অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩২
লিজা মনি
সকালটা যেন এক অলস অথচ স্নিগ্ধ আলোয় মোড়া সময়। আকাশ একেবারে পরিপাটি নীল হালকা সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে শান্ত বাতাসে। ঘরের জানালাটা আধা খোলা।বাইরের পৃথিবীর কোলাহল এখনো পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। কিন্তু বাতাসে যেন একধরনের কৌতূহলী চঞ্চলতা দিনটা কি জানি কি নিয়ে আসবে।
হালকা গরম পড়েছে।কিন্তু তা ক্লান্তিকর নয়। বরং শরীরে একটা আরামদায়ক উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়। ঘামের কোনো চিহ্ন নেই কেবল একটা কোমলতা আছে বাতাসে। সেই হালকা গরমের মধ্যে একফোঁটা প্রশান্তি যেন শরীর ও মন একসাথে জেগে উঠছে।
জানালার পর্দা বাতাসে ধীরে ধীরে নড়ে উঠছে।সকাল নিজেই খেলছে ঘরের সাথে। সূর্যের আলো ভোরের ঘুম ভাঙা চোখের মতন নরম, ম্লান আর ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উঠছে। ঘরের মেঝেতে সেই আলো পড়ে তৈরি করেছে ছোট ছোট গোল্ডেন প্যাচ। এমনভাবে যেন ঘরটা নিজের ভেতরে এক নতুন আলোয় ভরে উঠছে।
পাখিরা কিচিরমিচির করে।কিন্তু সেই আওয়াজ কানে কটকটে নয় বরং মনকে দোলা দিয়ে যায়। দূরের গাছগুলো তাদের পাতায় হালকা দুলুনি দিচ্ছে।সূর্যের আলোয় পাতার মধ্যে দিয়ে ছোট ছোট ঝলক এসে পড়ছে ঘরের ভেতরেও।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সকাল নেমেছে টরন্টো শহরে এক চুপচাপ সুরে। এটি গ্রীষ্মের সময় তাই শীতের হিমশীতল কামড় নেই বরং বাতাসে একধরনের নরম উষ্ণতা ছড়িয়ে আছে।যেটা গায়ে লাগলে আরাম লাগে ক্লান্তি নয়।
আকাশ একেবারে ঝকঝকে নীল। কোথাও কোথাও পাতলা মেঘের রেখা যা হালকা তুলোর মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। পূর্ব আকাশ থেকে সূর্য উঠছে ধীরে ধীরে আলোটা প্রথমে সোনালি তারপর তা গাঢ় হতে হতে চারপাশকে আলোকিত করে তুলছে।
রাস্তাগুলো অনেকটাই ফাঁকা। তবে দূর থেকে গাড়ির হালকা গর্জন শোনা যায়। বাসের স্টপেজে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে, কেউ হেডফোনে গান শুনছে, কেউ নিঃশব্দে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ট্র্যাফিক এখনো ভিড় তৈরি করেনি, তাই শহরের ছন্দটা এখনো ধীরে।
পথের দু’পাশে থাকা গাছগুলোতে নতুন পাতার রঙ এখনো টাটকা। পাতাগুলোতে রোদের ঝিলিক পড়ে পাতার ছায়া ফুটপাথে পড়ে ছোট ছোট ডিজাইন তৈরি করে। পাখিরা বিশেষ করে রবিন স্প্যারো, আর occasional cardinal ডেকে চলেছে গাছের ডালে বসে। তাদের ডাক শহরের কোলাহলের আগে পাওয়া একধরনের স্বস্তি।
কফিশপগুলো আস্তে আস্তে খুলে যাচ্ছে। কাউকে দেখা যায় হাতে takeout কফি নিয়ে হাঁটছে।কারো ব্যাগে ল্যাপটপ। ব্যস্ততা শুরু হওয়ার আগে, এই মুহূর্তটা যেন একান্ত নিজের এক ধরনের নিজস্ব শান্তি।
টরন্টোর শহুরে সৌন্দর্যের মাঝে এই সকালে একটা ভারসাম্য প্রকৃতি।মানুষ আর যন্ত্রের মাঝে এক টুকরো সহাবস্থান। এটা এমন এক সকাল, যা কোনো জীবনের সূচনা হতে পারে যেখানে দিনটা কেবল কাজের নয়, অনুভবেরও।
জানালার ফাঁক দিয়ে সেই আলো ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে দেয়ালে, বিছানায় মেঝেতে রোদের ছায়া পড়ে। কাচের জানালায় রোদের রেফ্লেকশন পড়ে জ্বলজ্বল করে। বাতাসে একধরনের শুষ্কতা আছে, কিন্তু তা বিরক্তিকর নয় বরং বিশুদ্ধ লেগে ঘুম ভেঙে শরীর জেগে ওঠে।
সকালের সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ইয়ানা হালকা চোখ মেলে তাকায়। মাথাটা কেমন ধরে আছে। মনে হচ্ছে ব্যাথায় রগগুলো ছিড়ে যাবে। ইয়ানা হালকা নড়তেই পুরো শরীরে ব্যাথায় টগবগিয়ে উঠে। শরীরে মনে হচ্ছে কেউ বাজেভাবে ক্ষত করেছে। নড়াচড়া করার ক্ষমতাটুকু পর্যন্ত নেই। পুরো শরীরে অসহ্য রকমের ব্যাথা। ইয়ানা মাথাটাকে চেপে ধরে কোনো রকম বিছানার সাথে হেলান দিয়ে বসে। ভালোভাবে চারপাশে নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে চট করে চোখ মেলে তাকায়। কাল সন্ধ্যায় সেই গোপন কক্ষে ছিলো। তাহলে এখানে আসলো কখন? ইয়ানা মাথাটাকে ভালোভাবে চেপে ধরে। পুরো শরীরে এমন লাগছে কেনো? কি হয়েছিলো? এখন তো মনে হয় সকাল হয়ে গিয়েছে। ইয়ানার ভাবনার মাঝেই দেখতে পায় অগ্নির ওয়াশরুমের দরজা খুলে বের হচ্ছে। পরনে সাদা টাওয়াল পেচানো। সুঠাম দেহী শরীরে পানির বিন্দু বিন্দু কণা চুল বেয়ে বেয়ে পড়ছিলো। ফর্সা ত্বকে মনে হচ্ছে মুক্তা ঝিকঝিক করছে। , অগ্নি ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে ডিভানে গিয়ে বসে। এরপর কফির মগটা হাতে নিয়ে ল্যাপটপ ঘাটাতে থাকে।
অগ্নির সৌন্দর্যে হারিয়ে যায় তর বেহায়া মন। মনটা যেনো তথাকথিত একটা বাক্য বলে উঠে,,,,,,,
” তুই বেডা মানুষ, তুই হবি শ্যামলা। কালা হলেও মানা যায়। তুই কেন ডায়মন্ড নেকলেসের মত ঝকমক করে চমকাবি? বুঝা আমারে।
ইয়ানা নিজের ভাবনায় নিজেই থমথমে খেয়ে যায়। নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় অগ্নির দিকে তাকায়।
অগ্নির এমন সরল ভঙ্গিমা দেখে ইয়ানা প্রশ্ন করে,,,,,,
” কি হয়েছিলো কাল আমার?
অগ্নি ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” কাল তোমার কি হয়েছিলো আমি কিভাবে বলব?
ইয়ানা সামান্য রেগে বলে,,,,,,
” আপনি বলবেন না তাহলে কে বলবে? আমি কাল সন্ধ্যায় ওই….
ইয়ানা আটকে যায়। কথা বলা বন্ধ করে দেই। চুপ হয়ে যায় সে।
ইয়ানাকে এইভাবে চুপ যেতে দেখে অগ্নি ল্যাপটপে চোখ রেখে বলে,,,,
” হুম বলো। তুমি আমার গোপন কক্ষে গিয়েছিলে গোয়েন্দাগিরি করার জন্য।
ইয়ানা — অন্যায় তো কিছু করি নি।
অগ্নি — তোমার অন্যায়টা ছিলো আকাশ ছোয়া কিন্তু রাতের জন্য সব ক্ষমা করে দিলাম।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে সন্দেহ দৃষ্টিতে বলে,,
“” কি হয়েছিলো কাল রাতে? আমার শরীর এমন লাগছে কেনো?
অগ্নি — আমাদের বিয়ে হয়েছে কবে ইয়ানা?
ইয়ানা — কেমন প্রশ্ন এইটা? আপনি জানেন না?
অগ্নি — কত বছর?
ইয়ানা সামান্য বিরক্তি নিয়ে বলে,,,
“” দুই বছর।
অগ্নি — কখন তোমার এমন শারিরীক সমস্যা হত?
অগ্নির কথার ব্যাখ্যা বুঝতে পেরে ইয়ানা স্তব্দ হয়ে যায়। কখন ঘটলো এইসব? আমি তো ওইখানে ছিলাম এরপর কিছু একটা খেয়েছিলাম পরে আর কিছু ভালোভাবে মনে নেই।
ইয়ানা — কখন এইসব ঘটেছে আমার ভালোভাবে কিছু মনে পড়ছে না কেনো?
অগ্নি — মাতাল ছিলে।
ইয়ানা নিজেকে সিটিয়ে নেই। মাতাল কেনো হতে যাবে? সামান্য একটু খাওয়াতেই কিছু মনে নেই। মাতাল হয়েছে বলে এইটার ফায়দা তুলেছে এই লোক। ছিহহ!
ইয়ানা নিজের শরীরে এমন ভাবে ঘসছে যেনো নোংরা কিছু লেগে আছে। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” আটকালেন না কেনো আমায়? পারলে তো আটকাতে পারতেন?
অগ্নি — কি লাভ?
ইয়ানা — লাভ ক্ষতির মুনাফা যাচাই করতে বলে নি মি, চৌধুরি। আট্কালেন না কেনো? দুরে সরে যেতেন। আমি না হয় মাতাল ছিলাম আপনি তো সুস্থ ছিলেন?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলে,,,,,
” স্ত্রী যদি আলিঙ্ন করে তাহলে স্বামীকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নেই।
ইয়ানা — উল্টো বললেন? স্বামী যদি আলিঙ্গন করে তাহলে স্ত্রীকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নেই। ফেরেশতারা অভিশাপ দেয়।
ইয়ানার কথায় অগ্নির ঠোঁট চেপে হেসে বলে,,,,,
” গুড। মনে ছিলো না সেটা মনে করিয়ে দিলে।এখন প্রতি রাতেই আমি তোমাকে আলিঙ্গন করব। প্রতি রাতেই তাহলে প্রস্তুত থেকো।
ইয়ানা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে,,,
” আপনার নোংরা হাতের স্পর্শ যে সবসময় পেতে হবে তা আমার অজানা নয়।
ইয়ানার কথায় অগ্নির মাথার রক্ত টগবগিয়ে উঠে। সস্মান্য গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
” তুমি আমার অর্ধাঙ্গীনি ইয়ানা। আমার জীবনের অর্ধেক তুমি। আমার সকল পাপ, অন্যায় সবকিছুর অর্ধেক মালিক ও তুমি। যেদিন তোমাকে আল্লাহর কালেমা আর তিন কবুল বলে নিজের নামের সিল লাগিয়েছি ওইদিন থেকেই তুমি আমার সবকিছুর সমান ভাগিদার।
ইয়ানা —আপনার অর্ধাঙ্গিনী হয়ে এখন নিজেই এক অভিশাপের কালকোঠুরিতে বন্ধী হয়ে গেছি। কে জানত এই অন্ধকার কালকোঠুরির কোনো দরজা নেই।
অগ্নি — কারন দরজার চাবি আমার কাছে। আর সেই চাবি আমার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার আগে পাবে না।
ইয়ানা আর কিছু বলে না। শান্ত হয়ে হেলান দেয় খাটের সাথে।
ইয়ানা নিজের শরীরের ক্ষতগুলোকে এমনভাবে স্পর্শ যেনো সেসব মুছে ফেলতে পারে। অগ্নি ইয়ানার কাহিনী দেখে হালকা হেসে বলে,,,,
” আমাকে রাগাতে তোমার খুব ভালো লাগে তাই না? লাভ নেই। এইসব এক মাসের কমে যাবে না। আর যদি এইসব বিলীন করার জন্য চামড়া তুলে ফেলো তাহলে আমি তোমার মাংসে স্পর্শ স্থায়ী করব। যদি সেই থেকে বাঁচতে মাংস তুলে ফেলো তাতে ও লাভ নেই। অবশিষ্ট হাড্ডি তো আছে। সেখানে নিজের নাম খোদায় করব। তুমি শুধু আমার না,, তুমি আমার এক চিহগাঁথা।
ইয়ানা আনমনে বলে,,,,,,
“”জোর করে অনেক কিছুই করা যায়।
অগ্নি হালকা হেসে ল্যাপটপটা নিয়ে ডিভানের উপর থেকে উঠে ইয়ানার পাশে বসে। এরপর ল্যাপটপটা সামনে ধরে বলে,,,,,
“” তাকাও এইদিকে তোমার আমার ফিল্ম দেখায়।
ইয়ানা না চাওয়া সত্তেও মনিটরে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। নিজের পাগলামো দেখে নিজেই তাজ্জব বনে যায়। এইভাবে স্বীকার উক্তি দিয়েছিলো লোকটার সামনে? কিছু মুহূর্ত পর যখন তাদের ঘনিষ্টমুহূর্তগুলো অন্ধকারের আবছা আলোয় ঝলঝল করছিলো ইয়ানা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নেই। বরফের মত পুরো শরীর জমে গিয়েছে।
ইয়ানা আমতা আমতা করে বলে,,,
” বন্ধ করুন এইটা। দেখতে বিশ্রি লাগছে। এইসব কেউ ভিডিও করে রাখে?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,,,,,
“”ভাগ্যিস রেখেছিলাম। নাহলে তো ঘৃনার পরিমানটা আরেক ধাপ এগিয়ে যেত। তোমার এই ঘৃনামিশ্রিত চোখ দুটি আমার মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন কাঁপিয়ে তুলে। নিজের অবস্থান, নিজের গন্তব্য হারিয়ে থমকে যায়। সেই চোখে ঘৃনার পরিমান আরও বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের নিউওরনগুলো ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এত তাড়াতাড়ি রিস্ক নিতে চাই না।
ইয়ানা চোখ সরিয়ে নিয়ে বলে,,,,,
” প্রথম এই চোখে ভালোবাসা আর বিশ্বাস ওই ছিলো। ডিলিট করেন আগে এইটা। এইসব কেউ রেখে দেয় না। কিসব বিশ্রি শব্দ।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,
” তোমার ওই এইগুলো। অন্য কোনো মেয়ে আসে নি। ডিলিট করব না। যখন বৃদ্ধ হব তখন তুমি আর আমি বসে রাতের আকশের নিচে ভিডিওটা দেখে দেখে চন্দ্রবিলাশ করব।
ইয়ানা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলে,,,,
” নির্লজ্জ লোক বলে কি এইসব? ডিলিট করুন কেউ দেখে ফেলতে পারে?
অগ্নি ল্যাপটপ অফ করে বলে,,,,,
‘ তোমার মত সাহস আজ ও কারোর হয় নি। যারা অগ্নি চৌধুরির গোপন জিনিসে হাত রাখবে। কারন তারা জানে সেই হাত আর শরীরে থাকবে না।
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি হাতে করে একটা ঔষধ নিয়ে এসে সামনে ধরে,,,,,
” এইটা খেয়ে নাও ব্যাথা কমে যাবে।
ইয়ানা অগ্নির হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। এরপর শক্ত কন্ঠে বলে,,,,,,,
” সবসময় তো দুইটা দিন আজ একটা কেনো? ওইটা ও দিন মি, চৌধুরি।
অগ্নি শান্তকন্ঠে বলে,,,,,,
” ওইটা না খাওয়ার জন্য তো সবসময় যুদ্ধ করতে আজ সেচ্ছায় চাইছো?
ইয়ানা — আগে আপনার সন্তানের মা হতে চাইতাম। কিন্তু এখন আমি আপনার অস্তিত্ব নিজের গর্ভে রাখতে চাই না। মা তো আমি। নিজের সন্তানের অন্ধকার ভবিষ্যত কিভাবে সহ্য করব। আমি শিখা চৌধুরি নয়। যে আপনার এত কিছু জেনে ও চুপচাপ সহ্য করছে। নিজের সন্তানকে জানোয়ার হতে দেখতে চাই না।
অগ্নি হেসে ইয়ানার মাথায় সুন্দর করে হাত বুলিয়ে দেয়। হঠাৎ করে পিছনের চুলগুলো চেপে ধরে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,,
” তুই জানিস না তর এই কথার জন্য এখন আমি কি অবস্থা করতাম। ইচ্ছে তো করছে বছরে বছরে তকে আমার সন্তানের মা বানাতে। খবরদার আমার অস্তিত্বকে জানোয়ারের সাথে তুলনা করবি না। আমি খারাপ হতে পারি কিন্তু আমার সন্তান না।
ইয়ানা চোখ সরিয়ে নেই। বাচ্চা নেই অথচ বাচ্চার জন্য এত দরদ। সাইকো লোক একটা।
অগ্নি নিজের হাত সরিয়ে ইয়ানাকে ঔষধ খাইয়ে দিয়ে বিছানায় নিরব হয়ে বসে। বার বার চাইছে রাগ করবে না। অথচ নিজেকে সামলাতে পারে না। ধৈর্য নিজের সীমার বাহিরে চলে যায়।
অগ্নিকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে ইয়ানা প্রশ্ন করে,,,,,,
” আর কি কি আছে যা আমার অজানা?
অগ্নি ঘার ঘুরিয়ে বলে,,,,,,
” মানে?
ইয়ানা শ্বাস নিয়ে বলে,,,,
” মানে আপনার ঠিক কতটা গোপন কক্ষ আছে। আর কি কি করেন আপনি যা আমার অজানা?
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,
‘” থাকতে চাও নাকি?
ইয়ানা– রাখতে চান নাকি?
অগ্নি— তুমি আমার সম্রাজ্যের রানী। তাই তোমার স্থান এইসব নিষিদ্ধ কক্ষে নয়। তোমার স্থান আমার রাজপ্রাসাদে।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা থমকে যায়।
ইয়ানা — কথা ঘুরাচ্ছেন?
অগ্নি— একদম নাহ।
ইয়ানা— তাহলে বলোন আর কি কি আমার অজানা?
ইয়ানার কথায় অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,,
” তুমি জানো ওই বা কতটুকু যে অজানা থাকবে। তুমি আমার বাড়ির ভিতরে দেখোছো আমার পুরো সম্রাজ্য দেখো নি। এর চেয়ে জঘন্য কাজ করে আমি অভ্যস্ত।
ইয়ানা টলমল চোখে বলে,,,,,
” কতটা খারাপ আপনি?
অগ্নি — সাধু পুরুষ ভেবেছিলে?
ইয়ানা — কল্পনা করতে কষ্ট হয় শুধু। উন্মুক্ত করতে চাই। জানতে চাই আপনার সব কিছু।
অগ্নি — সহ্য করতে পারবে না।
ইয়ানা — অবলা নারী ভাবছেন?
অগ্নি হালকা হাসে। কিন্তু সেই হাসিতে সামান্য এক শব্দ হয়। ইয়ানা এই প্রথম দেখেছে অগ্নিকে শব্দ করে হাসতে।
অগ্নি সেই হাসিটাকে আবদ্ধ রেখে বলে,,,,,
” যার হাতে আমি আমার ৮০% ধ্বংস দেখতে পাচ্ছি তাকে অবলা ভাবাটা বোকামি। ১০% ধ্বংস আমি বর্তমানেই হয়ে আছি।
ইয়ানা — এতটা শক্তি আল্লাহ মনে হয় দেই নি। এতটা ধৈর্য আমার নেই। আপনার নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার আগে অথবা পরমুহূর্তেই যাতে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। কারন আপনার বন্ধ চোখ দেখার মত ক্ষমতা আমার নেই।
অগ্নি ইয়ানার দিকে ঝুকে বলে,,,,,,
” মঞ্জুর করতে পারলাম না তোমার একটা দাবি ও। তুমি আমার আগে মরলে আমি আদর করব কাকে? আর যদি পরে মরো তাহলে তোমাকে দেখে রাখবে কে?
ইয়ানা চোখ পাকিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। সিরিয়াস কথার মধ্যে ও রুমান্স করার কথা মনে পড়ে উনার আগে।
ইয়ানার চোখ পাকানো দেখে অগ্নি হালকা হেসে পাজা কোলে তোলে নেই। হঠাৎ এমন হওয়াতে ইয়ানা ভড়কে গিয়ে বলে,,,,,,
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
অগ্নি সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে,,,,,
” আগে শাওয়ার নিয়ে পবিত্র হয়ে নাও। তোমাকে এই অবস্থায় দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না।
অগ্নি ইয়ানাকে নিয়ে শাওয়ারের নিচে দাড় করিয়ে দেয়। অগ্নির একটা সাদা শার্ট ইয়ানার শরীরে। যেটা তার হাটুর উপরে পর্যন্ত ঠেকেছে। শাওয়ারের ঠান্ডা পানি শরীরে পড়তেই মনে হচ্ছে ক্ষতগুলো কাচা হয়ে উঠেছে। জ্বলে উঠে পুরো সর্বাঙ্গ। মনে হচ্ছে কেউ মরিচ ঢেলে দিয়েছে।ইয়ানা দাঁতে দাঁত ঠেকিয়ে অগ্নির বাহুর চেপে ধরে শক্ত করে। ইয়ানার অবস্থা দেখে অগ্নি নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,,,,,,
“” যাস্ট আরেকটু সহ্য করে নাও জান। এই তো হয়ে এসেছে আর মাত্র কয়েক মিনিট। বেশি ব্যাথা করছে?
ইয়ানা মাথা দিয়ে হ্যা বুঝায়।
অগ্নির ভিতরে এক অপরাধবোধ জাগ্রত হয়। রাতে যখন ইয়ানা ঙ্গান হারিয়ে ওর বাহুডরে নেতিয়ে পড়ে। তখন অগ্নি নিজের হুশে ফিরে আসে। রুমে এনে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সাররাত ইয়ানার শিউরে বসে থাকে।
অগ্নি ইয়ানার কপালে চুমু খেয়ে ভালোভাবে শাওয়ার শেষ করিয়ে কাপড় চেইঞ্জ করে দেয়। এরপর বিছানায় হেলান দিয়ে শুইয়ে দিয়ে চুলগুলো ভালোভাবে মুছে দেয়।
অগ্নিকে এত বেপোরোয়া হতে দেখে ইয়ানা আনমনে বলে,,,,,
” ফিরে আসুন না সেই পথ থেকে? আমার খুব কষ্ট হয়। সহ্য করতে পারি না যখন এইসব মনে হয়।
অগ্নি ইয়ানার গলার ক্ষতগুলোর মধ্যে ছোট ছোট করে চুমু খেয়ে বলে,,,,,
” সম্ভব না। পরিস্থিতি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি সেচ্ছায় আসি নি।
ইয়ানা — কেনো সম্ভব না? মানুষ অনেক পরিস্থিতিতেই পড়ে তাই বলে সব মেনে নিতে হবে?
ইয়ানার কথায় অগ্নি তাচ্ছিল্য হেসে বলে,,,,,
“”ইয়ানা কখনো সমুদ্রের নিচে অথবা অন্ধকার এক আবদ্ধ রুমে বন্ধী থেকেছো কখনো যাস্ট এক ঘন্টার জন্য? বা কখনো জঙ্গলের ভিতরে মাটির গভীরে এক দুর্ঘন্ধময় জায়গায় থেকেছো? কিন্তু আমি থেকেছি? বয়স যখন মাত্র চৌদ্দ বছর যুবক হয়ে উঠছিলাম ধীরে ধীরে। ভালো ওই তো ছিলাম। কিন্তু নিয়তি সব বদলে দিলো। আমার ঠাই হলো পচনশীল অন্ধকোঠুরীতে। দীর্ঘ ছয় বছর ধুকে ধুকে মরেছি। শরীরে ছিলো অসংখ্য ক্ষত আর কালসিটে দাগ। কারেন্টের শক দেওয়া হয়েছে বহুবার। শালার মরতে মরতে বেঁচেছি। চোখের সামনে বাচ্চাদের চোখ, হৃৎপিন্ড, অঙ্গ -প্রতঙ্গ কেটে নিয়ে যেত। তাদের শরীরকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলত। আমি পাচার হয়েছিলাম আমেরিকায়। কাজ করতে করতে জীবন শেষ হয়ে গিয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলেও কেউ হাত বুলিয়ে দেই নি। শুয়ে থাকলে বরং পিটানো হত। চাবুকের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে শুধু মা মা করতাম। কিন্তু তারা আমাকে খুঁজে পাই নি। সেই ক্ষত জায়গায় ঘা সৃষ্টি হয়ে যেত।
পোকা ধরে যেত।ব্যথায় আর্তনাদ করতাম।চোখের সামনে লোকে যৌনতায় লিপ্ত হত আর আমি সেগুলো পরিষ্কার করতাম। পেটের ক্ষুধায় ছটফট করতাম শুধু। পেটে কখনো ইট বেঁধে রেখেছি। কখনো মাটি খেয়েছি। হারাম নিষিদ্ধ খাবার খেয়েছি ক্ষুধার তাড়নায়। খাবার চাইলে পচা- বাঁশী খাবার দিত। কখনো খাবারে পোকা ধরে থাকত। কিন্তু বাধ্য হয়ে সেগুলো ও খেয়েছি। আমি একা নয় আমার সাথে আরও অনেকে ছিলো। নারী ব্যবসা শুনেছো? কিন্তু পুরুষদের দিয়েও ব্যবসা করানো হয় সেটা শুনেছো? বিশ বছর বয়সে আমাকে ডুকানো হয় আমাকে সেই ব্যবসায়। ঊনিশ থেকে বিশে পা রেখেছি।
সবচেয়ে সুন্দর ছিলাম আমি
আর এইটাই অনেকের নজর কাড়ে।পাঠানো হয় আমাকে এক রুমে যেখানে একটা মেয়ে ছিলো। আধুনিক আভিজাত্যে ঘেরা। পড়নে ছোট ছোট জামা ছাড়া কিছুই ছিলো না। আমি লজ্জায় মাথা ঘুরিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটা আমার সাথে নিষিদ্ধ খেলায় লিপ্ত হতে চেয়েছিলো। ওইদিন আমি জীবনের প্রথম খুন করি বিশ বছর বয়সে। ছুরি দিয়ে গলা কেটে ছিলাম। কিন্তু একটুও ভয় লাগে নি। এরপর খুন করেছি যে আমাকে কিনেছিলো তাকে। বেরিয়ে আসি সেই নরক থেকে। হাটতে পারছিলাম না। পুরো শরীর নিস্তেজ হয়ে আছে। রাস্তায় ডাস্টবিন থেকে তুলে পচা – দুর্গন্ধময় খাবার খেয়েছি। জীবনে আর ও অনেক ধাপ পার হয়েছি। এক ধাপ শুধু বললাম তোমাকে?
ইয়ানার চোখ বেয়ে অজশ্র জলক্ণা গড়িয়ে পড়তে থাকে। এতটা কষ্ট কেউ সহ্য করতে পারে। এতটা সংগ্রাম করেছেন উনি তাও একজন মন্ত্রীর ছেলে হয়ে? ইয়ানার কান্নার ফলে হেচকি উঠার উপক্রম। নিজের কান্নাটাকে আটকে ফের প্রশ্ন করে,,,,,,
“” আপনার অতীত খুব ভয়ানক অগ্নি চৌধুরি।ছুঁয়েছিলেন কোনো নারীকে?
অগ্নি শান্তভাবে বলে,,,,,,
” এক পবিত্র নারীকে স্পর্শ করব বলে কোনো পরনারীকে স্পর্শ করার দুর্ভাগ্য হয়ে উঠে নি।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। সত্যি কি কাউকে ছুঁইনি।
ইয়ানা চোখের পানি মুছে বলে,,,,,
” আপনার সাথে তো কাকা – কাকিয়ে ছিলো এত কিছুর সম্মুখীন হলেন কিভাবে? আর আব্বু– আম্মু তারা তখন কোথায় ছিলো?
অগ্নি বিছানা থেকে উঠে বলে,,,,
” সেসব জেনে তোমার কাজ না। আর এইসব বলাটা আমার ডিউটি না। প্রশ্ন করো না আর।
অগ্নির এহেন কথায় ইয়ানা চুপসে যায়। নিজেই তো সবকিছু বলছিলো তাই প্রশ্ন করেছি।
ইয়ানা — সবসময় তো বলেন আমি আপনার স্ত্রী। তাহলে আপনার সম্পর্কে জানার কি অধিকার নেই আমার।
অগ্নি — অহেতুক জিনিস না জানলে ও চলবে।
ইয়ানা — এত বড় একটা সত্যি আপনার অহেতুক মনে হয়? ফিরিয়ে আনতে চাই আমি আপনাকে সেই পথ থেকে।
অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” তোমাকে বিয়ে করে এনেছি। আমার টিচার করে আনিনি।
ইয়ানা — অনেক সময় হতে হয়।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
“” নিষিদ্ধ জিনিসে পা দিও না ইয়ানা”
ইয়ানা — একটু দিতে চাই।
অগ্নি — ভেঙ্গে পড়বে।
ইয়ানা — আবার উঠে দাড়াব।
অগ্নি কিছুটা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,,
” এতটা জেদ কেনো তোমার?
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আপনার বউ তো । আপনি যদি মহা জেদী হন আমি কি একটু হতে পারব না? একটু হতে চাই। নাহলে আপনাকে সামলাব কিভাবে?
অগ্নি ব্লেজার হাতে নিয়ে বলে,,,,,
” আমাকে সামলানোর জন্য তোমার ভালোবাসার চাহনিই যথেষ্ট। কিন্তু এখানে ঘৃনা কাজ করে আজকাল।
ইয়ানা — সেটা আপনি ওই সৃষ্টি করেছেন।
অগ্নি আনমনে বলে উঠে,,,,,,,,,
সপ্নের মত এই জীবন
পার করছিলাম মিলে দুজন
সব ভেঙ্গে দেওয়ার কি ছিলো প্রয়োজন
জানি না কার পড়েছে নজর
তর আর আমার প্রেমের উপর
অগ্নি সকালে কাজের উদ্দ্যেশ্যে বের হয়ে যায়। অগ্নি চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পড়ে একটা মেয়ে ডাক্তার রুমে প্রবেশ করে। ডাক্তারকে দেখে ইয়ানা তাজ্জব বনে যায়। ডাক্তার এনেছে কেনো? মেয়েটার বয়স বেশি না। অগ্নিদের বয়সের হবে। মেয়েটা অনেক হাসিখুশি। মেয়েটা ইয়ানাকে দেখতে আসলে ইয়ানা বার বার বারন করে। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। এইসব জিনিস কেউ ডাক্তারকে দেখিয়ে ভালো করে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে বসেছে এই লোক। আর লজ্জা শরম ছিলো ওই কবে? ইয়ানার শরীরে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। মেয়েটা ইয়ানাকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” লজ্জা পেতে হবে না। আমি অগ্নির ভার্সিটির ফ্রেন্ড ছিলাম। মানে এক ক্লাসে ছিলাম আরকি? তাই আমাকে দেখে লজ্জা পেতে হবে না। আমি ও বিবাহাতি মেয়ে ওই। অবশ্য তোমার স্বামীর মত ডাক্তারের কাজে লাগায় নি।
মেয়েটা শব্দ করে হাসে।
ইয়ানা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে।
মেয়টা চলে যাওয়ার পর চারজন মহিলা রুমে প্রবেশ করে।
ইয়ানা হতাস হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
” কারা আপনারা?
মহিলাগুলো মাথা নিচু করে জবাব দেই,,,,,,,
“” স্যার আমাদের পাঠিয়েছে আজ সারাদিন আপনার দেখা শুনা করার জন্য।
মহিলাগুলোর কথা শুনে ইয়ানা মাথায় হাত দিয়ে বসে। ইচ্ছে করছে গিয়ে উনার মাথা ফাটাতে। কি ধরনের পাগলামো এইটা। উনার না হয় লজ্জা নেই আমার তো আছে? এখন তো দেখছি পুরো শহরের লোক জড়ো করে ফেলবে। সবাইকে দেখাবে দেখো আমি আমার বউকে কিভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছি। যে এখন বিছানা থেকেই উঠতে পারছে না। নির্লজ্জ লোক। ইয়ানা অগ্নিকে বিরবির করে হাজারটা গালি দেয়।
খোলা আকাশের নিচে গোল হয়ে বসে আছে অগ্নি, রায়হান, আতিক আর রানবীর। অগ্নির মুখে রাগ স্পষ্ট। কিন্তু তবুও শান্ত হয়ে মাথা নিচু করে জুতার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” আমার কথার উপেক্ষা কেনো করেছো তোমরা? মেয়েগুলকে পাচার কেনো করছো? বাচ্চাগুলোকে ও ছেড়ে দাও।
আতিক সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে বলে,,,,,,,
” সততা দিয়ে এই জগৎ চলে না। তর মত হার্টল্যাসের আবার সততা আছে?
অগ্নি রেগে বলে,,,,,,,,,
“” আমি দুনিয়ার সব পাপ কাজ করলে ও কখনো মেয়েদের সাথে খারাপ কিছু করি না। আর আমি চাই তোমরা ও করবে না। এইটা আমাদের কাজ না। আমাদের কাজ কখনো নারী পাচার বা শিশু পাচারের মধ্যে ছিলো না। আমি যতটা পাচার করেছি সেগুলো ভুলবশত।
রানবীর — এইটা আমাদের পুর্বপুরুষদের কাজ। আমরা ও করেছি অনেক বছর কিন্তু মাঝে বন্ধ করে দিয়েছিলাম।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
“” বন্ধ ওই থাকুক।
রায়হান — বিচলিত কেনো হচ্ছিস অগ্নি? ওদেরকে নিষিদ্ধ জায়গায় পাঠানো হবে না। ইতালির বিশ্ব বিখ্যাত ব্যবসায়ী তাদের বউ অসুস্থ তাই ওরা কিছু মেয়ে চাইছে । নিজেদের বউকে দেখে রাখার জন্য।
রায়হানের কথা শুনে অগ্নি ক্ষেপা চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
“” বউকে দেখাশুনা করার জন্য নিয়ে যাচ্ছে নাকি নিজের রক্ষিতা হিসেবে নিচ্ছে। আমাকে শিখাতে এসেছিস হ্যা?
আতিক তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলে,,,
“” শান্ত হ অগ্নি। কি চাস যাতে মেয়েগুলোকে পাচার না করি তাই তো? ওকে করব না শান্তি এইবার?
অগ্নি কিছুটা অবাক হয়ে মাথা নিচু করে টাইলসের দিকে তাকায়। ওর কথা এত সহজে স্বীকার করে নিলো। এতটা নরম মানুষ তো তুই নয় আতিক।
অগ্নিকে শান্ত দেখে আতিক প্রশ্ন করে,,,,,,,,,,
“” অস্ত্রগুলো দিচ্ছো না কেনো? ওরা একেক জন পাগল প্রায় হয়ে আছে।
অগ্নি চেয়ারে হেলান দিয়ে বাঁকা হেসে বলে,,,,,,,,,
” অপেক্ষা করাতে ইচ্ছে হয়েছিলো। ওদের নাস্তানাবুদ দেখে একটু মজা পাচ্ছিলাম। দক্ষিনের জঙ্গলের নিচে যে সুরঙ্গ আছে সেটার তেরো নাম্বার কক্ষে সবগুলো পেয়ে যাবে। আমি পাঠিয়ে দিয়েছি কাল। ওরা শুধু গেলেই দিয়ে দিবে।
রানবীর — তর বারন করা দেখে ভেবেছিলাম সিরিয়াস কেইস।
অগ্নি রায়হানের দিকে তাকায়। একদম তীক্ষ্ণ চোখে। অগ্নির কালোর মধ্যে হালকা ব্রাউন কালার চোখের কার্নিশ লাল রক্তের মত হয়েছে। অগ্নির শক্ত মুখশ্রি দেখে রায়হানের অন্তর আত্না কেঁপে উঠে। হাতে থাকা ওয়াইয়ান ঢক ঢক করে গিলে ফেলে। হাত কাঁপছে ওর।
রায়নের এমন অবস্থা দেখে অগ্নি রহস্য ময় হাসি দিয়ে রানবীরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,
” ভাই তোমার ছেলের মৃগী রোগের লক্ষন আছে। দ্রুত ডাক্তার দেখাও। নাহলে দেখবে কাঁপতে কাঁপতে মরে গেছে একদিন। শুনলাম কার সাথে নাকি হাত মিলিয়েছে। দেখো আবার জনির মত অবস্থা নি হয়ে যায়। মৃত্যু খুব সন্নিকটে ওর। কোনো এক কারনে আটকে আছে।
অগ্নি চলে যেতে যেতে কথাগুলো বলে যায়। রায়হান অবাক হয়ে অগ্নির যাওয়ার দিকে তাকায়। অগ্নি তাহলে সব জেনে গেলো ঝর্না আর আমার কাহিনী। কিন্তু কিভাবে জানলো?
রায়হানের ভাবনার মধ্যে রানবীর বলে,,,,,,,,,
“” কার সাথে হাত মিলিয়েছিস তুই?
রায়হান রানবীরের কথায় তার দিকে তাকায়। এখন এইসব বলা যাবে না। রায়হান প্রসঙ্গ পাল্টে বলে,,,,,,,,
“” ডেড তোমরা এত সহজে অগ্নির কথা মেনে নিলে। ও বলল আর তোমরা না করে দিলে? মেয়েগুলোকে ইতালি পাঠাবে না। মোটা অঙ্কের টাকা যে খেয়েছো এইগুলো কোথায় থেকে দিবে?
আতিক ওয়াইনের গ্লাসটা ঘুরিয়ে বলে,,,,
” আমাদের ছেলে হয়ে এত বোকা কেনো তুই? কখনো কোনো কাজ ফিরিয়ে দেই নি সেটা যতই অন্যায়কর কাজ হোক। আমাদের জন্য আবার ন্যায় অন্যায় আছে নাকি?
রায়হান — তাহলে অগ্নিকে যে বললে?
আতিক — ওকে শান্ত করার প্রয়োজন ছিলো। অগ্নি রেগে গেলে একটা মেয়েকে ও বাহিরে পাঠাতে দিবে না। এখন রাস্তা পরিষ্কার। কাল বা পরশু রাতে সবগুলোকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে । তবে সেটা যাতে অগ্নি টের না পায়।
রায়হানের এক বিকৃত হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
” একটু চেক করার দরকার ছিলো মেয়েগুলোকে।
রানবী — খবরদার মেয়েগুলোর দিকে তাকাবি না। ওদের কুমারি মেয়ে দরকার।
রায়হান চেয়ার থেকে উঠে বলে,,,,,
“” ওকে। প্রয়োজন নেই আমার।
আগ্নি বাড়িতে যায় রাত নয়টার দিকে। রুমে গিয়ে সোজা পাজা কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসে। অগ্নির এমন কান্ডে ইয়ানা অবাক হয়ে যায়। ইয়ানা নিজের কল্পনা থেকে বেরিয়ে এসে কপাট রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,,
“হঠাৎ করে বাজ পাখির মত এসে থাবা মারেন। ভয় করে না আমার।
অগ্নি—— এত ছোট কলিজা নিয়ে আমার সাথে তেজ দেখাও।
ইয়ানা — তার জন্য কলিজার দরকার নেই অধিকার ওই যথেষ্ট।কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এই রাতের অন্ধকারে।
অগ্নি ইয়ানাকে গাড়িতে বসিয়ে বলে,,,,
“”তোমাকে বিক্রি করতে ”
ইয়ানা খাপছাড়াভাবে বলে,,,,,
” ভালো কাস্ট্রমার দেখে দিয়েন। আপনার মত যাতে না হয়।
ইয়ানার কথায় অগ্নি দাঁড়িয়ে যায়। ইয়ানার এই সামান্য কথায় অগ্নি নিজের রাগের মাত্রা হারিয়ে ইয়ানার ঠোঁট দুটি আকড়ে ধরে। চুমু নয় শুধু দন্তের ঘর্ষন। ইয়ানা মুচকি হাসি দেই। ব্যাথায় ঠোঁট ছিঁড়ে যাচ্ছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। জানত ওর কথার পৃষ্ঠে এমন কিছুই হবে। অগ্নি ইয়ানার পিছনের চুলগুলো চেপে ধরে শক্ত করে চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয় দশ মিনিট পর । ইয়ানার ঠঁটে লাল লাল দাগ বসে গেছে। অগ্নি ইয়ানার মুখটাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,
‘ সাহস কি করে হয় তর ইয়ানা এমন কথা বলার? আমার জিনিস অন্যকে দেওয়ার অধিকার তকে কে দিয়েছে? যেখানে তর দিকে চোখ তুলে কেউ তাকাতে পারে না। যে ভুলে ও তাকায় তাকে আমি জনমের ঘুম পাড়িয়ে দেই। সেখানে তর দেহে কেউ স্পর্শ করবে সেটা তুই কিভাবে বলতে পারলি? বাঁচতে দিব আমি তকে? এতাটা ভালো মনে হয় আমাকে? শরীরকে না কেটে এসিডে ডুবিয়ে রাখব।
ইয়ানা — কারোর স্পর্শ পেতে ও চাই না।
অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দেই। এরপর পানির বোতল এগিয়ে দেয়। ইয়ানা বোতলটা হাতে নিয়ে বলে,,,,,
” কোথায় যাচ্ছি সেটা তো বললেন না?
অগ্নি গাড়ি স্টিয়ারিং ঘুড়িয়ে বলে,,,,,
” চৌধুরি ভিলায়।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,
“” মানে ‘
অগ্নি — মানে হচ্ছে তোমার শশুর বাড়ি। শশুর বাড়ি নিশ্চয় তোমার একটা। নাকি কাল রাতের মত বলে গননা করতে হবে স্বামী কয়টা আছে।
ইয়ানা চুপসে গিয়ে বলে,,,,,,
” আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না।
অগ্নি — স্বামীর থেকে যে আদর খেতে হয় সেটা ঠিক মনে ছিলো।
ইয়ানা কটমট চোখে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” নিজের মধ্যে ছিলাম না বলেই আবোল – তাবোল বকেছি। আমি আদর বলতে কি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে বুঝিয়েছিলাম। হয়ত বাচ্চাদের যেভাবে আদর ভালোবাসা দেই সেটা বুঝিয়েছি। কিন্তু আপনি তো একদম আমাকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য সেটা তো সবসময় বানান। এক সপ্তাহ লাগে নিজেকে ঠিক করতেই সাইকো একটা।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,
” নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে আগলে রাখি। এর পর ও যদি অসুস্থ হয়ে যাও সেটা আমার কি দোষ বলো? আমি ফুল দিয়ে আগলে নিতে জানি না ইয়ানা। আমি শিকল, ক্ষত আর রক্তমাখা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আগলে নিতে জানি।তুমি চেয়েছিলে ভালোবাসা আর আমি দিয়েছি ক্ষত আর উন্মাদনা মিশ্রিত এক পাগলামী।
ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। শরীরটা কেমন দুর্বল লাগছে। রাতে খাওয়ার পর জ্বরটা একদম কমে গিয়েছে। শরীরে তেমন ব্যাথা না থাকলেও হালকা পাতলা এখন ও আছে। ইয়ানাকে এইভাবে শান্ত হয়ে পড়তে দেখে অগ্নি অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,,
“” শরীর কি আবার খারাপ লাগছে? গাড়ি কি ঘুরাব? বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিবে?
ইয়ানা সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,,,,,
” সারাদিন তো একবারও খোঁজ নেন নি। এখন এত অধৈর্য হচ্ছেন কেনো? ঠিক আছি আমি।
ইয়ানার শান্ত বয়ান শুনে অগ্নি ইয়ানার মাথাটা সিট থেকে নিয়ে এসে নিজের বুকের কাছে রাখে। অগ্নির শক্তপোক্ত বুকে মাথা রাখতেই ইয়ানার শরীর শিউরে উঠে। অগ্নির পুরুষনালি শরীরের পারফিউমের ঘ্রান পুরো শরীর কেঁপে উঠে। কিন্তু নিজের মাথা তুলে না। কেনো জানি তুলতে ইচ্ছে করছে না। অনেক দিন পর এই বুকে মাথা রেখেছে সে। চোখ থেকে এক বিন্দু পারি গড়িয়ে পড়ে অজান্তেই।
অগ্নি ইয়ানার মাথায় চুমু খেয়ে বলে,,,,,
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩১
“” সারাদিন তুমি আমার অধীনে, আমার চোখের সামনেই ছিলে।
ইয়ানা অগ্নির কথা শুনেছে কি না জানা নেই। সে অন্য এক কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছে। শুনলে হয়ত অগ্নির কথার উত্তরটা দিত।