অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৪

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৪
লিজা মনি

রাত প্রায় একটা বেজে বিশ মিনিট হতে চলল।
রাত একটার কাঁপা-কাঁপা কাঁটা সময় নিজেই শিরশিরে ঘুম ঘুম ছায়ায় আচ্ছন্ন। আকাশ বিষণ্নতার চাদরে মোড়া আর চাঁদের নিস্প্রভ আলো মৃতপ্রায়। জঙ্গলের নিষ্প্রাণ স্তব্ধতা কোনো পূর্বশোকের নিঃশ্বাস টেনে যাচ্ছে। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে বিবর্ণ পাতা ও থমকে যাওয়া শূন্যতা। এই নিস্তব্ধতা ছিন্ন করে হঠাৎ গর্জে ওঠে এক কালো রঙের বুলেটপ্রুফ শীতল ইঞ্জিনের আওয়াজে আচ্ছন্ন অগ্নির গাড়ি।

গাড়ি থামে পুনরায় সেই নির্জনতার উপবিত জঙ্গলের এক ভয়ানক গর্ভে টর্চার সেলের প্রবেশপথে। অগ্নি নেমে আসে পায়ের নিচে শুকনো পাতার মচমচে শব্দ যেন অশরীরী আত্মার বিলাপ। ঠিক সেই মুহূর্তে থামে রায়ান ও ইউভির গাড়ি। নিঃশব্দ ত্রয়ীর আগমন ঘটে ছায়ার চেয়েও নীরবে।
তিন জিন নিস্তব্দতা পেরিয়ে টর্চার সেলে প্রবেশ করে। যেহেতু আজ রাতে কানাডায় ব্যাক করবে সেহেতু সর্বপ্রথম এই টর্চার সেলকে স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। অগ্নি, রায়ান আর ইউভি সেই বিশাল বড় বদ্ধ রুমটাতে প্রবেশ করে। চারদিকে এক অদ্ভুত নিরবতা। অগ্নি চোখ ঘুরিয়ে স্টিলের উপর তাকায়। যেখানে আলবার্টকে কেটে টুকরো – টুকরো করেছিলো। রক্তে ভেসে উঠেছিলো পুরো টর্চার সেল। টাটকা রক্তের গন্ধ এক অমৃতের স্বাদ বয়ে এনেছিলো। আজ সেই স্টিল পড়ে আছে অবহেলিতভাবে। একদম পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন। দেখলে মনে হবে এইটা একটা সাধারন স্টিল।কোনোদিন রক্ত দেখেনি। তার বুক চিরে শত শত ছিন্ন মাংসের আর্তনাদ ফেটে বের হয়নি। অথচ সে জানে আর শুধু স্টিলই জানে কত আত্মার নিঃশেষ,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কত আর্ত চিৎকার, কত করুণ মৃত্যুর সাক্ষ্য গোপনে বহন করে সে। কত কত – শত লোকের দেহকে নিষ্প্রান নির্মমভাবে ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন করেছে।
ইউভি তখন ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় গার্ডদের সম্মুখে। তার মুখ পাথরের মতো কঠিন। চোখের দৃষ্টিতে শীতল মৃত্যুর সংজ্ঞা। ঠোঁট থেকে ছিটকে পড়ে একরাশ রুক্ষ এবং গম্ভীর নির্দেশ,
” পুরো টর্চার সেলকে স্বাভাবিক করে তুলো। এখানে রাখা যত – শত অস্ত্র সামগ্রী রয়েছে সব মাটির নিচের সেই বদ্ধ রুমটাতে নিয়ে রাখো প্রতিবারের মত। আর প্রতিটা দরজার ভয়াভহতা কমাও। আমাদের আগোচরে কেউ এখানে ডুকলে যাতে বুঝতে পারে এইটা একটা পুরনো বদ্ধ বাড়ি, টর্চার সেল নয়।
ইউভির কথা অনুযায়ী গার্ড মাথা নিচু করে সম্মতি জানায়। ইউভি বাঁকা হেসে অগ্নির কাছে আসে। অগ্নি ছোট ছোট চোখ করে সামনে তাকায়। স্টিলের পাশে দেয়ালে রক্ত দিয়ে কিছু লেখা আছে। কৌতহল নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। ভিতরে ভিতরে ক্রোধে ফেটে পড়ে। স্টিলের পাশে সামান্য ঝুঁকে,,

— আমার এক ভাইকে মেরেছিস সমস্যা নেই। আমাকে ও মেরে ফেলবি কিন্তু আরেকজন আছে তর বিনাশের জন্য। আমাদের বড় ভাই আর তর জন্মগত শত্রু।
অগ্নি লেখাটা পড়ে কপাল কুচকে ফেলে। রায়ান লেখাটার দিকে তাকিয়ে হতাস হয়ে বলে,,,
” আলবার্টের বাপ কয় বাচ্চা পয়দা করেছে বলতো? শালার আমি সামান্য বউয়ের কাছে ঘেষতে পারি না আর এই বলদে তিন শয়তান জন্ম দিয়ে রেখে গিয়েছে মরার জন্য।
ইউভি– লেখাটার মিনিং অনেক ডিপ রায়ান। ছেলে কয়টা জন্ম দিয়েছে সেটা মেটার না বাট কথা হচ্ছে কে এই বড় ভাই? যাকে জন্মগত শত্রুতার সাথে অংশগ্রন করালো। মনে হচ্ছে মরার আগে আলবার্ট নিজেই লিখে রেখে গেছে।

ইউভি উৎসুক হয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি চেয়ারে গম্ভির হয়ে বসে আছে।
ইউভি– আমার জানামতে আলবার্ট আর রিকর্ডো দুই ভাই ছিলো। আর দুইজনকেই তুই মেরেছিস। তাহলে আরেকজন আসলো কোথা থেকে ? তুই জানিস কিছু?
অগ্নি চেয়ারে হেলান রেখেই উত্তর দেয়,,,
“” না! আলবার্ট আর রিকোর্ড রাশিয়ান। ওদের বাবা ছিলো অস্ত্রের কন্ট্রাক্ট কিলার। ওদের বাপ পুলিশের হাতে নিহত হয়। এরপর থেকে আলবার্ট আর রিকোর্ড সেই অস্ত্রের কন্ট্রাক্টে ডুকে পড়ে। এরপর রাশিয়া থেকে কানাডা আসে। এরপর ধীরে ধীরে হয়ে উঠে অস্ত্রের কারিগর। একসময় ডুকে পড়ে মাফিয়া প্যালেসে। আমি মাফিয়া প্যালেসে যাওয়ার আগে থেকেই তারা এখানকার কাজ করে। আমার জায়গা নেওয়ার জন্য মাফিয়া প্যেলেসের প্রতিটি ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে। সুযোগ হলে যে কোনো সময় আমাকে আ্যটাক করবে। গোপন ভাবে শত্রুতা সবার সাথে
কিন্তু কে সেই অজানা ব্যাক্তি?
রায়ান — হয়ত সে মাফিয়া প্যালেসের কেউ না। দুর থেকে সবকিছুর লক্ষ্য রাখত।
ইউভি বিরক্তি নিয়ে বলে,

” শালার এইগুলোর কি মরার পাখা সবসময় ঝাঁপটাতে থাকে? কু** বাচ্চাগুলো নিজ ইচ্ছায় শত্রুতা করতে আসে। আর তাদের খুন করলেই খারাপ হয়ে যায়।
অগ্নি কিছু বলে না। গার্ডদের টর্চার সেল স্বাভাবিক করার আদেশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। একটাকে মারতে দেরী আরেকটা এসে হাজির হয়। শত্রুতা ওর সাথে করলে হাজার জন্য শত্রুকে কাবু করে রাক্তাক্ত করে ফেলতে পারবে। কিন্তু ওর দুর্বলতা! ওর বউটাকে যদি নজর দিয়ে দেয়? কত জন শত্রুর থেকে রক্ষা করব? আমার মেইন শত্রু রানবীর আর আতিক যদি একবার সব সত্যি জানতে পারে তাহলে তাদের ও প্রথম টার্গেট হবে আমার নিষ্পাপ বউটার উপর। সামান্য আঘাত লাগলে কিভাবে সহ্য করব?কীভাবে শকুনের চোখ থেকে তোমাকে রক্ষা করব? আমার বিষাক্ত জীবনে ডুকে তোমার শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া ছড়াচ্ছে। সাপে ছোবল দেয় আমাকে আর বিষ ছড়িয়ে পড়ে তোমার শরীরে।
অগ্নি বিরবিরিয়ে উঠে,,
” নিজের শরীরে হাজারটা তীরের আঘাত সহ্য করতে পারব কিন্তু তর শরীরে সামান্য আচর ও সহ্য করব না বউ। আমার সব আয়ু তর হক। তর সকল বিপদ আমার উপর দিয়ে যাক কিন্তু তকে যাতে কেউ স্পর্শ করতে না পারে।

রাত প্রায় তিনটার কাছা- কাছি। রায়ান রুমে ডুকে পুরো রুম অন্ধকার। অনুমান অনুযায়ী সুইচ বোর্ডে টাচ করে লাইট অন করে। সাথে সাথে অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুমটা আলোকিত হয়ে পড়ে। রায়ান চোখ ঘুরিয়ে বিছানার দিকে তাকাতেই কপাল কুচকে আসে। সুমু হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে। চোখের পাপড়িগুলো নড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে এখনও ঘুমায় নি। রায়ান অবাক হয় অনেক। রাত তিনটা বাজে আর এই মেয়ে না ঘুমিয়ে এইভাবে বসে আছে কেনো? রায়ান হালকা কেঁশে সুমুর পাশে গিয়ে বসে,
” হেই কি হয়েছে? না ঘুমিয়ে এইভাবে বসে আছো কেনো?
সুমু চোখ খুলে তাকায় রায়ানের দিকে। সুমুর চোখ দেখে রায়ান ভরকে যায়। চোখগুলোর সাদা অংশ কেমন লাল হয়ে আছে। রায়ান সামান্য ঢোক গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,
” কি হয়েছে সুইটি? চোখ এমন লাল হয়ে আছে কেনো? কান্না করছিলে!
সুমু কটমট চোখে তাকায় রায়ানের দিকে। দাঁত কটমট করছে। চোখ থেকে পানি এখনই গড়িয়ে পড়বে। কিন্তু দাঁত চেপে সেটাকে আটকিয়ে রেখেছে। সুমুর অবস্থা দেখে রায়ান বোকা বনে যায়। এই মেয়ের হলোটা কি? হুট করে এমন করছে কেনো?
সুমু নিরবতা ভেঙ্গে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞাসা করে,

” রাত কয়টা বাজে এখন?
রায়ান চোখ তুলে তাকায় সুমুর দিকে। একস্মিক এমন প্রশ্নে সে ভাবুক হয়ে উঠে। মেয়েটা কি তার জন্য অপেক্ষা করেছে? নাকি চিন্তা করছিলো? অহহ রায়ান ভুলে কেনো যাচ্ছিস তর এখন কবুতরের বাচ্চার মত বউ আছে। রায়ান সামান্য হাসি দিয়ে বলে।,
” হবে হয়ত বারোটা – একটা।
সুমু– হাত ঘড়ি কেনো ব্যবহার করেন? লক্ষ টাকার মোবাইল কেনো সাথে রাখেন যদি সামান্য সময়টা ধারনা করতে না পারেন। এতগুলো ফোন দিয়েছি একটা বার ফোনটা রিসিভ করার কি প্রয়োজন মনে করেন নি? নাকি ইচ্ছে হয় নি রিসিভ করার? আমাকে টেনশনে রাখতে খুব ভালো লাগে তাই না?
রায়ান বোকা বোকা নজরে তাকায় সুমুর দিকে। নিজের মোবাইল চেক করে দেখে ত্রিশটা মিসডকল। আর সব সুমুর ফোন থেকে এসেছে। মোবাইল সাইলেন্ট থাকায় সামান্য আঁচ ও করতে পারে নি।
রায়ান গম্ভীর হয়ে বলে,,

” আমার জন্য কখনো অপেক্ষা করো না সুমু। আমি কখনো সময় নির্ধারন করে বাড়ি ফেরত আসি না। এমন অনেক ও রাত যায় বাড়িতে আসি না। হয়ত ভবিষ্যতেও এমন হবে বহুবার। অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে পড়বে।
সুমুর সন্দেহমূলক প্রশ্ন —
” এত রাত পর্যন্ত বাহিরে কি কাজ আপনার? আপনি ও কি তাহলে..
রায়ান চট করে তাকায় সুমুর দিকে। কপালের ভাঁজ প্রখর হয়। হালকা ঘাম কপালে বিন্দু বিন্দু জমা হতে থাকে। রায়ানের অদ্ভুত কন্ঠ,,
‘ কি?
সুমু নিশ্বাস টানে। কাঁপা আওয়াজে বলে,

” আপনি ও কি ভাইয়ার সহযোগী? ভাইয়া যেসব কাজে যুক্ত আপনি ও কি একই কাজ করেন? নাহলে কোনো গোয়েন্দা অফিসার কিভাবে একজন গ্যাংস্টারের বন্ধু হয়? প্রশ্নটা আমাকে বড্ড ভাবায় রায়ান।
সুমুর উৎসুক কাঁপা দৃষ্টি। সুমুর প্রশ্নে রায়ানের কপালের ভাঁজ সমান হয়ে আসে। বুক টান করে নিচের দিকে চোখ নামিয়ে সামান্য হাসে। রায়ানকে হাসতে দেখে সুমু সন্দেহ নিয়ে বলে,,
” আমার মনে জেগে উঠে প্রশ্নটার উত্তর কি পেতে পারি রায়ান? আপনি ও কি অনৈতিক কাজে সংযুক্ত।
রায়ান সুমুর দিকে তাকায়। দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে বলে,,

” সুমু আমাদের সম্পর্ক এক শক্ত ধাতু দিয়ে তৈরি। এমন এক ধাতু যে ধাতুতে কেউ আঘাত করলেও ভাঙবে না। অগ্নি, ইউভি আর রায়ান হচ্ছে এক আত্না। জীবন চলে যাবে কিন্তু একজন আরেকজনের সঙ্গ ছাড়বে না। আমাকে আর ইউভিকে বাঁচাতে গিয়ে অগ্নি বহু গুলির আঘাত, ছুঁরির আঘাত, পাথরের আঘাত সহ্য করেছে। বহুবার রক্তাক্ত হয়েছে। কিন্তু সামান্য পিছু পা হয় নি। দুই হাত দিয়ে আগলে রেখেছে আমাদের। এখনও রাখছে সুন্দরভাবে। একজন আরেকজনকে বাঁচাতে আমরা জীবন ও দিতে পারি। আর আমাদের সম্পর্ক এমন এক সম্পর্ক যেটা ভাঙ্গার ক্ষমতা কোনো মানবকূলের নেই।

হ্যা অগ্নি একজন গ্যাংস্টার। অসামাজিকতা ওর রক্তে মিশে আছে। আমি আর ইউভি হলাম ওর ডান হাত আর বাম হাত। অনৈতিক কাজ আমাদের জন্য আহামরি কিছু নয় সুমু। আমার গোয়েন্দা অফিসার হওয়ার এক মাত্র উদ্দেশ্যে হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। যাতে আইন হাতে নিয়ে অগ্নিকে সাহায্য করতে পারি। আমাদের রাস্তায় কোনো বিপদ না আসে। মিথ্যে বলব না আমি। বউ তুমি আমার। সম্পূর্ন রাইট আছে আমার সম্পর্কে জানার। যেখানে এত সিকিউরিরিটির পর ও অগ্নি নিজের সত্য গোপন রাখতে পারে নি। কোনো একভাবে সব সত্য একত্রিত হয়েছে। ইয়ানার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে অগ্নির মুখোশের আড়ালে থাকা সেই অন্ধকার রুপ। সেখানে আমি তোমার সামনে মুখোশ পড়ে থাকাটা বোকামি। আমি হয়ত আইনের লোক কিন্তু আমার আসল পরিচয় আমি এক গ্যাংস্টারের সহকারী। এইটাই আমার পরিচয় আর এইটাই আমি। অগণিত খুন করেছি। কিন্তু তোমাকে আমি আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি সুমু।

সুমু নিজের কাপড় খামচে দিয়ে আকড়ে ধরে। ভয় হচ্ছে তার খুব। কিন্তু কেনো? সুমুর কঠিন সুর,,
” আইনের হাত ধরে অন্যায় কাজে সাহায্য করতে বিবেকে বাঁধে না।
রায়ানের মুচকি হাসি,,
” উহুম।
সুমু — খুব খারাপ আপনারা। নারী পাচার চক্রকে সাহায্য করেন, বাচ্চাদের বলি দেন। হাজার হাজার অবৈধ জিনিস নিয়ে তামাসা করেন। নারী নিয়ে ফুর্তি…
সুমু আর বলতে পারে না। রায়ান থামিয়ে দেয় ঠোঁটের উপর আঙ্গুল চেপে ধরে। সুমু টলমল চোখে তাকায় রায়ানের দিকে।।রায়ান সুমুকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলে,,
” এমন কিছুই নয় সুইটি। তুমি আমার জীবনের প্রথম নারী। স্পর্শ হয়ত গভীর হয় নি কিন্তু মনের গভীরতা সীমাহীন। এমন কথা কখনো মনের ভিতরে ডুকাবে না। আমি কোনো দিন পর নারীকে আলিঙ্গন করি নি। ভালোবাসলে নিজের স্ত্রীকে বাসব, কোনো পর নারীকে নয়।
সুমু মৌন হাসে। মাথাটা রায়ানের বুকের উপর রেখে ঘন ঘন শ্বাস টানে। রায়ান আগলে নেয় নিজের সাথে প্রান প্রিয় অর্ধাঙ্গিনীকে।

ইয়ানা বাবা – মায়ের মৃত্যু উপলক্ষে আজ ক্ষুধার্ত বাচ্চাদেরকে খাবার খাওয়াতে উৎসাহী হয়। সে রাস্তার বাচ্চাদের প্রতি সব সময় সহনশীল ছিলো। প্রতি সপ্তাহে বাচ্চাদের খাওয়াত। ক্ষুধার্ত বাচ্চাদের দেখলে আলাদা এক কষ্ট আর মায়া অনুভব হয়। খাবার খাওয়ানোর উপলক্ষে যদি তাদের মনে কিছু সময়ের জন্য হলেও হাসি ফুটে তাহলে সেটাও এক মানসিক তৃপ্তি। বাচ্চারা নিষ্পাপ হয়। হয়ত নিয়তি আজ তাদের রাস্তায় এনে দাড় করিয়েছে। নাহলে তারা ও কারোর সন্তান, কারোর ভালোবাসার অংশ। কোনো এক হতভাগা মায়ের নারী ছেড়া ধন। আবার কারোর পাপের ফল তারা ভোগ করছে। তার কাছে এই শিশুরা কেবল রাস্তায় পড়ে থাকা মুখগুলো নয়।ওরা প্রত্যেকেই কোনো এক বিচ্ছিন্ন ভালোবাসার নিঃশেষিত রেশ। কোনো দুর্ভাগা জননীর গর্ভজাত।আবার হয়তো নিষ্ঠুর নিয়তির খেলায় জন্ম নেওয়া অশ্রুজন্মা অস্তিত্ব। শিশুগুলোকে খাবার দিয়ে হাসাতে পারলে, তাদের চোখের কোণে একটুকরো তৃপ্তি ফুটিয়ে তুলতে পারলে ইয়ানার মন কিছুটা প্রশান্তি খুঁজে পায়। এটা একরকম আত্মিক উপশম। অন্তর্জগতের ক্ষতের ওপর মায়ার প্রলেপ।

ইয়ানা কিচেনে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করছিলো। অগ্নি রুমে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতে অগ্নির অপেক্ষা করতে করতে হুট করে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। ইয়ানা প্রতিবার অগ্নির ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখে মুচকি হাসি। ভাবতেই অবাক লাগে এই মানুষটা বার বার তার মনকে বিষিয়ে তুলেছে। তবুও এই বেহায়া মন শুধু তাকাই চায় বার বার। যাকে ছাড়া নিশ্বাস নেওয়াটা ও কঠিন হয়ে পড়েছে। খুব বিরক্তি অনুভব করে মাঝে মাঝে নিজের অনুভুতি নিয়ে। কেনো অনুভুতি শুধু অগ্নি নামক ব্যক্তির জন্য উকি দেয়। সেই ব্যক্তিটা তাকে ভালোবাসে না।।বার বার তাকে আঘাত করেছে। বার বার তার হৃদয়কে ছিন্ন- বিছিন্ন করে তুলেছে। অদ্ভুত এই মন। সবসময় ভুল মানুষের জন্য ওই শুধু কাঁদে।
ইয়ানা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে শিখা চৌধুরির ডাকে।

— ইয়ানা চলে আয়। দ্রুত যাব আর দ্রুত আসব।
ইয়ানা মুচকি হেসে এগিয়ে যায় শিখা চৌধুরির দিকে।সে শিখা চৌধুরির কাছে গেলে সুমু আর রুয়ানা নিচে নামে।।
শিখা চৌধুরি — মিরা কোথায়? ও যাবে না? ডাক দে কেউ।
সুমু ডাক দেওয়ার জন্য সিঁড়ির কাছে যেতে নিবে এমন সময় কোনো কিছুর শব্দে সে দাঁড়িয়ে যায়। অবাক হয়ে শিখা চৌধুরি , রুয়ানাদের দিকে তাকায়। তারা সবাই অরিদ আর মিরার রুমের দিকে দৃষ্টি দেয়।
রুয়ানা — আবার লেগেছে দুইটা।
সুমু- ঝগড়ার শব্দ ওই তো আসছে উপর থেকে। আমার কি যাওয়া ঠিক হবে?
ইয়ানা — কেনো ঠিক হবে না? চল আমিও যাচ্ছি তর সাথে।

ইয়ানা আর সুমু সিঁড়ি বেয়ে অরিদ আর মিরার রুমের কাছে যায়। দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায়। রুমের ভিতরকার অবস্থা দেখে ইয়ানা আর সুমুর চোখ কপালে উঠে আসার উপক্রম। কি অবস্থা রুমের! পুরো রুমে কাপড় ছড়িয়ে – ছিটিয়ে পড়ে আছে। ইয়ানা বিছানা আর মেঝে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অরিদ আর মিরার দিকে তাকায়। দুইটা কাবার্ডের দুই দিকে ধরে দাড়িয়ে আছে। মিরা ইয়ানা আর সুমুকে দেখে থতমত খেয়ে যায়। কিন্তু কাবার্ড ছাড়ে না।
ইয়ানা ভিতরে ডুকে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” এইসব কি মিরা? কি করেছিস পুরো রুমটাকে?
মিরার সহজ উত্তর — আমি কিছু করিনি। নিজের আদরের দেবরকে জিজ্ঞাসা কর আমার কাপড়গুলো কাবার্ড থেকে ফেলে দিয়েছে কেনো?
অরিদ রাগে ফুঁসে উঠে,,

” আমি তোমার কয়েকটা জামা ফেলেছি আর তুমি আমার পুরো কাবার্ডের কাপড় ফেলে দিয়েছো। আমার সব নতুন শার্ট, প্যান্ট একদম নষ্ট করে দিয়েছো বিয়াদব।
মিরা — বেশ করেছি নষ্ট করেছি। আমারগুলো প্রথমে ফেলে দিয়েছেন কেনো?
অরিদ — এইটা আমার কাবার্ড। এখানে আমি ব্যতীত অন্য কারোর কাপড় রাখা নিষিদ্ধ। তুমি আমার কাবার্ডে রেখেছো কেনো?
মিরা — তাহলে আপনার মাথায় রাখা উচিত ছিলো নিশ্চয়। আমার এত সুন্দর শখের শারীগুলো নষ্ট করে দিয়েছেন আপনি। আর আপনি ভেবেছেন আপনার জামা – কাপড় অক্ষত থাকবে। বিয়ে করেছেন, তিন কবুল বলেছেন। সো আপনার সব কিছুর উপর সমান ভাগিদারী আমি। এই কাবার্ডে যতটুকু আপনার অধিকার ঠিক ততটুকু আমার ও অধিকার।
অরিদের রাগান্বিত সুর,,,

” আমি তোমাকে সেই অধিকার দেই নি মিরা।
মিরা থেমে যায়। মনটা বিষিয়ে উঠে এক মুহূর্তের জন্য। কিন্তু পর মুহূর্তেই ঝাঁঝালো সুর,,
” আইন দিয়েছে, ইসলাম দিয়েছে সেখানে আপনি অরিদ চৌধুরি না দিলেও চলবে।।আপনার অধিকার দিয়ে আমি কি করব?
অরিদ — ঝগড়ুটে মেয়ে ! এমন কি পাপ করেছিলাম আল্লাহ যে এমন ঘারত্যারাকে আমার কপালে লিখে দিয়েছো।

মিরা — জীবনে আমি এমন কি পাপ করেছিলাম যে আপনার নামে কবুল বলতে হয়েছে। ভাগ্যে তো আমি জাওয়াদ ভাইয়াকে চেয়েছিলাম আপনি কেনো এসেছেন শুনি? মারতে চেয়েছিলেন রুমে তালাবদ্ধ করে। কিন্তু সফল হননি। পরে ছলে – বলে কৌশলে আমার গায়ে কলঙ্ক লাগিয়েছেন। জাওয়াদ ভাইকে চেয়েছিলাম আমি আপনাকে নয়। অসভ্য লোক!
অরিদ গম্ভীর হয়ে উঠে। দাঁত কটমট করছে তার যার শব্দ স্পষ্ট। হুট করে ফর্সা মুখটাতে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ে। হাত দিয়ে শক্তভাবে চেপে ধরে কাবার্ডের এক পাশের অংশ। বড় বড় নিশ্বাস টানে।
সুমু আর ইয়ানা হা করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। কি কাজের জন্য এসেছে সেটাই ভুলে গিয়েছে তাদের ঝগড়া দেখে।
সুমু ইয়ানার কানে হিসহিসিয়ে বলে,,
” বইন এরা কি আগের জন্মে সতীন ছিলো? এইভাবে সতীনের মত লেগেছে কেনো? আর এই জাওয়াদটা কে?
ইয়ানা — তর আগের জন্মের সতীন মনে হচ্ছে। কিন্তু আমার তো এখনওই সতীন মনে হচ্ছে । ইমাজিন কর কাবার্ড হচ্ছে জামাই, অরিদ আর মিরা হলো সতীন। এখন এক জামাইকে নিয়ে দুই সতীনের টানা – টানি। বাট জাওয়াদ কে সেটা তো আমার ও প্রশ্ন।
সুমু সামনের দিকে তাকিয়ে বলে,,

” ইয়ানারে অরিদ ভাইয়া রেগে বোম হয়ে আছে। একটা আগুন তো এখন নির্ঘাত লাগলে। তার আগে মিরাকে নিয়ে আয়।
ইয়ানা সম্মতি জানিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরিদের গম্ভীর আওয়াজ,,
” বউ মনি, সুমু আপু তোমরা যাও। মিরার সাথে আমার কিছু কাজ আছে।
মিরা চট করে তাকায় অরিদের দিকে। ছটফটিয়ে উঠে বলে,,
” আপনার সাথে কিসের কাজ? কোন কাজ নেই। আমি এখন বাহিরে যাব।
অরিদ কাবার্ড ছেড়ে দিয়ে ইয়ানা আর সুমুকে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে যাওয়ার জন্য। ইয়ানা অরিদের ইশারাকে সম্মতি জানিয়ে দরজার কাছে যাবে হুট করে মিরা উচ্চ আওয়াজে বলে,,
” আরে আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছিস মির জাফরের ভাইয়ের বউয়েরা। ওয়েট কর একটু আমি উড়নাটা পাল্টে আসছি।
অরিদ গম্ভীর কন্ঠে আওড়ায়,,

” তুমি ঠিক মির জাফর কাকে ইঙ্গিত করলে?
মিরা ছোট ছোট চোখে অরিদের দিকে তাকায়। এরপর ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,,,
” আপনাকে বলতে ইচ্ছুক নয়। যেহেতু আপনি আমার কেউ নন সেহেতু প্রশ্নের উত্তর চাওয়াটা বোকামি।
অরিদ দাঁতে দাঁত চেপে উঠে। মিরা উড়না পাল্টিয়ে ইয়ানার কাছে যাবে কিন্তু তার আগেই অরিদ মিরার হাত চেপে ধরে। মিরার পা থেমে যায়। অবাক হয়ে অরিদের চেপে ধরে জায়গায় দৃষ্টি রাখে। অরিদের দিকে তাকিয়ে ইশারা দিয়ে জিজ্ঞাসা করে,,
” আপনি আমাকে স্পর্শ করে আমার জামাইর হক নষ্ট করছেন কেনো? হাত ছাড়ুন আমার।
অরিদ মিরার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে ইয়ানাদের উদ্দেশ্যে বলে,,
” বউমনি তোমরা যাও। আম্মুকে বলবে আমি নিয়ে আসব কিছুক্ষন পর।
মিরা চোখ বড় বড় করে চেঁচিয়ে উঠে,,

” একদম না। আমি কোনো ছেলের সাথে যেতে ইচ্ছুক নয়।
অরিদের ইশারা পেয়ে ইয়ানা আর সুমু চলে যায়। অরিদ দরজা লাগিয়ে মিরার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে,,
” কার সাথে যেতে ইচ্ছুক? জাওয়াদ আর মান্নান ড্রাউভারের সাথে?
মিরা — হলে মন্দ হয় না।
অরিদকে দরজা লাগাতে দেখে মিরা ভড়কে যায়। সামান্য পিছিয়ে গিয়ে বলে,,
” দ. দরজা লাগিয়েছেন কেনো?
অরিদের বাঁকা হাসি,,
” রুমে আমার যতগুলো কাপড় ছড়িয়েছো সবগুলো পুনরায় যথাস্থানে রাখবে।
মিরা চেঁচিয়ে উঠে,,,

” অসম্ভব! এমন অনৈতিক কাজ আমি জীবনেও করব না।
অরিদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,,
” তুমি করবে তোমার চৌদ্দগোষ্টি করবে।
মিরা — সরি আমার চৌদ্দগোষ্টি কেউ ঢাকায় নেই। সবাই চট্টগ্রামে আছে। যদি এই মুহূর্তে নিয়ে আসতে পারেন তাহলে নিয়ে আসেন। তবুও এইসবে আমাকে টানবেন না।
অরিদ ধমক দিয়ে বলে,,
” এই মেয়ে ঠাট্টা করছো আমার সাথে? দ্রুত সব কাপড় গুছিয়ে কাবার্ডে রাখো। নাহলে আমার অন্য উপায় জানা আছে।
মিরা — করব না আমি। আমারগুলো তাহলে আপনি গুছিয়ে দিন।
অরিদ ঠোঁট চেপে কিছুক্ষন মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” করবে না?.
মিরার ত্যারা উত্তর,,
” জীবনে ও না। বাচ্চা – কাচ্চা হয়ে বুড়ি হয়ে যাব তবুও করব না।
অরিদ বাঁকা হেসে শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলে মিরার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
– তাহলে চলো তোমাকে একটা বাচ্চা দেওয়া যাক।
অরিদকে সামনে এগিয়ে আসতে দেখে মিরা পিছিয়ে যায় দুই পা। এমন নির্লজ্জ কথা শুনে দুই কান থেকে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। কাঁপা গলায় শুধায়,,
” এ. এইভাবে এগিয়ে আসছেন কেনো? বাচ্চা কে চেয়েছে আপনার কাছে? নির্লজ্জ!
অরিদ — বিয়ে হয়েছে অনেক দিন হলো বাট এখনও বাসরটা হলো না। লোকে শুনলে আমার উপর আঙ্গুল তুলবে। বেশি দিন বিবাহিতা দম্পত্তি আলাদা থাকে উচিত নয়।
অরিদ প্রায় মিরার কাছা – কাছি এসে গিয়েছে। মিরা পিছিয়ে যেতে যেতে হুট করে বিছানায় বসে পড়ে। অরিদের প্রতিটি কথায় সে অবাকের থেকে বেশি ধাক্কা খাচ্ছে। এই কিসব বলছে এই খ্যাপা বাঘ! গাঞ্জা খেয়ে এসেছে নাকি?
মিরা — দ. দেখুন..

অরিদ — এত তাড়া কিসের। ধীরে ধীরে সব কিছুই হবে।
মিরা — ওরে নির্লজ্জরে আরেকটা অতিরিক্ত বেহায়া কথা বললে বালিশ দিয়ে মাথা ফাটাব। দুরে সরেন আমার থেকে অসভ্য। আপনাকে আমি সেই অধিকার দেয় নি।
অরিদে মিরার দিকে ঝুঁকে পড়ে। শার্টের প্রতিটা বোতাম খোলা। লোমশ যুক্ত বুক উন্মুক্ত। মিরা সেদিকে তাকিয়ে দুটো ঢোক গিলে।
অরিদের চাপা হাস্যময় কন্ঠে,,
” ইসলাম, আইন আমাকে অধিকার দিয়েছে সেখানে তোমার মত মিরার অধিকার দিয়ে আমি কি করব।
মিরা চোখ উল্টে আসার উপক্রম। তার ডাইলগ কৌশলে তাকেই ফিরত দিচ্ছে। মিরা এক পাশে হেলে পড়ে। অরিদ মিরার সাথে ঘনিষ্ট হয় বাট দুরত্ব বজায় রেখে। তবুও মিরার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। পুরুষনালী শরীরের ঘ্রাণ মিরাকে স্তব্দ করে দিয়েছে। কেঁপে উঠে পুরো কায়া।
মিরা নিজেকে ঠিক করে রাগান্বিত সুরে বলে,,
” যাকে ভালোবাসেন না তার শরীরে স্পর্শ করতে লজ্জা করবে না।
অরিদ — একদম না।
মিরা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,,

” আল্লাহ সইবে না অরিদ চৌধুরি। দুরে যান আমার থেকে।
অরিদ মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,,
” কাপড় ভাঁজ করবে নাকি আমার আ্যকশন নিবে। ভেবে নিও পরে কিন্তু পস্তাবে।
মিরা ভয়ে অস্ফূর্তে ভাষায় বলে উঠে,,
” করব! সব কিছু করে দিব এই মুহূর্তে। যেমন ছিলো একদম সেইরকম করে রাখব।
অরিদ ঠোঁট চেপে হেসে উপর থেকে উঠে আসে। মিরা সোজা হয়ে বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস টানে। আর কিছুক্ষন থাকলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেত। অরিদের দিকে এক পলক তাকিয়ে কাপড় গুছানোর কাজে লেগে পড়ে। অরিদ ডিভানের উপর গিয়ে আয়েশ করে বসে। মিরা সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে কয়েকটা গালি দেয়। প্রায় ত্রিশ মিনিট লাগিয়ে সব কাপর গুছিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় বসে। মিরাকে বসতে দেখে অরিদ দাঁড়িয়ে বলে,,

” ভাবলে কিভাবে তোমার মত মেয়ের কাছে আমার ছাব্বিশ বছরের ভার্জিনিটি নষ্ট করব। হুহহ!
মিরা কটমট করে তাকায়। কত বড় অসভ্য হলে এখন আবার খুঁচা দিতে আসে। অরিদের দিকে একটা বালিশ ঢিল দিয়ে বলে,,
‘ ঠাডা পড়ুক আপনার ভার্জিনিটির উপর।
অরিদ বালিশটা ধরে বলে ,
” শকুনের দোয়ায় আমি মরি না।
মিরা রেগে তাকায়। চোখ দিয়ে ইচ্ছে করছে অরিদকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে।
অরিদ রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,,
” যদি কেউ ইয়ানাদের কাছে যেতে চায় তাহলে আসতে পারে। পরে আবার শিখা চৌধুরির কাছে গিয়ে ন্যাকামো করবে আমি আসতে দেয় নি।
মিরা নিরুপায় হয়ে অরিদের পিছু পিছু যায়।

ইয়ানা, শিখা চৌধুরি, আরু, সুমু এক সাথে ইয়াতিম খানায় প্রবেশ করে। ইয়ানা এই ইয়াতিম খানায় প্রায় আসা – যাওয়া করত। অনেক বাচ্চার সাথে ইয়ানার পরিচয়। আগে ভার্সিটি দ্রুত ছুটি হয়ে গেলে সোজা এইখানে চলে আসত। ইয়ানাকে দেখে অনেক বাচ্চা এগিয়ে আসে। ইয়ানা হাটু ভেঙ্গে বসে মুচকি হেসে বলে,,
” কেমন আছো বাচ্চারা?
একজন — অনেক দিন পর তোমাকে দেখেছি আপু। তুমি চলে যাওয়ার পর আরও নতুন অনেকে এসেছে। তাদের কাছে তোমার সম্পর্ক আমরা অনেক গল্প করেছি। তারা তোমাকে দেখার জন্য পাগল হয়ে আছে।
ইয়ানা হেসে বলে,,
” ওরে বাবা তাই নাকি?
— হুম।

একটা ছেলে সব বাচ্চাদের ডেকে একত্রিত করে। ইয়ানা সবার মাথা হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,
” আজ অল্প সময়ের জন্য এসেছি। তোমাদের সাথে সময় কাটাতে পারব না। অন্য কোনো একদিন আসব বাচ্চারা।
— কবে আসবে আপু?
ইয়ানার মনটা বিষিয়ে উঠে। আর কি কখনো আসা হবে এখানে? হয়ত না।
ইয়ানা উত্তর দেয় না কারোর। খাবারের প্যাকেটগুলো সবার হাতে হাতে দেয়। এরপর বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে ছোট ইয়াতিম খানা থেকে।
শিখা চৌধুরি মনে মনে আওড়ায়,,
” স্বামী হলো বাচ্চাদের ভক্ষক আর স্ত্রী হলো রক্ষক। সম্পর্কের মাপকাঠি অদ্ভুত!
ইয়ানা সবাইকে নিয়ে যায় পথ শিশুর কাছে। যেখানে অনেক পথ শিশুর জায়গা। এইখানেই শিখা চৌধুরি ইয়ানাকে প্রথম দেখেছিলো। ইয়ানা সবাইকে ডেকে একত্রিত করে। রাস্তার পাশে এক বৃদ্ধ ভিক্ষুক কে দেখে ইয়ানা হাসি মুখে সেদিকে এগিয়ে যায়।

— দাদু এখানে কি করছেন?
বৃদ্ধটি ইয়ানার দিকে তাকায়। কিন্তু সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে কেঁশে বলে,,
” ভিক্ষে করছিলাম হঠাৎ শরীরটা খারাপ লাগছিলো তাই বসে পড়ি।
ইয়ানা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,
” আমার হাত ধরে উঠুন। আর কোনো শক্ত স্থানে গিয়ে বসে বিশ্রাম নিন।
বৃদ্ধা নাঁখোজ করে বলে,,
” না ! না মা তোমার হাতে নোংরা লেগে যাবে।
ইয়ানা মুচকি হেসে বলে,,,
” মাটিতে তৈরি দেহে মাটি লাগলে কিছুই হবে না দাদু। সমস্যা নেই হাত ধরে উঠে বসুন।
বৃদ্ধাটা কাঁপা – কাঁপা হাতটা ইয়ানার হতের উপর রেখে ভর করে উঠে। ইয়ানা হাসি মুখে বৃদ্ধার হাতের দিকে তাকাতেই কপাল কুচকে ফেলে। অবাক হয়ে পুরো শরীরের দিকে তাকায়। উনি তো বৃদ্ধ। বয়স কমপক্ষে আশির উপরে হবে। ইয়ানা সন্দেহ নিয়ে বলে,

” দাদু আপনার হাত এত স্মোথ কেনো? বৃদ্ধা হওয়ার সাথে কুচকে যায় নি কেনো?
ইয়ানার কথা শেষ হওয়ার পর মুহূর্তে ভেসে আসে কারোর ভয়ংকর ঝাঁঝালো আওয়াজ।
— না! কিছু করবি না ওকে। ও কষ্ট পাবে। যা করার আমাকে কর!
ধাতব গর্জনের মতো এই আওয়াজ রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে। ইয়ানা চমকে উঠে। মুহূর্তেই চোখ ফেরায় পেছনের দিকে। সামনের দৃশ্য দেখে তার নিঃশ্বাস থেমে যায়।
অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে। চোখে ঘুমের রেশ কিন্তু মুখাবয়বে তীব্র ক্রোধের রেখা। অগোছালো চুলে একরাশ অস্থিরতা বহন করছে। গায়ে কালো গেঞ্জি যা তার দৃঢ় ভঙ্গিমা ও জেগে ওঠা শিরা-উপশিরার উত্তেজনা ছাপিয়ে তীব্র বিভীষিকার সৃষ্টি করছে। সদ্য ঘুম থেকে উঠে এসেও তার চোখদুটো এখনও অনলবর্ষী প্রজ্জ্বলিত রক্তপিপাসু কোনো জন্তুর মতো।
শিখা চৌধুরী এবং আশপাশের অন্যরা বিস্ময়ের ভারে থমকে যায়। সুমু কাঁপা গলায় চিৎকার করে ওঠে,
‘ ইয়ানা তর পিছনে গান!

ইয়ানা রেশ কাটিয়ে পেছনে ফিরতে যাবে কিন্তু হঠাৎই কপালের কাছ ঘেঁষে ঠাণ্ডা ধাতব এক অনুভূতি তাকে স্তব্ধ করে দেয়। শরীর অবশ হয়ে আসে। মাথায় বন্দুক ঠেকানো। কোনো অজানা আততায়ীর ছায়ায় ঘনিয়ে ওঠে মৃত্যু।
হতবিহ্বল চোখে ইয়ানা পাশ ফিরে তাকায়। অস্ফুট স্বরে ফিসফিস করে ওঠে,
” দাদু! তার মানে ছদ্দবেশ নিয়ে এসেছিলো।
অগ্নি ততক্ষণে কিছু কদম এগিয়ে এসেছে। বুক ফুলিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নেয়। হৃদয়ের জ্বালা নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। তার গলা গর্জে ওঠে বজ্রাহত মহীরূহের মতে,
” খবরদার! তর শরীরের সামান্য স্পর্শ যাতে ওর শরীরে না লাগে। মেরে জ্যাঁন্ত কবর দিয়ে দিব। শপথ করে বলছি রক্ত দিয়ে জমিন রাঙ্গিয়ে দিব।

লোকটা — আগে তো নিজের স্ত্রীকে বাঁচিয়ে দেখা। আমার বসকে তুই খুন করেছিস। এই শালীর জন্য আমার বসকে প্রান হারাতে হয়েছে। এই হলো সব নষ্টের মুল। কে জানে এই মা* কি দেখিয়ে তকে বশ করেছে। এইটাকে মারলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এই অবমাননাকর আর বিকৃত বাক্যগুলো শুনে অগ্নির ভেতরের রক্ত যেন ফুটে উঠলো। চোখ লালাভ আর শিরা ফেটে পড়ছে। তার গর্জন ভূ-কম্পনের মতো চারদিকে প্রতিধ্বনিত হয়,
” খবরদার ব্লাডি বিচ আমার পবিত্র ফুলকে বাজে ইঙ্গিত দিবি না। কুত্তার বাচ্চা কলিজা নিয়ে আসব।
অগ্নি এগিয়ে যাবে তার আগেই ফাট করে আওয়াজে একটা বুলেট তার বাহুর ভিতরে ভেদ করে যায়। বুলেট ছিন্ন করে যায় মাংশ পেশি। রক্ত ছিটকে পড়ে নির্জন রাস্তায়। বাচ্চারা ভয়ে কাঁপতে থাকে। অগ্নি হাত চেপে ধরে সেখানে দাড়িয়ে যায়। ইয়ানা চেঁচিয়ে উঠে। সবাই কেমন স্তব্দ হয়ে যায়। অগ্নি ক্ষতস্তানে হাত চেপে ধরে। চোখে অনল দাউ দাউ করে জ্বলছে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৩

আততায়ী আবার বন্দুক তুলে তাক করে অগ্নির দিকে।।এইবার সে হাসে এমনভাবে যা এক বিকৃত হাসির রুপ নেয়।
অগ্নি তখনও দাঁড়িয়ে কিন্তু মাথা নিচু নয় গর্জন অবধারিত।
ইয়ানা কান্না মিশ্রিত ভাঙ্গা আওয়াজে বলে,,
” না প্লিজ! বন্ধুক নামিয়ে রাখুন।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫৫