অনুভবে তুমি পর্ব ৫৫

অনুভবে তুমি পর্ব ৫৫
লিজা মনি

সকালের সোনালি আভার মুখে পড়তেই ইয়াজ নিভু নিভু নেত্র মেলে নিজের মাম্মামকে খুজতে থাকে। ইয়ানাকে না পেয়ে ঠোঁট ভেঙ্গে কান্না করে উঠে। ছেলের কান্না শুনে ইয়ানা ওয়াশরুম থেকে তাড়াতাড়ি করে চলে আসে। দেখে ইয়াজ হাত পা ছিটিয়ে কান্না করে আচ্ছে। ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে ইয়াজকে আলতো করে কোলে তুলে নেই।
মায়ের কাছে যেতেই ইয়ানার শরীরে মুখ ঘেসতে থাকে। ইয়ানা ছেলের কান্ড দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
“” এখন তো খাওয়াতে পারব না আব্বু মাম্মাম মাত্র শাওয়ার নিয়ে এসেছি। এখন তোমার কাঙ্খিত খাবার দিলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। আর একটু অপেক্ষা কর। “”

কিন্তু বাচ্চা মানুষ কি আর ভাষা বুঝে। ইয়াজ একাধারে কান্না করতে থাকে।
ইয়াজের কান্না শুনে আহান ঘুম থেকে উঠে পড়ে। শাওয়ার নিয়ে মাত্র ওই শুয়েছিলো। আহান ইয়াজের কান্না দেখে কপাল কুচকে বলে,,,,
“” কান্না করছে কেনো এইভাবে? ”
ইয়ানা — আপনার ছেলের খিদে পেয়েছে তাই কান্না করছে।
আহান — তাহলে খাওয়াচ্ছ না কেনো? এইভাবে কান্না করাচ্ছো কেনো ওকে?
ইয়ানা হতাশ হয়ে বলে,,,,
“” আমি মাত্র শাওয়ার নিয়ে এসেছি খাওয়াব কিভাবে? ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।
আহান দাত কিড়মিড়িয়ে বলে,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তুমি জানতে না ওর এই সময় খিদে পায় তাহলে শাওয়ার নেওয়ার আগে খাইয়ে গেলে না কেনো? ”
ইয়ানা — আপনার ছেলে ঘুমে বুদ হয়ে ছিলো জানতাম নাকি এখন ওই উঠে যাবে।
আহান আর কিছু না বলে ইয়ানার থেকে ইয়াজকে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। ছেলেটা এখন ও কান্না করছে। আহান এইটা সেটা বলে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই থামছে না। থামবে কিভাবে বাচ্চারা কি খিদের জ্বালা সহ্য করতে পারে নাকি। আহানের এইবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। ইচ্ছে কিরছে ইয়ানাকে দুইটা থাপ্পর বসাতে। আহান বেলকনি থেকে রুমে গিয়ে ইয়ানার উদ্দেশ্যে বলে,,,,
” এক্ষনি ওর কান্না থামাও। শাওয়ার নিয়েছো সমস্যা নেই কিছু হবে না। ও কতটুকু আগে খেয়েছিলো?
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,
” হয়ে গেছে প্রায় চল্লিশ মিনিট বা এক ঘন্টার মত ”
আহান দাতে দাত চেপে বলে,,,,

” যেখানে বাচ্চাদের দশ থেকে বিশ মিনিট পর পর খাওয়াতে হয় সেখানে চল্লিশ মিনিটের বেশি হয়ে গেছে সেখানে কাঁদবে না তো কি করবে ইডিয়েট। তাড়াতাড়ি ওকে খাওয়াও।
ইয়ানা ইয়াজকে কুলে নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে বাচ্চার খাবার দিয়ে দেয়। কিন্ত ওনি তো কান্নায় উঠেছে এত সহজে খাবার মুখে তুলবে নাকি। একাধারে কান্না করেই যাচ্ছে কিছুতেই মুখে তুলছে না। ওনি হলেন মাফিয়া ডন অগ্নি চৌধুরির ছেলে রাগ না থাকলে কি করে হয়। রাগ আর জেদ না থাকলে তো আভিজাত্য চলে যাবে। ইয়ানা হতাশ হয়ে আহানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,
“” ও তো খাবার মুখেই তুলছে না খাওয়াব কিভাবে?”
ইয়ানার কথা শুনে আহান ইয়ানার দিকে তাকায় সে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
আহান তাকাতেই ইয়ানা ঠোঁট উল্টে বলে,,,

” খাচ্ছে না ”
আহান ল্যাপটপ ভিবানে রেখে ইয়ানা আর ইয়াজের কাছে যায়। এরপর মেঝেতে হাটু ভাজ করে মুখোমুখি বসে।
আহান ইয়াজের গালে চুমু খেয়ে বলে,,,
” মাম্মামকে কষ্ট কেনো দিচ্ছো তুমি বাবা? কান্না করা ভালো ছেলেদের লক্ষন না।
আহান এইটা সেটা বলে নিজের হাতে ইয়াজের মুখে খাবার দিয়ে দেয়। এক সময় ছেলেটা ও ঠান্ডা হয়ে যায়। আহানের হাতের স্পর্শ পেতেই ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ইয়াজকে খেতে দেখে আহান একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।
ইয়ানার দিকে তাকাতে দেখে লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। ইয়ানার লজ্জার কারন বুঝতে পেরে আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,

” এত লজ্জার কি আছে। দুই বাচ্চার মা হয়েছে এখন লজ্জা পাওয়াটা শুভা পায় না। ”
ইয়ানা কটমট চোখে আহানের দিকে তাকায়।
আহান — তোমার ছেলের কান্না থেমে গেছে বেগম সাহেবা। ধন্যবাদ দেওয়ার বদলে রেগে যাচ্ছ। এখন আমি না থাকলে মা ছেলে দুইজনে মিলে কান্না করতে।
ইয়ানা — যে যেমন তার ছেলে ঠিক তেমন । এতক্ষন আমি বলছিলাম কিছু হয় নি আর যখন বাবা বলেছে ওমনি ছেলের কান্না শেষ বাহহ। এই দিন দেখার জন্য জন্ম দিয়েছিলাম।
আহান — ইয়ানা তুমি কি একটা জিনিস খেয়াল করেছো?
ইয়ানা — কি?

আহান — তুমি ঠিক আগেকার মায়েদের মত হয়ে যাচ্ছ। তারা বলত ঠিক তোমার মত এইসব বলতো। তুমি যেগুলো সব সময় বলো,, এই দিন দেখার জন্ম দিয়েছিলাম,,, একদম ঠিক বাপের মত হয়েছে,, আর ও অনেক কিছু বলো কিন্তু সেগুলো এখন মনে পড়ছে না।
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,,
” মজা করছেন? ”
আহান ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি সংযত করে বলে,,

” ওহুম একদম না। আমার বউকে নিয়ে আমি মজা করতেই পারি না। কিন্তু মাঝে মাঝে বউকে বাচ্চা নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে দেখে একটু হাসি পায় এই আরকি। ”
ইয়ানা — করে নিন যত খুশি মজা। মা হলে বুঝতেন।
আহান — কেনো তোমাকে আমি সাহায্য করি না?
ইয়ানা — না করছি নাকি। কিন্ত আজ আপনি জিমে গেলেন না যে?
আহান — আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই অফিস আর জিম দুইটাই বন্ধ।
ইয়ানা — বাড়িতে আপনার আবার কি কাজ?
আহান — হুম বলব ইয়াজ কি ঘুমিয়ে পড়েছে।
ইয়ানা — আপনার কি মনে হয় এখন ঘুমাবে। এখন যদি চাদে গিয়ে ও ভ্রমণ করিয়ে আনি জীবনে ও ঘুমাবে না দশটার আগে।
আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,,

” ইয়াজকে দোলনায় শুইয়ে দিয়ে আসো।
ইয়ানা কপাল কুচকে বলে,,,
” কেনো? ”
আহান — তোমাকে আসতে বলেছি আসবে কি না সেটা বলো এত প্রশ্ন করতে বলেছি।
ইয়ানা আহানের মৃদু ধমক খেয়ে চুপসে যায়। এখন ভালো এখন আবার রেগে বোম হয়ে যায়। গিরগিটি ও এত তাড়াতাড়ি রং পালটায় না অগ্নি চৌধুরি যেভাবে নিজের রং পালটায়। একজন ব্যক্তি এত রুপ নিয়ে চলে কিভাবে? আমি হলে তো কবেই ক্লান্ত হয়ে চান্দের দেশে চলে যাইতাম। ওনার কি একটু ক্লান্ত অনুভব হয় না।
ইয়ানা এইসব ভেবে আহানের কাছে আসে। এরপর একদম আহানের সামনাসামনি গিয়ে দাঁড়ায়। আহান কার্ভাড থেকে একটা ব্যাগ বের করে। ইয়ানা শুধু আহানের কান্ড দেখছে। আহান ইয়ানাকে ঠিক আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এরপর ইয়ানার সামনে একটা পাকিস্তানি ড্রেস বের করে শরীরের উপর রেখে।
আহান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,

“পছন্দ হয়েছে”
ইয়ানা — খুব
আহান ইয়ানার পিছন দিকে মাথায় চুমু খেয়ে বলে,,
“তাহলে পড়ে আসো। ”
ইয়ানা — ওকে
ইয়ানা ড্রেস টা নিয়ে ট্রায়াল রুমে ডুকে পড়ে।
আহান হাতের ঘড়ি লাগিয়ে ইয়াজকে দোলনা থেকে তুলে নিজের কোলের উপর বসায়। কার্ভাড থেজে ছোট ছোট দুইটা কাপড় বের করে ইয়াজকে বিছানার উপর শুইয়ে দেয়। ইয়াজ আহান কে দেখে হাত পা ছুড়াছুড়ি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। হয়ত কিছু একটা বলছে চাচ্ছে কিন্তু বলতে পারছে না। আহান ইয়াজের ভাবভঙ্গি দেখে বলে,,,,

“” কাপড় কেনো পরাচ্ছি তাইতো? আজ তোমাকে আর তোমার মাম্মামকে নিয়ে বাবা লং ড্রাইভে যাব।
ইয়ানা ট্রায়াল রুম থেকে বের হয়ে দেখে আহান ইয়াজকে ড্রেস চেইঞ্জ করে দিচ্ছে।
ইয়ানা — সেকি ওর ড্রেস চেইঞ্জ করছেন কেনো? আমি রাতে ঘুমানোর আগে ড্রেস চেইঞ্জ করে ঘুম পাড়িয়েছিলাম।
আহান — তুমি চেইঞ্জ করে নিয়েছো?
ইয়ানা — হুম। দেখে বলুন কেমন লাগছে?
আহান ইয়াজের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” হুম সুন্দর ”
ইয়ানা — আপনি তো তাকান নি তাহলে বুঝলেন কিভাবে?
আহান — এমনি।
আহানের এড়িয়ে চলাটা ইয়ানার মোটে ও পছন্দ হয় নি। ইয়ানা কিছু একটা ভেবে মন খারাপ করে ফেলে। কান্না ও আসছে প্রচুর।

ইয়ানা — বেবি হওয়ার কারনে আমি কি বেশি মোটা হয়ে গিয়েছে আহান? আমাকে কি আর আগের মত সুন্দর লাগে না। নাহলে তাকাচ্ছেন না কেনো আমার দিকে।
ইয়ানার কান্নামিশ্রিত কথা শুনে আহান অবাকের চরম পর্যায়ে পৌছে যায়। ইয়ানার কাছে গিয়ে গালে হাত দিয়ে বলে,,,,
“” হেই পাগলি কান্না করছো কেনো? আপনাকে দেখে তো এমনি তে আমি ঠিক থাকতে পারি না। এখন যদি আপনার এই ধ্বংসকারী রুপ দেখি আমি অগ্নি চৌধুরি কন্ট্রোললেস হয়ে যাব। যেটা এই মুহূর্তে চাচ্ছি না। আজ আমার দুই প্রান ভোমড়াকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাব।
আহানের কথা শুনে ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,
” সত্যি!”.

আহান — হুম তবে এত অবাক হওয়ার কি আছে?
ইয়ানা — কখনো নিয়ে যান নি তাই।
ইয়ানার কথা শুনে আহান একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,
“” এত অভিযোগ আমার প্রতি তোমার। আর কি কি অভিযোগ আছে শুনি?
ইয়ানা — এই না না আপনার উপর আমার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু কালো দুনিয়া থেকে সরে আসলেই হবে।
আহান — তাই কোনো অভিযোগ নেই? কালো দুনিয়া থেকে যদি সরে না আসি তাহলে?
ইয়ানা — তাহলে আর কি হবে আমার নিয়তি ভেবে মেনে নিব। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত চেষ্টা করব তাকে যাতে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারি। তাকে যে আমি খুব ভালোবাসি ছেড়ে তো আর চলে যেতে পারব না।
আহান — এত ভালোবাসো আমায়। মরতে রাজি আছে এমন মানুষ পাওয়া যায় কিন্তু সকল হিংস্রতা বা তার সমস্ত কিছু ধৈর্য ধরে সহ্য করবে এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন।

আহানের কথা শুনে ইয়ানা আর কিছু বলে না।
আহান ইয়াজকে কোলে তুলে নেয়। ইয়াজের পুরো শরীরে
ভালোভাবে কোমল ছোট কমফোর্ট জড়িয়ে নেয়।
আহানের পিছন পিছন ইয়ানা ও যায়।
গাড়ির কাছেই আসতেই ইয়ানা বলে,,,,
” বাবুর ডায়াপার্ট আনে নি। আপনি ওকে একটু ধরুন নিয়ে আসছি।
আহান — না থাক তোমার কষ্ট করে আর উপরে যেতে হবে না। আমি নিয়ে আসছি তবে গাড়ির কাছ থেকে যাতে কোথাও না যেতে দেখি।
ইয়ানা — হুম।
আহান ইয়ানা আর ইয়াজকে রেখে উপরে চলে যায়। ইয়ানা গাড়ির আশেপাশে ঘুরছিলো এমন সময় কেউ গাড়ির ডিকি থেকে কালো আবৃত হওয়া এক মানব বেরিয়ে আসে। ইয়ানা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই ওর মুখে চেপে ধরে। কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে ইয়ানা ঙ্গান হারিয়ে লোকটির কোলে ঢলে পরে। ঙ্গান হারানোর আগে শুধু একটা কথা ওই মনে মনে উচ্চারন করছিলো আহান আপনি কোথায়? আমাদের সন্তানকে বাঁচান।

কিছুক্ষন পর আহান নিচে নেমে এসে ইয়ানাকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে আসে। কোথায় গেলো এই মেয়ে। গাড়ির আশেপাশে দেখতে না পেয়ে আহানের মাথায় ধপ করে আগুন ঝলে উঠে। বার বার বারন করার পর ও কোথায় গিয়েছে। আহান ইয়ানার নাম ধরে ডাকা শুরু করে কিন্তু ইয়ানার কোনো সারা শব্দ নেই। অজানা ভয় মাথায় চেপে বসে। তাড়াতাড়ি করে বারান্দার ফুটেজ দেখতে থাকে। কিন্তু ফোটেজ শুধু ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। ভালো করে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আহান বাড়ির আসে পাশের সমস্ত বডিগার্ডকে এক সাথে করে।
আহানের চোখ দিয়ে আগুনের লাভা বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরবে। হাতের রগগুলো ভেসে উঠেছে।

প্রত্যেকটা গার্ড মাথা নিচু করে রেখেছে।
আহান হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
“” এই কিছু সময়ের ব্যবধানে তোমরা কাউকে বের হয়ে যেতে দেখেছো?
গার্ড –. জ.. জি স্যার একজন বয়স্ক মহিলা আর একজন বয়স্ক পুরুষ বের হয়ে গিয়েছে।
আহান গার্ড টার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” তাদের পরিবেশ কেমন ছিলো? ”
একজন গার্ড — ভিক্ষুক ছিলো স্যার। তবে ওদের কাছে একটা বড় বক্স ছিলো। জিজ্ঞাসা করাতে বলেছে চৌধুরি বাড়ির পুরাতন কাপড়চুপড় আর মেয়েলি জিনিসপত্র আছে। মেয়েলি জিনিস বলাতে চক্ষু লজ্জায় আর চেক করি নি। তাদের অবস্থা খুব দরিদ্র ছিলো তাই বেশি জিজ্ঞাসা বাদ করি নি। ”
আহান গার্ডের গলায় ছুরি ধরে হুংকার দিয়ে বলে,,,,

“” চেক করিস নি কেনো বাস্টার্ড ওইখানে অগ্নি চৌধুরির প্রান ভোমড়া ছিলো।
আহান কাউকে কিছু না করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পরে। আহানের যাওয়া দেখে সমস্ত গার্ড ও গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। বার বার ইয়াজের নিষ্পাপ মুখখানা ভেসে উঠছে। ইয়ানার মিষ্টি মুখটা বার বার ভেসে উঠছে। আহানের মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসছে। এইটা কাদের কাজ আহান খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। এইটা তাদের অনেকদিনের চক্রান্ত করা প্লান। নাহলে কিছু সময়ের ভিতরে এত বড় কাজ কিছুতেই করতে পারত না। ক্যামেরা ও নষ্ট করে দিয়েছে। আহানের চিন্তা চেতনার মধ্যে এক রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে। বিরবির করে বলে,,
“” তোমরা অগ্নি চৌধুরির সাথে লাগতে এসেছো কিন্তু তার সম্পর্কে তোমাদের ধারনা ও নেই। তরা চলিস ঢালে ঢালে আর আমি চলি পাতায় পাতায়। অগ্নি চৌধুরি সব জায়গায় একটা হলে ও সূত্র রেখে দিয়ে যায়। আর মাত্র কিছু সময়ের ব্যবধানে তদের কাছে পৌঁছাচ্ছি। আহান গাড়িতে রাখা ল্যাপটপ্টাকে এক হাতে বন্ধ করে কিছু একটা মেসেজ করে ফুল স্প্রিডে গাড়ি ছেরে দেয়।

মুখের উপর পানি পড়তেই ইয়ানা ধরফরিয়ে উঠে। চোখ কিছুতেই খুলতে পারছে না মাথাটা ভীষন ধরে আছে। তবুও অনেক কষ্টে চোখ খোলে নিজের অবস্থান পরখ করতেই আতকে উঠে। ইয়ানাকে চেয়ারের সাথে বেধে রেখেছে। ইয়ানা চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে সাহিল ইয়াজকে কোলে নিয়ে রেখেছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে এক অর্ধ বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা। কিন্তু মুখে আর শরিরে আভিজাত্যের ছোয়া রয়েছে।
ইয়ানা — সাহিল আপনি? আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছো? আর আমার ছেলে তোমাদের কাছে কেনো?
সাহিল বিকৃত হাসি দিয়ে বলে,,,,

” তোমাকে সোহাগ করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। অগ্নি চৌধুরি তার বউকে নিয়ে খুব পসেসিভ তাই না। কিন্তু আজ তার বউকে দশজনের হাতে ছেড়ে দিব। কিন্তু আমি যাব না কারন আমি কারোর ছুয়ে দেওয়া জিনিস ধরি না। তোমাকে আনতে গিয়ে কত কষ্ট করতে হয়েছে জানো। তোমার ছেলেটা কিন্তু খুব সুন্দর একদম অগ্নি চৌধুরির মত। কিন্ত এইটা ওর জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ”
লোকটি— যা খুশি কর। আমরা শুধু চাই অগ্নি চৌধুরির বিনাশ।
ইয়ানা ভয়ে আঁৎকে উঠে । এরপর মাথা নাড়িয়ে বলে,,,
“না তোমরা এমন করতে পারো না। আমার সাথে এমন করে তোমাদের কি লাভ। আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও প্লিজ ও কান্না করছে। ”
সাহিল হাসি দিয়ে বলে,,,,

” একদম অগ্নি চৌধুরির মত বাজপাখির ন্যায় গলা। ইচ্ছে তো করছে তোমার ছেলের গলায় শিষা ডুকিয়ে দেয়।
সাহিলের কথা শুনে ইয়ানা চিৎকার দিয়ে বলে,,,,
“” নায়ায়ায়ায়ায়ায়া। প্লিজ এমন কথা বলো না। ”
ইয়ানার চিৎকার শুনে অর্ধ বয়স্ক লোকটি হাসি দিয়ে বলে,,,
” শিষা তো এখন ডুকাব না। আগে তিলে তিলে মারব যেভাবে আমার ছেলে রায়হানকে মেরেছে এরপর জবান নিব। তখন অগ্নি চৌধুরি বুঝবে ছেলেকে হারিয়ে ফেলার বেদনা। ”
রায়াহানের নাম শুনে ইয়ানা চমকে উঠে এরপর কাপাকাপা কন্ঠে বলে,,,,
” আপনি রায়হানের বাবা মানে রানবীর শেখ। আহানের কাকা কাকিয়া আর মায়ের খুনি তাই তো। আর আপনার পাশের মহিলাটা লিনিয়া শেখ মানে আহানের খালা। ”

ইয়ানার কথা শেষ হতেই রানবীন উচ্চস্বরে হেসে উঠে। রানবীরের এমন হাসি দেখে ইয়ানার গা গুলিয়ে আসছে।
রানবীর — এই তো মামুনি বুঝতে পেরেছো।অগ্নি চৌধুরি তাহলে ভালো বউ পেয়েছে যেমন রুপবতী তেমন বুদ্ধিমতী ও। তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষন কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাতো। অগ্নি চৌধরির মত ওই স্ট্রং তুমি। তবে আমি ও দেখি তোমার ওই স্ট্রংনেস কতক্ষন থাকে। যখন ছেলের উপর কিছু পড়বে তখন মাতৃত্বের আর্তনাদ এমনি জেগে উঠেবে।আর তর আর্ত্নাদে আমরা উল্লাশ করব।
রানবীরের কথা শুনেই ইয়ানা চোখে পানি ছেড়ে দেয়।
ইয়ানা — প্লিজ এত বড় অনৈতিকতা করো না। আমার ছেলেটাকে ছেড়ে দাও। ওর তো তিন মাস ও হয় নি এই পর্যন্ত। একদম নিষ্পাপ পবিত্র ফুল। ও তোমদের কি করেছে। যত মারার ইচ্ছে আমাকে মারো তবুও আমার সন্তানকে কিছু করো না।

সাহিল — এই বাচ্চার কোনো দোষ নেই কিন্তু ওর সবচেয়ে বড় দোষ হলো ও অগ্নি চৌধুরির ছেলে ওর অস্তিত্ব। শুনেছি ওর বাচ্চা নাকি ওর প্রান ভোমড়া। তাহলে এখন যদি একে কিছু করি অগ্নি চৌধুরি কষ্টে মরে যাবে। আর তার কষ্টে শান্তি পাব আমরা।
এই বলে সাহিল ইয়াজকে উলটো করে নেয়। ইয়াজকে উল্টো করার সাথে সাথে ইয়াজ চিৎকার শুরু করে।
ইয়াজের চিৎকার শুনে ইয়ানা কান্না করতে করতে বলে,,,,
“” আমার বাচ্চাকে ছেড়ে দে সাহিল মির্জা। তদের বর্বরতায় আল্লাহর গজব পড়বে তোদের উপর । ওর হাত পা এখন ও পরিপোক্ত হয় নি ও কষ্ট পাচ্ছে। অগ্নি চৌধুরি জানতে পারলে ছাড়বে না তদের। তিলে তিলে মারবে তোদের নরপশুর দল ”

ইয়ানার কথা শুনে রানবীর আর সাহিল উচ্চস্বরে হাসা শুরু করে। আর এইদিকে ইয়াজ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে থাকে। ইয়াজের চিৎকার ইয়ানার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। ইয়ানা চিৎকার করে বলে,,,,
“” কোথায় আপনি আহান। আপনার সন্তানের খুব প্র‍য়োজন আপনাকে। ও ওর বাবাকে ডাকছে আহান। আপনি তো বলেছিলেন আমাদের উপর এক টুকরু আচ আসতে গেলে আপনার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু আজ আপনি কোথায় খুব প্র‍য়োজন। আপনার অনুভবের সেহজাদী আপনাকে ডাকছে আহান। আমাদের আর্তনাদ কি আপনার হৃদয়ে কম্পিত ঝড় তৈরি করছে না।”

সাহিল — ডাক বেশি করে ডাক বাপ ছেলেকে এক সাথে শেষ করব।
তাদের বিকৃত হাসি ইয়ানাকে আর ও পাগল করে দিচ্ছে। মনে মনে শুধু আল্লাহকে ডাকছে আমার যা হোক কিন্ত আমার সন্তানের যাতে কিছু না হয়।
ইয়ানা লিনিয়ার দিকে তাকিয়ে অশ্রুভরা নয়নে তাকায়। কিন্তু তাকাতেই অবাক হয় তার চোখে ও পানি ভড়পুর। কিন্তু উনি কান্না করছে কেনো? ওনার তো খুশি হওয়ার কথা।
ইয়ানা — আপনি ও তো একজন মা আন্টি। সন্তান হারানোর বেদনা আপনি ও বুঝেন। আমার সন্তানকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন। কথা দিচ্ছি আমি এই ঢাকা শহর ছেড়ে দুরে কোথাও চলে যাব। আমি আর আমার সন্তান অগ্নি চৌধুরির আশে পাশে ও আসব না। আমার সন্তানের প্রান ভিক্ষা দিন।
লিনিয়া ইয়ানার কাছে আসতে যাবে তখন রনবীর হাত ধরে বলে,,,,,
“” বেশি বাড়াবাড়ি মায়া দেখালে এখানেই পুতে দিব। তাদের আনতে সাহায্য করেছিস দেখে এখন ও সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে আছিস। ”

রানবীরের কথা শুনে ইয়ানা অবাক হয়। নিজের ভালোবাসার জন্য কতকিছু করল আর সেই লোক আজ এইভাবে কথা বলছে। ইয়ানা লিনিয়ার দিকে তাকাতেই লিনিয়ে ইসারা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজের দুই চোখের পানি ছেড়ে দেয়। ইয়ানার ভাবনার মাঝে সাহিলের এক ভয়ংকর কথা ইয়ানার কানে এসে ধাক্কা খায়।
সাহিলা — ওকে এইভাবে উল্টিয়ে রেখে মজা নেই। এক কাজ করি একটু কেচ কেচ খেলা যাক।
ইয়ানা চিৎকার দিয়ে বলে,,,,

অনুভবে তুমি পর্ব ৫৪

“” ও ছোট দুধের বাচ্চা। শরীরে ব্যথা পাবে হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে”
কে শুনে কার কথা সাহিল ইয়াজকে ছুড়ে মারে রানবীরের উদ্দেশ্যে।
ইয়ানা এক গগন বিধায়ী চিৎকার দিয়ে বলে,,,,
“” ইয়াজ ”

অনুভবে তুমি পর্ব ৫৬