অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩১
লিজা মনি
সূর্যটা তখন পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা ছড়িয়ে হালকা হালকা অন্ধকারের ভেতর মিলিয়ে যাচ্ছে। পাখিরা সারাদিনের ক্লান্তি নিয়ে নীড়ে ফিরছিল। তাদের ডানার ফাঁকে যেন দিনশেষের এক টুকরো আকাশ লুকিয়ে আছে। হঠাৎ করে চারদিকের কোলাহল থেমে গিয়ে এক প্রশান্ত নিস্তব্ধতা নেমে আসে। ঠিক তখনই মসজিদের মিনার থেকে আজানের সুর ভেসে আসলো।
অগ্নি নিজের কেবিনে বসে কিছু দরকারি ফাইল চেক করে অফিসের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে থাকে। এত কাজের মধ্যে ও মনটা অশান্ত হয়ে আছে। ভিতরে হাহাকার করে উঠছে এক মানবীর জন্য। মুহূর্তেই মনটা অশান্ত হয়ে পড়ে। অগ্নি অফিসের সিসিটিভি অফ করে ইয়ানার রুমের ফুটেজ অন করে। রুমে কাউকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুচকে আসে। পুরো রুম জুড়ে ইয়ানা নেই। এমনকি বারান্দায় ও নেই। এই সন্ধ্যার সময় মেয়েটা গেলো কোথায়? কিছু একটা মনে হতেই রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেলে। টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে গার্ডদের ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” তোমাদের ম্যাম কি বাহিরে গিয়েছে?
গার্ড — না স্যার ম্যাম তো রুমেই আছে।
অগ্নি ফোন কেটে দিয়ে মোবাইলটা পকেটে ডুকিয়ে চাবি নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অগ্নি চারপাশে চোখ বুলিয়ে দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। এরপর আরিফকে তাড়া দিয়ে বলে,,,,,,
” আরিফ দ্রুত চল।
আরিফ গাড়ি স্ট্রাট দিয়ে বলে,,,,
” ভাই খন্দকারে সাথে রাত আটটার পর মিটিং ছিলো। এখন বাসায় গেলে মিটিং করবেন কখন?
অগ্নি — জাহান্নামে যাক বালের মিটিং। আমার বউ খুঁজে পাচ্ছি না।
অগ্নির কথা শুনে আরিফ তব্দা লেগে যায় কিন্তু গাড়ি ঠিক চালাচ্ছে। আরিফ নিজের অবাকের রেস কাটিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে,,,,,
” ভাবি কোথায় গিয়েছে ভাই। ভাবি কি আপনার সত্তিটা জেনে পালিয়ে গিয়েছে নাকি?
আরিফের কথা শুনে অগ্নি রেগে আরিফের দিকে তাকায়। মিররে অগ্নির রক্তিম চোখ দেখে আরিফ চুপসে যায়। বুঝে গেছে ভুল জায়গায় ভুল কথা প্রয়োগ করেছে।
অগ্নি আরিফের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,,,,,
” জান খেয়ে ফেলব ফের এমন কথা বললে। ও যদি পাতালে ও যায় তবুও আমার মধ্যেই থাকবে।
আরিফ চুপ হয়ে যায়। বেশি কথা বলা যাবে না। বসের মেজাজ বিগরে আছে বউয়ের চিন্তায়। চুপ হয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
একটা বিশাল বিলাশবহুল রুমে গোল হয়ে বসেছে ছয় সাত জন মাফিয়া। তাদের দেহ বিশাল আকৃতির। শক্ত, বলিষ্ঠ আর দাম্ভিকতা পূর্ন। তারা সবাই বিনদেশী। হালকা ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাংলা বলতে পারে। যাদেরকে ওইদিন অগ্নি অস্ত্র পাচারে নাখোঁজ করেছিল মূলত তারাই এরা। আর এদের লিডার অগ্নি চৌধুরি। যমের মত ভয় পায় তাকে। অগ্নির প্রতিটা মারার স্টাইল ওদের রুহ কাঁপিয়ে তুলে। অগ্নি এক উন্মাদ, সাইকো। মৃত্যুর নেশা মাথায় চাপলে এক পিশাচে পরিনত হয়। সামনের জন যত আর্ত চিৎকাত করবে সে তত পৈশাচিক আনন্দ পাবে। মাংস খুঁড়ে খুঁড়ে খুব সুক্ষ্ণভাবে, একদম নিখুঁততার সাথে লোকজনকে মারে। কোনো প্রমান থাকে না। বুদ্ধি তিক্ষ্ণ আর দ্রুত সম্পন্ন। তারা ওর সাথে পেরে উঠে না।
আতিক আর রানবীর সামনে বসে আছে। লোকগুলোর মধ্যে একজন বলে,,,,,,
” আমাদের হাতে আর মাত্র চার দিন সময় আছে। অগ্নি চৌধুরির হাতে কিছু নকশা, ম্যাপ আছে। আর সাথে কোটি কোটি টাকার অস্ত্র। এই চারদিনের ভিতরে আমাদের এইসব পাঠাতে হবে। কিন্ত মি, আতিক আর রানবীর অগ্নি চৌধুরি এইসব দিতে নারাজ। উনি অস্ত্রের কথা বারন করে দিয়েছে। সততা দিয়ে মাফিয়া জগৎ চলে না।
রানবীর শান্ত চোখে বলে,,,,,,
” তোমাদের মনে হয় ও সততা নিয়ে কাজ করে। ও গভীর জলের মাছ। নিশ্চয় এখানে কোনো কারন আছে তাই বারন করেছে। নাহলে সে নিজেই এইসব কালোবাজারে লিপ্ত সেখানে তোমাদের কেনো বারন করতে য্যাবে।
আরেকজন ব্যক্তি— হ্যা সেটা তো ভাবনার বিষয় মি, রানবীর। খুবই গভীর উনি।
আতিক বাঁকা হেসে বলে,,,,,,,
” তাই তো আমার এত আদরের। নাহলে ছেড়ে দেওয়া সেই বাচ্চাটাকে তুলে এনে আবার আমার সম্রাজ্যে জায়গা দিতাম। দিয়েছিলাম তো তার চোখের গভীরতা আর হিংস্রতা দেখেই। চেয়েছিলাম মাফিয়া বানাব কে জানতো সে নিজেই সেই সম্রাজ্যের মালিক হয়ে দাঁড়াবে সাথে আমার ও। যার এক হুংকারে পুরো শহর থমথমে খেয়ে যাবে। যার এক ইশারাতে সবাই নাচবে। কে জানতো সেই হয়ে উঠবে এই রাজ্যের রাজা। কয়জন পারে এমন?
আতিক আর রানবীরের চোখে এক কূটিলতা।
অগ্নি গাড়ি থেকে তাড়াহুড়া করে নেমে সোজা উপরে চলে যায়। আরিফ শুধু ভেবলার মত তাকিয়ে থাকে। আসলেই কি এইটা তার বস? অগ্নি রুমে ডুকে অবাক হয়ে যায়। সব লাইট অফ। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ডিম লাইটটা ও অফ করে রাখা। অগ্নি দক্ষ হাতে লাইট অন করে ওয়াশরুম পুরোটা চেক করে। কোথাও কেউ নেই। ইয়ানাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। কোথায় গেলো এই মেয়ে? একটু ও শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। অগ্নি ইয়ানার নাম ধরে কয়েকবার ডাক দেয় কিন্ত ইয়ানার কোনো সারা শব্দ নেই। রাগে পুরো শরীর কাঁপতে থাকে। চোখ মুখ রক্তিম আকার ধারন করে ফেলে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। বিছানার পাশে বসে চুলগুলো শক্ত করে চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,,,,
” পালিয়েছে? কিন্তু সেটা অসম্ভব। বাড়ির প্রতিটা এড়িয়া জুড়ে গার্ড মোতায়ন করা। তাদের চোখ আড়াল করে কি কোনোভাবে? নো! যদি বাড়ির বাহিরে এক পা ও দিয়ে থাকে তাহলে খোদার কসম সাথে সাথে দেহ থেকে রুহ আলাদা করে ফেলব। বিন্দুমাত্র হাত কাঁপে উঠবে না। প্রয়োজন নেই আমার এমন অবাধ্য আর ঘাড় ত্যারা বউয়ের।
অগ্নি রাগের ফলে বিছানার পাশে থাকা ফ্লাওয়ার টবটা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। মাথার চুল টেনে ধরে প্রতিটি গার্ডকে সতর্ক করে। ইয়ানাকে যেখানে পায় সেখান থেকেই যাতে নিয়ে আসে। একদম জীবিত একটা আচর ও যাতে না পড়ে। শহরের প্রতিটা কোণায় কোণায় গার্ডদের মোতায়েন করা হয় । বউ চাই আমার। এই আধা ঘন্টার ভিতরে। একটা দাগ ও যাতে না লাগে কারন ওর শরীর ক্ষতবিক্ষত তো আমি করব। অগ্নি মোবাইলটা কান থেকে নিয়ে ফ্লোরে ছুরে মারে। এতটাই জোড়ে মেরেছে যে মোবাইলটা খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়। কোটি টাকার মোবাইলটা পড়ে আছে এখন অবহেলিতভাবে। এসির নিচে থেকে ও পুরো শরীরে ঘাম ছুটে যায়। ভয়, রাগ, জেদ সবমিলিয়ে তৈরি হয়েছে ভিতরে এক অগ্নিকুন্ড।
অগ্নি চোখ খিচে বিরবির করর বলে,,,,
” যদি আমার সন্দেহ ঠিক হয় তাহলে জানো না আজ তোমার সাথে কি ঘটবে। তুমি যদি পাতালে ও লুকিয়ে থাকো আমি সেখানে পৌছাব। বার বার বারন করার পর ও তুমি সেই আমার থেকে দুরে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলে। এইটা তো আমি সহ্য করব না মিসেস চৌধুরি।
অগ্নি হাতে চাবিটা নিয়ে রুম থেকে বের হতে নিবে কিন্ত হঠাৎ থমকে যায়। সামান্য পিছনে বেলকনির দিকে উকি দেই। বেলকনির লাইট অফ করে রাখা কিন্তু কোথাও এক আলোর রশ্মি দেখা যাচ্ছে। কিসের আলো এইটা? লাইট তো অফ তাহলে? অগ্নি সামান্য ভাবুক হয়ে বারান্দার কাছে এগিয়ে যায়। বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে আলোকে অনুসরন করে সামনে তাকাতেই বিরক্তিতে মুখ খিচে ফেলে। দেখে সামনে গোপন কক্ষের রুম খোলা। দরজা খোলা ব্যাপারটা মাথায় আসতেই অগ্নি পকেটে হাত দেয় ওয়ালেট খোঁজার জন্য। কাঙ্খিত জিনিসটি না পেয়ে সামনে থাকা চেয়ারে লাথি মেরে গমগমে কন্ঠে আওড়ায়,,,,
“” ওহহ শিট! ওয়ালেট রুমে রেখে চলে গিয়েছিলাম ভুলক্রমে। আর এইটার ওই ফায়দা লুটেছে।
এরপর সামান্য তিরিক্ষে মেজাজে বলে,,,,,
” উকালতি করা কি এই মেয়ের স্বভাব। ও চৌধুরি বাড়ির বউ না হয়ে উকিল হওয়ার প্রয়োজন ছিলো। বিড়াল যেভাবে কাটার সন্ধানে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। এই মেয়ে যেদিন থেকে আমার সম্পর্কে হালকা সামারি জেনেছে ওইদিন থেকে উকালতি করে পুরো বাড়ি টুই টুই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজকাল ঘরের বউ ওই শত্রু হয়ে দাড়াচ্ছে সামনে। ইচ্ছে তো করে থাপরিয়ে গাল লাল করতে বিয়াদপ মেয়ে।
অগ্নি এক প্রকার রাগ নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অবাক হয়ে যায়। পুরো জিনিস পত্র এলোমেলো আর অগুছালো। সেলফ, ড্রয়ার সব খন্ডে একেক জায়গায় পড়ে আছে। ফ্লোরে কিছু শখের পেইন্টিং ভেঙ্গে পড়ে আছে। একেক পেইন্টিং এর মুল্য কোটি টাকা। এইসব নষ্ট হওয়াতে সামান্য ও রাগ লাগে না। শুধু সামান্য হাসে। বুঝতে পারে ইয়ানা আশেপাশে কোথাও আছে। অগ্নি আরেকটু এগিয়ে যেতেই কিছু ভাঙ্গা কাচের বোতল দেখতে পায়। ওয়াইন আর ও ভিবিন্ন নিষিদ্ধ জিনিস ভেঙ্গে পড়ে আছে। অগ্নি চারদিকে তাকায় আর ঠোঁট কামড়ে হাসে। যেভাবে এই মেয়ের একটা হাসির ঝিলিক পুরো অস্তিত্বটাকেই থমকে দিয়েছিলো। পুরো ধ্বংস করেছিলো ওকে। আর আজ তার ওই গোপন কক্ষে ডুকে আবার ও সেই ধ্বংসলীলা চালালো। বেরি বেড অনুভবের সেহজাদী। আমাকে কি ধ্বংস করার জন্যই আমার জীবনে আসলে? ভালোবাসা আর আদর তো কম দেই নি তাহলে এতটা দুরত্ব কেনো বাড়াচ্ছো। এতটা ঘৃনা কেনো তোমার চোখে? মেয়েরা সাহসী হবে তবে সেটা পরিমানমত কিন্তু এত এত সত্য আর ভয়ভহতা নিজের চোখে এত সান্নিধ্যে দেখেও তোমার ভয় হয় না কেনো আমাকে? এত সাঙ্ঘাতিক তেজ কি শুধুই আমাকে ঘায়েল করার জন্য?
হঠাৎ করে বাতাসের সাথে একটা পোড়া গন্ধ এসে নাকে পৌছায়। অগ্নি হালকা নাক টেনে বুঝার চেষ্টা করে। কিসের গন্ধ এইটা? কাগজ পোড়ানো? এখানে কাগজ পুড়িয়েছে কে? ইয়ানা! অগ্নি সামনে এগিয়ে পর্দা ঠেলে অপর কক্ষে তাকাতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। দরকারি কাগজ পত্রের প্রতিটি ড্রয়ার খোলা। অগ্নি দ্রুত সেখানে গিয়ে ড্রয়ার চেক করে। সবগুলো নকশা পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। ভিবিন্ন অস্ত্র, যুদ্ধের বোমা, সন্ত্রাস, ভিবিন্ন দেশের মাফিয়াদের দেওয়া কিছু গচ্চছিত ম্যাপ। যেগুলো তারা তৈরি করেছে বছর লাগিয়ে।
এখন শুধু পদক্ষেপ নেওয়া বাকি ছিলো। সবচেয়ে দরকারি কাগজ গুলো সে গোপন রুমে রেখে দিত আর না হলে টর্চার সেলে। কে জানত আজ এত বড় ভুল করে বসবে। আর সেই ভুলের ফায়দা তুলবে এই মেয়ে। পুরো রুম তছনছ করেছে কি যায় আসে কিন্ত এইগুলো পুড়েছে কেনো? ওহহ নো আর মাত্র চারদিন বাকি এইগুলো দেওয়ার। কিন্তু দিব কি সব কিছুই তো পুড়িয়ে দিয়েছে । অগ্নি চুল খামছে ধরে চেয়ারে শক্ত করে হেলান দিয়ে চেপে বসে । সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তিটাই কেনো ধ্বংসের গুঁটি হয়ে দাড়াচ্ছে। কেনো? কেনো? কেনো ইয়ানা? অগ্নি চিৎকার করে হুংকার দিয়ে উঠে। অগ্নির রাগান্বিত বিকট আওয়াজ পুরো দেয়াল থমথমে খেয়ে যায়।অগ্নি চৌধুরির অগ্নিকান্ডের সংস্পর্শে আসলে নিজেও ক্ষতবিক্ষত হবে মেয়ে । অগ্নি নামটা শুধু নাম নয় পুরোটাই এক অগ্নি কান্ড । তার অন্ধকার জগতের যেনো এক কোণায় স্পর্শে করলে তুমি নিজেই দহনে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।
অগ্নি রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে বেলকনির রেলিং চেপে ধরে। ঠিক তখন ওই ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠে,,,,,,
রিসিভ হতেই অপর পাশ থেকে আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে কেউ বলে,,,,,
” বস আপনার অফিসিয়াল নাম্বার অফ দেখাচ্ছে তাই প্রাইভেট নাম্বারে বাধ্য হয়ে ফোন দিতে হয়েছে।বস ম্যামকে কোথা ও খুঁজে পাচ্ছি না। পুরো শহরটার আনাচে – কানাচে লোক লাগানো হয়েছে। কিন্তু সবাই ফোন দিয়ে নিখোঁজ সংবাদ দিচ্ছে।
অগ্নি গর্জে বলে উঠলো।
” প্রয়োজন হলে আমার মাফিয়া সম্রাজ্যের সমস্ত গাড়ি, বিমান, জাহাজ, প্রাইভেট জেট,বিমান, সব কাজে লাগাও। সমুদ্রের তলদেশ থেকে খুঁজতে জাহাজ কাজে লাগাও, আকাশ, জমিন,, পাতাল যেখানেই থাকে সেখান থেকেই নিয়ে আসো। প্রয়োজন হলে মাটি খুঁড়ে বের করো। আমি আমার ঘারত্যারা বউকে চাই এন্ড দ্যাট’স ভেরি সন।
অগ্নি আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ গেলো সুইমিংপুলের কাছে। কিছু একটা দেখা যাচ্ছে নারীদের অবয়ব। কেউ নিজের চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বসে আছে। কে সে? ইয়ানা? অগ্নি নিজের ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে আরেকটু উকি মারতেই ল্যাম্পপোষ্টের আলোতে স্পষ্ট হয়ে উঠে কাঙ্খিত ব্যাক্তির সত্তা। অগ্নি রাগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে।মুহূর্তেই মেজাজ হারিয়ে বসে। কয়েকটা থাপ্পর না দিলে শান্তি লাগবে না। এই মেয়েকে খুঁজার জন্য পুরো দুনিয়া এক করে দিচ্ছে আর সে এখানে পা দুলাচ্ছে। কোনো আইডিয়া আছে এক মুহূর্তে না দেখলে কি অবস্থা হবে আমার। জান বের হয়ে যেত আর কিছু মুহূর্ত অতিবাহিত হলে।
অগ্নি ফোন কানে চেপে বলে,,,,,,,,
” বউ পেয়ে গেছি। খোঁজার দরকার নেই বাড়িতেই আছে।
গার্ড তব্দা লেগে যায়। বউকে বাড়িতে রেখেই পুরো দেশ তোলপার করে দিচ্ছে। ভেবেছিলেন এইটা সবচেয়ে বড় সিরিয়াস কেইস। গার্ড নিম্ন আওয়াজে বলে,,,,,
“”স্যার আপনার কথার সাথে সাথে বার্তা পাঠিয়ে দিয়েছি। এতক্ষনে মনে হয় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
অগ্নি কপাল ঘেঁষে বলে,,
“” পুনরায় আবার না বোধক বার্তা পাঠাও, কুইক।
অগ্নি ফোন কেটে দেয়।নিজের রাগটাকে অক্ষত রেখে বেলকনির সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। সুইমিংপুলের কাছে এসে ইয়ানাকে হেচকা টানে দাড় করিয়ে গালে ঠাসস করে থাপ্পর দেয়। রাগে পুরো শরীর কাঁপছিলো। অগ্নির শক্ত হাতের থাপ্পর খেয়ে ইয়ানা খেই হারিয়ে পড়ে যেতে নেয় সুইমিংপুলের ভিতরে। কিন্তু পা পিছলে যাওয়ার আগেই অগ্নি কাছে এনে নিজের সাথে ধরে। এই অস্তিত্বটা চোখের সামনে দেখে যেনো তৃষ্নার্ত হৃদয়টা শান্ত হয়ে এসেছে। কিন্তু বরাবর ওই ইয়ানার প্রতি মায়াটাকে আটকে রেখে প্রকাশ পায় অগ্নির রুক্ষ মেজাজ।
সে ইয়ানার বাহু চেপে ধরে রেগে বলে,,,,,
” মেরে ফেলতে চাও তুমি আমাকে? জেনো গিয়েছো আমার দুর্বল অস্ত্র? কোন জিনিসটাকে আমি সবচেয়ে ভয় পায়। যদি মনে করো তোমার এইসব হাতিয়ার কাজে লাগিয়ে আমাকে পাগল বানাবে তবে শুনো রাখো মেয়ে তুমি নিজে ও জানো না অগ্নি চৌধুরি আসলে কি? ও ভেঙ্গে পড়া বা মচকায় না। কারন সে ভঙতে ভাঙতে এক জলন্ত অগ্নি কান্ডে পরিনত হয়েছে। যার মনে না আছে কোনো দয়া, আর না আছে কোনো মায়া – মহব্বত। তাই এইসব অস্ত্র আর কোনোদিন কাজে লাগাবে না নিজেই ভেঙ্গে পড়বে। আজ থেকে তোমার গার্ডেন, সুইমিংপুলে যাওয়া নিষিদ্ধ। আমার চোখের বাহিরে যাওয়াটাও তোমার জন্য নিষিদ্ধ।
অগ্নির হাতের শক্ত থাবায় ইয়ানার দুই বাহু মনে হচ্ছে ভেঙ্গে যাবে। ওর চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে। ইয়ানা অগ্নির দেওয়া থাপ্পরের জায়গায় গালে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। ইয়ানার এমন আকস্মিক বাচ্চাদের মত কান্নায় অগ্নি তাজ্জব বনে যায়। সে ইয়ানার বাহু থেকে হাত ছাড়িয়ে ইয়ানার মুখটাকে নিজের সামনে উচু করে ধরে। ইয়ানা এখন ও ঠোঁট উলটে কান্না করে যাচ্ছে। অগ্নি ইয়ানার মুখটাকে পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে ভালোভাবে শ্বাস নেয়। নাকে ওয়াইনের গন্ধ পৌছাতেই অগ্নি দাঁতে দাঁত চেপে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
” তুমি ড্রিংক্স করেছো?
ইয়ানা টলমলে চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। সে ভালোভাবে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না। তবুও টেনেটুনে চোখ খোলে অগ্নি দিকে তাকিয়ে হু হু করে কেঁদে দেই। ইয়ানা পড়ে যেতে নিলে অগ্নি আবার ধরে বলে,,,,,
” আরে আশ্চর্য আবার কান্না করছো কেনো? তোমার পাওনা থাপ্পর তো অনেক আগেই দিয়েছি।
ইয়ানা অগ্নি মুখে হাত দিয়ে মন খারাপ করে টলতে টলতে বলে,,,,
” আপনি তিনটা কেনো হয়েছেন? এখন আমি কিভাবে সামলাবো? এক জানোয়ার রুপী অগ্নি চৌধুরিকে সামলাতে গিয়ে আমি নিজের অস্তিত্বকেই ভুলে যাচ্ছি। আপনি আবার দুজনকে কেনো এনেছেন? পারব না আমি সামলাতে।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি নিজের রাগ ভুলে যায়। কিছুটা অবাক হয়ে বলে,,,,
” নিজের হুশে আসো ইয়ানা। কিসব আবোল – তাবোল বকছো? তিনজন কোথায় পেলে? আমি একজন ওই আছি।
ইয়ানা অগ্নির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দাড়াতে চাই কিন্তু টাল সামলাতে পারে না। পড়ে যেতে নিলে অগ্নি ধরে একটা জোড়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” এক জায়গায় দাড়াও এইভাবে ছটফট করছো কেনো? আদর করেছি নাকি মেরেছি?
অগ্নির ধমকে ইয়ানা চুপসে গিয়ে বলে,,,,
” অগ্নি চৌধুরি খুব খারাপ।
অগ্নি — হ্যা জানি সেটা আমি। তুমি প্রতি মিনিটে সেটা জব কর। আর আমি শুনতে শুনতে মুখস্ত করে ফেলেছি।
ইয়ানা — পালিয়ে ও যেতে পারছি না। জানি পালালেই ধরে ফেলবে। ওনার হাত অনেক বড়। তাই তো আমি বোকামি করছি না। আমি যেখানেই যায় উনি হাজির হয়ে যাবেন।
অগ্নি চট করে ইয়ানার দিকে তাকায়। মানুষ মাতাল হলে নাকি সব সত্যি বলে।
অগ্নি— হ্যা ঠিক বুঝেছো। তাই ভুলে ও এইসব বোকামি করো না।
ইয়ানা — আমাকে উনি একটু ও ভালোবাসে না।
অগ্নি — তাহলে এত আদর কাকে করি?
ইয়ানা — আমি ওনাকে অনেক ভালোবাসতাম।
অগ্নি শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,,,,
” এখন বাসো না।
ইয়ানা খিলখিল করে হেসে উঠে। যেই হাসির শব্দ এই শান্ত পরিবেশটা আর ও শান্ত করে তুলে। ইয়ানার হাসি শব্দ বাতাসের সাথে মিলিয়ে যায়। অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ইয়ানার বাচ্চামো দেখছে। অগ্নির সত্যিটা জানার আগে ইয়ানা অগ্নির কাছে এইভাবে বাচ্চামো করত, ভিবিন্ন আবদার করত, কোনো কিছু না করলে গাল ফুলিয়ে বসে থাকত। যতক্ষন সে সেই অভিমান না ভাঙ্গাচ্ছে ততক্ষন গাল ফুলিয়ে রাখত কথা বলত না। ছোটদের মত এইটা সেইটা বায়না করত। সামান্য একটু ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার সাথে বাচ্চামো করত। কোথায় হারিয়ে গেলো সবকিছু? কেনো সময়ের সাথে সব বদলে গেলো?
কেনো বদলে গেলো তাদের সম্পর্ক? যেই সম্পর্কে ছিলো ভালোবাসা, বিশ্বাস, মায়া আর খুনশুটি। সেই ভালোবাসা আজ রুপ নিলো এক বিষাক্ত মুহূর্তের। এখানে ভালোবাসা নেই আছে ঘৃনা, বিশ্বাস নেই আছে ভয়, অবিশ্বাস আর যুদ্ধ । কেনো এমন অনাকাঙ্খিত সময়ের সাথে তারা তাল মিলাচ্ছে। অগ্নির শান্ত মনটা অশান্তের রুপ নিলো। ভিতরে দাঁউ দাঁউ করে ঝলছে এক শিখাকুন্ড। কারোর ঘৃনার চোখ দিনের পর দিন সহ্য করছে যাকে এক মুহূর্তে না দেখলে সে বেপোরোয়া পাগল উন্মাদ হয়ে যায়। তাদের সম্পর্কের পরিমাপ কত টুকু। আগুন আর পানি কি আদও এগিয়ে বাঁচবে। নাকি একজনের ঘৃনায় আরেকজন ধ্বংস হবে বা তার হাতেই ধ্বংস হলো।
অগ্নির ভাবনার মাঝে ইয়ানা শার্টের বোতামগুলো ঘুরিয়ে কান্না মিশ্রিতভাবে বলে,,,,,
“” বাসতাম ভালো। প্রচুর ভালোবাসতাম। এই পৃথিবীতে সমুদ্রের যত ঢেউ উঠছে প্রতি সেকেন্ডে বা ন্যানো সেকেন্ডে তার থেকে ও বেশি ভালোবাসতাম। যার কোনো পরিমাপ নেই। আকাশের একটা পরিমাপ আছে, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র সব কিছুর ব্যসার্ধ পরিমাপ আছে কিন্তু আমার ভালোবাসার কোনো পরিমাপ ছিলো না। আমার জীবনে প্রথম প্রনয় পুরুষ হলো সেই জানোয়ার পাপী অগ্নি চৌধুরি। যে একজন বিশ্ব বিখ্যাত গ্যাংস্টার, হাজারটা খুন করে রক্তে রঞ্জিত করেছে নিজের হাত, কালো দুনিয়া, পাপাচার, নেশা, সব কিছুর সাথে জড়িত উনি। এত কিছু জানার পর ও কি করে আপন করব। করেছি তো। এতটা ঘৃনার পর ও একটু হলে ও মায়া কাজ করে। নাহলে তো নিজের হাতেই খুন করে ফেলতাম।
অগ্নি শান্ত চাহনিতে ইয়ানার বয়ান শুছে। এই স্নিগ্ধ পরিবেশ, এই বাতাস ইয়ানার প্রতিটি কথাকে সাক্ষি করছে। ওর জবাবদিহিতা পরিবেশ আর ও শান্ত করে তোলে।
ইয়ানা কান্না করে বলে,,,,,
” কিন্তু আমি কখনো এমন কাজ করতে পারব না। ভবিষ্যতে পারি কি না তা জানা নেই। যখন ওই এইসব চিন্তা মাথায় এসেছে আমার কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিলো।
অগ্নি — মারলে না কেনো? তুমি চাইলে তো মারতেই পারো।
ইয়ানা চোখ তুলে তাকিয়ে বলে,,,,,
” স্বামী উনি আমার। মারতে যাব কিভাবে? হাত কাঁপবে না। আমি তো নিষ্ঠুর নয়। ঘৃনা করতে পারি কিন্তু ওকে মারলে আমি বাঁঁচব নাকি? বলেছিনা নিজের জীবনের থেকে ও বেশি ভালোবাসি।
অগ্নি ইয়ানার কথা শুনে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,,,,
” রুমে চলো ঠান্ডা লাগবে তোমার?
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দিয়ে রেগে বলে,,,,,
” ছুয়েছেন কেনো আমাকে? জানেন না আমাকে ছুঁয়ার এক মাত্র অধিকার শুধু আমার স্বামী। আমি উনাকে ঘৃনা করলে ও উনার হক কাউকে দিব না। দুরে যান বলছি। আমার স্বামী আছে।
অগ্নি ইয়ানার বাহু চেপে ধরে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,
” বিয়ে করেছো কয়টা তুমি?
ইয়ানা আঙ্গুল ধরে বলে,,,,
” গননা করতে হবে?
অগ্নি ইয়ানার কথায় বিরক্তি নিশ্বাস ফেলে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
“অনেক বলেছো আর অনেক শুনেছো? হুশে আসো নাহলে আমার হাতে মাইর খাবে তুমি। নিজের স্বামীকে বলে ছুবেন না,,,, এইটা আমার স্বামীর হক?
ইয়ানা ঠোঁট উলটে বলে,,,,,
” আপনার স্পর্শ এত শক্ত কেনো? অগ্নি চৌধুরির ফিল আসছে। ধমক দেন কেনো তার মত। উনি পৃথিবীতে এক পিছ ওই আছে। উনি গিরগিটির জমজ ভাই। ভুল করে সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি জন্ম দিয়েছে তাই মানুষের বেশে আছে। নাহলে উনার হৃদয়, কলিজা সব গিরগিটির মত। প্রতি মিনিটি হাজার বার রং পালটায়।
অগ্নি এইবার মেজাজ না হারিয়ে শান্ত ভাবে বলে,,,,,,
” কারন আমি অগ্নি চৌধুরি। তাই নতুন করে নিজেকে নিজে কপি করার কোনো প্রয়োজন নেই।
ইয়ানা চোখ ছোট ছোট করে অগ্নির দিকে তাকিয়ে হালকা মন খারাপ করে বলে,,,,,
” এত কষ্ট দেন কেনো আমাকে? আমি তো আপনার সেইইইইইই…….
ইয়ানা আবার ও পড়ে যেতে নেই কিন্তু অগ্নি ধরে ফেলে।ইয়ানা শক্ত করে অগ্নির বুকের পাশের শার্ট খামচে ধরে বলে,,,,,
” নিজের বউকে ধরে রাখতে পারেন না বার বার পড়ে যাচ্ছে।
অগ্নি হাসবে নাকি কাঁদবে সেটাই ভুলে গিয়েছে। এই মেয়ের সাথে সাথে সে আজ নিজে ও পাগল হয়ে যাবে।
অগ্নি ইয়ানাকে নিজের বাহুবন্ধী করে বলে,,,,,
” ঙ্গানে থাকলেই তো বলতে ছুঁবেন না আমাকে। আপনার স্পর্শ আমার ঘৃনা লাগে। কতটুকু খেয়েছো?
ইয়ানা — বেশি খায় নি। আমি তো সামান্য টেস্ট করার জন্য মুখের কাছে একটু নিয়ে ছিলাম। মানুষ কেনো এত বেপোরোয়াভাবে এইটাকে খায়। সবসময় নাম শুনেছি কিন্তু কখনো কাছ থেকে দেখেনি। সামান্য মুখে দিয়েছিলাম। বোতলের মুখে যে ছিপি থাকে ওইটা দিয়ে।কিন্তু এরপর থেকে আমার চারপাশ ঘুরছে।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
” কে বলেছিলো পাকনামি করতে। যে ওয়াইন আমি এক দুই ফুটা নিয়ে পানি মিশিয়ে খায় সেখানে তুমি এক ছিপি খেয়ে ফেলেছো। মাতাল তো হবেই ইডিয়েট। টেস্ট করার জন্য কি বাড়িতে আর কিছু পেলে না আমার ওই রুমে গিয়ে পাকনামি করতে হলো।
ইয়ানা — বকছেন কেনো? আমি কথাটা শেষ করি নি তো।
অগ্নি ইয়ানাকে নিজের কাছে এনে বলে,,,,,
” প্রয়োজন নেই আর কিছু বলার। নিজের হুশে আসো। পাগলামি বন্ধ করো আর ধৈর্য ধরতে পারছি না।
ইয়ানা ঠোঁট ভেঙ্গে বলে,,,,,,
” আমি আপনার বাচ্চা পেটে নিব না। এত বকা দেন কেনো?
অগ্নি ইয়ানাকে পাজা কোলে নিয়ে বলে,,,,,
” দরকার নেই। আমি তোমাকে আমি বাচ্চা দিব না। তাই তোমাকে পেটে রাখতে হবে না।
ইয়ানা অগ্নির গলা জড়িয়ে বলে,,,,,,
” একটা চুমু দিন।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়। বেহুশে বললে ও ইয়ানার কথায় অগ্নি হালকা হাসে। এত দিনের তিক্ততার পর ও আজ কেনো জানি একটু শান্তি অনুভব হচ্ছে। ইয়ানার চোখে আজ কোনো ঘৃনা নেই। অনেক দিন পর আজ সেই চোখজোড়া সে দেখছে যেখানে তার জন্য আবেগ আর ভালোবাসা ছিলো।
অগ্নি মিহি সুরে বলে,,,,,
” রুমে গিয়ে দিব। আমার অল্পতে হয় না তাই এখানে দেওয়া যাবে না।
অগ্নি সিড়ি বেয়ে বেলকনির উপর আসতেই ইয়ানা হঠাৎ অগ্নির কোলে ছটফটিয়ে উঠে। আকস্মিক এমন হওয়াতে অগ্নি খেই হারায়। ইয়ানা নিচে নেমে বেলকনিতে থাকা ডিভাবে ঘাপটি মেরে বসে। ইয়ানা এইভাবে নামাতে অগ্নি ইয়ানার সামনে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” এত লাফালাফি করছো কেনো? পড়ে গেলো কি হতো? ব্যাথা পেতে না তুমি? নিজের ভিতরে ভয় নেই। ব্যাঙের মত লাফ মেরে ঘাপটি মেরে বসে আছো।
ইয়ানা গাল ফুলিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। আবার সেই গাল ফুলানো। যেটা সে আগে করত অগ্নির সাথে। অগ্নির রাগটা নিরব হয়ে যায়। সে এগিয়ে ইয়ানার দিকে ঝুকে আদুরে কন্ঠে বলে,,,,
” রুমে যাবে না পাখি। এখানে বসেছো কেনো?
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,
” আগে আদর করেন।
অগ্নি ইয়ানার কথায় সামান্য ভ্রু কুচকে ফেলে। হুশ নাই তাই বলে এইসব বলবে। অগ্নি ঠোঁট ভিজিয়ে ইয়ানার গালে ধরে বলে,,,,,,
” অন্যদিন করব এখন রুমে আসো। তুমি নিজের মধ্যে নেই।
অগ্নির কথায় অগ্নি ঠোঁট উল্টে কান্না করে দেই। ইয়ানার কান্না করা দেখে অগ্নি মৃদু ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” স্টপ ইয়ানা। কান্না করছো কেনো?
ইয়ানা– আপনি আমাকে আদর করতে চান না। আমাকে আর ভালো লাগে না আপনার। ওই শাকচুন্নি ঝর্নার কাছে আপনি চলে যাবেন আমাকে রেখে। আমি কি করব? আমার সব শেষ হয়ে যাবে।
অগ্নির আহাজারিতে অগ্নি বিরক্তি হয় প্রচুর। তাই আগের মত ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” স্টপ! কি হচ্ছেটা কি। এইভাবে পাগলামো করছো কেনো? আমি অন্য মেয়ের কাছে যাব কেনো তুমি থাকতে।
ইয়ানা — তাহলে আদর করেন না কেনো?
অগ্নির এইবার ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যায়। ইয়ানার কাধ ধরে বলে,,,
” তোমার ধারনা আছে কি বলছো এইসব? আমার ধৈর্যের পরিক্ষা কেনো নিচ্ছো এইসব বলে। আমি নিজের কন্ট্রোল হারালে সামলাতে পারবে আমাকে?
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে বলে,,,,
” হুম।
অগ্নি ইয়ানার মাথা নাড়ানো দেখে হতাস হয়ে বলে,,,,,
” আবার বলছে হুম। রুমে চলো রেস্ট নিবে।
ইয়ানা ঠিক একইভাবে ঘাপটি মেরে বসে থাকে গাল ফুলিয়ে।
অগ্নি ইয়ানাকে কোলে তুলতে যাবে ঠিক তখন ওই সে স্তব্দ হয়ে যায়। শান্ত হয়ে থাকা চোখ দুটি আশ্চর্যে বড় বড় হয়ে যায়। ইয়ানা অগ্নির গলা জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁট দুটি আকড়ে ধরে। খুব যত্নে, আবেশে, আর ভালোবাসা নিয়ে। অগ্নি নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে ইয়ানার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে যায়। কিন্তু ইয়ানা এক হাতে অগ্নির শার্টের কলার আর অন্য হাতে ঘাড়ের পিছন দিকে দিয়ে চেপে ধরে। অগ্নি আবেশে নিজের চোখ বন্ধ করে নেই। এই স্পর্শে কোনো কামনা নেই আছে ভালোবাসা আর আবেগ। কিন্তু হুশে আসলে সব শেষ সেটা অগ্নি জানে।
ইয়ানা অগ্নিকে ছেড়ে হাঁপাতে থাকে। দম মনে হয় আটকে আসছিলো। আরেকটু হলেই পরোপারের টিকিট হাতে চলে আসতো। ইয়ানা এখন ও অগ্নির শার্টের কলার চেপে রেখেছে। অগ্নি চোখ বন্ধ করেই শ্বাস নিয়ে বলে,,,,,,
” ছাড়ো আমাকে ইয়ানা?
ইয়ানা মিহি সুরে বলে,,,,
” আমার সব আদর আপনি নিয়ে নিয়েছেন। এখন আমারটা আমাকে ফিরত দিন। নাহলে আমি আব্বু – আম্মুর কাছে আপনার নামে নালিশ করব।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,,
‘” কি বিচার দিবে শুনি?
ইয়ানা — বলবো আপনি আমাকে ভালোবাসেন না। একটু ও আদর করেন না।
অগ্নি — আচ্ছা।
ইয়ানা — হুম।
ইয়ানা — ওকে সব করব। বিচার দিতে হবে না। তার আগে আমাকে কিছু জবাব দাও।
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানায়।
অগ্নি পকেটে থাকা এক্সট্রা মোবাইলটা হাতে নিয়ে ভিডিও অন করে পাশে রেখে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” আমি সজ্ঞানে বলছি আমি আমার স্বামীর ভালোবাসা পেতে চাই। এখন আমার পাগলামিতে সে বাধ্য হয়ে আমার কাছে আসবে।
এইটা রিপিট করো।
ইয়ানা অবুঝের মত বলে,,,,,,
“” এইটা বলে কি হবে?
অগ্নি — প্রমান থাকবে যাতে পাগলামি করতে না পারো। এখন বলো।
ইয়ানা ভদ্র মেয়ের মত বলে,,,,,
“আমি সজ্ঞানে বলছি আমি আমার স্বামীর ভালোবাসা পেতে চাই। এখন আমার পাগলামিতে সে বাধ্য হয়ে আমার কাছে আসবে।
অগ্নি হেসে বলে,,,,,
” গুড জব। আমি কাল সকালে এই নিয়ে তাকে কিছু বলতে পারব না। জানোয়ার, নরপশু, সুযোগের ব্যবহার করে কাছে এসেছি এইসব কথা যাতে শুনতে না হয়।
ইয়ানা — আচ্ছা।
অগ্নি ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে ডিভাবে বসে থাকা ইয়ানার দিকে ঝুকে বলে,,,,,,,,
” ছটফট কম করবে জান। অনেক দিনের তৃষ্ণার্ত আমি।
ইয়ানা না বুঝেই চোখ বন্ধ করে নেই। অগ্নি উঠে গিয়ে বেলকনির লাইট অফ করে দেই। পুনরায় সে ডিভাবে ফিরে আসে ইয়ানার কাছে। ডিভানটা ঠিক মাঝারি সাইজের বড়। হালকা টান দিলে অনেকটা ছড়িয়ে যায়। দেখতে মনে হচ্ছে ছোটখাটো একটা বিছানা। অগ্নি ইয়ানাকে শুইয়ে দিয়ে কপালে চুমু খায়। এরপর ইয়ানার কানে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,
” তোমাকে চাই,,,,ঝলসানো রাতে পোড়া বরাতে তুমি আমার অন্ধকার আর রোশনাই।
অগ্নির গরম নিশ্বাসের স্পর্শ পেতেই ইয়ানা কেঁপে উঠে। শক্ত করে অগ্নির শার্ট আটকে রাখা। অগ্নি নিজের ভিতরে এতক্ষন জমিয়ে রাখা ধৈর্যকে বিদায় জানিয়ে অধৈর্য হয়ে পড়ে। আটকে ধরে ইয়ানার ঠোঁট। প্রতিবারের মতই প্রথমে নরম, এরপর ধীরে ধীরে এক হিংস্র থাবা। অগ্নির অবাধ্য হাতের বিচরন সমস্ত সত্তা জুড়ে। ইয়ানা হাঁপিয়ে উঠে। পেরে উঠে না অগ্নির সাথে। নেতিয়ে পরে অগ্নির বাহুডরে। আত্নসমর্পন করতে বাধ্য হয় অগ্নির হাতের অবাধ্য বিচরনের কাছে। ওর শরীরে দেওয়া প্রতিটি ক্ষতের কাছে। এ অগ্নি চৌধুরি।
ওর ভালোবাসা আর স্পর্শ ও সবার কাছ থেকে ভিন্ন। উনার মতই শক্ত, হিংস্র আর উত্তাপ। যেটা ইয়ানা সহ্য করে প্রতিটি মুহূর্তে। কষ্ট হলে ও ভালোবাসা হিসেবে বরন করে। চাঁদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে পুরোটা জুড়ে। উপরে কাউচ দিয়ে ঘেরা রাতের অন্ধকার আকাশ। আকাশে অসংখ্যা তাঁরা আর চাঁদ মামা। অগ্নির পাগলোমো হয়ত তারা ও দেখছে। সেকেন্ড যায়, মিনিট যায়, ঘন্টা যায়। চারদিকে এক নিরব পরিবেশ। কিন্তু এই নিরব পরিবেশে ঝংকার তুলছে দুজন মানুষের নিশ্বাসের শব্দ। ভালোবাসায় হারিয়ে যায় এক অন্য জগতে। যেখানে কোনো কষ্ট, ব্যাথা কিছু নেই।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩০
সময়টা যদি এখানেই থেমে যেত। অমর হয়ে উঠত এই সময়টা। কাল সকালে কি সব ঠিক থাকবে। মিলিত হয়ে আবার ও কি আগের মত করে ভালোবাসায় মেতে উঠবে। ইয়ানা কি সত্যি ওই নিশ্চুপ হয়ে যাবে? নাকি এইটা একটা এক্সিডেন্ট হিসেবে বরন করে নিবে?