অনুভবে তুমি পর্ব ৫৩
লিজা মনি
প্রগনেন্সির কারনে সুমুর শরীর অবস্থা খুব খারাপ। কোনো খাবার মুখে নিতে পারে না। শুধু মাথা ব্যাথা আর প্রচন্ড মাথা ব্যাথা অনুভব হয়। যখন তখন রায়ানের উপর রেগে যায়। রায়ান ও সুমুর রাগ দেখে চুপসে যায়। সুমুকে আজ চেক আপ করানোর জন্য বাসায় ডক্টর আসবে। কিছুক্ষন পর কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রায়ান গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার সামনে মেয়ে দেখতে পেয়ে কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,,,,
“” কি চাই? ”
মেয়েটি — হ্যালো স্যার আমি ডক্টর সিমরান। স্যার আজ এক সার্জারির জন্য আসতে পারে নি তাই আমাকে পাঠিয়েছে। আপনাকে ফোন দিত কিন্তু রোগীর কন্ডিশন খুব খারাপ ছিলো তাই ইমার্জেন্সি অপারেশনে সিফট করানো হয়।
রায়ান হাসিমুখে বলে,,,
“” হাই মিস সিমরান। ওকে সমস্যা নেই ভালো ডক্টর হলেই হবে। “”
সিমরান ভিতরে আসতে আসতে বলে,,,,
“‘ জি। আপনার ওয়াইফ কোথায়? “”
রায়ান — উপরে আসুন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এরপর রায়ান ডক্টর সিমরানকে নিয়ে সুমুর কাছে যায়। সুমু রায়নের সাথে কোনো মেয়েকে ক্লোজ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকায়। সুমুর তাকানো দেখে রায়ান ভড়কে যায়। এরপর সুমুর দৃষ্টি অনুসরন করে কিছু একটা বুঝতে পেরে সিমরানের থেকে সরে এসে সুমুর পাশে বসে।
সিমরান — হাই মিসেস রায়ান। আমি ডক্টর সিমরান।
সুমু হাসি দিয়ে বলে,,,
“” হাই আমি সাজিয়া হোসেন সুমাইয়া। “”
সিমরান — ওয়াও খুব সুন্দর নাম।
এরপর সিমরান সুমুর কাছে যায় চেকআপ করার জন্য। গিয়ে ঠিক রায়ানের পাশে বসে। সুমু না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে কিছু বলতে শুধু দাতে দাপ চেপে দেখে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে রায়ানের উপর। মেয়েটা না হয় বসেছে ওনি কি উঠে যেতে পারছে না। মেয়ে মানুষের সাথে ঘেসে বসতে খুব ভালো লাগে।
প্রায় অনেক্ষন পর সিমরান সুমুর চেকআপ শেষ করে রায়ানের সাথে প্রেগনেন্সি নিয়ে কিছু দরকারি কথা বলে। কথা বলছে ভালো কথা কিন্তু তাদের দুরত্ব বেশি না। সুমু রাগের ফলে কান্না করে দেয়।
রায়ান সিমরানকে বিদায় জানিয়ে বাহিরের দরজা লাগিয়ে সুমুর কাছে চলে যায়।
রায়ান সুমুকে হাসি মুখে বলে,,,,
“” তোমাকে আর ও বেশি সতর্ক হতে হবে সোনা। “”
সুমু কিছু না বলে ধীরে ধীরে গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। রায়ান সুমুর কান্ড দেখে কপাল কুচকে বলে,,,,
“” তুমি দরজা লাগাচ্ছো কেনো? “”
সুমু রায়ানের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে কটমট চোখে রায়ানের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
রায়ান — এইভাবে আগাচ্ছো কেনো? দেখো সোনা এখন তুমি অসুস্থ তাই এইসব করা যাবে না। ফলে আমাদের বেবির সমস্যা হতে পারে। তাই এখন কিছু করা যাবে না। আমি সাধু পুরুষ।
সুমু দাত কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,
“” ভন্ড সাধু তাই না ‘”
এরপর পিছন থেকে লাঠি বের করে। সুমুর হাতের লাঠি দেখে রায়ান ভড়কে যায়। কি করতে চাচ্ছে এই মেয়ে। হাতে লাঠি নিয়েছে কেনো?এই মেয়ে কি কোনোভাবে আমাকে মারতে চাচ্ছে, কিন্তু কেনো?
সুমু রায়ানের সামনে এসে লাঠি দিয়ে বারি দিতে যাবে ওমনি রায়ান বিছানায় উঠে পড়ে।
সুমু — মেয়ে দেখলেই ঘেসে বসতে ইচ্ছে করে তাই না? তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে ইচ্ছে করে। আমি আজ আপনার সব ভিমর তি বের করছি। ভন্ড সাধু সবাই জানে একদম নম্র ভদ্র কিন্তু আপনি যে কি সেটা আমি জানি।
রায়ান –; এই বউ এইভাবে বলো না। আমি তো ওই মেয়েকে চিনি ও না । মানবতার খাতিরে একটু কথা বলেছি। কিন্তু সবটা তোমাকে ঘিরেই।
সুমু রায়ানের দিকে বালিশ ছুড়ে দিয়ে বলে,,,
“” কথা বলতে কখনো নিষেধ করেছি আমি। কিন্তু এইভাবে ঘেসে ঘেসে কথা বলার কি আছে।
রায়ান — ছিহহ বউ এইসব বলে না। তোমাকে ছাড়া আমি কোনোদিন দ্বীতিয় নারীকে স্পর্শ করি নি। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ছুই নি পর্যন্ত। আমি খেয়াল করি নি বিশ্বাস করো। তোমার হাতের এই লাঠিটা ফেলে দাও।
সুমু ক্ষেপে রুয়ানের কাছে গিয়ে বলে,,,
“” ফেলব না এই লাঠি আপনার পিঠে ভাঙব। যাতে কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে গেলে আগে আমার কথা মনে হয়। “”
এই বলে সুমু রায়ানকে বারি দিতে যাবে ওমনি রায়ান সুমুর হাতটা খপ করে ধরে ফেলে।
এরপর সুমুকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,,,
“” এই রায়ান শুধু এক কাদম্বিনীতেই আসক্ত হাজার নারী দিয়ে কি হবে। যদি তার মন, দৃষ্টি, ভাবনা একজনের দিকে থাকে তাহলে শত নারী আসুক কিন্ত এই মন পর্যন্ত ছুতে পারবে না। কারন এই মনকে তো আমার বউ দখল করে নিয়েছে। “”
রায়ানের এই সামান্য সান্তনা বানী আর ভালোবাসার উক্তি সুমুর জীবনের সবচেয়ে প্রশান্তির কারন। রাগ যেনো মিলিয়ে যায় নিমিষে। রায়ানকে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরে। রায়ান ও মুচকি হাসি দিয়ে সুমুকে নিজের সাথে আগলে নেয়।
আহিয়া ইয়াজকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ইয়ানা বাবুর সমস্ত কাপড় গুছাচ্ছিলো। একটা বাচ্চার এত কাপড় থাকতে হয় সেটা অগ্নি চৌধুরির ছেলেকে না দেখলে কোনোদিন জানতাম না। এই লোক পারে না পুরু মার্কেট তুলে নিয়ে আসে। এইটুকু একটা বাচ্চার এত কাপড়ের কি প্রয়োজন। নিজে যেমন এক শার্ট দ্বিতীয়বার পড়ে না তেমনি আমার ছেলেটাকে এমন বানাতে চাইছে। কিন্তু আমি তো এমন হতে দিব না। এত উচ্চবিলাসী বানাব না একদম আমার মত করে মানুষ করব। যাতে কোনো সময় টাকার অহংকার না করে। গরীবকে অসম্মান নয় মর্যাদা দিতে পারে। বাহিরের দুনিয়া সম্পর্ক যাতে ধারনা থাকে। বাবার এই বিশাল সম্রাজ্য যাতে তাকে কোনোদিন আলোর পথ বন্ধ না করে।
ইয়ানা কাপর গুছিয়ে বিছানায় বসতে আহিয়া রুমে ডুকে।আর ইয়াজ মৃদু স্বরে কান্না করছে।
আহিয়া — বউমনি বাবাই তো কান্না করছে। মনে হচ্ছে খিদে পেয়েছে খাইয়ে দাও।
ইয়ানা — হ্যা।
ইয়ানা আহিয়ার কোল থেকে ইয়াজকে কোলে নিয়ে নেয়। এরপর নরম টাওয়াল দিয়ে ভালো করে মুরিয়ে নেয় কারন রুমে এসি চলছে।
ইয়ানা ইয়াজকে খাবার দিয়ে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
“” আহিয়া কি হয়েছে বলো তো? ইদানিং তোমার মনে বিষন্নতার ছাপ। কি হয়েছে কেউ কি কিছু বলেছে? ”
আহিয়া মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” কি.. কি বলো বউমনি কি হবে? আমি তো একদম ঠিক আছি
ইয়ানা আহিয়ার দিকে কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” সব ঠিক থাকলে তোমার মুখে এমন ভয়ের ছাপ কেনো? আর এইভাবে তুতলাচ্ছো কেনো? ভুলে যেও না আমি তোমার বউমনি কম বোন হই। কি হয়েছে বলো আমাকে? “”
ইয়ানার কথা শুনে আহিয়ার চোখে পানি চলে আসে। বলা কি ঠিক হবে। সবাই কি ভাববে যে আহিয়া তুই ও প্রেম কি বুঝে গিয়েছিস। কিন্তু বউমনি তো আমাকে সব বিপদে সাহায্য করে তাহলে বউমনিকে বললে সমস্যা কোথায়।
ইয়ানা — কি হলো তোমার চোখে পানি কেনো? আহিয়া প্লিজ বলো আমায় কি হয়েছে?
আহিয়া ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” বউমনি তোমাকে একটা কথা বলি কাউকে বলবে নাতো?
ইয়ানা — প্রমিস বলব না।
আহিয়া — বউ মনি আমি র.. রুহান ভাইয়াকে ভালোবাসি।
আহিয়ার কথা শুনে ইয়ানার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,
“” ক… কোন রুহান?
আহিয়া — তোমার ফ্রেন্ড রুহান। খুব ভালোবেসে ফেলেছি বউ মনি কিন্ত রুহান ভাইয়া আমাকে এক্সেপ্ট করে নি। ওনি ও আমাকে ভালোবাসে বউমনি তবে দাদাভাইয়ের কারনে আমার ভালোবাসা স্বীকার করে নি। কিন্তু ওনার কন্ঠে আমার জন্য তীব্রতা দেখেছি। ওনার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। আমি ও খুব ভালোবাসি বউ মনি।
ইয়ানা — আহিয়া কিসব বলছো এইসব। মাথা ঠিক আছে তোমার। আহান কখনো মেনে নিবে না। তুমি হলে তোমার দাদাভাইয়ের প্রান।
আহিয়া কাঁদতে কাদঁতে বলে,,,,
“” আমি রুহান ভাইয়াকে ভালোবাসি আপু ওনাকে না পেলে আমি মরে যাব ”
— কাকে ভালোবাসিস তুই? আর মরে যাওয়ার শখ হয়েছে খুব তাই না।
এমন ভয়ানক কর্কশ কন্ঠস্বর শুনে আহিয়া আর ইয়ানা ভয়ে ভড়কে যায়। ইয়ানা দরজার দিকে তাকাতেই আতকে উঠে। আহান রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আহিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়ানা — আ.. আহান আপনি?
আহিয়া — দা.. দা. দাদাভাই তুমি?
আহান দাতে দাত চেপে ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” চুপ ফাজিল যদি আর একবার ও দাদাভাই বলে ডেকেছিস থাপরিয়ে মগজ বের করব । এই এই কার জন্য মরে যেতে চেয়েছিস তুই বিয়াদপ।””
আহানের বিকট ধমক শুনে ইয়াজ দুধ খাওয়া ছেড়ে কান্না করে দেয়। হঠাৎ এমন ধমকে ছেলেটা ভয়ে কেপে উঠে।
এইদিকে আহিয়া মাথা নিচু করে কেঁপে উঠে। সাথে সাথে চোখ দিয়ে ঝরে পরে অশ্রুধারা। আহান কোনোদিন আহিয়াকে ধমক দেই নি। কিন্তু এই প্রথম ধমকে আহিয়ার ছোট দেহখানা ভয়ে কাপতে থাকে। কারন সে আহানের রাগ সম্পর্কে অবগত।
ইয়ানা কি করবে বুঝতে পারছে না। ইয়াজ ভয়ে কান্না করতে থাকে কিন্তু আহানের এইসবে নজর নেই। সে রাগের বশে হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে ফেলেছে।
আহান আহিয়ার দিকে যেতে নিবে তখন ইয়ানা সামনে এসে বলে,,,
“” প্লিজ রাগটাকে শান্ত করুন আহিয়া মরার কথা বলে নি। ”
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
“” একদম সাফাই গাইতে আসবে না সামনে থেকে সর। আমি ও দেখি ওর কত বড় কলিজা হয়েছে যে মরতে ইচ্ছে করছে। কানের নিচে কয়েকটা পড়লেই ভিমরুতি ছুটে যাবে।
ইয়ানা — আহান কি বলছেন এইসব খেয়াল আছে। আপনি আহিয়াকে মারার কথা বলছেন?
আহান রেগে বলে,,,,
“” তোমাকে সামনে থেকে সরতে বলছি ইয়ানা? “”
ইয়ানা — না আমি সরব না আপনি এখন নিজের মধ্যে নেই।
আহান ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” সামনে থেকে তকে সরতে বলছি না বিয়াদপ। “”
ইয়ানা — আহিয়া বোন আমার প্লিজ একটু চোখটা বন্ধ করো। ভুলে ও যাতে খুলা না দেখি যতক্ষন আমি না বলব । চোখ খুললে কিন্তু আমি কষ্ট পাব।
ইয়ানার কথা শুনে আহিয়া সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেলে।
ইয়ানা একটা টুলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পরে আহানের সামনে। এরপর একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে তাকায় আহানের দিকে। আহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইয়ানা আহানের গোলাপি ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। ইয়াজ ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো ছেলেটা কিছুই বুঝতে পারছে না। ইয়ানার ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই আহান অবাক হয়ে যায় এরপর মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ানাকে নিজের সাথে আর ও চেপে ধরে। আহানের হাত ইয়ানার পিঠ পর্যন্ত ঠেকেছে।
আহান ইয়ানার সেচ্ছায় কাছে পাওয়ার আগ্রহ দ্বীগুন বেড়ে যায়। ইয়ানা আহানের চুমুর গতির সাথে পেরে না উঠে ছটফট শুরু করে দেয়। কিন্ত অগ্নি চৌধুরি তো অগ্নি চৌধুরি ওই কখনো ছেড়ে দিয়েছে যে আজ ছেড়ে দিবে। আহান ইয়ানার ঠোঁট আর ও শক্ত করে আকড়ে ধরে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আহান ইয়ানাকে ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেতেই ইয়ানা ছোট টোল থেকে নেমে বড় বড় শ্বাস নেয়। আল্লাহ কেউ সেচ্ছায় সিংহের গুহায় পা দেয়। আহিয়ার কথা মাথায় আসতেই ইয়ানা চমকে উঠে। কিছু দেখে ফেলল নাতো। ইয়ানা আহিয়ার দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আহিয়া এখন ও চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইয়ানা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে।
ইয়ানা — আহিয়া বোন আমার এখন রুমে যাও। বউ মনি ও আসছি কিছু সময়ের ব্যবধানে।
ইয়ানার আদেশ পাওয়া মাত্র ওই আহিয়া আহানের রুম ত্যাগ করে।
আহিয়া যাওয়া মাত্র ইয়ানা আহানের দিকে রেগে তাকায়। এরপর কটমট চোখে বলে,,,,
“” অসভ্য “”
আহান ইয়ানার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়। ইয়ানার কাছে এই হাসিটা সবচেয়ে সুন্দর । কিন্ত এই মুহূর্তে আবেগের চেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে।
ইয়ানা — এইভাবে হাসছেন কেনো?
আহান নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে ইয়ানার দুই বাহুতে নিজের দুই হাত রেখে বলে,,,,
“” তোমার ছেলের দিকে তাকাও। দেখো কি সুন্দর ভাবে তাকিয়ে বাবা মায়ের রুমান্স দেখছে। তার মাম্মাম কতটা রুমান্টিক তা জেনে গেলো। তার বাবাকে কিভাবে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে।
ইয়ানা আহানের হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
“” নির্লজ্জ ছেলে দেখেছে এইটা আবার গর্ব করে বলছে”
আহান — নির্লজ্জতার কি আছে তুমি নিজে সব কিছু করেছো।আমার ছেলে দেখলে তো ভালো।
ইয়ানা — হ্যা আর আপনি সুযোগের সৎ ব্যবহার করলেন। আমি সরে আসতাম কিন্ত আপনি আমাকে এইভাবে আটকে রাখলেন কেনো আহিয়া দেখলে কি হত। “”
আহান — আহিয়ার দিকে দৃষ্টি আমার ছিলো জান। ও একবার যেহেতু বলেছে চোখ খুলবে না তাহলে তুমি না বলা পর্যন্ত জীবনে ও খুলত না। আমি তো আমার বোনকে চিনি।
ইয়ানা — আহান আজ মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে। হুট করে এইভাবে বকাবকি করার মানে হয়। আপনি কখনো ওকে বকা দেননি নিশ্চয় এখন কান্না করছে। আপনি গিয়ে সরি বলে আসবেন। নাহলে আজ আমি আর ইয়াজ আপনাকে আমাদের সাথে জায়গা দিব না।
আহান — ও প্রেম সম্পর্ক কি জানে কি বুঝে। দুই দিনের আবেগ কয়দিন পড়ে শেষ। সাময়িকের আবেগের জন্য ও মরে যাওয়ার কথা বলবে। ওকি জানে না ও আমার জন্য কি। তাহলে কিভাবে বলল। গায়ে যে হাত তুলি নি এইটা ওর ভাগ্য। আর ও কাকে পছন্দ করে?
হঠাৎ করে আহানের অবয়ব পাল্টাতে থাকে।ইয়ানা আহানের প্রশ্নে ভড়কে যায়।
ইয়ানা — জ. জানি না।
আহান ইয়ানার মিথ্যে কথা শুনে ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” মিথ্যে বললে থাপরাব ফাজিল। তোমার কি মনে হয় আমি নাম জানতে পাড়ব না। তখন কিন্তু তোমার অবস্থা খারাপ করব। তাই এখন সত্তিটা বলো।
ইয়ানা আহানের ধমক খেয়ে ভয়ে ভয়ে বলে,,,,
“” র. রুহান ”
ইয়ানার মুখে রুহান নাম শুনে আহান কপাল কুচকে নেই।
ইয়ানা আহানের ভাব ভঙ্গি বুঝতে পারল না রেগে আছে নাকি শান্ত।
ইয়ানা — বিশ্বাস করুন রুহান খুব ভালো একটা ছেলে।
আহান — তো?
ইয়ানা — তো মানে আহিয়া রুহানকে ভালোবাসে। আপনি মেনে নিন। আর সঠিক বয়স হলে বিয়ে দিয়ে দিব।
আহান বিরক্তি নিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
” বিয়ে কি ছেলেখেলা। যার সাথে ইচ্ছা দিয়ে দিব। রুহান ভালো ছেলে আমি ও জানি। কিন্তু রুহান এখন ও পড়াশুনা করে । এইসব ভিমরুতি দুই দিন পর এমনি চলে যাবে। কয়েকদিনের আবেগ মাত্র।কিন্তু ওর সামান্য আবেগে তো আর ওর জীবন ধ্বংস করতে পারি না।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” আজ একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে জানেন তো। রুহান একটা শিক্ষিত, নম্র, ভদ্র ছেলে তবুও ওর সাথে সম্পর্ক মেনে নিতে কত আপত্তি। কারন আহিয়া আপনার বোন। ভাই হয়ে বোনের জন্য ভালোবাসা থাকবে স্বাভাবিক। আমি ও আহিয়াকে খুব ভালোবাসি। কারন সে মেয়েটাই খুব মিষ্টি। কিন্তু আসাদ হোসেনের মেয়ে ইয়ানা বিনতে আসাদ ও কারোর বোন ছিলো বা কারোর মেয়ে। তাকে যখন একজন মাফিয়া ডন পুরো ফ্যামিলিকে জিন্মি করে জোড় করে বিয়ে করেছিলো তখন হয়ত সে ভুলে গিয়েছিলো মেয়েটা ও কারোর বোন হয়। কিন্তু আজ যখন বোনের বিষয় হচ্ছে তখন একশবার ভাবতে হচ্ছে। আর ও বুঝতে পারত যদি তার ছেলে না হয়ে মেয়ে হত। তখন হইত বুঝতে পারত একটা মেয়ে তার পরিবারের জন্য কি। তাকে বিয়ে করে এনে পরিবার থেকে বিচ্ছেদ করলে ঠিক কতটা যন্ত্রনা হয়। তার পরিবার কতটা ছটফট করে তাদের মেয়ের জন্য। বাবা হলে একটা মেয়ের জন্য কতটা কষ্ট হয়। আমার বাবার ও হয়েছিলো।
আহান ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে ঠান্ডা গলায় বলে ,,,,,,,
“” আমার মেয়ে হলে আমি আমার মেয়েকে প্রটেক্ট করার জন্য আছি। কিন্তু তোমার বাবা তখন আসে নি। ওনি তোমাকে এসে নিয়ে যেত। আমি তো আর বারন করে নি। কিন্তু আমাকে হারিয়ে তোমার অব্দি পৌছাতে হত। এখন কি চাও তুমি। তুমি কি আমার সাথে খুশি নও। যেখানেই যাও আমার ছেলেকে যাতে আমার বড়ির বাহিরে নিতে না দেখি।
ইয়ানা আহানের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায়। ওতো আহানকে একটু বুঝানোর জন্য এই কথাগুলো বলেছে। তখন সে কোন পরিস্থিতিতে ছিলো।
ইয়ানা — কোথায় যাব আমি? আর আমার ছেলেকে কোথায় রেখে যাব।
আহান — তুমি জানো। আমি কিভাবে বলব? আমার ছেলেকে আমার কাছে রেখে যাবে।
ইয়ানা — মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন আমি বাড়ি থেকে চলে যাই। আর ইয়াজকে আপনার কাছে রেখে যাই তাইতো।
আহান মোবাইল সক্রল করতে করতে উত্তর দেয় —-
“” হুম। “”
ইয়ানা রেগে আর কিছু বলে না। তাকে যাওয়ার কথা বলছে তাই না। ঠিক আছে আমি ও চলে যাব তবে ছেলেকে তো জীবনে ও রেখে যাব না। সকাল হোক শুধু।
ইয়ানা রাগে দুঃখে ইয়াজকে নিয়ে বারান্দায় যেতে নিবে তখন ওই আহান ইয়ানাকে ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” বারান্দায় যাবে ভালো কথা এই রাতে ওকে নিয়ে যাচ্ছ কেনো ইডিয়েট।
ইয়ানা ভুলেই গিয়েছিলো এখন যে রাত। তাই ইয়াজকে বিছানায় সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়।
ইয়ানা চলে যেতেই আহান ইউভিকে ফোন দেয়।
আহান — ইয়ানাকে তো রুম থেকে বের করলাম এখন বুঝব কিভাবে কোনো ভয়েস ক্যামেরা লাগানো আছে কি না।
আহান ইউভির কথা মত সমস্ত রুম চেক করে। তারপর এক পর্যায়ে সে তার কাঙ্খিত জিনিসটি পেয়ে ও যায়।
আহান — পেয়েছি। এখন শুধু জানা দরকার কোন ইলেক্ট্রিশিয়ান এসেছিলো আমাদের বাড়িতে। এত গার্ড নজর এড়িয়ে কোনো সামান্য মানুষ আসা সম্ভব না। এমন কেউ এসেছে যার চতুরতা সম্পর্কে ধারনা আছে। আমি ৯০% সিউর সাহিল এসেছিলো। আর মাত্র এক সপ্তাহ এর পরে এদের কাহিনী শেষ।
ইউভি —-কিন্তু তুই বুঝলি কিভাবে রুমে ভয়েস ক্যামেরা লাগানো।
আহান বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,
“” শব্দ আসছিলো একটা যখন আমি আহিয়ার সাথে কথা বলি। শব্দটা কানে আসলে প্রথমে বুঝতে পারি নি কিসের শব্দ। কিন্ত কিছু সময়ের ব্যবধানে বুঝতে পেরেছি। বুঝার পর সাথে সাথে তোকে এস এম এস করলাম।
ইউভি — কি চিন্তাভাবনা তোর ব্রো।
আহান — ক্যামেরা নষ্ট করে দিয়েছি। এখন ফোন কাট বউ আমার রেগে আছে। এই কাজের জন্য ইয়ানাকে চলে যাওয়ার কথা বলেছি এখন রাগ করে বারান্দায় চলে গিয়েছে। এই মেয়ে কোনোদিন আমাকে বুঝতেই পারে নি। জীবন চলে যাবে কিন্তু ওকে কোনোদিন ছাড়তে পারব না। সেটা কি কোনোদিন বুঝবে না।
ইউভি আহানের কথা শুনে হাসি দিয়ে বলে,,,,
অনুভবে তুমি পর্ব ৫২
“” তকে বুঝে দেখেইতো সব কিছু মনে নিয়ে সংসার করছে। এখন যা মেয়েটার রাগ ভাঙ্গিয়ে আয়।
আহান ইউভির সাথে কথা বলা শেষ করে ইয়ানার দিকে অগ্রসর হয়।