অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৩

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৩
লিজা মনি

দুই দিন কেটে যায়। ইয়ানা এখন ও আসাদ হোসেনের কাছে থেকে যায়। শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ ছিলো তাই হসপিটালে ভর্তি করা হয়। একটু সুস্থতা অনুভব করলে আজ সকালে বাড়িতে নিয়ে আসে।
ইয়ানা জানতে পারে অগ্নি চৌধুরি ভিলায় ফিরেছে। আর এই সংবাদ তাকে শিখা চৌধুরি জানিয়েছে। ইয়ানার অভিমানের পাল্লা ভারি হয়। সেচ্ছায় গিয়ে জীবনে ও কথা বলবে না সে এই লোকের সাথে। ইয়ানা ঘৃনা করলে ও তো লোকটাকে সে চায়। সেটা তো জানে । এরপর ও একবার তার খোঁজ নিলো না। একবার দেখা করতে আসলো না? এতটা পর হয়ে গেছি আমি! নাকি সব ইন্টারেস্ট উঠে গেছে। হবে হয়ত এখন আর ভালো লাগে না। আগে তো এক রাত ছাড়তে চাইত না। আর আজ চারদিন হয়ে যাচ্ছে কিন্তু উনি দিব্বি থাকছে। একটু মনে ও করলো না আমাকে? যাওয়ার সময় তো একবার বলেও যায় নি।

এতগুলো ফোন দিয়েছি একবার রিসিভ পর্যন্ত করে নি, হৃদহীন লোক। যাব না আমি। থাকব না আমি উনার সাথে। এমন লোকের সাথা আর থাকতে চাই না।
ইয়ানা ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে রাখে। ইয়ানা বার বার চোখের পানি নিবারন করছে। কেনো কান্না করছি আমি? একটু ও কাঁদবো না। যে আমাকে মনে রাখে না তার কথা মনে করে আমি কেনো কাঁদবো? আমার চোখের পানির দাম নেই? অবশ্যয় দাম আছে। অপাত্রে কেনো দান করবো?
ইয়ানা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বাতাস গায়ে লাগাচ্ছে। এমন সময় রুয়ানা রুমে প্রবেশ করে। ইয়না রুয়ানার উপস্থিতি বুঝতে পেরে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়।
রুয়ানা কাবার্ড থেকে জামা বের করতে করতে বলে,,,,,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“” আপু ভাইয়া কবে আসবে?
ইয়ানা — আমি কি করে জানব? যার কথা বলছিস তাকে গিয়ে নিজে জিজ্ঞাসা কর। আমাকে জিজ্ঞাসা করছিস কেনো? আমি কোনো বার্তাবাহক নয়, যে কে কখন আসবে আর যাবে তার খবর রাখব।
রুয়ানা অবাক হয়ে ইয়ানার দিকে তাকায়। রুয়ানাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়ানা কিছুটা থমথমে খেয়ে যায়।
রুয়ানা ইয়ানার পাশে বসে কপাল কুচকে বলে,,,,,,
“” তোমাকে আমি সাধারন একটা প্রশ্ন করেছি কিন্তু তুমি তো আমার কাছে রচনা ধরিয়ে দিয়েছো। যায় হোক তুমি ভাইয়ার খবর না রাখলে কে রাখবে শুনি? ভাইয়ার কি আরেকটা বউ আছে নাকি?
ইয়ানা কাটকাট জবাব দেয়,,,,,,

” থাকলেও থাকতে পারে। সেটা কি আমাকে জানাবে নাকি।
রুয়ানা অবাকের পর অবাক হচ্ছে। এমন ত্যারা ত্যারা কথা বলছে কেনো এই মেয়ে? রুয়ানা ইয়ানার কপালে হাতের সামান্য ছোঁয়া দিয়ে বলে,,,,,,
“” এই আপু তোমার জ্বর – টর আসে নি তো? এমন লজিক ছাড়া কথা কেনো বলছো? ভাইয়ার সাথে ঝগড়া হয়েছে তোমার?
রুয়ানার কথায় ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসে। আনমনে আওড়ায়,,,,,,,
” একটু একা থাকতে দে রুই। শরীর ভালো লাগছে না।
রুয়ানা — তুমি কি অসুস্থ আপু? আব্বু — আম্মুকে বলব।
ইয়ানা — নাহহ কাউকে জানানোর দরকার নেই। মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে । একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে।
রুয়ানা বিষয়টা নিয়ে আর মাতামাতি করে নি। ইয়ানার শরীরটা একটু দুর্বল দেখাচ্ছিলো। আব্বুকে নিয়ে দুই দিন প্রচুর ধকল গিয়েছে। হয়ত সেই কারনে শরীর হালকা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ইউভি তাদের অনেক সাহায্য করেছে। একজন বড় ভাইয়ের মত পাশে থেকেছে। রুয়ানার ঠোঁটে কিঞ্চিত হাসি ফুটে উঠে।

রাত এগারোটা ত্রিশ মিনিট। প্রায় বারোটার কাছাকাছি। অগ্নি বিছানার উপর উবুর হয়ে শুয়ে আছে। উন্মুক্ত শরীরে ফর্সা পিঠ বিদ্যামান। ফর্সা পিঠে সাপের ট্যাটু চিকচিক করছে। অগ্নি ঘুমিয়ে আছে কি না জানা নেই। ইউভি আর রায়ান রুমে ডুকে। অগ্নিকে এইভাবে উবুর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে ইউভি হালকা চাপর দেয় পিঠের উপর। অগ্নি নড়েচড়ে উঠে। চোখে খোলে তাদের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকায়।
রায়ান এক গাল হেসে বলে,,,,,
” তাহলে তুই ঘুমাস নি এমনি শুয়ে ছিলি।
অগ্নি হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে। সবসময় পরিপাটি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। চোখে মনে হচ্ছে হাজার ও ঘুম। কিন্তু চোখ- মুখ শক্ত করে রায়ানের দিক তাকিয়ে বলে,,,,,
“বউকে একা রেখে এসে আমাকে জ্বালাচ্ছিস কেনো? তাও আবার এত রাতে? বেরিয়ে যা তরা, সকালে দেখা হচ্ছে।
ইউভি অগ্নির দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,,,

” সিরিয়াস হচ্ছিস না কেনো তুই?
অগ্নি ইউভির দিকে কপাল ভাঁজ করে তাকিয়ে বলে,,,,,
” কি নিয়ে সিরিয়াস হবো?
ইউভি — ইয়ানাকে নিয়ে আসছিস না কেনো?
অগ্নি বিরক্তিতে নাক – মুখ কুচকে ফেলে। অন্যদিকে তাকিয়ে একটা গম্ভীর নিশ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,
” আমি কেনো নিয়ে আসতে যাব? যাওয়ার সময় কি আমার থেকে বলে গিয়েছে? ও জানে না আমি যে দেশে এসেছি। জানার পরও ওইখানে থাকছে কোন সাহসে? বল তুই আমাকে?
রায়ান — আঙ্কেল অসুস্থ ছিলো তাই গিয়েছে।
অগ্নির গম্ভীর হয়ে বসে। চোখে – মুখে রাগ স্পষ্ট।
ইউভি তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,

“” তর জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে।
অগ্নি দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,,,,,
” আই ডোন্ট কেয়ার। গুরুত্ব থাকলে দুরত্ব কিছুই না।
রায়ান — মেয়েটা কষ্ট পাবে।
অগ্নি — হাজারটা ফোন দিয়েছি আমি। কিন্তু বার বার সুইচ অফ। মোবাইল অফ করে রেখেছে তাই না? সতর্ক করে দিস যাতে আমার সামনে না পড়ে। রাগের মাথায় কি করে বসব জানা নেই।
ইউভি —- তাহলে তুই যাবি না?
অগ্নি — নাহহ।
রায়ান বিরবির করে বলে,,,,,,
“ঘার ত্যারা।

অগ্নি — আই নো। রুম থেকে বিদায় হ এখন।
অগ্নি ইউভি আর রায়ানকে বিদায় করে দরজা আটকিয়ে বিছানায় বসে। বড় বড় শ্বাস টেনে চোখ বন্ধ করে নেয়। ভিতরে শূন্যতায় খাঁ- খাঁ করছে। অগ্নি রাগ আর বিরক্তি নিয়ে একটা সিগারেট নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। ঘুম এখন ইহজনমে ও আসবে না। বেইমান নারী ঘুম হারাম করে দিয়ে এখন নিজে আরামে ঠিক ঘুমাচ্ছে। সুযোগ বুঝে আমার মস্তিষ্কটা নিজের দখলে নিয়ে নিছে। নাহলে আমার শরীরের অংশ, আমার মস্তিষ্ক হয়ে ওই বিয়াদপটার জন্য কেনো কিলবিল করছে। আমার হার্টবিট, হৃদস্পন্দন সব কিছু সুযোগ বুঝে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিয়েছে। এখন আমার অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ আমার সাথেই বেইমানি শুরু করে দিয়েছে। অসহ্য! অগ্নি সিগারেটের ধোঁয়া উড়িয়ে একটা ওয়াইনের বোতল হাতে নেই। মাথা ঠান্ডা করা প্রয়োজন এই মুহূর্তে। নাহলে নির্ঘাত এই মেয়েকে গিয়ে খুন করে আসবে। তার শরীর তার কাছেই বিবেকহীনের মত ছলনা করছে ছেহহ!
অগ্নি রাতের অন্ধকারে খোলা আকাশের নিচে একের পর এক ওয়ানের গ্লাসে চুম্বক দিতে থাকে। জাহান্নামে যাক সব অনুভুতি। চাই না আমি কাউকে।

অরিদ বিয়ের দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর চৌধুরি ভিলায় যায় নি। মিরা দুই দিন নিজের বাবার কাছে ছিলো। জিসান আর সিমি জানিয়েছে অরিদ জিসানদের বাড়িতে ছিলো। শিখা চৌধুরি এইটা নিয়ে জোর করে নি। ছেলেটা মানসিকভাবে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে। সিমির কাছে জানতে পেরেছে সেদিন রাতের সত্যি ঘটনা। মিরা একদিন ভার্সিটিতে থাপ্পর দেওয়ার কারনে অরিদ সেদিন শাস্থি দেওয়ার জন্য সুযোগ বুঝে মিরাকে সেই বদ্ধ রুমে আটকে রেখে এসেছিলো। অরিদ সেদিন রাতে সে নিজের রুমেই ঘুমিয়েছিলো তারা এসে ডেকে তুলে।

রাত তখন বারোটা বাজে। অরিদ চৌধুরি ভিলাতে প্রবেশ করে। পুরো বাড়ি পিনপিন নিরবতা। অরিদ চারদিকে না তাকিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ডিম লাইটের আবছা আলোতে নিজের বিছানায় কাউকে দেখে রাগে পুরো শরীর কেঁপে উঠে। মস্তিষ্কে আসে মিরার কথা। অরিদ দাঁতে দাঁত খিঁচে লাইট অন করে। মিরা পুরো বিছানায় জায়গা দখল করে শুয়ে আছে। পড়নের টি- শার্ট উপরে উঠে নাভী দৃশ্যমান হয়ে উঠে। উড়না অবহেলিতভাবে অর্ধেকটা নিচে পড়ে আছে আর বাকি অর্ধেকটা বিছানার উপর।
অরিদ মিরার দিকে রেগে তাকায়। কত বড় সাহস হলে তার বিছানায় ঘুমাতে আসে। অরিদ বেড টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে পুরো পানি মিরার মুখের উপর ঢেলে দেয়। মুখের উপর পানি পড়তেই মিরা ধরফরিয়ে উঠে। হঠাৎ ঘুম থেকে এইভাবে উঠে পড়াতে মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। নিজের অবস্থান ভুলে যায়। কোথায় আছে সে? অরিদের কর্কশ কন্ঠে নিজের জ্ঞান ফিরে।

“” আমার বেডে কার পারমিশনে শুয়েছো?
মিরা অরিদের রাগান্বিত মুখের দিকে এক পলক তাকায়। কিছুটা কষ্ট পায় কিন্তু তার তুলনায় রাগ হয় প্রচুর। কোনো ঘুমন্ত ব্যক্তিকের উপর বিবেকে পানি ঢেলে দেয়। অসভ্য একটা ।
অরিদ — খাম্বার মত বসে না থেকে আমার বিছানা ত্যাগ করো।
মিরা ভালোভাবে বসে। এরপর অরিদের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,,,,,
“” কত বড় অমানুষ হলে ঘুমন্ত ব্যাক্তির উপর পানি ঢালেন। আর কবুল নিশ্চয় আপনার বাড়ির মালির উদ্দেশ্যে বলে নি যে তার বিছানায় গিয়ে ঘুমাব। যাকে বিয়ে করেছি তার বিছানায় ঘুমানোটা কি উচিৎ নয়?
মিরার কথায় অরিদ হু হু করে হেসে উঠে। মিরা চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। এই অসভ্য এইভাবে হাসছে কেনো?
অরিদ নিজের হাসি থামিয়ে ঠাট্টা করে বলে,,,,,,

“” তুমি কি কোনোভাবে নিজেকে আমার বউ দাবি করা শুরু করে দিয়েছো? লিসেন মিরা, অরিদ চৌধুরি এই জনমে তোমাকে কখনো বউ হিসেবে মেনে নিবে না। বলেছিলাম কবুল বলো না। বরবাদ করে দিব তোমার জীবন। আজ আমার কথা শুনলে অন্তত ভালো থাকতে।
মিরা শান্ত সুরে বলে,,,,,,
“” আমি ও আপনাকে স্বামী হিসেবে কখনো মানব না মি, অরিদ চৌধুরি। আর আপনার বউ ভাবাটা তো বিলাসিতা। বিয়ে আমি নেচে নেচে করতে চলে আসি নি। বরং আপনার অমানুষিক কাজের জন্য আজ আমি এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি। দোষ আপনার আর গুঁটি আমি।
অরিদ কটমট চোখে তাকায় মিরার দিকে। মিরা বিছানা থেকে নেমে বলে,,,,,,
“” শুয়ে পড়ুন আপনার বিছানায়। আমি ডিভানে যাচ্ছি।
অরিদ বিরক্তি নিয়ে বলে,,,,,,
“” জাহান্নামে যাও।

অরিদের কথা কানে গেলেও সেটা নিয়ে মিরা মাথা ঘামায় না। সহ্য করতে হবে তার সবকিছু। সে চলে যায় বিছানা ছেড়ে দিয়ে। অরিদ সেদিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় শাওয়ার নেওয়ার জন্য। পুরো শরীর ঘামে জবজব হয়ে আছে। এখন শাওয়ার না নিলে ঘুমানো যাবে না।
অরিদ শাওয়ার শেষ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। পড়নে হাটু পর্যন্ত শর্ট প্যান্ট পড়া আর গায়ে হাতা কাটা গ্যাঞ্জি। পেশিবহুল শরীরে পানি চিকচিক করছে। মিরা আড়চোখে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। মিরার হাত – পা কাঁপছে। কোনো এক অজানা ভয় আকড়ে ধরেছে। জীবনের প্রথম কোনো ছেলের সাথে এক রুমে।শত্রুর সাথে এক রুমে থাকার অনুভুতি অন্যরকম। যদি সে আবার হয় নজর কাড়া হ্যান্ডসাম। আচ্ছা শিখা চৌধুরি এমন কি হারবাল খেত যে উনার দুইটা ছেলেই এমন হ্যান্ডসাম? মিরা নিজের ভাবনায় নিজেই বিরক্ত হয়। কিসব ভিত্তিহীন ভাবনা আসছে মাথায়।
হঠাৎ পুরো রুম অন্ধকার হয়ে যাওয়াতে মিরা চিৎকার দিয়ে ডিভান থেকে উঠে বসে। সাথে সাথে রুমের লাইট জ্বলে উঠে।

অরিদ রেগে মিরার দিকে তাকিয়ে তিরিক্ষে মেজাজে বলে,,,,,
” এই মেয়ে এইভাবে চিৎকার করছো কেনো হ্যা?
মিরা — আপনি ডিম লাইট সব অফফ করে দিয়েছেন কেনো? বিদঘুটে অন্ধকারে আমার ভয় হয়।
অরিদ — এইটুকু কলিজা নিয়ে এসেছো আমাকে চ্যালেঞ্জ করতে। সামান্য অন্ধকারকে ভয় পাও।
মিরা গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
“” জন্ম থেকে কেউ ভয় নিয়ে জন্মগ্রহন করে না। কোনো কিছুকে ভয়ে পাওয়ার এক অদৃশ্য কারন থাকে। আমি যে পরিস্থিতি দিয়ে পার হয়ে এসেছি মেয়ে হয়ে পার করে দেখান। এরপর অন্যকে উপহাস করবেন।
অরিদ কিছুটা বিরক্তি হয়ে বলে,,,,

“ভয় হলেও কিছু করার নয়। পারলে বেলকনিতে গিয়ে ঘুমাতে পারো। আমি আলোতে ঘুমাতে পারি না।
মিরার এইবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সামান্য রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” এই মাঝ রাতে শত্রুতা কেনো শুরু করে দিয়েছেন?
অরিদ — কবুল কেনো বলেছো। বার বার না করেছিলাম।
মিরা তাচ্ছিল্যা হাসি দিয়ে বলে,,,,,
” বিয়ে মানেন না কবুল নিয়ে পড়েছেন কেনো এইভাবে?
অরিদ দাঁত খিঁচে বলে,,,,,,

” এইটাই তো সমস্যা। না মানলেও তো মানতে হচ্ছে। নাহলে তো ঘার ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিতাম।
মিরা — আমি ও মেবি আপনার রুমে আসতাম না। নিশ্চিন্তে লাইট অফ করে ঘুমাতে পারেন। অন্ধকারে আমার ফোবিয়া আছে। আপনার কারনে যদি মরে – টরে যায় সেটার জন্য জেল তো আছেই। আমি খাতা – কলমে লিখে দিয়ে যাব আমার মৃত্যুতে আপনি দায়ী।
মিরার কথায় অরিদ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,,,,
“” তোমার মত দশটা মিরাকে খুন করে গায়েব করার মত ক্ষমতা আমাদের চৌধুরি বাড়ির ছেলেরা রাখে। এইসব ফালতু ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।

মিরা — গর্বের বিষয় এইটা। ভাই যদি হয় পুরো মাফিয়া প্যালেসের লিডার। আন্ডারওয়ার্ল্ড এর গ্যাংস্টার বসের ভাইকে ভয় দেখানো যে বোকামি সেটা আমি ও জানি। ভাই করে দিনে দশটা খুন সেখানে সে একটা করলেই বা সমস্যা কোথায়? ভাই যদি পৃথিবীর ৯০% অন্যায় কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পারে সেখানে সে একটা অন্যায় করলে দোষ কোথায়? আরে চলে এইসব। আপনাকে ভয় দেখতে যাব কেনো?
অরিদ চট করে তাকায় মিরার দিকে।মিরার সাবলীল ভঙ্গির কথা বলার স্টাইল দেখে অরিদ অবাক হয় প্রচুর। এই মেয়ে সব কিছু জানে তাহলে?
অরিদ গম্ভীর হয়ে বলে,,,,,
” তুমি সব জানো?
মিরা হেসে বলে,,,,,,,

“” আপনি যা জানেন তার চেয়ে ও একটু বেশি জানি। অথবা যা জানেন না তা জানি।
অরিদ — কোথায় থেকে জেনেছো এইসব? কার থেকে জেনেছো? ভাইয়ার আসল পরিচয় বাহিরের কেউ তো জানার কথা না।
মিরা মুচকি হাসি দেয়। এরপর অরিদের উদ্দেশ্যে বলে,,,,,
” কিভাবে জেনেছি? কোথায় জেনেছি সেটা আপনার না জানলে ও চলবে। গুড নাইট।
মিরা শুয়ে ঠোঁট চেপে হাসে।অরিদ গম্ভীর হয়ে কিছুক্ষন বসে থাকে। এরপর লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে নিজে ও শুয়ে পড়ে।

ইয়ানা গভীর ঘুমে বুদ হয়ে আছে। বাড়ির চারপাশে নিস্তব্দ পরিবেশ। খোলা দরজা দিয়ে বেলকনি পেরিয়ে মৃদু বাতাস আসছে রুমে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় ইয়ানা কোমর পর্যন্ত নরম চাঁদর জড়ানো।হঠাৎ কারোর স্পর্শে কেঁপে উঠে।স্পর্শ গভীর থেকে গভীর হতে থাকে। ইয়ানার শরীর নড়ছে না কিন্তু কোষগুলো এখন ও সজাগ। গলায় ব্যাথা অনুভব করতেই চট করে চোখ মেলে তাকায়। শরীরের উপর কারোর অস্তিত্ব বুঝতে পেরে তার দিকে তাকায়। ব্যক্তিটির হাতের বিচরন তার পৃষ্ঠদেশ জুড়ে। গলায় মুখ ডুবিয়ে আছে। ইয়ানা অবাক হয়। সাথে সাথে অভিমানের পাল্লা আরও ভারী হয়ে উঠে।

চার দিন থেকে পাঁচদিন হতে চলল একটা দিন তার খোঁজ নিয়েছে। জানতে চেয়েছে কেমন আছি আমি? একটা বার বলে গিয়েছে আমাকে? দুই দিন হলো ভিলাতে ফিরেছে অথচ তার খোঁজ নেই নি একবারের জন্য ও। আমার ফোনটা তো বেলকনি থেকে পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে তাই যোগাযোগ করতে পারি নি। কিন্তু উনি? উনি তো বাংলাদেশে এসে আমার সাথে দেখা করার কথা ছিলো। কিন্তু উনি দুই দিন পর এসেছে আদিক্ষেতা দেখাতে?

এইটা উনি তো? নাকি আমার কোনো ভ্রম? অগ্নির পাগলামোতে ইয়ানার ঘোর কেটে যায়। অভিমানে চোখে পানি টলমল করছে। ইয়ানা জানে সে অগ্নিকে সরাতে পারবে না। তবুও সুযোগ বুঝে কাজে লাগাতে হবে। অগ্নির বাঁধন হালকা হয়ে আসতেই ইয়ানা অগ্নিকে নিজের সব শক্তি দিয়ে ধ্বাক্কা দেয়। আকস্মিক এমন হওয়াতে অগ্নি নিজের টাল রাখতে পারে নি। সে একদিক দিয়ে হেলে পড়ে। ইয়ানা সুযোগ বুঝে বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে গিয়ে দাঁড়ায়। রাগে তার পুরো শরীর রিঁ রিঁ করছে। অগ্নি ছোট ছোট চোখে ইয়ানার দিকে তাকায়। হঠাৎ করে নাক – মুখ শক্ত করে ফেলে। ইয়ানার কাছে এসে দাঁড়ায়। অগ্নিকে কাছে আসতে দেখে ইয়ানা পিছিয়ে যায়। অগ্নি এগিয়ে আসছে আর ইয়ানা পিছিয়ে যাচ্ছে। একসময় ড্রেসিং টেবিলের পাশে থাকা বেসিনের সাথে ধাক্কা খেয়ে ইয়ানা থেমে যায়। অগ্নি ইয়ানার একদম কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। ইয়ানা নাক – মুখ কুচকে নাক টেনে শ্বাস নিয়ে বলে,,,,,

“” আপনি ড্রিংক্স করে এসেছেন?
অগ্নি ইয়ানার সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে কর্কশ মেজাজে বলে,,,,,,
“” শান্তি কেনো পাচ্ছি না আমি কিছুতেই? রিজেক্ট কেনো করলি? বলেছিলাম না আমি কাছে আসলে ইগনোর না করতে? বল?
ইয়ানা মাথা তুলে অগ্নির রাগান্বিত চোখে তাকায়। অতিরিক্ত ড্রিংক্স করে ফেলায় এখন নিজের মধ্যে নেই। ইয়ানা গম্ভীর শ্বাস ছেড়ে বলে,,,,,,,,
“” আপনি এখন নিজের মধ্যে নেই। বাড়িতে চলে যান। এত রাতে কে বলেছে আসতে আপনাকে? রেলিং পার করে নিশ্চয় এসেছেন তাই না?

অগ্নি — বাড়িতেই তো ছিলাম। আসতে চাই নি। তবুও এসে গেলাম। কি করেছো আমাকে সেটা বলো? আমার শরীর, আমার ফুসফুস, আমার হৃদস্পন্দন সব তোমার পক্ষে কেনো কথা বলে? আমার কথা মানতেই চায় না। বার বার বলছি এই বিয়াদপটার কাছে যাব না। দেখতে চাই না তাকে। কিন্তু তারা আমার সাথে বেইমানী করে রাত তিনটার সময় তোমার কাছে নিয়ে আসলো।
ইয়ানা — ওহহ দেখতে চাননি আমায়? তাহলে এসেছেন কেনো? বাড়ি ফিরে যান দেখতে হবে না আমাকে।
অগ্নি — একটা থাপ্পর দিব বলে দেশে এসেছিলাম। ফোন কেনো ধরছিলে না আমার? মোবাইল কোথায় দেখি?
ইয়ানা অগ্নির দিকে তাকায়। চোখে পানি টলমল করছে। কত বড় অসভ্য হলে আবার বলে থাপ্পর দেওয়ার জন্য সে বাংলাদেশে এসেছে। মোবাইল তো এতদিন ভালো ছিলো। কই একদিন তো ফোন আসলো না। উল্টো তার ফোন রিসিভ করে নি।

ইয়ানা — ভালো তো। এখন আপনার শখ পুরন করুন। এত কষ্ট করে যখন আসলেন থাপ্পর দেওয়ার জন্য। এই যে গাল দুইটা আছে ইচ্ছেমত কয়েকটা থাপ্পর দিয়ে বেরিয়ে যান আমার রুম থেকে।
ইয়ানা অগ্নিকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে আসতে চায়।কিন্তু যেতে পারে না।অগ্নি হেচকা টানে নিজের শক্ত বুকের সাথে এনে ইয়ানার কোমর চেপে ধরে। ইয়ানা হকচকিয়ে উঠে। অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি ইয়ানার উন্মুক্ত কোমরে হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বলে,,,,,,,
” বিড়ালের সামনে কাটা বিছিয়ে দিয়ে প্রথমে লোভনীয় করে তুললে। এখন সেই কাটা আবার পুনরায় উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছো। যেতে দিবে বিড়াল তোমাকে তার খাবার নিয়ে? হুম। বিড়ালকে যতটা শান্ত দেখতে পাওয়া যায় খাবার সামনে পেলে সে ততটায় অশান্ত হয়ে পড়ে।
ইয়ানা ভয়ে ঢোক গিলে। তাকানোর সাহস পাচ্ছে না সে। অগ্নির ইঙ্গিত বুঝার ক্ষমতা আছে তার। আর সে বুঝেছে ও। ইয়ানা ঠোঁট ভিজিয়ে নিচু স্বরে বলে,,,,,,,

” কিসব বলছেন? ছাড়ুন আমাকে।
অগ্নি ইয়ানার দিকে ঝুঁকে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,
” আমার হৃৎপিন্ড তোমার বিরুদ্দে সংকেত তুলছে। তারা বলছে যাতে না ছাড়ি। আটকে রাখি নিজের ভিতরে। একদম নিজের সাথে।
ইয়ানা — দে.. দেখুন অনেক রাত হয়েছে। আপনি ও ক্লান্ত মনে হচ্ছে। চোখ- মুখ একদম লাল হয়ে আছে আপনার। বাড়িতে গিয়ে রেস্ট নিন।
অগ্নি ইয়ানার কথা কানে তুলে না। সে নিজের হাতের বিচরন আরও গভীর করে তুলে। অবাধ্য এই বিচরন ভিবিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। অগ্নি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ইয়ানার ভিতু মুখের দিকে তাকায়। এরপর হালকা শব্দে রহস্যময় হাসি দেয়। অগ্নির হাসির দিকে তাকিয়ে ইয়ানা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,,,,

” এইভাবে কাছে আসছে কেনো?
অগ্নি আরও ঘনিষ্ঠ হবে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,,,
” গভীর রজনী,, তোমার কাঁপা শরীর, আমার উত্তপ্ত মন, সাউন্ড প্রুফ রুম। রাত বারোটার সময় তো কাছে আসার পর্যাপ্ত সময় বেইবি। দুইটি নিশ্বাস একত্রে বাঁধার।
ইয়ানা অগ্নির শার্ট শক্ত করে খামচে ধরে,,,,,,,
” আমার রুম সাউন্ড প্রুফ না।
ইয়ানার অবস্থা দেখে অগ্নি ঠোঁট চেপে হাসে। ইয়ানাকে আরও ভয় দেখানোর জন্য কানের কাছে হিসহিসিয়ে বলে,,,,,

” কিছু যায় আসে না। তাহলে চলো যাওয়া যাক নিশ্বাস এক করার জন্য।
ইয়ানা অগ্নিকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে,,,,,,
” খবরদার কাছে আসবেন না। আপনার ছোয়া বিষাক্ত লাগছে।
কথা শেষ না হতেই নিজের চুলে টান অনুভব করে। গলায় কেউ শক্ত ভাবে চেপে ধরে। মনে হচ্ছে জীবন বেরিয়ে আসার উপক্রম। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে এমন সময় অগ্নি ইয়ানার গলা থেকে হাত সরিয়ে নেয়। ইয়ানা গলায় ধরে কাঁশছে। চোখ থেকে পানি টলমল করে পড়ছে। অগ্নির এমন উন্মাদ রুপ দেখে ইয়ানা ঠোঁট চেপে কান্না আটকিয়ে রাখে।

ইয়ানা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। শরীর অসম্ভবভাবে কাঁপছে। পর্যাপ্ত পানির অভাবে গলা শুকিয়ে আসছে। ইয়ানার এমন অবস্থা দেখে অগ্নি চাপা হাসে। অগ্নির হাত আলতো হয়ে আসে। কোমর ছেড়ে দিয়ে ইয়ানার গালে স্পর্শ করে। ইয়ানা সেই সুযোগের ব্যবহার করে চট করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার ভিতরে ডুকে যায়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় নি। বাঁধা পড়ে যায় আবার ও অগ্নির বাঁধনে। অগ্নি ইয়ানার কোমর ধরে বেসিনের উপর বসিয়ে দেয়। ইয়ানা ভয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে। অগ্নির ঠোঁটে বাঁকা হাসি। ইয়ানার ঠোঁট তিরতির করে কাঁপছে। অগ্নি ইয়ানার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে ইয়ানার চোখের দিকে তাকায়।

নিজের হাতটা মিররের উপর রেখে অন্য হাত ইয়ানার কোমর চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। ইয়ানা চোখ মুখ খিঁচে অগ্নির শার্ট শক্ত করে চেপে ধরে। অগ্নি নিজেকে নিয়ন্ত্রন রাখার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে মিরর চেপে ধরে। অগ্নির দন্তের ঘর্ষনে ইয়ানা সিটিয়ে যাচ্ছে। ধৈর্য ধরার ক্ষমতা পেরিয়ে যাচ্ছে। ইয়ানা এক দিকে হেলে পড়ে কিন্তু তার আগেই অগ্নি আগলে নেয়। অগ্নির পাগলামো দ্বিগুন বাড়তে থাকে। কিছুক্ষন পর কিছুর টাং শব্দে ইয়ানা কেঁপে উঠে। ইয়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। আয়না ভেঙ্গে গিয়েছে। বেসিনের উপরের অংশ আর নিচের অংশ জোড়া লাগানো স্থানে ফাটল সৃষ্টি হয়। অগ্নির উন্মাদনায় বার বার শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে।

ইয়ানা থামাতে চায় কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। অগ্নি পুনরায় ইয়ানার ঠোঁটে ঠোঁট মিলাতে আসলে ইয়ানা সুযোগ বুঝে হুট করে অগ্নির নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে। অগ্নি বার বার ঠোঁট নাড়াতে চায় কিন্তু কামড়ে ধরে রাখার কারনে নাড়াতে পারছে না। হুঁস ফিরে আসে তার। ঠোঁট ছেড়ে দেয়। অগ্নি ইয়ানার থেকে চোখ সরিয়ে আয়নার দিকে তাকায়। আয়না অনেক জায়গা নিয়ে ফেটে গিয়েছে। বেসিনের উপরের অংশ মজবুত তবুও হালকা হেলে পড়েছে। ইয়ানা পড়ে যাওয়ার ভয়ে অগ্নিকে শক্ত করে চেপে ধরে। অগ্নি বিরক্তির শ্বাস ফেলে ইয়ানাকে কোমর ধরে নিচে নামিয়ে দেয়। ইয়ানা এখন ও বরফের মত জমে আছে। অগ্নির থাবা কোনো সিংহের থেকে কম নয়। ইয়ানা ঠোঁট হাত দিয়ে ধরে রেখেছে। প্রচন্ড ব্যাথা করছে ঠোঁট আর গলা।

অগ্নি বেসিন আর আয়নার দিকে তাকিয়ে তিরক্ষি মেজাজে বলে,,,,,,,
” তোমার বাবা কি ভালো বেসিন লাগাতে পারে নি। কি প্রয়োজন ছিলো এখন ভাঙ্গার। পুরো মুডের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। আর এইভাবে আমার ঠোঁট কামড়ে ধরে রেখেছিলে কেনো ইডিয়েট?
অগ্নির রাগ দেখে ইয়ানা আয়নার দিকে তাকায়। আয়না আর বেসিনের দিকে তাকাতেই সে তাজ্জব বনে যায়। অগ্নির দিকে না তাকিয়ে বেসিনের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,,,,
” এইবার ভাবেন কতটা কন্ট্রোললেস আপনি। এত শক্ত তবুও আয়না ভেঙ্গে গিয়েছে, বেসিন হেলে পড়েছে। এরা ও আপনার অধৈর্য মুহূর্ত সহ্য করতে পারে না অথচ আমি কিভাবে সহ্য করি।
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,,,,,

” তুমি ট্রেনিং প্রাপ্ত । ওরা তো আর ট্রেনিং প্রাপ্ত নয়।
ইয়ানা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে,,,,,,,
” আসলেই আমি ট্রেনিং প্রাপ্ত। নাহলে এত কিছু সহ্য কি করে করি বলোন তো। আপনার বিষাক্ত কথা, আপনার পরিচয়, আপনার অবহেলা, আপনার উপেক্ষা সব সহ্য করছি। আপনি উপেক্ষা করলে ইটস ওকে বাট আমি একটু অভিমান করে দুরে সরে গেলে শুরু হয়ে যায় আপনার হিংস্রতা।
ইয়ানা হালকা শ্বাস নিয়ে বিছানায় বসে। অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা ঠোঁট ভিজিয়ে আবার বলে,,,,,,,

” কতকিছু সহ্য করছি আপনি বুঝতে পারছেন মি চৌধুরি? আপনি খুন করে হাত রক্তাক্ত করে আসেন আর সেই হাত আমি ধৌঁত করে দিচ্ছি। ওয়াও গ্র‍্যাট! কোথায় যান, কি করেন সেটা জানার তো অধিকার কখনো হয় নি। বিদেশ চলে যান অথচ আমি জানি না। এমন অনেক দিন গিয়েছে আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি অথচ আপনি বাড়ি ফিরেন নি। এমন ও দিন গিয়েছে দুই – তিন দিন পর পর বাড়ি ফিরতেন। শিশু পাচার – নারী পাচার সবকিছুর সাথে যুক্ত আপনি।
অগ্নির শান্ত আওয়াজ,,,,,
” পাচারের মধ্যে আমি নেই। ”
ইয়ানা রেগে তাকায় অগ্নির দিকে,,,,,,

“” আর অভিনয় করবেন না প্লিজ? আর কত বোকা বানাবেন। আপনার টর্চার সেলে আপনার অবাধ্য হয়ে এত বড় অন্যায় কাজে যুক্ত অথচ আপনি বসে আছেন। বুঝাতে এসেছেন আমাকে? এতটা বোকা মনে হয়। সরাসরি যুক্ত না হলেও সাহায্য করেন অনেক।
ইয়ানার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। অগ্নি রুমে কিছুক্ষন গম্ভীর পায়চারী করে বলে,,,,,
“” এমন কিছুই নয়। অযথা অপবাদ দিলে মেরে সাত ফুট মাটির নিচে ডুকিয়ে দিয়ে আসব।
ইয়ানার সাবলীল উত্তর,,,,
“” মেরে কেনো দিচ্ছেন না। আপনার হাতে তো ক্ষমতা আছেই।
অগ্নি — আমি কিন্তু ধৈর্য হারা হচ্ছি ইয়ানা। আমি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না। ধৈর্য খুব কম আমার। সত্যি খারাপ কিছু করে বসব।

ইয়ানা অশ্রু চোখে অগ্নির দিকে তাকায়। বুকটা ভেঙ্গে আসছে। সুন্দর করে একটু মিষ্টি কথা বলে বুকে টেনে নিলেই তো ইয়ানা গলে যায়। সবকিছু ভুলে হামলে পড়ে তার বুকে। কিন্ত এসেছে পর থেকেই ধমক দিয়ে যাচ্ছি। আমি না হয় কষ্ট থেকে কথা গুলো বলছি কিন্তু উনি কি পারছেন না আমাকে বুকে টেনে নিতে। এসে একের পর এক স্বীকার উক্তি দিচ্ছে। উনি আসতে চাই নি এখানে এরপর ও এসে পড়েছে। আবার বলছে তাকে থাপরানোর জন্য দেশে এসেছে। ইয়ানা দাঁতে দাঁত চেপে কটমট করে বলে,,,,,,

“” চলে যান আমার চোখের সামনে থেকে। অসহ্য লাগছে আপনাকে এই মুহূর্তে। আপনার মোবাইলটা দিন ইউভি ভাইয়াকে ফোন করছি উনি এসে নিয়ে যাবে । মাতাল হয়ে আছেন ঠিকমত ড্রাইভিং করতে পারবেন না।
ইয়ানা অগ্নির থেকে মোবাইলটা নিতে গেলে অগ্নি এক আছাড়ে মোবাইল মেঝেতে ছুঁড়ে মারে। এত জোরেই ধাক্কা লেগেছে মোবাইল খন্ড -বিখন্ড হয়ে যায়। ইয়ানা মুখে হাত দিয়ে তাকায় সেদিকে।
অগ্নি রাগে ফুঁসছে। ইয়ানা অবাক হয়ে মুখে হাত রাখা অবস্থায় অগ্নির দিকে তাকায়। সেই আগের রাগ। যে চোখ দুটি দেখলে ইয়ানা আতকে উঠে। যেটা সে প্রচন্ড ভয় পায়। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে। অগ্নি ইয়ানার চোখে চোখ রেখে বাহু চেপে ধরে। ইয়ানা ব্যাথায় হালকা আর্তনাদ করে উঠে।
অগ্নি সেসব পাত্তা না দিয়ে দাঁত কটমট করে বলে,,,,,,,

“” বলেছিলাম না না রাগাতে। অসহ্য, ঘৃনা এইসব শব্দ উচ্চারন না করতে? অসহ্য লাগে তর তাই না। যাহহ দিয়ে গেলাম তকে মুক্তি।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,,,
“” মানে!
অগ্নি ইয়ানার বাহু ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর আওয়াজে বলে,,,,,,
“” আমি অগ্নি চৌধুরি তকে মুক্তি দিয়ে গেলাম। যেদিন আমার শূন্যতা তকে আকড়ে ধরবে ওইদিন সেচ্ছায় নিজেই চলে আসবে, তার আগে নয় । আজ থেকে আর কোনোদিন যাতে আমি এই মুখটা আর না দেখি।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪২

অগ্নি আর দাঁড়ায় না। দরজা দিয়ে বেলকনি বেয়ে নিচে নেমে যায়। ইয়ানা এখন ও তব্দা লেগে এক জায়গায় দাড়িয়ে আছে। কি বলে গেলো এইসব? ইয়ানা দ্রুত বেলকনির কাছে যায়। অগ্নি গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে। একটি বার পিছন ফিরে তাকায় নি পর্যন্ত। চোখের সামনে কালো মার্সিডিজ গাড়িটি দ্রুত চলে যায়। ইয়ানা মুখ চেপে ধরে রেলিং ঘেষে বসে পড়ে। মুখ চেপে ধরে উচ্চস্বরে কেঁদে উঠে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৪৪