অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৪
লিজা মনি
যেহেতু পার্কটা ভার্সিটির কাছে তাই আসতে মাত্র দশ মিনিট সময় লেগেছে। ইয়ানা ভিতরে ডুকতে যাবে এমন সময় কেউ তার সামনে চলে আসে। ইয়ানা আর মিরা সেদিকে তাকিয়ে দেখে একটা লোক মাক্স পড়া। ইয়ানা কিছুটা কপাল কুচকে বলে,,,,,
” রাস্তায় হাটতে গেলে দেখেশুনে হাটতে হয় পথ আটকেছেন কেনো এইভাবে?
লোকটা তীর্যক চোখে ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর স্বাভাবিক হয়ে বলে,,,,,
” সরি ম্যাম খেয়াল করি নি ভুলে চলে এসেছি। কিছু মনে করবেন না।
ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
” হুম। বাট আপনি বাঙ্গালি?
লোকটা — হ্যা ম্যাম।
এরপর লোকটা নিজের মাক্সটা ঠিক করে চলে যায়। ইয়ানা আর মিরা ও পার্কের ভিতরে প্রবেশ করে। প্রবেশ করলেই গেইডের সামনে দেখতে পায় “কুইন্স”পার্ক লিখা।
পার্কটি একটি ওভাল আকৃতির এবং এটি ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর বিভিন্ন ভবন দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি শহরের ব্যস্ত এলাকায় একটি সবুজ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রদান করে। আর সবচেয়ে প্রধান আকর্ষন হলো পার্কের কেন্দ্রে অবস্থিত অন্টারিওর আইনসভা ভবন (Ontario Legislative Building) পার্কটির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়াও পার্কজুড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের মূর্তি। পার্কের চারপাশে রয়েছে প্রশস্ত হাঁটার পথ, ছায়াদানকারী গাছপালা, এবং বসার বেঞ্চ, যা স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীদের জন্য একটি আদর্শ বিশ্রামস্থল।
ইয়ানা এইসব দেখেছে ঠিক কিন্তু মনে হচ্ছে তাদের কেউ অনুসরন করছে আর সেটা অনেক আগে থেকেই। ইয়ানা বিষয়টা মিরাকে জানানোর জন্য তার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” মিরা তোমার মনে হচ্ছে না কেউ আমাদের ফলো করছে.?
মিরা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” এখানে আমাদের কে ফলো করতে যাবে আশ্চর্য। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এখানের কেউ চিনে নাকি আমাদের। এইটা তোমার মনের ভুল।
ইয়ানা মলিন হাসি দিয়ে বলে,,,,
” হয়ত।
মিরা ইয়ানার হাত ধরে বলে,,,,,
“চলো ওই নির্জন পাশটার কাছে যায় ওইখানে সার জন এ. ম্যাকডোনাল্ড (কানাডার প্রথম প্রধানমন্ত্রী),,রানি ভিক্টোরিয়া,, কিং এডওয়ার্ড সপ্তম,,,জর্জ ব্রাউন (শিক্ষা সংস্কারক),,,, সার জেমস প্লিনি হুইটনি (অন্টারিওর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী) এদের মূর্তি আছে।
মিরা সেইদিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” জায়গাটা কেমন নিরব দেখাচ্ছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
মিরা — তুমি এত ভিতু কেনো ইয়ানা? আর আসব নাকি? যদি আর না আসি সারাজীবন আফসোস থেকে যাবে কেনো গিয়ে ওদের মূর্তিগুলো দেখলাম না। আমি তো এমনিতেও এখানে আর মাত্র দুই মাস আছি। আর আসা হবে না চলো দেখে আসি।
ইয়ানা এক প্রকার বাধ্য হয়ে সেখানে যায়। তবুও কেনো জানি মনটা খঁচখঁচ করছে? কিন্তু কেনো অগ্নিকে বলে না আসার কারনে?
ইয়ানা আর মিরা এগিয়ে যায়। তারা একটা গাছের পাশে আসতেই সামনে দুইটা ছায়া দেখতে পাই। ইয়ানা সাহস রেখে সেই ছায়াটা অনুসরন করে সামনে তাকাতেই দেখতে পাই দুইটা ছেলে। ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুখ চেপে ধরে।
একটা বিলাশবহুল কাউচ দিয়ে ঘেরা রুমে বসে অগ্নি তার শত্রুদের সাথে চুক্তিবদ্ধ করছিলো। অপর পাশের লিডার খন্দকার সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” গ্রামটা আমার নামে দিয়ে দে তকে তার পারিশ্রমিক দিব। তুই গ্রামের দায়িত্ব নিয়েছিস ভালো কথা এইটা আমাকে দিয়ে দে। এখানে আমি একটা কারখানা করব। কিন্তু তর অধীনে থাকলে সেটা কোনোদিন সম্ভব না।
অগ্নি ঘম্ভীর হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” প্রথমত আরেকবার তুই সম্মোধন করলে জবান ছিড়ে আনব। আর দ্বিতীয়ত টাকার ভিখারি মনে হয় আমাকে তোমার খন্দকার। তোমার মত দশটা খন্দকারকে আমি কিনতে পারব সেই ক্ষমতা আমার আছে। কত দিবে তুমি? এক কোটি,, পাঁচ কোটি?
এরপর অগ্নি বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আমার বডিগার্ডরা কোটি টাকার গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে। টাকার দরকার পড়লে তুমি আমার থেকে নিও। নেক্সট টাইম যাতে গ্রাম নিয়ে আর চুক্তিতে বসতে না হয়। গ্রাম এইটা আমার অধীনেই থাকবে না আতিক আর রানবীর নিতে পারবে আর না তুমি খন্দকার।এখানে গ্রামের লোকের একমাত্র রোজগার হলো ফসল করা, আবাদ করা। আর তাদের রিজিক নষ্ট করে তোমাদের এখানে কারনখানা করতে দিব না। যদি আমার উপরে যাওয়ার চেষ্টা করো তাহলে,,,,
অগ্নি একটা রহস্যময় হাসি দেই। খন্দকার রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। কিন্তু সিংহের সামনে রাগা নিত্যান্তই বোকামি।
খন্দকার একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” এত মায়া ওদের প্রতি তোমার? তুমি ও কিন্তু আমাদের থেকে কম না বরং আমাদের থেকে বেশি।
অগ্নি — আমি মানুষ বুঝে কাজ করি তদের মত কুকুরের ন্যায় ঝাঁপিয়ে পড়ি না।
খন্দকার — কোথা থেকে আসলো এইসব মানবতা ? বউয়ের ভালোবাসা পেয়ে কি সব ভুলে গিয়েছো। বউ কি ডোজ একটু বেশি দেই নাকি?
অগ্নি — অবশ্যয় দেয়। কেনো দিবে না? বিয়ে করা বউ তো আমার দেওয়াটাই স্বাভাবিক। বউ তো তোমার ও আছে। তোমার বউ তোমাকে মানবতা শিখাতে পারে না।
খন্দকার — আমার বউ তো নামকরা নর্তকী ছিলো তোমার বউ কি…..
সাথে সাথে অগ্নি ওয়াইনের গ্লাসটা ভেঙ্গে খন্দকারের গলায় চেপে ধরে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,
” খবরদার আমার বউয়ের পাশে এইসব বেহায়া শব্দ লাগাবে না। ও এক পবিত্র ফুল তর বউয়ের মত অপবিত্র নয়।
হঠাৎ অগ্নির ফোন বেজে উঠে। খন্দকার ইশারা দিয়ে দেখাই যে তার ফোন বাজছে। অগ্নি খন্দকারের গলা থেকে ভাঙ্গা টুকরাটা নামিয়ে রক্তচোখে তাকায় তার দিকে।
এরপর রিসিভ করে বলে,,,,
“” হ্যা বল? ”
গার্ড আতঙ্কিত সুরে বলে,,,, স্যার ম্যামকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
কথাটা কানে ডুকতেই মনে হচ্ছে হৃদয়ে কেউ ধারালো সূঁচ ডুকিয়ে দিয়েছে। পুরো শরীরের রক্ত হিম শীতল হয়ে পড়ে। অগ্নি ফোন কেটে দিয়ে সোজা গাড়িতে চেপে বসে। কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে শাঁ শাঁ করে গাড়ি চলতে থাকে।
খন্দকার ক্ষত জায়গায় টিস্যু চেপে ধরে অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবনের প্রথম সে অগ্নি চোধুরির মুখে ভয়ের আভাস দেখেছে। কিন্তু সেটা কেনো?
অন্ধকার আর আলোর সংমিশ্রনে এক বদ্ধ ঘর। পিট পিট করে চোখ খোলে ইয়ানা। মনে হচ্ছে হাত দুইটা ব্যাথা করছে। নাকে কেমন ভ্যাঁপসা গন্ধ এসে বারি খাচ্ছে। মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে। মনে হচ্ছে ব্যাথায় রগ ছিঁড়ে যাবে। ইয়ানা ভালোভাবে চারপাশে তাকিয়ে দেখে খোলা এক পুরনো রুম। দেখে মনে হচ্ছে এইটা অনেক দিনের পুরনো। এক পাশে কয়েকটা পুরনো বই রাখা আছে শুধু। আর ডান পাশে পুরনো মূর্তি। হঠাৎ করে নিজের সজ্ঞানে ফিরে আসে। মনে পড়ে একটা রুমের সামনে আসলে কেউ তাদের মুখ চেপে ধরে এরপর তার আর কিছু মনে নেই।
ইয়ানা আতঙ্ক নিয়ে মিরাকে খুঁজতে থাকে। পাশে তাকিয়ে দেখে মিরা একটা চেয়ারে বাঁধা ঙ্গান হারিয়ে চেয়ারে বসে মাথাটা এক সাইট দিয়ে হেলে পড়ে আছে। ইয়ানা নিজের হাতটাকে সামান্য মুচড় দেই খুলার জন্য। কিন্তু নিজের কাজে সে ব্যার্থ।
ইয়ান ধীর সুরে মিরাকে ডাকতে থাকে,,,,,
” মিরা,, মিরা,, এ্যাঁই মিরা শুনছো?
ইয়ানা এইভাবে অনেক্ষন ডাকতে থাকে। কিন্তু মিরার কোনো রেসপন্স নেই। কিন্ত সে হাল ছাড়ে না একইভাবে ডাকতে থাকে। কিন্তু এইবার যেনো ইয়ানার ডাক ওর কান পর্যন্ত পৌঁছায়। মিরা ধীরে ধীরে চোখ খোলার চেষ্ট করে
মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে। মিরা মাথায় হাত দিয়ে চারপাশের অবস্থা দেখে আৎকে উঠে। আতঙ্কে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” ঠিক আছো তুমি? কিছু হয় নি তো তোমার? আমি দুঃখিত ইয়ানা আমার কারনে তোমাকে এই অবস্থায় পড়তে হয়েছে। যদি আমি জেদ ধরে না আনতাম তাহলে এমন বিশ্রি অবস্থায় তোমকে পড়তে হত না।
ইয়ানা — এইসব বাদ দাও মিরা। এখন এইসব বলার সময় নয়। বিপদ সংবাদ দিয়ে আসে না। আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে।
মিরা — কিন্তু কিভাবে বের হব আমাদের হাত তো দঁড়ি দিয়ে বাধা।
মিরার কথা শুনে ইয়ানা কিছুক্ষন ভাবে। এরপর কিছু একটা মনে পড়তেই ফিক করে হেসে দেই।
ইয়ানার এমন হাসি দেখে মিরা অবাকের চরম পর্যায়। যেমন জামাই তেমন বউ। মিরা আশ্চর্য হয়ে বলে,,,,
” কি হলো হাসছো কেনো? তোমার এই বিপদে হাসতে ইচ্ছে করছে।
ইয়ানা নিজের হাসি থামিয়ে বলে,,,,,
” কত বড় আহাম্মক হলে শুধু হাত বেঁধেছে। আরে ভাই পা টাও বেঁধে দিয়ে যেতি। এখন তো আমি চেয়ার নিয়ে হেটে হেটে তোমার কাছে যেতে পারব। চেয়ারটার দিকে তাকিয়ে দেখো একদম হালকা আর একদম পুরনো।
ইয়ানার কথায় মিরা হালকা হেসে সম্মতি জানায়। এরপর ধীরে ধীরে সে ইয়ানার কাছে এসে ইয়ানার পিছনে ঘুরে বসে। পিছনে নিজের বাঁধা হাত দিয়ে ইয়ানার হাতের বাঁধন খুলে দেই।
ইয়ানা চেয়ার থেকে উঠে পিছনে গিয়ে মিরার হাতের বাঁধন ও খুলে ফেলে।
ইয়ানা — এইবার এইখান থেকে পালাতে হবে মিরা। মনে হচ্ছে আমরা পার্কেই আছি।।
মিরা — হ্যা আমার ও তাই মনে হচ্ছে।
মিরা আর ইয়ানা যখন দরজা পার করতে নিবে তখন তদের রাস্তা একজনে আটকে দেই। ইয়ানা তাকিয়ে দেখে এইটা সেই লোক যে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিলো। তার মানে ভুলে নয় ইচ্ছে করে দাঁড়িয়েছিলো। চট করে ইয়ানা লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা বিশ্রি ভাষা দিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে নিবে ঠিক সেই সময় ইয়ানা লোকটার অন্ডকোষে লাথি মারে।লোকটা চিৎকার দিয়ে ব্যাথায় বসে পরে।
ইয়ানা রেগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ,,,,,
” যখন নিজের স্বামীর ভবিষ্যত অন্ধকার করতে পরোয়া করে নি তখন তুই কোন মাল।
লোকটার লুটিয়ে পড়ার সুযোগে নিয়ে ইয়ানা মিরার হাত ধরে এক দৌড়ে দেই।
লোকটা বসে থেকেই কিছু লোককে ডাক দিয়ে বলে,,,,
” এই দুইটাকে ধরে। শালীদের তেজ অনেক। এই অগ্নি চৌধুরির বউয়ের তেজ মেটাতে চাই। শরীর যখন ছিড়ে খাব তখন বুঝবে বুঝবে।
ইয়ানা আর মিরাকে পাই কে লোকগুলো ধরার আগেই তারা রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে যায়। লোকটা ব্যাথা নিয়েই ইয়ানা আর মিরার পিছনে দৌড় লাগাই। যেহেতু লোকটা একটা ছেলে আর ইয়ানা তারা মেয়ে সেই হিসেবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেটা দ্রুত দৌড় দিতে পারবে।
ছেলেটা ইয়ানার পিছনে দৌড় দিতে দিতে বলে,,,,
” শুধু একবার ধরতে পারি তর শরীরকে যদি না ছিঁড়ে খেয়েছি তাহলে আমি আর কোনো মেয়েকে বিরক্ত করব না।
ইয়ানা এইসব পাত্তা না দিয়ে নিজের মত করে দৌড়াতে থাকে হঠাৎ এক প্রশ্বস্ত বুকে গিয়ে ধাক্কা খায়। ইয়ানা ভয়ে চোখ মুখ খিচে দেখে নিজস্ব পরিচিত এক আপন মুখ। একদম শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা অগ্নিকে জাপটে ধরে। মনে হচ্ছে কোনো এক ভয়ানক যুদ্ধ থেকে সে ফিরত এসেছে। আর সেই যুদ্ধের এক ফোটা তৃপ্তির পানি হচ্ছে এই বুক, এই ব্যক্তিটি। ইয়ানা অগ্নিকে জাপটে ধরে কিন্ত অগ্নি স্পর্শ করে না। সে আরিফের দিকে কিছু একটা ইশারা করে ইয়ানার বাম বাহুটে শক্ত করে চেপে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসায়।
এরপর অগ্নি মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” যাও মিরা ইয়ানার সাথে ব্যাক সিটে বসো গিয়ে।
অগ্নির চোখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। হাতের রগগুলো ভেসে নীল আকার ধারন করেছে।লোকগুলোর যে আর নিস্তার নেই সেটা মিরা ভালোভাবেই বুঝেছে। মিরা মুচকি হাসি দিয়ে ইয়ানার পাশে বসে পড়ে। আর এইদিকে ইয়ানা ভয়ে অগ্নির দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে। লোকটা আজ তার উপর ভীষন রেগে আছে। কিন্ত উনি কিভাবে জানলেন আমি ওইখানে আছি?
অগ্নি মিরাকে হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে যায়। অগ্নিকে এই প্রথম এত স্প্রিডে গাড়ি চালাতে দেখছে ইয়ানা। উনি শান্ত মানে ঝড়ের পূর্বাভাস। এইভাবে গাড়ি চালালে তো যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট করব।
ইয়ানা ভয় নিয়ে অগ্নির উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,
” একটু ধীরে চালান না। এইভাবে চালালে তো এক্সিডেন্ট হবে।
ইয়ানার কথা কানে প্রবেশ করতেই গাড়ির স্প্রিড আর ও বাড়িয়ে দেই। ইয়ানা ভয়ে কাপড় খামচি দিয়ে ধরে। আল্লাহ জানি না আজ কপালে কি আছে।
অনেক্ষন পর অগ্নির গাড়িটা এসে পার্কিং এড়িয়ার মধ্যে এসে থামে। অগ্নি গাড়ি থেকে নেমে পড়নের কোর্টটা খুলে সিটের উপর ছুড়ে ফেলে। এরপর দরজা খুলে ইয়ানার হাত চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামায়। রাগে ওর পুরো শরীর কাঁপছে।
এত জোড়ে ধরায় ইয়ানা মিহি সুরে বলে,,,,,,
” ব্যাথা পাচ্ছি।
অগ্নি আর ও জোরে চেপে ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়। এরপর বেড রুমে নিয়ে গিয়ে ইয়ানার ডান গালে এক থাপ্পর লাগাই। ইয়ানা তাল সামলাতে না পেরে বিছানায় গিয়ে ছটকে পড়ে। মনে হচ্ছে পুরো মাথা ঘুরছে। এখন ওই ঙ্গান হারিয়ে ফেলবে। ইয়ানার ভাবনার মাঝে অগ্নি ইয়ানার বাহু চেপে ধরে বিছানা থেকে হেচকা টান মেরে তোলে।
আরেকটা থাপ্পর দিতে যাবে ইয়ানা মুখ খিচে ফেলে। অগ্নি নিজের হাত নামিয়ে ফেলে। এরপর রাগ মিটার জন্য পাশে থাকা ফ্লাওয়ার টবটা আছাড় মারে। সাথে সাথে টবটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। ইয়ানা যেনো তব্দা লেগে তাকিয়ে আছে। কোনো অনুভুতি নেই ভিতরে। অগ্নির এত ভয়ানক রাগ সে হতভম্ব। গাল ব্যাথায় টনটন করছে।
অগ্নি ঘরের অনেক জিনিস ভাঙ্গার পর চিৎকার দিয়ে বলে,,,,
” বালের থাপ্পর ও দিতে পারি না। এক থাপ্পর দিলে নিজের ওই কলিজা কেঁপে উঠে। আঘাত করতে গেলে নিজের হৃদয় ওই ছিন্ন বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। অসহ্য কর অনুভুতি সব।
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,,,,,,
” কেনো গিয়েছিলে পার্কে আমাকে না জানিয়ে? তুমি জানো আজ কি হতে পারতো? এই লোকগুলো কত বড় নরখাদক তোমার ধারনা আছে। যদি একবার ভালোভাবে নিজের দখলে পেত তাহলে ছিঁড়ে ফেলত।
কথাটা নিজে বলে নিজেই যেনো আৎকে উঠে। অগ্নি ধীরে গিয়ে বিছানায় বসে। বিছানার চাদর খামছি দিয়ে ধরে বলে,,,,,,
” আমার চোখের সামনে থেকে যাও ইয়ানা। এখনি এন্ড খুব দ্রুত। নাহলে আমি তোমার কি করব নিজেও জানি না।
ইয়ানার কোনো রেসপন্স না পেয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অগ্নি পুনরায় একি মেজাজে বলে,,,,,,,
” কি হলো কি বলেছি শুনতে পাচ্ছো না। যেতে বলেছে আমার সামনে থেকে। নাহলে কিন্তু………
অগ্নি আর কিছু বলতে পারে না তার আগেই চুপ হয়ে যায়। নিজের ঠোঁটের উপর নরম স্পর্শ অনুভব করে সামনে তাকায়। দেখে ইয়ানা তার দিকে ঝুঁকে নিজের নরম স্পর্শ তার ঠোঁটে বিলিয়ে দিয়েছে। এই প্রথম ইয়ানা নিজে থেকে স্পর্শ করেছে। সেচ্ছায় তাকে আলিঙ্গন করেছে। অগ্নির রাগ কমে নি। তাই ইয়ানাকে নিজের থেকে ছাড়াতে চাই। অগ্নি নিজের দুই হাত দিয়ে ইয়ানাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই। কিন্তু ইয়ানা অগ্নির শর্টের কলারে ধরে ঠোঁট আরও গভীরভাবে চেপে ধরে। অগ্নি না আটকাতে পারছে আর না ইয়ানাকে ছেড়ে দিতে মন সায় দিচ্ছে। ইচ্ছে করলে এক ঝটকায় ইয়ানাকে ছাড়িয়ে নিতে পারে কিন্ত কেনো জানি সেটা একদম ইচ্ছে করছে না।
অগ্নি ইয়ানার কোমর চেপে ধরে ইয়ানার ঠোঁটে দাত বসিয়ে দেই। ইয়ানা হালকা আর্তনাদ করে ছেড়ে দিতে চাই কিন্তু এইবার অগ্নি ভালোভাবে চেপে ধরে। এরপর ইয়ানাকে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে ঠোঁট দুটি আকড়ে ধরে। পর পর দন্তের ঘর্ষনে ইয়ানার নাজেহাল অবস্থা। কিন্ত কিছু মুহূর্ত হলে আগের মত সেই রাগ আর ক্ষত করা স্পর্শ নেই। এমনভাবে চুমু খাচ্ছে মনে হচ্ছে ইয়ানা কোনো বাচ্চা সে ব্যাথা পাবে। প্রায় দশ মিনিট পর অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দেই। ইয়ানা অগ্নির উড়ুর উপর বসেই মাথা নিচু করে চুপ হয়ে থাকে। গোলাপি ঠোঁটগুলোর মধ্যে লাল ছোঁপ ছোঁপ দাগ হয়ে গিয়েছে।
অগ্নি ইয়ানার লাজুক মুখটা চিবুক ধরে উপরে তোলে। এরপর ঠান্ডা সুরে বলে,,,,,
“,চোখ খুলো ইয়ানা ।
অগ্নির আদেশে ইয়ানা চোখ খোলে । এরপর অগ্নির চোখে চোখ রেখে তাকায়। অগ্নি নিচের ঠোঁট কামড়ে হালকা হাসে। অগ্নির হাসি দেখে ইয়ানা মোহিত দৃষ্টিতে তাকায়। লোকটাকে হাসলে কি সুন্দর দেখাই।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে মিহি সুরে বলে,,,,,
” রাগ কমেছে আপনার?
অগ্নি ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে বলে,,,
“মেডিসিন পছন্দ হয়েছে। এইটা আমি সবসময় চাই।
ইয়ানা লজ্জায় মুখ লোকায়। একটু আগের কাহিনী মনে পড়তেই পুরো মুখ রক্তিম বর্ন ধারন করে।
ইয়ানাকে এমন লজ্জা পেতে দেখে অগ্নি বলে উঠে,,,,
” তোমাকে এইসব লজ্জা মানাই না। আর কেনো মানাই না সেটা নিশ্চিত রিপিট করে ভেঙ্গে বুঝাতে হবে না।
ইয়ানা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” ছিহহ ঠোঁট কাটা নির্লজ্জ লোক।
অগ্নি বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। এরপর দুই হাত বুকে গুজে দিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
” আমি তো ভেঙ্গে বুঝায় নি তাহলে ঠোঁট কাটা হলাম কিভাবে?
ইয়ানা — ইঙ্গিত তো দিয়েছেন।
অগ্নি মৃদু হাসে। এরপর ইয়ানাকে কোমল সুরে বলে,,,,,,
” কাছে আসো আমার ”
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এরপর কপাল ভাজ করে বলে,,,,
” আবার কি করবেন? আপনার মতলব ভালো না।
অগ্নি একই ভঙ্গিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” আমি যদি কিছু করি তুমি আটকাতে পারবে?তুমি যদি আমার কাছ থেকে হাজার মাইল দুরে ও থাকো আমার যদি ইচ্ছে হয় তাহলে তোমার আটকানোর ক্ষমতা নেই। কিছু করব না কাছে আসো।
ইয়ানা অগ্নির কথা শুনে বিশ্বাস করে তার কাছে যায়।
অগ্নি বিছানায় ইশারা দিয়ে বলে,,,,,
” পাশে বসো আমার।
ইয়ানা তাই করে। ইয়ানা বসতেই অগ্নি নিজের বাহু ধারা ইয়ানাকে আলিঙ্গন করে। এরপর ইয়ানাকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে,,,,,
‘ কথা দাও ইয়ানা আমাকে না জানিয়ে আর কখনো কোথাও যাবে না। তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য আমি পাগল হয়ে যায়। যদি কোথাও যেতে ইচ্ছে হয় তাহলে আমাকে জানাবে আমি পাঠাব তোমায় সুরক্ষার সাথে। যাতে তোমার শরীরে একটা আচ ও না পড়ে। তোমার কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাব জান।
অগ্নির ব্যাকুলতা দেখে ইয়ানা গভীর শ্বাস ফেলে,,,,,,
” যাব না আর আপনার অনুমতি ছাড়া। কিন্তু জানি না লোকগুলো আমার আর মিরার পিছু কেনো নিয়েছে। আমি তো ওদের কখনো দেখিনি ইভেন চিনি ও না। আচ্ছা ওদের নিয়ে একটা পুলিশ ফাইল করলে কেমন হয়। ওই মাক্স পড়া লোকটা আমাকে কি বিশ্রি কথা বলছিলো ছিহহহ। ওকে রিমান্ডে দেওয়া দরকার।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,
” ওর ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। ওদের চিনা জানার প্রয়োজন নেই। ওরা একটা গ্যাং এর লোক। ওদের লিডার ওই একশত টা মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করে তাদের চেলাপেলা খারাপ ভাষা বলবে স্বাভাবিক।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,
” ওদের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে মানে? কি করেছেন ওদের সাথে?
অগ্নি — পুলিশ! পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে এসেছে আরিফ।
ইয়ানা *– ওহহ আচ্ছা। আপনি কিভাবে জানেন ওরা গ্যাং এর লোক।
অগ্নি — আরে আশ্চর্য আমি এখানে কি নতুন নাকি? এখানে আমি বড় হয়েছি, পড়াশুনা করেছি। এখন একজন সফল ব্যবসায়ী জানাটা কি স্বাভাবিক নয়।
ইয়ানা — হ্যা তা ঠিক। সে জন্য আমি এইসব গ্যাং মাফিয়াদের দেখতে পারি না। দুই চোখে সহ্য করতে পারি না ওদের।
অগ্নি শীতল চোখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” কেনো মাফিয়াদের ঘৃনা করো?
ইয়ানা — সেটা অনেক বড় কাহিনী।
অগ্নি — শুনি।
ইয়ানা অগ্নির দিকে চোখ তোলে তাকায়। এরপর একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,
” আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা চট্টগ্রামে থাকতাম। আব্বু ঢাকা ব্যবসা করত বাট আমরা পুরো ফ্যামিলি ছিলাম চট্টগ্রামে। আমার দাদুর বাড়ি কিন্তু চট্টগ্রামে। অবশ্য এখন দাদা – দাদু কেউ নেই। রুই মাত্র ক্লাস ওয়ানে পড়ে। আমি একদিন স্কুল থেকে আসার পথে শুনে কয়েকজন মহিলা বলছিলো গ্রাম থেকে নাকি ছোট বাচ্চা তোলে নিয়ে যাচ্ছে পাচার করার জন্য। এইটা নিয়ে পুরো গ্রামের বাচ্চারা বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করে দেই। তাদের খেলাধুলা,, আনন্দ, তাদের শৈশব তাদের থেকে ছিনিয়ে নেই। এক মাস এমন চলতে থাকে। এরপর হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এখন আর কেউ হারিয়ে যাচ্ছে না। সবাই ভেবেছে তারা হয়ত চলে গিয়েছে।
তাই আবার তারা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে শুরু করে। বাচ্চারা খেলাধুলা করতে থাকে যেমনটা তাদের করার কথা। এইভাবে চলে যায় পনেরো দিন। কিন্ত হঠাৎ একদিনের নিউজে দশ জন বাচ্চা নিখোঁজ। সংবাদটা গ্রামের গলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়ে। যারা গরিব তাদের ভাঙ্গা দরজা। ঘড়ের জানালা ভাঙ্গা। তারা এইসব ভাঙ্গা দরজা জানালা দিয়ে ডুকে বাবা মায়ের গলায় ছুঁড়ি ধরে ঘুমন্ত বাচ্চাকে মায়ের বুক থেকে টেনে নিয়ে যেত। একেক জনের চাপা আর্তনাদ মনে হয় আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কেঁপেছে। স্থানীয় পুলিশকে তারা ক্ষমতার জোড়ে জিন্মি করে রেখেছে। আবার কেউ টাকার লোভে মাফিয়াদের সাথে হাত মিলিয়েছিলো। পুরো গ্রামে এক আধারের ছায়া নেমে আসে। আমাদের বাড়িতে একবার ডুকতে চেয়েছিলো রুইকে নেওয়ার জন্য। তখন আমি…….
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,
” তখন আমি কি?
ইয়ানা — তখন পিছনে গিয়ে একটা ছুঁরি নিয়ে ওদের ভবিষ্যতের মাঝ বরাবর কূপ বসায়।মুহূর্তেই ওরা লুটিয়ে পড়ে। ওই ঘটনার পর থেকে কাউকে থামাতে গেলে আমি সেই ট্রিপস লাগে লাগাই।
অগ্নি হালকা কাশি দিয়ে বলে,,,,
” হ্যা সেটা আমি ভালো করেই জানি।
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে আবার বলা শুরু করে,,,,,
” পুরো গ্রাম হাহাকার লেগে যায়। পুলিশরা যেনো থেকে ও নেই। মায়েদের কান্না আর আর্তনাদ পুরো গ্রাম দুঃখে ভারী হয়ে উঠে। আমি শুধু রাগে দুঃখে কান্না করতাম। সহ্য হচ্ছিলো না আর এদের কষ্ট। নামাজের বিছানায় বসে হাজারটা অভিশাপ দিয়েছি। এই পরিস্থিতি দেখে আব্বু আমাদের ঢাকা নিয়ে চলে আসে। কারন যেকোনো সময় আমাদের উপর আ্যটাক করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা আমি ওদের লোকদের আহত করেছি। পরে ঢাকা এসে শুনতে পারি মোট চল্লিশ জন শিশু তারা নিয়েছে। কিন্তু আলাহর এক রহমত ছিলো। অন্য জেলার এক পুলিশ সুপার ছিলো। যিনি পুরো জেলার প্রশাসক। উনি এই খবরটা জানতে পেরে আমাদের এখানে তদন্ত চালাই। সকল পুলিশদের বিরুদ্ধে আ্যকশন নেই। উনি একা লড়েছেন ওনার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে। নিজের জীবন বাজি রেখে সেই জানোয়ার মাফিয়ার বিরুদ্ধ্ব রুখে দাঁড়ায়। বলে না সত্তের জয় হয়।
আর হয়েছে ও। যেদিন বাচ্চাগুলোকে চীন পাচার করত যাবে ওইদিন পুলিশের সমস্ত ফোঁর্স নিয়ে এদের উপর আ্যটাক করে। আর আল্লাহর রহমতে উদ্ধার ও করে। কিছু বাচ্চা আহত হয়েছিলো তাদের চিকিৎসা দিয়ে আবার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। জানেন কেনো তারা তাদের সন্তান ফিরে পেয়েছে? তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করে নিয়েছেন আর তাদের চোখের পানি জমিনে পৌঁঁছানোর আগেই পুলিশটাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন এক রাশ মানবতা দিয়ে তাদের সাহায্য করার জন্য। শুনেছি পড়ে নাকি মাফিয়া নিজের গ্যাং নিয়ে পালিয়েছে। আর যেসব পুলিশ ওদের সাহায্য করেছিলো ওদের জেল হয়।
এই হলো আমার ঘৃনা করার প্রধান কারন। ছোট বয়সেই এত জঘন্য সত্যের শিকার হয়েছি। আর হ্যা আরেকটা কথা বলতে ভুলেই গিয়েছে অনেক মা- বোন দর্ষনের স্বীকার ও হয়েছে। তাদের সম্রমহানী করে তাদের ওই বুক খালি করে তাদের একমাত্র সম্পদ কেড়ে নিয়েছে। এইবার ভাবেন কত বড় নরপশু ওরা। ওদের ঘৃনা করার মনে হয় এর চেয়ে বড় কারন থাকার দরকার নেই।
অগ্নি ইয়ানার চোখে মুখে গভীর দৃষ্টি ফেলে বলে,,,,,
” সবাই এমন হয় না।
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” কি যায় আসে সবাইকে দিয়ে। যারা অন্যায় করে তাদেরকেই তো মাফিয়া বলে। এখন সে শুধু দর্ষন করতে হবে তার তো কোনো মানে নেই। খারাপ খারাপ ওই হয়।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” হুম বুঝলাম। অনেক সাফার করেছেন আপনি ম্যাডাম । তবে ঘৃনার পরিমানটা কষ্ট করে কমিয়ে নিয়েন কারন সবাই এক হয় না। অনেকে সমাজের কীট ধ্বংস করতে নিজেকে মাফিয়া হিসেবে ঘরে তুলে।
ইয়ানা শান্তভাবে অগ্নির কথা শুনে। একসময় অগ্নি কোনো ফোন পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
🔺নিজ দায়িত্বে পড়ো…..
জানালার পর্দা অল্প বাতাসে দুলছে অথচ ঘরের ভিতরে হাওয়া নেই। দেয়ালের গায়ে রক্তের ছিটে শুকিয়ে গাঢ় বাদামি হয়ে গেছে যেন কেউ তুলি দিয়ে আঁকিয়েছে। মেঝেতে পড়ে থাকা কাঁচের গ্লাস ভেঙে ছড়িয়ে আছে আর তার পাশে লোটিয়ে পড়া ব্যাক্তিটি।
অগ্নি লোকটার সামনে গিয়ে বসে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
” তর জন্য ভালোভাবে বউয়ের সাথে প্রেমটা ও করতে পারলাম না। ফোনের জালাই চলে আসতো হলো। এইবার বল তকে কি করি?
লোকটা জানে তার সময় ঘনিয়ে এসেছে কারন অগ্নি চৌধুরির গুহায় আছে সে। এক সিংহের গুহায় যে তাকে নরকেময় মৃত্যু দিবে। লোকটার ভিতরে ভয়ে আতঙ্ক্ব কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। কিন্তু উপরে একদম শান্ত হয়ে বসে আছে।
অগ্নি ঠান্ডা চোখে পর্যবেক্ষন করে একটা পাত্র এনে তার চোখের সামনে ধরে। লোকটা বাজে কিছুর গন্ধ পেয়ে নাক ছিটকিয়ে পাত্রের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে রক্তের মত লাল তবে এখন কালচে হয়ে আছে। অন্য হাতে গলিত মাংস।
অগ্নি লোকটার দিকে তাকিয়ে ঘম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,,
” নে তাড়াতড়ি এই দুর্ঘন্ধময় রক্তটা পান কর। বলেছিলি না তুই আমার বউকে কাছে পেলে ছিড়ে খাবি এই নে এই কুকুরের রক্তটা খা। আর হ্যা এই রক্ত বিগত পনেরো দিন ছিলো।
রক্তের দুর্ঘন্ধে সবাই নাক চেপে ধরেছে। সবাই যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। টেবিলের ওপর রাখা ঘড়ি থেমে আছে রাত ঠিক ৮:১৭-তে।
কিন্তু অগ্নি শান্ত মুখে মাক্স পরিধান করা। অরিফ চোখ উল্টিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে যায়। এইদিকে তাকালে নির্ঘাত বমি করবে।
লোকটা অগ্নির দিকে না তাকিয়ে বলে,,,,,,,,
” পাগল হয়ে গিয়েছেন আপনি? এইসব কেউ খাই।
অগ্নি পাত্রের দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,,,
” এইটা আমার বউয়ের থেকে বেশি মজা। কুকুরের রক্ত যেটা তর উপযুক্ত।
লোকটা অগ্নির দিকে এইবার ক্ষমা চেয়ে আতঙ্ক সুরে বলে,,,,,,
” আমাকে ক্ষমা করে দিন স্যার। ভুল যায়গায় কাজ করেছি। আমি সামান্য চাকর মাত্র।
লোকটার কথা শুনে অগ্নি উচ্চস্বরে হেসে উঠে।এমন রহস্যময় হাসির শব্দ টর্চারসেলের আবদ্ধ রুমে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে।
অগ্নি ঘাড় কাত করে ঠান্ডা কন্ঠে বলে,,,,,,,
” ” খেয়ে নিবি নাকি এর চেয়ে খারাপ কিছু এনে দিব। কত বড় কলিজা তর ভাবা যায়। আমার বউ জানা সত্তে ও হাত বাড়িয়েছিস। তর স্যারকে আমি দেখে নিব আগে তকে দেখি।
লোকটা মাথা নাড়িয়ে নাক মুখ কুচকে বার বার না করছে অগ্নি কুকুরের দুর্ঘন্ধয় রক্তটা ওর মুখে দিয়ে দেই। লোকটা বমি করে সব বের করতে নিবে এমন সময় এক কোঁপে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে ফেলে। একদম নিঁখুতভাবে যেনো কোনো আর্ট। রক্তে পুরো মেঝে লাল হয়ে যায়। কিন্তু এইটুকুতে অগ্নির মনে শান্ত আসে নি ক্রোধে ওর পুরো শরীর কাঁপছে। অতিরিক্ত রাগে হাতে থাকা থাকা দাঁ দিয়ে লোকটার দেহ কোঁপাতে থাকে। যেনো কোনো কাচা মরিচ কাটছে। যখন দেহ ছিন্ন বিচ্ছন্ন হয়ে যায় তখন অগ্নি দাঁ টা রেখে চেয়ারে বসে শান্তভাবে শ্বাস নেই। এরপর গার্ডের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৩
” এই জানোয়ারটাকে পরিষ্কার কর। এক ফোঁটা রক্ত ও যাতে না থাকে।
এরপর আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” গাড়ি বের কর দ্রুত শাওয়ার নিতে হবে। ওর রক্ত শরীরে লেগে গেছে।
আরিফা — জ.. জি ভাই।।
অগ্নি শান্ত দৃষ্টিতে বির বির করে বলে,,,,,,,
” আমার বউয়ের দিকে তাকালে তাকে আমি জাহান্নামের নমুনা দেখিয়ে আনব। জীবন ও আমার। আর আমি আমার জীবনের উপর বদ কলঙ্কের কালিমা লাগতে দিব না।