অনুভবে তুমি পর্ব ৪৪

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৪
লিজা মনি

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা চলে আসে। আকাশে লাল আভা দেখা যাচ্ছে এই বুঝি অন্ধকার নেমে আসবে। মাগরিবের আজানের শব্দ শুনে ইয়ানা পড়ার টেবিল থেকে উঠে পড়ে। এতদিনের অসুস্থতায় আহান ইয়ানাকে ভার্সিটিতে যেতে দেই নি। ইয়ানা নামাজ পড়া শেষ করে বাহিরে যেতে নিবে তখন মনে পড়লো আহান বলেছিলো রেডি হয়ে থাকতে। ইয়ানার ও বাহিরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। এই এক মাস সে বাড়ির বাহিরে ও পা রাখে নি। সারাদিন রুমের ভিতর মনমরা হয়ে বসে থাকত। ইয়ানা কাবার্ড থেকে সুন্দর দেখে একটা থ্রিপিস বের করে পড়ে নেয়। এরপর প্রত্যেকবারের মত মাথায় হিজাব আর চোখের নিচে গাঢ় কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপ বাম। ইয়ানা তৈরি হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর ও যখন আহান আসছে না তখন ইয়ানা আহানকে ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল হাতে নেই। ইয়ানা ফোন দিতে যাবে ঠিক তখন ওই আহান রুমে ডুকে।
আহান ইয়ানার দিকে না তাকিয়েই বলে,,,,,

“” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও সারপ্রাইজ আছে।””
ইয়ানা আহানের দিকে তাকায় দেখে লোকটাকে আজ খুব অগোছালো লাগছে। সবসময় পরিপাটি থাকা লোকটা আজ এমন অগোছালো কেনো?
আহান ইয়ানার কোনো রেসপন্স না পেয়ে তাকাতে তাকাতে বলে,,,,
“” কি হলো বসে আছো কেনো? যাও রেডি হয়ে আসো।””
আহান ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় ইয়ানা রেডি হয়ে বসে আছে।
আহান — ওহহ তৈরি হয়ে গেছো। তাহলে তাড়াতাড়ি চলো।
ইয়ানা আহানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আপনাকে আজ এমন লাগছে কেনো? কিছু কি হয়েছে?”
আহান রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” গেলেই দেখতে পারবে ”
ইয়ানার কাছে আজকে আহানকে অন্যরকম লাগছে। একদম অন্যরকম যার চোখ ছিলো লাল কিন্তু মুখমন্ডল ছিলো একদম শান্ত। ইয়ানার মনে প্রশ্ন জাগলে ও আহানকে আর কিছু বলে না। ইয়ানা আহানের পিছু পিছু রুম থেকে বের হয়ে পড়ে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহানের কালো গাড়িটি দেখতে দেখতে জঙ্গলের ভিতরে প্রবেশ করে। এই রাতের অন্ধকারে চারপাশের নিস্তব্দতা আর শুকনো পাতার মচমচ শব্দে ইয়ানা ভয় পেয়ে আহানের হাত খামচে ধরে। আহানের ঠোঁটের কোনে লেগে আছে রহস্যময় হাসি। ইয়ানা আহানকে বার বার প্রশ্ন করছে কোথায় যাচ্ছি কিন্তু আহান প্রত্যেকবার
মৌনতা পালন করেছে। ইয়ানার কাছে আহানকে ও কেমন জানি লাগছে তাই সে নিজের চোখ বন্ধ করে নেয়।
ইয়ানার ভাবনার মাঝে গাড়িটি থেমে যায়। ইয়ানা চোখ খুলে সামনের দিকে তাকায় দেখে মুটামুটি পুরাতন একটা বাড়ি। বাড়িটি পুরাতন হলে ও সৌন্দর্য যেনো উপচে পড়ছে। কিন্তু ইয়ানা ভেবে পায় না এই নিস্তব্দ জঙ্গলে এই বাড়িটি কি করছে?
ইয়ানার ভাবনার মাঝে আহানের কথা কানে ভেসে আসে,,,,

“” গাড়ি থেকে নামেন আমার সেহজাদী।””
ইয়ানা গাড়ি থেকে নেমে আহানের হাত ধরে সামনে এগোতে থাকে।
ইয়ানা ভিতরে প্রবেশ করতেই ভড়কে যায়। বাড়ির ভিতরে তেমন কোনো জিনিস নেই। দেখতে ও কেমন ভুতুরে ভুতুরে। ২০- ৩০ জনের মতো বিশাল দেহী লোক দাঁড়িয়ে আছে। ইয়ানা আহানের হাতটা আর ও চেপে ধরে। আহান ইয়ানাকে নিজের সাথে আলতো মিশিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে মাটির নিচের সিড়ি দিয়ে নামতে থাকে। ইয়ানা ভয়ে ভয়ে বলে,,,

“” আহান আমরা কোথায় যাচ্ছি বলোন না আমার খুব ভয় করছে। কেমন ভুতুরে দেখতে জায়গাটা। আমার সারপ্রাইজের দরকার নেই চলুন বাড়ি ফিরে যায়।”‘
আহান — যাব সোনা আগে সারপ্রাইজটা তো দেখে যাও।
আহান একটা রুমের সামনে এসে বড় একটা শ্বাস নেই। ইয়ানা ভাবছে মাটির নিচে এইটা কেমন জায়গা। আহান কি করতে চাইছে ও আমার সাথে কিছু করবে নাতো। আরে ধুর ইয়ানা তুই ও কি ভাবছিস।
ইয়ানার হাতটাকে আহান ভালোভাবে ধরে দরজা ঠেলে রুমটার মধ্যে প্রবেশ করে। দরজা খুলতেই ইয়ানার নাকে বিশ্রি গন্ধ এসে বারি খায় মনে হচ্ছে পেটের ভিতরের নাড়ি ভুড়ি সব উল্টে আসবে। ইয়ানা নাক চেপে রুমের ভিতরে তাকাতেই আত্না কেঁপে উঠে। কি ভয়ানক দেখতে এই জায়গা। দেয়ালে ঝুলানো ভিবিন্ন অস্ত্র, রক্তের ছোপ, ভিবিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। যেগুলোর নাম ইয়ানা জানে না কিন্তু বুঝতে পারছে এই গুলো কোনো ক্যামিকাল। সব মিলিয়ে খুব জঘন্য একটা জায়গা। হঠাৎ মনে পড়লো আহান তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আহান তাকে এখানে নিয়ে এসেছে কেনো?

ইয়ানা — আহান আপনি আমাকে এই কোন জায়গায় নিয়ে আসলেন? আপনি তো বলেছিলেন সারপ্রাইজ দিবেন কিন্তু আমরা এখানে কি করছি।
আহান — সারপ্রাইজ ওইতো দিতে এনেছি বেইবি। সামনের দিকে তাকাও।
ইয়ানা আহানের দৃষ্টি অনুসরন করে সামনের দিকে তাকাতেই ভয়ে চিৎকার দিয়ে আহানের বক্ষ জাপটে ধরে।
ইয়ানা কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,,
“” ক.. কে ও আর এখানে কি করছে? “”
আহান শান্ত কন্ঠে বলে,,,,
“” ঝর্না ”
ইয়ানার ভিতর আতকে উঠে। ইয়ানা আহানের বক্ষ থেকে মাথা তুলে সাহস সঞ্চয় করে চেয়ারে মৃতপ্রায় মেয়েটার দিকে তাকায়। মেয়েটির কোনো অস্তিত্ব বুঝা যাচ্ছে না। এক চোখ নেই, এক হাত নেই, আর বাকি যে হাতটা আছে তার ও আঙ্গুল নেই। সমস্ত শরীরে শুধু যখমের দাগ। মেয়েটির মুখ কালসিটে হয়ে আছে মনে হচ্ছে ফুটন্ত গরম পানি ঢালা হয়েছে। ইয়ানা আর ভাবতে পারছে না। মনে হচ্ছে পুরো মাথা ঘুরছে কিন্তু ও কিভাবে ঝর্না হতে পারে।
ইয়ানা আহানের দিকে অবিশ্বাস নজরে তাকিয়ে বলে,,,,

“” ম..মজা করছেন আমার সাথে। ও কিভাবে ঝর্না হবে আর ঝর্না তো আজ এক মাস যাবৎ নিঁখোজ। তাহলে আপনি ওকে কোথায় পেলেন? “”
আহান ঝর্নার কাছে যেতে যেতে বলে, ,,
“” পাবো কোথায় যখন সে আমার কাছেই ছিলো ”
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,
“” আপনার কাছে ছিলো মানে?
আহান — আমার কাছে ছিলো মানে এক মাস আমার কাছে ছিলো। আমার এই টর্চার সেলে। অগ্নি চৌধুরির রাজত্বে। আর আজ সেই রাজত্বে পদার্পন করেছে তার বউ মিসেস অগ্নি চৌধুরি। বলো কি শাস্তি দিতে চাও এই মেয়েকে?
ইয়ানার গলা কাপছে কি সব বলছে উনি। আর ও ঝর্নাকে শাস্তি দিবে মানে?
ইয়ানা — আপনার কাছে এক মাস ছিলো তাহলে পুলিশকে সাহায্য কেনো করছেন? আর এইসব কি আহান আপনার টর্চার সেল মানে? কি করেন আপনি এখানে? এই মেয়েটার পুরো পরিবার ওর জন্য দিশে হারা আর আপনি তো ওকে অর্ধ মৃত করে ফেলেছেন।

আহান — যে আমার অস্তিত্ব কে শেষ করার দুঃসাহস দেখাই তাকে অগ্নি চৌধুরি কিভাবে ছেড়ে দিবে জান।
ইয়ানা — আপনার অস্তুিত্ব শেষ করেছে মানে?
আহান — রায়ানের বিয়ের দিন তুমি দুধ খেয়েছিলে মনে আছে আমি পাঠিয়েছিলাম? সেই দুধে এই মেয়ে ঔষধ মিশিয়েছিলো। আর এই কারনেই তোমার মিসক্যারেজ হয়।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে দুই কদম পিছিয়ে যায়। আবার ও মনে পড়ে নিজের বাচ্চার কথা। গলায় কান্না দলা পাকিয়ে আসছে কিন্ত কান্না করার শক্তিটুকু নেই। ইয়ানা অশ্রুভেজা নয়েনে ঝর্নার কাছে যায়। এরপর কান্না করতে করতে বলে,,,

“” কেনো করলে তুমি এমন ঝর্না। শত্রুতা তোমার আমার সাথে ছিলো সেখানে আমার সন্তানের কি দোষ। সত্রুতা আমার সাথে ছিলো আমাকে মেরে ফেলতে আমার অনাগত সন্তানকে কেনো শেষ করলে। ওতো একদম নিষ্পাপ ছিলো যার হাত পা ও তৈরি হয় নি তাকে শেষ করতে কি একবার ও কলিজা কেঁপে উঠে নি। একবার ও মনে হয় নি ও একজন বেহেস্ত থেকে আসা নিষ্পাপ ফুল।

ঝর্না তুমি নিজে ও তো একজন মেয়ে। কারোর মেয়ে, কারোর বোন বা কোনো একসময় কারোর মা হতে। তুমি তো মেয়ে জাতি ঝর্না তাহলে কিভাবে পারলে আরেকটা মেয়ের বুক খালি করতে। কি করে পারলে আমার কলিজাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে। যেদিন নিজে সন্তানের মা হবে ওইদিন বুঝতে পারবে মাতৃত্ব কি? কোনো মা যখন সামান্য একটা মাংস পিন্ড নিজের গর্ভে ধারন করে তখন ঠিক কতটা অনুভুতি মমতা কাজ করে। কিন্তু আফসোস ঝর্না সেই সুজোগ মনে হয় তোমার আর হবে না। আমি মহান রবের কাছে আরজি জানায় তোমার মত মেয়ে জাতে আমার সাথে আর কোনোদিন দেখা না হয়। শুধু আমি না প্রত্যেকটা মেয়ে যাতে তোমার মত জঘন্য মানুষের থেকে দুরে থাকে। তাহলে হাজার ও মায়ের সন্তান বেঁচে যাবে।

ইয়ানা কান্না করতে করতে বসে পড়ে। কান্নার ফলে বার বার শরীরটা কেঁপে উঠে। কিন্তু ঝর্নার এই অবস্থা ও ইয়ানা মেনে নিতে পারছে না। ঝর্নাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রশাসন আছে আহান কেনো এইসব করবে।
ঝর্না নিভু নিভু চোখে ইয়ানার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না।
ইয়ানার কান্না দেখে আহান ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“” কান্ন থামাও। কান্না থামাও বলছি। আরে আজব আমি তোমাকে এনেছি আনন্দ করবে বলে আর তুমি তো কান্না করে বুক ভাসাচ্ছো। এখন তুমি ওর রুহ টা দেহ থেকে আলাদা করবে।
আহান ইয়ানার হাতে একটা বন্ধুক দিয়ে বলে,,,,

“” বুক বরাবর শুধু তিনটা বুলেট ছুড়বে। যা শাস্তি দেওয়ার এই এক মাসে অনেক দিয়েছি। তোমাকে দেখানোর জন্য শুধু দেহ থেকে রুহ আলাদা করি নি। বাকি কাজ তুমি কর মিসেস অগ্নি চৌধুরি।””
ইয়ানা কান্নামিশ্রিত চোখে আহানের দিকে তাকায়।
ইয়ানা — মেরে ফেলবেন মানে টা কি আহান? দ.. দেখুন অনেক শাস্তি দিয়েছেন এখন ছেড়ে দিন না প্লিজ। ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলুন। যা করার এখন প্রসাশন করবে।
আহান বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“” আমার কথা মনে হয় তুমি শুনতে পাওনি ইয়ানা। আমি বলেছি তুমি ওকে বুক বরাবর শুট করতে। “”
ইয়ানা — নিজের হাতে তো রক্ত লাগিয়েছেন এখন আমাকে ও অমানুষ করতে চান। আমি একজন সৃষ্টি হয়ে অন্য সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে পারব না। আপনি ও ওকে কিছু করবেন না। আহান বন্ধ করে দিন না আপনার এই আদিম খেলা। যদি খুনের বদলে খুন করেন তাহলে ও আর আমাদের মাঝে পার্থক্য কি।
আহান — রক্ত তো তোমার হাতে লাগাতেই হবে জান। এই মেয়েকে মারলে কিছু হবে না।
ইয়ানা —- আমি পারব না পারব না আমি।
আহান — তোমাকে পারতে হবে।
হঠাৎ ইয়ানার চারদিক ঘুরতে থাকে। একসময় ঙ্গান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চোখ বুঝে আসার আগে ইয়ানা আহানের অবয়ব দেখতে পায়। ইয়ানা পড়ে যাওয়ার আগেই আহান ধরে ফেলে। আহান বিচলিত হয়ে বলে,,,,

“” ওহহ শিট “”
আহান ইয়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে বন্ধুকটা নিজের হাতে নেয়। এরপর দরজার সামনে এসে ঝর্নার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসি দেয়। ঝর্না ও আহানের দিকে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে। এই চোখ ধারা বলছে আমাকে তিলে তিলে না মেরে একবারে মেরে ফলো। আহান ও ঝর্নার সমাপ্তি ঘটায় পর পর তিনটা গুলির মাধ্যমে। মুহূর্তেই ভেসে যায় তাজা রক্ত। কালো ফ্লোর লাল বর্ণ ধারন করে।

চোখের উপর পানি পড়তেই ইয়ানা টিপটিপ করে নেত্র মেলে তাকায়। চোখ খুলে ভালোভাবে নিজের অবস্থান বুঝার প্রয়াস চালায়। নিজের সামনে আহানকে দেখে ধরফরিয়ে উঠে। ইয়ানা অধৈর্য কন্ঠে বলে,,,,
“” ঝ.. ঝর্না কোথায়? কি করেছেন ওর সাথে আর?””
আহান ইয়ানার কপালে চুমু দিয়ে বলে,,,,,
“” যাক তোমার ঙ্গান ফিরেছে তবে। অপেক্ষা কর তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। ইসস কি হয়েছে চোখ মুখ কান্না করতে করতে। এত কান্না কিভাবে করতে পারো তুমি।
ইয়ানা চিৎকার দিয়ে বলে,,,,
“” আমার খাবারের প্রয়োজন নেই আগে বলুন ঝর্না কোথায়? কি করেছেন ওর সাথে “”
আহান কপাল কুচকে ধমক দিয়ে বলে,,,,

“” একদম চিৎকার করবে না। ভুলে যেও না তোমার শরীর ঠিক নেই। সুস্থ হওয়ার পর যত খুশি চিৎকার করিও। আর ঝর্নার জন্য এত উতলা কেনো তুমি””
ইয়ানা — আমার প্রশ্নের উত্তর এইটা না আহান। আমি উত্তর চাই তোমার উপদেশ নেই।
আহান বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” বাঘের খাচায় কোনো হরিণ ডুকলে সে কি বেঁচে ফিরতে পারে। এখন বাকিটা তুমি বুঝে নাও তুমি তো অনেক বুদ্ধিমতী। “”
ইয়ানা ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে। আহান কিভাবে পারল আবার ও খুন করতে।
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,

“” আপনি কখনো ঠিক হবেন না তাই না আহান। সাইকো সারাজীবন সাইকো ওই থেকে যাবেন। আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে। কেনো বুঝতে পারেন না আমি এইসব সহ্য করতে পারি না। খুনের বদলে খুন তাহলে তো আপনার সাথে ঝর্নার কোনো ফারাক নেই আহান।”””
আহান রেগে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
“” তোমাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া সবচেয়ে ভুল হয়েছে।'”
ইয়ানা —- হ্যা ভুল হয়েছে তো। আপনার এক একটা রুপ দেখতে পেয়েছি। কি নৃশ্যংস ভাবে খুন করেন আপনি।
আহান — ওর ভাজ্ঞে যা ছিলো তাই হয়েছে।
ইয়ানা — জন্ম ও মৃত্যু বিধাতা লিখে কিন্তু আমরা তাকেই সুলে চরায় যে হত্যা করে। তাহলে বিধাতা আপনকে দিয়ে এই কাজ কেনো করালো বলুন।কারন আপনি এই দিকে অগ্রসর হয়েছেন।
এরপর ইয়ানা একটু শান্ত হয়ে বলে,,,,,,,

“” ছেড়ে দিন না আহান এইসব। আপনি তো আমাকে ভালোবাসেন। আমার জন্য না হয় এইসব থেকে চলে আসুন। আর কোনো মায়ের বুক খালি করবেন না। ওরা যত অপরাধী হোক তাদের জন্য প্রসাশন আছে।””
আহানের ঠান্ডা উত্তর — সম্ভব না। এইটাই আমি আর এইটাই আমার পরিচয়। আর এই আহানকে তুমি ভালোবাসো।
ইয়ানা —- তাহলে আপনি এইসব থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনবেন না।
আহান —- না।
ইয়ানা — তাহলে শুনুন যতদিন নিজেকে পবিত্র করতে পারছেন ততদিন আপনি ইয়ানাকে ভুলে যান। হ্যা এক রুমে হয়ত থাকব কিন্ত সেই ইয়ানাকে আর ফিরে পাবেন না, যে আপনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করত। সেই ইয়ানা যে তার স্বামীর স্ত্রী হয়ে বেঁচে ছিলো।ঠিক ততদিন আপনি আমাকে ছুবেন না যতদিন না আপনি এইসব থেকে বের হতে পারছেন।

ইয়ানার কথা আহানের কর্নাপাত হতেই রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। ধপ করে মাথায় আগুন ধরে যায়। এই মেয়ে কি আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিচ্ছে। আহান নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করে ঠান্ডা সুরে বলে,,,,,
“” যা বলছো ভেবে বলছো তো। পরে কিন্তু আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য দেওয়ানা হয়ে পড়ো না। আমার অনুপস্থিতি যাতে তোমার কাঁদার কারন না হয়। যদি ভুলে ও কান্না করতে দেখি তাহলে আই সয়ার হাত পা বেধে নিয়ে আমার টর্চার সেলে ফেলে দিয়ে আসব।”””
ইয়ানা আহানের কথায় অবাক হয়ে যায়। ওতো ভেবেছিলো আহান দুই একটা থাপ্পর দিবে। এরপর আবার বুকে নিয়ে বলবে,,,ঠিক আছে তোমার যদি এই ইচ্ছে হয় তাহলে আমি এইসব থেকে নিজেকে আড়াল করে ফেলব। কিন্তু এই লোকত পাল্টা হুমকি দিচ্ছে। ইয়ানা ও কম যায় নাকি। এই হৃদয়হীন লোক যদি তাকে ছাড়া থাকতে পারে তাহলে ও থাকতে পারবে না কেনো? অবশ্যয় থাকতে পারবে কাঁদবে না একদম। কান্না আসলে ও ফানি ভিডিও দেখে হাসবে তবুও কাঁদবে না।
ইয়ানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৩

“” আর কত কাঁদব জীবনে কম তো আর কাঁদি নি। চিন্তা করবেন না আপনাকে নিয়ে একদম ভাববো না। “”
আহানের রাগ হলে ও নিজেকে সামলিয়ে বলে,,,,,,
“” ঠিক আছে দেখি কত দিন থাকতে পারো আমাকে ছাড়া। তোমার ছোয়া পাওয়ার জন্য ও আমি বসে নাই”
লাস্ট কথাটা আহান ইয়ানাকে ইচ্ছে করে বলেছে। আহান জানে ইয়ানা আহানের সাথে কথা না বলে থাকতে পারবে না। সে ভালো করে চিনে নিজের বউকে।
এই বলে আহান রুম থেকে বের হয়ে আসে। ইয়ানা আহানের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে। কি করে ইয়ানার কথা মেনে নিল। অন্যসময় তো থাপ্পর আর ধমক দিয়ে মাথার ঘিলু বের করে ফেলত। আর আজ বলছে তার ছোয়া পাওয়ার জন্য ওনি বসে নেই। হাইরে পুরুষ মানুষ।

অনুভবে তুমি পর্ব ৪৫