অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৩
লিজা মনি
সময় কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। কিন্তু আমরা প্রিয় জনদের জন্য সময় থামিয়ে রাখতে চাই। সময় একমাত্র সত্য যে চুপচাপ সবকিছু বদলে দেই। সবকিছু ভুলিয়ে দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করে। সময়কে হয়ত আমরা ধরে রাখতে পারি না কিন্তু সময়ের সাথে ঘটা স্মৃতিগুলো ঠিক রয়ে যায়। ভালোবাসা যদি সত্য হয় তবে সময় তার পথে বাধা নয় বরং পরীক্ষা।যে সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে বেড়ে ওঠে তার শিকড় হয় একদম গভীর।
কেটে যায় এক মাস। ওইদিন বৃষ্টির রাতে ভালোবাসার এক মুহূর্তেকে বিদায় জানিয়ে ভোরের এক মিষ্টি রোদ তাদেরকে জানান দেই।বৃষ্টিতে ভেজার কারনে ইয়ানার বাজেভাবে ঠান্ডা লেগে যায়। সকাল থেকে বিকেল হতেই গা কাঁপুনিয়ে দিয়ে জ্বর আসে। পুরো শরীরে ব্যাথা। এক প্রকার বাধ্য হয়ে ইয়ানাকে নিয়ে অগ্নি নিজের ডুপ্লেক্স বাড়িতে চলে আসে। বিগত তিন দিন নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে অগ্নির ইয়ানাকে নিয়ে ।ইয়ানার শরীরে তার দেওয়া ক্ষতগুলো ঝলঝল করছিলো। ইয়ানার ক্ষতগুলোর দিকে তাকিয়ে শুধু দীর্ঘোশ্বাস ফেলত। মেয়েটা মুখ বুঝে সব সহ্য করেছে একবার অভিযোগ ও জানাই নি।এটাই ছিলো অগ্নির সবচেয়ে বড় তৃপ্তির কারন। ইয়ানা তার দেওয়া ভালোবাসায় ক্ষতবিক্ষত হলেও শুধু তাকেই কাছে টেনে নিবে। এই এক মাসে ইয়ানার জ্বর এর সম্পূর্ন দুর্বলতা কাটলেও দাগ গুলো যেনো স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ইয়ানা শাওয়ার শেষ করে বিছানায় এসে বসে। অগ্নি আজ অফিসে যায় নি রাতে কোথাও বের হবে। ইয়ানা বিছানায় পা তোলে বসে এরপর নিজের দৃষ্টি দিয়ে কাউকে চারদিকে চারদিকে খুঁজতে থাকে। কাঙ্খিত ব্যক্তির দেখা না পেয়ে ইয়ানা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর কার্বাডে হাত দিয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে ড় গুনগুন করে গান গাইতে থাকে।
অগ্নি কিছু একটা জরুরি ফোনে কথে বলে বেলকনি থেকে রুমে আসে। রুমে এসেই চোখ যায় ইয়ানা কার্বাডের উপর থেকে কিছু একটা নামানোর চেষ্টা করছে। কোমড় ছাড়িয়ে পড়া চুলগুলো থেকে টিপটিপ পানি পড়ছে ফলে জামার অর্ধেকাংশ ভিজে যায়। সদ্য গোসল করা ভেজা চুল, ক্লান্তি ছাপ, ঠোঁট কামড়ে বার বার উপরে হাত দিচ্ছে কাঙ্খিত বস্তুটিকে পাওয়ার জন্য। পুরো ভেজা চুল তার কাঁধ ছুঁয়ে ঝরে পড়ছে জলের ফোটাগুলো। অগ্নি দেয়ালে ঠেস মেরে বুকে হাত গুজে মুগ্ধ নয়নে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। পরমুহূর্তে কিছু একটা মনে পড়তেই চোয়াল শক্ত করে ফেলে।এক প্রকার রাগ নিয়ে ইয়ানার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। এরপর কার্বাডের উপর থেকে ছোট একটা বক্স হাতে নেই যেটা এতক্ষন ইয়ানা নেওয়ার চেষ্টা করছিলো। ইয়ানা অগ্নির শরীরের কড়া পারফিউমের গন্ধ পেয়ে হাসিমুখে অগ্নির দিকে তাকানোর আগেই অগ্নি শক্তভাবে ইয়ানার বাহু চেপে ধরে। এরপর এক প্রকার কপাট রাগ দেখিয়ে নিয়ে বিছানায় বসায়। ইয়ানা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে, হলো টা কি এই লোকের। অগ্নি ড্রয়ার থেকে একটা টাওয়াল এনে ইয়ানার পাশে বসে। এরপর টাওয়াল দিয়ে ইয়ানার চুল মুছতে মুছতে তিরিক্ষে মেজাজে বলে,,,,
” তোমাকে আমি খুব মারবো ইয়ানা। মানুষ করব কবে আমি তোমাকে? এত বড় একটা অসুস্থতা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভেজা চুল নিয়া ঘুরঘুর করছো? ডাক্তার কি বলেছে মনে নেই আবার ঠান্ডা লাগলে সেটা সহজে কমবে না। আর আমি তোমাকে কতবার বলেছি ভেজা চুল নিয়ে ছুটাছুটি করবে না। এই বদঅভ্যাস পাল্টাও ইয়ানা নাহলে বাজেভাবে ক্ষতি হবে।
অগ্নির মেজাজে পূর্ন কথা শুনে ইয়ানা মুচকি হাসে। অগ্নি ইয়ামার হাসি দেখে ভ্রু নাচিয়া জিজ্ঞাসা করে,,,,,
” হাসছো কেনো এইভাবে?
ইয়ানা — আপনি আছেন তো আমার চুল মুছে দেওয়ার জন্য। তাহলে আর ভেজা চুল থেকে ঠান্ডা লাগার ভয় কিসের।
ইয়ানার এমন কথা শুনে অগ্নির হাত থেমে যায়। বুকের ভিতরে অনুভুতির পাখিগুলো উড়াউড়ি করছে। এই মেয়েটা তার বউ তার অনুভবের সেহজাদী। এমন এক আবেদনময়ী নারী যার প্রতি ও বাজেভাবে আসক্ত।
অগ্নি পিঠের চুলগুলো ভালোভাবে মুছে দিয়ে বলে,,,,
” সবসময় কি আমি থাকব তোমার কাছে? নিজের কাজটা তো নিজে করতে হবে।
অগ্নির কথায় অগ্নি কপাল কুচকে ফেলে। মেঝেতে রাখা পা গুলো খাটের উপর তোলে ভাজ করে বসে। এরপর পাশে ফিরে অগ্নির দিকে তাকায়।
ইয়ানার এমন হাবভাব দেখে অগ্নি ফের প্রশ্ন করে,,,,,
” কি?
ইয়ানা কিছুক্ষন ঠোঁট চেপে এরপর কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” সবসময় আমার পাশে থাকবেন না মানে? কার কাছে যাবেন ওই ঝর্নার কাছে?
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি ইয়ানার ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। এরপর কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,
” তুমি ঝর্নাকে চিনো কিভাবে?
ইয়ানা খাপছাড়া ভাব নিয়ে বলে,,,,,,
” আপনার প্রাক্তন একমাত্র গার্ল্ফ্রেন্ডকে চিনিবো না তা কি করে হয়।
ইয়ানার স্বীকার উক্তিতে অগ্নি ধমকের সুরে বলে,,,,,,
” থাপ্পর দিতে দিতে বাংলাদেশ নিয়ে দিয়ে আসব বিয়াদপ। আর কখনো আনব না এখানে আমার সাথে। যে টা প্রশ্ন করছি সেটার উত্তর দাও।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা ভ্রু নাচিয়ে তাকায়। এরপর সেই একই ভঙ্গিতে বলে,,,,,
” সেই! দিয়েই তো আসবেন। আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে তো এখানে। আমাকে আর কাজ কি?
অগ্নি নিজের রাগ কন্ট্রোলের বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছে। এত ঘাড় ত্যারা কেনো এই মেয়ে। যদি বলি একটা তাহলে বলে আরেকটা।
নিজের রাগটাকে যথাযথ সংযত করে করে দাতে দাত চেপে বলে,,,,,
” এত জালাচ্ছো কেনো আমাকে? জানো না তোমাকে দিয়ে আমার কাজ কি?
অগ্নির রেগে যাওয়া দেখে ইয়ানা এইবার চুপ হয়ে যায়। বলা যায় না যদি ঘূর্নিঝড় শুরু হয়ে যায় তাহলে জলোচ্ছ্বাস ও শুরু হবে। ফলে ইয়ানার কপালে মাইর অনিবার্য।
ইয়ানা অগ্নির থেকে কিছুটা সরে বসে বলে,,,,
” রাগ করবেন না আমি যাস্ট মজা করছিলাম। আমি আর কাজের আন্টি আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন ওই কথার মধ্যে উঠে এসেছে আপনাকে নাকি একটা মেয়ে পাগলের মত ভালোবাসে। কত অপমান, কত লাঞ্চনা সহ্য করেছে তবুও আপনার পিছনে পড়ে আছে। তার নাম নাকি ঝর্না।
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,
” হ্যা তো?
ইয়ানা — হ্যা তো কিছু না। আপনি আমার সাথে একট শপথ বাক্য পাঠ করুন।
অগ্নি বিছানা থেকে টাওয়ালটা হাতে নিয়ে উঠে বলে,,,,
” পারব না এইসব আজাইরা জিনিস পাঠ করতে? ”
ইয়ানা — হ্যা পারবেন কেনো? শপথ বাক্য পাঠ করলে তো আপনি আর ঝর্নার কাছে যেতে পারবেন না। আমি,,,
ইয়ানা আর বলতে পারে নি তার আগেই অগ্নি হিংস্র দাবানালে ইয়ানার বাহু দুটি চেপে ধরে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে। ইয়ানা চোখ বন্ধ করে মুখ খিচে ফেলে। ব্যাথায় আর্তনাদ আসলে ও একটুও শব্দ করে নি আর না ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে। চোখ থেকে টিপটিপ করে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনা জল। মনে হচ্ছে অগ্নির হাতের আঙ্গুগুলো মাংস ভেদ করে ডুকে পড়ছে।
অগ্নি জোড়ে শ্বাস নিয়ে রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,,,,
” শান্তিতে থাকতে ভালো লাগে না। কেনো জালাচ্ছো আমায়। আমার রাগ সহ্য করার ক্ষমতা আছে তোমার? তুমি জানো আমার রাগ সম্পর্কে? আরেকবার উলটাপালটা কথা বললে একদম বাংলাদেশে ট্রান্সফার করে দিব বিয়াদপ।
অগ্নি ইয়ানাকে ঝাঁটকা মেরে ফেলে দেই, ইয়ানা তাল সামলাতে না পেরে এক পাশে হেলে পড়ে। চোখ বেয়ে পড়ছে নোনা জল আর ঠোঁটে এক মুচকি হাসি। নিজের দুই বাহুকে নাড়াতেও কষ্ট হচ্ছে। এরপরও মুখে হাসি বজায় রেখে বলে,,,,,
” রাগাবো না আর আজকের ভিতরে। শুধু আমার সাথে শপথ বাক্য পাঠ করুন। নাহলে আমি আপনার অফিস পর্যন্ত চলে যাব।
ইয়ানার জেদ দেখে অগ্নি একটা গম্ভীর শ্বাস ফেলে। এরপর ইয়ানার কাছে গিয়ে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে। এতক্ষনে শুরু হওয়া রাগটা এখন আর নেই। ইয়ানার ঠোঁটের মুচকি হাসি যেনো সব রাগ মিলিয়ে গেছে।
অগ্নি ইয়ানার বাহু দুইটায় আলতো হাত বুলিয়ে বলে,,,,,,
” বেশি ব্যাথা পেয়েছো? কেনো রাগিয়ে দাও আমাকে?
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,
” ব্যাথা পেলে তো আর্তনাদ করে উঠতাম। সয়ে গিয়েছে এইসব ব্যাথা শরীরে। আগে শপথ বাক্য পাঠ করুন? আমি যা যা বলব আপনি সেটা রিপিট করবেন।
অগ্নি ইয়ানার হাতে চুমু খেয়ে বলে,,,,
” বলো কি বলতে হবে।
ইয়ানা হাসি দিয়ে ভালোভাবে বসে। এরপর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” আমি অগ্নি চৌধুরি
অগ্নি — আমি অগ্নি চৌধুরি।
ইয়ানা — আমার বউ ইয়ানা বিনতে আসাদ।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে গভীর দৃষ্টি রেখে বলে,,,
” আমার বউ মিসেস ইয়ানা চৌধুরি।
ইয়ানা হালকা হাসে।
ইয়ানা — আমি তাকে সবসময় ভালোবাসব। কোনোদিন ছেড়ে যাব না।
অগ্নি — আমি তাকে সবসময় আদর করব কখনো ছেড়ে যাব না।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,
“” আদর করার কথা কখন বললাম। আমি বলেছি ভালোবাসার কথা।
অগ্নি — এক অর্থ ওই বহন করে।
ইয়ানা — একদম না যা বলেছি শুধু তাই বলেন। বলোন আমি তাকে সবসময় ভালোবাসব কখনো ছেড়ে যাব না।
অগ্নি — আমি তাকে সবসময় ভালোবাসব কখনো ছেড়ে যাব না।
ইয়ানা — ও যা বলবে আমি তাই করব।
অগ্নি — ও যা বলবে আমি তাই করব। তবে সেটা যুক্তকর হতে হবে।
ইয়ানা বিরক্তি হয়ে তাকায়। একটা কথা ওনার বাড়িয়ে বলতেই হবে।
ইয়ানা — আমি আমার সবকিছু উজাড় করে দিয়ে শুধু তাকে চাইব।
অগ্নি — আমি আমার সবকিছু উজাড় করে দিয়ে শুধু তাকে চাইব।
ইয়ানা — সে যা চাইবে তাই দিব।
অগ্নি — সে যা চাইবে তাই দিব।
ইয়ানা — এখন সে চাচ্ছে আমার সন্তানের জননী হতে আমি সেটাই গ্রহন করিব।
অগ্নি — এখন সে চাচ্ছে আমার সন্তানের জননী হতে আমি,,,,,,,
থেমে যায় অগ্নি। দ্রুত মুখ তুলে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা উৎসুক নয়নে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে তার হাজার ও আশার ঝিলিক।
কিন্তু সে আশাকে মাটি চাপা দিয়ে অগ্নি মেঝে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,
” অসম্ভব! খবরদার এইসব আউল ফাউল জিনিস মাথাতে ডুকাবে না।
ইয়ানা খাট থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলে,,,,
” কেনো ডুকালে সমস্যা কোথায়? মা হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত বয়স আছে আমার তাহলে সমস্যা কোথায়?
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর ইয়ানার মুখমন্ডল পর্যবেক্ষন করে বলে,,,,,
” হঠাৎ করে তোমার মাতৃত্বের ভুত কেনো চাপলো বলোতো? আর সত্তিটা বলবে একদম তালনাহানা করার চেষ্টা করবে না।
ইয়ানা মিহি সুরে বলে,,,,,
” ফেইসবুকে কি কিউট কিউট বাচ্চা। শুধু আদর করতে ইচ্ছে করে। যদি আমার একটা বাচ্চা হয় তাহলে আমি সেই আশাটা পূরন করতে পারব তাই না।
অগ্নি কিছুক্ষন ইয়ানার দিকে ছোট ছোট দৃষ্টি মেলে তাকায়। এরপর ইয়ানার সামনে থেকে খাটের পাশে চলে যায়। সেখানে গিয়ে কিছু একটা খুঁজার প্রয়াস চালায়। অনেক্ষন খুঁজার পর বালিশের নিচে থেকে পেয়ে যায়। ইয়ানার মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে লক লাগানো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইয়ানার সামনে গিয়ে ইশারা দিয়ে বলে,,,,,
” পাসওয়ার্ড বলো।
ইয়ানা কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,,,
” কেনো? আপনার লাখ টাকার মোবাইল থাকতে আমার ছাব্বিশ হাজার টাকার মোবাইল দিয়ে করবেন?
অগ্নি মৃদু ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” ত্যারামি করা কি তোমার স্বভাব? একটা প্রশ্ন করলে সেটার আবার রিপিট প্রশ্ন ধরিয়ে দাও। মোবাইলের পাসওয়ার্ড বলো ইডিয়েট।
ইয়ানা কিছুটা ইতস্থতা করে বলে,,,,,
” ফেইসের সামনে রাখেন? ফেইস লক দেওয়া।
অগ্নি একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে ইয়ানার মুখের সামনে ধরে। মুখের সামনে ধরার পর মুহূর্তেই পাসওয়ার্ড খুলে যায়।
অগ্নি মোবাইলটার স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে অগ্নির একটা ছবি। দেখে বুঝা যাচ্ছে বিরক্তিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর ভিতরে একটা হাসি দিয়ে পুনরায় ফোনে দৃষ্টি রাখে। কিছুক্ষন পর অগ্নি ইয়ানার হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে কাবার্ডের কাছে চলে যায় উদ্দ্যেশ্য রেডি হওয়া।
ইয়ানা মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন ঘাটাঘাটি করে। কি এমন করেছে ওর মোবাইল দিয়ে। কিছুক্ষন পর তাকিয়ে দেখে ওর ফেইসবুক নেই। ইয়ানার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে যায়। ইয়ানা অগ্নির পিছনে গিয়ে রেগে বলে,,,,,,
” আপনি আমার ফেইসবুক কেনো ডিলিট করেছেন বাজে লোক? আমি ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড, কোড নাম্বার কিছু জানি না।
অগ্নি শার্ট গায়ে দিয়ে বলে,,,,,,,
” ইনস্টল করবে তবেই না পাসওয়ার্ডের দরকার পড়বে। দরকার নেই ফেইসবুকের। এই ফেইসবুক তোমার মস্তিষ্ক বিকৃত করে দিচ্ছে।
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বলে,,,,
” নাও এইবার সবগুলো বোতাম লাগাও। তাড়াতাড়ি করো আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।
ইয়ানার ইচ্ছে করছে কান্না করতে। সামান্য একটা কথা বলেছে তার জন্য ফেইসবুকটাই ডিলিট করে দিলো। ইয়ানা এক প্রকার রাগ নিয়ে শার্টের বোতাম একটা একটা করে লাগাতে থাকে।
অগ্নি হালকা হেসে ইয়ানার কোমড় চেপে ধরে বলে,,,,
” তোমার সাথে আমার আর ও অনেক পথা হাটা বাকি ইয়ানা। এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিব না যেটা থেকে এক প্রকার ভয় কাজ করবে। তোমাকে ছাড়া আমি নিশ্বেস হয়ে যাব।
এরপর অগ্নি ইয়ানার গলায় ছোট ছোট দাগ হওয়া কাটা স্থানে ঠোঁট ছুইয়ে দেই। এরপর হাতে ব্লেজার নিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে।
ইয়ানা অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিছানার উপর গিয়ে বসে। এরপর কিছু একটা ভেবে গম্ভীর নিশ্বাস ফেলে।
ওয়াইনের গ্লাসটাকে শক্ত করে চেপে ধরে আছে রায়হান। মনে হচ্ছে তীব্র ক্রোধে নিজেই ফেটে পড়বে। সবগুলো গার্ড তার পাশেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। গার্ডগুলোর মধ্যে একজন আচমকা বলে উঠে,,,,,
” স্যার আমার মনে হয় শিহাবকে অগ্নি ওই মেরেছে। আপনি পাঠিয়েছেন অগ্নিকে ফলো করার জন্য আর সেটা কোনোভাবে সেটা অগ্নি চৌধুরি জেনে যায়। এরপর আরকি অগ্নি চৌধুরির হাতে মরতে হয়। আপনি তো অগ্নি চৌধুরিকে খুব ভালো করেই চিনেন কত হিংস্র ও। নরক যন্ত্রনা দিয়ে শত্রুদের বিনাস করে।শক্তির দিক থেকে ও সবার থেকে অধিক মাত্রায় এগিয়ে। উনি……
লোকটি আর কিছু বলতে পারে নি। এক প্রকার লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে। সাদা টাইলস পুরোটা রক্তে ভেসে যায়। মনে হচ্ছে এখানে কুরবানীর গরু জবাই করা হয়েছে। তবে আজ গরু নয় মানুষের গলা কেটা হয়েছে। লোকটা ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ার কিছু মুহূর্তেই নিশ্বাস ত্যাগ করে।
রায়ান হাতের ছুড়িটা লাশটার উপর ফেলে দিয়ে রেগে বলে,,,,,
” শালা আমার লোক হয়ে অগ্নি চৌধুরির গুনগান গাইছিস। যে আমার চরম শত্রুকে তার শক্তির প্রশংসা করছিস শালা।
রায়হান গিয়ে চেয়ারে বসে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থাকার পর গার্ডের উদ্দ্যেশে বলে,,,,,,
” অগ্নি চৌধুরির বউ কোন ভার্সিটিতে পড়ে?
গার্ড — টরেন্টো ভার্সিটি।
রায়হান— ছুটি হয় কয়টার সময়?
গার্ড — সেটা তো নিশ্চিত না স্যার।
রায়হান — কাল তরা ওকে ফলো করবি। যখন ওর ভার্সিটি ছুটি হবে ঠিক তখন আমাকে ফোন দিবি আমি কাছেই থাকব।
গার্ড — জ,,জি স্যার।
রায়হান একটা বিকৃত হাসি দিয়ে ওয়াইনের গ্লাসটা ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,,,,,
” আমি তর শেষ দেখতে চাই। তর ধ্বংস দেখতে চাই আমি অগ্নি চৌধুরি শুধু মাত্র তর ধ্বংস।
অগ্নি চেয়ারে বসে একটা গোলাকার পাথর ঘোরাতে থাকে। সামনে ইউভি, রায়ান বিরক্তি নিয়ে বসে আছে আর আরিফ চিন্তিত ভঙ্গিতে। সকল নিরবিতা ভেঙ্গে রায়ান ঠান্ডা কন্ঠ বলে,,,,,,
” বিশ্বাস কর ভাই রফিক নামের কোনো ব্যাক্তি ইয়ানার চেনা জানার মত নেই।ইয়ানার বাড়ির এলাকা এমনকি পার্শ্ববর্তী এলাকায় যত রফিক আছে সবাইকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে ইয়ানাকে চিনে কি না । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো কেউ ইয়ানাকে চিনে না।
অগ্নি ঘম্ভীর আওয়াজে বলে,,,,
” ভালোভাবে খুজেছিস?
রায়ান — সত্যি বলছি ভাই সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আর আমি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এইসব কেইস কত সলভ করছি। এখন যেই ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই তাকে কিভাবে খুঁজে বের করব। আচ্ছা রফিক লোকটা ইয়ানাকে কি করেছে তুই কেনো ওর খুঁজে এত দেওয়ানা।
অগ্নি– সেটা তদের না জানলেও চলবে। আগামী মাসে বাংলাদেশ যাব। এখন যেতে পারব না প্রচুর কাজ আছে।
ইউভি, রায়ান, আরিফ অবাক হয়ে অগ্নির দিকে তাকায়।
ইউভি– সামান্য এক লোকের খুঁজে তুই বাংলাদেশ যাবি?
রায়ান — আর গেলেও সমস্যা নেই। আমরা ও যাব
এক হিসেবে আমার ভালো হবো। এই উছিলাই আমি সুমুকে বিয়ে করে নিব।
ইউভি — শখ কত তর। একজনে যাচ্ছে কারোর জীবন নিতে আরেকজনে যাচ্ছে বিয়ে করতে।
রায়ান — বিয়েত আমি বাংলাদেশে গিয়ে করেই ছাড়ব দেখে নিস। শুধু তরা পাশে থাকলেই হবে।
ইউভি — ওকে ভাই পাশে আছি। যদি সুমুর বাবা রাজি না হয়?
রায়ান — রাজি করিয়ে নিব।
তারা আর ও কিছুক্ষন গুরুত্বপূর্ন বিষয় নিয়ে কথা বলে।
রাতে অগ্নি রুমে এসে দেখে ইয়ানা ঘুমিয়ে আছে। ফ্রেশ হয়ে কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলে বুঝতে পারে ইয়ানা এখন ও জেগে আছে। অগ্নি এসেছে জেনেও ইয়ানার কোনো রেসপন্স না পেয়ে অনুমান করে ফেইসবুকের ঘটনটা নিয়ে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। শরীর ক্লান্ত থাকায় এই নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করে নি।প্রতিদিনকার অভ্যাসমত ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে। পরেরদিন সকালে কোনো এক গুরুত্বপূর্ন কাজে অগ্নি ভোর সকালেই বেরিয়ে যায়। ইয়ানা ব্রেকফাস্ট করে ড্রাইভার নিয়ে ভার্সিটিতে যায়। আজ ভার্সিটিতে মাত্র তিনটা ক্লাস করিয়েছে।
ছুটির পর মিরা আর ইয়ানা একটা ক্যাম্পাসে বসে। মিরা ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,,
” তুমি সুখে আছো তো ইয়ানা?
মিরার এমন প্রশ্নে ইয়ানা অবাক হয়ে যায়। সেই অবাকের রেশ নিয়েই মিরাকে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,
” হ্যা আমি তো সুখেই আছি বাট তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন করলে কেনো?
মিরা একটা নিশ্বাস ফেলে বলে,,,,,,
” না এমনি ইচ্ছে হলো তাই জিজ্ঞাসা করেছি।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তখন তাকিয়ে দেখে জিওন নামক ছেলেটা তাদের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে।
ইয়ানার কিছুটা অস্বস্থি ফিল হলে মিরার উদ্দ্যশ্যে বলে,,,
” মিরা চলো এখান থেকে চলা যায়। দেখো জিওন ছেলেটা কিভাবে তাকিয়ে আছে তীর্যকভাবে। আমার প্রচন্ড অস্বস্থি হচ্ছে।
মিরা — হ্যা চলো। তোমার গাড়ি তো আর ও পরে আসবে। চলো পাশের পার্ক থেকে ঘুরে আসি। এইটা পার্ক হলেও কোনো অশ্লিলতা নেই। বাচ্চারা আর বৃদ্ধারা এসে সময় কাটাই এখানে। চলো ওইখানে যাই।
ইয়ানা — না মিরা আমি যাব না। উনাকে না জানিয়ে গেলে পরে রাগ করবে।
ইয়ানার চিন্তাযুক্ত মুখ দেখে মিরা ফিক করে হেসে দেই।
এরপর নিজের হাসিটাকে থামিয়ে বলে,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২২
” এত ভয় পাওয়ার কি আছে। জামাই যখন রাগ করবে তখন দুইটা টুস টাস চুম্মাহ দিয়ে দিবে। দেখবে জামাইর রাগ ফুরুৎ।
ইয়ানা কিছুটা অস্বস্থির মধ্যে পড়ে যায়। মিরা এইসব তোয়াক্কা না করে ইয়ানার হাত ধরে এক প্রকার টেনে নিয়ে যায়।
যেহেতু পার্কটা ভার্সিটির কাছে তাই আসতে মাত্র দশ মিনিট সময় লেগেছে। ইয়ানা ভিতরে ডুকতে যাবে এমন সময় কেউ তার সামনে চলে আসে। ইয়ানা আর মিরা সেদিকে তাকিয়ে দেখে,,,,,,,,,,