অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬
লিজা মনি

রাতে ড্রয়িং রুমে বসে সবাই বসে চা খাচ্ছিলো। ইয়ানা শিখা চৌধুরির পাশে ভদ্র মেয়ের মত বসে থাকে।
অগ্নি ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করে সিঙ্গেল সোফায় বসে। মুখে রয়েছে একরাশ গম্ভীরতা। সবাই অগ্নির উপস্থিতি টের পেয়ে তার দিকে তাকায়।
সাজিদ চৌধুরি — কিছু বলবে?
আহান — কেনো ভিবানে বসতে হলে কি কিছু বলার জন্য বসতে হবে?
সাজিদ — তোমাকে আমি সেটা মিন করে বলিনি আহান। তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে তাই বলেছি।
অগ্নি — আহান নামটা আমার বিরক্ত লাগে আব্বু যাই হোক তোমদের ইচ্ছে। আমি একটা কথা বলার জন্য বসেছি। অবশ্য এইটা বলা তেমন একটা ফ্যাক্ট না তবে আজ পরিস্থিতি অন্যরকম তাই বলতে হচ্ছে।
এরপর অগ্নি ভিবান থেকে উঠে প্যান্টের পকেটে দুই হাত গুজে দাঁড়িয়ে বলে,,,,,,,

” আমি কাল পরশুর মধ্যে কানাডায় ফিরছি করছি।”
ড্রয়িং রুমের সবাই অবাক হয়ে তাকায়। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ইয়ানা।
সাজিদ চৌধুরি — মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোমার আহান? দুই মাস পর নির্বাচন। নির্বাচনের সকল কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমার পরিবর্তে জনগন তোমায় চাচ্ছে আর তুমি এই মুহূর্তে এসে বলছো কানাডায় চলে যাচ্ছ। সব কিছু নিয়ে হেয়ালি শোভা পায় না আহান।
আহান — প্রথমত আমি কখনো বলে নি নির্বাচনে দাড়াব। এত ভালো আমি নয় আব্বু। আমাকে না জানিয়ে মতামত না নিয়ে সব কাজ করে যাচ্ছ আমার অনুমতি ও নাও নি। আর এখন এসে বলছো আমি হেয়ালি করছি। তোমার জন্য আমি দুইবার নির্বাচন অফিসে গিয়েছিলাম তার মানে এই নয় না যে আমি নির্বাচন লড়ার জন্য গিয়েছি।
সাজিদ চৌধুরি আহানের কথায় চুপসে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আহান — লিসেন আব্বু আমি জানি কেনো আমাকে নির্বাচনে দাড়া করাতে চাচ্ছো। যাতে আমি আর কখনো কানাডায় যেতে না পারি। কিন্তু আব্বু আমি তোমার ছেলে চতুরতা রক্তে মিশে আছে।
শিখা চৌধুরি বাবা – ছেলের কথা শুনে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানা এই মুহূর্তে তাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। বাবা ছেলের সম্পর্কের মধ্যে এমন ধমকাধমকি থাকে? শিখা চৌধুরি ইয়ানার থেকে চোখে সরিয়ে নিয়ে কেঁশে বলে উঠে,,,,,
” চুপ করবে তোমরা দুইজন। কি শুরু করেছো? কোথাকার কথা কোথায় গড়িয়ে যাচ্ছে সে খেয়াল আছে। আর সাজিদ তোমাকে বলি,, আমি আগে ও বলেছিলাম আহানকে যতই কিছু বলি বা করি না কেনো ও জীবনে ও রাজী হবে না। এখন ও সময় আছে সব কিছু ঠিকঠাক করে নাও। নির্বাচন তুমি ওই লড়তে থাকো এইসব পলিটিক্সে তাদের জোড় করার প্রয়োজন নেই।

শিখা চৌধুরি খুব ভালো করে জানে আহান একবার না করেছে মানে সেটা না ওই থাকবে।
আহান — তাহলে এই কথায় থাক। কাল পরশুর ভিতরে চলে যাব।
শিখা চৌধুরি — চলে যাবে বললেই হলো। ভুলে যাইয়ো না অগ্নি তোমার বিয়ে হয়েছে। আর তোমার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী আছে। বিয়ের দুই দিন না পেরোতেই তুমি চলে যাচ্ছ এর কি মানে অগ্নি? তোমার চলে যাওয়া মানে বছরের কম নয়। এমন ও হয় তিন বছর চার বছর চলে যায় তুমি ফিরে আসো না। নিজের বউ রেখে কোথায় যাবে তুমি?
অগ্নি তার মায়ের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। এরপর বাকা হাসি দিয়ে বলে,,,,

” সিরিয়াসলি আম্মু তোমার মনে হয় আমি এই বিয়েটাকে মানি? তুমি চেয়েছিলে বিয়ে করতে বিয়ে করেছি। বিয়ের সময় তো বলো নি যেখানে যাব সেখানে নিয়ে যেতে হবে। এমন চুক্তি হয়েছিলো কি তোমাদের সাথে?
শিখা চৌধুরির ভিতর খচখচ শুরু করে। সত্যি চলে যাবে নাতো ইয়ানাকে একা রেখে। তাহলে আমি কি মেয়েটার জীবন না চাইতেও নষ্ট করে দিলাম। অগ্নি চলে গেলে আমি সারাজীবন মেয়েটার চোখে অপরাধী হয়ে থাকব।
শিখা চৌধুরি — তিন কবুল বলে ইসলামিক বিধি -বিধান মেনে বিয়ে করেছো তুমি। আর তিনটা কবুলে এমন এক শক্তি যা স্বামী- স্ত্রীর বন্ধনকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এক সাথে রাখে। তোমার জিনিসে তোমার যেমন অধিকার ইয়ানার ও ততটুকু অধিকার। তুমি যদি পাতালে থাকো সেখানে ও ইয়ানার যাওয়ার অধিকার আছে। নিজের স্ত্রীকে সম্মান করো।
অগ্নি বিরক্তি নিয়ে বলে,,,

” ধর্মীয় ঙ্গান একটু হলেও আছে আমার তাই এইসব ঙ্গান দেওয়ার প্রয়োজন নেই। স্বামী -স্ত্রীর সম্পর্ক এইসব নেকামো শুনলে বিরক্তি লাগে। যেখানে বিয়ে মানি না সেখানে বউ আসছে কই থেকে।
অগ্নি এক প্রকার রাগ আর জেদ দিয়ে ড্রয়িংরুম ত্যাগ করে নিজের রুমে চলে যায়।
অগ্নির যাওয়ার দিকে শিখা চৌধুরি তাকিয়ে একটা হতাশার শ্বাস ফেলে। পাশে ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখে ইয়ানা নেই। বুঝতে পারে ইয়ানা রুমে চলে গেছে।
শিখা চৌধুরি সাজিদ চৌধুরির দিকে তাকিয়ে বলে,,,

” আমি বিয়ে দিয়ে কি ভুল করে ফেললাম সাজিদ? আহান যদি মেয়েটাকে মেনে না নেয়। মেয়েটা খুব নরম মনের সাজিদ। এমন হলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারব না। ”
সাজিদ চৌধুরি নিজের স্ত্রীকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলে,,,
” কান্না করো না শিখা সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবে এমন একটা সময় আসবে আহানের পুরো অস্তিত্ব জুড়ে ইয়ানা থাকবে। মিলিয়ে নিও আমার কথা।
শিখা চৌধুরি — তাই যেনো হয়।

ইয়ানা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকে । কেনো জানি কান্না ও আসছে না কিন্তু ভিতরটা হাহাকার করছে। নিয়তির কোন নিয়মের কাছে দাঁড়িয়ে আছে সে। নিয়তি তার নিষ্ঠুর রুপ বুঝি এইভাবে অসময়ে ধরা দেয়।
কিছু সময় পর নিজেকে শান্ত করে রুমে গিয়ে বিছানায় অর্ধ হয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে। ওয়াশরুমে দরজা খোলার শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকায়। তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়। ইয়ানা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নেয়। সদ্য গোসল করা ভেজা শরীরে কালো টিঁ- শার্ট আর সাদা ট্রাউজার পরা। চুল থেকে এখন ও টপটপ পানি পরছে।
অগ্নি তীর্যক দৃষ্টিতে ইয়ানার দিকে তাকায় এরপর ঘম্ভীর কন্ঠে বলে,,,,

” আমার রুমে কি করছো তুমি?
ইয়ানা নিশ্চুপ। ইয়ানার রেসপন্স না পেয়ে অগ্নি রাগে ধমক দিয়ে বলে,,,,
” এই মেয়ে কথা বলতে পারো না? এইভাবে রোবটের মত বসে আছো কেনো তাও আবার আমার বিছানায়। লিসেন মেয়ে আমি এখন ঘুমাব সো এখন বিছানা থেকে নামো।
ইয়ানা এইবার বিছানা থেকে নেমে অগ্নির সামনে দাঁড়ায়। চোখে তেজ রেখে বলে,,,,
” আপনি আপনার মায়ের কথা হয়ত শুনতে পান নি স্যার। উনি বলেছেন আপনার যতটুকু অধিকার আমার ও ঠিক ততটুকু শুধু অধিকার আপনার সম্পদে। কবুল বলে বিয়ে যেহেতু করেছেন আমি তো আমার অধিকার ছেড়ে দিব না স্যার। ”

ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি কটমট চোখে তাকায়। এরপর দাতে দাত চেপে বলে,,,,
” ধারনা আছে তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো? এই মুহূর্তে কি করতে পারি আমি? এইটুকু একটা মেয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস কোথা থেকে পাও। ”
ইয়ানা অগ্নির রাগটাকে গায়ে না মাখিয়ে খাপছাড়া ভঙ্গিতে বলে,,,,,,
” বর্তমানে আপনি আমার কাছে রাগী গম্ভীর বাজে লোক ছাড়া কিছুই না। আপনি আমার শিক্ষক এইটা শুধু মনে আছে। যদি নিজের এত সমস্যা হয় তাহলে আপনি সোফায় ঘুমাতে পারেন।
অগ্নি ইয়ানার চোখের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। নিখুত ভাবে পর্যবেক্ষন করতে থাকে আর এইদিকে ইয়ানা এইটা সেইটা বলছে। অগ্নি ইয়ানাকে সাইড কাটিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
ইয়ানা চোখ বড় বড় করে তাকায়। ও তো ভেবেছিলো অগ্নি চৌধুরির মত এমন একজন ব্যক্তি ওর সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না। কিন্তু কি হলো এইটা?
ইয়ানা রেগে গিয়ে বলে,,,,

” আমি এখন ঘুমাব কোথায়?
অগ্নি বালিশে মুখে গুজে রেখেই বলে,,,,
” একটু আগে বক বক করছিলে না সব কিছুর উপর তোমার অধিকার আছে। এখন তুমি যদি বিছানায় না ঘুমাও তাহলে আমি কি করব নিজে ও জানি না। আর হ্যা সিরিয়ালের ন্যাকা নায়কাদের মত যদি মেঝেতে ঘুমানোর চেষ্টা করো তাহলে আই সয়ার ইয়ানা বাসরটা ও করে ফেলব। আফটার অল আমার প্রথম বাসর তুমি চিৎকার করে কুল পাবে না।অগ্নি চৌধুরির অর্ধাঙ্গিনী হওয়া এত সহজ না ।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা হতভম্ভ হয়ে যায়। এইসব কি বলেছে এই লোক মাতাল হয়ে পড়েছে নাকি। নাহলে অগ্নি চৌধুরি এইসব বলছে কল্পনা তো? ইয়ানার মনে কেনো জানি একটু ভয় কাজ করে। এই লোকের যেই রাগ যদি সত্যি সত্তি তার সাথে এমন কিছু করে। না বাবা রিস্ক নেওয়ার দরকার নেই।

ফজরের নামাজ পরে ইয়ানা বেলকনিতে চলে যায়। এই বেলকনিটা ইয়ানার খুব পছন্দ হয়েছে। সামনে থেকে সুইমিংপুল আর বাগান সব দেখা যায়। কিছুক্ষন হাটাহাটি করে ওয়াশরুমে ডুকে পরে গোসল করার জন্য। সকালে গোসল করা ওর নিত্যদিনের অভ্যাস। পুরো রাত ঘুমাতে পারে নি অজানা এক অস্বস্তিতে। চোখ বন্ধ করলেই মনে হয়েছে কেউ তাকে গভীর ভাবে পর্যক্ষন করছে। তার দিকে কেউ গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।কিন্তু দৃষ্টি মেললে কাউকে দেখতে পাই নি। এই অস্বস্তির কারনে সারারাত ঘুমাতে পারে নি ভালো করে।
ইয়ানা গোসল করে এক পাশে পর্দা সরিয়ে জানালার কাউচ সরিয়ে ওইদিকে তাকায়। এই জানালার দিকে তাকালে খোলা এক মাঠ দেখা যায়।হঠাৎ ইয়ানার চোখ যায় দুটি কুকুর বসে আছে আর তার পাশে বসে আছে কয়েকটি কুকুর ছানা। বাবা কুকুরটা বার বার বাচ্চাগুলাকে আগলে নিচ্ছে। প্রানী হয়ে ও এমন মহব্বত যা দেখে ইয়ানার ঠেঁটে হাসি ফুটে উঠে।

কিন্তু তার হাসিটাকে যে কেউ তৃপ্তি ভড়া দৃষ্টিতে দেখছে সেটা কি সে জানে?
ওহুম জানলে নিজের হাসি বন্ধ করে দিত।
সদ্য গোসল করা এক রমনী কমড় পর্যন্ত ভেজা চুল এক পাশ করে রেখেছে ফলে খোলা পিঠ উন্মুক্ত। তার রুপে ঘায়েল হচ্ছে এক ব্যক্তিত্যসম্পন্ন যুবক। যে নিজের চোখ সরাতে পারছে না। অস্ফূর্ত সুরে বলে আমার অনুভবের সেহজাদী! আমার রাজত্যের রানী আপনি। অগ্নি চৌধুরির রাজত্যে আপনাকে স্বাগতম আমার সেহজাদী। আপনার এই তেজী রুপে বিধ্বংস হয়ে যাচ্ছি। অনুভব করতে পারছি আপনি ছাড়া আমি অসম্পূর্ন। আপনি হীনা আমিময় জীবন শুধু শূন্যতা সেখানে পূর্নতা অসম্ভব। আপনাকে আমার চাই। আমার সব চরিত্র গ্রহন করে আমার সাথে আপনাকে বাঁচতে হবে। আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আপনাকে আমার থেকে আল্লাহ ছাড়া কেউ আলাদা করতে পারবে না সেটা অগ্নি চৌধুরি কথা দিলো।

ইয়ানার হঠাৎ চোখ যায় অগ্নির দিকে। যে এই মুহূর্তে তার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। ইয়ানা নিজের শরীরে ভালোভাবে উড়না পেচিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,,,
” নির্লজ্জ। ” এই বলে এইখান থেকে চলে যায়।
নির্লজ্জ শব্দটা শুনে অগ্নি ঠোঁট চেপে হাসে। এই নির্লজ্জ ট্যাগ যেহেতু একবার পেয়েছে তাহলে সেটা কাজে লাগাতে হবে।
অগ্নি ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে। আজ সে জিমে যাবে না। রাগ হচ্ছে কিন্তু এরপর ও কেনো যানি প্রশান্তি লাগছে। ইয়ানাকে দেখার জন্য মরিয়ে হয়ে উঠে। কোনো কিছু না ভেবে সিড়ির কাছে গিয়ে ইয়ানার নাম ধরে ডাক দেয়।
অগ্নির গলা পেয়ে বাড়ির স্টাফ থেকে নিয়ে সবাই অবাক হয়ে তাকায়। অগ্নি এই বিয়েটা মানে না সবাই জানে তাহলে এইভাবে অধিকার খাটিয়ে ডাকছে কেনো?
সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে সাজিদ চৌধুর আর শিখা চৌধুরি। কাল রাতেই তো ছেলে এত কথা বলে গেলো আর আজ সকাল হতেই সব ঠিক।
দুইটা ডাক দেওয়ার পর ও যখন ইয়ানার কোনো রেসপন্স পাই নি তখন অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,,
“” এই মেয়ে তোমাকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছ না?
ইয়ানা এতক্ষন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। এই ডাকের মধ্যে এত অধিকার প্রকাশ পাচ্ছে কেনো?

শিখা চৌধুরি — ইয়ানা যা তুই দেখ কি প্রয়োজন পড়েছে।
ইয়ানা — আম্মু আমি?
শিখা — বউ কি অন্য কেউ? না তো। বউ তুই তাহলে তুই যাবি। যা এখন পরে রেগে গেলে সামলাতে পারব না।
ইয়ানা বিরক্তি আর সংকোচ নিয়ে উপরে চলে যায়। ইয়ানা রুমে ডুকতেই কেউ তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
হঠাৎ আক্রমনে হতভম্ভ হয়ে যায়। যখন বুঝতে পারে তখন সামনে তাকিয়ে দেখে অগ্নি লাল চোখ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এই চোখ দিয়ে গিলে খাবে। অগ্নির হাতের স্পর্শ নিজের হাতে পেতেই হাত মুচড়ামুচড়ি শুরু করে। হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,,,
” আমার হাত ছাড়ুন স্যার। আমার হাত স্পর্শ করেন কোন সাহসে?
অগ্নি ইয়ানার হাত আরেকটু জোড়েচেপে ধরে বলে,,,,

” আমার ডাক কানে যায় না বিয়াদপ। নাকি আমাকে এড়িয়ে চলার মত দুঃস্বাহস দেখাও। আর তোমার হাত স্পর্শের কথা? এই হাত না শুধু সময় আসলে অনেক কিছুই করব ।
এরপর আলতো করে হাতটা ছেড়ে দেয়। ইয়ানা হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাত লাল হয়ে গেছে।
অগ্নি — খাম্বার মত দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নাও। কাপড় নেওয়ার প্রয়োজোন নেই। শুধু মেয়েলি যে গুলো তোমার অধিক প্রয়োজন সেসব নাও।
ইয়ানা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ও নিজের জিনিস গুছিয়ে কি করবে। কাল তো ওর আব্বু আম্মু আসবে নেওয়ার জন্য। এখন এইসব গুছিয়ে কি লাভ।
ইয়ানাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অগ্নি পুনরায় বললো,,,,

” কি হলো যাও ”
ইয়ানা — কিন্তু কেনো?
অগ্নি — উত্তরটা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না তবুও দিচ্ছি। আজ সন্ধ্যায় কানাডা যাচ্ছি সাথে তুমি ও যাচ্ছ।
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানার চোখে পানি চলে আসে। ওর পড়াশুনা, বাবা – মা বন্ধুদের ছাড়া থাকবে কিভাবে?
ইয়ানা — কাল তো বললেন আমাকে নিয়ে যাবেন না তাহলে?
অগ্নি — কাল বলেছি নিব না আজ বলছি নিব। কেনো তোমার কোনো আপত্তি আছে?
ইয়ানা — আপনার সাথে নিয়ে কি করবেন? আপনি তো বিয়ে মানেন না।
অগ্নি হালকা রাগ দেখিয়ে বলে,,,,,
” তোমার সাথে বাসর করব বলে নিয়ে যাচ্ছি না যে বিয়ে মানতে হবে। বিয়ে মানি না বউ তো মানি।
ইয়ানা অবাক হয়ে বলে,,,,
“” মানেহ! বিয়ে মানেন না বউ মানেন। কি বলছেন মাথা ঠিক আছে?
ইয়ানার এত প্রশ্নে সে বিরক্ত হচ্ছে। কিছুটা ধমক দিয়ে বলে,,,,,,,
” সেট আপ! এত প্রশ্ন করছো কেনো? যা বলেছি তাই করো।
এরপর অগ্নি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইয়ানা অধৈর্য হয়ে বিছানায় বসে পড়ে। সে এখন কি করবে?

অগ্নি চলে যাওয়ার পর শিখা চৌধুরি ইয়ানাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায় অগ্নির নির্দেশে। সন্ধ্যায় চলে যাবে ফলে বাবা মায়ের সাথে দেখা করে যাওয়া ভালো। এক কান্নার পর্ব শেষে ইয়ানা পুনরায় চৌধুরি ভিলায় ফিরে আসে। কি করে থাকবে সে সবাইকে ছাড়া। তাদের হল্লা পর্টির কেউ জানে না ইয়ানার বিয়ে হয়েছে। ইয়ানা বাড়িতে গিয়ে নিজের ফোন সাথে করে নিয়ে এসেছিলো। দুই দিন চার্জ না দেওয়ার কারনে ব্যাটারি অফ হয়ে আছে। তাড়াতাড়ি করে মোবাইল চার্যে বসায়। যে করেই হোক হল্লা পর্টির সাথে কথা বলতে হবে। এখন বিকাল হয়ে গেছে একটু পরে অগ্নি চলে আসবে।

প্রায় দশ মিনিট পর মোবাইল চার্যে রেখেই ওপেন করে। মেসেজ আর নটিফিকেশিনের কারনে স্ক্রল করা যাচ্ছে না। হল্লা পার্টির এত এত মেসেজ ফোন দেখে ইয়ানা হতাশ। দুই দিন শুধু কথা হয় নি এর মধ্যে এত ফোন। ইয়ানা ওদের ছাড়া থাকবে কিভাবে?

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৫

ইয়ানা এক এক করে সবার সাথে কথা বলে। আশ্চর্যের বিষয় হলো বিয়ে নিয়ে তারা সবাই জানে। তারা অনেক হ্যাপি বাট এইভাবে বিয়ে নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট। সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছে অগ্নি চৌধুরির সাথে বিয়ে হয়েছে। তাদের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। যাই হোক বিয়েটা তো হয়েছে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৭