অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩০

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩০
লিজা মনি

ইয়ানা পিছাতে গেলে অগ্নি খপ করে ইয়ানাকে ধরে বিছানার সাথে স্প্রেডার দিয়ে বেঁধে দেয়।এরপর অগ্নি ধীরে ধীরে ইয়ানার গোড়ালিতে লাগানো স্প্রেডার বারের ক্ল্যাম্প শক্ত করে দেই। ইয়ানা ছুটাছুটি করে কিন্তু এতে বিফল হয়ে বলে,,,,,
” গিরগিটি শয়তান খোলেন বলছি আমাকে?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়।চোখে আগুন আর কন্ঠে আদেশ নিয়ে বলে,,,,,,

” এবার তুমি শুধু আমার ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।এখন তোমার নড়ার ক্ষমতাটা ও আমার অধীনে। কি যেনো বলছিলে ক্যারেক্টারল্যাস? তুমি জানো ক্যারেক্টারল্যাস কাকে বলে? যদি না জানো তাহলে চলো তোমাকে সেই জগৎ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
অগ্নি ইয়ানার গলায় পেচিয়ে রাখা উড়নাটা হেচকা টানে শরীর থেকে আলাদা করে নিচে ছুড়ে মারে। এতক্ষণ গায়ে থাকা উড়নাটা ফ্লোরে পড়ে আছে। উড়নার হেচকা টানের ফলে ইয়ানা ব্যাথায় কিছুটা শব্দ করে উঠে। গলাটা লাল হয়ে গিয়েছে। অগ্নি ইয়ানার গলায় মুখ গুজে দেই। কিছুক্ষণ আগের কাটা স্থানে দন্তের ঘর্ষন পেতেই ইয়ানা ব্যাথায় বিছানার চাদর খামছে ধরে। আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে পর পর আঘাতে নাজেহাল অবস্থা। হাত আর পা বাঁধাপ্রাপ্ত থাকায় লড়তে ও পারছে না।
ইয়ানা সামান্য জোড়ে চেচিয়ে বলে।,,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ছাড়ুন আমাকে অসভ্য লোক?
অগ্নি ইয়ানার গলা থেকে মুখ তুলে ঠোঁটে শক্ত করে চুমু খেয়ে বলে,,,,,
” ছটফট করো না জান। অন্যকিছুর ফিল আসে। তুমি ছটফট করলে আমি নিয়ন্ত্রন হারা হয়ে যায়। আর আমি নিয়ন্ত্রন হারা হলে অনেক অনেক কিছুই ঘটতে পারে। “If you lose control, I will complete the Sunnah actions.”
ইয়ানা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্য সুরে বলে।,,,,,
“কেনো বিয়ে করেছেন? ভোগ করার জন্য?
ইয়ানার কথাটা কর্নপাত হতেই অগ্নি গলা থেকে মুখ তোলে ইয়ানার দিকে তাকায়। একদম অবাক নয়নে ফের প্রশ্ন করে,,,,

” কি বললে তুমি?
ইয়ানা অন্যদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অগ্নির চোখে চোখ রেখে তেজী সুরে বলে,,,,
” ভুল তো কিছু বলিনি। আপনার মত কোটি কোটি টাকার মালিক যার এক ইশারাতে পুরো কানাডা থমথমে খেয়ে যায় সেই ব্যাক্তি আমার মত এমন সাধারন মধ্যবিত্ত মেয়েকে কেনো বিয়ে করেছে? শুধুই কি ভোগ করার জন্য?
অগ্নি ইয়ানার দিকে রক্ত চক্ষু নয়নে তাকায়। নিজের রাগটাকে সামলাতে না পেরে ইয়ানার গালে চেপে ধরে কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,

” হাউ ডিয়ার ইউ ফা*কিং গার্ল? ভোগ করার হলে হোটেলে এক রাতের বেড পার্টনার বানাতাম। বিয়ে করে সম্মানের সহিত আমার রাজ্যের রানী করতাম না।
এরপর সামান্য থেমে বলে,,,,,
” নিজের বিয়ে করা বউকে কাছে টানা যদি তোমার ভোগ মনে হয় তাহলে আই ডোন্ট কেয়ার। সম্পূর্ন রাইট আছে তোমার প্রতি আমার। আর অগ্নি চৌধুরি নিজের অধিকার নিতে জানে।
এরপর অগ্নি ইয়ানার গাল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে উপর থেকে উঠে সরে যায়। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে অপলক নয়নে। অগ্নি ইয়ানার হাতে পায়ের বাধন খুলে দিয়ে বিছানা থেকে উঠে যায়। রাগে পুরো শরীর কাঁপছে।
যে কোনো সময় পুনরায় অঘটন ঘটাতে পারে। অগ্নি বিছানা থেকে উঠে বাহিরে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতেই দেখতে পায় দরজার বাহিরে স্যুপ নিয়ে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
অগ্নি সামান্য কপাল কুচকে জিজ্ঞাসা করে,,,,,

” স্যুপ নিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো?
মহিলাটি মাথা নিচু রেখে উত্তর দেয়,,,,,
” স্যার আপনি আসার সময় বলে এসেছিলেন স্যুপ নিয়ে আসতে। কিন্তু এসে দেখি দরজা বন্ধ তাই আর ডিস্ট্রাব করিনি।
অগ্নি আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘেঁষে বলে,,,,,
” স্যুপ কি এখনো গরম রয়েছে?
মহিলাটি — জি স্যার।
অগ্নি মহিলার হাতের থেকে স্যুপের বাটিটি নিয়ে পুনরায় রুমে ডুকে।
ইয়ানা বিছানায় হেলান দিয়ে সুইয়ে আছে। ব্যথায় পুরো গলা টনটন করছে। অগ্নিকে পুনরায় আসতে দেখে সেই দিকে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার চোখে চোখ রেখেই বিছানায় বসে। স্যুপের বাটিটি টেবিলের উপর রেখে ইয়ানার উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,,

” খেয়ে নাও ভালো লাগবে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। এমন একটা ভাব ধরছে মনে হচ্ছে একটু আগে কিছুই হয় নি। মানুষ এতটা পরিবর্তন কিভাবে হতে পারে? ইয়ানা রেগে টেবিল থেকে স্যুপের বাটিটি ধাক্কা মারে কিন্তু পড়ার আগেই অগ্নি ধরে ফলে।
ইয়ানার ধাক্কার ফলে স্যুপ না পড়লে ও কাচের গ্লসটা পড়ে যায় আর অর্ধেক পানি গিয়ে স্যুপের মধ্যে পরে।
অগ্নি বাটিটা হাতে নিয়ে ইয়ানার হাতে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,,,
” এই? এই মেয়ে এত ত্যারামি কোথায় থাকে তর? ভয় পাস না আমাকে? তুই জানিস আমি কে? আমার ধৈর্যের পরীক্ষা কেনো নিচ্ছিস বার বার। বুঝতে পারিস না নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখি।কেনো বারবার রাগিয়ে দিস আমাকে? আমি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেলে সামলাতে পারবি আমাকে? তর জায়গায় অন্যকেউ থাকলে এতক্ষনে কেটে টুকরো টুকরো করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতাম ফাজিলের বাচ্চা।
ইয়ানা চোখ সরিয়ে অন্য দিকে ঘুরে যায়। অগ্নি হাতে থাকা পানি মিশ্রিত স্যুপটা নিয়ে বলে।,,,,,

” এখনি এই মুহূর্তে এইটা শেষ করবে। আর না করলে আমি জোড় করে খাওয়াতে জানি।
ইয়ানা স্যুপের বাটির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” এইটার মধ্যে পানি।
অগ্নি ইয়ানাকে হেচকা টানে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,,,,,,
” তুমি নিজেই ঢেলেছো। এখন নিজের তৈরি করা রেসিপি নিজেই খাও।
ইয়ানা নাক ছিটকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
” বেশ করেছি ফেলেছি। খাব না এইটা আমি। পারলে নতুন করে বানিয়ে নিয়ে আসুন।
অগ্নি সুপের বাটিটে চামচ দিয়ে টং টং শব্দ করে বলে,,,,,
” তুমি কি চাইছো আমি তোমাকে জোর করি।

ইয়ানা — নতুন করে আনলে কি আপনার সম্পত্তির ভাগ কমে যাবে। এইটা খাব কিভাবে?
অগ্নি চামটার মধ্যে হালকা স্যুপ নিয়ে ইয়ানার কথা বলার মধ্যেই ডুকিয়ে দেই। এরপর সামান্য শান্ত সুরে বলে,,,,,,
” আমার যা কিছু আছে সব তোমার? ইভেন আমি পুরোটাই তোমার। তুমি যদি চাও স্যুপের পুরো ফ্যাক্টরিটাই তোমার নামে কিনে নিয়ে আসব। কিন্তু তার আগেই তোমাকে এইটা খেয়ে শেষ করতে হবে। ফেললে কেনো পানি? নিজে ফেলেছো এখন নিজেই খেয়ে শেষ করবে।
ইয়ানার পুরো নাক মুখ লাল হয়ে আছে। এতক্ষন কান্নার ফলে মাথাটা ও প্রচন্ড ব্যাথা করছে। অগ্নি ইয়ানার চোখের পানি নিজের হাত দিয়ে মুছে দিয়ে পুনরায় স্যুপ খাইয়ে দেয়।

ইয়ানা এক ঝটকায় অগ্নির হাত থেকে স্যুপের বাটিটা নিয়ে পুরোটা ঢকঢক করে গিলে ফেলে। ইয়ানার কান্ডে অগ্নি কপাল কুচকে ঠোঁট চেপে হাসে। ইয়ানা রেগে অগ্নির কাছ থেকে সরে যেতে নিবে কিন্তু তার আগেই অগ্নি ইয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,
” এত তেজ কেনো তোমার জান? একটু শান্ত থাকতে পারো না। কেনো তোমাকে আঘাত করতে বাধ্য করো এইসব তিক্ত কথা বলে? তোমাকে আঘাত করলে আমি নিজেই দিশেহারা হয়ে পড়ি। ভিতরে এক অগ্নি দহনে ছাড়খাড় হতে থাকে হৃদয়।
এরপর ইয়ানার গলায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,

” গলাটা একদম যখম হয়ে গিয়েছে। অবশ্য হওয়ার ওই কথা। হোক সমস্যা নেই। যেখানে দাগ হবে সেখানে আমিই মলম লাগাব।
ইয়ানা করুন চোখে বলে,,,
” কিন্তু মনের ভিতরে যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঘাঁ হয়ে যাচ্ছে সে মলম কিভাবে লাগাবেন? আছে আপনার কাছে তার কোনো উপশম? পারবেন সেই ক্ষত জায়গা ঠিক করতে?
অগ্নি ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
” আমি তো সবকিছু গোপনেই রেখেছিলাম। তুমি কেনো জানতে গেলে? আর সবকিছু জেনে নিজের মনে ঘাঁ সৃষ্টি হতে কেনো দিচ্ছো? কেনো মেনে নিচ্ছো না সবকিছু?
অগ্নির কথায় ইয়ানা হালকা হেসে বলে,,,,,,,

” কত সহজে বলে দিলেন মেনে কেনো নিচ্ছো না সবকিছু? আসলেই কেনো মেনে নিচ্ছি না।
এরপর অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” যেদিন নিজে কোনোদিন মেয়ের বাবা হবেন সেদিন বুঝবেন কেনো মেনে নিতে পারছি না। যখন নিজের মধ্যে পিতৃত্ব।জেগে উঠবে ঠিক তখন বুঝবেন আসলে একটা মেয়ে কি চাই। সারাজীবন তো অসামাজিক পরিবেশে বড় হয়েছেন বুঝবেন কিভাবে আদর্শ কি?
অগ্নি — সেই সুযোগটাই আসবে না।

ইয়ানা — ছেড়ে দিন না সবকিছু। চলে আসুন সেই অন্ধকার পাপের জগৎ থেকে।
অগ্নি — পারব না। তুমি আমার জীবনে আসার আগে ওই জগৎটা আমার জীবনে এসেছে। তোমাকে আপন করার আগেই ওই পাপের অন্ধকার দুনিয়াকেই আপন করে নিয়েছি। আর তুমি সেই অন্ধকারে জেগে উঠা এক ফালি আলো। যার সূত্র ধরে আমি পুনরায় বাঁচতে শিখেছি।
ইয়ানা অগ্নির কথা শুনে থমকায়। অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” সেই অন্ধকারকে দুরে ঠেলে দিন। অতীতের সব অন্যায় পাপ ক্ষমা করে আমি আপনার সেই এক ফালি আলো হয়েই থাকব। নাহলে হয়ত শারীরিকভাবে আপনার ক্ষমতার জোরে থেকে যাব কিন্তু হৃদয় থেকে একদিন চিরতরে হারিয়ে যাব।
ইয়ানার কথায় অগ্নি অন্যদিকে ঘুরে বলে,,,,,

” পারব না ছাড়তে। আজ আমি এই পথ থেকে চলে আসলে কাল আমার পুরো অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। যারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে তারা চিলের মত ঝাঁপিয়ে পড়বে তোমার দেহে। আমার পুরো অস্তিত্বকে এক নিমিষেই শেষ করে দিবে। তাই এমন কথা আর দ্বিতীবার বলো না যা আমি করতে অক্ষম বা কোনোদিন করতেই চাই না।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নির ফোন বেজে উঠে বিকট শব্দে। অগ্নি ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে বিছানার উপর থেকে মোবালটা হাতে নেয়। এরপর নাম্বারের দিকে তাকিয়ে রিসিভ করর গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,
” হ্যা আরিফ বল?
আরিফ,,,,,,,,,

ওইপাশের বাক্য শুনেই মুহূর্তেই অগ্নির ভাবভঙ্গি বদলে যায়। শান্ত হয়ে যাওয়া মুখশ্রিটা আবার ও অশান্ত হয়ে পড়ে। ফর্সা মুখে রক্তিম ভাবায় লাল হয়ে যায়। চোখগুলো থেকে মনে হচ্ছে রক্ত জড়বে। অগ্নি মোবাইলটাকে শক্ত করে চেপে ধরে বলে,,,,,,
” আটকিয়ে রাখ। প্রয়োজন নেই টর্চার সেলে নেওয়ার। আমি অফিসেই আসছি। শুধু এসিড রেডি করে রাখিস যাতে ওর সর্বাঙ্গ জালিয়ে দিতে পারি।
এরপর অগ্নি ফোন কেটে দরজার কাছে যেতেই ইয়ানা হাত চেপে ধরে বলে,,,,,
” কোথায় যাচ্ছেন? আবার কাকে খুন করবেন?
অগ্নি পিছন ফিরে তাকায়। চোখে আগুন কিন্তু ইয়ানার সামনে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আমার সাথে একটু বেইমানি করেছে। তাই তাকে এসিডে চুবিয়ে মারতে যাচ্ছি। অকারনে কারোর জান নেই না আমি।
ইয়ানা অগ্নিকে আটকে দিয়ে বলে,,,,,,,,

” যাবেন না আপনি? আমি আপনাকে যেতে দিব না।
অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর ঠোঁট কামড়ে ইয়ানার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত তাকিয়ে বলে,,,,,,
” সাইজ কত তোমার? এইটুকু সাইজ নিয়ে এসেছো আমাকে আটকাতে। এইসবে ডুক না সহ্য করতে পারবে না। একদিনের খুন আর বিকৃত চেহারা দেখে এতটা ঘৃনা পোষন করেছো। কিন্তু যেদিন আমার সর্বাঙ্গ দেখবে ওইদিন ঘৃনার জন্য আমার দিকে তাকাতে পারবে না। তাই বলছি আমি আমার সমস্ত পাপ আর সত্তা পর্দা দিয়ে ঢেকে রেখেছি ভুলে ও আর উন্মুক্ত করো না। যতটুকু দেখে নিয়েছো তাতেই তুমি অর্ধেক নিশ্বেস হয়ে যাচ্ছো।
এরপর ইয়ানার মুখের উপর ফু দিয়ে বলে,,,,,

” গুড বাই সুইটহার্ট। কিছুটা ঘৃনা বাঁচিয়ে রেখো। রাতে ফিরে এসে এই ঘৃনা নিয়েই রুমান্স করব।
এই বলে অগ্নি চলে যায়। ইয়ানা স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আঁছে। আর ও এমন কি আছে যা আমার অজানা। উনি কি আমার ভাবনার চেয়ে ভয়ংকর। এই বাড়িতে কি আর কোনো রহস্য আছে যা আমি উন্মুক্ত করতে পারি নি। নাকি আমি সব দেখছি কিন্তু বুঝতে পারছি না।
ইয়ানা চুলে শক্ত করে চেপে ধরে বিছানায় বসে পরে। ইচ্ছে করছে সব কিছু শেষ করতে। ইয়ানা চারদিকে পায়পচারি করতে করতে বেলকনিতে চলে যায়। কিছুক্ষন হাঁটার পর আকস্মিক চোখ যায় এক পাশে থাকা একটা রুমের দিকে।

ইয়ানা থমকে দাঁড়ায় । এরপর সেই রুমের দিকে তাকিয়ে ধীর পায়ে সামান্য এগিয়ে যায়। ইয়ানা কাছে গিয়ে লাল কালারের এক তালা ঝুলানো দেখে। লাল রঙ্গের আবার তালা হয়? ইয়ানা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পুরো দরজাটা ভালোভাবে পরখ করে। এই রুমে কি এমন আছে যা সবসময় আবদ্ধ থাকে। এখানে ও কি কাউকে বন্দি করে রেখেছে? নাকি কোনো গোপন কাহিনী যা আমার অজানা? এইটা বাড়ি নাকি কোনো ধ্বংস খানা। আর এমন লোকের সাথে আমি প্রতিনিয়ত জীবন যাপন করছি? ছিহহহ! একই বিছানা, একই ছাদের নিচে শ্বাস নিচ্ছি।তার হাতের স্পর্শ বার বার নিজের সংস্পর্শে নিচ্ছি।

সব আপনি করছেন আর তার শেষ আমি করব। ইয়ানা চোখের পানি মুছে রুমে যায় চাবি খুজার জন্য। যদি চাবি খুজে না ও পাওয়া যায় তবে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে খুলে এর ভিতর উন্মুক্ত করব। অতিরিক্ত নাড়াচাড়ার ফলে গলার দাগ গুলো আর ও বেশি ব্যাথা করছে। ইয়ানা সেই সব উপেক্ষা করে পুরো রুম তন্ন তন্ন করে খুৃঁজতে থাকে। অগ্নির কাবার্ড থেকে শুরু করে সব খুজার পর চাবি কোথাও না পেয়ে ইয়ানা বিছানায় হতাশ হয়ে বসে। কোথায় রাখতে পারে? উনি কি সাথে করে নিয়ে গেছেন? ইয়ানা মন খারাপ করে বেলকনিতে যেতে নিবে তখন হঠাৎ চোখ যায় ডিভানের পাশে থাকা মিনি টেবিলটার দিকে। যেখানে একটা ওয়ালেট রাখা। ইয়ানা শাহাদাত আঙ্গুল কামড়ে বলে,,,,,

” ওয়ালেট ধরাটা কি ঠিক হবে? হয়ত ভুলে রেখে গেছেন।
এরপর নিজের ভাবনাকেই ধিক্কার জানিয়ে বলে,,,,,
” ঠিক – বেঠিক পরে দেখে নিব। আগে খুঁজে দেখি থাকলে ও থাকতে পারে।
ইয়ানা সাত পাঁচ ভেবে ডিভানের কাছে এগিয়ে যায়। এরপর বুকে একরাশ আশা নিয়ে ওয়ালেট চেক করে। আর সেখানে ছোট ছোট দুইটা চাবি দেখে ইয়ানা কপাল কুচকে ফেলে। একটা লাল আরেকটা সোনালি কালার। ইয়ানা বিরবির করে বলে,,,,,,

” এত বড় তালার মধ্যে এত ছোট চাবি। ঠিক উনার আর আমার মত ব্যবধান এই তালা আর চাবি।
ইয়ানা চাবিটা নিয়ে ওয়ালেটটা ডিভানের উপর রেখে বেলকনিতে চলে যায়। এরপর বুকে আতঙ্ক আর কাঁপাকাঁপা হাত নিয়ে লাল চাবিটা দিয়ে তালাটার মধ্যে ট্রাই করে। প্রথমবার ভালোভাবে ডুকাতে পারে নি ফলে চাবি পুনরায় ছিটকে আসে। পরবর্তীতে ধীরভাবে দিতেই দরজা খুলে যায়। ইয়ানা ভয়ে একবার ভিতরে উকি যদি আগেরবারের মত কিছু থেকে থাকে। কিন্তু দরজার উকি দিতেই নাকে এক সুগন্ধী গন্ধ এসে বারি খায়। দরজার সামনেই কাউচ দিয়ে লাগানো। ইয়ানা নরম হাতে কাউচে ধাক্কা দেই কিন্তু খুলে না। এরপর হাতে থাকা সোনালি চাবিটা দিয়ে চেষ্টা করতেই খুলে যায়। ইয়ানা কাউচ সরিয়ে সামনে থাকা সাদা আর পিংক কালারের পর্দাটা সরাতেই চোখ কপালে উঠে যায়। কিসব এইগুলো?

বারটি রুমের এক কোণ ঘেঁষে নির্মিত।দেয়ালজুড়ে পুরনো গাঢ় বাদামি রঙের ওক কাঠের শেলফ, যার গায়ে জ্বলজ্বল করছে পলিশ করা ব্রোঞ্জের কারুকার্য। সেই শেলফে স্তরে স্তরে সাজানো বিলাসবহুল ও বিশ্ববিখ্যাত ড্রিংকের বোতল। হুইস্কির পুরনো সিংল মল্ট, ৫০ বছরের পুরনো স্কচ, ফ্রেঞ্চ, কিউবার রাম, রাশিয়ান ভদকা, এমনকি কিছু নিষিদ্ধ বোতল যেগুলোর নামও উচ্চারণ করা হয় না।

বোতলগুলোর মাঝে মাঝে শোভা পাচ্ছে সোনার আবরণে মোড়া কিছু পার্সোনালাইজড বোতল।যেগুলোর গায়ে খোদাই করা সিংহ আর ড্রাগনের ছবি। শেলফের নিচের দিকের ক্যাবিনেটে সংরক্ষিত আছে উচ্চমানের ওয়াইন। স্পেশাল কুলিং সিস্টেমে রাখা ঠিক যেভাবে জাহাজের ভল্টে মূল্যবান রত্ন রাখা হয়।
বার কাউন্টারটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি, হাতে তৈরি মার্বেল পাথরের ওপর কার্ভ করা প্যাটার্ন।আর সামনে রাখা চারটি কালো চামড়ার হাই চেয়ার রাখা। পেছনে লোহা আর কাঠের নকশা যেন নিজের ব্যক্তিত্য খোদায় করে রেখেছে। ইয়ানা অশ্রু নয়নে চারদিকে তাকিয়ে সামনে আগিয়ে যায়।

বারের পাশে একটি ছোট কাচের কেস। যেটাতে থাকে বিশ্বের সেরা সিগার। হাভানার একচেটিয়া ফ্যাক্টরি থেকে আনা।প্রতিটি সিগার হাতে মোড়ানো। আলাদা হিউমিডিফায়ার সিস্টেমে রাখা। আরেকদিকে ছোট একটি ক্যাবিন ভিতরে গ্লাসওয়্যারের রাজত্বে প্রতিটি গ্লাস যেন নিজেই এক শিল্পকর্ম।
রুমের আলো হালকা ও রহস্যময় লালচে সোনালি আভা ছড়ানো ঝাড়বাতি ঝুলছে ছাদের মাঝখানে দেয়ালে কিছু গোপন এলইডি ব্যাকলাইটের সাহায্যে কিছু গোপন এলইডি ব্যাকলাইটের সাহায্যে বোতলগুলো চকচক করছে। একটি দেয়ালে ঝোলানো পুরনো সময়ের ঘড়ি তার টিক টিক শব্দ যেন প্রতিটি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় সময়ের গুরুত্ব। আর অপর পাশে এক পেইন্টিং যেখানে এক গোপন সুরঙ্গের ছবি দেওয়া আর পাশে এক রক্তাক্ত হাত।
সাউন্ডপ্রুফ এই কক্ষটি বাইরের পৃথিবী থেকে একেবারে আলাদা

ইয়ানা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে রাখে। মুখে কাপর দিয়ে চারদিকে তাকায়। চোখ একদম লাল হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে কোনো এক নিষিদ্ধ দুনিয়ার সে প্রবেশ করে ফেলেছে। আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলেই দেয়ালে কিছু পেইন্টিং দেখে সেখানে ভালোভাবে তাকায়। পেইন্টিং এর নিচে ইতালিয়ান।, রাশিয়ান আর ও ভিবিন্ন দেশের অক্ষরে লেখা। ইয়ানা লেখা বুঝতে না পেরে সেই পেইন্টিংগুলোতে ভালোভাবে পরখ করে। সুরঙ্গ পথ, অস্ত্রের ছবি আর ও অনেক আর্ট।
ইয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বলে।,,,,
“” জানোয়ার।

টেবিলের উপর ভিবিন্ন সুচ রাখা। অগ্নি হাতে একটা সুঁচ নেই। এটি নিঃশব্দ ঘাতক খুবই সরু মানুষের চুলের চেয়েও চিকন।চোখে ঠিকঠাক না দেখলে খেয়ালই হবে না। তবে যখন আলোতে ধরলে দেখা যায়, এর মাথায় অদ্ভুত এক বেগুনি ঝলকানি।
তাকে ঢোকানো হয় ধীরে ধীরে, ব্যথাহীনভাবে।
কিন্তু ভেতরে ঢুকলে সে খুলে যায় ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে ক্ষুদ্র ব্লেড। তার কাটা হয় না। ছিঁড়ে ফেলা হয় কোষের পর কোষ। সেই যন্ত্রণার চিৎকার বাইরে আসে না বরং গলায় আটকে যায়।
বিল্ডিংয়ের বত্রিশ তালা এক আবদ্ধ রুমে একের পর এক বিষাক্ত সূচের আঘাতে নেতিয়ে পড়ে থাকা লোকটি গগন বিধায় চিৎকার দিয়ে যাচ্ছে। সাউন্ড প্রুফ থাকা বদ্ধ রুমে অগ্নি চৌধুরি আর আরিফ ছাড়া কেউ নেই। লোকটার এক একটা চিৎকার আর আর্তনাদ রুমের প্রতিটি দেয়ালকে কাঁপিয়ে তোলে। কিন্তু এত বিকট শব্দ ও বাইরে বের হচ্ছে না।
লোকটি কাতরাতে কাতরাতে বলে,,,,,,,

“ক্ষমা করে দিন স্যার। আমাকে একদিন অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে আপনার সমস্ত গোপন তথ্য ওদেরকে জানাতে।। আপনি অফিসে এসে কোথায় যান কি করেন সব যাতে ওদের জানাই। বলেছে যদি না জানাই তাহলে আমার স্ত্রী আর সন্তানকে মেরে ফেলবে।আমি পরিবারকে বাঁচাতে আপনার কিছু তথ্য তাদের কাছে দিয়েছি। বিশ্বাস করেন এমন কিছু দেইনি যে আপনার ক্ষতি হবে।
অগ্নি অগ্নি চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে,,,,,,

” বিশ্বাসঘাতকতা আমি পছন্দ করি না। আমার খেয়ে, আমার পড়ে আর আমার সাথেই বেইমানি? বেইমানের বাচ্চা। বেইমানি করেছিস এটাই বড় কথা তথ্য কম দিস বা বেশি। তোর পরিবারের উপর থ্রেট আসলে তুই আমাকে বলতি। আমার সাথে বেইমানি করলে কোন সাহসে? একবারও জানে ভয় ঢুকে নাই। মনে হয় নাই আমি জানতে পারলে কি করবো? কলিজা কাঁপে নাই? নাকি জানে মায়া নেই?
লোকটা একদম নেতিয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে কোনো রকম রুহ টিকে আছে যে কোনো সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। লোকটি নিভু নিভু আঁখি পল্লবে ধীরে ধীরে বলে,,,,
‘” ক্ষমা করে দিন স্যার এ ভুল আর জীবনে করব না। আমার কিছু হলে আমার বউ বাচ্চারা না খেয়ে থাকবে।
লোকটার কথা শুনে অগ্নি হালকা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,,

“তোর কপালে মৃত্যু লেখা হয়ে গেছে। উপরওয়ালা শুধু আজরাইল পাঠাবে তো রুহটা বের করার জন্য। আর বউ বাচ্চার চিন্তা তোর মত বিশ্বাসঘাতক না করলেও চলবে।
অগ্নির চোখে জ্বলন্তে আগ্নেয়গিরি। কিন্তু কন্ঠ একদম শান্ত।
অগ্নি টেবিলের উপরে থাকা আরেকটা সুঁচ হাতে নেই। যেই সূচের গায়ে অদ্ভুত ঘূর্ণায়মান খাঁজ কাটা, যেন কাঁটার মুকুট। ধাতব নয়, তামাটে রঙের ওজোন-গন্ধময়।
এর মধ্যে বিষ জমে থাকে কালচে নীল রঙের। ধীরে ধীরে ফোঁটা ফোঁটা করে বের হয়। দেখতে মনে হয় সে নিজে শ্বাস নিচ্ছে হালকা নড়াচড়া করছে। যখন শরীরে ঢোকে তখন প্রথমে ঠান্ডা, তারপর জ্বালা, এরপর হঠাৎ পুরো শরীর অবশ হয়ে যায়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ২৯

অগ্নি হাতে থাকা সুচটা লোকটার দিকে ছুড়ে মারে। সূচটা গিয়ে একদম। পাঁজরে ঢুকে যায়। চমকে ওঠে সে। ব্যথা এত তীব্র যে চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। কিছু বলার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
অগ্নি চেয়ার থেকে উঠে আরিফকে ইশারা দিয়ে বলে,,,,
” এসিডে ডুবিয়ে দে।
এরপর বাহিরে গিয়ে গার্ডদের কিছু একটা ইশারা দিয়ে এখান থেকে যায়।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩১