অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১৩
লিজা মনি
ইয়ানা বাংলাদেশে এসেছে শুনেই হল্লা পার্টি তারা সবাই চৌধুরি বাড়িতে উপস্থিত। ইয়ানার মন খারাপ দেখে উনি সবাইকে সংবাদ পাঠিয়েছে।
সবাইকে এত দিন পরে দেখে ইয়ানা খুশিতে গিয়ে আরু আর সুমুকে জড়িয়ে ধরে। বন্ধুত্ব হলো এমন একটা সম্পর্ক যা খাঁটি সোনার মত। অনেক দিন পর দেখা মানে শুধু দেখা হওয়া নয় এক সাথে অনেকগুলো পুরনো মুহূর্তের দরজা খুলে দেওয়া।
সুমু — তুই ছাড়া আমাদের গ্রুপটা অসম্পূর্ন ছিলো। প্রচুর মিস করেছি তকে। সময়টা যেনো থেমে গিয়েছিলো তুই আসার পর আবার চলতে শুরু করলো। গ্রুপ থেকে একজন চলে গেলেই মনে হয় পাশে কেউ নেই সব ফাকা।
আরু— আপনার গুনধর স্বামী কোথায় মি. অগ্নি চৌধুরি? অফফ সরি আমাদের তো আবার স্যার হয়।
রুহান — কিন্তু স্যারের কাহিনীটা বুঝলাম না। চার দিন ক্লাস করালো আর পাঁচ দিনের মাথায় আমাদের ফ্রেন্ডকে বিয়ে করলো আর ছয়দিনের মাথায় বিদেশে নিয়ে চলে গেছে। চার দিন প্রফেস্যার হওয়ার কি দরকার ছিলো?
ইয়ানা — সেটা তো আমি নিজে ও জানি না তদের কি উত্তর দিব।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সুমু— সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানিস ইনু আমাদের ক্লাসের মেয়েরা। তারা যখন শুনেছে তকে স্যার বিয়ে করেছে তখন ওদের অবস্থা যাস্ট দেখার মত ছিলো।
এই বলে সুমু উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
ইয়ানা — ভালো হয়েছে চলে এসেছে নাহলে চোখ দিয়ে গিলে খেত শাকচুন্নির দলেরা।
এরপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” কিরে তুই এইভাবে মুখ ভার করে বসে আছিস কেনো?”
আরু — আজকে এই হাদারামের মোড অফ। অবনি মেসেজ রিপ্লাই দিচ্ছে না ফোন দিলে ফোন তুলছে না উনি কষ্টের সাগরে ভাসার পর এখন এসে দেবদাস হয়ে বসে আছে।
তাদের কথার মাঝে আলিয়া তাদের জন্য কফি করে নিয়ে আসে। ইয়ানা সবাইকে কফি পরিবেশন করার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” কি বলেছিস আবার ওকে? ”
আকাশ — আমি কিছুই বলি নি। ও নিজেই রাগ করে বসে আছে।
আরু— শুন যারা প্রেমিক পুরুষ তাদের মুখে আমি কিছুই বলি নি মানে অনেক কিছু বলেছিস।
রায়ান — ওদের প্রেম মানে ই হলো বারো মাসে তেরো মাস ঝগড়া লেগে থকবে।
আকাশ — মজা নিচ্ছিস নে একদিন আমার ও সময় আসবে।
এইভাবে তারা হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠে। অরিদ আর আকাশ আগে ঝগড়া করলেও তারা এখন বন্ধুর মত। শিখা চৌধুরি নিজ দায়িত্বে ওদের মিলিয়ে দিয়েছে। উনি ও চান না ওনার ছেলের কারোর সাথে শত্রুতা থাকুক। অগ্নি কে তো উনি আর সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। জীবনের এক কালো অধ্যায় ওকে হিংস্র করে তুলেছে কিন্ত অরিদকে তো ওনি ঠিক রাখতেই পারে।
জঙ্গলের ভিতরে একটা পুরনো বাংলো। বাংলোটার চার পাশে ভিবিন্ন লতা পাতা দিয়ে ঘেরা। দুর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো পাতার স্তুপ। কিন্তু কাছে আসলে এক বিশাল আট্টালিকা। চারদিকে ঘন কালো ছায়া। শুনশান নিরবতা। একটা মানুষ হাটলে ও এক ভয়ংকার আওয়াজ উঠে আসে। এই নিরবতা কাটিয়ে একজন বিশাল দেহের ব্যক্তি ভিতরে প্রবেশ করে একদম ধীর পায়ে। ভিতরে প্রবেশ করতেই নিরবতা আর ও প্রখর হয়ে উঠে। ভেতরে বাঁধা একজন লোক। তার মুখ বেঁধে ফেলা। চোখগুলো বন্ধ করে রাখা পুরো মুখে জখমের চিহ্ন। মনে হচ্ছে হালকা পাতলা মাইর খেয়েছে। ভিতরে প্রবেশ করা লোকটি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। হাতে রয়েছে এক ছুরি। সে একটা চেয়ের টেনে বসে হাতে একটা সিগারেট ধরায়। রুমে হয়েছে অনেগুলো গার্ড। তারা সবাই এক আতঙ্ক নিয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে।
মাটিতে বাঁধা অবস্থায় লোকটি নিভু নিভু চোখে সামনে তাকায়। আবছা আলোয় শুধু একটা কালো হুডি পড়া অবয়ব দেখছে। তার চোখ দুটি ছাড়া সব ঢাকা। পড়ে থাকা লোকটি এইবার ভালোভাবে চোখ মেলে তাকায় এরপর লোকটির চোখের দিকে তাকায়। চোখ দুইটা ছিলো হিংস্র আর প্রতিশোধের এক অদ্ভুত নেশা। যে নেশার প্রথম টার্গেট হচ্ছে সে। আবছা আলোয় এরকম হিংস্র চাহনি দেখে লুটিয়ে পড়া ব্যক্তিটি রাগে অজস্র ভাষায় গালিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
“” কোন খ**** পোলা তুই? বুকের পাটা কত বড় হলে জনিকে তুলে এনে এইভাবে বেঁধে রেখেছিস? তর মা– বাপ বোন সব কয়টাকে না কুকুরের মত খুবলে খাব। শুধু ছাড় একবার।
জনির অকথ্য ভাষা শুনে ও ব্যক্তিটি নিশ্চুপ। তার ভিতরে ছুটছে আগ্নেইগিরির দাবানল। ভেসে উঠতে থাকে কিছু তিক্ত অতীত। সেই অতীতকে ঘিরে লুকিয়ে আছে এক টক্সিক হিরোর মনুষত্ব — যার জীবনে আলো আছে কিন্তু সে ছুয়ে দেখতে চাই না যদি আবার ও হারিয়ে যায়। সেই আলো যদি তার চোখ কে ঝলসে দেয়। কারন সে জানে আলো মানেই চোখে ব্যাথা লাগে।
সমস্ত নিরবতা ভেঙ্গে চেয়ারে বসে থাকা লোকটি হুডির আড়ালে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ছুড়ি দিয়ে হাত ঘেসতে ঘেসতে বলে,,,,,,
“” যেখানে আগুন নিয়ে আমি খেলা করি সেখানি তুই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস? মরা মানুষ ও আমাকে দেখে ভয় পায় কারন আমি মেরে তার পর আঘাত করি।
বাজ পাখির ন্যায় কন্ঠে না আছে মায়া আর না আছে ভালোবাসা । আছে শুধু বিষাক্ত অতীত আর হিংস্রতা।
লোকটির কর্কশ করা কন্ঠে লুটিয়ে থাকা ব্যক্তিটি ভয় পেয়ে বলে,,,,,,,
“” অ.. অগ্নি চৌধুরি?”
অগ্নি অট্টহাসি দিয়ে বলে,,,,
“” অফফ এত সহজে চিনে গেলি। ভেবেছি তর সাথে ধরা ছোয়া খেলব কারন এইটা তো তুই ভালোবাসিস।
জনি ঢুক গিলে বলে,,,,,,,
” কিন্তু আমি তো আপনাকে আইডল মানি আপনি তো আমার বাবার বন্ধু। তাহলে আমাকে কেনো এইভাবে আটকে রেখেছেন?
অগ্নি রেগে হাসি দিয়ে বলে,,,,
” হ্যা অনেক ভালো বন্ধু তর বাবার। শুধু আতিক শেখ ওরফে আতিক রহমান নয় তর চাচা রনবীর শেখ ও আমার বন্ধু। এখন তাদের ছেলে হলি তুই তাই বন্ধুর ছেলেকে আপ্যায়ন করতে এনেছি। অনেকদিনের হিসেব বাকি। আর আজ আমি সেই হিসেবের খাতা আবার খুললাম। খাতার এক একটা পৃষ্ঠা হলো তদের বংশের বিনাসের অধ্যায়। অফফ হ্যা ভুলে গেছিলাম অবাক হচ্ছিস তো তুই খুব তকে কেনো তুলে আনলাম। বিশ্বাস কর আমার বন্ধুর ছেলে তকে এখন তুলে আনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু তুই কি জানিস আমি বিয়ে করেছি। বউ আমাকে বলছে যদি তকে পেত তাহলে টুকরো টুকরো করে তকে কেটে ফেলত। আর সেই আদর্শ স্বামী হিসেবে আমি দায়িত্ব পালন করছি।
অগ্নি চৌধুরি বিয়ে করেছে কথাটা যেনো জনির কানে বজ্রের মত গিয়ে বিঁধেছে। অগ্নি চৌধুরি কোনো মেয়ের সাথে সংসার করতে পারে সেটা কল্পনাতীত। অগ্নি চৌধুরির মত এত এমন এক হৃদয়হীন লোক কারোর সাথে সংসার করছে।
জনি রেগে ফুস করে বলে,,,,,,
” আপনি নিজের লিমিট ছাড়াচ্ছেন অগ্নি চৌধুরি। আমাকে এইসব হুমকি দিচ্ছেন কেনো? আপনি আমাদের ডান হাত আমাকে কিভাবে বেঁধে রাখতে পারেন? ছাড়ুন আমাকে। নাহলে আপনার অস্তিত্ব মুছে দিব।
অগ্নি ঠান্ডা গলায় জনিকে বলে,,,,,,
” অস্তিত্ব মুছে দিবে? আমার ক্ষমতার জন্য তরা এখন ও বঁচে আছিস। কিন্তু সময় ফুরিয়ে এসেছে। অগ্নি কোনো নাম নয় সেটা হলো এক আতঙ্ক একটা ছায়া যা পুরো শহরকে গ্রাস করে ফেলে। যার নাম শুনলে আতঙ্কের বাসা বাঁধে প্রত্যেকটা নরখাদকের মনে। আর সেই আতঙ্কের বাঁসা তদের মনে লাগতে চলেছে। একদম লুকায়িত তদের বাপ চাচারা জানতে ও পারবে না।
জনি রাগে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,
“” বিশ্বাসঘাতক তকে আতিক আর রানবীর এই জায়গায় এনেছে আর তুই তাদের পিছনে ছুরি মারছিস।
অগ্নি এইবার ধীরে শান্তিতে চেয়ের থেকে উঠে আচমকা জনির পিঠে ছুরি আঘাত করে কর্কশ কন্ঠে বলে,,,,,
” আওয়াজ নিচে সোনা। এইটা অগ্নি চৌধুরির টর্চার সেল। এখানে শুধু তার হুংকার চলে আর বাকিগুলোর চোখে ভয়। কথায় আর শব্দে এক আতঙ্ক থাকবে। বিশ্বাসঘাতকতা ওদের থেকেই শিখা আমার। ভুলে যাচ্ছিস আমার অস্তিত্ব জনি। আরে ভুলিস না ভাই তর বাপ চাচারা আমাকে যত লোভ বা ব্রেইন ওয়াশ করাক না কেনো আমি সেই আহান চৌধুরি ওই আছি। কি ভেবেছিস মেরে ফেলেছিস আমার দুই বন্ধুকে। কিন্তু আফসোস আতিক কিছু করতে পারে নি। হয়ত ওদের বাবা মাকে খুন করে সে তাদের সম্পত্তি ভোগ করে আজকের এই রাজত্বে চালাচ্ছে কিন্তু তাদের সন্তানদের মারতে গিয়েও মারতে পারে নি। কারন আমি মরতে দেই নি।
জনি — কা.. রা এরা। কার কথা বলছিস?
অগ্নি — ওমা ভুলে গেলি এত সহযে। কেনো মনে পড়ছে না চব্বিশ তারিখ দিন শুক্রবার রাত তিনটার সময় ঘটিত সেই মর্মান্তিক রাতের কথা । যেদিন তর বাবা আর চাচারা মিলে দুই জন লোকের সাথে বিজন্যাস নিয়ে আলোচনে করছিলো। তদের পরিবার ও তো ছিলো। কারন ওইদিন ওদের বাড়িতে ফ্যামিলি পার্টি ছিলো। কিরে মনে পড়ছে না?
জনি মাথা নাড়িয়ে না বলে। অগ্নি এইবার রেগে ছুরি দিয়ে আরেকটা আঘাত করে বলে,,,,,,
” শালা মনে থাকবে কিভাবে সারাদিন মেয়ে নিয়ে তামাসা করলে। ওকে সমস্যা নেই আজ সব কথা আবার পুনরাবৃতি করে প্রতিশোধের পৃষ্ঠা পাল্টাতে থাকব।
অগ্নি এইবার চেয়ারে হেলান দিয়ে ফোন হাতে নেই। এরপর কাউকে ফোন দিয়ে বলে,,,,,,
“” তদের দেখতে চাচ্ছে আমার বন্ধু ছেলে। চলে আয় ব্রো। ”
কিছু সময় ব্যনধানে রুমে এসে দাড়া দুইটি অবয়ব। তাদের মুখ দেখে জনি চোখ বড় বড় করে ফেলে। অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” এরা তো তর বন্ধু ওদের ডেকেছিস কেনো.? ”
অগ্নি রহিস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” আরে ওদের পরিচয় জানবি না কারা ওরা।”
জনি — কারা ওরা?
অগ্নি জনির দিকে ঝুকে গিয়ে বলে,,,,,
” মনে করিয়ে দিব সোনা চুপ করে বসে থাক। কারন তুই যদি জেনে মরিস তাহলে তর মৃত্যুতে চোখে এক প্রকার ভয় আর আতঙক দেখতে পাব। আর তর আর্তনাদের ভয়েস শুনে তর বাপ চাচা গলা কাটা মুরগির মত ছটফট করবে। আর সেটাই তো আমরা তিন জন চাই। ওই যে ওদের দেখতে পাচ্ছিস ওরা হলো সেই দুইজন যাদের বাবার সম্পত্তি দিয়ে তর বাপ রাজত্ব চালাচ্ছে।
জনি অবাক হয়ে রায়ান আর ইউভির দিকে তাকায়। ওরা কিভাবে বেঁচে আছে? জনি এইবার অগ্নিকে ভয় পেতে থাকে। সে অগ্নিকে চিনে। যা সাধারন মানুষ জানে না সে সব জানে। ওর মারার স্টাইল এক জঘন্য নরখাদকের মত। জনি এইবার পরাজিত হয়ে বলে,,,,,
“” সেদিন আমি তো কিছু করি নি। আমার বাবা কাকা আর অন্যরা করেছে। তাহলে আমাকে কেনো নিয়ে এসেছিস? কিন্তু তর সাথে তো কিছু করে নি। তকে আর ও ভালোবেসেছে। আমার থেকে বেশি তকে প্রাধান্য দিয়েছে তাহলে তুই তাদের পিছনে লাগছিস কেনো? দেখ অগ্নি তদের বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না। তরা বর্তমানে অনেক শক্তির একটা স্থানে দাঁড়িয়ে আছিস। নিজেদের সাথে নিজেরা শত্রুতা করা মানে বোকামি করা।
অগ্নি ছুরিতে হাত রেখে ইউভি আর রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে।,,,,
“” এ অতিরিক্ত কথা বলছে না? বন্ধু কবে ছিলাম যে নতুন করে শত্রু হব। আমি তো শুধু লোক দেখানো বন্ধুত্ব করি। অনেক কথা বলে ফেলেছি। জীবনে প্রথম কাউকে মারতে এসে এত কথা বলছি।
অগ্নি ইউভি আর রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” তরা যাই বলবি তাতেই আমি আগুন ধরাব কিন্তু ও আমার শিকার। এর থেকে তরা দুরে থাক।শুরু করব কি?
রায়ান আর ইউভি এইসব দেখে অভ্যস্ত হলেও অগ্নির এত ভয়ংকর রুপ দেখে তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে যায়। একেক সময় একেক রকম খুনের বর্ননা। যা দেখলে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাওয়ার মত।
সবার কথার মধ্যে জনি আতঙ্ক নিয়ে বলে,,,,
“” আমাকে ছেড়ে দাও অগ্নি সারাজীবন গোলামি করব। ”
অগ্নি — তুই তো একদিন মরবি জনি আমি শুধু সময়টা এগিয়ে দিচ্ছি। আমি কিন্তু খুনি না। আমি শুধু তদের মত পাপীদের ধ্বংস করি। কিন্তু আমার মারার মাপকাঠি থাকে বিকৃত।
হঠাৎ অগ্নি চেয়ার থেকে উঠে বসে। একটা ব্যাগ হাতে নেই। এরপর জনির দিকে তাকিয়ে রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” এই চোখ রাঙ্গিয়ে একটু আগে কথা বলছিলি না আমার সাথে? আমি তর মৃত্যু দেখতে আসি নি দেখতে এসেছি আতঙ্ক। নে চিৎকার কর……
এই বলে অগ্নি ব্যাগ থেকে কিছু বিষাক্ত পোকা চোখে ডুকিয়ে সাথে সাথে দুই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে চেপে ধরে। জনি বিকট চিৎকার করতে থাকে আর অগ্নির হাত চোখের উপর থেকে ছাড়াতে থাকে। বিষাক্ত পোকাগুলো জনির চোখ খুবলে খাচ্ছিলো। চোখ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়তে থাকে। অগ্নির হাত রক্তাক্ত হয়ে পড়ে। জনি যন্ত্রনায় ধৈর্য হারা হয়ে আর্তনাদ করে বলে,,,,,
“” আমি আর পারছি না অগ্নি ছেড়ে দে। যন্ত্রনায় আমার জীবন বের হয়ে যাচ্ছে।
অগ্নি শান্ত সুরে বলে,,,,,
“” উফফ কি যে শান্তি লাগছে তকে বলে বুঝাতে পারব না। এই চোখ দিয়ে তো তুই মেয়েদের দিকে বাজে দৃষ্টি দিস। তর কারনে মেয়েরা ঘর থেকে বের হতে পারে না। দেখ তর চোখ দুটো এখন পোকার দখলে। ঠিক যেভাবে একটা মেয়ে মিনতি করে বলে,,, ছেড়ে দিন আমাকে আমি আর পারছি না। তখন কি ছেরে দিস? তখন তরা আর ও উল্লাস করিস। আমি ও তো তদের লোক তদের থেকেই আমার শিক্ষা। কারোর আর্তনাদ দেখলে উল্লাস করার। আজ তুই ওই মেয়েদের মত আর্তনাদ করবি আর আমি পাব এক মানসিক শান্তি।
জনি — আর কখনো মেয়েদের দিকে হাত বাড়াব না। এইবারের মত মাফ করে দে। তর পায়ের কাছে পরে থাকব আজীবন।
অগ্নি — সুযোগ আমি কখনো কাউকে দেই না। যাকে একবার শিকার করে আমি আমার টর্চার সেলে নিয়ে আসি তার জবান বন্ধ করে এরপর ছাড়ি। এইটা অগ্নি চৌধুরির রুলস।
অগ্নি জনির চোখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে একটা ছুড়ি হাতে নেই। এরপর ছুড়ি দিয়ে হাতের প্রত্যেকটা আঙ্গুল কাটতে থাকে। জনির চিৎকারে টর্চার সেল ভারি হয়ে উঠে। জনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি একটা স্পিকার এনে বসিয়ে দেই আর শান্ত কন্ঠে বলে,,,,,
” গলা ফাটিয়ে আর্তনাদ করবি আর তর আর্তনাদের শব্দ শুনে তর বাপ গলা কাটা মুরগির মত ছটফট করবে।
এরপর বিরবির করে বলে ধাপ দুই….
হাতে একটা করাত নিয়ে জনির পুরুষাঙ্গে বরাবর কো*প বসায়। আবার ও চিৎকার করে উঠে। মনে হচ্ছে জবান বের হয়ে আসছে। জনির চিৎকার আর অগ্নির মুখে হাসির রেখা। পর পর দুই বার কোপ বসাতেই অন্ডকোষ দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে জনি ঙ্গান হারিয়ে ঢলে পড়ে। রক্তে ভেসে যায় পুরো মেঝে।
অগ্নি একজন গার্ডকে আদেশ দিয়ে বলে,,,,,
” এসিড মিশ্রিত ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো। ”
গার্ড ভয়ে নিয়ে কাপাকাপা হাতে সেটা অগ্নির কাছে এগিয়ে দেয়। অগ্নি পানি মিশ্রিত এসিডের গ্লাসটা হাতে নিয়ে জনির মুখের উপর ছুরে মারে। মুহুর্তেই জনি ছটফটিয়ে উঠে। মনে হচ্ছে মুখের উপর কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। ঝলসে যাচ্ছে পুরো মুখ। ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে বলে,,,,,,
“”” আমাকে এইভাবে না মেরে একবারে মেরে ফেল। আমি তর কাছে মৃত্যু ভিক্ষা চাইছি।”
অগ্নি শান্ত সুরে বলে,,,,,,
” এই পর্যন্ত কতটা মেয়ের মুখে এইভাবে এসিড দিয়েছিস তুই। তারা ও ঠিক এইভাবে কাতরাচ্ছিলো। কিন্তু তর মুখে ছিলো পৈশাচিক হাসি। তুই এত দিন যে অঙ্গগুলোর অহংকারে এত বেহায়াপনা করেছিস আজ দেখ তার সাথে কিছুই নেই। তর চোখ, তর হাত, তর সৌন্দর্য, তর ক্ষমতা আর সবচেয়ে বড় অস্ত্র তর পুরুষ্যত্ব যার ক্ষমতা আগে দেখাতি সেটা দেখ এখন তর দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন। চিৎকার কর জনি তর চিৎকার আমার প্রশান্তি আনে।
জনি করুন চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি এরপর ফিসফিস করে বলে,,,,,, ধাপ তিন…
এরপর হাতে থাকা ছুড়ি দিয়ে চামরার ভিতরে চালিয়ে দেয়। মনে হচ্ছে শরীরে কোনো মানচিত্র আঁকছে। গার্ডগুলো ভয়ে জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে থকে। ইউভি আর রায়ান বাহিরে চলে যায়। তারা জানে অগ্নির সম্পর্কে এর ভয়ংকর মৃত্যু দেখার শখ নেই তাদের। তারা এর আগে যতবার দেখেছে ততবার আৎকে উঠেছে।
অগ্নি কিছু সময়ের ভিতরে শরীরের চামরা আলাদা করে ফেলে। জনি ও ঢলে পড়ে মৃত্যুর কোলে।
অগ্নি শান্ত চোখে জনির দিকে তাকায় এরপর একটা বিকৃত হাসি দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। হাতে থাকা স্পিকারের ভয়েস কারোর কাছে সেন্ড করে দেই। এরপর জনির নগ্ন বিকৃত হওয়া লাশের ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয়। নিজের কাজ কমপ্লিট করে একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শান্ত হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে একটু আগে কিছুই হয় নি।
অগ্নি চলে যেতেই গার্ডরা জনির লাশটাকে সালফিউরিক এসিডে ডুবিয়ে দেয়। মুহূর্রতের মধ্যে মাংস খসে পড়তে থাকে। ধীরে ধীরে নিঃশ্বেস হয়ে যায় জনির দেহ। চিরকালের জন্য মুছে যায় একটা পাপ। যার আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে থাকত মেয়েরা। আজ তার কোনো অস্তিত্ব নেই। রক্তের সাগরে ভেসে উঠা মেঝে একদম পরিস্কার হয়ে যায়।
কিছু সময়ের ব্যবধানে টর্চার সেল আগের মত অন্ধকার হয়ে যায়। কেউ দেখলে বলবে না এখানে এক নিশৃঃস মৃত্যু ঘটেছে। একদম শান্ত পাতাঘেরা এক অন্ধকার বাংলো।
ইয়ানা বেলকনির মধ্যে দাঁড়িয়ে আকশের পানে তাকায়। ভিতরে এক প্রকার ছটফট করছে।
বারান্দায় ইয়ানা এক পাশ থেকে অন্যপাশে পাইচারি করতে থাকে। সেই কখন থেকে সে অগ্নির মোবাইলে ফোন দিচ্ছে এখন ও রিসিভ করছে না। ইউভি, রায়ান আর আরিফের মোবাইলে ও ফোন দিয়েছে সবার মোবাইল বন্ধ। এখন প্রায় রাত বারোটা। হল্লা পার্টি বিকেলের দিকে চলে যায়। আজকাল দেশের পরিস্থিতি ভালো না। চারদিকে খুন – মারামারি লেগেই আছে। চারদিকে অবস্থা ভালো না আর উনি এত রাতে ও বাহিরে আছে। বাহিরে ভালো কথা ফোন ধরতে সমস্যা কোথায়? উনার যেই রাগ কখন কার সাথে লেগে যায় আল্লাহ যানে।
ইয়ানা একরাশ অস্থিরতা নিয়ে এক পাশ থেকে আরেক পাশে আসতে যাবে এমন সময় কেউ পাজা কোলে তুলে নেই। আচমকা এমন হওয়াতে ইয়ানা ভড়কে গিয়ে ব্যক্তিটির ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়।
“” আরে কিরে বাবা এইভাবে দাঁত বসাচ্ছো কেনো? এই রাতে কামড়াকামড়ি করার শখ জাগছে?
অগ্নির বিরক্তি করা কন্ঠ শুনে ইয়ানা শান্তির নিশ্বাস নিয়ে বলে,,,,,
” আপনি তাহলে এসেছেন। আর কামড় দিয়েছি ভেবেছি অন্য কেউ।”
অগ্নি ইয়ানাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ইয়ানার দিকে ঝুকে বলে,,,,,,
” যেখানে আমার রুমে কেউ পারমিশন ছাড়া ডুকতে পারে না সেখনে আমার বউকে ছোয়া তো বিলাসিতা ।
ইয়ানা এইবার একটু রাগী কন্ঠে বলে,,,,,,
” কোথায় ছিলেন এতক্ষন? বাহিরে ছিলেন ভালো কথা ফোন রিসিভ করছিলেন না কেনো?
ইয়ানার চোখে তার জন্য ব্যাকুলতা দেখে একটা তৃপ্তির হাসি দেয়।
ইয়ানা — কি হলো এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? যা বলেছি তার উত্তর দিন।
অগ্নি — এতটা বেপোরোয়া ছিলে খুশি হলাম। তোমার চোখে আমার জন্য সেই ব্যাকুলতাটাই দেখতে চাই সুইটহার্ট।
অগ্নি বিছানা থেকে উঠে যেতে নিবে ইয়ানা আচমকা অগ্নির কোলে গিয়ে বসে পড়ে। ইয়ানার এমন কান্ডে অগ্নি প্রথমে অবাক হলেও এরপর এক ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
” কি হয়েছে কোলে বসেছো কেনো? তোমার এই পদক্ষেপে আমার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে ধারনা আছে? আই উইল লোজ মাইসেলফ ”
ইয়ানা অগ্নির কথায় ভড়কালো কিন্তু সরলো না। ঠিক একইভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে। ভয় হচ্ছে এক অজানা আতঙ্ক। আজ আড্ডার মাঝে সুমুর মুখ থেকে শুনেছে তাদের পাশের বাড়ির একটা মেয়ে তার সমান হবে। তার কিছু ফিজিক্যাল সমস্যা ছিলো । তার হাজবেন্ড স্ত্রীকে কাছে পাই নই বলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তুলেছে। এই নিয়ে মেয়েটি এখন বাবার বাড়ি। ইয়ানার সাথে এমন ঘটলে তো সে সহ্য করতে পারবে না। যদি অগ্নি ও তার সান্নিধ্য না পেয়ে অন্য মেয়ের কাছে চলে যায়।
অগ্নি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ইয়ানার ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষন করছে। ইয়ানা অগ্নির শরীরের সাথে আরেকটু চেপে বসে।
অগ্নি ইয়ানার বেবি হেয়ারগুলো কানের কাছে গুঁযে দিয়ে বলে,,,,,
” কি চাই সোনা? ”
ইয়ানা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে উত্তর দেই,,,,,
” আপনাকে ”
আপনাকে এই শব্দটা অগ্নির পুরো কায়া নাড়িয়ে তুলে। ও স্তব্দ আর অবাক হয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর ঠোঁট কামড়ে হালকা হাসে।
অগ্নি — ভেবে বলছো তো? আমি কিন্তু ভালো মানুষ নয় সুইটহার্ট। আরেকবার বলো কাকে চাও?
ইয়ানার মনে হচ্ছিলো শ্বাস নিশ্বাস নিতে ও কষ্ট হচ্ছে। এরপর ও মোলায়েম সুরে বলে,,,,,
” আপনাকে”।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকাতেই অগ্নি ইয়ানার ঠোঁটজোড়া নিজের ঠোঁট ধারা আকড়ে ধরে। ইয়ানা সাথে সাথে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। প্রায় অনেক্ষন পর অগ্নি ইয়ানাকে বিছানায় শুয়ে দেই। ইয়ানার পুরো মুখে দৃষ্টি রাখে। ইয়ানার পুরো শরীর কাঁপছে। অগ্নি ইয়ানার কাঁপা চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,
” ওপেন ইউর আইস সুইটহার্ট ”
ইয়ানা এখন ও চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইয়ানার মুখে এত ভয় আর ভিতী দেখে অগ্নি এইবার গম্ভীর হয়ে বলে,,,,
” তোমাকে চোখ খুলতে বলেছি ইয়ানা।
অগ্নির গম্ভীর কন্ঠে পেয়ে ইয়ানা চোখ খোলে তার দিকে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার চোখের দিকে পাঁচ মিনিট তাকিয়ে থাকে। এরপর কপালে আলতো চুমু খেয়ে বলে,,,,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ১২
” তোমার চোখে আমি কামনা নয় ভয় দেখতে পাচ্ছি। আবেগের চাইতে আতঙ্ক কাজ করছে। নিজেকে আগে ঠিক করো এরপর আমার সান্নিধ্য পাবে। যেই ভুল ধারনা নিয়ে আজ তুমি আমার কাছে ধরা দিতে এসেছো সেটা মাথা থেকে ছুড়ে ফেলো দাও। কারন অগ্নি চৌধুরির চোখ এক মেয়েতেই আটকেছে আর সে আমার অনুভব। এক তীব্র অনুভ সে তাই অন্যকে আমার অনুভুতির সাগরে আনতে পারব না। আমার ভালোবাসা সহ্য করার ক্ষমতা এখন ও তোমার হয় নি। যেদিন হবে সেদিন আমি তোমার এই চোখে অসহায়ত্ব নয় কাছে পাওয়ার এক তীব্র কামনা দেখতে পাব।
এই বলে অগ্নি ইয়ানার উপর থেকে সরে আসে। ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। ছিহহ এইভাবে সে অগ্নিকে বলেছে।