অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৬

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৬
লিজা মনি

অগ্নি সর্বোচ্চ গতিতে গাড়ি স্ট্রাট দেয়। ইয়ানা সামনের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে। ভয়ে অগ্নির বাহু চেপে ধরে বলে,,,,,,,,,,
” প্লিজ স্টপ দ্যা কার। এইভাবে চালাবেন না প্লিজ। যেকোনো সময় এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। আমি ভুলে বলে ফেলেছি আর কোনোদিন বলব না। প্লিজ গাড়ি ধীরে ধীরে চালান।
ইয়ানার কথায় অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
” চুপ। মরার শখ জেগেছে না চল মেরে দেয়। এমনিতে বাঁচিয়ে রেখে আমার প্রতিনিয়ত ভয় নিয়ে থাকতে হয়।
ইয়ানা সামনের দিকে তাকিয়ে ভয়ে শরীর কেঁপে উঠে। ইয়ানা ভয়ে চিৎকার দিয়ে বলে,,,,,,,,

” মি, চৌধুরি ব্রিজের সামনে ট্রাক!
অগ্নি সামনে তাকায়। গাড়ি ট্রাকের দিকে ব্রেক কষার আগেই অগ্নি গাড়ি অন্যদিকে ঘুড়িয়ে নেয়।গাড়িটা গিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সাথে ধাক্কা খায়। তবে বেশি জোড়ে আঘাত করেনি তার আগেই অগ্নি দক্ষ হাতে সামলে নেই। গাড়ি থামতেই অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা অগ্নির বুকে হামলে পড়ে। শার্ট খামচে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। অগ্নি ঠোঁট ভিজিয়ে ইয়ানাকে আগলে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,,,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” I’m here with you, don’t be afraid. শান্ত হও কিছু হয় নি।
ইয়ানা একাধারে হেচকি তুলতে থাকে। ভয়ে অগ্নির শার্ট আরও ভালোভাবে আকঁড়ে ধরে। ইয়ানার কান্না দেখে নিজের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সামান্য রাগ দেখিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
” স্টপ ক্রাইং স্টুপিড। বলেছি না আমি সাথে আছি। কান্না করলে আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুরে গিয়ে বসো। কান্নার শব্দ পুনরায় আসলে থাপরিয়ে অজ্ঞান করব।
ইয়ানা অগ্নির ধমকে চুপ হয়ে যায়। তবে বার বার কেঁপে উঠছে নরম শরীরটা। অগ্নির বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,,,,,,

‘ খুব খারাপ আপনি। আমি কান্না কিরছি, আমার কান্না না থামিয়ে আমাকে ধমক দিচ্ছেন। ভালোবাসতে জানেন না?
ইয়ানার কথায় অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হাসে। এরপর ইয়ানার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
” এখন কি আদর করলে কান্না থামবে। কিন্তু এখন তো মেইন রোডের পাশে আছি। গাড়ি কেঁপে উঠলে লোকজন তাকিয়ে থাকবে। লোকজনের মনরঞ্জনের দৃশ্য হওয়া যাবে না রাস্তার মধ্যে। বাড়ি চলো সব পেয়ে যাবে।
অগ্নির কথার মানে বুঝে ইয়ানা বিরক্তি নিয়ে বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে বলে,,,,,
” আপনি ভালোবাসার মানে শুধু কি এইসব ওই বুঝেন?
অগ্নি গাড়িটা পিছন দিকে সরিয়ে বলে,,,,,
” ভালোবাসাটাই তো চিনিনা মানে বুঝব কিভাবে? বুঝাও আমাকে?
ইয়ানা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ,,,,,,,

” ভালোবাসা মানে হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর এক অমূল্য বন্ধন । ভালোবাসা মানে হলো একে অপরের প্রতি নিঃস্বার্থ অনুভব, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও যত্নশীলতা। এটি শুধু শারীরিক সম্পর্ক নয়, বরং মানসিক, আবেগিক ও আত্মিক এক গভীর বন্ধন। যেখানে স্ত্রীর ছোট ছোট আবদারগুলোকে প্রাধান্য দিবে। কিছু কিছু সময় স্ত্রীর খুশির জন্য চন্দ্রবিলাস করবে। হাতে হাত রেখে সমুদ্রের পাড় হাটবে এইটাই হচ্ছে ভালোবাসা।
অগ্নি ঠোঁট চেপে ইয়ানার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,,,,,

” তুমি আমার ভালোবাসা নও তার চেয়ে উর্ধ্বে যদি কিছু থাকে তাহলে তুমি হচ্ছে সেটা। তুমি আমার এমন এক তীব্র অনুভব যা আমাকে নিয়ন্ত্রন হারা করে ফলে। তোমার উপস্থিতি আমার হৃদয়হীন বুকে এ রক্তক্ষরনের বন্যা বইয়ে দেয়। চাঁদের সাথে তোমার তুলনা দিব না কারন তোমার সৌন্দর্যের তুলনা দেওয়ার মত শব্দভান্ডার এখন ও আমার মস্তিষ্কে গঠিত হয় নি। যদি বলো স্ত্রীর প্রাধান্য সেটা আমি নিজের থেকে ও বেশি দেয়। কিন্তু…. কিন্তু সেটা শুধু মাত্র আমাকে ঘিরে হতে হয়। আমার আবেগ আর তীব্রতা বুঝার ক্ষমতা তোমার ও নেই।
ইয়ানা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে মিহি সুরে বলে,,,,,,

” কথা দিয়ে মুগ্ধ করতে পারেন অনেক। একজন মাফিয়ার মুখে এত নরম কথা মানায় না। আপনার ব্যক্তিত্বে ছুঁরি আঘাত হবে। তাই এলার্ট দিচ্ছি এতটা ও নরম হবেন না।
অগ্নি স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে বাঁকা হাসে। ইয়ানা আর কিছু বলে না। চুপ হয়ে যায় একদম। মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজার শুক্রিয়া করে। ঠিক সময়ে গাড়িটাকে হ্যান্ডেল করার সুযোগ দিয়েছে। জানি না আজ কি হত।
অগ্নি গাড়ি রাস্তায় তুলে ডান পায়ে ব্রেক প্যাডেলে চাপ দেয়। এরপর স্টিয়ারিং হুইলের স্ট্রাট কনসোল বাটনে চাপ দিতে যাবে এমন সময় ইয়ানা অগ্নির হাতে ধরে ঝাঁকিয়ে বলে,,,,,,
” মি, চৌধুরি কাঠবিড়াল। প্লিজ একটা এনে দিন না।

ইয়ানা গাড়ির দরজার বাহিরে তাকিয়ে আছে। ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি কপাল কুচকে বাহিরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে একটা চৌদ্দ বছরের মত বাচ্চা ছেলে একটা বাক্সের মধ্যে অনেক কাঠবিড়াল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অগ্নি ইয়ানার কথাটা নাঁখোজ করে দিয়ে বলে,,,,,,
” প্রয়োজন নেই। কাঠবিড়াল দিয়ে কি করবে তুমি?
ইয়ানা মন খারাপ করে অগ্নির দিকে তাকায়। এরপর বায়না ধরে বলে,,,,,,,
” এনে দিন না, এমন কেনো করছেন? আমি এইটাকে পোষ মানাব।
অগ্নি — কি প্রয়োজন?

ইয়ানা — প্রানী হচ্ছে এক একটা কিউটের ডিব্বা। বিড়াল তো আপনার জন্য রুমে ও আসতে পারে না। সামান্য কাঠবিড়াল চেয়েছি মানা কেনো করছেন। এনে দিন না। বেশি টাকা লাগবে না।
অগ্নি কপাল কুচকে হাস্কি সুরে বলে,,,,,
” এই মেয়ে টাকার হিসেব কেনো মিলাচ্ছো আমার সাথে।
ইয়ানা — না এনে দিলে কি ভাববো শুনি? বউ হয়ে একটা জিনিস চেয়েছি স্বামী হিসেবে এনে দেওয়া সেটা আপনার কর্তব্য।
অগ্নি হালকা হেসে ইয়ানার দিকে ঝুঁকে বলে,,,,,,
” তুমি জানো এই স্বামী শব্দটার ওজন কতটুকু। আমি পূর্নাঙ্গ স্বামীর অধিকার ফলাতে শুরু করলে সামলাতে পারবে আমাকে।

ইয়ানা কিছুটা হেলে বলে,,,,,
” আর কিভাবে স্বামীর অধিকার ফলায়?
অগ্নি – যেদিন ফলাব সেদিন দেখে নিও। এখন তো এক সপ্তাহ রেস্ট নিতে হয় পরে দেখা গেলো এক মাস রেস্ট নিতে হচ্ছে।
ইয়ানা নাক মুখ কুচকে বলে,,,,,
” কতটা নির্লজ্জ আপনি। আমি কাল সিলেট গিয়ে শাহজালাল অথবা শাহ- পরান মাজারে গিয়ে আরজি জানিয়ে আসব আল্লাহ যাতে আপনাকে একটু লজ্জা শরম দান করেন।
অগ্নি ইয়ানার কথায় স্বভাবসুলভ ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,

” আর এইটাও বলে এসো তোমাকে যাতে একটু শক্তি দান করে। যাতে পরের বার জ্ঞান হারিয়ে নেতিয়ে না পরো।
ইয়ানা কটমট চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি গম্ভীর হেসে গাড়ি থেকে নেমে যায়। এরপর ছেলেটাকে হাতের ইশারা দিয়ে ডাক দেয়। ছেলেটা অগ্নির ডাক শুনে এগিয়ে এসে বলে,,,,,
” জি স্যার কয়টা নিবেন?
অগ্নি বাক্সটার দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বলে,,,
” একটা দিচ্ছি এই অনেক । একটা দাও।
এরপর পকেট থেকে পার্স বের করে টাকা দেওয়ার জন্য। কিন্তু পার্সে টাকা নেই শুধু ব্যাংক কার্ড, এটিএম কার্ড রাখা। সামান্য বিরক্তি নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে। পার্সে কোনো টাকা থাকে না সেটা তো ভুলেই গিয়েছিলো। অগ্নি গাড়ির ভিতরে একটা মানিব্যাল্ট থেকে এক হাজার টাকার নোট বের করে ছেলেটার হাতে দেয়। ছেলেটা এক হাজার টাকার নোট দেখে বলে,,,,,,

” স্যার একটার দাম তো মাত্র দুইশত টাকা আপনি এক হাজার টাকা কেনো দিয়েছেন?
অগ্নি — রেখে দাও। আর এই কি এইটা? ওহহ কাঠবিড়াল এইটা নিয়ে গাড়িতে বসে থাকা মেয়েটার কাছে দাও।
ছেলেটা এক হাজার টাকার নোট নিতে না চাইলে অগ্নির এক ধমকে ভয়ে চুপসে যায়। মনে হচ্ছে ভয়ে এই বুঝি অজ্ঞান হয়ে পড়বে। ছেলেটা ইয়ানার হাতে কাঠবিড়াল দিয়ে দ্রুত এইখান থেকে প্রস্থান করে। ইয়ানা বিড়ালটাকে নিয়ে সামনে ধরে। দেখতে সাধারনত ধূসর বাদামী রঙ্গের
।পিঠে সাদা কালো ডোরা দাগ। লেজটা তোলার মত ঝুঁটি করা। দেখতে মোটা আর লম্বা।
ইয়ানা চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
‘ ওরে আল্লাহ মি, চৌধুরি কাঠবিড়ালের চোখ তো ঠিক আপনার চোখের মত।
গাড়ি চালানোর মধ্যে ইয়ানার এমন কথায় অগ্নি ভেবাচেকা খেয়ে যায়। অগ্নি থমথমে খেয়ে সেদিকে তাকিয়ে মৃদু ধমকে বলে,,,,,

” হুয়াট ডিড ইউ সে?
ইয়ানা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” আরে এই দেখুন কাঠবিড়ালের চোখ ও আপনার চোখের মত ব্রাউন। আপনারটা কম আর এইটা বেশি এইটাই প্রার্থক্য।
অগ্নি বিরবির করে বলে,,,,,
” স্টুপিড।
ইয়ানা বিড়ালটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,,,
” তর কি নাম রাখা যায় বলতো। নতুন বাচ্চাদের তো নাম রাখতে হয়। আর তুই ও নতুন। যেহেতু তুই আমার বাচ্চা সেহেতু তর নামটা তো ইউনিক হতেই হবে।
ইয়ানার এমন কথায় অগ্নি বিরক্তি স্বরে ফুঁসে উঠে বলে,,,,,
” তোমাকে তো আমি প্রতিনিয়ত ” birth control/লোস্ট্রিন পিল ” খাওয়াচ্ছি।এত সতর্কতার পরে ও বাচ্চা আসলো কোথা থেকে তোমার? তাও আবার কাঠবিড়ালের বাচ্চা।
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায় তবে রাগ বা বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে তুলে না। শান্ত সুরে বলে,,,,,

” একদিন রাস্তা দিয়ে হাটছিলাম পরে একটা গাছের সামনে উস্টা খেয়ে পড়ি। পরে আর কি ব্যাস আমি কাঠবিড়ালের মা হয়ে যায়। তখন তো আর আপনার সুনামধন্য পিল খাওয়ান নি । কি আর করার ভুলবশত হয়ে গেছে।
ইয়ানা কথাগুলো বলে এক ফুঁস করে নিশ্বাস ছাড়ে। অগ্নি ইয়ানার কথায় চমকালে ও কিছু বলে না। অগ্নির লাল কালারের রোলস রয়েস গাড়িটি চৌধুরি ভিলায় গিয়ে থামে। ইয়ানা কাঠবিড়ালটাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে অগ্নিকে রেখে চলে যায়। দরজার সামনে গিয়ে কিছু একটা মনে পড়তেই পিছনে ফিরে তাকায়। দেখে অগ্নি পুনরায় গাড়িতে গিয়ে বসছে। ইয়ানা দ্রুত অগ্নির কাছে গিয়ে ভয়ে বলে,,,,,,,

” মি, চৌধুর আজ বাহিরে যাওয়ার দরকার নেই।
ইয়ানার এমন কথায় অগ্নি সন্দেহ দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” কেনো? আর কি চাই? রাতে সব হবে এখন কাজ আছে আমার।
ইয়ানা অগ্নির বাহু ধরে বলে,,,,,,,
” যা চান আজ আমি তাই দিব। তবুও বাহিরে যাবেন না প্লিজ।
অগ্নি ইয়ানার এমন মিনতি দেখে চোখে চোখ রেখে গালে হাত দিয়ে হালকা গলায় বলে,,,,
” কি হয়েছে তোমার? আজ নিজ থেকে আলিঙ্গন করছো? চলো রুমে যায়।
ইয়ানা মাথা নিচু করে মিহি সুরে বলে,,,,,,

” রাসেদ স্যারকে কিছু করবেন না প্লিজ? আপনি বাহিরে গেলে আজ নিশ্চয় একটা অঘটন ঘটবানে।
ইয়ানার গালে রাখা আদুরে স্পর্শের হাতটা শক্ত হয়ে যায়। আকস্মিক চেপে ধরে গাল। ইয়ানা অসহায় হয়ে চোখ বন্ধ করে। অগ্নি রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে,,,,,
” তাহলে এই অনুভুতিটা অন্যজনের জন্য ছিলো। এই কাছে আসার চাহিদাটা অন্যজনের জন্য মিনতি ছিলো। আমার অনুভুতির সাথে ছলনা করিস হ্যা। বলেছি না তর চোখে অন্যজনের জন্য কান্না আসলে তার আয়ু ঘনিয়ে আসবে। তুই কেনো অন্যজনের জন্য কাঁদবি? তর চোখের পানি থাকবে শুধু আমাকে ঘিরে। আর কখনো যাতে এমন না দেখি। লাস্ট ওয়ার্নিং দিলাম এর আগেও অনেকবার দিয়েছি। পরের বার ওয়ার্নিং দিব না সোজা পদক্ষেপ নিব।
অগ্নি ইয়ানাকে ছেড়ে দিয়ে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসে। ইয়ানা বুঝে উঠার আগেই গাড়ি নিয়ে চোখের সামনে দিয়ে চলে যায়। ইয়ানা শুধু অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। ভিতরে আতঙ্ক আর ভয়ে হাহাকার করে উঠে। বিনা অপরাধে রাসেদ স্যার কি তবে বলির পাঠা হবে?

আকাশ ভার্সিটি শেষ করে বাসায় যায়। আকাশের মা রিনিতা বেগম ডিভানে বসে টিভি দেখছিলেন। সাথে অবনিও বসে আছে। অবনিকে দেখে আকাশ কিছুটা চমকে উঠে। তাদের আইনিভাবে ছোটখাটো বিয়ে হয়েছে। অবনি আর আকাশের দুই বছরের রিলশেন ছিলো। এক পর্যায়ে সবাই জানাজানি হলে শুধু বিয়ে করিয়ে রাখে। আকাশের পড়াশুনা শেষ হলে অনুষ্ঠান করে তাদের এক করা হবে। এখন আপাযত তারা আলাদা থাকে। বিয়ের পর থেকে অবনি সচারাচর এই বাড়িতে আসে না। আকাশ কাল থেকে ফোন দিচ্ছিলো অবনিকে, কিন্তু ধরে নি সে। তাই কাল থেকে অবনির প্রতি রাগ জমে ছিলো। পরে ভার্সিটিতে হল্লা পার্টিকে পেয়ে কিছুক্ষন সে কথা ভুলে থেকে। এখন আবার চোখের সামনে অবনিকে দেখে রাগটা মাথায় চেপে বসে। তাই অবনিকে পাত্তা না দিয়ে রিনিতা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে,,,

” আম্মু আমি ফ্রেশ হচ্ছি খাবারটা উপরে পাঠিয়ে দিও। নিচে আসার আর মুড নেই।
আকাশ আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে উপরে চলে যায়। রিনিতা বেগম আবনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” এর আবার কি হলো। তর সাথে কথা না বলেই উপরে চলে গেলো। ফোনে ঝগড়া হয়েছে তদের।
অবনি সিড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,,,,
” না ফুপি ঝগড়া হয় নি। তুমি তো জানো তোমার ছেলের পুরো শরীরে কারেন্ট। কিছু হওয়ার আগেই ছেৎ করে উঠে। আমার তো মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় তোমাদের ঘরে এমন ছেলে হয়েছে নাকি রাস্তা থেকে পেয়ে এনেছো।
অবনির কথায় রিনিতা বেগম কান মলা দিয়ে বলে,,,,
” নিজের হাজবেন্ডকে রাস্তার বালছিস মুখে আটকাচ্ছে না।
অবনি কানে হাত দিয়ে বলে,,,,,,,
” ওওও ফুপি কান ছাড়ো লাগছে খুব। আর কিছু বলব না তোমার আদরের ছেলেকে।
রিনিতা বেগম কান ছেড়ে খাবার ধরিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,

” মনে থাকে যেনো.? এইবার যা খাবারটা নিয়ে নবাবের রুমে দিয়ে আয়।
অবনি — আমি নিয়ে যাব?
রিনিতা বেগম — হুম যা।
অবনি কাউচের উপর প্লেট রেখে বলে,,,,,,
” ওও ফুপি আমি পারব না। দেখেনো তোমার ছেলে কিভাবে রেগে আছে। রুমে গেলে নিশ্চয় মাইর দিবে। আমি যাব না ফুপি তোমার ছেলের খাবার তুমি নিয়ে দিয়ে আসো।
রিনিতা বেগম কপাল কুচকে বলে,,,,,,,
” এই মাত্র না বললি তদের মধ্যে ঝগরা হয় নি?
অবনি অসহায় হয়ে বলে,,,,
“” হয় নি তো। কিন্তু জানি না কেনো রেগে আছে।
রিমিতা বেগম — স্বামী রাগ করলে সেই রাগ স্ত্রীকেই ভাঙ্গাতে হয়। তুই ছাড়া আর কে ভাঙ্গাবে আমার ছেলের রাগ শুনি।
রিনিতা বেগমের কথায় অবনি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। স্বামী – স্ত্রী কথাটা ভাবতেই যেনো শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন জেগে উঠে। অবনির লজ্জা দেখে রিনিতা বেগম হাসি দিয়ে বলে ,,,

” লজ্জা কেনো পাচ্ছিস? বিয়ে তো হয়েই গেছে শুধু তকে আমার ঘরে আনা বাকি।
অবনি লজ্জায় আর ও নুইয়ে যায়। বিরবির করে বলে,,,,,
” যাচ্ছি আমি তোমার ছেলের খাবার নিয়ে।
এরপর কাউচ থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে সোজা উপরে চলে যায়। রিনিতা বেগম অবনির কান্ড দেখে সামান্য আওয়াজে হেসে উঠে।
অবনি আকাশের রুমের সামনে যায়। দরজায় হাত রাখতেই খোলে যায়। সে রুমে ডুকে ঠিক সে সময় আকাশ শাওয়ার শেষ করে বের হয়। কোমরে টাওয়েল র‍্যাপ পেচানো। অবনি সেদিকে তাকিয়ে অটোমেটিক চোখ বড় বড় করে ফেলে। তাদের মধ্যে রিলেশন ছিলো কিন্তু কখনো এইভাবে নক ছাড়া রুমে ডুকে নি । আকাশ ওর হাতটা ধরেছে শুধু। আর সেটা ধরতে ও বার বার পারমিশন নিয়েছে। আজ কিভাবে ডুকে গেলো সে নিজে ও জানে না। অবনি আকাশকে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। চোখটা হাত দিয়ে ঢেকে বলে,,,,,,
” সরি আমার নক করে ডুকার উচিৎ ছিলো।

আকাশ — সব তো দেখেই নিয়েছিস এতক্ষন ডেব ডেব করে তাকিয়ে। এখন আবার চোখে হাত দিয়েছিস কেনো?
অবনি — তার জন্য ও সরি। মানুষ মাত্র ওইতো ভুল বলো? আগে তো কখনো নক ছাড়া প্রবেশ করিনি আজ জানি না কেনো নক করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম।
আকাশ একদম অবনীর কাছে এসে দাঁড়ায়। এরপর গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
” হাত সরাহহ। এইভাবে আঙ্গুলের ফাক দিয়ে সব দেখছিস আবার ন্যাকামো করছিস কেনো?
আকাশের কথা শুনে অবনি চট করে হাত সরিয়ে নেয়। কিভাবে বুঝল আমি যে দেখছিলাম?
আকাশ নিজের রাগটাকে সামলাতে না পেরে অবনির বাহু চেপে ধরে তিরিক্ষি মেজাজে বলে,,,,,

” ইন্টারেস্ট উঠে গেছে আমার প্রতি। যেই বিয়ে করে বউ বানিয়েছি তখন ওই সব ইন্টারেস্ট উঠে গিয়েছে তাই না। কই আগে তো রাত- দিন আমাকে ফোন দিয়ে জালিয়ে মারতি। এখন কেনো দিনে একবার ও ফোন দিতে ইচ্ছে হয় না। তুই দিস না ভালো, আমি যে বার বার কাল রাতে এতগুলো ফোন দিয়েছি ধরার প্রয়োজনবোধ করিস নি? নাকি ধরতে ইচ্ছে হয় নি। নতুন কাউকে পেয়েছি হ্যা?
আকাশের এমন কঠিন শব্দে অবনির চোখে পানি চলে আসে। আকাশ শাষন করলে ও এতটা রুড হয় না। শান্তভাবে ওকে বুঝায়। আজ কেনো এইসব বলছে। অবনি চোখের পানি ছেড়ে বলে,,,,,,

” কিসব বলছো এইগুলো.? তোমাকে ছাড়া আমি কাউকে কল্পনা ও করতে পারি না। আজ আমার এক্সাম শেষ হয়েছে। আজ লাস্ট এক্সাম ছিলো। তুমি তো জানো আমি উচ্চতর গনিতে খুব উইক। তাই সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে ম্যাথ করেছি। তোমাকে ফোন দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ইচ্ছে করেই দেয় নি। তোমার সাথে কথা শুরু হলে এক দুই ঘন্টা চলে যায়। তাই ইচ্ছে করে দেয় নি। আর তুমি আমাকে সন্দেহ করছো?
অবনির চোখের পানি দেখে আকাশের রাগটা কমে আসে। মেয়েটা তার বড্ড আদুরের। মাথা ঠান্ডা করে অবনির দুই বাহুতে ধরে বলে,,,,,

” সরি আর কান্না করিস না সোনা। তুই তো জানিস তর সাথে কথা না বললে আমি পাগল হয়ে যায়। তার উপর তর এমন অবহেলা রাগ হচ্ছিলো প্রচুর। তাই অজান্তেই আঘাত দিয়ে দিয়েছে।
অবনি কান্না বন্ধ করে নিজের দুই বাহুর দিকে তাকায়। এই প্রথম তাকে স্পর্শ করেছে। অবনির এমন তাকানো দেখে আকাশ মুচকি হাসে। অবনি বোকার মত আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ অবনির দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,

” আগে বউ ছিলি না এখন বউ হয়েছিস। আরও অনেক কিছুই করব শুধু সময়টা আসতে দে।
অবনি চোখ বড় বড় করে ফেলে। এইসব কি কথা বলছে? লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আজ ওরা মা- ছেলে এইভাবে লজ্জা দিচ্ছে কেনো আমাকে।
অবনিকে এইভাবে লজ্জা পেতে দেখে আকাশ প্রতিবারের মত মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,,,,,
” লজ্জা না পেয়ে এসে পতি সেবা কর কাজে আসবে। একদিনের জন্য এসেছিস ভালো করে স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যা। খাইয়ে দে আমাকে।
অবনি আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,,

” কি হলো আয়। ওইখানে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? আগে কখনো খাইয়ে দেস নি।
অবনি নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে হাত ওয়াশ করে এসে আকাশের সামনে বসে। এরপর প্লেটটা হাতে নিয়ে এক লোকমা ভাত আকাশের মুখের সামনে তুলে ধরে। আকাশ হা করে মুখে নিবে এমন সময় অবনি হাত সরিয়ে বলে,,,,,
” কথা দাও কামড় দিবে না, দুষ্টামী করবে না?
আকাশ — করতে ইচ্ছে হয়েছিলো তবে আর করব না। এমনি অনেক কেঁদেছিস একটু আগে,আর কাঁদাতে চায় না।
আবনি হাসি দিয়ে আকাশের মুখে ভাত ডুকিয়ে দেয়। আকাশ অবনির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
” খেয়েছিস তুই?

অবনি — হুম। এসেই খেয়েছিলাম।
আকাশ — কেমন স্ত্রীরে তুই স্বামীর জন্য একটু অপেক্ষা করতে পারলি না।তুই জানিস না এই টাইমে আমি বাড়িতে আসি।
অবনি — খিদে পেয়েছিলো তাই খেয়ে নিয়েছি। আমি এখন ও তোমার বাড়িতে আসি নি। স্ত্রী বলে বলে বার বার লজ্জা কেনো দিচ্ছো আমাকে?
অবনির কথায় আকাশ ঠোঁট উল্টে তাকায়। এরপর হালকা হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” তর লজ্জা আচ্ছে। তর বয়সে থাকতে আমি খেলাধুলা করেছি আর তুই কাজিনের সাথে প্রেম করেছিস। ছিহহ অবনি তুই অন্তত লজ্জার কথাটা বলিস না।
আকাশের কথায় অবনি ফুঁসে উঠে বলে,,,,,,

” খাওয়াব না আমি তোমাকে। নিজের খাবার নিজের হাতে খাও। আমি তোমার প্রতি একটু একটু দুর্বল ছিলাম আমার ভালো লাগত। আর তুমি সেই সুযোগে আমাকে ভয় দেখিয়েছো কথা বলার জন্য। নামে আমাদের সম্পর্ক ছিলো। বলো,,, বলো আমি তোমার সাথে কবে থেকে প্রেম করি। মত্র এক বছর হবে নাহলে এর আগে তো তোমার ভয়ে কথা বলতাম শুধু। আর এখন আমাকে খুঁটা দিচ্ছো।
অবনি গাল ফুলিয়ে বিছানা থেকে উঠতে নিবে তার আগেই আকাশ হাত ধরে বসিয়ে দেয়। এরপর গালে দুই পাশে দুইটা আলতো চাপ দিয়ে বলে,,,,,,

” গাল এতক্ষন ফোলানো ছিল এখন হাওয়া বের হয়ে গিয়েছে। মজা করেছি রাগ করছিস কেনো এইভাবে? আর এইভবে কখনো বউ বউ সাজে আমার রুমে আসবি না। হঠাৎ কিছু একটা করে ফেললে নিজেই কান্নাকাটি করে বুক ভাসাবি। আমি ছেলে মানুষ অবনি আর তুই আমার স্ত্রী। এইভাবে আসলে তো নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা মুশকিল হয়ে পড়বে। যাহহ এখন আম্মুর কাছে অথবা বাড়িতে যেতে চাইলে চলে যা।রাতে ফোন দিব রিসিভ করিস।
অবনি আকাশের কথা শুনে আর এক মুহূর্ত ও থাকে না। কোনোমতে এখান থেকে চলে আসে। আগে তো আকাশ এমন ছিলো না। আজ এইসব কথা কেনো বলেছে। ওকি তাহলে নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।

অগ্নি ইউভি আর রায়ান গাড়ির দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে যাচ্ছিলো। মাঝ রাস্তায় লোকের ভীরে অগ্নি বিরক্তিতে’ চ’
উচ্চারন করে বলে,,,,,,
” বাল – ছাল রাস্তার মধ্যে কিসব ড্রামা শুরু হয়েছে। এই সরা এইগুলোকে। অসহ্য লাগছে।
রায়ান — শান্ত হ। মনে হচ্ছে কোনো এক্সিডেন্ট হয়েছে। দেখছিস না লোকের ভীর। সবাই কিভাবে গোলাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অগ্নি রাগে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,,,
” এই গাড়ি অন্যদিকে নিয়ে চল। এক্সিডেন্ট করার আর রাস্তা পায় নি খুঁজে আমাদের গন্তব্যের রাস্তাটা পেয়েছিলো।

ইউভি– শান্ত হ দুর্ঘটনা তো বলে আসে না।
রায়ান গাড়ি নিয়ে অন্য রাস্তায় নিয়ে যায়। গাড়ি কিছুক্ষন পরে গিয়ে থামে একটা দুতলা বিল্ডিং এর সামনে। রায়ান গাড়ি থেকে নেমে বলে,,,,,,
” আমার হাত – পা কাঁপছে কেনো?
অগ্নি রায়ানের এমন উদ্ভুত কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,,
” তাহলে চল ফিরে যায়। তকে গিয়ে আগুনের ছেকা দেয়। তাহলে দেখবি কাঁপাকাঁপি বন্ধ হয়ে যাবে।”
অগ্নির কথায় রায়ান চুপসে যায়। কিছু না বলে তারা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। অগ্নি বাড়ির সামনে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিতে একটা আট বছরের ছেলে এসে দরজা খুলে দেয়। সামনে তিন জন ছেলেকে দেখে অবাক হয়ে বলে,,,,,,,,

” কে তোমরা বৎস? এত সুন্দর হয়েও আমার মত স্মার্ট ছেলের চৌকাঠে পা রাখিলে।
ছেলেটার কথা শুনে অগ্নি কপাল কুচকে তাকায়। এরপর রায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” চিনিস তুই এই লিলিপুটকে?
রায়ান — মনে হয় সুমুর কাজিন।বাট আমি চিনি না।
ইউভি বাচ্চাটার কাছে গিয়ে বলে,,,,,,,
” মঞ্জিল সাহেব তোমার কি হয়?
বাচ্চাটি — বাবা।
ইউভি অগ্নি আর রায়ানের দিকে তাকায়। এরপর ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” সত্যি তুমি অনেক স্মার্ট। আচ্ছা তোমার নাম কি?

বাচ্চাটি — দ্বীপ।
ইউভি — নাইস নেইম। তোমার বাবা কোথায়?
দ্বীপ– এরা স্বামী – স্ত্রী উপরে আছে মানে আমার বাবা আর মা।
বাচ্চা ছেলের কথায় ইউভি হালকা কেঁশে উঠে। কি লেভেলের পাকা এই ছেলে।
ইউভি– যাও তোমার বাবাকে গিয়ে বলো উনার সাথে কিছু লোক দেখা করতে এসেছে।
দ্বীপ — বসেন আপনারা আমি ডেকে নিয়ে আসছি।
দ্বীপ চলে যায়। অগ্নি, ইউভি আর রায়ান গিয়ে ডিভানে বসে।
সুমু কারোর আওয়াজ পেয়ে নিচে নামতে নামতে বলে,,,,,,,,,
” দ্বীপ কে এসেছেরে?

সুমুর ভয়েস পেয়ে ইউভি আর রায়ান সেদিকে তাকায়। আকস্মিক সামনে তাদের তিনজনকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। নিজের হ্যালোসিনেশন ভেবে আরও ভালোভাবে তাকায়। এরা এখানে কেনো? এরা সত্যি নাকি আমার সপ্ন।
সুমু শরীরে ভালোভাবে উড়না জড়িয়ে তাদের সামনে এসে বলে,,,,,,
” আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা?
ইউভি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” এই তো আলহামদুলিল্লাহ তুমি।
সুমু— জি আলহামদুলিল্লাহ। ইয়ানা ও এসেছে নাকি।
ইউভি — নাহ। আমরা অন্য আরেক কাজে এসেছি। তোমার মামার সাথে প্রয়োজন।
সুমু — কি প্রয়োজন ভাইয়া?

ইউভি কিছু বলতে যাবে এমন সময় মঞ্জিল সাহেব নিচে নামে। অগ্নিকে দেখে উনার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। মন্ত্রীর ছেলে তার বাড়িতে ভাবতেই যেনো অবিশ্বাস্য লাগছে।
মঞ্জিল সাহেবকে দেখে অগ্নি বাঁকা হেসে বলে,,,,,,,
” কি মি, মঞ্জিল অবাক হয়েছেন?
মঞ্জিল সাহেব খুশি হয়ে বলে,,,,,,,
” মন্ত্রীর ছেলে আমার বাড়িতে অবাক হওয়ার ওই কথা।
সুমু মঞ্জিল সাহেবের কাছে মিহি সুরে বলে,,,,,,,
” মামা উনি ইয়ানার হাজবেন্ড। আর এরা দুইজন উনার বেস্ট ফ্রেন্ড কানাডা থেকে এসেছে। উনি ইউভি ভাইয়া আর উনি রায়ান ভাইয়া। দুইজন ওই কানাডিয়ান।
মঞ্জিল সাহেব হাসিমুখে এদের সাথে হাত মিলায়। মঞ্জিল সাহেব সুমুর উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,,

” সবার জন্য তর হাতের স্পেশাল নাস্তা নিয়ে আয়।
সুমু এইখান থেকে চলে যায়। অগ্নি এইবার কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
‘ দেখুন মি, মঞ্জিল সাহেব আমি চেপে চেপে কথা বলতে পারি না। যা বলে একদম সোজাসাপ্টা। এই যে দেখছেন আমার ফ্রেন্ড রায়ান? ও সুমুকে পছন্দ করে। আর সে তাকে বিয়ে করতে চাই। সুমাইয়ার বাবা নেই আপনি ওই ওর অভিভাবক তাই আপনাকে বলছি।
মঞ্জিল সাহেব কিছুটা অবাক হয়। রায়ানের দিকে তাকায়। এত সুন্দর ছেলে পাওয়া তো সৌভাগ্য। এত বড় বাড়ি থেকে ওর মেয়ের জন্য বিয়ের সম্মন্ধ এসেছে। কিন্তু ছেলেটাকে তো সে চিনে না।
মঞ্জিল সাহেব রায়ানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে — কিন্তু বাবা তোমার পরিচয়।
অগ্নির কাটকাট উত্তর — বাবা- নেই ওর। এক্সিডেন্টে মারা যায়। বাবা- মা আপনজন বলতে কেউ নেই।
মঞ্জিল সাহেব — তার মানে এতিম?

অগ্নি শক্ত গলায় বলে — এতিম কাকে বলে জানেন? যার কেউ নেই। কিন্তু ওর তো আমি আছি। ইউভি আছে। ওর দুই বাহু আকড়ে ধরার জন্য আমি নিজেই যথেষ্ট। এতিম ট্যাগ লাগাবেন না মি, মঞ্জিল সাহেব।
মঞ্জিল সাহেব কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,,,,,,,
” দেখুন মি,অগ্নি চৌধুরি সুমুর বাবা মারা যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো যাতে এমন একটা ছেলে দেখে বিয়ে দেয় যে তাকে সারাজীবন আগলে রাখবে। মেয়েটার বয়স তখন মাত্র দশ বছর ছিলো। তাই এমন কারোর কাছে বিয়ে দিতে চাই যে আমার চোখের সামনে থাকবে।
অগ্নি মঞ্জিল সাহেবের কথায় গম্ভীর হয়ে কপাল ঘেষে বলে,,,,,,,

“” মঞ্জিল সাহেব একটা মাতালের কাছে বিয়ে দিয়ে যদি সামনে বসিয়ে রাখেন তাহলে কি সুমাইয়ার সুখ এসে পড়বে শুনি.?সুখ এইটা নিয়ে চিন্তা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। নাখোঁজ করা আমার একদম পছন্দ নয়। শান্তভাবে প্রস্তাব রেখেছি, মানাটা সেটা অন্য ব্যাপার। বাট রায়ান যেহেতু পছন্দ করেছে বিয়ে তো হতেই হবে। তবে আমি আপনাকে আশ্বাস দিয়ে বলতে পারি সুমাইয়ার তিল পরিমান কষ্ট ও হবে না। আর অগ্নি চৌধুরি কাউকে কথা দিলে সেটা পালন করে।
মঞ্জিল সাহেব কিছুটা ভেবে বলে,,,,,

” আপনাদের চৌধুরি বাড়ি সম্পর্কে শুধু আমি না পুরো দেশ জানে। আপনাদের কাছে মেয়ে দিতে পারলে এর থেকে আনন্দের কিছুই নেই। আর রায়ান বাবা যেহেতু আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড সেহেতু আপনাদের মত ওই হবেন। বিয়ে দিতে আমার কোনো আপত্তি নেই। শুধু মেয়ে শান্তিতে থাকলেই হবে।
রায়ান এতক্ষন চুপ থাকলে ও এখন মুখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে। মঞ্জিল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” ধন্যবাদ আঙ্কেল রাজি হওয়ার জন্য।
মঞ্জিল সাহেব — কিন্ত বাবা কি করো তুমি?
রায়ান — cid ( crimnal investigation Department) অফিসার। বাসায় আমি একা থাকি কাজের লোক স্টাফ ছাড়া।
মঞ্জিল সাহেব সন্তুষ্ট হন। এমন ছেলে আজকাল পাওয়া যায় না সচারচর।
অগ্নি — বুঝতেই পেড়েছেন বেড়াতে এসেছে। সারাজীবন থাকার জন্য আসে নি। তাই বিয়েটা দুই একদিনের মধ্যে করাতে হবে।

মঞ্জিল সাহেব — একটা মেয়ে মাত্র। এত তাড়াতাড়ি আয়োজন ছাড়া কিভাবে বিয়ে দিবো?
অগ্নি — আয়োজন করলে কি হবে শুনি.? খাওয়াতে চাইলে সবাইকে একদিন গরু জবাই দিয়ে খাওয়ান। বিয়ে উপলক্ষে খেতে হবে তার তো কোনো মানে নেই। আমি যদি রাত বারোটার সময় কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করতে পারি তাহলে তারা করলে সমস্যা কোথায়?
অগ্নির কথায় মঞ্জিল সাহেব চুপসে যায়। কিছু বলার নেই আর।
মঞ্জিল সাহেব — ওকে আমি সবার সাথে কথা বলছি। আপনাদের রাতে ফোন দিয়ে জানাব।
সুমু এতক্ষন কফি আর কিছু খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে এইসব কথা শুনছিলো। সে পুরা স্তব্দ হয়ে যায়। কিসব আলোচনা করছিলো ওরা? আমার বিয়ে! তা ও আবার রায়ান ভাইয়ার সাথে! উনি আমাকে কবে থেকে পছন্দ করা শুরু করলো? দেখা তো হয়েছে মাত্র কয়েকবার।

সুমুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মঞ্জিল সাহেব হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
” আরে কিরে মা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো। কফিটা দে ওদের।
সুমুর ভাবনা ভাঙ্গে মঞ্জিল সাহেবের কথা শুনে।
সুমু– হুম,, হ্যা।
আগ্নি — প্রয়োজন নেই। খাব না কিছু। এখন কফি খাওয়ার টাইম না। যাচ্ছি মি, মঞ্জিল সাহেব। রাতে তাহলে কথা হচ্ছে।
রায়ান এক পলক সুমুর দিকে তাকায়। দুজনের চোখাচোখি হতেই সুমু চোখ নামিয়ে নেয়। রায়ান খুব ভালোভাবে সুমুরকে পরখ করে। শরীরে গোলাপি কালারের একটা কুর্তি। মাথায় উড়না টেনে রেখেছে ফলে মায়াবী মুখটা আর ও মায়াবী দেখাচ্ছে। হালকা হেসে চোখ সরিয়ে নেয়। এরপর তারা তিন জন বেরিয়ে যায় বিদায় জানিয়ে।
অগ্নি তারা চলে যেতেই সুমু মিহি সুরে বলে,,,,,,

“” মামা এত তাড়াতাড়ি বিয়ে কেনো দিচ্ছো আমায়?
মঞ্জিল সাহেব সুমুর মাথাত হাত রেখে বলে,,,,,,
” মারে তর ভালোটাই করেছি। ইয়ানা ওত সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। আকাশ বিয়ে করেছে একদিন সে ও সংসার গুছিয়ে নিয়েছে। রুহান, আরু তারা ও নিবে। আমি মরে যাওয়ার আগে আমি ওত তর গুছানো সংসারটা দেখে যেতে চাই।
সুমু — মরার কথা কেনো বলছো মামা। আজ পর্যন্ত তোমরা যা সদ্ধান্ত নিয়েছো সব মেনে নিয়েছি। কারন কখনো আমার ভুল সিদ্ধান্ত নাও নি। আজ ও নিবে না আমি জানি। তুমি যা চাইবে তাই হবে মামা।
মঞ্জিল সাহেব ভাগ্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর এইদিকে সুমুর ভিতরে চলছে এক রহস্যময় ঘূর্নিঝর।

গাড়ি মাঝ রাস্তায় আসলেই দেখতে পায় আরিফ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অগ্নি গাড়ি থেকে নেমে ইউভি আর রায়ানের উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,,,
” আমার কাজ আছে তরা চৌধুরি ভিলায় ফিরে যা। ইয়ানা যদি জিজ্ঞাসা করে কিছু তাহলে বলবি কাজে আছে।
ইউভি কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” রাত হয়ে আসছে এখন আবার কি কাজ?
অগ্নি রহস্যময় হাসি দিয়ে এখান থেকে চলে যায়।
অগ্নির হাসি দেখে ইউভি বিরবির করে বলে,,,,,,
” সাইকো।
আরিফ গাড়ির কাউচের দিকে তাকিয়ে রায়ানের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৫

” ভাই বিয়ে কি ঠিক হিয়ে গিয়েছে?
রায়ান — হুম।
আরিফ হাসি দিয়ে বলে,,,,,,
” আলহামদুলিল্লাহ। ভাই মিষ্টিটা পাঠিয়ে দিয়েন।
আরিফ হাসতে হাসতে চলে যায় অগ্নির কাছে। এরপর সিটে বসে গাড়ি স্ট্রাট দেয়। মুহূর্তেই গাড়িটি চলে যেতে থাকে গন্তব্যে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৭