অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৭
লিজা মনি
অন্ধকার রুমে আবছা আলোতে চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় আছে একজন লোক। বয়সটা হালকা বয়সের। মুখে কস্টিপ লাগানো। কথা বলতে পারছে না। শুধু চারদিকে তাকিয়ে ভয়ে মুচরামুচরি করে যাচ্ছে। এমন সময় দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসে একজন ব্যক্তি। শরীরে কালো লং কোর্ট। মাথায় আছে কালো হুডি । লোকটা ধীর পায়ে এসে বাঁধা লোকটার সামনে বসে। ঘাড় কাত করে বাঁধা লোকটার দিকে তাকায়। লোকটা ব্যক্তিটির হালকা ব্রাউন চোখগুলো দেখে আৎকে উঠে। মুখের কস্টিপ খুলে দেওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে। প্রায় বিশ মিনিট পিনপিন নিরবতা। লোকটার মুখ খুলে দেওয়া হয়। লোকটা ছাড়া পেতেই কালো হুডি পড়া ব্যক্তিটার দিকে আকুতি নিয়ে বলে,,,,,,
” আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন? আর আপনারা কারা?
হুডি পড়া ব্যক্তিটি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” সেটা তর না জানলে ও চলবে।
এরপর সামনের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে বলে,,,,,
” আরিফ দলিলগুলো নিয়ে আয়।
লোকটি সকল বডিগার্ডের দিকে তাকায়। সবাই কালো হুডিতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। মুখ দেখার ইয়াত্তা নেই। আরিফ কথামত একটা ফাইল নিয়ে এসে বলে,,,,,,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” ভাই এখানে সব কিছু আছে। যা যা করতে বলেছিলেন সব করা শেষ।
অগ্নি বাঁকা হেসে লোকটার আতঙ্কিত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” ভয়ে পাবেন না। মারার জন্য আনি নি। যাস্ট সবগুলো জায়গায় সাইন করে দিন।
লোকটা কাগজের দিকে তাকিয়ে বলে ,,,,,,
” কিসের কাগজ এইগুলো?
অগ্নি গম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,,,,
” তর সমস্ত সম্পত্তির।। নে দ্রুত সাইন কর। সময় খুব কম আমার।
লোকটা অবাক হয় প্রচুর। সাথে ভয় আর অসহায়ত্ব মিশিয়ে বলে,,,,,,
” আমার সম্পত্তির উপর নজর কেনো গিয়েছে আপনাদের? কারা আপনারা? কোনো ছিনতাইকারী? আচ্ছা যদি ছিন্তাইকারী হয়ে থাকেন তাহলে টাকার প্রয়োজন তাই তো? দিয়ে দিচ্ছি আমি আমার ব্যাংকের একাউন্ট। সেখানে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আছে। আপনারা অনায়াসে নিয়ে নিন। কিছু করব না। পুলিশ ফাইল ও করব না। তবুও ছেড়ে দিন আমাকে।
অগ্নি শান্ত চোখে লোকটার দিকে তাকায়। এরপর ধীরে ধীরে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। অগ্নির সেই ভয়ানক হাসিতে লোকটা কেঁপে উঠে। সিটিয়ে যায় চেয়ারের সাথে। অগ্নি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায়। এরপর লোকটার দিকে ঝুঁকে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,,
” টাকার গরম দেখাচ্ছিস তুই আমার সাথে? তুই জানিস আমি কে? তর মত এমন লোককে আমি লক্ষবার কিনে নিতে পারি। কিন্তু এত টাকার মালিক হয়ে কি লাভ যদি আমার বউকে ছোটলোক উপাধি শুনতে হয়। আর সেই উপাধি কে দিয়েছে জানিস?
লোকটা ভয়ে ঘেমে যায়। হালকা মাথা নাড়িয়ে না বলে।
অগ্নি শান্ত আওয়াজে একদম মিহি সুরে বলে,,,,,
” তর মেয়ে। হ্যা তর মেয়ে আমার বউকে ছোটলোক, গরিব বলেছে। আমার বউয়ের সামান্য চুলের সমান হতে পারবে তর মেয়ে। তাহলে ছোট লোক কেনো বললো তর মেয়ে? এইবার তর সব সম্পত্তি নিয়ে তদের পথে বসাব। আর তর মেয়ের হবে এটাই শিক্ষা। যাতে পরের বার আমার বউয়ের দিকে তাকালেও কেঁপে উঠে।
লোকটা আতঙ্কিত হয়ে বলে,,,,,
“” ও ছেলেমানুষ একটু, তাই ভুল করে বলে ফেলেছে। আপনার বউয়ের কাছে আমার মেয়ে পা ধরে ক্ষমা চাইবে। তবুও প্লিজ আমাদের এত বড় সর্বনাস করবেন না।
লোকটার আকুতি দেখে অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,
” চুপ। এইভাবে ন্যাকা কান্না করছিস কেনো? ক্ষমা নামক কোনো ওয়ার্ড নেই আমার কাছে। আর সেটা যদি আমার বউকে ঘিরে হয় তাহলে তো আর ও আগে নেই। মেয়ে বলে আজ তর মেয়ে বেঁচে গেলো। যদি ও ছেলে হত তার দেহটা এতক্ষনে ছিন্নবিচ্ছন্ন করে সালফিউরিক এসিডে ডুবিয়ে মারতাম। চুপচাপ সাইন কর। নাহলে শুধু তুই নয় তর পুরো পরিবারকে আমি যমের দরজায় পাঠাব। তখন তর মেয়ে ও ছাড় পাবে না।
লোকটা শান্ত হয়ে বলে,,,,,,
“” এই ব্যবসা আমার রক্তে গড়ে তুলা। এইভাবে আমি বিলিয়ে দিতে পারব না। প্রয়োজন হলে প্রশাসনের সহায়তা নিব। তবুও কাউকে দিব না।
অগ্নি ঘাড় কাত করে ব্যাক্তিটার দিকে তাকায়। বিকৃত হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” বেঁচে ফিরে তবেই না প্রশাসন ডাকবি। আর অফিস্যারের নাম্বারটা আমার থেকে নিয়ে যাস। সাইন করবি নাকি পুরো ফ্যামিলি জ্বালিয়ে দিব। চিন্তা করিস না তর ভবনের চারপাশে আমার লোক। যাস্ট একটা ফোনে তর ছেলে মেয়ে সব ধ্বংস হবে। এখন বল আমি কি ফোন দিব নাকি তুই সাইন করবি?
লোকটা ভয়ে আৎকে উঠে। পরিবারের জন্য হাহাকার করে উঠে হৃদয়। কলমটা হাতে নিয়ে কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,,
” কোথায় কোথায় সাইন করতে হবে বলেন আমাকে? আমি সাইন করছি।
অগ্নি ইশারা দিতেই লোকটা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে সাইন করে দেয় কয়েকটা জায়গায়।
লোকটা — আমার সব সম্পত্তি এখন আপনার। আমার পরিবারকে ছেড়ে দিন।
অগ্নি পেপারগুলো হাতে নিয়ে বলে,,,,,
” গুড জব। তবে সম্পত্তি আমি নয় এইগুলো এতিম খানায় যাবে। আর সেটা তর নামেই যাবে। সবাই জানবে তুই নিজ দায়িত্বে নিজের সম্পত্তি এতিম খানায় দান করেছিস। আর নিজে বেছে নিয়েছিস এক সাধারন মদ্ধবিত্ত জীবন। মন খারাপ করিস না তর সুনাম হবে প্রচুর।
আরিফ অগ্নির কথায় ভেবেচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। সবকিছু কেড়ে নিয়ে সান্তনা দিচ্ছে নাকি ভালোমানুষি দেখাচ্ছে।
অগ্নি বাঁকা হেসে একজন গার্ডের উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,,
” উনাকে উনার বাড়িতে নিয়ে পৌছে দিয়ে আয়।
লোকটা একদম পাথরের মত হয়ে যায়। নিজের সবকিছু হারিয়ে যেনো একদম চুপ হয়ে গেছে। লোকটাকে নিয়ে একটা গার্ড চলে যায়।
অগ্নি ভিতর থেকে বেরিয়ে গাড়িতে যেতে নিবে এমন সময় একটা গুলি এসে আচমকা তার বুক বরাবর ঘেসে যায়। বুকে না গেঁথলেও কিছুটা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে। আচমকা আক্রমনে সে কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু পরমুহূর্তেই রাগে পুরো শরীর কেঁপে উঠে। ভয়ানক নজরে সেই দিকে তাকায় যেখান থেকে গুলি এসেছে। সেখানে তাকাতেই একটা ছায়া সরে যায়।
আরিফ অগ্নির কাছে এসে অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,
“” ভাই লাগে নি তো? ভাই রক্ত ঝড়ছে।
অগ্নি হালকা আওয়াজে বলে ,,,,,
“” না লাগে নি, ঠিক আছি আমি। শুধু শরীর ঘেসে গিয়েছে।
অগ্নি আরিফকে কিছু একটা ইশারা দিতেই আরিফ সেখান থেকে সরে যায়। অগ্নি নিজের লং কোর্টটাকে খুলে গাড়ির ভিতরে ছুঁড়ে মারে। এর পর বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে। যাতে অতিরিক্ত ব্লিডিং না হয়। কিছুটা গম্ভীর হয়ে গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। কিছুক্ষনের মধ্যে কারোর গোঙ্গানির আওয়াজ ভেসে আসে। সেদিকে তাকিয়ে দেখে আরিফ একজন ছোটখাটো ব্যক্তিকে কলার চেপে ধরে নিয়ে আসছে। আর লোকটা সর্ব শক্তি দিয়ে ধ্বস্তাধস্তি করে যাচ্ছে। আরিফ এক ঝটকায় লোকটাকে অগ্নির সামনে এনে ছুঁড়ে মারে। লোকটা মাটিতে গিয়ে মুখ থুবরে পড়ে। আরিফ লোকটার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” ভাই এই ছেলেটাই গুলি মেরেছে। শালা সাইজে ছোট হলে কি হবে কাজ করে একদম আকাশ সমান।
অগ্নি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হয়ে হলে ,, ,,,,,,
“আমার কাছেই কেনো বার বার মরতে আসিস তরা? আর কত রক্ত রাঙ্গা করব এই হাত? এতটা ভালোবাসিস আমাকে যে আমার হাতে একদম মরতে চলে আসিস। বুকের পাঠা দেখে আমি যাস্ট অবাক হচ্ছি। দেখে তো মনে হচ্ছে বিশ – বাইশ বছরের। অল্প বয়সে এত তেজ। আর সেই তেজ নিয়ে চলে এসেছিস অগ্নি চৌধুরিকে মারতে। আমাকে ভালো হতে দিবি না তাই না।
শান্ত কন্ঠস্বর ধীরে ধীরে ভয়ানক আওয়াজে পরিনত হয়। ক্রোধে চোখের কার্নিশ লাল হয়ে যায়। পায়ে পড়া শক্ত সু দিয়ে ছেলেটের গলায় চেপে ধরে। ছেলেটা মাটির সাথে ছটফট করতে থাকে। অগ্নির পা ধরে নিজের গলা থেকে বার বার নামাতে চেষ্টা করছে। যতবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছে ততবার আঘাত আরও শক্ত হয়ে পড়ছে। ছেলেটার গলা থেকে গড়গড় করে রক্ত পড়তে থাকে।
অগ্নি দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,,,,,,
” তকে তো কোনো দলের লোক মনে হয় না। তাহলে কে দিয়েছে তকে এই কাজ?
লোকটা অসহায়ত্ব নিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। কথা বলার মত শক্তি নেই। গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। শুধু গলার গেরগের শব্দ বের হচ্ছে। ছেলেটার চোখ উল্টে যাবে এমন পর্যায়। পুরো মুখ লাল হয়ে রগ ভেসে উঠেছে। তবুও কষ্ট করে কয়েকটা শব্দ উচ্চারন করে বলে,,,,,,
‘ চি.. নি না আমি। এ. কটা লোক ফোন করে জানিয়েছে আপনাকে মারলে আমাকে বিশ লক্ষ টাকা দিবে। আমি বিশ হাজার টাকা ও কখনো একসাথে চোখে দেখে নি। আর বিশ লক্ষটার কথা শুনে লোভ সামলাতে পারি নি।
ছেলেটার জবানবন্দি শুনার পর অগ্নি পর পর ছয়টা গুলিবিদ্ধ করে। ছয়টা গুলি বুক, পাজর, মস্তষ্ক, বক্ষ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ছেলেটার চোখ উল্টে আসে। রক্তে ভেসে যায় বাহিরের ঝোপঝাড় পূর্ণ মাটি।
অগ্নি বন্ধুকটা গাড়িতে রেখে বিরবির করে বলে,,,,,,
” লোভের কারনে চলে এসেছিস মারতে। জেনে তো আসবি আমি কে?
এরপর ভিতরে থাকা গার্ডদের ইশারা দেয়। যাতে লাশটাকে নিয়ে সালফিউরিক এসিডে ডুবিয়ে দেয় আর রক্তগুলো পরিষ্কার করে ফেলে।
অগ্নি গাড়িতে গিয়ে বসে। আরিফ ড্রাইভিং করে বলে,,,,,,,
” ভাই কোন হসপিটালে যাব?
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,,
” হসপিটালে কেনো?
আরিফ — ভাই ব্লিডিং হচ্ছে আপনার। যেকোনো সময় ঙ্গান হারিয়ে ফেলবেন। হসপিটালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে আসেন।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,,
” সুস্থ মানুষকে অসুস্থ কেনো বানিয়ে দিচ্ছিস হসপিটালের নাম ভাঙ্গিয়ে। এইসব ব্লিডিং কমে যাবে বউয়ের কাছে গেলেই। একদম সুস্থ হয়ে যাব।
আরিফ অবাক হয়ে বলে,,,,,,,,
” বউয়ের কাছে গেলে ব্লিডিং কমে যায় ভাই? ভাবি কি ডাক্তার নাকি? নাকি সাইন্স আপনি নিজে আবিষ্কার করছেন?
অগ্নি গাড়িতে থাকা ফার্স্ট বক্স থেকে ব্যান্ডেজ বের করে বুকে বেঁধে বলে,,,,
” তুই আগামী ছয় বছর বিয়ে করতে পারবি না আরিফ। আমার বউয়ের ডাক্তারির দিকে তুই আঙ্গুল তুলে আমার নামে চালিয়ে দিচ্ছিস। এমন সাইন্স আমি নয় ও নিজে আবিষ্কার করেছে। দেখিস না আমি ওর কাছে গেলে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
আরিফ হতাভাগ হয়ে বলে,,,,,,,,
” ভাই বয়স আমার ছাব্বিশ। আরও ছয় বছর পর আমাকে কে বিয়ে করবে? আমি তো ভাই জানতাম না এইটা ভাবির আবিষ্কার।
অগ্নি — গার্লস স্কুলের সামনে গিয়ে দাড়াবি দেখবি অনেক বাচ্চাকে তাদের মায়েরা কোলে করে নিয়ে স্কুলে দিয়ে আসছে। সেই বাচ্চাদের মধ্যে কাউকে পছন্দ করে ফেলবি। ছয় বছর পর দেখবি সেই মেয়েটাও বড় হয়ে গিয়েছে।
আরিফ হতাস হয়ে বলে,,,,,,,
“” বিয়ে করে বউকে কোলে করে ফিডিং করাব। এত বড় শাস্থি আমাকে দিতে পারেন না ভাই।
অগ্নি — এইটা তো তর গর্ব। কয়জনের ভাগ্যে আছে এমন। বউকে কোলেপিঠে করে বড় করার। আর একটা কথা না বলে আমাকে দ্রুত বাড়িতে নিয়ে চল। রাত একটা বাজে নিশ্চয় বউটা একা বিছানায় ছটফট করছে। স্বামী পাশে না থাকার হাহাকারে।
আরিফ মনে মনে ভাবে ভাই এত নির্লজ্জ হলে কবে থেকে। এই গম্ভীর, হিংস্র, রাগী মানুষটা ও কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে।
ইয়ানা ডিভানে বসে থাকা অবস্থায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। উড়নাটা গলার সাথে পেচিয়ে আছে। এক পা ডিভানে তুলে রাখা আরেক পা কাউচের উপর। মাথাটা এক সাইটে হেলে পড়ে আছে। ডিম লাইটের লাল আলোতে ইয়ানার মায়াবী ফর্সা মুখশ্রিটা ভেসে উঠে। রুমে ডুকে ইয়ানার এমন অবস্থা দেখে অগ্নি হালকা হাসে। এত বড় বিছানা থাকতে এই মেয়ে ডিভানে বসে এইভাবে পাগলের মত কেনো ঘুমাচ্ছে? অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে ইয়ানার কাছে যায়। এরপর চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিয়ে কপালে আর গলায় কয়েকটা চুমু খায়। ইয়ানা কিছুটা নড়ে উঠে। অগ্নি হালকা হাসে। ইয়ানার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আনমনে বলে,,,,,
” অনুভবের সেহজাদী এতটা আকর্ষিত কেনো তুমি? আ্যলকোহল খেয়ে ও আমি মাতাল হয়ে যায় না অথচ তোমার কাছে আসলেই মাতাল হয়ে যায়। তুমি নিজেই কি আ্যলকোহল নাকি নিজের শরীরের আ্যালকোহল মাখিয়ে রাখো আমাকে সিডিউস করার জন্য?
ইয়ানার শব্দ না পেয়ে অগ্নি মুচকি হেসে পাঁজা কোলে তুলে নেয়। ইয়ানা কোলে নিতেই ক্ষত স্থানে টান অনুভব হয়। ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইয়ানাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সরে আসতে নিবে এমন সময় চট করে ইয়ানা চোখ খুলে তাকায়। অগ্নির উপস্থিতি পেয়ে তার দিকে না তাকিয়েই অধৈর্য হয়ে প্রশ্ন করে,,,,,,,
” কেনো করেছেন এমন? কেনো এক্সিডেন্ট করিয়েছেন রাসেদ স্যারকে?
অগ্নি ইয়ানার আওয়াজ পেয়ে পিছনে ফিরে কপাল কুচকে বলে,,,,,
” মানে? আমি কখন মি, রাসেদকে এক্সিডেন্ট করাতে গেলাম?
ইয়ানা বিছানা থেকে নেমে রাগে অগ্নির কলার চেপে ধরে বলে,,,,,,,
” একদম ইনোসেন্ট সাজার চেষ্টা করবেন না। আপনি কিন্তু মোটেও ইনোসেন্ট নন। একটা পিশাচ জানোয়ার আপনি। এত অভিনয় কেনো করেন আমার সাথে? আমি বোকা তাই? নাকি আপনার প্রেমে অন্ধ দেখে? এতকিছুর পর ও আপনার থেকে আলাদা হতে পারছি না দেখে এই দুর্বলতার সুযোগ নেন। আমার অনুভুতি নিয়ে খেলেন কেনো বার বার?
ইয়ানা অগ্নির কলার চেপে ধরাতে তার হাত গিয়ে ক্ষত বরাবর ঠেকে। ফলে কাঁচা ঘাঁ আরও তরতাজা হয়ে উঠে। ব্যান্ডেজের উপর দিয়ে কিছু রক্ত বের হয়ে আসে। অগ্নি ইয়ানাকে কিছুটা ধমক দিয়ে বলে,,,,,,
” যাস্ট স্টপ ইয়ানা। পাগলের মত কিসব বকছো? আর একটা কথাও যাতে না শুনি।
ইয়ানা চোখের পানি ছেড়ে বলে,,,,,,
“” ক্ষমতা আছে আপনার কাছে। তাই যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন। কিন্ত নির্দোষ ব্যক্তিদের কেনো মারেন? তাদের তো পরিবার আছে। আপনি বুঝেন পরিবার হারানোর যন্ত্রনা? আপনি কি করে বুঝবেন মায়া আর ভালোবাসা। সারাজীবন তো থেকেছেন অসামাজিক পরিবেশে। আপনি জানেন রাসেদ স্যার হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। উনার বউ বাচ্চা করিডরে বসে কান্না করছে। আর আপনি দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আমার কথার কোনো দাম নেই না আপনার কাছে? বার বার মিনতি করেছি কিছু করবেন না প্লিজ। কিন্তু সেই আপনি করেছেন।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানার পুরো মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। অগ্নি রাগ করে না আর। এগিয়ে এসে ইয়ানার গালে স্পর্শ করে বলে,,,,,,
” কি অবস্থা করেছো কান্না করে। আমি যদি রেগে যায় তাহলে কি হবে জানো তো? মি,রাসেদকে আমি এক্সিডেন্ট করায় নি। আমরা গিয়েছিলাম সুমাইয়ার বিয়ে ঠিক করতে। তখন রাস্তায় দেখেছি কাউকে এক্সিডেন্ট হতে বাট আমরা গাড়ি নিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে যায়। আমি কাউকে এক্সিডেন্ট করিয়ে মারি না। যাকে মারি তাকে আমার টর্চার সেলে নিয়ে মানসিক যন্ত্রনা দিয়ে ধীরে ধীরে তিলে তিলে মারি। আশা করি বুঝতে পেরেছো?
ইয়ানা কিছুটা শান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,,,,,,
” টর্চার সেল কি?
অগ্নি ইয়ানার প্রশ্নে হালকা হেসে বলে,,,,,,,
” মাফিয়া সম্রাজ্যের এক টুকরো অংশ।
ইয়ানা — আপনার মাফিয়া সম্রাজ্য তো এখানে না তাহলে এখানে আপনার টর্চার সেল আসলো কোথা থেকে?
অগ্নি — আছে ছোট একটা।
ইয়ানা — হয়ত স্যারকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার সময় পাননি। তাই গাড়ি চাপা দিয়ে মারতে চেয়েছেন। আপনার কথা কিভাবে বিশ্বাস করবো বলোন। মিথ্যে অভিনয় তো আমার সাথে কম করেন নি। সবসময় ভালোর মুখোশ পড়ে আমার সামনে এসেছেন। এখন আপনার ভালোটা ও বিশ্বাস হয় না।
অগ্নি ইয়ানার কথায় ঠোঁট চেপে ধরে বলে,,,,,,
” উমম ইয়ানা তোমার বিশ্বাস দিয়ে আমি কি করব? আমি তো আর মন্ত্রী পদে দাড়াচ্ছি না যে আমাকে জনগনের বিশ্বাস মানিয়ে চলতে হবে। তোমার তো মনে হয় ভোট ও নেই। তোমার বিশ্বাস করতে হবে না শুধু আমাকে কাছে আসার সুযোগ দিলেই হবে স্টুপিড।
শেষের কথাটা অগ্নি কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে। তবে সে আর এখানে দাঁড়ায় না। চলে যায় নিজের পরিত্যক্ত স্টাডি রুমে। ইয়ানা হতাস হয়ে বসে পড়ে বিছানায়। উনি কি সত্যি বলছে? উনি সত্যি রাসেদ স্যারকে এক্সিডেন্ট করায় নি। যদি না করিয়ে থাকে তাহলে কি উনি হঠাৎ এক্সিডেন্টের স্বীকার হয়েছে। কাহিনী এত সুন্দর ভাবে মিলে গেলো। আজ উনি বলেছেন রাসেদ স্যারের ক্ষতি করবে আর আজ ওই উনি এক্সিডেন্ট করেছে।এতটা মিলে যেতে পারে সবকিছু। আমার কি বিশ্বাস করা উচিৎ নাকি আবার ও ঠকে যাব।
পানি পিপাসে লাগায় পানি খাওয়ার জন্য গ্লাস নিতে যাবে এমন সময় নিজের হাত থেকে আৎকে উঠে। রক্ত! রক্ত কেনো আমার হাতে? উনি রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন আর আমি খেয়াল করিনি। নিজের রক্ত নাকি অন্যের রক্ত শরীরে লাগিয়ে এসেছেন। ইয়ানা আর পানি খায় নি। বুকটা ধড়ফড় করছে। বিছানা থেকে নেমে মাথায় উড়না চেপে রুম থেকে বের হয় অগ্নিকে খুঁজার জন্য।
নিজের বেডরুমে মিউজিক চালিয়ে নাচছে ঝর্না। সামনে ভিবিন্ন ধরনের ওয়াইন। এক প্রকার মাতাল হয়েই নাচ করছে। নাচার ব্যাঘাত ঘটে কারোর ফোনের রিংটনে। ঝর্না টলতে টলতে গিয়ে ফোনটা বিরক্তি নিয়ে কানে চেপে ধরে বলে,,,,,,
” হ্যালো কে বলছেন?
অপরপাশ থেকে,,,,,,,
” চোখ বুলিয়ে নাম্বারের দিকে তাকাও। মাতাল হয়ে বুদ হয়ে আছে। অগ্নি চৌধুরি কি মরে টরে গেলো নাকি?
লোকটার কথা শুনে ঝর্না ধমক দিয়ে বলে,,,,,,,
” সেট আপ রায়হান আমার অগ্নিকে নিয়ে আজেবাজে কথা একদম বলবে না। ও বেঁচে থাকবে। আমি ওর সাথে সংসার করব এরপর এক সাথে মরব।
রায়হান বাঁকা হেসে বলে,,,,,,,
” বোকা নারী এসেছে অগ্নি চৌধুরির সাথে সংসার করতে। কিন্তু ওর তো মরে যাওয়ার কথা। তাহলে কি ছেলেটা মারতে পারে নি?
রায়হানের বিরবির করা কথা ঝর্নার কানে আবছা পৌছাতেই বলে,,,,,,
” কি বললে তুমি?
রায়হান — কিছু না। মাতাল হয়ে থাকার জন্য বাংলাদেশ গিয়েছো নাকি?
ঝর্না অট্টহাসি দিয়ে টলতে টলতে বিছানায় ধপাস করে করে পড়ে। এরপর বলে,,,,,,,
” আজ আমার খুশির দিন। তাই মদ খেয়েছি। এনজয় করছি কিছুটা। অগ্নি চৌধুরি আর ইয়ানার সম্পর্ক ভাঙ্গনের শুরু।
রায়হান সন্দেহ করে বলে,,,,,
” মানে?
ঝর্না মাতলামো কন্ঠে বলে,,,,,,,
” মানে হলো এই যে আমি এক ধাপ এগিয়ে গিয়েছে। বিকালে ইয়ানা অগ্নিকে মিনতি করতে দেখেছি তাদের ভার্সিটির স্যারকে যাতে না মারে। আমি তখন সেখানে এক পাশে লুকিয়ে ছিলাম। যেহেতু তারা বাড়ির বাহিরে কথা বলেছে তাই সব শুনেছি। কিন্তু ইয়ানার মিনতি অগ্নি তাচ্ছিল্যভাবে উড়িয়ে দেয়। ইয়ানা কান্না করে বার বার বলছিলো যাতে কিছু না করে। আর সেটার ও সুযোগ নিয়েছি আমি। মেরে দিয়েছি স্যারটাকে। কিন্তু শালা মরে নি। গাড়ি দিয়ে ধ্বাক্কা দেওয়ার পর ও বেঁচে গিয়েছে। যায় হোক নিশ্চয় এখন সব দোষ অগ্নির কাছে গিয়ে পড়ব। ইয়ানা ঘৃনা করবে বেশি বেশি করে। এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্ক শেষ। ওই মেয়ের জায়গায় আমি যাব। আমি হব অগ্নি চৌধুরির ওয়াইফ।
ঝর্না এইসব বলতে বলতে চোখ বন্ধ করে ফেলে। রায়হান ঝর্নার শব্দ না পেয়ে বার বার হ্যালো হ্যালো করছে। বুঝেছে বেশি গিলার কারনে ঘুমিয়ে পড়েছে। রায়হান রেগে কিছুটা বিশ্রি গালি দেয়। তারপর ঝর্নার কথাটা ভেবে হাসি ফুটে উঠে।
ইয়ানা কিছুক্ষন খুঁজাখুঁজির পর অগ্নিকে দেখতে পায় একটা পরিত্যক্ত স্টাডি রুমে। খোলা বুক। চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইয়ানা বিনা আওয়াজে সেই দিকে এগিয়ে যায়। অগ্নির বুকে ক্ষত দেখে ইয়ানা আৎকে উঠে। কেমন ক্ষত হয়ে আছে জায়গাটা। ফর্সা বুকের চারপাশে লাল হয়ে গিয়েছে একদম আর মধ্যে গভীর ইনজুরি। ইয়ানা ফুঁপিয়ে উঠে। এমন আঘাত নিয়ে কিভাবে শান্তিতে শুয়ে আছে। ব্যাথা লাগে না লোকটার? ইয়ানা আস্তে করে ইয়ানার ক্ষত জায়গায় স্পর্শ করতে যাবে হুট করে অগ্নি হাত ধরে ফেলে। চোখ খোলে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা ক্ষত থেকে চোখ সরিয়ে অগ্নির দিকে অশ্রু নয়নে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার হাত সরিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,,,,
” কেনো এসেছো এখানে? রাগ কমানোর জন্য এখানে এসেছি। পুনরায় এখানে আসলে। আবার রাগাতে এসেছো? আমার ধৈর্য খুব কম। উল্টাপাল্টা কিছু বলবে না কিছু করে বসব।
ইয়ানা শক্ত গলায় বলে,,,,,,,,,
” রাগাতে আসে নি। কতটা ক্ষত তাকিয়ে দেখেছেন। ব্যাথা করে না। রোবটের মত শক্ত হয়ে বসে আছেন।
ইয়ানার অথায় অগ্নি ঠোঁট নিচের কামড়ে ধরে হেসে বলে,,,,,,
” কিছু হবে না রুমে যাও। এমন ক্ষত কিছু হবে না।
অগ্নির এমন খাপছাড়া কথায় ইয়ানা শক্ত কন্ঠে নিয়ে বলে,,,,,,
” বসে থাকবেন এখানে। আসছি আমি। এসে যাতে আপনাকে একই জায়গায় দেখতে পায়। চুপচাপ বসে থাকবেন। একদম আমার কথার অবাধ্য হবেন না। হলে কিন্তু খবর খারাপ করব।
অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,,
” আমার ডাইলগ আমাকেই দিচ্ছো?
ইয়ানা — হ্যা দিচ্ছি। সমান সমান অধিকার তো তাই। চুপচাপ বসে থাকবেন আসছি আমি।
ইয়ানা স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে এসে তাদের রুমে যায়। এরপর ড্রয়ার খুলে ফাস্ট বক্স বের করে পুনরায় অগ্নির কাছে যায়। ভিতরে প্রবেশ করে বক্সটাকে কাউচের উপর রাখে। এরপর কাঁপা হাতে আ্যালকোহল আর তুলো নিয়ে অগ্নির সামনে গিয়ে ঝুঁকে। ইয়ানা কাঁপছে ভয়ে আর চিন্তায়। বুকে মনে হচ্ছে চাপা কান্না আটকে রেখেছে। চোখ দুটি স্থির অথচ ভিতরে তান্ডব চলছে। রক্তে ভেজা শার্টটা ধীর হাতে খুলে ফেলে। অগ্নি ঠোঁট কামড়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইয়ানা তুলো দিয়ে গুলির চারপাশটা পরিষ্কার করে। ইয়ানা তুলো ধরে কিছুটা চাপ দেয় যাতে ভেতর থেকে ও পরিষ্কার হয়। অগ্নির ব্যাথা লাগে তবে কোনো শব্দ করে না।
ইয়ানা অগ্নির ক্ষত জায়গায় ফুঁ দিয়ে বলে,,,,,,
” শুধু একটু ব্যাথা লাগবে। রক্তটা পরিষ্কার করেই ব্যান্ডেজ করে দিব।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” এত বেপোরোয়া কেনো হচ্ছো? আমার মত জানোয়ার, নরপশু গুলিবিদ্ধ হয়ে পচে মরি তাতে কি যায় আসে তোমার? তুমি তো চাও আমি যাতে মরে যায়। তাহলে আঘাত দেখে এইভাবে বেপোরোয়া হওয়ার মানে কি? সরাও এইগুলো লাগবে না আমার।
ইয়ানা শক্ত চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। চোখে পানি টলমল করছে। যেকোনো সময় টুপ করে গড়িয়ে পড়বে। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে,,,,,,,,,
” আমাকে কষ্ট দিতে, আঘাত করতে খুব ভালো লাগে আপনার? আমার হাহাকার দেখে খুব আনন্দ পান তাই না। খারাপ হন বা যায় হন কিন্তু আমি আপনার স্ত্রী। আর আমি নিজের স্ত্রী ধর্ম সবসময় পালন করে যাব। এখন আপনি চাইলে ও করব না চাইলে ও করব। আপনি ক্ষতবিক্ষত হলে আমি ওই সারিয়ে তুলব।
অগ্নি একই ভঙ্গিমায় ইয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইয়ানা এক হাতে তুলো চেপে ধরে অন্য হাতে ধীরে ধীরে ব্যন্ডেজ করে দেয়। ব্যান্ডেজ শেষে ইয়ানা চলে আসতে চাইলে অগ্নি শক্ত হাতে ইয়ানার কোমর চেপে ধরে নিজের উড়ুর উপর বসিয়ে দেয়। অগ্নির এমন কান্ডে ইয়ানা ভড়কে যায়। ইয়ানা চোখ ঘুরিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নির চোখে মাদকতা, ব্যাকুলতা আর কাছে পাওয়ার তীব্র অনুভব। অগ্নির পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পেরে ইয়ানা চট করে উঠে আসতে চায়। কিন্তু অগ্নি গভীরভাবে ইয়ানাকে আকড়ে ধরে। ইয়ানা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলে,,,,,,,,
” আটকে রেখেছেন কেনো এইভাবে? ছাড়ুন আমাকে?
অগ্নি ইয়ানার ঘাড়ের পিছনে চুল গুলো সরিয়ে মুখ ডুবিয়ে বলে,,,,,,,,
” I need you so close…. I’m restless without you. ”
অগ্নির কথায় ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। কেঁপে উঠে পুরো শরীর। উঠে আসতে চায় কিন্তু পারে না। অগ্নি ইয়ানার পেট আকড়ে ধরে নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ইয়ানা অসহায় হয়ে বলে,,,,,,,,
” আপনি অসুস্থ মি, চৌধুরি। ব্যাথা পাবেন। আপনি সুস্থ হন আগে।
অগ্নি ইয়ানার কথায় মুখ তুলে বলে,,,,,,,,
” ফেরেশতারা কিন্তু অভিশাপ দিবে জান। আর এই হাদিস তুমি ওই আমাকে শিখিয়েছো। স্বামী আলিঙ্গন করলে দুরে যেতে নেই।
অগ্নির কথায় ইয়ানা ভ্রু নাচিয়ে তাকায়। এইটাও মনে রেখেছেন উনি? অগ্নির এই দুই বাক্যে চুপসে যায় ইয়ানা। কি বলবে আর। বলার মত কোনো ভাষা খুজে পাচ্ছে না। আত্নসমর্পন করে অগ্নির কাছে।
ইয়ানা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,,,,,,
” রুমে চলুন।
অগ্নি ইয়ানাকে কোলে তোলে নিয়ে বলে,,,,,,,
” প্রয়োজন নেই। আমার পুরনো স্টাডি রুম ওই যথেষ্ট। ভালোবাসা থাকলে বনজঙ্গলে ও সুন্দর।
অগ্নি ইয়ানাকে কাউচের উপর শুইয়ে দেয়। এরপর ধীর পায়ে দরজা বন্ধ করে আসে। এরপর ঝুঁকে পরে ইয়ানার উপর। অগ্নি ইয়ানার কানে ফিসফিসিয়ে বলে,,,,,,,,,
” নড়াচড়া কম করবে নাহলে হ্যান্ডকাফ লাগাব।
ইয়ানা চোখ বন্ধ করে কেঁপে উঠে। জানা নেই এই অনুভুতির নাম কি। এত দুরত্বের পর ও কেনো এত কাছে আসা। লোকটার তার স্বামী তাই? হয়ত।
অগ্নি ইয়ানার দুই হাত চেপে ধরে ঠোঁটগুলো আকড়ে ধরে। প্রত্যেকবারের মত প্রথমে নরম এরপর শক্ত উন্মাদনা। প্রায় দশ মিনিট পর ছেড়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” তোমাকে এখন কেমন লাগছে বলবো?
ইয়ানা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,,,,
” কে..কেমন?
অগ্নি ইয়ানার কানে হিসহিসিয়ে বলে। ইয়ানা মুহূর্তেই অগ্নির মুখ চেপে ধরে বলে,,,,,,
” অসভ্য।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে বলে,,,,,,,
” তাহলে অসভ্যতামি শুরু করা যাক।
ইয়ানা চোখ সরিয়ে নেয়। লজ্জায় পুরো মুখ রক্তিম হয়ে গিয়েছে।
অগ্নি ইয়ায়ানার গলায় মুখ গুঁজে দেয়। পরে……………. (ইতিহাস)
একটা ভারী লোহার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতেই প্রথম যে জিনিসটা নজরে পড়ে তা হলো নিস্তব্ধতা। একটা এমন নিঃসঙ্গ, ভারী নীরবতা, যা কানে বাজে। দেয়ালগুলো পুরনো ইটের তৈরি, কিন্তু প্রতিটা ইটে রক্তের দাগ লেগে আছে।যা শতচেষ্টাতেও পুরোটা মুছতে পারেনি কেউ। গাঢ় বাদামি থেকে কালচে লাল হয়ে ওঠা ছোপগুলো বলে দেয় এখানে কিছুর পরিণতি কখনোই ভালো ছিল না।
ঘরের মাঝে ঝুলে থাকা একটা মরিচা ধরা লোহার শিকল আস্তে আস্তে দুলছে। মনে হচ্ছে কেউ কিছুক্ষণ আগেও ধরে ছিল ওটা। শিকলের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে কিছু গুলিয়ে যাওয়া চুলের গোছা। কয়েকটা নখের টুকরোযেগুলো নিশ্চয়ই কারো শেষ আর্তনাদ থেকে পড়ে গেছে।
কোনো কোনো দেয়ালে আঁকা আছে বিশৃঙ্খল আঁকিবুঁকি। নখ দিয়ে আঁচড় কাটা দাগ, বা হয়তো রক্তে লেখা অস্পষ্ট কিছু শব্দ “বাঁচাও”। এগুলোর দিকে তাকালেই হাড়ে কাঁপুনি ধরে যায়।
ছাদ থেকে ঝুলে থাকা একমাত্র বাল্বটা ফ্লিকার করতে করতে আলো দিচ্ছে। চোখ টিপে দিচ্ছে এই জঘন্য ইতিহাসকে। কোথাও কোথাও থেকে পানি চুঁইয়ে পড়ছে না, হয়তো পানি না, হয়তো রক্ত। ঘরের এক কোনায় ধুলো পড়ে থাকা একটা কাটা হাতের কাঠামো।হাড় বেরিয়ে থাকা, পচন ধরা চোখ আটকায় অজান্তেই।
ঘরের বাতাস ঘন, ভারী, আর কেমন একটা পঁচা ধাতুর গন্ধ।যেটা নাকে ঢুকলে বমি পায়, কিন্তু তবু নিশ্বাস নিতেই হয়। নিস্তব্ধতা এতটাই গভীর যে নিজের হৃদস্পন্দনও ভয় পেয়ে কমে আসে। এ ঘরটা কেবল একটা ঘর নয় এটা একটা অভিশাপ, একটা জীবন্ত প্রমাণ, কতটা নিচে নামতে পারে মানুষ।
এখানে যারা এসেছিল, তারা আর কখনো দিনের আলো দেখেনি।আর সেই কান্নার, চিৎকারের, হাহাকারের প্রতিধ্বনি এখনো দেয়ালের ফাঁকে রয়ে গেছ
শুধু কান পেতে শুনলেই বোঝা যায়।
অন্ধকারের এই নিরবতা ভেঙ্গে ছয় সাত জন লোক প্রবেশ করে। সবার মুখে লাল কাপড় বেঁধে রাখা। একটা রুমে গিয়ে ডুকে। যেখানে বিশ – পঁচিশ জন মেয়ে বেঁধে রাখা। আর ছয় – সাত জন বাচ্চা শিশু। সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। লোকগুলো সবাইকে তুলে নিয়ে ট্রাকে তুলে। এর মধ্যে একজন মেয়ের ঙ্গান ফিরে আসে। মেয়েটা এমন দৃশ্য দেখে ভয়ে কান্না করে বলে,,,,,,,
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের? কারা আপনারা?
মেয়েটার চিৎকার শুনে লোকটা চেঁচিয়ে বলে,,,,,,
” এই চুপ থাক একদম।
এরপর কাউকে ডাক দিয়ে বলে,,,,,,,,
” বস একটা মেয়ে উঠে গিয়েছে। কি করবে এইটাকে বেশি সমস্যা করছে।
লোকটার কথায় অপর পাশের ব্যক্তিটা বলে,,,,,,,,,
” পুনরায় ড্রাগস দে।আর দ্রুত ট্রাকে টুল। আজান হয়ে যাবে কিছুক্ষন পর।
লোকটা — ওকে বস।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৬
এরপর মেয়েটার হাতে ড্রাগস পুশ করে দেয়। মেয়েটা কিছুক্ষনের মধ্যে নেতিয়ে পড়ে। এরপর ট্রাকের মধ্যে নিয়ে তুলে। সবাই ট্রাকের ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করে। একটা লোক গিয়ে ট্রাকের ড্রাইভিং সিটে বসে স্ট্রাট দেয়। দ্রুত চলতে থাকে ট্রাকটা। আর ভিতরে পরে আছে কিছু নরম প্রান।