ্নি চৌধুর মুখের উপর কথা বলার সাহস নেই।

আহান সবাইকে এক্সকিউজ মি বলে চলে আসে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই কাজটা কে করেছে আহান একটু হলে ও বুঝতে পেরেছে। সব কিছুর হিসাব নিবে সে। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা।
আহান গাড়ির কাছে পৌছাতেই রায়ান আর ইউভি পিছন পিছন যায়।
রায়ান — ভাই এত সুন্দর করে মিথ্যা কবে থেকে বলা শুরু করলি। কি সুন্দর করি বুঝালি সবাইকে নিজের পরিচয় লুকানোর ব্যাখ্যা। বাজ্ঞিস এখন ও কেউ জানে না আমি তোর বন্ধু নয়ত সবাই আমাকে এসে ও ধরত। গোয়ান্দা অফিসার হয়ে বন্ধুর ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য।
রায়ানের কথা শুনে আহান একটা বাকা হাসি দেয়।এরপর সবাইকে এড়িয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে।

আহান রুমে ডুকে দেখে ইয়ানা রুমে নেই। আহান কপাল কুচকে নেই কোথায় যেতে পারে এই সময়। কোনো কছু না ভেবে ওয়াশরুম আছে কি না কিন্তু ইয়ানা ওয়াশরুমে ও। নেই। তারপর আহান সোজা বারান্দায় চলে যায়। কিন্তু পুরো বারান্দা জুড়ে ও কেউ নেই। অজানা ভয় এসে বুকে ধ্বাক্কা লাগে। এমনি সারাদিনে মেজাজ বিঘরে আছে এখন ইয়ানাকে দেখতে না পেয়ে আহান আর ও দ্বীগুব মেজাজ হারায়। রাগে আহান নিজের শাহাদাত আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘেসতে থাকে। সামনে পেলে ঠাটিয়ে কয়েকট থাপ্পর দিবে বিয়াদপ মেয়ে। এই মেয়ে জানে না সারাদিনে অফিস শেষ করে বাড়িতে আসলে আমি এই মেয়েকে দেখতে না পারলে শান্তি পায় না। আহান রেগে বারান্দা থেকে রুমে ডুকে। রুম থেকে বের হতে যাবে ঠিক তখন ওই পর্দা ঠেলে বের হয় এক রমনী। আহান শুধু হা করে তাকিয়ে আছে। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। এই মেয়ের কাছে কি অগ্নি চৌধুরিকে ধ্বংস করার সব অস্ত্র থাকে। আহান শুধু বড় বড় শ্বাস টানছে। ইয়ানা হাতা কাটা, হাটু পর্যন্ত লাল রঙ্গের একটা শর্ট ড্রেস পরেছে। নিজে এই ড্রেস পড়ে নিজেই বিব্রত হয়ে পড়ে আহানের সামনে গিয়ে। আহান নেশালো চোখে এক পা এক পা করে এগোতে থাকে। ইয়ানা নিজের পড়নের জামাকে নিচের দিকে টানছে।
ইয়ানার কাছে যেতেই আহান বাস্তবে ফিরে আসে। ইয়ানা এখন ও অসুস্থ। বড় একটা শ্বাস টেনে অন্যদিকে ঘুরে যায়।
অন্যদিকে ঘুরে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,,

“” এইসব ড্রেস কে পড়তে বলেছে তোমাকে? বিশ্রি লাগছে ইয়ানা চেঞ্জ করে আসো””
আহানের কথাটা ইয়ানার ইগুতে লাগল। সে দুই ঘন্টা ধরে সেজেছে আর এখন এই লোক তাকে বিশ্রি বলছে।এতটা অপছন্দ হয়ে পড়েছে ও।
ইয়ানা অভিমানী কন্ঠে বলে,,,,,,
“” হ্যা এখন তো বিশ্রি লাগবেই। আজ যখন মিডিয়ার সামনে গিয়েছিলেন তখন তো আপনার চারপাশে এর চেয়ে ছোট ড্রেস পড়া মেয়ে ছিলো। যারা আপনাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো। তখন খুব মজা লাগছিলো তাই না। তাদের খুব সুন্দর লেগেছিলো । কয়েকদিন অসুস্থ ছিলাম আর ওমনি আমি বিশ্রি হয়ে গেছি বাহহহ।”
আহান হা করে তাকিয়ে আছে। ও বিশ্রি বলতে কোনটাকে বুঝিয়েছে। আর এই মেয়ে কি বুঝল। তবে ইয়ানা কেনো আজ এইসব ড্রেস পড়েছে আহান এতক্ষনে বুঝতে পেরেছে। মহারানীর হিংসে হচ্ছিলো খুব। তাই তো বলি যেই মেয়ে সারাদিন ঘোমটা টেনে রাখে ধমক দিয়ে ঘোমটা নামাতে হয়ে সে আবার কীভাবে এইসব ড্রেস পড়বে। আহান ভেবেই একটা তৃপ্তির হাসি দেয়।আহান ইয়ানার সামনে এসে বলে,,,,,,

“” এতটা অভীমান কেনো কর তুমি। আজ যদি কিছু অঘটন ঘটে যায় তখন কি করবে তুমি ইয়ানা। আমি কন্ট্রোললেস হয়ে পড়লে আমাকে সামলানো যে খুব কঠিন।তুমি অসুস্থ ইয়ানা তাই আমি কোনো ভুল করতে চাই না। আমার এক জোড়া চোখের দৃ্ষ্টি সব সময় তোমার অস্তিত্বে নিবদ্ধ থাকে। আমার পাশে যদি বিশ্ব সুন্দরী ও এসে দাঁড়িয়ে থাকে আমার কিছু যায় আসে না। কারন আমার চোখে তোমার চেয়ে সুন্দর তো কেউ নেই আমার অনুভবের সেহজাদী। তোমার রুপে এই তো ঝলসে যায় আমি বার বার। কিন্তু আজ যেটা করেছো এতে নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ড্রেস পালটে নিজের রানিং জামা পড়ে আসো। তোমার এই নতুন রুপে আমাকে পাগল না করলে ও পারতে ।

এই বলে আহান রুম ত্যাগ করে বারান্দায় চলে যায়। আহান বারান্দায় গিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস টানছে। এই মেয়ে আমাকে শেষ করে দিবে , ওহহ শিট। আহান হাতে একটা সিগারেট ধরায়। ইয়ানা ওই দিন না করার পর থেকে আহান আর সিগারেট ছোঁয়ে ও দেখে নি। কিন্তু আজ নিজেকে সামলাতে না পেরে বাধ্য হয়ে নিকোটিনের ধোঁয়া উড়াতে থাকে।
এইদিকে ইয়ানা আহানের কথা শুনে লজ্জায় নতজানু হয়ে আছে। ইসস কি লজ্জাজনক ব্যাপার। ইয়ানা আয়নার সামনে গিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে বিকৃতি করে বলে,,,,
“” ছিহহ ইয়ানা আবেগের ঠেলায় এইসব কি ছাইপাশ পড়েছিস। ওয়াক ওয়াক কি বিশ্রি লাগছে তোকে। আহান তো ভুল কিছু বলে নি।
ইয়ানা তাড়াতাড়ি করে গিয়ে নিজের ড্রেস পালটে নেয়।

সুমু বিছানায় বসে বার বার ঘড়ির দিকে আরেকবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছিলো। অনেক্ষন পর দরজা ঠেলে রায়ান রুমে প্রবেশ করে। সুমু প্রতিবারের মত বিছানা থেকে উঠে গিয়ে রায়ানের হাতে থাকা ব্যাগটা নিয়ে টেবিলের উপর রাখে। এরপর গলায় থাকা টাইটা খুলে আলমারিতে রেখে দেয়। এইসব কাজ রায়ান সুমুকে দিয়েছে। রায়ান খেয়াল করল সুমুর মুখে আজ প্রতিদিনকার সেই মুচকি হাসিটা নেই। সুমু সব কাজ শেষে টাওয়াল আনার জন্য যেতে নিবে তখন রায়ান সুমিইকে হেচকা টানে নিজের সামনে এনে দাড় করায়। হঠাৎ আক্রমনে সুমু ভড়কে যায়। রায়ান সুমুর চিবুক ধরে বলে,,,,,,

“” আজ মিসেস রায়ানের মুখে অমাবশ্যা ঘিরে ধরেছে কেনো হুম? কি হয়েছে মন খারাপ কেনো বলো আমায়।””
সুমু রায়ানের স্পর্শে কেঁপে উঠে। তারপর নিজেকে সংযত করে বলে,,,,,,
“” কই দেখলেন মন খারাপ? আমি তো দিব্বি ঠিক আছি। “”
রায়ান — ঠিক নেই আমি জানি কি হয়েছে তাড়াতড়ি বলো।
সুমু — আ. আসলে ইয়ানার কথা মনে হচ্ছিলো। ওইদিন হসপিটালে দেখে আসার পর তো আর দেখা করতে পারি নি। আপনি ও ব্যাস্ত থাকেন তাই।
রায়ান — দেখা করতে চাও ইয়ানার সাথে।
সুমু মিহি কন্ঠে বলে,,,,,

“” হুম। মন থেকে ও খুব ভেঙ্গে পড়েছে রায়ান। যে নিজের সন্তান হারিয়েছে সে বুঝে সন্তান হারানোর বেদনা কি। ওর সাথে কথা বললে প্রতিবার ওই কান্না শব্দ শুনতে পায়। “”
রায়ান — ওকে কাল বা পরশু নিয়ে যাব অফিস থেকে এসে। আজ কথা হয়েছিলো ইয়ানার সাথে?আমি ও কাজের চাপে খবর নিতে পারি না।আহানকে জিজ্ঞাসা করলে জীবনে ও উত্তর পাব না। আর ইয়ানাকে একান্তভাবে মোবাইলে ফোন দিলে আহান খুন করে ফেলবে। যতই ইয়ানা আমাকে ভাই আর আমি ওকে বোনের মত দেখি না কেনো সাইকোটা জীবনে ও বুঝবে না।
সুমু — হুম কথা হয়েছিলো। আহান ভাইয়া ইয়ানাকে নিয়ে খুব পসেসিভ তাই।
রায়ান — হুম। কি কথা বলেছো?
সুমু লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে,,,,
“” বলতে পারব না””
রায়ান কপাল কুচকে বলে,,,,
“” আজব এইভাবে লজ্জা পাচ্ছ কেনো? “”

রায়ানের কথা সুমু আর ও লজ্জা পায়। রায়ান সুমুর এই লজ্জা মাখা মুখ দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়। রায়ানের ইচ্ছে করছে সুমুকে আর ও লজ্জায় ফেলতে তাই ফের প্রশ্ন করে,,,,
“” সত্যি করে বলো সুমু কি বলেছো? তুমি দিন দিন এমন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছ কেনো শুনি?””
সুমু তাজ্জব বনে গেলো। ও নির্লজ্জ হয়েছে মানে আরে ও বলেছে টা কি। সুমু কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,
“” কি বললেন আমি নির্লজ্জ? এখানে নির্লজ্জতার কি আছে শুনি। ইয়ানা আমাকে আহান ভাইয়ার আজকের স্বীকার উক্তির লাইভ দিয়ে বলছে,, আহান ভাইয়া নাকি তাকে ভুলে গেছে।আগের মতো আর ভালোবাসে না। ছোট ড্রেস পড়া মেয়েদের সাথে উঠে বসা করছে। পরে আমি হলেছি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হয়।তুই নিজে ও ছোট ড্রেস পড়ে আহান ভাইয়াকে আজ চমকে দে। দেখবি আহান ভাইয়া তোর থেকে চোখ সরাতে পারবে না। এত ভালোবাসা দিবে যে… সুমু হঠাৎ করে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। রেগে গিয়ে ও তো সব বলে দিচ্ছিলো। আল্লাহ সুমু একটু তো নিজের ইজ্জতটা বাঁচিয়ে রাখ।
রায়ান সুমুর কথা শুনে হেসে উঠে। এরপর নিজের হাসি থামিয়ে বলে,,,,,

“” আচ্ছা শর্ট ড্রেস পড়লে বুঝি স্বামীরা ইম্প্রেসড হয়। তাহলে আমি কেনো এই নিয়ম থেকে বঞ্চিত থাকব শুনি। এখন তুমিও আমাকে ইম্প্রেসড করবা। “”
সুমু রায়ানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকায়।ও পড়বে এইসব ড্রেস ইম্পসিবল।
সুমু — আব.. আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি খেয়ে নিন ঘুমাতে হবে।
রায়ান সুমুকে নার্ভাস হতে দেখে আর কিছু বলে না।

রাতের অন্ধকার শেষে সকালের সূর্য দেখা দেয়। আজ আহান অফিসে দেরীতে যাবে তাই অফিসের কিছু প্রজেক্ট দেখছিলো ল্যাপ্ট্যাপে।
ইয়ানা আহানের সামনে দিয়ে হাটাচলা করছে। আহান দেখে ও না দেখার মত করে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। আহান একটু পর ল্যাপটপ রেখে কার্বাডের কাছে গেলে ইয়ানা ও পিছু পিছু যায়। আহান কার্বাড থেকে বিছানার দিকে আসলে ইয়ানাও বিছানার কাছে যায়। আহান ইয়ানার কর্মকান্ড দেখে ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
“” কি চাই? ”
ইয়ানা কিছু বলে না শুধু দাঁড়িয়ে থাকে। আহান ও কিছু বলে না। আহান একটু সামনে এগোতেই ইয়ানা আবার পিছু পিছু যায়। আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

“” আরে বাবা বলবে তো কি হয়েছে। এইভাবে আমার পিছন পিছন হাঁটছ কেনো? “”
ইয়ানা আবার ও মাথা নিচু করে ফেলে।আহান ইয়ানার এই নিশ্চুপ থাকা দেখে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” বলবে নাকি থাপ্পর খাবে বিয়াদপ। কথা বলছো না কেনো? জিজ্ঞাসা করলেই মাথা নিচু করে ফেলো। না বললে বুঝব কিভাবে আমি। ”
ইয়ানা আহানের ধমকে সামান্য কেঁপে উঠে। এই বেডার ধমক নামক রোগ কখনো যাবে না। এইটা ইয়ানা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। কথায় কথায় ধমক দেওয়া এইটা ওনার স্বভাব।

ইয়ানা — আ. আসলে আমি বাড়িতে যেতে চাচ্ছি।
আহান —এখন কি গাছতলায় আছো?
ইয়ানা — আরে আমি আমার বাপের বাড়ির কথা বলছি।
আহান—- সুস্থ হও আগে।
ইয়ানা—- এক মাস হয়ে গিয়েছে। আমি তো এখন পুরোপুরি হাটতে পারি। একদম সুস্থ তাহলে বার বার কেনো বলেন আগে সুস্থ হয়ে নাও।
আহান –; তাই নাকি তুমি সুস্থ। তাহলে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পরে যাও কেনো? রাত হলে এইভাবে কান্নাকাটি কর কেনো শুনি।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। ইয়ানা জানে একবার যেহেতু আহান বলেছে সুস্থ হয়ে নাও তাহলে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া আগে নিয়ে যাবে না।তাই অযথা তর্ক করে লাভ নেই।
আহানের মোবাইলে ফোন আসায় আহান ইয়ানার সামনে থেকে সরে গিয়ে মোবাইল নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

আহান — হ্যা মি. ঘোস বলুন।
মি, ঘোস—- মি, চৌধুরি আমরা ঝর্নাকে কিছুতেই খুজে পাচ্ছি না। আমার মনে হচ্ছে মেয়েটা পালিয়েছে নাহলে এতক্ষনে পেয়ে যাওয়ার কথা। আপনি যদি আর একটু
সাহায্য করতেন তাহলে ভালো হত।
আহান একটা বাকা হাসি দেয়। এরপর ঘোসের উদ্দেশ্যে বলে,,,,,
“” পুলিশ আপনি আমি নয়। একজন মাফিয়ার কাছে এসে সাহায্য চাচ্ছেন বিষয়টা ভালো দেখায় না। ভালোভাবে তদন্ত করে দেখুন কোথায় আছে। হয়ত কারোর দয়ায় এখন ও বেঁচে আছে কঠিন মৃত্যুর সম্মুখীন করাবে বলে। আবার হতে পারি আপনার কথায় সঠিক হয়ত পালিয়েছে। তদন্ত করুন আর না হলে এই তদন্ত ক্লোজ করুন””
আহান অনেক্ষন কথা বলে রুমে এসে ইয়ানার উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৪২

“” কাল একটা সার্প্রাইজ আছে সন্ধ্যায় প্রস্তুতি নিয় থেকো। আর নিজেকে মানুষিকভাবে ঠিক করে নিও। অগ্নি চৌধুরির বউ হয়েছো সাহসীতো হতেই হবে তোমাকে মিসেস অগ্নি চৌধুরি। “”
ইয়ানা আহানের কোথার অর্থ বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকে। আহান ইয়ানার ঠোঁটে আলতু চুমু খেয়ে বলে,,,,
“” এতকিছু ভাবতে হবে না। শুধু মনে রেখো সন্ধ্যায় একটা সারপ্রাইজ আছে।

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৪