অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৯
লিজা মনি
পরেরদিন একটা মিষ্টি সকালের আগমন ঘটে। সকালের মিষ্টি রোদ এসে মুখে আছড়ে পড়ছে। স্নিগ্ধ বাতাস জানান দিচ্ছে এক নতুন দিনের সূচনা। ইয়ানা মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেলকনিতে এসেছে। রাতের সপ্নটা তাকে বড্ড ভাবাচ্ছে। শাওয়ার নিয়ে আসা সত্বে ও ভয়ে পুরো শরীরে ঘাম ঝরছে। কি এক সাঙ্গাতিক সপ্ন ছিলো এইটা। ইয়ানার প্রচুর কান্না পাচ্ছে। কেনো পাচ্ছে তার জানা নেই। শুধু মনে হচ্ছে ভিতরে এক প্রকার যুদ্ধ চলছে। অগ্নির গুলিবিদ্ধ বুকটার কথা মনে পড়তেই ভিতরটা ধুমরে মুচরে ভেঙ্গে আসতে চাইছে।
ইয়ানা ঠোঁট চেপে কান্না আটকাতে চায়। কিন্ত এরপর ও চোখ গড়িয়ে পানির বন্যা হতে থাকে। বার বার চোখের পানি নিবারন করছে আর নাক টানছে। কেনো কান্না করছে ও? কার জন্য কান্না করছে? ওই হৃদয়হীন লোকটার জন্য! কি যায় উনার কাছে আমার কান্না, কষ্ট। উনি তো বুঝে ও বুঝেন না। উনার আঘাত দেখলে আমার সহ্য হয় না। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সাথে যুক্ত হয়ে আছেন উনি। ইয়ানা কিছুক্ষন মন খুলে কাঁদে। সামান্য হেচকি উঠে গেলে চোখ মুখ খিঁচে কান্না নিবারন করার চেষ্টা করে। কিছুক্ষন জিম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে রেলিং – এ ধরে। কিছুটা শান্ত হয়ে নাক মুখ মুছে রুমের ভিতরে যায়। রুমে প্রবেশ করতেই বিছানার দিকে তার নজর যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অগ্নি একটা কোলবালিশ আকড়ে ধরে এক কাৎ হয়ে শুয়ে আছে। ঘাড় আর কপাল ছুঁই ছুঁই চুলগুলো এলোমেলো হয়ে অগুছানোভাবে লেপ্টে আছে। ইয়ানা ধীর পায়ে অগ্নির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। চোখ যায় পিঠে, ঘাড়ে, গলায়। যেখানো ড্রাগন আর ও ভিবিন্ন ট্যাটু করা। ইয়ানা এইসব দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মাঝে মাঝে অগ্নির পিঠে আর গলায় ড্রাগনের ট্যাটু দেখলে ভয় পেয়ে যায়। হঠাৎ তাকালে কেমন জীবন্ত লাগে। ফর্সা পিঠে ছোট ছোট কত ক্ষতের দাগ। ইয়ানা বিছানায় বসে অগ্নির পিঠের ক্ষত জায়গাগুলোতে স্পর্শ করে। সামনে লেপ্টে থাকা চুলগুলো ঠিক করে দেয়। অগ্নির মুখটা কি মায়াবী লাগছে।
হালকা গোলাপী ঠোঁটগুলো বড্ড কাছে টানছে। কি বাচ্চামো লাগলছে চেহারাটা। অথচ এই মায়াবী চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক ভয়ংকার মুখোশ। যার চোখে, মুখে কোনো মায়া নেই। পিশাচের মত মানুষ খুন করে। পৃথিবীর বেশিরভাগ বাজে কাজের সাথে যুক্ত। যার আতঙ্কে থরপথর করে কাঁপে। সেই ব্যক্তিটি কিভাবে নশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। তার সাথে আমার বসবাস।
সেই ভয়ানক লোকটার সাথে এক বিছানায় থাকি। তার স্পর্শে বার বার হারিয়ে যায়। আচ্ছা আমার কি সবার মত ভয় করে না? করে তো, অবশ্যয় হয়। অজানা এক ভয় হয়। উনাকে ঘৃনা করার ভয়, অজানা এক ভবিষ্যতের ভয়, যদি উনার কিছু হয়ে যায় সেই ভয়, যদি কোনোদিন আমার ধৈর্যের সীমা হারিয়ে ভুল কিছু করে ফেলি সেই ভয়, আপনাকে হারানোর ভয়। আপনার রাগটাকেও প্রচুর ভয় হয়। অথচ অধিকার দেখিয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলি। অগ্নির মুখটার দিকে তাকিয়ে ইয়ানা নিচের ঠোঁট কামড়িয়ে হালকা হাসে। অগ্নির বুকের গুলিবিদ্ধ জায়াগাটায় ইয়ানা ঝুঁকে সামান্য ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। এরপর দুই গালে আলতো চুমু খেয়ে সোজা হয়ে বসে।
অগ্নির দিকে তাকিয়ে তার কানের কাছে গিয়ে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,
“” জানেন কতটা মায়াবী লাগছে আপনাকে। খারাপ মানুষের চেহারায় আলাদা এক মায়া থাকে সেটা লোকের মুখে শুনতাম। আর সেই কথার সত্যতা হিসেবে আমি আপনাকে দেখি। কেনো কাঁদান আমাকে এত? আপনার মনে হয় আপনাকে আঘাত দিয়ে কথা বললে আমার ভালো লাগে? খুব কষ্ট হয় আপনাকে কিছু বললে? খুব করে কাঁদি। এমনকি বদ্ধ রুমে চিৎকার করে কাঁদি। কেনো কান্না করি জানেন? আপনাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে। আমাদের সংসারটা তো সুন্দর করেই সাজিয়েছিলাম।
হঠাৎ করে এক ঝড় এসে সব ধ্বংস করে দিলো। আমাদের কি আর কখনো একটা সুন্দর একটা সংসার হবে না মি, চৌধুরি? আমি তো খুব সাধারন ঘরের একটা মেয়ে। যার কাছে এক হাজার টাকাও অনেক। আমার মত এমন সাধারন মেয়েকে আপনার মত মিলিয়ন – ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক কেনো বিয়ে করলো? যার কোটি টাকার ব্র্যান্ড না হলে সে জামা ছুঁয়েও দেখে না। সে বিয়ে করেছে আমাকে? কথাটা আমাকে আজও বড্ড ভাবায়।
অগ্নিকে ঘুমাতে দেখে ইয়ানা শ্বাস ছাড়ে। ক্ষত জায়গাতে স্পর্শ করে বলে,,,,,
“” আপনার ঠোঁটে একটু চুমু খায়। আমাকে সেই জায়গাটা খুব টানছে। খবরদার ঘুম থেকে উঠবেন না।
ইয়ানা মুখ এগিয়ে নেয় অগ্নির ঠোঁটের কাছে। চুমু খাওয়ার আগেই সে কারোর বাহুর নিচে পড়ে যায়। এমন আক্রমনে ইয়ানা হতভম্ভ হয়ে পড়ে। এখন ও চোখমুখ খিঁচে রয়েছে। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখে অগ্নি তার উপরে আর সে নিচে। তার দিকে কপাল কুচকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা সামান্য ঢোঁক গিলে। এতক্ষন যে বকবক করলো সব শুনে ফেললো নাকি? ইয়ানা উঠে আসতে চায় অগ্নির নিচ থেকে। কিন্তু অগ্নি ইয়ানার হাতদুটো নিয়ে মাথার দিকে শক্ত করে চেপে ধরে এক হাতে। আর অন্যহাতে ইয়ানার মুখে আছড়ে পড়া চুলকিয়ে গুলো সরিয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,,
“” পানি ঠান্ডা বেশি? শাওয়ার নিতে পারছো না?
অগ্নির এমন কথায় ইয়ানা কিছুটা টাস্কি খেয়ে তাকায়।
কথাটা বুঝতে না পেরে কপাল কুচকে বলে,,,,,
“” মানে?
অগ্নি ইয়ানার সাথে আর ও ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে,,,,
“” ঠান্ডা পানি তাই শাওয়ার নিতে পারছো না। তাই এসেছো আমাকে সিডিউস করে উত্তেজিত করতে। যাতে আমি ফরজ শাওয়ারের ব্যবস্থা করে দিতে পারি তাই তো?
ইয়ানা হাঁশফাঁশ করে বলে,,,,,
” বাজে কথা বন্ধ করুন। এরকম কিছুই নয়। আমি আপনার আঘাতগুলো স্পর্শ করছিলাম।
অগ্নি ভ্রু নাচিয়ে বলে,,,,,,
” আর আমার কানে ফিসফিস করে এতগুলো কথা কে বলেছে? কার এত বড় সাহস হয়েছে অগ্নি চৌধুরির রুমে ডুকার। আর কে যেনো এখন ওই আমার ঠোঁটের ভার্জিনিটি কেড়ে নিতে যাচ্ছিলো?
ইয়ানা লজ্জা আর বিরক্তিতে আরষ্ঠ হয়ে যায়। কে বলেছিলো এই লোককে গিয়ে চুমু খেতে।।এক মিনিট ও ছাড়বে না কথা শুনানো থেকে।
ইয়ানা শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,
” আপনি তার মানে ঘুমের অভিনয় করে ছিলেন।
অগ্নি — ঘুমিয়েছি কখন যে অভিনয় করে থাকব। চোখ বন্ধ থাকলে ও চেতনা ছিলো আমার ম্যাডাম।
ইয়ানা — পাক্কা অভিনেতা আপনি। সবদিক দিয়েই পারদর্শী। আপনার তো অভিনেতা হওয়ার দরকার ছিলো মুভির। মাফিয়া জগৎ- এর লিডার হতে কে বলেছিলো?
অগ্নি — কারন আমি এক নারীতে আসক্ত। আর সে ছাড়া বাকি সবাই আমার শাশুড়ি সমতুল্য। শাশুড়ি সমতুল্য পরনারীর সাথে অভিনয় করতে যাব কোন দুঃখে।
ইয়ানা চট করে অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,
” নাউযুবিল্লাহ! এই আপনি শাশুড়ি সমতুল্য বললেন কেনো? আমার আব্বু একটাই বিয়ে করেছে। আর সে আমার আম্মু সেলিনা হোসেন।
ইয়ানার কথায় অগ্নি চাপা হাসে। বুঝালো কি আর বুঝলো কি এই মেয়ে।
ইয়ানা — তবে আপনার অভিনয় সব থেকে সেরা। আমার সাথে কিভাবে নিঁখুত অভিনয়টাই না করলেন। সব আমার চোখের সামনে ছিলো অথচ আমি দেখেও দেখিনি। আপনার অভিনয় পর্দায় আনেন দেখবেন সবাই কিভাবে প্রসংশা করে।
অগ্নি ঠিক বুঝতে পারছে ইয়ানা তাকে পিঞ্চ মেরে কথা বলছে। অগ্নি হাস্কি সুরে বলে,,,,,
“”সবাই যদি বাগানের মালিক হয় তাহলে সেই বাগানের মালি হবে কে? আমি অভিনয় নয় বাস্তব করতে ভালোভাসি। অভিনয়ে ফেইক রক্ত যেটা শরীরকে তৃপ্ত করে না। আর হাতে ছুঁয়া রক্তে এক পৈশাচিক আনন্দে দেয়।
ইয়ানা অগ্নির কথায় অজান্তেই মুখ বাঁকায়। রক্ত বলে পৈশাচিক আনন্দ দেয়। আর এইদিকে মুরগির রক্ত দেখলেই আমার মাথা ঘুড়তে থাকে। কার সাথে থাকছি আমি। একই মুদ্রার এপিঠ- ওপিঠ।
ইয়ানা — এইভাবে চেপে ধরে রাখবেনা আমাকে? উঠতে দিবেন না?
অগ্নি ঠেঁট কামড়ে বলে,,,,,,,,
‘” তুমি সুস্থ থাকলে তো রুমে এক সপ্তাহের লক ডাউন দিতাম। আপাযত চুমুটা খেয়ে নেয়।
ইয়ানা সাবধান সুরে বলে,,,,,,,
“একদম না। চুমু খেতে গিয়েও আপনি নিজের মধ্যে থাকেন না।
অগ্নি ইয়ানার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে,,,,,,
” সেটা আমার কাছে আসার আগে মাথায় রাখা উচিৎ ছিলো।
ইয়ানা — আমি কখন আস…..
আর বলতে পারে নি। অগ্নি ইয়ানার ঠোঁট চেপে ধরে নিজের ঠোঁট দিয়ে। ইয়ানা ছুটার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছে। অগ্নির এক হাত ইয়ানার উন্মুক্ত কোমর চেপে ধরে। সেখানে হাতের অবাধ্য বিচরন। অন্যহাত ইয়ানার দুই হাত একত্রে চেপে ধরেছে মাথার দিকে। ইয়ানা ছুটার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। জিম করা এই সুঠামদেহীর সাথে শক্তি দেখানো বোকামি ছাড়া আর কিছুয় নয়। মুহূর্ত যায়, সেকেন্ড যায়, মিনিট যায়, ছেড়ে ছেড়ে পনেরো মিনিট পর ইয়ানার ঠোঁটে শক্ত করে এক কামড় বসায়। ইয়ানা আর্তনাদ করে উঠলে কামড় দেওয়া জায়গায় আলতো চুমু খেয়ে ছেড়ে দেয়। ইয়ানা নিশ্বাস নিচ্ছে ঘনঘন। হাঁপিয়ে উঠেছে। আর কিছুক্ষন থাকলে পরোপরের টিকিট হাতে চলে আসতো।
অগ্নি উঠে আসে ইয়ানার উপর থেকে। বিছানা থেকে নেমে তব্দা লেগে থাকা ইয়ানার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর হেসে ওয়াশরুমে চলে যায়। ওয়াশরুমের দরজা লাগানোর শব্দ শুনে ইয়ানার হুশ ফিরে আসে। ইয়ানা উঠে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে। এরপর মোবাইলের স্ক্রিনে নিজের অসহায় ঠোঁট আর গলা দেখে নেয়। ঠোঁটে রক্ত না আসলও লাস্টে কামড় দেওয়া জায়গাটা লাল হয়ে ফুলে উঠছে। ইয়ানা বিছানা থেকে নামে। ফুলে উঠার আগেই উনার জন্য খাবার নিয়ে আসি। পরে এইসব দেখলে লজ্জার জিনিস।
ইয়ানা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে সোজা কিচেন রুমে যায়। লিভিং রুমে সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি বসে চা খাচ্ছেন।তাদের পরিপাটি দেখে মনে হচ্ছে তারা কাজের উদ্দ্যশ্যে বেরিয়ে যাবেন। ইয়ানা লিভিং রুমে গিয়ে তাদেরকে সালাম দিয়ে গুড মর্নিং জানায়। সাজিদ চৌধুরির কাছে ইয়ানাকে খুব ভালো লাগে। আজকাল উশৃঙ্খল মেয়েদের থেকে আলাদা। নম্র, ভদ্র, বড়দের সম্মান করতে জানে। ইয়ানা টেবিল থেকে খাবার নেয় থালায়। দাদুমনি গিয়েছেন সিলেট উনার বোনের ছেলের বাসায়। অরিদ তারা দিতে চাই নি এক প্রকার জোর করে গিয়েছে। বলেছে কদিন থেকে চলে আসবে। অথচ আজ তিন মাস হতে চলল। দাদুমনিকে দেখার জন্য মনটা আনচাঁন করছে। এর মধ্যে অরিদ আর আহিয়া নিচে নামে। আহিয়া টিভির রিমোট ধরতে যাবে তার আগেই ছুঁ মেরে অরিদ নিয়ে নেয়। আহিয়া হতভম্ভ হয়ে তাকায় অরিদের দিকে। অরিদ টিভির চ্যানেল বদলিয়ে খেলা দেয়। আর আহিয়া মোটেও এইসব খেলা পছন্দ করে না। সে তো এখন গোপাল ভাড় অথবা অন্য কোনো কার্টুন দেখবে। আহিয়া অরিদের থেকে রিমোট নিতে চায় কিন্তু তার আগেই অরিদ রিমোট সরিয়ে ফেলে।
আহিয়া ফুঁসে উঠে বলে,,,,,,,
“” ভাইয়া এইটা কিন্তু ঠিক না। আমি আগে এসেছিলাম। তুমি কেনো রিমোট নিলে। আমি খেলা দেখব না। এইটা পাল্টিয়ে কার্টুন অথবা মুভি দাও।
অরিদ টিভির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,
“” না দেখলে উঠে যা। তকে আটকিয়ে রেখেছে কে? আমাকে ডিস্ট্রাব করবি না একদম। ডিস্ট্রাব করলে বেল গাছে উল্টৌ ঝুলিয়ে রাখব।
অরিদের কথায় আহিয়া ফুঁসে উঠে রিমোট নেওয়ার জন্য ধস্তাধস্তি শুরু করে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে আহিয়ের পা গিয়ে ডিভানের এক পাশের শক্ত স্থানে। লাগতে দেরী আহিয়ার লিভিং রুম ফাটিয়ে চিৎকার দিতে দেরী হয় নি। আহিয়ার চিৎকারে আরিদ হতভম্ভ হয়ে যায়। করেছি কি আমি এই লিলিপুটকে? আহিয়ার কান্নাতে সাজিদ চৌধুরি আর শিখা চৌধুরি সেদিকে তাকায়। শিখা চৌধুরি হতাশ হয়ে আহিয়ার কাছে আসে। ইয়ানা সিঁড়ি দিয়ে মাত্র উঠতে যাচ্ছিলো আহিয়ার কান্নাতে থমকে গিয়ে আবার ফিরে আসে তার কাছে। ইয়ানা আহিয়ার কাছে এসে অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,,,
” কি হয়েছে আহিয়া? কান্না করছো কেনো?
আহিয়া হেচকি তুলে বলে,,,,,,
” ছোট ভাইয়া ধাক্কা মেরেছে বউমনি। ফলে আমার পা গিয়ে শক্ত জায়গায় আঘাত পেয়েছে।
আহিয়ার কথায় অরিদ চোখ বড় বড় করে তাকায়। কখন ও ধাক্কা দিয়েছে। শিখা চৌধুরি অরিদের দিকে চোখ লাল করে তাকায়। আরিদ মায়ের তাকানো দেখে বলে,,,,,,,,
” না আম্মু এমন কিছুই করিনি। সব মিথ্যে বলছে আহিয়া। ও রিমোট নিতে আসছিলো আমি দেই নি তাই এই নাটক।
শিখা চৌধুরি — রিমোট দে ওকে। শুধু শুধু মেয়েটাকে কান্না করাচ্ছিস। এখন তো তুই ভার্সিটিতে যাবি রিমোট নিয়ে মারামারি লেগেছিস কেনো? দে ওকে।
অরিদ একপ্রকার বাধ্য হয়ে আহিয়ার হাতে রিমোটটা দেয়। আহিয়া অরিদের দিকে তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। অরিদ কটমট চোখে তাকিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।
ইয়ানা আহিয়াকে হাসতে দেখে মুচকি হাসি দেয়। এরা এইভাবে লেগে থাকে। ইয়ানা খাবারের প্লেটটা পুনরায় হাতে তুলে সিঁড়ি দিয়ে উঠে উপরে চলে যায়। ইয়ানা রুমে ডুকে দেখে অগ্নি শার্ট জড়াচ্ছে গায়ে। ইয়ানা খাবারটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বলে,,,,,,
“” খেয়ে নিন আগে। মেডিসিন লাগিয়েছিলেন সেই ক্ষত জায়গায়?
অগ্নি — মেডিসিন লাগানোর প্রয়োজন নেই।
ইয়ানা অগ্নির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে ফার্স্ট বক্স বের করে বলে,,,,,,,
” এইদিকে আসুন।
অগ্নি মিরর থেকে চোখ সরিয়ে ইয়ানার দিকে কপাল কুচকে তাকায়। এরপর গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,
“” কাছে ডাকছো?
ইয়ানা — উল্টা- পাল্টা কিছু ভাববেন না। এইদকে আসুন।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,,
” তুমি বললেই আমাকে আসতে হবে।
ইয়ানা — হ্যা।
অগ্নি — কেনো?
ইয়ানা — অধিকার।
অগ্নি ভ্রু নাচিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। এরপর এগিয়ে যায় ইয়ানার কছে। বুকের কাছের বোতামগুলো খোলা। জিম করা উন্মুক্ত বুক দৃশ্যমান। অগ্নি ইয়ানার কাছে গিয়ে সামান্য ঝুঁকে। ইয়ানা কিছুটা সরে যায়। অগ্নি ইয়ানার মুখে হালকা ফুঁ দিয়ে বলে,,,,,,
“” তুমি অধিকার দেখাও আর আমি আমার হক পালন করি।
অগ্নির ইঙ্গিত করা বাক্যে ইয়ানা কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,,,
” সারাদিন এত হক কোথায় থাকে আপনার?
অগ্নি — বউ যেহেতু আছে হক থাকবে এইটাই স্বাভাবিক।
ইয়ানা অসহায় হয়ে বলে,,,,,,,
” প্লিজ একটু বসুন। আপনার হক আপনি পরে পালন করিয়েন। আগে ক্ষতস্থানে মলম লাগিয়ে দেয়।
অগ্নি আর কোনো কথা বলে না। ইয়ানার কাছ থেকে সরে এসে শার্টের বোতামগুলো লাগিয়ে ব্লেজার পরে নেয়। এরপর প্রয়োজনীয় প্রসাধনী শরীরে লাগিয়ে বিনা শব্দে বের হয়ে যায়। ইয়ানা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এত ঘাড়ত্যারা মানুষ ও হয়।
ভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে মিরা ক্লাসরুমে যাচ্ছিলো। প্রচুর গরম পড়েছে ইদানিং। উত্তরপ্ত রোদে চারপাশে ভ্যাঁপসা গরম। মিরা ঘেমে একাকার অবস্থা। শরীরের কামিজটা লেপ্টে গিয়েছে। গলায় পেচানো উড়না দিয়ে ঘাম মুছে ভিতরে যেতে নেয়। এমন সময় একটা জুনিয়র মেয়ে এসে তার হাতে চিঠি ধরিয়ে বলে,,,,,,
” আপু আপনাকে এই চিঠিটা দিয়েছে। সে নাকি আপনাকে পছন্দ করে তাই।
মিরা সামান্য কপাল কুচকে বলে,,,,,,
” কে দিয়েছে?
মেয়েটা — ওই হুয়াইট কালার শার্ট পড়া ছেলেটা।
মিরা ছেলেটার দিকে তাকায়। ছেলেটা তার বন্ধুদের সাথে কথায় ব্যস্ত। মিরা সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে চিঠিটার দিকে তাকায়। চিঠিটা দেখেই মাথায় রক্ত টগবগিয়ে উঠে।
“” প্রিয়তমা আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ফিগার দেখে প্রথম দিন আমার চোখ আটকে গিয়েছিলো তোমার প্রতি। তোমার এই ঠোঁটটা আমার কাছে যা লাগে না, তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না। ইচ্ছে করে সেই ঠোঁটগুলো খেয়ে ফেলি।……
মিরা আর পড়ে নি। এমন কুরুচিপূর্ন চিঠি পড়ার সাহস হয় নি আর। নিজের শরীরের বর্ননা একটা ছেলের মুখে শুনে মাথা গরম হয়ে যায়। রেগে চিঠিটা হাতের মুঠোর মধ্যে নিয়ে পিষে ফেলে। এক মুহূর্ত দেরী না করে চলে যায় সেই ছেলের সামনে। ছেলেটা কোনো মেয়েকে সামনে আসতে দেখে সে সহ তার বন্ধুরাও তাকায়। মিরা চিঠিটা ছেলেটার মুখে ছুঁরে দিয়ে হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে কষিয়ে এক থাপ্পর মারে।যাস্ট একটা থাপ্পরে স্তব্দ হয়ে যায় পুরো ক্যাম্পাসের আশপাশ। সবাই সপ্ন দেখার মত অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এক একজনের ভয়ে শরীর কাঁপছে।মিরা এখন ও রাগে ফুঁশছে। ছেলেটা থাপ্পরের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। আকস্মিক এমন হওয়াতে তার বুঝতে বেগ পেতে হয়। যখন বুঝতে পারে রাগে শরীর কেঁপে উঠে। হাত মুষ্টি করে ফেলে। অগ্নিঝরা চোখ নিয়ে মিরার দিকে তাকায়। চোখ দুটি থেকে মনে হচ্ছে রক্ত বের হয়ে পড়বে। ছেলেটা মিরার দিকে তেরে যেতেই ওর বন্ধুরা আটকিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,,,,
” অরিদ না। সবাই আছে এখানে। তর সম্মান নষ্ট হবে এতে। যা করার পরে করিস।
অরিদ কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,,,,
“” ছাড় আমাকে। এই মেয়ের জান না নেওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি হবে না। সাহস কিভাবে হয় অরিদ চৌধুরির গায়ে হাত তোলার।
মিরা অবাক হয়ে অরিদের দিকে তাকায়। উনি অরিদ চৌধুরি? শারীরিক গঠনের অনেক পরিবর্তন চিনার একদম উপায় নেই। চিঠির কথা মনে পড়তেই অরিদের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,,,
” বাবা করে মানব সেবা আর ছেলে করে মেয়েদের শারীরিক গঠনের সেবা। আপনাকে নিশ্চয় বলা হয় নি আমি কেমন,, তার বর্ননা দিতে মি, অরিদ চৌধুরি। পরের বার থেকে মেয়েদের চিঠি দিলে সাবধানে দিবেন। নাহলে আজ থাপ্পর দিয়েছি এরপর অন্য কিছু করব। দুর্বল একদম ভাববেন না কারন আপনার চেয়ে বড় গুন্ডার সাথে কানামাছি খেলে এসেছি।
অরিদ মিরার দিকে তাকিয়ে কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,,,
” নিজেকে কি ভাবিস তুই হ্যা। ঐশ্বরিয়া নাকি লিলি কলিন্স। নিজেকে কখনো আয়নায় দেখেছিস? তকে দিবে অরিদ চৌধুরি চিঠি। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে এসেছিস আমাকে ফাঁসাতে। থার্ড ক্লাস মেয়ে নিজের যোগ্যতা আছে আমার পাশে দাঁড়ানোর। আমার বাসার কাজের মেয়ে ও তর থেকে যোগ্যতা সম্পন্ন। ছোটলোক কোথাকার।
মিরা অরিদের দিকে তাকায় না। চোখে পানি টলমল করছে।
মিরা — মধ্যবিত্ত হলেও আপনাদের মত অমানুষ নয়। আপনাদের মত ছেলেরা কিভাবে বুঝবে মেয়েদের সাথে কোন ভাষায় কথা বলতে হয়।
অরিদ নিজের রাগ নিজের রাগ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে বন্ধুদের উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,
” ওকে আমার সামনে থেকে বিদায় হতে বল এই মুহূর্তে নাহলে আমি রনক্ষেত্রে পরিনত করব। আল্লাহর কসম কেউ আটকাতে পারবি না।
অরিদের সব বন্ধুরা ভয়ে ঢোঁক গিলে। অরিদ প্রচুর রাগী সেটা শুধু তারা নয় পুরো ভার্সিটি জানে। তার উপর সে এখানকার ভিপি। তার এক কথায় শেষ কথা। মেয়েদের সাথে যথেষ্ট নরম গলায় কথা বলে। তবে সে মেয়েদের বেশিরভাগ এড়িয়ে চলে। অরিদের এক মেয়ে ফ্রেন্ড সিমি মিরার দিকে তাকিয়ে অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,,
” তোমার কাছে হাত জোর করছি বোন। চলে যাও এখান থেকে। জানি না তোমাকে কে চিঠি দিয়েছে তবে অরিদ কখনো দেবে না সেটা আমরা সিউর। ও এইরকম ছেলে না। তুমি ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে দেখো।
মিরা আর কোনো কথা বলে না। এতক্ষনের তার চেতনা ফিরে আসে। ভার্সিটির সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে । অনেকে রাগে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে তাদের ক্রাশকে থাপ্পর দেওয়ার কারনে। মিরা সেখান থেকে গিয়ে সেই মেয়েটাকে খুঁজে বের করে। তাকে পেয়ে বলে,,,,,,
“” শুনো। আমাকে যে চিঠি দিয়েছে সে অরিদ চৌধুরি নয়?
মেয়েটা — না আপু। অরিদ ভাইয়া চিঠি দিতে যাবে কেনো?
মিরা আশ্চর্য হয়ে আওড়ায়,,,,,,
” তুমি যে বললে ফ্রেন্ডদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা শার্ট পড়া ছেলেটা।
মেয়েটা — হ্যা আপু। অরিদ ভাইয়া তারা তো সামনে ছিলো। তাদের পিছনে আর ও কয়েকজন ছেলে ছিলো তাদের মধ্যে যে সাদা শার্ট পড়া ছেলেটা দাঁড়িয়ে ছিলো সেটা।
মিরা হতভম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তার মানে সে রং নাম্বারে মিষ্টি দিয়েছে। নিশ্চয় এখন তার নিশ্বাs নেওয়ার জন্য উঠে – পড়ে লাগবে। কারন উনি অগ্নি চৌধুরির ভাই। উনার মত হিংস্র না হলেও রাগ থাকবে স্বাভাবিক। কেনো ভালোভাবে না দেখে থাপ্পর মারতে গেলাম। এত রাগ তর কোথায় থাকে মিরা? এই রাগের কারনে তকে বার বার বিপদে পড়তে হয়। আমার কি সরি বলা উচিৎ। ছেলেটা যেভাবে রেগে আছে আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাবে এখন সামনে গেলে।
অরিদকে নিয়ে তার ফ্রেন্ডরা একটা নিরিবিলি রুমে নিয়ে যায়। রাগে এখন ও সে ফুঁশফুঁশ করছে। অরিদকে এইভাবে কাঁপতে দেখে সিমি বলে,,,,,
“” শান্ত হ ভাই। মেয়েটা বুঝেনি। দেখেছিস তো বাচ্চা মেয়ে। বাচ্চা মেয়ে হিসেবে মন থেকে বাদ দিয়ে দে।
অরিদ সিমির দিকে কটমট চোখে তাকায়। অরিদকে তাকাতে দেখে সিমি মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” আমার দিকে এইভাবে তাকাচ্ছিস কেনো? আমি তো তকে শান্তনা দিচ্ছিলাম। বাচ্চা মেয়ে বাদ দে।
অরিদ চিঁবিয়ে চিঁবিয়ে বলে,,,,,,,,
” তর মনে হয় ও বাচ্চা মেয়ে। যে মেয়ে আমার গালে থাপ্পর মারার সাহস জাগাতে পারে সে মেয়ে নাকি বাচ্চা? একে তো আমি পরে বুঝাব অরিদ চৌধুরির কি জিনিস। হারে হারে টের পাবে এই মেয়ে। এই একটা থাপ্পর দেওয়ার কারনে ওর গালে হাজারটা থাপ্পর পড়বে।
জিসান ভয়ে ভয়ে বলে,,,,,,,,
” কি করবি তুই?
অরিদ — সেটা সময় আসলে দেখে নিস।
সিমি — দেখ ভাই ভুল কিছু করিস না। বাচ্চা মেয়ে ভুল করে বসেছে। মেয়েটা অনেক মিষ্টি।
অরিদ ভ্রু কুচকে বলে,,,,,,,,
” মিষ্টি! পছন্দ হয়ে গিয়েছে নাকি তর?
জিসান আমতা আমতা করে বলে,,,,,,,,,
” পছন্দ করার মত মেয়ে ওইত। দেখলি না কি মিষ্টি একটা মেয়ে। কি সুন্দর লিলিপুট। কিছু করিস না ভাই আমি ওর সাথে লাইন মারব।
অরিদ রেগে সিমির উদ্দ্যেশ্যে বলে,,,,,,,
“” সিমি ওকে আমার সামনে থেকে যেতে বল নাহলে আমার হাতে মাইর খাবে।
সিমি জিসানকে ইশারা দিয়ে চুপ থাকতে বলে। জিসানও ঠোঁটের উপর আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে যায়।
সিমি কিছুটা সিরিয়াস হয়ে বলে,,,,,,
” জিসানের কথায় যুক্তি আছে অরিদ। মেয়েটাকে প্লিজ কিছু করিস না।
অরিদ রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠে পড়ে। সিমি আর জিসান একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
অগ্নি ইউভি আর রায়ান কিছু দরকারি কথা বলছিলো।
আরিফ — ভাই দ্বিতীয় টর্চারসেলের খবর এসেছে। সতেরো জন মেয়ে আর পাঁচ- সাত জন শিশু পাচার করা হয়েছে। আর এর সাথে যুক্ত রানবীর আর আতিক।
অগ্নি শান্ত হয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে। আরিফের কথা শুনে ইউভি আর রায়ান দুজন ওই অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নিকে শান্তভাবে বসে থাকতে দেখে ইউভি অধৈর্য হয়ে বলে,,,,,,,,,
” তর টর্চারসেল থেকে মেয়ে – শিশু পাচার হয় তুই কিছু বলিস না কেনো?
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,,,,
” না করেছিলাম শুনে নি।
রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,,,,,
” আর তুই এখন ও এইভাবে শান্ত হয়ে বসে আছিস?
অগ্নি — কি দরকার আছে বাহিরের ঝামেলা সৃষ্টি করার। সময় হলে তীর এমনি ডুকাব। ইচ্ছে করলে থামাতে পারি বাট এইসবে জড়াতে চাই না। থামাতে গেলে রানবীর আর আতিক বিঘরে যাবে। ফলে ওরা আমার উপর সন্দেহ করবে। আমার হাতের বাহিরে চলে যাবে তারা।
রায়ান — কিন্তু এতে তো মেয়েদের জীবন নষ্ট হচ্ছে।
অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,,,
” কয়জনকে আটকাবি তুই। প্রত্যেকটা দেশে আতিক আর রানবীরের মত মেয়েভোগী আছে। আমি আজ তাদের আটকালাম কি হবে তাতে? তারা টর্চার সেলে আর মেয়ে আনবে না তাই তো? কিন্তু ওদের হাতে এখন ও ক্ষমতা আছে অল্প হলেও। তারা অন্য জায়গায় পাচার করবে। তখন কিভাবে আটকাবো শুনি? যদি এখন আমি ওদের বিরুদ্ধে যায় আমার কানামাছি খেলা ভেস্তে যাবে। নিজের কাজে ফোকাস করতেই বেশি সা
স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করি। অন্যরা কি করলো, কি বললো আই ডোন্ট কেয়ার।
আরিফ চিন্তিত হয়ে বলে,,,,,,,
” ভাই আপনাকে বার বার আক্রমন করছে কারা তাহলে?
অগ্নি নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,,,,,,,
” রায়হান।
আরফ তারা সবাই অবাক হয়ে অগ্নির দিকে তাকায়।
ইউভি — কিন্তু রায়হান তো কানাডায় আছে?
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,,,,,
” বাংলাদেশে কি লোকের অভাব পড়েছে। টাকা দিয়েছে আক্রমন করার জন্য।
রায়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে গিলে,,,,,,,,,,
” আর পুরো মাফিয়া জগৎের লিডার এখন ও বসে আছে লাইক সিরিয়াসলি? তকে মারতে চেয়েছিলো জেনে ও তুই এত শান্ত কিভাবে ভাই? ভাব্বাচ্ছে আমাকে খুব।
অগ্নি ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,,,,
” অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়।
ইউভি গম্ভীর হেসে বলে,,,,,,,,,,,,
“” জীবনের প্রথম এত অপেক্ষা করছিস।
ইয়ানা লিভিং রুমে বসে সবার সাথে আড্ডা দিচ্ছে। এমন সময় অগ্নি ইউভি আর রায়ান ভিতরে প্রবেশ করে। লিভিং রুমে এসেই রায়ান আর ইউভি ধপাশ করে বসে পড়ে। অগ্নি ইয়ানার দিকে আড়চোখে এক পলক তাকিয়ে ইশারা করে রুমে যাওয়ার জন্য। অগ্নির ইশারা শিখা চৌধুরির চোখ এড়ায় না। সে অগ্নির দিকে তাকিয়ে ছিলো তাই সবটায় তার নজরে পড়ে। শিখা চৌধুরি মনে মনে হাসেন। তবে সেটা প্রকাশ করেন না। অগ্নিকে চলে যেতে দেখে আহিয়া পিছনে গিয়ে হাত ধরে বলে,,,,,,
” ভাইয়া শুনো।
অগ্নি হাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে আহিয়ার মাথায় হাত দিয়ে নরম কন্ঠে বলে,,,,,,,,
” হুম বল কি প্রয়োজন। কিছু লাগবে? এনে দিব?
আহিয়া মাথা নাড়িয়ে না বলে। আলতো হাতে অগ্নির হাতটাকে ধরে সবার সামনে এনে দাড়া করায়। এরপর দুই হাত দিয়ে ডিভানে বসাতে চাইলে অগ্নি মৃদু ধমক দিয়ে বলে,,,,,,,,,
” কি করছিস কি আহি?
আহিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,,,,,,
” একটু বসো না ভাইয়া। তোমাকে কোনোদিন সবার সাথে বসতে দেখি নি ইভেন কথা বলতে ও দেখি নি। আজ সেই সুযোগে পরিবারটাকে দেখি। শুধু অরিদ ভাইয়া আর বড় আব্বু নেই।
অগ্নি উঠে পড়া সত্তেও আহিয়ার কথায় আবার পুনরায় গম্ভীর হয়ে বসে পড়ে। ইয়ানা আহিয়ার দিকে চোখ টিপা দেয়। অগ্নি চৌধুরি এক মাত্র আহিয়ার সব কথা শুনে। বোন বলে কথা না শুনে যাবে কোথায়?
ইয়ানা টেবিল থেকে ঠান্ডা পানি এনে দেয় অগ্নি, রায়ান আর ইউভিকে। ইয়ানা তাদেরকে দিয়ে অগ্নিকে দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,
“” নাথিং।
অগ্নির নাথিং শুনার আগেই ইয়ানা অগ্নিকে দিয়ে ফেলেছিলো। ভেবেছিলো অগ্নি ধরে নিবে। কিন্তু তার কথাটা ভুল প্রমানিত করে। অগ্নি ধরে নি। গ্লাস গিয়ে অগ্নির উড়ুর উপর পড়ে একদম মার্বেল মেঝেতে পড়ে।
ইয়ানা সেদিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢোঁক গিলে। নির্ঘাত এখন এর সাস্থি পেতে হবে। কিন্তু ইয়ানার ভাবনাকে ভুল প্রমানিত করে অগ্নি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,
” লাগে নি তো তোমার?
ইয়ানা মেকি হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,,
“” নাহহ। প্লিজ রাগ করবেন না আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
অগ্নি — সামান্য পানি পড়াতে রাগ কেনো করতে যাব আমি?
রায়ান অবাক হয়ে বলে,,,,,,,,
“” তাহলে সেইদিন ওয়েটারকে থাপ্পর মেরে অজ্ঞান করলি কেনো তুই? সে তো সামান্য পানিটায় ফেলেছিলো।
অগ্নি রায়ানের দিকে কিড়মিড়িয়ে বলে,,,,,,,
” বউ আর ওয়েটার পার্থক্য কর ইডিয়েট।
ইয়ানা সেদিকে লক্ষ্য না করে রায়ানের উদ্দ্যশ্যে বলে,,,,,,,
” কি বলছেন ভাইয়া? থাপ্পর মেরে অজ্ঞান করে ফেলেছিলো?
রায়ান — তুমি কোনোদিন থাপ্পর খাও নি ইয়ানা?
ইয়ানা সাবলীল উত্তর “,,,,,,,,,,
” অগণিতবার খেয়েছি ভাইয়া।
রায়ান — অজ্ঞান হও নি কখনো?
ইয়ানা মাথা নাড়িয়ে বলে,,,,,,
“” নাহহ।
রায়ান — তাহলে অগ্নি তোমাকে কখনো সে ভাবে থাপ্পর দেয় নি। ওর থাপ্পর খেলে তোমার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা।
ইয়ানা ভ্রু নাচিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে আছে। মনে হচ্ছে আশে – পাশে কিছু হচ্ছে না।
অগ্নিকে এতক্ষন বসে থাকতে দেখে শিখা চৌধুরি অগ্নির দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,,,
” আমরা সারাদিন চিৎকার করে লোক জড়ো করে ও যদি বলতাম প্লিজ এখানে একটু বসো। তুমি তো সে কথা কানে ও তুলতে না। আহিয়া বলেছে একবার আর সাথে সাথে বসে পড়েছো।
অগ্নি ডিভান থেকে উঠে গম্ভীর হয়ে বলে……
“” বোন তো তাই।
এরপর ইয়ানার দিকে তাকিয়ে কটমট চোখে বলে,,,,,,
” ইনভাইটেশন কার্ট পাঠাতে হবে রুমে যাওয়ার জন্য? দুই মিনিট ও যাতে দেরী না হয়।
অগ্নি বড় বড় পা ফেলে উপরে চলে যায়। ইয়ানা লজ্জায় হাঁশফাঁশ করতে থাকে। মা আর ভাইয়াদের সামনে এইভাবে বলতে হলো। নির্লজ্জ লোক।
রায়ান নিজের হাসি আটকাতে না পেরে হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,,
” আপনি তাড়াতাড়ি যান মিসেস অগ্নি চৌধুরি। নাহলে রুমের ভিতরে ঘূর্নিঝড় শুরু হবে।
ইয়ানা লজ্জায় মিহি সুরে বলে,,,,,,,,
” যাচ্ছি ভাইয়া। সাইকোর গলায় ঝুলে পড়েছি আমি। কিছু করার নেই।
ইয়ানা চলে যায় সেখান থেকে। ইয়ানা চলে যেতেই আহিয়া, ইউভি আর রায়ান উচ্চস্বরে হেসে উঠে।
শিখা চৌধুরি — কত দিন থাকবে অগ্নি? জানিয়েছে কিছু তদের?
ইউভি গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,,
” কাল ওই চলে যাচ্ছিলো। রায়ানের বিয়ের কথা বলে এক প্রকার আটকিয়ে রেখেছি। বিয়েটা সম্পন্ন হোক এরপর আর না হয় কয়েকদিন থাকা হবে।
ইয়ানা গুটিসুটি পায়ে ধীরে ধীরে রুমে প্রবেশ করছে। ইয়ানাকে এইভাবে আসতে দেখে অগ্নি কপাল কুচকে বলে,,,,,,,,,
” কচ্ছপের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছো নাকি?
ইয়ানা চোখ তুলে অগ্নির দিকে তাকায়। এরপর খাচায় বন্দি করে কাঠবিড়ালটাকে মুক্ত করে নিজের বুকের উপর রেখে অগ্নির কাছে যায় । এরপর বিছানায় উঠে উঠে গিয়ে পা সিটিয়ে বসে। ইয়ানা বিছানায় বসলে অগ্নি নিজের মাথাটা ইয়ানার উড়ুর উপর রাখে। ইয়ানা শিউরে উঠে। কেঁপে উঠে ওর সর্বাঙ্গে। অগ্নি ইয়ানার পেট উন্মুক্ত করে সেখানে মুখ গুজে দিয়ে কোমর আকড়ে ধরে। ইয়ানা বরফের মত জমে যায়। অগ্নির গরম নিশ্বাস তার পেটে ছড়িয়ে পড়ছে। শ্বাস বেড়ে চলছে তার।নিজেকে মনে হচ্ছে কোনো মৃগী রোগী।
ইয়ানাকে কাঁপতে দেখে অগ্নি নিচু আওয়াজে বলে,,,,,,,,
” এইভাবে কাঁপছে কেনো তোমার শরীর। আমি তো কিছু করি নি। বেড ফিলিংস আনাবে না। ঘুমাতে দাও আমাকে। মাথার চুলগুলো টেনে দাও।
ইয়ানা কাঠবিড়ালটাকে ছেড়ে অগ্নির মাথায় হাত রাখে। ঠিক তখন ওই কাঠবিড়ালটা ইয়ানার কামিজের ভিতরে ডুকে যায়। ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। ইয়ানাকে স্তব্দ হয়ে থাকতে দেখে অগ্নি পেট থেকে মুখ সরিয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। কাঠবিড়ালকে ইয়ানার জামার ভিতরে দেখে কপাল কুচকে আসে। সামান্য রাগান্বিত সুরে বলে,,,,,,,,
“আমার হক ওকে কেনো দিচ্ছো?
অগ্নির এমন কথায় ইয়ানা তাজ্জব বনে যায়। সে কাঠবিড়ালটাকে বের করে বলে,,,,,,,,,
“” ও একটা কাঠবিড়াল কোনো মানুষ নয়।
অগ্নি পুনরায় আগের মত শুয়ে বলে,,,,,,,,
“” আই ডোন্ট কেয়ার। পরেরবার এমন দৃশ্য সামনে আসলে এইটাকে সোজা রাস্তায় ফেলে আসব। নাহলে ছুঁরি ও চালাতে পারি।
অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৮
ইয়ানা চুপসে যায় অগ্নির কথায়। এতটা পজেসিভ হওয়ার কি বেশি প্রয়োজন ছিলো সাইকো।
ইয়ানা নরম হাতে অগ্নির লম্বা চুলগুলো হালকা টেনে দিচ্ছিলো। আর এইদিকে অগ্নির বেসামাল স্পর্শের অত্যাচার। সবটায় ইয়ানা দাঁতে দাঁত পিষে সহ্য করে। এখন সে হাজার চিৎকার করলে ও সমাধান পাবে না। এর চেয়ে বরং চুপচাপ সহ্য করাটা ভালো।