অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৭

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৭
লিজা মনি

ইয়ানা আর দাড়াতে পারলো না মুখে ধরে এক চিৎকার দিয়ে এখান থেকে চলে যায়। কোথায় যাচ্ছে সে নিজে ও জানে না। ওর পায়ের শব্দ বজ্ররের কলধ্বনিতে তাল মেলাচ্ছে।ইয়ানা সিড়ি বেয়ে ছাদে চলে যায়। বজ্রপাতের কারনে পুনরায় নামতে যাবে এমন সময় চোখ যায় একটা কালো ছায়ার উপর। ভালোভাবে তাকালে তখন ওই একটা বিকট বজ্রপাতে সেই ছায়া স্পষ্ট হয়ে উঠে। থেমে যায় ইয়ানা। পুনরায় ছাদের দিকে ঘুরে তাকায়। বার বার বজ্রপাতে কিছু দৃশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বৃষ্টির পানিতে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এক পাশে। বজ্রের আলোতে হঠাৎ কাউকে এতটা বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠে ইয়ানা।

তার সামনে এক নগ্ন লোক যার চোখ তোলে ফেলা হয়েছে। হাত নেই দুইটা, জিহ্বা কেটে ফেলা হয়েছে, শরীর থেকে অনবরত রক্ত স্রোত চলছে। পেট কাটা ফলে লোকের পেটের ভিতরের নাড়িভুড়ি দৃশ্যমান।
এত ভয়ানক দৃশ্য দেখে ইয়ানা স্তব্দ হয়ে যায়। চিৎকার করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। মনে হচ্ছে এখান থেকে পা নড়লে তার ও ঠিক একি অবস্থা হবে। আতঙ্কে পুরো শরীর অবশ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী ঘুরছে। ইয়ানা লাশটার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনে থাকা ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। তার হাতে এক দাড়ালো ছুরি। পুরো হাত রক্তাক্ত হয়ে আছে। এক হিংস্র চাহনি দিয়ে ওর দিকে তাকায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুনের লাভা বের হচ্ছে। তাকে দেখে লোকটি খুব বিরক্ত হয় । ইয়ানা ব্যক্তিটিকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে নি। মুখে হাত দিয়ে দু পা পিছিয়ে যায়। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেই ভয়ানক মানবটার দিকে। এক সময় ইয়ানা নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ঢলে পরে। কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই এক শক্ত পোক্ত হাত ওকে আকড়ে ধরে। ইয়ানা চোখ বন্ধ করার আগে পর্যন্ত লোকটার মুখটার দিকে তাকায়। এরপর স্রোতবিহীন জল গড়িয়ে পড়ে চোখ বেয়ে। শুধু অস্ফূর্ত ভাষায় বলে,,,,,
” আপনি আমার স্বামী নন। আপনি তো মানুষ ওই নন।”
এরপর পুরো দুনিয়া অন্ধকার করে ইয়ানা চোখ বন্ধ করে ফেলে। অগ্নি ইয়ানার দিকে কিছুক্ষন শান্ত চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। ইয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তের মধ্যে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। ইয়ানা কি তাকে এখন ছেড়ে চলে যাবে। যদি এমন হয় তাহলে অগ্নি চৌধুরি তো বসে থাকবে না । এই মেয়ে ছাড়া তো আমি নিশ্বাস ও নিতে পারি না। অগ্নি কাউকে ইশারা করে ইয়ানাকে পাজা কোলে তোলে নেই।

সকালে ইয়ানা চোখ মেলে তাকায়। মাথাটা এখন ও ভারি হয়ে আছে। মাথায় আলতো চাপ দিয়ে উঠে বসে। মুহূর্তের মনে পড়ে যায় রাতের সেই ঘটনা। রুমে তালাবদ্ধ ছিলো চারজন লোক। কেমন হিংস্রভাবে তাকাচ্ছিলো তার দিকে। ইয়ানা শক্ত করে বিছানার চাদর খামচে ধরে। মনে হচ্ছে এইটা কোনো বাড়ি না একটা মৃতপুরী।ইয়ানার গলা শুকিয়ে আসছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়ে গেছে। ইয়ানা চারদিকে একবার চোখ বোলাতেই দেখতে পায় অগ্নি তার পাশেই শান্তভাবে বসে আছে। মনে হচ্ছে এতক্ষন তাকেই পর্যবেক্ষন করছিলো। কাল রাতে সে যেই অগ্নি চৌধুরিকে দেখেছে তার সাথে আজকের অগ্নি চৌধুরির কোনো মিল নেই। সে দেখেছে কাল রাতে অগ্নির সেই হিংস্র চোখজোড়া। কিভাবে বিকৃত খুন করছিলো। যাকে সে ভালোবাসত নিজের থেকে ও বেশি বিশ্বাস করত সে এক বিকৃত খুনি।

কারোর কলিজা কেটে হাতে নিয়েছে। ওই বন্ধ দরজার লোকগুলো কারা? ওনি তো বলেছিলো কারোর গচ্ছিত সম্পদ।তাহলে ওরা কারা? হুট করে মনে পড়ে যায় “অগ্নি ” এই নামটার কথা। একজন গ্যাংস্টার মাফিয়া। যার আতঙ্কে সবাই আতঙ্কিত হয়ে থাকে। তাহলে উনিই কি সেই অগ্নি চৌধুরি? ইয়ানার মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। যাকে সে জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে সে একজন মাফিয়া। যেই মাফিয়াদের ইয়ানা বিষাক্ত এক কীট মনে করে সমাজের। নাহ এইটা হতে পারে না?

ইয়ানাকে এইভাবে বিরবির করতে দেখে অগ্নি এইবার ইয়ানার পাশে গিয়ে বসে। ইয়ানার ভিতরে এক প্রকার ভয়। অগ্নিকে সে সহ্য করতে পারছে না। অগ্নি ইয়ানাকে ছুঁতে গেলে ইয়ানা দুরে সরে যায়। ইয়ানার দুরে সরে যাওয়া অগ্নির একদম পছন্দ হয় নি। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। কিন্তু সে রাগতে চায় না।
ইয়ানা এইবার ডুঁকরে কেঁদে উঠে। আজ অগ্নি তাকে আটকায় না। সে চাচ্ছে ইয়ানা কাঁদুক। ইয়ানা অশ্রু নয়নে অগ্নির দিকে তাকায়। সেই চাহনে অগ্নির হৃদয়কে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে তুলে। মুহূর্তেই অশান্ত হয়ে পড়ে ওর মন। ইয়ানার সেই করুন চাহনি সহ্য করার মত ক্ষমতা নেই তার।
ইয়ানা নিজের কান্না বন্ধ করে বলে,,,,,,

“”আমি কিভাবে বুঝিনি প্রতিটি নিশ্বাস, প্রতিটি চুম্বন, প্রিতিটি আলিঙ্গন, প্রতিটি কথা সব মিথ্যা ছিলো। সব তাহলে এক রক্তাক্ত নাটকের অংশ ছিলো। নাকি নিজেই নিজেকে অন্ধ করে রেখেছিলাম? সব কিছু চোখের সামনে ছিলো কিন্তু আমি দেখতে পাই নি। নাকি সত্তিটা কখনো জানতে চাই নি।কারন সত্যি জানলে আমার সপ্নগুলো ছিন্নভিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। ঠিক যেভাবে কাল রাতে হয়েছে।
অগ্নি নিরব। একদম শান্ত চাহনিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নির চাহনি দেখে ইয়ানা চোখের পানি মুছে তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

” যার বাহুতে আমি নিরাপদ ছিলাম বলে ভাবতাম অথচ সেই বাহু কারোর গলা টিপে ধরেছে। যেই আঙগুল ধরে তার সাহায্য পুরো জীবন কাটাব ভেবেছিলাম সেই আঙ্গুল কারোর রক্তে রঞ্জিত হয়েছিলো। এ কেমন বেরাজালে আবধ্য হলাম আমি। ভালোভাসা যদি ছুঁরির মত হয় তাহলে আমাকে সেই ভালোবাসা নিঁখুতভাবে কেটেছে একদম নিশ্বব্দে।
ইয়ানার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। সে এখন ও মানতে পারছে না কিছু। ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি গম্ভীর গলায় বলে,,,,,,,

“” তোমাকে আমি ইচ্ছে করেই কিছু জানাইনি। জানতাম তুমি ভেঙ্গে পড়বে । তোমাকে আঘাত দিতে চাই নি। তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম আমাদের এক আলাদা রাজ্যে। কিন্তু তুমি আমায় দেখো ফেলেছো। এখন জানো আমি কে।
ইয়ানা চাদর খামচে ধরে শক্ত করে। মন বলছে এইসব সপ্ন ঘুম ভাঙলে সব শেষ। তার অগ্নি কোনো গ্যাংস্টার হতেই পারে না। কিন্তু আফসোস সেই সপ্ন বাস্তবে ধরা দিচ্ছে। ঘুম ওই ভাঙছে না।
ইয়ানাকে এইভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেখে অগ্নি একটা শ্বাস ফেলে । ইয়ানাকে বার বার মাথায় হাত দিতে দেখে বুঝতে পারে ইয়ানার মাথা ব্যাথা করছে। ইয়ানা যদি অতিরিক্ত কান্না বা মানসিক চাপ নেই তাহলে ওর মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। সেটা অগ্নির অজানা নয়। অগ্নি ধীরপায়ে ড্রয়ার থেকে একটা পেইন কিলার ইয়ানার সামনে ধরে।
এরপর পানির গ্লাস নিয়ে বলে,,,,,,

” ঔষধটা খেয়ে নাও ব্যাথা কমে যাবে। ”
অগ্নিকে ঔষধ দিতে দেখে ইয়ানা রেগে যায়। চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হবে। বুকের ভিতর তীর ডুকিয়ে এখন মাথা ব্যাথা কমার ঔষধ দিচ্ছে। ইয়ানা নিজের রাগটাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে অগ্নির হাতে থাকা গ্লাসটা ফেলে দেয় । ইয়ানার এমন কান্ডে অগ্নি অবাক। এই প্রথম ইয়ানাকে সে এত রাগতে দেখেছে। কিন্তু ইয়ানার এইভাবে গ্লাস ফেলে দেওয়াটা ওর মোটেই পছন্দ হয় নি। ইয়ানা এইবার চিৎকার করে কেঁদে উঠে ।
অগ্নির শার্ট নিজের হাতে চেপে ধরে বলে,,,,,,,,

” সহ্য করতে পারছি না অগ্নি চৌধুরি। বিশ্বাস করতে পারছি না আমার ভালোবাসা আমার স্বামী একজন খুনি। আমার শরীরে যে প্রথম স্পর্শ করেছে সে কারোর চোখ তুলে নিয়েছে। আমাকে যে মিষ্টি ভালোবাসায় আলিঙ্গন করত সে কারোর বুকে ছুরি চালিয়েছে। যার প্রতিটা ধমক আমি শাসন রুপে ভেবে নিতাম সে কারোর শরীর ছিন্নভিচ্ছন্ন করেছে। যাকে এক মুহূর্ত দেখার জন্য তৃষ্ণার্তদের মত হয়ে থাকতাম সে কারোর গলা কেটে দিয়েছে। কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে আমার দেহের ভিতরে কেউ বিষাক্ত সুঁচ গেঁথে দিয়েছে। বাজে ভাবে আমাকে ভেঙ্গে দিয়েছেন আপনি মি. অগ্নি চৌধুরি একদম নিখুতভাবে।
অগ্নি ইয়ানার মাথাটা নিজের সাথে চেপে ধরে। কিন্তু ইয়ানা অগ্নির থেকে ছিটকে দুরে সরে যায়। এক প্রকার ক্রোধ নিয়ে বলে,,,,,,,

” ছোবেন না আপনি আমায়। এক পশু আমাকে ছোঁয়ার কোনো অধিকার নেই। যদি জানতাম ভালোবাসা এইভাবে আঘাত করে তাহলে আমি সেই ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটাতাম। আপনার স্পর্শে এত দিন এক শান্তি অনুভব করতাম কিন্তু এখন সেই স্পর্শে রক্তের গন্ধ পাচ্ছি। ঘৃনা করছে আপনাকে দেখে।
অগ্নি চোখ বন্ধ করে দু হাত মুঠোই করে ফেলে। এরপর একদম ধীরে ইয়ানার কাছে এসে দাঁড়ায়। ইয়ানা ঘৃনায় চোখ ফিরিয়ে নেই। অগ্নি ইয়ানাকে পর্যবেক্ষন করতে থাকে। যেই চোখে সে এত দিন ভালোবাসা দেখতে পেত সে চোখে আজ এত ঘৃনা। যে এক মুহূর্তে অগ্নিকে কাছে পাওয়ার জন্য পাগলামি করত সে আজ নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিচ্ছে। যেই স্পর্শের জন্য সে মরিয়া হয়ে থাকত আজ বলছে সে স্পর্শ তার কাছে ঘৃনিত। কিন্তু কেনো? ওই লোকগুলোর জন্য? কিন্তু আমার বউ বাহিরের লোকদের জন্য এত দরদ দেখাচ্ছে কেনো? তাও আবার আমাকে ঘৃনা করে।

ইয়ানা বাহিরের ব্যক্তিদের জন্য ভালোবাসা দেখাচ্ছে নিজের স্বামীকে উপেক্ষা করে। শান্ত চোখ গুলো আবার ও অশান্ত হয়ে পড়ে। হিংস্রভাবে তাকায় সে ইয়ানার দিকে। ইয়ানা সরে যেতে চাইলে অগ্নি ইয়ানার হত ধরে চিবুক চেপে ধরে। এতটা জোড়ে ধরেছে মনে হচ্ছে ইয়ানার গাল ছিড়ে যাচ্ছে। ইয়ানা ব্যাথায় চোখমুখ খিঁচে ফেলে। কিন্ত সে ও একইভাবে তেজী চোখে অগ্নির দিকে তাকায়।
অগ্নি ইয়ানার চিবুক চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,,,,,,
” কার জন্য দরদ দেখাচ্ছিস তুই? ওই জানোয়ারগুলোর জন্য। সাহস কি করে হয় আমাকে উপেক্ষা করার বিয়াদপ মেয়ে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,

” জানোয়ার কি আপনি কোনোদিক দিয়ে কম। তাহলে আপনি কেনো বেঁচে আছেন?
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি হালকা স্তব্দ হয়ে যায়। ইয়ানার চিবুক থেকে হাত নামিয়ে নমনীয় সুরে বলে,,,,,,
“মরার ভয় আমার কোনো কালেই ছিলো না। কিন্তু তুমি আমার জীবনে আছো তাই মরা শব্দটা আমার কাছে এক অভিশাপের মত। বাঁচতে চাই আমি তোমার সাথে অনেক বছর। আমি যা করি সব নরকের জন্য। কিন্তু যদি অনুভবের তীব্রতা বলো তাহলে সেটা তুমি।আমি হয়ত খুনি কিন্তু তোমার জন্য আমার আসক্তি আর অনুভব কখনো মিথ্যে ছিলো না। ”

ইয়ানা অগ্নির কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনে। অগ্নির দিকে তাকিয়ে ওর পুরো মুখে হাত বোলায় আর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে অজশ্র জলকণা।কিন্তু পরমুহূর্তে মনে পড়ে যায় অগ্নি অন্ধকারে ভিতরে ভেসে উঠা ভয়ানক মানব। চোখে আবার ও সেই ঘৃনা। অগ্নির থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ওর কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়। এরপর তেজী সুরে বলে,,,,

” এইটা ভালোবাসা নয় শুধু আপনার জেদ ছিলো। থাকব না আমি আপনার সাথে। আপনার মত জানোয়ারের সাথে সংসার করার মত পাপ আর যাই হোক আমি করব না। আমি আজ ওই চলে যাব আপনার থেকে অনেক দুরে। ঠিক ততটা দুরে যেখানে আপনার ছায়া ও মিলবে না। যদিও আল্লাহ বলেছে তোমরা আর যাই করো এই শব্দটা উচ্চারন করো না কারন এতে আরশ কেঁপে উঠে। তবুও আমি এই শব্দটাই উচ্চারন করে বলছি তালাক চাই আমার আপনার থেকে।
ইয়ানার কথা শেষ না হতেই ওর গালে পর পর তিনটা থাপ্পর পড়ে। ইয়ানা মেঝেতে ছিটকে পড়ে। অগ্নি ইয়ানার বাহুধরে হেচকা টান দিয়ে নিজের সামনে পুনরায় দাড়া করায়। চোখে আবার ও সেই হিংস্রতা যেমনটা সে কাল রাতে দেখেছিলো।
অগ্নি ইয়ানার গলায় চেপে ধরে বলে,,,,,

” তালাক শব্দটা মুখে আনলি কোন সাহসে? কলিজা কেঁপে উঠে নাই?মেরে ফেলে দিব তোকে। তর কল্পনাতে নেই আমি কি জিনিস।চলে যাওয়ার কথা পুনরায় মুখে আনলে খোদার কসম সে মুখটাই আর অক্ষত থাকবে না। আমি তর সব অবাধ্যতা, পাগলামী রাগ সহ্য করব কিন্তু আমাকে উপেক্ষা, চলে যাওয়া এইসব সহ্য করতে পারব না। তর হৃদয়ের দখলদার আমি। ” loving you ruined me. Now i”ll ruin world for you.” উপরে আল্লাহ আর তর চলে যাওয়া ছাড়া অগ্নি চৌধুরি আর কিছুতেই ভয় পাই না।
অগ্নি এতটা জোড়ে ইয়ানার গলা চেপে ধরেছে। ইয়ানার মনে হচ্ছে এখন ওই শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। অবশ্য মরে গেলেই ভালো শান্তি তো পাবে। সহ্য করতে পারছে না সে এত বড় সত্যি। মনে হচ্ছে পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে। আর সে অন্ধকারে সে তলিয়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে নিজের চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলে। এত মানসিক ট্রমা, অগ্নির দেওয়া থাপ্পর সব মিলিয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে।

ইয়ানাকে চোখ বুজে ফেলতে দেখে অগ্নি নিশ্বব্দে একটা গম্ভীর শ্বাস ফেলে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে চোখগুলো ফুলে গেছে। পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে। দুই গালে থাপ্পরের দাগ স্পষ্ট। ইয়ানাকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে ওর ভেজা আখি পল্লবে শব্দ করে চুমু খায়। যে যায়গায় যে থাপ্পর দিয়েছিলো সেখানে অজশ্র চুমু খায়। ইয়ানার ঠোঁট গুলো একদম শুকিয়ে গেছে। অগ্নি নিজের ঠোঁট ইয়ানার ঠোঁটে ছুইয়ে ফিসফিস করে বলে,,,,,,

“” এমন পাগলামী কেনো করছো জান। আমি তো একারনেই সত্তিটা কোনোদিন তোমার সামনে তুলে ধরিনি। জানতাম তুমি সহ্য করতে পারবে না। আমাকে ছেরে চলে যাওয়ার কথা কিভাবে বলতে পারো? একবার ও মনে হয় নি তোমাকে ছাড়া আমি শ্বাস নিতে পারি না। সেখানে তুমি চলে গেলে কিভাবে থাকব? কিন্ত তুমি তো যেতে পারবে না। আমার অন্ধরের এক ফালি আলো তুমি। আর কখনো এই কথা উচ্চারন করবে না। জানি না তোমাকে কি করে ফেলব। আমার ভালোবাসা কাঁদাবে, রক্ত জাড়াবে কিন্তু সেটাই তোমার একমাত্র আশ্রয় যেখানে তুমি বার বার ফিরে আসবে। নাহলে তোমাকে নিশ্বেস করতে আমি দুই মিনিট ভাববো না।
অগ্নি ইয়ানাকে শুইয়ে দিয়ে চলে যায় রুম থেকে।

খোলা ছাদের নিচে অগ্নি একের পর এক ড্রিক্সের বোতল খালি করেই যাচ্ছে । অগ্নি আ্যলকোহল খায় কিন্ত সেটা খুব সামান্য। কিন্ত আজ যেনো সকল সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে। ইউভি আর রায়ান অগ্নির পাশে গিয়ে বসে। অগ্নির চোখ জোড়া মাত্রাধিক লাল হয়ে আছে।
রায়ান অগ্নির হাত থেকে ওয়াইনের বোতলটা নিয়ে বলে,,,,,
“” স্টপ অগ্নি। কি শুরু করেছিস তুই? এত খেলে মাতাল হয়ে পড়বি। কি হয়েছে খুলে বল।
অগ্নি রায়ানের দিকে তাকায়। কিন্ত রাগে না একদম শান্তভাবে বলে,,,,,,,

” দেখে ফেলেছে আমাকে। আজ ভেবেছিলাম রায়হান আসবে কিন্তু তার জায়গায় ওর লোক এসেছে। সেই লোক সেই বদ্ধ রুমে পৌঁছে যায়। কিন্তু ও কিছু করার আগে আমি ধরে নিয়েছি। ওকেই মারছিলাম তখন সে চলে আসে। ঠিক সেই মুহূর্তে যখন আমি ওই লোকের কলিজায় টান দিয়েছি।
রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,,,
” কে.. কে দেখে ফেলেছে? কার কথা বলছিস তুই?
অগ্নি — ইয়ানা।
ইউবি আর রায়ান স্তব্দ হয়ে বলে,,,,,
” হুয়াট! কিন্তু তুই বাড়ির ভিতরেই মারতে গেলি কেনো? জানতাম একদিন এমন কিছুই হবে। কি করছে ও এখন?
অগ্নি — ঘৃনা ভড়া দৃষ্টি ছিলো আমার প্রতি। মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে ঘৃনিত ব্যক্তিটি আমি ওর জীবনের। পাগলামি করছিলো খুব এখন ঘুমিয়ে আছে?
রায়ান — কি.. করেছিস তুই ইয়ানাকে?

অগ্নি রায়ানের দিকে তাকায়। রায়ানের ভয় দেখে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। অগ্নির ভিতরে এক অদৃশ্য দাবানল। এই ঘৃনিত চাহনি তার হৃদয়কে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।
মুখের হাসি থামিয়ে অগ্নি ওয়াইনের গ্লাসটা ঘুরিয়ে বলে,,,,
” অবাধ্যতা করলে আমি কি করতে পারি সেটার ধারনা আছে নিশ্চয়।
ইউভি — আঘাত করেছিস তুই ইয়ানাকে?
অগ্নি — করতে পারি নি তার আগেই ঙ্গান হারিয়েছে। ওকে কিভাবে আঘাত করব? একটা থাপ্পর দিলে নিজের ওই হৃদয় ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তালাক চেয়েছিলো।
ইউভি আর রায়ান আৎকে উঠে। ইউভি শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,,
” ক,, কি করেছিস?
অগ্নি শান্ত চাহনিতে বলে,,,

” অন্য কেউ হলে জবান ছিড়ে ফেলতাম কিন্ত ওকে কিছুই করতে পারি নি। তাই চিন্তা করিস না ওর কিছু হবে এমন কাজ আমি কোনোদিন ওই করব না। তবে তদের বোনকে বলে দিস পুনরায় যাতে আমার সাথে এমন শব্দচায়ন উচ্চারন না করে। কারন আমি সহ্য করতে পারি না।
এরপর অগ্নি বসা থেকে উঠে চাবি নিয়ে বের হয়ে পড়ে।
অগ্নির চলে যাওয়ার দিকে রায়ান তাকিয়ে বলে,,,,
” জানি না কি হবে ভাই। সব কেমন অগুছালো হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ওদের সম্পর্ক টিকবে তো?
ইউভি — জানি না মাথা কাজ করছে না। এখন ইয়ানার সামনে গেলে আমাদেরকেই হাজারটা প্রশ্নবিদ্ধ করবে। কেনো এত দিন বলে নি? কেনো কিছু জানাই নি।
রায়ান ডিভানে হেলান দিয়ে বলে,,,,,

” প্রশ্ন বিদ্ধ করলে ও সাহস জুগিয়ে তার সামনে যেতে হবে। ইয়ানাকে সব জানাতে হবে। নাহলে ইয়ানা ধীরে ধীরে দুরে সরে যাবে। কারন অগ্নি নিজের জীবন কাহিনী কোনোদিন ও বলবে না। ইয়ানা পাগলামি করবে আর অগ্নি রেগে অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। তাদের দুরত্ব বাড়তে থাকবে। এমন হলে চলবে না ইউভি তার আগেই আমাদের সামলাতে হবে।
ইউভি — অর্থাৎ ইয়ানাকে সব খুলে বলব? কবে যাবি তাহলে?
রায়ান — কাল আমার অফিসে জরুরি কাজ আছে তাই পরশু যায়।
ইউভি সম্মতি জানিয়ে বলে,,,,,
” ওকে।””

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসলো।
ইয়ানা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছে। আজ যেনো চোখের সব পানি শুকিয়ে গেছে আসতেই চাচ্ছে না। চোখ বন্ধ করলে বার বার সেই খুন আর চারজন লোকের অবয়ব ভেসে উঠে। কিন্তু কে ওরা? দেখে তো মানুষ লেগেছে। কিন্তু ওদের এত জঘন্য অবস্থা করে রেখেছে মনে হচ্ছে কোনো নরখাদক।

ইয়ানার ভাবনার মধ্যে চট করে মনে পড়ে যায় মিরার কথা। ও কি সব জানত? নাকি কিছুই জানত না। নাকি জেনে ও না জানার অভিনয় করেছে। ইয়ানার চোখ বেয়ে আবার ও পানি ঝড়া শুরু করেছে। কি আশ্চর্য একটু আগে পর্যন্ত এক ফোঁটা চোখের পানি বের হচ্ছিলো না আর এখন পানির স্রোত বয়ে চলেছে। প্রচুর মাথা ব্যাথা করছে কিন্তু এখন মাথা ব্যাথাও ফিকে মনে হচ্ছে। নিয়তি তার নির্মম রুপটা বুঝি এইভাবে অসময়ে ধরা দেই। এত কষ্ট এত যন্তনা কি আমার প্রাপ্য ছিলো। রাতে ও কত সুন্দর খুনশুটিতে মেতে উঠেছিলাম। কাল পর্যন্ত আপনি ছিলেন আমার সবথেকে নিরাপদ আশ্রয় আর আজ সেই আপনি আমার সবথেকে বড় ভয় হয়ে দাড়ালেন। ইয়ানার চোখের পানি পড়ছে কিন্তু সেটা নিশ্বঃব্দে। এই হাত আমার সর্বাঙ্গ স্পর্শ করেছে? এই বুকে মাথা রেখে আমি প্রতিটা রাত কাটিয়েছি। ভাবতেই যেনো ঘৃনায় চোখ সরিয়ে নিলো।

অগ্নি গাড়ি পার্কিং এড়িয়াতে রেখে ভিতরে প্রবেশ করে। দ্রুত উপরে উঠতে যাবে এমন সময় ডিভানে কাউকে দেখে মাথার রক্ত গরম হয়ে যায়।
ব্যক্তিটি অগ্নিকে দেখে উঠে দাঁড়ায় এরপর শান্ত চাহনিতে বলে,,,,,
” কেমন আছো? অনেক দিন পর তোমকে দেখলাম খুব ভালো লাগছে।
অগ্নি — ভালো লেগেছে এইবার এইটা দিয়ে জুস বানিয়ে খাও। লিসেন ঝর্না তুমি আমার রাগ সম্পর্কে যানো ইভেন আমি কে সেটাও জানো। তাই আমার পিছনে পিঁপড়ার মত ঘুরঘুর করো না। আমাকে রাগালে হিতে বিপরীত হবে।
আমার মোটা তাজা একটা আদুরে বউ আছে আপাযত ও আমার দুনিয়া। তাই এইসব অনুভুতি রেখে ও লাভ নেই।
ঝর্না আহত সুরে বলে,,,,,

” আমি তোমাকে ভালো বাসি অগ্নি। তুমি হাজারটা বিয়ে করো তাতে কিছু যাই আসে না। শুধু জানি আমি তোমাকে অনেক লাভ করি।
অগ্নি এইবার কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে,,,,
” আরেকবার এই ভালোবাসার কথা মুখে আনলে যাস্ট মেরে ফেলব। তোমার জন্য সুগার ডেডি ঠিক আছে যাও ওদের কাছে যাও। তবু ও আমাকে জালাস না।
ঝর্না — ইয়ানার মধ্যে এমন কি আছে যা আমার মধ্যে নেই?
অগ্নি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,,,
” কোথায় আকাশ আর কোথায় পাতাল। কোথায় পুকুর আর কোথায় সমুদ্র। ও সদ্য ফুঁটা এক পবিত্র ফুল। যার শরীরে এক মাত্র আমি নামক পুরুষ স্পর্শ করেছি আর কেউ নয় আর তোমারটা গননা করতে গেলে ক্যালকুলেটর নিয়ে বসতে হবে। পুরা তুমিটাই এক সস্তা। আর আমার ইয়ানা পৃথীবির সবচেয়ে দামী জিনিস।
এই বলে অগ্নি বড় বড় পা ফেলে উপরে চলে যায়। ঝর্না হাত মুঠোই করে ফেলে। এরপর নিজের কাধে ব্যাগে চাপিয়ে দিয়ে বলে,,,,

” পুরুষের স্পর্শ পেয়েছি বলে তুমি আমাকে বার বার অপমান আর সস্তা বলো। তাহলে শুনো রাখো অগ্নি চৌধুরি সেই কলঙ্কের ফোঁটা আমি তোমার বউয়ের গায়ে ও ছিঁটাব। তখন দেখন অন্যের ব্যবহার করা জিনিস তুমি কিভাবে ঘরে তুলো।
এরপর ঝর্না এক প্রকার তেজ দেখিয়ে বাড়ির ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে।
অগ্নি দরজার সামনে যেতেই দেখে সবগুলো গার্ড মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। অগ্নিকে দেখতে পেয়ে কাজের আন্টি বলে,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৬

” আপনি চলে যাওয়ার পর থেকে খাবার খাওয়ার জন্য জোর করছি কিন্তু একটা দানা ও মুখে তুলে না। এইভাবে চলতে থাকলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।
কথাটা শুনে অগ্নি চোয়াল শক্ত করে ফেলে।অগ্নি রুমের ভিতরে নত হয়ে থাকা ইয়ানার দিকে তাকায়। যে এই মুহূর্তে চাদর খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। সে অগ্নির উপস্থিতি টের পেয়ে জড়োসরো হয়ে বসে। অগ্নি গার্ডের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে রুম ডুকে । তারপরইয়ানার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে।এরপর………

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৮