অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬১

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬১
লিজা মনি

সময় এক অদৃশ্য অথচ অনিবার্য গতি যা কেবল অগ্রসর হয়। প্রতিক্ষণেই অতীতকে গ্রাস করে ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান। এই অতন্দ্র প্রহরী কখনো অপেক্ষা করে না কারো জন্য।বরং নির্দয়ভাবে এগিয়ে যায় নিজের শাসিত গতিপথে। মানুষ চাইলেও সময়কে নিবদ্ধ করতে পারে না কারণ সময়ের গমন অমোঘ ও অনিবার্য। অতীতের স্মৃতি, বর্তমানের অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা—এই তিনে সময়ের ত্রিমাত্রিক রূপ পরিলক্ষিত হয়। সময় যেমন উন্নয়নের ধারক।তেমনি ধ্বংসের বাহক ও বটে।

সময় নিজের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সময় তার নিজস্ব ছন্দে নিঃশব্দ পদচারণায় এগিয়ে চলেছে
নির্বিকার, অপ্রতিরোধ্য। বহুদিন অদৃশ্য হয়ে গেছে সময়ের অতল গর্ভে। মিরা ও অরিদ ইতিমধ্যেই কানাডা প্রবাসী। তারা দুই একদিন আগে এখানে এসে উপস্থিত হয়। আর সজিব বিকেলেই সুমু ও রায়ানকে সঙ্গে নিয়ে বাসভবনে উপস্থিত হওয়ার কথা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইয়ানা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলো। একদম ভোরে অগ্নি বেরিয়ে গিয়েছে। ইদানিং ইয়ানা নিজেকে খুব দুর্বল অনুভব করতে থাকে। অকারনে মাথা ঘুরায়। মাঝে মাঝে বমি পায়। এমনকি সবচেয়ে প্রিয় খাদ্যদ্রব্য কিংবা গন্ধও এখন যেন প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়।

অসুস্থতা গোপন করার এক অদ্ভুত প্রচেষ্টায় প্রতিবার অগ্নির প্রত্যাবর্তনে সে মুখে একটুকু হাসি ঝুলিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক দেখাতে সচেষ্ট হয়। অগ্নি চোখে-মুখে উদ্বেগ সঞ্চারিত করে। একাধিকবার জানার চেষ্টা করেছে তার শারীরিক অবস্থান। তবুও প্রতিবারই ইয়ানা অস্বীকারসূচকভাবে মাথা নাড়িয়েছে। কিন্তু আজকের ক্লান্তি যেন অনির্বচনীয় সীমাহীন ও সহনশীলতার সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। ইয়ানা চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস টানে কয়েকবার। এরপর বেড রুমে গিয়ে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে পুনরায় বেলকনিতে গিয়ে উকি দেয়। গেইডের সামনে গার্ড দেখতে পেয়ে বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেলে।

পরমুহূর্তে কিছু একটা ভেবে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে। এরপর গার্ডেন এড়িয়াতে গিয়ে চারপাশে চোখ বুলায়। গার্ডদের দিকে এক পলক তাকিয়ে চুপিচপুপি পিছনের দরজা বেরিয়ে যায়। পিছনের গার্ডরা সবাই খাবার খাওয়ার জন্য তাদের ভবনে যায়। ইয়ানা রাস্তায় গিয়ে জোরে একটা নিশ্বাস ছাড়ে। ব্যাগ থেকে একটা মাক্স আর চোখে সানগ্লাস পড়ে নেয়। নিজেকে পরিপাটি করে একদম পিছনের সবগুলো সিসি ক্যামেরার দিকে এক পলক তাকায়। এরপর দ্রুত পায়ে একদম মেইন রোডের কাছে চলে যায়। সেখানে গিয়ে একটা রিক্সায় উঠে নিজের গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হয়।

ইউভি জিম থেকে এসে সোজা ওয়াশরুমে ডুকে যায়। কিছুক্ষন শাওয়ার নেওয়ার পর দরজা খুলে বের হয়। গায়ে শুধু একটা প্যান্ট পড়া। উন্মুক্ত শরীর থেকে বিন্দু বিন্দু পানির কণা গড়িয়ে পড়ছে। ফর্সা জিম করা বডিতে পানির বিন্দুগুলো যেন চিকচিক করছে। বুকের মাঝখানে একটা ইতালিয়ান ভাষার ট্যাটু স্টাইলের অক্ষর লেখা । ইউভি টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে সামনে এগিয়ে যাবে এমন সময় অবাধ্য চোখ জোরা চলে যায় বিছানায় শয়নরত রমনীর দিকে। রুয়ানা পুরো বিছানায় হাত – পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। টি- শার্ট উপরে উঠে পেট উন্মুক্ত হয়ে আছে। একটা প্লাজু হাটু অব্দি এসে গিয়েছে। ইউভি দ্রুত নিজের চোখ সরিয়ে নেয়।

কিন্তু অবাধ্য চোখ দুটি শুধু সেদিকেই চলে যাচ্ছে। ইউভি বড় বড় শ্বাস নিয়ে ডিভানে বসে পড়ে। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। চুলগুলোতে কিছুক্ষন খামচে ধরে রেখে পুনরায় ডিভান থেকে উঠে বসে। এরপর বিছানার কাছে গিয়ে হালকাভাবে রুয়ানার টি-শার্ট ঠিক করে দেয়। রুয়ানা সামান্য নড়ে – চড়ে উঠে। ইউভি রুয়ানার মায়াবী বাচ্চা মুখটার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে। ভাবা যায় এই পিচ্চিটা আজ তার বউ! সেই মেয়েটা এখন তার বউ! তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। এই মেয়েটাকে সে অসম্ভব রকমের ভালোবাসে। ইউভি ধীরে ধীরে রুয়ানার উপর ঝুঁকে পড়ে। ভালোভাবে পরখ করছে তার বউটাকে। রুয়ানার চোখের পাতা হালকা নড়ে উঠে। ইউভি অস্ফুর্ত আওয়াজে বলে,

” লিটল গার্ল।
ইউভির অস্ফুর্ত আওয়াজ রুয়ানার কানে গিয়ে ধ্বাক্কা খায়। অনেক যুদ্ধ করে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। চোখ খুলে ইউভিকে এত কাছে দেখতে পেয়ে ঘাবরে যায়। অকারনেই তার চোখ চলে যায় ইউভির উন্মুক জিম করা বুকের উপর। রুয়ানা সাথে সাথে উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে উঠে,
‘ আম্মুঅঅঅ!
রুয়ানা এইভাবে হঠাৎ চিৎকার দেওয়াতে ইউভি হতভম্ভ হয়ে যায়। ছোট ছোট চোখ দিয়ে রুয়ানার দিকে তাকায়। রুয়ানা ভয়ে নিজের সাথে বালিশ চেপে ধরে। রুয়ানাকে এমন অস্বাভাবিক দেখে ইউভি হাসি দিয়ে বলে,

” রিলাক্স রুই। এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। আমি ছিলাম আর কেউ নয়।
রুয়ানা কথাটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ইউভির উন্মুক্ত শরীরের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘ আপনি এত বড় কেন? উন্মুক্ত শরীরে আপনাকে কেমন দানব লাগছে।
রুয়ানার কথায় ইউভি কি রিয়্যাকশন দিবে বুঝতে পারে না। রুয়ানার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়ত লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিত। কিন্তু তার বউ তার বডি দেখে একদম দানবের সাথে তুলনা দিয়ে ফেলেছে। ইউভি রুয়ানার ফোলা ফোলা বাচ্চা মুখটার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে বলে,
” বেশিই বড় আমি?

— হ্যা প্রচুর । একদম দানবদের বডির মত ভয়ংকর।
— সময় হলে এই দানব শরীরটা তোমাকেই সামলাতে হবে লিটল গার্ল।
রুয়ানা বোকা বোকা চোখে তাকায় ইউভির দিকে। যার অর্থ সে কথাটা বুঝতে পারে নি।
— এত বড় শরীর আমি সামলাতে যাব কেনো? নিজেরটা নিজে সামলে নিন।
রুয়ানার অবুজ উত্তরে ইউভি ঠোঁট চেপে হেসে বলে,
” ওকে সামলাতে হবে না তোমাকে। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
রুয়ানা ঘুম ঘুম চোখে বলে,
” না আরেকটু পর উঠি। ঘুম এখনও যায় নি।
— খাওয়া – দাওয়া করে সারাদিন ঘুমিয়ে থেকো কিছু বলব ন। এখন উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যাবে। কুইক!

— এমন কেনো করছেন ভাইয়া। একটু পর এমনিতেও যাব।
রুয়ানার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে ইউভি থতমত খেয়ে যায়। যার সাথে সংসার বাঁধার সপ্ন দেখছে, যাকে তার বাচ্চা মা বানাবে সেই মেয়েটা তাকে ভাইয়া সম্মোধন করছে? লাইক সিরিয়াসলি! ইউভি সামান্য নিশ্বাস টেনে বলে,
” বিয়ে হয়েছে আমাদের রুই। ভাইয়া ডাকটা পরিহার করো দ্রুত। ডাকটা আমার জন্য প্রচুর বিশ্রি লাগে।
রুয়ানা হ্যা সম্মতিতে মাথা নাড়ায়। ইউভি দশ মিনিটের মধ্যে নিজেকে পরিপাটি করে রুয়ানাকে কিছু আদেশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। রুয়ানার চোখে এখনও ইউভির উন্মুক্ত শরীর ভাসছে। শরীরের প্রতিটা ভাঁজ কেমন মোটা আর শক্ত। রুয়ানা কৌতূহল বশত নিজের শরীরে হাত দেয়। নিজের বক্ষে হাত দিতেই হতাশ হয়ে যায়। তার গুলো কেমন নরম নরম লাগে। আর উনারগুলো কেমন ফুলো ফুলো! রুয়ানা এইসব ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
মিরা ঘুম ঘুম চোখে নিচে নেমে ডিভানে গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে পড়ে। কিছুক্ষন বসে থাকার পর হামি দিয়ে উপরে তাকায়। ইউভিকে নিচে নামতে দেখে ঘাবরে গিয়ে শরীরে ভালোভাবে উড়না পেচিয়ে ভদ্রভাবে বসে। ইউভি নিচে নেমে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
” গুড মর্নিং মিরা।

— গুড মর্নিং ভাইয়া। রুই কি ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে?
ইউভি হাসি দিয়ে বলে,
” উঠেছে তবে বিছানা ছাড়ে নি।
ইউভি চলে যায়। মিরা ইউভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুয়ানার কাছে যায়। রুমে ডুকে রুয়ানার অবস্থা দেখে চোখ চরকগাছ। এই কোন দেশের ঘুমানোর স্টাইল! এক পা হেডবোর্ডে , মাথা অর্ধেক খাট পেরিয়ে বের হয়ে আছে। চুলগুলো ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। টি- শার্ট উঠে এসেছে উপরে, নাভি উন্মুক্ত। প্লাজু একটা হাটু পর্যন্ত আরেকটা ঠিকঠাক। মিরা মুখ হা করে রুয়ানার কাছে যায়। এরপর পুরো শরীর স্ক্যান করে শব্দ করে হেসে উঠে। রুয়ানার পাশে বসে পিঠে ধাক্কা দিয়ে বলে,

” রুই কিভাবে ঘুমিয়েছিস? উঠ দ্রুত। সকাল দশটা বাজে আর তুই এখনও পাগলের মত ঘুমাচ্ছিস।
মিরার ধাক্কা দেওয়াতে রুই হেডবোর্ডে হেলান দিয়া বসে। ঘুম ঘুম চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
” উফফ আপু উনি এতক্ষন উঠার জন্য জ্বালিয়ে গিয়েছে এখন তুমি শুরু করেছো।
মিরা রুয়ানার কথাকে উপেক্ষা করে হতাশ হয়ে বলে,
” তর ঘুমের স্টাইল দেখছি আমার ঘুমের স্টাইলের থেকেও সুন্দর। কোনো দেশ থেকে প্রশিক্ষন নিয়েছিস তুই?
রুয়ানা মিরার কথা বুঝার চেষ্টা করে নিজের দিকে তাকায়। কিছুক্ষন বোকার মত তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে লাফিয়া উঠে।

— আপু আমি কি এইভাবেই ঘুমিয়ে ছিলাম?
— হ্যা।
রুয়ানা মন খারাপ করে বলে,
” নিশ্চয় উনার সামনে এমন অবস্থাতেই ছিলাম। কি বাজে জিনিস আপু। আমি যে ঘুমের মধ্যে কাপড় ঠিক রাখতে পারি না মাঝে মাঝে ভুলে যায়।
মিরা মিথ্যে কান্নার অভিনয় করে বলে
” সেইম বোন আমার। আয় আমার বুকে আয়।
রুয়ানা দুই গালে হাত দিয়ে উৎসুক হয়ে বলে,
” আপু জানো আজ ইউভি ভাইয়াকে আমি ড্রেস ছাড়া দেখেছি।
রুয়ানা কথা শেষ করার সাথে সাথে মিরা কেঁশে উঠে। চিন্তায় কপালের ভাঁজ প্রখর হয়ে উঠে। মিরা রুয়ানাকে ভালোভাবে পরখ করে। ন, সন্দেহজনক তো কিছুই সে দেখছে না। তাহলে রুই যে কথাটা বললো?

— ত.. তুই ড্রেস ছাড়া দেখেছিস মানে?
— উনি শাওয়ার নিয়ে এসেছিলো। আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি উনার শরীরে কোনো টি- শার্ট অথবা শার্ট নেই।
রুয়ানার কথাটা শেষ হলে মিরা স্বস্থির নিশ্বাস ছাড়ে। যাক তাহলে তেমন কিছুই হয় নি। আরেকটু জন্য ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মিরাকে চুপ থাকতে দেখে রুয়ানা পুনরায় বলে,
— আপু জানো, উনার শরীর অনেক বড়। শার্ট পড়লে বুঝা যায় না বেশি। বক্ষগুলো কেমন ফুলো ফুলো। দেখতে ভয়ংকর দানব দানব লাগে। আর মুখের দিকে তাকালে মনে হয় এইটা দানব নয় ইউভি ভাইয়া।
রুয়ানার ভাবুক মুখের রিয়্যাকশন দেখে মিরা উচ্চস্বরে হেসে উঠে। এরপর রুয়ানার গাল টেনে বলে,
” তুই বড় হবি কবে রুইমাছ! জিম করা শরীর এমন ওই থাকে। আর তারা তো মাফিয়া গ্যাং এর লোক। চিকনা – চাকনা বডি নিয়ে কি মারা – মারি করতে পারবে বল?

— না। কিন্তু আমাদের নেই কেনো?
— তুই জিম কর তাহলেই হবে।
— উনার মত হয়ে যাবে?
— আরে না। উনাদের মত হতে হলে আমাদের সারাজীবন তপস্যা করতে হবে। মেয়েরা হবে কোমলমতী। তাদের শক্ত শরীর ম্যাচ হলে উপরওয়ালা নিজেই সৃষ্টি করে পাঠাতেন। পুরুষ হবে কর্মঠ, মেয়ে হবে কোমল।
— বুঝলাম তোমার কথা।
— ওকে তুই থাক আমি ইয়ানাকে ডেকে নিয়ে আসছি। স্টাফ থেকে শুনেছি ভাইয়া খুব সকালে বেরিয়ে গিয়েছে।
— ঠিক আছে তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

মিরা বিনা বাক্যে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। এরপর ইয়ানার রুমে উকি দিয়ে ডুকতেই কপাল কুচকে আসে। পুরো রুম জুড়ে কারোর অস্তিত্ব নেই। মিরা সন্দেহ নিয়ে বেলকনি আর ওয়াশরুম খুঁজে দেখে। পুরো রুম জুড়ে ইয়ানা নামক কোনো ব্যাক্তি নেই। মিরা কয়েকবার ইয়ানার নাম ধরে ডাক দেয়। মিরা রুম থেকে বেরিয়ে ছাদে যায়। পুরো ছাদ খালি , কোথাও ইয়ানা নেই। মিরা এইবার চিন্তিত হয়ে বাড়ির প্রতিটি স্টাফকে জিজ্ঞাসা করে কোথাও দেখেছে কি না। সবার একই কথা কেউ দেখে নি। মিরা চিন্তিত ভঙ্গিতে ডিভানে গিয়ে বসে। এর মধ্যে রুয়ানা নিচে নেমে আসে।
মিরাকে চিন্তিত হয়ে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করে,
‘ কি হয়েছে আপু? এইভাবে চিন্তিত হয়ে বসে আছো কেনো?

— বাড়িতে ইয়ানাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না রুই।
— হয়ত ভাইয়ার সাথে আছে।
মিরা চট করে তাকায় রুয়ানার দিকে। এরপর মোবাইল বের করে অরিদের নাম্বারে ফোন দেয়। অরিদ অগ্নির অফিসে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছিলো। ফোনের রিংটন বেজে উঠতেই কানে চেপে ধরে বলে,
” হুম বলো।
মিরা খুবই শান্ত কন্ঠে বলে,
‘ ইয়ানা কি ভাইয়ার সাথে? আপনি দেখেছেন ওকে?
— নাহহ। ভাইয়া তো মাফিয়া মিটিং – এ সকাল থেকে। বউ মনি কেনো আসতে যাবে?
— ইয়ানা বাড়িতেও নেই।
— হুয়াট ! ভালোভাবে খুঁজে দেখো।
— আমি পুরো বাড়ি খুঁজেছি সেই কখন থেকে বাট কোনো অস্তিত্ব নেই। ইভেন আজ কেউ ওকে দেখে নি।
অরিদ চিন্তিত হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কোনো কিছু না ভেবে মিটিং রুমে গিয়ে ডুকে পড়ে। অগ্নি কথা বলা বন্ধ করে অরিদের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। অরিদ কাউকে তোয়াক্কা না করে অগ্নির কাছে এসে নিম্ন আওয়াজে বলে,

” ভাইয়া বউ মনিকে খুঁজে পাচ্ছি না।
অরিদ এমনভাবে কথাটা বলেছে যেন কেউ শুনতে না পায়। মিটিং চলাকালীন কেউ রুমে ডুকলে শাস্তি পেতে হয়। অন্যান্য মাফিয়ারা রেগে গেলেও নিশ্চুপ থাকে। কারন তারা অরিদ চৌধুরিকে চিনে। সে অগ্নি চৌধুরির ভাই। চাইলে ও রাগ ঝারতে পারবে না। কিন্তু এইদিকে অগ্নি ভ্রুঁ ভাঁজ করে কিছুক্ষন নিশ্চুপ থাকে। মুহূর্তের মধ্যেই চেয়ার থেকে উঠে চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় মিটিং রুম থেকে। মাফিয়ারা অবাক হয়ে বলে,
” আজ একশত কোটি টাকার ডিল মিটিং অগ্নি চৌধুরি। আপনি এইভাবে মাঝ পথে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছেন? চলে গেলে কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে।
অগ্নির ঠান্ডা আর ভয়ানক কন্ঠ,
‘ ক্যান্সেল।

মাফিয়ারা আর কিছু বলতে পারে নি। অগ্নি খুব দ্রুত লিফ্টে উঠে নিচে নেমে আসে। উপস্থিত মাফিয়া সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অগ্নি চৌধুরি কারোর জন্য এত ডেম্পারেট! ইন্টারেস্টিং।
অগ্নি গাড়িতে উঠতে উঠতে ইয়ানার মোবাইলে ফোন দেয়। কিন্তু প্রতিবারের মত রিসিভ হচ্ছে না। অগ্নি মোবাইলটাকে ব্যাক সিটে ছুঁড়ে ফেলে কিড়মিড়িয়ে উঠে,
” রাবিশ! হাতের কাছে পায় একবার।

সে মন শান্ত করে বসতে পারছে না। অতিরিক্ত টেনশনে মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে বড় বড় নিশ্বাস টানে। আরিফ যত দ্রুত সম্ভব গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরায়। অগ্নি এক হাতে ফোন নিয়ে গার্ডদের কল করে প্রতিটি কোণায় কোণায় খুঁজ চালাতে। গাড়ি এসে থামে বাসভবনের সামনে। অগ্নি গাড়ি থেকে নেমে সোজা চলে যায় এক্সট্রা রুমে। যেখানে সিসিটিভির লাইন লাগানো আছে। রুমে ডুকে সবাইকে ইশারা করে সকালের প্রতিটি ফুটেজ দেখাতে। অগ্নির আদেশ অনুযায়ী এক এক করে দেখাতে থাকে। হঠাৎ অগ্নির চোখ আটকে যায় পিছনের এড়িয়ার ফুটেজের দিকে। ফুটেজে ইয়ানাকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যার শ্বাস সে উপলব্দি করতে পারে তাকে চিনতে সে বিন্দুমাত্র ও ভুল করে নি। রাগে কিড়মিড়িয়ে উঠে। কোথায় গেলো এইভাবে নিজেকে ঢেকে? কার সাথে দেখা করতে গিয়েছে? আমি কি বেশি স্বাধীনতা দিয়ে ফেলেছি?
অগ্নি সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বলে,

” খুঁজ চালাও কোথায় গিয়েছে এই মেয়ে? ভালোভাবে খুঁজে দেখো আশে- পাশেই আছে।
ইউভি এক্সট্রা রুম থেকে বেরিয়ে আসতেই ইউভি আর রায়ানকে দেখতে পায়। তারা অরিদের মুখে শুনেছে সব কিছু। কোথায় গেলো মেয়েটা? এই অচেনা শহর শত্রুদের ভীরে কোথা না জানিয়ে চলে গেলো? ইউভি শুকনো ঢোক গিলে অগ্নির লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকায়।
রায়ান ঠোঁট ভিজিয়ে ইউভির উদ্দেশ্যে বলে,
” ভাই ইয়ানা শশরীরে বাড়িতে প্রবেশ করবে ঠিক কিন্তু আজ অগ্নির হাতে মাইর খাবে নিশ্চিত।
— চল অগ্নিকে রুমে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি।গার্ডরা তো খুঁজেই চলছে।
— হুম।
অগ্নি গাড়িয়ে গেলান দিয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটি বন্ধ , হাত দুটি মুষ্টি করে রাখা। ইউভি অগ্নির কাছে গিয়ে বলে,

” ভাই শান্ত হ। হয়ত কোনো কাজে গিয়েছে।
অগ্নি চোখ থেকে হাত নামায়। চোখ দুটি কেমন লাল হয়ে আছে। কিছুমুহূর্তের মধ্যেই মাফিয়া বস কেমন অগুছালো আর ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে। অগ্নি শান্ত হয়ে আসে। ঝড়ের পূর্বে যেমন সবকিছু শান্ত হয়ে আসে ঠিক তেমনি অগ্নি শান্ত হয়ে দাঁড়ায়। এরপর ইউভির প্রশ্নটাকে তাচ্ছিল্য করে বলে,
” কাজ! সিরিয়াসলি ইউভি কাজের জন্য বের হলে এইভাবে পিছনের গেইড দিয়ে কেনো গিয়েছে? সময়টা এমন ছিলো যখন গার্ডরা খেতে যায়।
— তর ভয়ে লোকিয়ে গিয়েছে হয়ত।
— আমার ভয়ে? ও আমাকে ভয় পায় তুই মানতে বলছিস? যেখানে পুরো মাফিয়া জগত আমার কথায় উঠবস করে দেখানে এই মেয়ে আমাকে দিনের পর দিন নাকে – চুবানো খাওয়াচ্ছে। কি এমন কাজ যে আমার থেকে লুকিয়ে যেতে হয়েছে?

— প. পার্সোনাল।
ইউভির বোকা কথায় অগ্নি দাঁত কটমট করে বলে,
” বোকার মত কথা বললে শুঁট করে গাছে বেঁধে রাখব ইডিয়েট। পার্সোনাল! এখনও পার্সোনাল বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকে? একবার নয়, দুইবার নয় বহুবার উন্মুক্ত করেছি সব। নির্ঘাত কোনো এক অঘটন ঘটাতে গিয়েছে। উফফফ মেরে ফেলে দিবে এই মেয়ে আমাকে। তরা বুঝতে পারছিস না একবার যদি আমার বিপক্ষ দলের কেউ চিনতে পারে তাহলে… তাহলে … ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন করে দিবে। আশে- পাশে পুরো জায়গা আমি তন্ন – তন্ন করে খুঁজেছি। কিন্তু ডাফারটার অস্তিত্ব পায় নি। খোদার কসম একবার হাতের নাগালে পায় জিন্দা কবর দিয়ে আসব।

অগ্নির পাগলামো দেখে রায়ান আর ইউভি গভীর নিশ্বাস ছাড়ে। টেনশন তাদের ও হচ্ছে প্রচুর। ইয়ানার প্রতি অগ্নির রাগ দেখে ভয় ও হচ্ছে প্রচুর। তবে সমস্যা নেই ইয়ানার সেসব সামলানোর ক্ষমতা আছে। নাহলে এই হার্টল্যাসকে ডেম্পারেট করেছে কিভাবে?
অগ্ন বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে রাগে গম্ভীরতা নিয়ে গিয়ে ডিভানে বসে। এক ঘন্টার ভেতরে পাগলের মত অবস্থা হয়ে গিয়েছে তার। বড় বড় শ্বাস টানছে। ইউভি , রায়ান, অরিদ অগ্নির দিকে এক পলক তাকিয়ে চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠে। রুয়ানা নিরবে কেঁদে যাচ্ছে সুমু আর মিরাকে ধরে। অগ্নির ভয়ে কেউ কিছু বলতে ও পারছে না। হঠাৎ দরজায় কারোর উপস্থিতি লক্ষ্য করে মিরা, সুমু আর রুয়ানা সেদিকে তাকায়। ইউভি আচমকা দরজার কাছে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে,

” ইয়ানা ”
ইউভির অস্বাভাবিক কন্ঠ শুনে রায়ান আর অগ্নি ও সেদিকে তাকায়। সবাই চোখে আতঙ্ক আর ভয় নিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। ইয়ানা অগ্নিকে ডিভানে বসে থাকতে দেখে ছটফটিয়ে উঠে। উনার তো রাতে আসার কথা! তাহলে এই সময় এখানে কি করছেন? ইয়ানা কি হবে এইবার তর ? বাঁচতে চাইলে পালিয়ে যা। ইয়ানা শুকনো ঢোক গিলে এক পা মেঝেতে রাখতে যাবে এমন সময় কারোর ভয়ানক ঝাঁঝালো কন্ঠ,
‘ আর এক পা আমার বাসভবনে রাখলে খোদার কসম পা ভেঙ্গে রেখে দিব।
অগ্নির হুঁংকারে সবাই কেঁপে উঠে। সবচেয়ে বেশি ভয় পায় ইয়ানা। আতঙ্কে হাত – পা জমে যায়। অগ্নির চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ফর্সা মুখটা লাল হয়ে কেমন উন্মাদ দেখা যাচ্ছে। রায়ান অগ্নির কাছে এসে বলে,
” শান্ত হ ভাই। আমি ইয়ানার সাথে কথা বলছি।

— কি কথা বলবি তুই? শুনতে পাস নি আমি কি বলেছি। এই মেয়ে যাতে আমার বাসভবনে আর পা না রাখে। দেখতে চাই না এমন অবাধ্য নারীর মুখ। অসভ্য, ফাজিল !
— ওকে দেখতে হবে না তকে। আগে মেয়েটাকে ভিতরে ডুকার অনুমতি দে।
— চোখের সামনে এইটাকে দেখতে পারছি না আর ভিতরে ডুকতে দেওয়াতো বিলাসিতা। ইউভি বেরিয়ে যেতে বল।
ইউভি সামান্য হেসে বলে,

” মাত্র এক ঘন্টায় ইয়ানার অনুপস্থিতিতে তুই উন্মাদ হয়ে গিয়েছিস অগ্নি। তর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে তো তুই নিঃশ্বেস হয়ে যাবি।
অগ্নি দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে,
” ইচ্ছে থাকলে সব করা যায়। অগ্নি চৌধুরি নিজেকে আগলে রাখতে জানে। কিন্তু এই মুহূর্ত এইটাকে দুই মিনিট ও সহ্য করতে পারছি না।
ইউভি — ওকে ঠিক আছে তুই শান্ত হ আমি কথা বলছি।

ইউভি অগ্নিকে কিছু বলতে না দিয়ে এগিয়ে যায় ইয়ানার কাছে। ইয়ানা এখনও মাথা নিচু করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে পানি টলমল করছে। এইভাবে উনি বলতে পারলো? উনি আমাকে দেখতে চান না। ইউভিকে আসতে দেখে ইয়ানা চোখ তোলে তাকায়। ইউভি শান্ত কন্ঠে বলে,
” কোথায় গিয়েছিলে তুমি ইয়ানা? যখন কোথাও যাচ্ছো তখন বলে গেলে কি এমন হত? তুমি অগ্নিকে চিনো না? তুমি জানতে না ও তোমার অনুপস্থিতিতে উন্মাদ হয়ে যায়। সব জানার পরও কাউকে কিছু না বলে কেনো বেরিয়ে গেলে? তাও আবার পিছনের গেইড দিয়ে?
ইয়ানা নিজের পেটের উপরের অংশ ভালোভাবে চেপে ধরে। ইউভির প্রতিটি প্রশ্ন মস্তিষ্কে প্রবেশ করতেই নিরব হয়ে যায়। কিছুক্ষন পর ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,

” ভ.. ভাইয়া কিছু দরকার ছিলো। ভেবেছিলাম দ্রুত চলে আসব কিন্তু কোনো এক কারনে আটকা পড়ে যায়।
ইয়ানার কথাটা অগ্নির কর্নপাত হতেই রাগে তেঁরে যায় সেদিকে। অগ্নিকে ইয়ানার দিকে আসতে দেখে রায়ান আর অরিদ সামলে নেয়। অগ্নি দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে,
” এই তর দরকারি কাজ আমাকে বলা যেত না? নাকি আমি আজ পর্যন্ত কোনো কিছুতে অপূর্ন রেখেছি। এমন কি কাজ যা আমাকে আমাকে বলে গেলে সমস্যা হত? ইউ এনজয় কিপিং মে ওরিড, ইউ স্লেভ’স চাইল্ড! ফাজিলের বাচ্চা! এই মরার শখ জাগছে? তাহলে চল টর্চার সেলে নিয়ে যায়? শত্রুদের যেভাবে মারি সেই অনুযায়ী তকে ও মেরে বস্তা বন্ধী করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসি ডাফার!
অগ্নি রাগে বড় বড় শ্বাস টানে।
ইউভি– কিসব বলছিস অগ্নি? মাথা ঠিক আছে তর?

— ইউভি যেতে বল এইটাকে। খুন হবে যে কোনো সময় আমার হাতে। মাথায় সব সময় আজাইরা জিনিস নিয়ে ঘুরে। কখন আমাকে বিপদে ফেলবে সেই ধান্দায় থাকে এই মেয়ে। এই তর ধারনে আছে কি অবস্থাতে ছিলাম আমি? যদি কিছু হয়ে যেত রাস্তায়, তখন কি করতি? চারদিকে শত্রুরা ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে। অগ্নি চৌধুরি মুখ থুবরে পড়ার জন্য তর বিনাস ওই যথেষ্ট। নিজে মরত সাথে আমাকেও নিঃশ্বেস করে দিয়ে যেত। অসভ্য!
পরপর অগ্নির বাক্য আর ধমকে ইয়ানা ফুঁপিয়ে উঠে। অজানা এক কারনে মনের ভেতরে তীব্র অভিমান জমে উঠে। তার তো আজ বকা খাওয়ার দিন ছিলো না। অথচ কিভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে সবার সামনে। সুমু, মিরা আর রুয়ানা অবাক হয়ে অগ্নিকে দেখছে। এই প্রথম তারা অগ্নির রাগের সাথে সাক্ষাত হয়েছে। রুয়ানা তো রিতীমত ভয়ে শিউরে উঠছে।
ইয়ানাকে ফুঁপাতে দেখে অগ্নির রাগ আরও দ্বীগুন বেড়ে যায়।

— ন্যাকামো করতে মানা কর রায়ান। আরেকবার ফুঁপানোর শব্দ আসলে অসামাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।
রায়ান সুমুকে ইশারা করে ইয়ানাকে রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সুমু সম্মতি জানিয়ে ইয়ানার কাছে যায়। এরপর বাহুতে ধরে নিম্ন আওয়াজে বলে,
” কান্না করিস না প্লিজ। তর অনুপস্থিতিতে ভাইয়া পাগল হয়ে গিয়েছিলো। এখন রেগে আছে একটু পর দেখবি নরমাল হয়ে গিয়েছে।
ইয়ানা কিছু বলে না। সুমুর সাথে ভিতরে প্রবেশ করে। শরীর কেমন নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। ইয়ানাকে নিয়ে উপরে উঠতে দেখে অগ্নি পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে বলে,

” আমার রুমে যাতে এই বিয়াদবটাকে যেতে না দেখি।
সুমু বোকার মত তাকিয়ে আছে অগ্নির যাওয়ার দিকে। সুমু একবার অগ্নির রুমের দিকে তাকায় আরেকবার মিরা, অরিদ তাদের দিকে তাকায়।
অরিদ চিন্তিত হয়ে বলে,
” বউমনি এখন আমাদের সাথে আড্ডা দাও। ভাইয়াকে আগে শান্ত হতে দাও। এরপর দুইজনে ভাব করে নিও।
অরিদের কথা শুনে মিরা দাঁত কটমট করে বলে,
” কত বড় হাদারাম আপনি? পুরো বাড়ি কেমন নিস্তব্দ হয়ে আছে আর আপনার মনে আড্ডা দেওয়ার ফিলিংস জেগেছে? আপনি কি করে বুঝবেন সম্পর্কে রাগ জমলে ঠিক কতটা কষ্টদায়ক। তীব্রভাবে কখনো কাউকে ভালোবাসলে অনুমান করতে পারতেন।
অরিদ মিরার কথায় গম্ভীর হাসে। হয়ত মিরার কথার অর্থ বুঝার চেষ্টা চালাচ্ছে। ইয়ানা মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকে। বার বার পেটের নিচের অংশে চেপে ধরছে।

মিরা রুমে ডুকে বিছানার এক পাশে গিয়ে ভাবুক হয়ে বসে। অরিদ মোবাইলে কিছু একটা করছে। মিরা সেদিকে এক পলক তাকিয়ে গলা কেঁশে বলে,
” কার সাথে চ্যাটিং করছেন শুনি?
অরিদ ছোট ছোট চোখে মিরার দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,
” নতুন প্রেমিকা।
মিরা দাঁতে দাঁত পিষে উঠে বলে,
” বউ থাকতে বাহিরের মেয়ের সাথে প্রেম করেন লজ্জা করে না? কয়দিন পর তো লুচ্চামির ডিগ্রি নিয়ে আসবেন । কন্ট্রোল মি, অরিদ চৌধুরি।
মিরার মুখে এমন বাক্য নাম শুনে অরিদ গম্ভীর হয়ে উঠে।

— হুয়াট ডিগ্রি ?
— লুচ্চামির ডিগ্রি ।
অরিদ দাঁতে দাঁত চেপে মিরাকে হেচকা টানে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসে। এরপর তিরিক্ষি মেজাজে বলে,
” থাপরিয়ে সোজা করব অসভ্য। এমন নোংরা ভাষা পুনরায় তোমার মুখে আনলে খোদার কসম আমার নোংরামি তুমি দেখবে।
মিরা কাঁপা কাঁপা সুরে বলে,
” ক.. কি করবেন আপনি?
অরিদ মিরার মুখের কাছে নিজের মুখ নিয়ে আসে। এরপর মিরার নাকে নাক ঘেষে বলে,
” সেটা প্রতি রাতেই দেখতে পাবে।
অরিদের স্পর্শে মিরা ঠান্ডা হয়ে যায়। কেঁপে উঠে লাজুক কন্যা। কি অশ্লিল ইঙ্গিত! অরিদের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে,

” আরে এইভাবে ধরে রেখে চ্যাপ্টা বানিয়ে দিবেন নাকি? ছাড়ুন ইয়ানার কাছে যেতে হবে।
— যাবে কিছুক্ষন পর। স্বামীর ভালোবাসা পেয়ে কেউ চ্যাপ্টা হয়ে যায় না মিসেস অরিদ চৌধুরি।
— চায় না আমি ভালোবাসা। ছাড়ুন আমাকে বলছি। নাহলে নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিব।
— কি বলবে গিয়ে শুনি?
— বলব স্বামী পরকীয়া করে।
— কার সাথে? বউয়ের সাথে নাকি?
— বউয়ের সাথে লোকে পরকীয়া করে?
— আমার জানামতে আমি মিরা মেয়েটাকে ছাড়া আর কোনো মেয়েকে কাছে টেনে নেয় না। তাহলে তোমার ভাষামতে তো বউয়ের সাথে পরকীয়ায় হলো।
মিরা থতমত খেয়ে যায়। চুপচাপ অরিদের বুকের সাথে ল্যাপ্টে থাকে। লজ্জায় মুখ লুকায় তার বুকের মধ্যে। কি আশ্চর্য যার কারনে লজ্জা পাচ্ছে তার কাছেই মুখ লুকাচ্ছে।

অগ্নি বেলকনিতে একটা চেয়ারে বসে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। সামনে মিনি টেবিলে একটা ওয়াইনের বোতল রাখা। কয়েক চুম্বুক খেয়ে অস্থির হয়ে বসে থাকে। সিগারেট পুনরায় মুখে দিবে এমন সময় কারোর নরম হাতের স্পর্শে দাঁত কিড়মিড়িয়ে উঠে। সে হাতের মালিককে চিনে। ইভেন এই নরম হাতের ছোঁয়ায় সে বহুবার পরাজিত হয়েছে। অগ্নি তিরিক্ষে মেজাজে মেয়েটাকে হাচকা টানে সামনে নিয়ে এসে তার কোলের উপর বসিয়ে দেয়। এরপর চিবুক শক্ত করে চেপে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। অগ্নির এই হিংস্র রুপে ইয়ানা কেঁপে উঠে। অগ্নি এক হাতে প্যান্টের ব্যাল্ট খুলে ইয়ানার দুই হাত শক্ত কতে বেঁধে দেয়। ইয়ানা ব্যাথায় ছটফটিয়ে উঠে। অগ্নির হিংস্র আর উন্মাদ রুপে ইয়ানা শিউরে উঠে।

অগ্নির ঠোঁটের শক্ত ছোয়া ইয়ানার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার উপক্রম। ইয়ানার পুরো ঠোঁট বর্তমানে অগ্নির দখলে। চুমু খাচ্ছে কম দাঁতের ঘর্ষনে ক্ষত করে দিচ্ছে। ইয়ানা সরে যেতে চায়। অগ্নি রাগে পিছন দিকে ইয়ানার চুল নিজের মুষ্টি করে নেয়। এরপর গলায় অজস্র চুম্বন দিতে থাকে। উহুম এইটা চুমু নয় বরং স্পর্শের মাধ্যমে নিজের রাগ মিটাচ্ছে। অগ্নির উন্মাদনায় সামনে মিনি টেবিলের উপরে রাখা ওয়াইন সহ গ্লাসগুলো মেঝেতে পড়ে যায়। কাচের জিনিস মেঝেতে পড়ার সাথে সাথেই বিকট এক শব্দ হয়ে উঠে। কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। এইভাবে প্রায় অনেক্ষন চলে। ইয়ানা নিস্তেজ হয়ে আসে। এমনিতেও তার শরীর প্রচুর দুর্বল ছিলো। অগ্নির পাগলামোতে একদম নেতিয়ে পড়ে। অগ্নি থামে। ইয়ানার কানের কাছে মুখ নিয়ে বড় বড় নিশ্বাস টানে। কপালে জমে থাকা ঘামগুলো বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে ইয়ানাকে নিজের সাথে চেপে ধরে বলে,

” কোথায় গিয়েছিলে তুমি? কেনো এসেছো এখানে ? বারন করে এসেছিলাম তো না আসতে। তার পরও কেনো আসলে?
অগ্নি ইয়ানাকে রাগ দেখিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিতে চায়। ইয়ানা সরে সরে না গিয়ে আরও চেপে বসে। ইয়ানা অগ্নির গলা জড়িয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে,
” সরি। আর কখনো এমনটা করব না। ভেবেছিলাম দ্রুত চলে আসব আপনার জানার আগেই। আপনি এত ডেম্পারেট হয়ে যাবেন জানলে সত্যি যেতাম না। ট্রাস্ট মি।
অগ্নি নিশ্বাস টেনে বলে,

” তোমাকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে ইয়ানা। এতটা অধৈর্য কেনো করলে আমাকে?
— এত পাগলামো কেনো করেন আমাকে নিয়ে? আপনি বড্ড উন্মাদ অগ্নি চৌধুরি।
অগ্নি ইয়ানার কামিজ ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে হাত বুলিয়ে কোমর খামচে ধরে বলে,
” তুই আমার থেকে প্রায় ষাট মিনিট, ৩৬০ সেকেন্ড, ৩.৬ ট্রিলিয়ন ন্যানো সেকেন্ড দুরে ছিলি। আরেকটু সময় গেলে হয়ত আমার হৃদস্পন্দনটা বন্ধ হয়ে যেত।

আমি তর সপ্নের চেয়ে ও বেশি উন্মাদ। তুই যে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করিস সেই রাস্তার সামান্য ধুলোকে ও আমার হিংসে হয়। যে বাতাস প্রতি মুহূর্তে তর শরীরকে স্পর্শ করে যায় সেই বাতাসকেও আমি হিংসা করি। আমি উন্মাদ শুধু তর জন্য। পুরো পৃথিবীর সামনে আমি মাফিয়া বস হলে ও তর সামনে আমি ভিলেন ।
ইয়ানা নিশ্চুপ হয়ে অগ্নির কথা গুলো শুনে। অগ্নি ইয়ানার হাতের ব্যাল্ট খুলে দিয়ে বলে,
” একটা মিথ্যে বললে মাটির নিচে জ্যাঁন্ত পুঁতে দিয়ে আসব। কেনো গিয়েছিলে সেটা বলো।
ইয়ানা লজ্জায় হাঁশ – ফাঁশ করে উঠে। ইয়ানাকে লজ্জা পেতে দেখে অগ্নি দাঁতে দাঁত চেপে উঠে,
” লজ্জা কেনো পাচ্ছো? দ্রুত বলো। ধৈর্যের পরিক্ষা নিও না আমার।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬০

ইয়ানা অগ্নির মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। এরপর কোল থেকে উঠে আসে বিনা বাক্যে। অগ্নি কপাল কুচকে ইয়ানার যাওয়ার দিকে তাকায়। ইয়ানার নিরবতা রাগটাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। লাথি দিয়ে মিনি টেবিলটা ফেলে দেয়। টেবিলটা পড়ে সাথে সাথে ভেঙ্গে যায় কাঁচ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ইয়ানা দরজার কাছে এসে ভাঙ্গার শব্দ পেয়ে কেঁপে উঠে। সব ভয় আর অবাধ্যতা পিছনে ফেলে কাঁপা কাঁপা পায়ে অগ্নির কাছে এগিয়ে যায়। ভাঙ্গা কাচের টুকরো গুলোকে মেঝেতে ছড়ানো দেখে অন্য পাশ দিয়ে যায়। ইয়ানা অগ্নির সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ায়। অগ্নি মাথা তোলে ইয়ানার দিকে তাকায়। ইয়ানার হাতে একটা কাগজ দেখে কপাল কুচকে ফেলে। অগ্নির তাকানো দেখে ইয়ানার গলা শুকিয়ে আসছে। নির্ঘাত আরেকটা ঝড় যাবে তার উপর দিয়ে।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬২