অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৫

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৫
লিজা মনি

ঢাকার শহরটা আজ একটু দেরি করে জেগেছে। যদিও বাইরে দূরে কোথাও গাড়ির হালকা শব্দ শোনা যায়, তবুও এই চৌধুরি ভিলার ভেতরে সময়টা ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।
একটা বিশাল বড় রুম। দেয়ালজুড়ে বইয়ের তাক, নরম আলোয় ভেসে থাকা পর্দা। সেই রুমের পশ্চিম দিকের জানালার ফাঁক দিয়ে ঢুকছে হালকা বাতাস। পর্দা ধীরে ধীরে দুলছে, বাতাসে এক মৃদু শীতলতা, সঙ্গে বাগান থেকে ভেসে আসা ফুলের ঘ্রাণ।

বাতাস এসে ছুঁয়ে যাচ্ছে বিছানায় রাখা সাদা চাদরে।খোলা ডায়েরির পাতাগুলো নড়ছে একটু একটু করে।টেবিলের কোণে রাখা কফির কাপ থেকে ধোঁয়া উঠছে নরম কুয়াশার মতো। ঘরের এক পাশে রাখা মানিপ্ল্যান্টের পাতা দুলছে বাতাসে।আর মাঝে মাঝে জানালার ফাক দিয়ে পাখির আওয়াজ এসে মিলিয়ে যাচ্ছে দূরের কোলাহলে।
বাড়িটার ভেতর যেন এক শান্তির ঘোরে ভেসে আছে। দেয়ালের উপর পড়া সূর্যের হালকা আলো ঘরটাকে সোনালী করে তুলেছে। ঘরের ভিতর কেউ একজন এখনো ঘুমে আচ্ছন্ন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এই বিশাল ঘর।হালকা বাতাস আর সকালের নিঃশব্দ বাতাস কিছু মিলে এক অদ্ভুত প্রশান্তির পরিবেশ। এইটা এক মায়াবী সকাল। যেখানে ঢাকাও একটু দম নেয়।একটু বিরাম দেয় জীবনের ব্যস্ততাকে। সুন্দর এই পরিবেশকে সাক্ষি রেখে আরামে শুয়ে আছে এক রমনী। এক ফালি আলো চোখের উপর পড়তেই পিটপিট করে তাকায় চারপাশে। কাঙ্খিত ব্যাক্তিটিকে কাছে না পেয়ে বিছানা থেকে উঠে বসে। হাত – পায়ে মনে হচ্ছে রক্ত হীম হয়ে আছে। পেটের উপর থেকে হট ব্যাগটাকে সরিয়ে বিছানা থেকে মেঝেতে পা নামিয়ে বসে। শরীরটা হালকা কেঁপে উঠে। মিনি টেবিলের উপরে রাখা কফি, সে সেদিকে তাকায়। কে রেখে গেছে? খাবারের পাশে ছোট একটা চিরকুট,,,,, ” আমি জিমে যাচ্ছি ঘুম ভেঙ্গে গেলে কফিটা খেয়ে পাশে থাকা ঔষধটা খেয়ে নাও।

ইয়ানা মলিন হেসে ফ্রেশ হয়ে আসে। এরপর অগ্নির কথামত কফি খেয়ে ঔষধ খেয়ে নেয়। ইয়ানা নিচে যাওয়ার জন্য দরজার কাছে যেতেই শিখা চৌধুরি প্রবেশ করে। শিখা চৌধুরি ইয়ানাকে ভালোভাবে দেখে বলে,,,,,,
” এখন কি অবস্থা তর? রাতে এইভাবে ব্যাথায় ছটফট করেছিস আমাকে ডাক দিবি না একবার? আহিয়া না বললে তো জানতাম ওই না। মেয়েটা তর সাথে দেখা করবে বলে এতক্ষন অপেক্ষা করে এই মাত্র স্কুলে গিয়েছে।
ইয়ানা শিখা চৌধুরিকে অধৈর্য হতে দেখে মিহি সুরে বলে,,,,,
‘ তেমন কিছু হয় নি আম্মু। যাস্ট একটু পেট আর পা ব্যাথা করছিলো। কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়ার পর এমনি ঠিক হয়ে গিয়েছে।
এরপর ইয়ানা আরও নিচু আওয়াজে বলে ,,,,,

” উনি হট ব্যাগ আর আঁদা দিয়ে চা করে দিয়েছিলো।
শিখা চৌধুরি মুচকি হাসি দিয়ে বলে ,,,,,,,
” অবিশ্বাস্য হলে ও এইটাই সত্যি কাল অগ্নি তর যত্ন করেছে। তর জন্য কিচেনে পা রেখেছে। অনেক খুশি আমি। আমি ও চাই আমার ছেলেটাকে তুই ঠিক কর। ওর সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুল। সে হারিয়ে গেছে অজানা পথে। তুই সেই পথ চিনিয়ে ফিরিয়ে আন ইয়ানা। আজ ও তর যত্ন নিয়েছে, কে বলতে পারে তর জন্য সব ছেড়ে দিলো।
ইয়ানা শিখা চৌধুরির দিকে তাকায়। চোখ থেকে টিপটিপ করে পানি জড়িয়ে পড়ে। শিখা চৌধুরিকে হালকা জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,

” উনার পুরো অস্তিত্ব ঢেকে গেছে আম্মু বর্বরতা আর পাপের চাঁদরে। খুব ভয়ংকর উনি। মাঝে মাঝে ভয় হয় প্রচুর কিন্তু কেনো জানি এরপর ও আমি সাহস দেখাতে পারি। জানি না কিভাবে ফিরিয়ে আনব তবে আনতে হবে। নাহলে বিনাস নিশ্চিত।
শিখা চৌধুরি ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,,

” তর উপর আমার ভরসা আছে। তুই পারবি। তর জন্য অগ্নির চোখে যেই ব্যাকুলতা আছে সেটা আর কারোর জন্য নেই। আর এই কারনেই তকে আমার ছেলের বউ করে এনেছে। ক্ষমা করে দে মা তকে এমন জীবন দেওয়ার জন্য।
ইয়ানা বুক থেকে মাথা তুলে বলে,,,,,
” এইসব কি বলছেন? ক্ষমা কেনো চাচ্ছেন? এতে আপনার বা আমার কোনো দোষ নেই। জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে বিধাতা লিখেন। আল্লাহ যার সাথে যার সাথে যার ভাগ্য জুড়ে দিয়েছেন। আর আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। আমি উনার সম্পর্কে সব জানতে চাই। উনার অতীত সব কিছু। কি এমন আছে উনার অতীতে? কিছু কাহিনী জানি তবে আবছা। তবে আমি পূর্নাঙ্গ কাহিনী জানতে চাই।
শিখা চৌধুরি হেসে বলে,,,,,,,

“” তকে অগ্নির বউ করে এনে কোনো ভুল করি নি।বুদ্ধিমতি মেয়ে তুই ইয়ানা। তর জায়গায় আমি থাকলেই মানিয়ে নিতে পারতাম না অথচ তুই সব জানার পর ও মানিয়ে নিচ্ছিস। বলব কোনো একদিন। এখন আমি অফিসে যাব। আর অগ্নির ও জিম থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে। তুই রুমেই বসে রেস্ট নে নিচে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
ইয়ানা — আম্মু আমি আজ একটু ভার্সিটি যেতে চাই। শুধু একবার দেখে চলে আসব। খুব মিস করছিলাম তাই।
শিখা চৌধুরি ইয়ানার নিচু আওয়াজ শুনে বলে।,,,,,,
” যদি তর সুস্থ মনে হয় নিজেকে তাহলে যাবি সমস্যা নেই। বাট অসুস্থ হলে খবরদার যাবি না। আর আমার ছেলের পারমিশন নিয়ে যাস নাহলে পাগলামো শুরু করবে।
ইয়ানা হালকা হেসে বলে,,,,,

” ওকে আম্মু।
শিখা চৌধুরি চলে যায়। ইয়ানা দরজাটা হালকা লাগিয়ে দিয়ে পুনরায় বিছানায় গিয়ে বসে।
কিছুক্ষন পর অগ্নি রুমে প্রবেশ করে। শরীরে জিম ড্রেস। হাতা কাটা গেঞ্জি ফলে পেশিবহুল হাত দৃশ্যমান। গলার নিচে ড্রাগনের ট্যাটু, হাতে আগুনের শিখার ট্যাটু ঘামের সাথে চিকচিক করছে। পুরো ড্রেস ভিজে জবজব। ঘাড় আর কপাল পর্যন্ত চুলগুলো ল্যাপ্টে আছে শরীরের সাথে ল্যাপ্টে আছে।
ইয়ানাকে উঠতে দেখে অগ্নি এগিয়ে এসে বলে,,,,,

” ব্যাথা কমেছে?
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে চোখগুলো অসম্ভব রকমের লাল। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে আনমনে বলে,,,,,,
” ঘুমান নি, না সারারাত?
অগ্নি ইয়ানার কপালে হালকা চুমু খেয়ে বলে,,,,,
” সেই চিন্তা তোমার করতে হবে না। একটানা রাত জাগার অভ্যাস আছে আমার।
ইয়ানা — মানুষ না রোবট আপনি?
অগ্নি হালকা হেসে বলে,,,,,
“” কি মনে হয়?
ইয়ানা — নিজেই বুঝে উঠতে পারি না।
অগ্নি — ব্যাথা কমেছে?
ইয়ানা — হুম।

অগ্নি কিছু বলে না। একজন স্টাফকে আদেশ করে খাবার দিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নেওয়ার জন্য। কিছু সময় অতিবাহিত হলে শাওয়ার শেষ করে একটা সাদা টাওয়াল পেচিয়ে বের হয়। পুরো শরীরে পানি চিকচিক করছে।
ইয়ানা অগ্নির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে,,,,,
” লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে সাধারন টাওয়াল পেচিয়ে চলে আসতে??
অগ্নি এক পলক পিছনে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে পুনরায় সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,,,,,,,,
” সেই মেয়েটা আমাকে টাওয়াল ছাড়াই দেখেছে তাই সাধারন টাওয়াল পেচিয়ে আসতে ও লজ্জা লাগে না। এখন তোমার যদি লজ্জা লাগে তুমি বেরিয়ে যেতে পারো আটকে রাখিনি। যা দেখার সব তো দেখেই নিয়েছো আর কি দেখবে।

ইয়ানা চোখ মুখ খিঁচে ফেলে। ভুলে গিয়েছে সে কার সামনে কথা বলছে। নির্লজ্জের সীমা পার করে যাওয়া অগ্নি চৌধুরি উনি। যে পুরো দুনিয়ার খুব ব্যাক্তিত্ববান আর লজ্জাশীল কিন্তু উনি যে কত বড় নির্লজ্জ সেটা আমার থেকে ভালো কে জানবে? মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে পুরো এলাকাকে মাইকিং করে জানাতে যাকে আপনারা সুশীল ভাবছেন সে মাথা থেকে পুরোটাই বেশরম। এখানে শুধু আমার সম্মান জড়িয়ে আছে বলে আজ চুপ আছি।
ইয়ানা প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে ,,,,,,,,
” আপনার শরীরে এত আঘাত পেয়েছেন ক্ষতের দাগ কোথায়?
অগ্নি — জানার প্রয়োজন আছে?
ইয়ানা — হু।
অগ্নি — সার্জারি করিয়েছি।

ইয়ানা কিছুটা অবাক হয় তবে কিছু বলে না। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে পুনরায় বিছানায় গিয়ে বসে। কিছুক্ষনের মধ্যে স্টাফ এসে খাবার দিয়ে যায়। অগ্নি খাবারের প্লেটটা নিয়ে ইয়ানার পাশে বসে। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছে। অগ্নি ইয়ানার তাকানো দেখে বলে,,,,,
“” খাইয়ে দিব নাকি জানোয়ারের হাতে খেতে তোমার ঘৃনা লাগবে?
ইয়ানা একই ভঙ্গিতে বলে,,,,,
” ঘৃনা করা সত্তেও যদি তার বক্ষে মাথা রেখে নিরাপদে ঘুমাতে পারি তাহলে তার খাইয়ে দেওয়া খাবার খেতে পারব না কেনো?
অগ্নি ইয়ানার মুখ খাবার দিয়ে বলে,,,,,,
” করতে থাকো ঘৃনা সমস্যা নেই। ঘৃনা করতে করতে যদি তোমার শরীরে পোকা ও ধরে যায় আমার কিছু হবে না।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,

” খেতে বসেছি মি,চৌধুরি। পোকার কথা তোলেন কেনো?
ইয়ানার নাক মুখ কুচকানো দেখে অগ্নি গম্ভীর হাসে। খাওয়া শেষ হলে ইয়ানাকে পানি খাইয়ে দিয়ে অগ্নি উঠে দাঁড়ায়। এরপর স্টাফকে আদেশ করে সবকিছু পরিষ্কার করে দিয়ে যাওয়ার জন্য। ইয়ানা স্টাফের উদ্দ্যশে বলে,,,,
” আন্টি আলিয়া কোথায়? ওকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো?
স্টাফ নিচু আওয়াযে বলে,,,,
” আলিয়া এক আত্নীয়র বাড়িতে গেছে কয়দিনের জন্য। আইসা পড়বে কয়দিনের ভিতরেই।
ইয়ানা — ওহহ আচ্ছা। ঠিক আছে যান আপনি।
স্টাফ চলে যেতেই ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

” শুনছেন?
অগ্নি ইয়ানার নরম কন্ঠে সেদিকে তাকিয়ে বলে,,,
” হুম বলো।
ইয়ানা কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,,,,
” আমি আজ ভার্সিটি থেকে ঘুরে আসি?
অগ্নি কপাল কুচকে ফেলে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,
” কি বলছিলে আবার বলো? বিড়াল মারার লাঠি আমার ডিভানের পিছনে এখন ও আছে।
অগ্নিকে এইভাবে আসতে দেখে বলে,,,,
” গেলে সমস্যা কোথায়? অনেকদিন ধরে কারোর সাথে দেখা হয় না। ভার্সিটিটাকে অনেক মিস করছিলাম একটু ঘুরে আসি।
অগ্নি কিছুটা ধমক দিয়ে বলে,,,,,

” হাউ ডিয়ার ইউ ফা*কিং ইয়ানা। তুমি অসুস্থ সেটা ভুলে গিয়েছো স্টুপিড।
ইয়ানা অগ্নির ধমকে কিছুটা কেঁপে উঠে। আরে বাবা অসুস্থতা কি সারাজীবন থাকে নাকি আশ্চর্য। ইয়ানা বিছানা থেকে উঠে অগ্নির পিছনে গিয়ে জড়িয়ে ধরে। উদ্দ্যেশ্য অগ্নিকে রাজি করানো। আর সেটা যে কোনো মূল্যেই রাজি করিয়ে ছাড়বে। ইয়ানা জড়িয়ে ধরলে অগ্নি ইয়ানাকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,
” দুর্বল করতে এসেছো আমাকে হ্যা?
ইয়ানা পুনরায় অগ্নির এক হাত নিজের হাতের মুঠোই নিয়ে বলে,,,,,,
” এইটা সাধারন একটা সমস্যা যা সব মেয়েদের ওই হয়। তাই বলে রুমে ঘাপটি মেরে বসে থাকব। প্রথম দিন ব্যাথা হয় কিন্তু পরে তো স্বাভাবিক হয়ে যায়। ট্রাস্ট মি আমি একদম সুস্থ।
অগ্নি ইয়ানার দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,
‘ এত ঘার ত্যারা কেনো তুমি?
ইয়ানা আনমনে বলে,,,,,

” আপনার পাজরের দোষ। আপনার পাজরের মাংসতে সমস্যা আছে তাই আমি এমন।
অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর গম্ভীর কন্ঠে বলে ,,,,,,
” আমার পাজরের অংশ থেকে হয়েছো এইটা তোমার জন্য খারাপ লাগছে না। একজন পাপী, খুনির পাজরের থেকে তোমার সৃষ্টি ভেরি বেড ইয়ানা।
ইয়ানা শান্ত চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। কি বলবে ও? বলার মত কি কোনো ভাষা আছে ওর কাছে। ভিতরটা এইভাবে কাঁপছে কেনো আমার?
ইয়ানা নিচু আওয়াজে বলে,,,,,,
” কথা পাল্টাবেন না মি, চৌধুরি। আমাকে যেতে দিন। কথা দিচ্ছি আপনাকে বেশিক্ষন থাকব না পুনরায় চলে আসব।
অগ্নি গায়ে ব্লেজার জড়াতে জড়াতে বলে,,,,,

” যাও।
অগ্নির “যাও” শব্দটা শুনে ইয়ানা মাথা তুলে অবিশ্বাস্য নজরে তাকায় । ও তো ভেবেছিলো আরও কাঠকোঠ পোড়াতে হবে। কিন্তু সত্যি চৌধুরি রাজি হয়ে গেলেন।
ইয়ানা — যেতে বলছেন?
অগ্নি — যাও। তোমার উপরে নজর তো আমার সবসময় আছে। হাসি – তামাসা, ঢলাঢলি কম করবে।
ইয়ানা এক গাল হাসি দিয়ে অগ্নির ক্লিন শেইপ গালে টুস করে একটা চুমু খায়। চুমু খেয়ে সে নিজেই হতভাগ । উত্তেজনার ফলে তার খেয়াল ছিলো না। অগ্নিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা কিছুটা লজ্জা পেয়ে সেখান থেকে চলে আসতে নিবে তখন ওই অগ্নির বাহুতে সে আবদ্ধ হয়ে যায়। ইয়ানা অগ্নির গভীর চাহনীতে শুকনো ঢোক গিলে। ইয়ানা তিরতির করে কাঁপছে। অগ্নির দিকে তাকিয়ে কিছুটা আমতা আমতা করে বলে,,,,
” ছা.. ছাড়ুন। আপনি আটকে….

আর বলতে পারে নি তার আগেই তার ঠোঁট আটকা পড়ে অগ্নির ঠোঁটের ভাঁজের মধ্যে। ইয়ানা চোখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। অগ্নি আলতো স্পর্শে ইয়ানার ঠোঁট নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে। একদম হালকাভাবে ধীরে ধীরে চুমু খেতে থাকে। ইয়ানার হাত চলে যায় অগ্নির ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলের ভিতরে। নিজের পা দুটি উঠে আসে অগ্নির পায়ের উপর। ইয়ানার ভিতরে কাঁপছে। শরীর যেনো অবশ হয়ে আসছে। প্রায় দশ মিনিট পর অগ্নি ইয়ানার ঠোঁট ছেড়ে তার দিকে তাকায়। এরপর ইয়ানাকে কাউচের উপর বসিয়ে তার চোখে গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। এক হাত কাউচের উপর রেখে আরেক হাত ইয়ানার চুলের ভিতরে। ইয়ানা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে অগ্নির পাগলামো। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। অগ্নি পুনরায় ইয়ানার ঠোঁট আকড়ে ধরে। তবে এখন নরম নয় কামড়াতে থাকে। তবে সেটা ইয়ানার সহ্যের ভিতরে । ইয়ানা ব্যাথায় নাক মুখ কুচকে ফেলে। দুই হাত দিয়ে অগ্নির ব্লেজার খামচে ধরে রাখে। সেকেন্ড যায়, মুহুর্ত যায়। ইয়ানা এক পাশে হেলে পড়ে। কিছুক্ষন পর অগ্নি নিজেকে থামিয়ে ছেড়ে দেয় ইয়ানাকে। ইয়ানার চোখে পানি চিকচিক করছে। অগ্নি ইয়ানার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,,,,

” গুরুত্বপূর্ন কাজে যাব তাই ছেড়ে দিলাম। রাতে ফিরব তখন রেডি থাকো।
ইয়ানা মাথা নিচু করে রাখে। অগ্নি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোন বেজে উঠে কাউচের উপর। ফোনের শব্দ পেয়ে অগ্নি আর ইয়ানা এক সাথে তাকায়। মোবাইলের স্ক্রিনে” আতিক ভাই” নামটি ভেসে উঠে। আতিক নামটি দেখেই ইয়ানার বুক কেঁপে উঠে। কোন আতিক উনি? চট্টগ্রামের সেই নরপিশাচ। তার সাথে উনার কি সম্পর্ক? আতিক ভাই দিয়ে কেনো সেইভ করা? ভাই লাগে উনার। ইয়ানা কিছু বলার জন্য অগ্নির দিকে তাকায়। কিন্তু অগ্নি ততক্ষনে রুমে ত্যাগ করে। ইয়ানা চিন্তায় নিজের চুল খামচে ধরে। বুকের ভিতরে হাহাকার করে উঠে। আতিক নারী ব্যবসা, শিশু পাচার এইসবে জড়িত। উনি ও কি তাহলে? নাহহ! ইয়ানা আর ভাবতে পারছে না। এমন হলে সে কি করবে?

ইয়ানা ভার্সিটিতে প্রবেশ করেই এক আলাদা শান্তি অনুভব করে। কতদিন পর এই চিরচেনা ভার্সিটিতে এসেছে সে। আর কোনোদিন আসতে পারবে কি না সন্দেহ। হঠাৎ পরিচিত কারোর সাক্ষাৎ পেয়ে ইয়ানা চমকে উঠে। হল্লা পার্টির উদ্দেশ্যে বলে ,, তরা এখান একটু ওয়েট কর আমি এক্ষনি আসছি। ইয়ানা এক দৌড়ে চলে যায় কাঙ্খিত ব্যাক্তিটির কাছে। ইয়ানা কাছে গিয়ে বলে,,,,,,,
” মিরা!
মেয়েটি ও ইয়ানাকে দেখে চমকে উঠে। আবেগ প্রবন হয়ে ইয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,,,
” ওহহ ইয়ানা কি খবর তোমার? কেমন আছো? তোমার মোবাইলে বার বার ফোন দিয়েছি কিন্তু বার বার সুইচ অফ দেখাচ্ছে।
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ মিরা। তোমার কি অবস্থা? আমার আগের ফোন বা সিম কোনোটাই আমার কাছে নেই। তোমার সাথে ও বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু পরিস্থিতির চাপে আমি ব্যার্থ। বাট তুমি বাংলাদেশে?
মিরা — আমি এসেছি দেড় মাস হবে। চলে যাব আবার এক বছর পর। এখানে আমার জরুরি কিছু ক্লাস আছে তাই প্রতিদিন আসা। তোমরা কবে আসলে?
ইয়ানা — বেশিদিন হয় নি দশ বারোদিন হবে।
মিরা — আচ্ছা।
ইয়ানা — মিরা।
ইয়ানার এমন গম্ভীর কন্ঠে মিরা ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” হুম বলো ইয়ানা। চলো একপাশে বসে কথা বলি। অনেকদিন পর দেখা।
ইয়ানা মিরার সাথে এক পাশে গিয়ে বসে এরপর গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করে,,,,,,,,
” তুমি জানতে মিরা?
চারদিকে কোলাহলের মধ্যে ও এক পিনপিন নিরবতা। মিরা কিছুটা কপাল কুচকে বলে,,,,,,,
” অর্থাৎ?
ইয়ানা — তুমি মি, চৌধুরিকে আগে থেকে চিনতে?
মিরা আমতা আমতা করে বলে,,,,,,,

” আমি কিভাবে জানব? তুমি নিজেই তো আমার সাথে পরিচিত করালে।
ইয়ানা — আমি আমার হাজবেন্ড অগ্নি চৌধুরির সাথে পরিচিত করিয়েছিলাম মাফিয়া অগ্নি চৌধুরির সাথে নয়।
মিরা ইয়ানার দিকে চট করে তাকায়। এরপর মিহি আওয়াজে বলে,,,,,,
“” আমি ভাইয়াকে প্রথম চিনি নি। পরে চিনেছি উনি আসলে কে?
ইয়ানা — আমাকে বললে না কেনো?
মিরা ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,

‘ ভাইয়া নিষেধ করেছিলো। বলতে চেয়েছিলাম আমি তোমাকে। তোমার মনে আছে ইয়ানা কানাডায় তোমাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম? তখন চিনেছি। কারন অগ্নি চৌধুরিকে সবাই হুডি আর মাক্স পড়া মাফিয়া স্টাইলেই চিনে। সাধারন পোশাকে উনাকে কেউ চিনে না আমিও চিনি নি। কিন্তু ভাইয়ার মুখে সেদিন মাক্স ছিলো। আমার সামান্য সন্দেহ হয়েছিলো। এই সন্দেহ তখন বিশ্বাসে পরিনত হয় যখন ভাইয়া আমাকে ইশারা দিয়ে না করে।
তুমি কিভাবে জেনেছো?
ইয়ানা তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,,,,,,,,,
” খুন করতে দেখেছিলাম আর ও অনেক ভয়ানক কিছুর সাক্ষী হয়েছি।
মিরা আৎকে উঠে বলে,,,,,,,,

“” খু…ন!
ইয়ানা — আজ নতুন শুনলে? তুমি জানতে না উনি যে খুন করে? আশ্চর্য কেনো হয়েছো?
মিরা মাথা নিচু করে বলে,,,,,,
” হু জানতাম। তুমি নিজের চোখে দেখেছো তাই আশ্চর্য হয়েছি।
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

” ধীরে ধীরে আরও অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হচ্ছি। জানো মিরা যেদিন আকি উনাকে ওই অবস্থায় দেখেছি ওইদিন ওই আমি থমকে গিয়েছি। আমি তাকে এখনও ভালোবাসি… এই সত্যটাই সবচেয়ে ভয়ংকর। কারণ আমি জানি আমি যাকে ভালোবাসি সে একজন খুনি। আমি জানি, তার স্পর্শে রক্তের গন্ধ আছে। তবুও আমার মন চায়, সে যেন ফিরে এসে বলে”সবটা ভুল ছিল”। কিন্তু জানি সে আর ফিরবে না। সে হারিয়ে গেছে অন্ধকারের ভিতরে।
হারিয়ে যাচ্ছি আমি মিরা। ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছি এক অন্ধকার কূপ ভবনে সহ্য ক্ষমতা আমার বাহিরে চলে যাচ্ছে। যে জিনিসকে আমি সব থেকে বেশি ঘৃনা করতাম সেটাই কেনো আমার ভাগ্যে আসলো মিরা? এমন কিছু তো আমি চাই নি। আমি চেয়ছিলাম স্বাভাবিক জীবন। অন্যায় দেখে আমি রুঁখে দাড়াতাম। ঘৃনিত চোখে তাকে দেখতাম। অথচ এক গ্যাংস্টারের সাথে আমার বসবাস। কি করে আমি নিজের মনকে থামিয়ে রাখব মিরা?
ইয়ানা ফুঁপিয়ে উঠে। মিরা ইয়ানার হাত ধরে বলে,,,

” কান্না করো না ইয়ানা। তোমার জায়গায় আমি থাকলে হয়ত তার থেকে আর ও বেশি ভেঙ্গে পড়তাম। কিন্তু সবার উর্ধ্বে ভাইয়া তোমাকে ভালোবাসে। অসম্ভব পাগল তোমার জন্য ইয়ানা। আমি ভাইয়ার চোখে সেই কামনা আর ব্যাকুলতা দেখেছি। যেদিন পার্কে লোকগুলো আমাদের সাথে অসভ্যতামি করেছিল ওইদিন তুমি ভাইয়ার ভয়ে হয়ত মাথা নিচু করে চুপ ছিলো কিন্তু ভাইয়ার চোখের ক্রোধ দেখো নি। তোমাকে হারানোর হাহাকার দেখো নি। আমি যতবার ভাইয়াকে দেখেছি ঠিক ততবার মুগ্ধ হয়েছি। একজন মাফিয়া কিভাবে একটা সাধারন মেয়েকে এতটা ভালোবাসতে পারে। প্রথমে আমার ও ভয় হত তোমাকে নিয়ে। কিভাবে, কেমন আছো? তাই তোমাকে বার বার জিজ্ঞাসা করতাম” তুমি সুখে আছো তো ইয়ানা ” কিন্তু তোমার মুখে সবসময় এক অমায়িক হাসি লেগে থাকত। বুঝতে পারলাম তোমাকে ভাইয়া চোখে হারায়। উনার প্রত্যেকটা পাগলামো দেখে শুধু আমি হাসতাম যা আমাকে খুব ভাবাতো। তুমি ভাইয়াকে আঘাত করো না ইয়ানা। ভাইয়া ভেঙ্গে পড়বে। বাজে ভাবে ভেঙ্গে পড়বে। বাবা – মা থাকা সত্তে ও তোমার মধ্যে উনার শেষ আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে।

ইয়ানা মাথা নিচু করে এতক্ষন মিরার কথাগুলো শুনছিলো। এরপর মাথা উঠিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
“” জানি না ভবিষ্যত কি। তবে আমার দাঁড়িয়ে থাকার খুঁটি নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। দোয়া করো মিরা যাতে আল্লাহ আমাকে সীমাহীন ধৈর্য দান করেন। নাহলে আমি মুখ থুবরে পড়ব। হারিয়ে ফেলব নিজের গন্তব্য।
মিরা মুচকি হাসি দিয়ে আশ্বাস দেয়।
ইয়ানা উঠে বলে,,,,,,
” চলো মিরা আমার বাদরবাহিনীর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই।
মিরা — হুম চলো।
এরপর নিজেকে স্বাভাবিক করে ইয়ানা মিরাকে নিয়ে হল্লা পার্টির কাছে যায়। মিরা সবার সাথে পরিচিত হয়। হল্লা পার্টিও খুব খুশি নতুন একজন বন্ধু পেয়ে। ইয়ানার থেকে অনেক শুনেছে মিরার কথা। তারা আজ চোখে দেখতে পেয়েছে। মিরা চলে যায় নিজের কাজের উদ্দ্যশ্যে।
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আছে ইয়ানা, আরোরা, সুমাইয়া, আকাশ আর রুহান।
আরু ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,

” কিরে রাসেদ স্যারের সাথে দেখা করবি? তুই তো উনার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রী ছিলি। তর চলে যাওয়ার পর স্যার প্রায় সময় তর কথা জিজ্ঞাসা করত।
ইয়ানা আরুর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
‘ চল তাহলে যাওয়া যাক।
আরু হাসিমুখে বলে,,,
‘ চল। এখন সবাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত। অফিস রুমে এ বেশি স্যার থাকবে না। এই সুযোগ স্যারের সাথে দেখা করার।
আকাশ — তুই আর ইয়ানা যা। আমি, সুমু আর রুহান এখানে বসি। দেখা করে আয়।
ইয়ানা — ওকে।

এরপর আরু আর ইয়ানা মিলে অফিস রুমের দিকে যায়। ইয়ানা রুমের সামনে গিয়ে উকি দেয়।রাসেদ স্যার আর আর প্রফেস্যার বসে আছে। তারা সামনে কারোর সাথে কথা বলছে। ইয়ানা দরজায় নক করে বলে,,,
” মে আই কাম ইন স্যার।
ইয়ানার কন্ঠ পেয়ে রাসেদ স্যার সহ সবাই তার দিকে তাকায়। রাসেদ স্যার ইয়ানাকে দেখে হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আরে ইয়ানা যে। ইয়েস কাম।
ইয়ানা আর আরু অফিসের ভিতরে প্রবেশ করে। ইয়ানা স্যারদের সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,
” কেমন আছেন স্যার।
রাসেদ স্যার — এই তো আলহামদুলিল্লাহ। তোমাকে অনেক মিস করছিলাম যাক অবশেষে তাহলে দেখতে পেলাম। কোথায় ছিলে এতদিন?
ইয়ানা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,,,,

‘ আমিও অনেক মিস করেছি আপনাদের পড়াগুলো সাথে আপনাদের ও । আমি বাহিরে ছিলাম স্যার।
রাসেদ স্যার — বাহিরে কোথায় গিয়েছিলে?
ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই কারোর কর্কশ কন্ঠ কানে ভেসে উঠে।
” আপনাদের মিস করা বন্ধ হলে ক্লাসে চলে যাবেন। ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছে মি, রাসেদ।
এই রাগান্বিত কন্ঠস্বর তার খুব পরিচিত । এত গম্ভীর স্বর শুধু একজন পুরুষের এই। কন্ঠে এত হুংকার কেনো? ইয়ানা চট করে তার দিকে তাকায়। সাথে সাথে আশ্চর্যে চোখ বড় হয়ে যায়। কিন্ত একবার ও অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায় নি। এমনভাবে বসে আছে যেনো তাকে চিনেই না। ইয়ানা কিছুটা অবাক হয় অগ্নির ব্যবহারে। অগ্নির এমন খাপছাড়া স্বভাবে কিছুটা কষ্ট ও পায়। কিন্তু উনি এখানে কি করছেন? ওহহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম এখানে উনি প্রফেস্যার ছিলেন কয়েকদিনের জন্য। হয়ত কাজে এসেছে কোনো? উনি তো প্রফেস্যার হয়েছিলেন নিজের স্বার্থে। তাহলে এখানে উনার আবার কি কাজ থাকতে পারে?
ইয়ানার ভাবনার মাঝে রাসেদ স্যারের কন্ঠ ভেসে আসে,,,,,

” ওকে স্যার তাহলে আপনি ক্লাস নিন। ইয়ানা তোমার সাথে পড়ে কথা হচ্ছে।
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” জি স্যার অবশ্যয়।
রাসেদ স্যার রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অগ্নি আর প্রফেস্যার স্যার কিছু কথা বলছেন। ইয়ানা অগ্নির এমন নিরব ব্যবহারে কিছুটা আশ্চর্য হয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।
ইয়ানাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অগ্নি গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,
” গুরুত্বপূর্ন কথা হচ্ছে এখানে। বাহিরের মানুষ এলাউ না। যাস্ট আউট রাইট নাউ।

অগ্নির লাস্ট ধমকে ইয়ানা কেঁপে উঠে। অপমানে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। এইভাবে বলতে পারলো উনি আমাকে? সুন্দর করে বললেই তো আমি বেরিয়ে যায়। এইভাবে অপমান করার কি অর্থ?
ইয়ানা বিনা শব্দে কক্ষ থেকে বেরিয়া যায়। আরু ইয়ানাকে থামিয়ে বলে,,,,,,
” ভাইয়া তর সাথে এমন অপরিচিতদের মত ব্যবহার করেছে কেনো ইয়ানা? তদের সম্পর্ক কি ঠিক নেই?
ইয়ানা নিজেকে শক্ত করে বলে,,,,,
” আরু যা দেখেছিস কাউকে কিছু বলিস না। সব ঠিক আছে। উনি কিছু নিয়ে রাগ করলে এমন ব্যবহার করেন । ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু কাউকে কিছু বলিস না।
আরু — অনেক বুঝিস ভাইয়াকে।
ইয়ানা মলিন হাসে।

ঝর্না একটা বাড়িতে এসে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে। রুমে ডুকে কাউকে নিষিদ্ধ সম্পর্কে লিপ্ত হতে দেখে বিরক্তিতে পুনরায় রুমে থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর দরজা ধাক্কা দিয়ে বলে,,,,,,,
” রায়হান। রায়হান! শুনতে পাচ্ছো? তামাসা বন্ধ করো। নিজের হুসে আসো। দরকারি কথা আছে।
ঝর্নার উচ্চস্বরে কথা বলা রায়হানের কানে পৌছাতেই রায়হান বিরক্তি নিয়ে মেয়েটার উপর থেকে উঠে পড়ে। এরপর একটা গেঞ্জি আর প্যন্ট পড়ে মেয়েটাকে ইশারা করে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে। মেয়েটা রায়হানের ইশারা পেয়ে খাট থেকে নেমে নিজের জামা পড়ে বেরিয়ে যায়। দরজার কাছে মেয়েটিকে ঝর্না বেরিয়ে যেতে দেখে বিরবির করে বলে,,,,,,
” দুনিয়ার মধ্যে আর কোনো ছেলে পায় না এই হাদারামের কাছেই আসতে হয় তদের। এর কাছে ও নাকি মেয়েরা নিজেদের বিলিয়ে দেয় হাস্যকর।
এইসব ভাবতে ভাবতে ঝর্না রুমে প্রবেশ ডিভানে বসে বলে,,,,,,,
” এইভাবেই কি মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করবে। কাজের কথা কিছু ভেবেছো? অগ্নি চৌধুরি কানাডায় নেই বাংলাদেশ গিয়েছে। আর এখানে বসে বসে তুমি মেয়ে নিয়ে খেলা করছো বি*চ।
রায়হান কিছুটা রেগে বলে,,,,,,,,

” খবরদার গালি দিবে না। মেয়ে আমার এক নেশা যেটা আমার প্রতিদিন প্রয়োজন হয়। তুমি নিজেও কুমারি নও তাই অন্যকে গালি দেওয়ার আগে নিজের দিকে ভাবো ফা” গার্ল।
ঝর্না চুপসে গিয়ে বলে,,,,,
‘ বাদ দাও এইসব কথা। আমি আজ রাতে বাংলাদেশ যাচ্ছি। সাথে আমার ভাই রেশব মালিথা যাচ্ছে। ভাইয়া যাচ্ছে কাজে আর আমি ভাইয়ার সাথে যাব।
রায়হান গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে বলে,,,,
“” গুড নিউজ।
ঝর্না বিকৃত হাসি দিয়ে বলে,,,,
” কিছুটা।

পুরো ক্লাস পিনপিন নিরবতা। কারন অগ্নি চৌধুরি তাদের ইংলিশ ক্লাস নিবেন। ইয়ানা ও সেই ডিপার্ট মেন্টে হল্লা পার্টির সাথে বসে। আগের থেকে স্যার এলার্ট দিয়ে যায় কোনো হাঙ্গামা যাতে না করে। মেয়েদের মুখে হাসির ঝিলিক। কতদিন পর তারা তাদের ক্রাশকে দেখতে পাচ্ছেন। মেয়েদের এমন লাফালাফি ইয়ানার বিরক্তি হয়ে পড়ে। ওর চোখের সামনে ওর স্বামীকে নিয়েই তামাসা হচ্ছে। কেউ বলছে অগ্নি চৌধুরিকে দেখলেই ইচ্ছে করে তার ফর্সা ত্বকে চুমু খেতে, কেউ বলছে ,, ইচ্ছে করে হাত ধরে হাটতে। আর ও অনেকে অনেক কিছু বলছে। ইয়ানা নিজের ধৈর্য হারিয়ে হল্লা পার্টির উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,

” অসহ্য লাগছে আমার এইসব দেখে। মেয়ে মানুষ এত বেহায়া কিভাবে হয়? এমন অশ্লিল শব্দ প্রয়োগ করছে। আমি চৌধুরি ভিলায় ফিরে যাচ্ছি তরা ক্লাস কর।
ইয়ানা উঠে যেতে নিবে আকাশ আটকে দিয়ে বলে,,,,,
” বাদ দে এইসব। তুই নাহলে বলে দে যে ভাইয়া বিবাহিতা। আর তুই উনার ওয়াইফ তাহলেই তো আর কোনো কথা হবে না।
অকাশের কথা শুনে ইয়ানার মনে পড়ে যায় অগ্নির কিছুক্ষন আগে করা ব্যবহারের কথা। ইয়ানা কিছুটা বিষিয়ে বলে,,,,,,

” কি প্রয়োজন আছে এইসব বলে। যা ইচ্ছে বলতে থাকুক তারা।
আরু ইয়ানার অবস্থা বুঝে বলেন,,,,,
” কানে নিস না এইসব কথা। এখন ওই ভাইয়া এসে পড়বে। ওইদিকে ফোকাস কর। কোনোদিন তো ক্লাস করিস নি ভাইয়ার। আজ নাহয় বউ হয়ে করে যা।
ইয়ানা নিশ্চুপ হয়ে বসে। আসলেই নিয়তি কোথায় নিয়ে যায়। এই মানুষটাকে সে দেখতে পারত না। কারন সে তাকে পদে পদে অপমান করত। আর তাকেই বিধাতা তার ভাগ্যে জুড়ে দিয়েছে। ভালোবাসা হলো, মহব্বত বাড়লো আবেগ আর ও তীব্র হলো। কিন্তু হঠাৎ করেই সবকিছু আবার ভেঙ্গে গেলো।

ইয়ানার ভাবনাতেই অগ্নি ক্লাসরুমে প্রবেশ করে। মুখে এক রাশ গম্ভীরতা। পুরো ক্লাস জুড়ে নিরবতা। নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। সবাই অগ্নিকে সম্মানের সহিত সালাম জানালে অগ্নি হাতের ইশারায় বসতে বলে। সবাই বসে যায়। ইয়ানা এক পলক তাকায় তার দিকে। কিন্তু অগ্নির দৃষ্টি ছিলো বইয়ের মধ্যে।
অগ্নি ইংরেজীতে কিছু লেকচার দেয়। কিন্তু পুরোটায় গম্ভীরভাবে। মেয়েগুলো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলো। কেউ কেউ লুকিয়ে ছবি তুলে নিচ্ছে। ইয়ানা বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
একটা মেয়ে অগ্নির উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,,

” স্যার আপনি এখন প্রতিনিয়ত ক্লাসে জয়েন হবেন?
অগ্নি বইয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,,,,,,
” এইটা আমার প্রফেশন নয়।
মেয়েটা চুপ হয়ে যায়। প্রায় এক ঘন্টা ক্লাস শেষে অগ্নির চোখ যায় ইয়ানার উপর। এতক্ষন খেয়াল করে নি কেনো? এই মেয়ে এখানে কি করছে? এখন ও বাসায় যায় নি কেনো? অগ্নির চোয়াল কিছুটা শক্ত হয়ে আসে। সে ধীর কন্ঠে ইয়ানার উদ্দ্যেশ্যে বলে ,,,,
” মিসেস অগ্নি চৌধুরি দেখা করে যাবেন আধা ঘন্টার ভিতরে। আমি গাড়িতে আছি। আধাঘন্টার ভিতরে যাতে আপনাকে দেখতে পায়।

ইয়ানা মুখ তুলে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি সেসব পরোয়া না করে সকলের থেকে বিদায় নিয়ে ক্লাস রুম ত্যাগ করে। কিন্তু অগ্নির দুই লাইন কথা পুরো ক্লাসে এক ঝংকার তুলে। “মিসেস অগ্নি চৌধুরি ” এই শব্দগুলো যেনো এক একজনের কানে বাজপাখির ন্যায় ঠেকে।সবার দৃষ্টি এখন ইয়ানার উপর। পুরো ক্লাস জুড়ে কানাঘুষা লেগে যায় অগ্নি চৌধুরি যাকে তার ক্লাসে সবসময় অপমান করত তাকে মিসেসে অগ্নি চৌধুরি কেনো সম্মোধন করলো?
আরু চারদিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,,,,,,
” দিলোরে দিলো স্যার সবার মনটা ভেঙ্গে দিলো।
সুমু দুষ্টু হেসে বলে,,,,,,,,

“” মিসেস অগ্নি চৌধুরি যান প্লিজ। আপনাকে আপনার হাজবেন্ড ডাকছেন।
সুমু কথাটা একটু উচ্চস্বরে বলে সবাইকে শুনিয়ে। ইয়ানা কিছুতা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বসা থেকে উঠে সামনে এগিয়ে যেতেই একটা মেয়ে রাস্তা আটকিয়ে বলে,,,,,,
” ইয়ানা স্যারের ওয়াইফ মানে? কি বলতে চাইছিস তুই সুমাইয়া?.
সুমু খাপছাড়া ভাব নিয়ে বলে,,,,,,,,
” ওমা একটু আগে স্যার যে সম্মোধন করে গেলো সেটা শুনিস নি। স্যার নিজের বউকে ডেকেছেন যাওয়ার জন্য।
মেয়েটা রাগীভাবে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,

” তোমাকে তো স্যার দেখতে পারত না। হঠাৎ করে অগ্নি চৌধুরির বউ হলে কিভাবে? তোমাদের মত মধ্যবিত্ত মেয়েরা কিভাবে অগ্নি চৌধুরিরম মত ব্যাক্তির বউ হতে পারো? কি দেখিয়ে বশ করেছো শুনি? তোমাদের মত ছোটলোক মেয়েরা তো এইসবে এক্সপার্ট।
মেয়েটার কথা শুনে আকাশ আর রুহান রেগে এগিয়ে আসলে ইয়ানা আটকে দেয়। ইয়ানা মেয়েটির খুব কাছাকাছি এসে বলে,,,,,,,,,

” তুমি জানো কাকে এইসব বলছো? আমি শুধু ইয়ানা নয়। আমি চৌধুরি বাড়ির বড় বউ। অগ্নি চৌধুরির অর্ধাঙ্গিনী। একজন মন্ত্রীর পুত্রবধূ। একজন সফল বিজম্যাস ইউমেন এর ছেলের বউ। তোমার এইসব কথার জন্য আমি এক চুটকিতে জেলের ভিতরে ডুকানোর ক্ষমতা আছে। আর হ্যা আমার স্বামীর আরেকটা পরিচয় আছে সেটা জানলে প্যান্ট ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই আমি আপাযত সেটাকে স্কিপ করলাম। মেয়ে মানুষ তো প্যান্ট ভিজে গেলে সমস্যা আছে তোমার। আরেকটা কথা আমার সামনে এইসব বলেছো কিন্তু খবরদার ভুলে ও অগ্নি চৌধুরির সামনে এইসব বলো না। যেই টাকার অহংকারে আজ আমাকে ছোটলোক বললে সেটাকেই উনি ধ্বংস করে দিবে। পথে নামাবে তোমাদের।।আসি আমি মি, নাম জানি না। আজকের অথিতি ছিলাম মাত্র আমি। আল্লাহ হাফেজ।
ইয়ানা বেরিয়ে যায় শত শত মেয়ের মন ভে্ঙ্গে আবার কারোর মনে আগুন লাগিয়ে। এইদিকে হল্লা পার্টি সবার দিকে তাকিয়ে মজা নিচ্ছে।

ইয়ানা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সোজা গাড়ির সামনে চলে যায়। এরপর অপর পাশে গিয়ে ব্যাক সিটে বসে। ইয়ানাকে ব্যাক সিটে বসতে দেখে অগ্নি সামনে তাকিয়ে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,,
” মাইর খেতে না চাইলে সামনে আসো ইয়ানা।
ইয়ানা নিশ্চুপ। আগে যেভাবে বসে ছিলো ঠিক একই ভঙ্গিতে বসে আছে। যাবে না এই লোকের সাথে। কেনো যাবে ও? কিছুক্ষন আগে স্যারদের সামনে করা ব্যবহারের কথা ভুলে যায় নি।
ইয়ানাকে এইভাবে বিনা শব্দে বসে থাকতে দেখে অগ্নির রাগের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।অগ্নি স্টিয়ারিং এ শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,,,,,,,,,,

” সামনের সিটে আসো ইয়ানা। রাগিও না আমাকে। ধৈর্য খুব কম আমার।
ইয়ানা চুপচাপ ব্যাকসিট থেকে নেমে সামনে চলে যায়। সামনে গিয়ে অগ্নির পাশে বসতেই অগ্নি ইয়ানাকে নিজের কাছে এনে চেপে ধরে। এরপর চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,,
” এইটুকু শরীর নিয়ে তেজ দেখাস আমাকে হ্যা? আমার আদর – ভালোবাসা পেয়ে আর কাকে কাকে মিস করা হয় শুনি? অগ্নি চৌধুরির ওয়াইফ হয়ে পরপুরুষকে কেনো মিস করতে যাবি তুই? বল উত্তর দে? বল…. বল বলছি। ধৈর্য খুব কম আমার। অগণিতজনকে মেরেছি তকে মারতে ও বিন্দুমাত্রা হাত কাঁপবে না।
ইয়ানার চোখ থেকে টিপটিপ করে পানি পড়তে থাকে। অগ্নি এর চোয়াল এমনভাবে ধরেছে মনে হচ্ছে আঙ্গুলগুলো মাংস ভেদ করে গেঁথে যাবে। ইয়ানা নিজেকে সামলিয়ে অগ্নির চোখে চোখ রেখে তাকায়। ইয়ানার চাহনিতে অগ্নি চোয়াল ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে বসে। ইয়ানা নিজের গালে ধরে কিছুক্ষন জিম মেরে বসে। ব্যাথায় টনটন করছে গাল। ফর্সা হাতে আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট। ইয়ানা নিজেকে সামলিয়ে বলে,,,,,,,,,

” এখানে আমি কাউকে মিস করি নি মি, চৌধুরি। স্যার আমাকে বলেছে আর আমি মানবতা দেখিয়ে যাস্ট তাল মিলিয়েছি। তাছাড়া উনি আমার গুরুজন। আমার শিক্ষক, আমি কি তার সাথে ও কথা বলতে পারব না।
অগ্নির সোজাসাপ্টা উত্তর,,,,, নাহহ।
ইয়ানা মুখ সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে। অগ্নি গাড়ি স্টার্ট দেয়। ইয়ানা হেলান দিয়েই নিচু আওয়াজে বলে,,,,,
” আমাকে সবার সামনে অপমান করতে আপনার খুব ভালো লাগে তাই না? এইভাবে অপরিচিতদের মত আচরন কেনো করেছেন আমার সাথে?
অগ্নি দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,,,,,,,

” তোমাকে যে থাপরিয়ে ভার্সিটি থেকে নিয়ে আসিনি শুক্রিয়া করো। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার বউ অন্য আরেকজনকে বলছে, আপনাকে খুব মিস করছিলাম স্যার। এতটা ধৈর্য আমার কবে হলো? এই স্যারের ব্যবস্থা তো আমি পরে করব।
ইয়ানা আৎকে উঠে। ব্যবস্থা করবে মানে? কি করবেন উনি? ইয়ানা অধৈর্য ভয় নিয়ে বলে,,,,,,
” কি করবেন আপনি মি, চৌধুরি?
অগ্নির মুখে এক রহস্যময় হাসি। অগ্নির এমন স্বভাব সম্পর্কে সে ভালোভাবে অবগত। ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকিয়ে বাহু চেপে ধরে বলেন,,,,,

” আপনি এমন কিছু করবেন না। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমি আপনার থেকে। অনেক বড় ভুল হয়ে গিয়ছে আর কখনো কারোর সাথে এইভাবে কথা বলব না। প্লিজ রাসেদ স্যারকে কিছু করবেন না। উনার তো কোনো দোষ নেই।
আচমকা অগ্নি গাড়ির ব্রেক কষে। ইয়ানা এখন ও মিনতি করে যাচ্ছে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে অজশ্র জলবিন্দু। অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকায়। এরপর গম্ভীর আওয়াজে বলে,,,,,,,,,

” তোমার চোখে পানি কেনো ইয়ানা? আমি তো তোমাকে মারিনি, বকিনি বা আদর করে নি তাহলে কান্না কার জন্য করছো? তোমার চোখে অন্য জনের জন্য পানি সেটা আমাকে মেনে নিতে বলছো? বাঁচতে দিব আর আমি ওকে? এতটা ভালো মনে হয় তোমাকে আমার। তোমার চোখের এক একটা পানিকণা ওর আয়ু ঘনিয়ে আসবে।
ইয়ানা চুপ হয়ে যায়। কিন্তু ভয়ে ভিতরে ভিতরে হেচকি উঠে যায়। কান্না করা যাবে না। বলা যায় না এই পাগল লোক আবার কি করে বসে। ইয়ানা নিজের কান্নাকে আটকিয়ে রেখে সামান্য রাগান্বিত সুরে বলে,,,,,,
” রাসেদ স্যারের কিছু হলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না মি, চৌধুরি। অন্তত আমার কথা ভেবে আপনি সামনের পদক্ষেপ নিবেন।

অগ্নি ইয়ানার কথা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” না আমি কখনো সমাজ মেনেছি আর না কখনো পরিবার। তোমার কথা শুনে আমার মর্জি চলবে হুম। পালাতে পারবে না, আমার চোখের আড়াল হতে পারবে না, আর কি করবে শুনি।
ইয়ানা আনমনে বলে,,,,,,
‘ আত্নহত্যা “।

ইয়ানার কথাটা অগ্নির কানে বজ্রের মত গিয়ে ঠেকে। স্তব্দ হয়ে যায় সে। গাড়ির ব্রেক কষে আবার ও আচমকা। রাগের তাপে শরীর কাঁপছে। ইয়ানা নিজে ও এই কথাটা বলে হতভম্ভ। কি বলে ফেলেছে রাগ আর অভিমানের তাপে। অগ্নির কথা ভাবতেই ভয়ে বরফের মত জমে যায়।
অগ্নি রাগের চোটে স্টিয়ারিং এ আঘাত করে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,,,
” তকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছে তাই না। এই আল্লাহর বান্দি…. এই তাকা আমার দিকে। তর কলিজা ছিঁড়ে দেখতে চাই আমি। আত্নহত্যা করবি তাই না। চল তাহলে দুজনে এক সাথে করি। তকে মৃত্যুর দরজা থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
অগ্নি সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি স্ট্রাট দেয়। ইয়ানা সামনের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে। ভয়ে অগ্নির বাহু চেপে ধরে বলে,,,,,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৪

” প্লিজ স্টপ দ্যা কার। এইভাবে চালাবেন না প্লিজ। যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। আমি ভুলে বলে ফেলেছি আর কোনোদিন বলব না। প্লিজ গাড়ি ধীরে ধীরে চালান।
ইয়ানার কথায় অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
” চুপ। মরার শখ জেগেছে না চল মেরে দেয়। এমনিতে বাঁচিয়ে রেখে আমার প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে থাকতে হয়।
ইয়ানা সামনের দিকে তাকিয়ে ভয়ে শরীর কেঁপে উঠে। ইয়ানা ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,,,
” মি, চৌধুরি ব্রিজের সামনে ট্রাক!
অগ্নি সামনে তাকায়। গাড়ি ট্রাকের দিকে ব্রেক কষার আগেই,,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৬