অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৭

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৭
লিজা মনি

ইয়ানা কথা বলার মধ্যেই অগ্নি রুমে প্রবেশ করে। ইয়ানার দিকে না তাকিয়ে বলে,,,,
” দশ মিনিটের মধ্যে পরিপাটি হও। ”
এরপর ওয়াশরুমে ডুকে পড়ে শাওয়ার নেওয়ার জন্য।
ইয়ানা অগ্নির যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,,,
” অহংকারী দানব একটা”
হল্লা পার্টির থেকে বিদায় নিয়ে ফোন কেটে দেয়। এরপর অগ্নির কথা মত নিজেকে গুছিয়ে নেয়।

সারা রাতের জার্নি শেষে অবশেষে নিজের গন্তব্যে তারা পৌছায়।
গাড়ি এসে থাকে একটা বিশাল ডুপ্লেক্স আলিশান বাড়ির সামনে। পুরোটা বাড়ির চারপাশ রুপকথার গল্পের জায়গার মত।
ইয়ানা ক্লান্ত হয়ে গাড়ির মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। সিটে হেলান দিয়ে শুয়ার জন্য অসুবিধা হচ্ছিলো দেখে ঘুমন্ত ইয়ানার মাথা নিজের কাধের উপর রাখে। ইয়ানার মাথার স্পর্শ নিজের কাধকে স্পর্শ করতেই পুরো সত্তা কেঁপে উঠে।
মনে মনে আওরায়,,,,, যত কাছাকাছি যাচ্ছি তত আশ্চর্য হচ্ছি। সাধারন একটা স্পর্শ আমি নিতে পারছি না হৃদয় কেঁপে উঠে।
অগ্নি শুকনো একটা ঢুক গিলে গাড়ি চালাতে মনযোগ দেই।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাড়ির সামনে গাড়ি ব্রাক কষে ইয়ানার ঘুমন্ত মুখশ্রীর দিকে তাকায়। এত মায়াবী অপরুপা মেয়ে কি অগ্নি চৌধুরি পাওয়ার যোগ্য। এই মেয়ের মধ্যে কি আছে যা তাকে চুম্বকের মত তার দিকে টেনে নিয়ে যায়। কই আগে তো এমন হত না এই দুই দিনে কি হয়েছে আমার। অগ্নির দৃষ্টি যায় ইয়ানার গোলাপি ঠোঁটের দিকে। ঠোঁটগুলো টানছে ওকে খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। মন বলছে ছুঁয়ে দিতে মস্তিষ্ক কেনো বলছে এইটা করা ঠিক হবে না। অগ্নি এইবার নিজের প্রতি নিজেই বিরক্তি হয়। ছেহহ শেষে কিনা মস্তিষ্ক ও তার সাথে বেইমানি করলো।
তার ইচ্ছেটাকে ধামাচাপা দিয়ে ইয়ানাকে পাজা কোলে নেওয়ার জন্য ঝুকে পড়ে। নিজের উপর কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খোলে তাকায়। অগ্নিকে নিজের এত নিকটে দেখে ভড়কে যায়।
ইয়ানা — আ.. আপনি এখানে কি করছেন? আপনি আমার ঘুমের ফাইদা তুলছেন তাইতো?
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নির চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,,,,

” তুমি আমার বিয়ে করা বউ সুইটহার্ট সেখানে ফাইদা শব্দটা আসছে কোথা থেকে। বিয়ে হয়েছে তিন দিন হতে চলল তোমাকে ছুইনি পর্যন্ত। আমার ছোয়া তুমি সহ্য করতে পারবে না। আর রইলো বাকি ফাইদার কথা সেটা আমার অধিকার।
ইয়ানা অগ্নির দিকে টাস্কি খেয়ে চেয়ে আছে। কানাডায় পা রাখতেই এত চেইঞ্জ। এই লোক তো দেখছি পুরো লাগামছাড়া । মুখ তো নয় যেনো ঘোড়ার দৌড়। আর কি বলল ” সুইটহার্ট” এই বলে ইয়ানা নাক মুখ কুচকে ফেললে।
এরপর ইয়ানা গাড়ি থেকে নেমে অগ্নির পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। যে এই মুহূর্তে কয়েকজ গার্ডের সাথে কথা বলছে। ইয়ানা চারপাশে চোখ বুলায়। মনে হচ্ছে কোনো সপ্নে এসেছে সে। এত সুন্দর জায়গা সে আগে কখনো দেখে নি। সামনের ডুপ্লেক্স বাড়িটা আভিজাত্যে ঘেরা এক বাড়ি। সামনে গাড়ি, চারদিকে ফুলের সমাহার, সুইমিংপুল উফফ অসম্ভব সুন্দর। ইয়ানা সামনে এগোতে নিবে তখন কেউ তার হাত ধরে ফেলে। ইয়ানা ভড়কে যায় এরপর তাকিয়ে দেখে অগ্নি।
অগ্নি —- যাওয়া যাক?
ইয়ানা — হুম।
ইয়ানা ভিতরে ডুকে চারদিকে শুধু তাকিয়ে থাকে। ভাই এইটা বাড়ি নাকি কোনো রাজমহল। কিন্তু এইটা কার বাড়ি?

ইয়ানা ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে থাকে। পুরো রাস্তায় ঘুমিয়ে এসেছে ফলে এখন ঘুম ও পাচ্ছে না। কিন্তু পুরো শরীর কেমন মেজমেজ করছে। ইয়ানা বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আর জীবনের মাপকাঠি মাপতে থাকে। আচ্ছা অগ্নি চৌধুরি কি ভালো লোক? নাকি বাকি পুরুষদের মত মুখুশধারী? ওনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়ে ভালোবাসাটা কি ঠিক হবে নাকি আগে যাচাই করে ভালোবাসব? কিন্তু ভালোবাসা কি বললেই হয়ে যায়। কিন্তু ওনি তো আমার হাজবেন্ড আল্লাহর অশেষ নিয়ামতে ভালোবাসা এমনি সৃষ্টি হয়ে যাবে। এই যে বর্তমানে অগ্নির জন্য যেই ঘৃনা কাজ করত এখন সেটা করে না। লোকটাকে আপন মনে হয়। কিন্তু ওনার চোখজোড়া কেমন গম্ভীর যেনো রহস্যে ঘেরা এক অধ্যায় এখানে রচিত আছে ! কিন্তু সেটা কি?

হাতে ওয়াইনের গ্লাস নিয়ে বসে আছে তিন জন যুবক। দুইজনের তিক্ষ্ণ দৃষ্টি একজনের দিকে। কিন্তু সে নিজের অনামিকা আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘেসে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ নিজের হাতের ওয়াইনের গ্লাসটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে,,,,,,
“” ধুর বাল এইসব বালের ওইয়ান ও ভালো লাগছে না ”
অগ্নির এইভাবে রেগে যাওয়াটা ইউভি আর রায়ানের বোধগাম্য হচ্ছে না। তবুও রায়ান সাহস সঞ্চয় করে বলে,,,,
” কি হয়েছে এইভাবে রেগে আছিস কেনো? ”
অগ্নির চোখ অসম্ভব লাল। বুকের কাছের দুইটা বোতাম খোলে দিয়ে চেয়ারে ডিভানে হেলান দিয়ে বসে। কেনো যানি খুব অস্থির লাগছে।
অগ্নি — জানি না কি হচ্ছে আমার? সব কিছু গুলিয়ে ফেলছি। কিছু করতে গেলে, ভাবতে গেলেই ওই মেয়ের মুখ শুধু ভেসে উঠে। কোনো কাজে ফোকাস করতে পারছি না। আমি নিজেকে নিজেই হারিয়ে ফেলছি।
অগ্নির এত কর্কশ কথা শুনে আজ কেনো জানি ইউভি আর রায়ানের ভয় লাগছে না বরং প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। ইউভি হাস্কি শুরে বলে,,,,

” পেমে পড়েছো মামা! ভালোবেসে ফেলেছো নিজের বউকে তাও আবার বাজেভাবে।
রায়ানের কথা শুনে অগ্নি ধমক দিয়ে বলে,,,
” যাস্ট সেট আপ ইউভি। এইসব লজিকবিহীন কথা বলবি না মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে। ভালোবাসার মত বোকামি আর যায় হোক আমি করব না। আর ওই মেয়েকে দেখলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। শুধু এইটুকু জানি ওকে আমার প্রয়োজন। যাস্ট প্রয়োজন আর কিছুই না।
অগ্নির কথা শুনে রায়ান বিরবির করে বলে,,,

” শালা ভাঙবে তবুও মচকাবে না। বিয়ে করে বউ বউ করছে আর বলে ভালোবাসে না। একদিন দেখব বাচ্চা কাচ্চা ও পয়দা করে এসে বলছে আমি ইয়ানাকে ভালোবাসি না। তাহলে বাচ্চাটা কি আসমান থেকে টপকাইছে?
ইউভি — অনেক রাত হয়েছে অগ্নি এখন বাড়ি যা। মেয়েটা একা আছে। এত বড় বাড়িতে নিশ্চয় একা একা ভয় পাবে তার উপর জায়গাটা ওর জন্য সম্পূর্ন নতুন। তুই পাশে থাকলে অন্তত মেয়েটা ভড়সা করতে পারবে।
ইউভির কথা শেষ না হতেই অগ্নি এই জায়গা থেকে প্রস্থান করে।
অগ্নির যাওয়া দেখে দুইজনেই হতভম্ভ হয়ে যায়। রায়ান ঠাট্টা করে বলে,,,,,
” বুঝলি ইউভি অগ্নি চৌধুরি তার বউকে ভালোবাসে না। ”
এরপর দুইজনেই উচ্চস্বরে হেসে উঠে।

অগ্নি নিজের ফিঙ্গার টাচ করে বাড়ির মেইন দরজা খুলে। এরপর চারপাশে তাকিয়ে উপরে চলে যায়। রুমে ডুকে দেখে পুরো রুম অন্ধকার। অগ্নির কপাল কিঞ্চিৎ কুচকে যায়। লাইট অফ করেছে ভালো কথা এইভাবে ডিমলাইট অফ করে রেখেছে কেনো? এই মেয়ে কি অন্ধকারে ভয় পায় না।
অগ্নি নিজের হাতের ফোনের লাইট অন করে সুইচবোর্ডে গিয়ে লাইট জালিয়ে দেয়।
লাইট জালাতেই দেখতে পায় ইয়ানা বিছানার মধ্যে বসে আছে। ইয়ানাকে দেখতে পেয়ে যেনো নিজের বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেলো। কিন্তু এই মেয়ে লাইট অফ করে এইভাবে পাগলের মত বসে আছে কেনো?
অগ্নি ইয়ানার দিকে তাকিয়ে গম্ভির গলায় বলে,,,
” এইভাবে দেবদাসের মত বসে আছো কেনো? তুমি অন্ধকারে ভয় পাও না?

ইয়ানা — না
অগ্নি — সাহসী মেয়ে বাহহহ! তনুকে বলে গিয়েছিলাম খাবার দিয়ে যেতে ও খাবার দিয়ে গেছে?
ইয়ানা — হুম।
অগ্নি — খেয়েছিলে?
ইয়ানা — হুম।
ইয়ানার এই মৌনতা অগ্নির বিরক্তি লাগছে। তারপর ও নিজের রাগ কন্ট্রোল রেখে বলে,,,,
” মাথা ব্যথা কমেছে এখন? ”
ইয়ানা — হুম।
ইয়ানার উত্তর পেয়ে অগ্নি এইবার রেগে ধমক দিয়ে বলে,,,,
” এই মেয়ে এইভাবে হুম হুম করছো কেনো? মুখে কথা নেই। অন্য সময় তো বক বক করে সবার মাথা খেয়ে ফেলো এখন এত মৌন কেনো শুনি?
অগ্নির ধমক শুনে ইয়ানা বলে,,,,

” কি বলব যেখানে আমি নিজেই কিছু বুঝতে পারছি না। সত্যি বলতে আপনার এত সুন্দর কেয়ার এরপর হাজবেন্ড হাজবেন্ড যে একটা ভাব সেটা সত্যি নিতে পারছি না। সত্যি করে বলোনতো কি হয়েছে আপনার? আপনি বিয়ে মানে না অথচ বউ মানেন। এখন বিয়ে বউ সব মানেন। বিয়ের পরের দিন সকালের কথা নিশ্চয় ভুলে যান নি আর সবচেয়ে বড় কথা আপনি আমাকে ঘৃনা করেন। হঠাৎ আপনার এই বদল আমি ঠিক নিতে পারছি না স্যার।
অগ্নি — ডোন্ট কল মি স্যার ইডিয়েট। আর রইলো বাকি মানা নিয়ে সত্যি কথা বলব ইয়ানা। আমি যদি তোমাকে সত্যি মন থেকে মেনে নিতাম তাহলে অগ্নি চৌধুরির ভালোবাসা নামক অত্যাচার তোমার শরীরের উপর থাকত। আর তোমার চিৎকার পুরো কামরা জুড়ে বিরাজ করত । মেনে নেওয়া, ভালোবাসা এইসবের ধারধারে না আমি। শুধু জানি তোমাকে আমার চাই। আর তুমি ও শুধু আমাকে চাইবে। আমি ব্যতিত যাতে আর কেউ তোমার মস্তিঁষ্কে হানা না দেয়। আমাকে এড়িয়ে চলার মত এমন জঘন্য কাজ কখনো করো না মেয়ে। এমন হলে অগ্নি চৌধুরির নতুন রুপ দেখতে পাবে যা তোমার জন্য সেটা দেখা অসম্ভব।
অগ্নির এমন ফিসফিস করা কথা ইয়ানার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠে। অগ্নি একদম ইয়ানার কাছাকাছি। দুইজনের শ্বাস- প্রশ্বাস একে অপরের কাছে আছরে পড়ছে।
ইয়ানা কাপাঁকাপাঁ কন্ঠে বলে,,,,

” দ. দুরে সরে বসেন। এত কাছে এসেছেন কেনো? ”
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি বাকা হাসি দিয়ে আরেকটু কাছে আসে। ফলে ইয়ানা পিছন দিক দিয়ে হেলে পড়ে। অগ্নি ইয়ানার বেবি হেয়ার গুলো কানের কাছে গুজে দিয়ে বলে,,,,,
” কেনো আমি কাছে আসতে পারি না? তুমি নিজেইতো বললে তুমি আমার তিন কবুল বলা বিয়ে করা বউ। আমার সবকিছুতে তোমার অধিকার আছে। এখন আমি একজন দায়িত্ববান স্বামী হিসেবে সেটা মেনে চলছি। বিয়ের চার দিন হতে চলল কিন্তু আমাদের বাসরটা এখন ও হলো না। বিষয়টা তোমার কাছে দৃষ্টিকটূ লাগছে না। ছেহহ লোকে শুনলে কি বলবে যে অগ্নি চৌধুরি এখন ও বাসর করতে পারে নি। নিজের বউকে আগলে রাখতে পারছে না। ”
অগ্নির কথা শুনে ইয়ানা ভয়ে ঢুক গিলে। হ্যা অগ্নি তার স্বামী তার সম্পূর্ন অধিকার আছে তার কাছে আসার কিন্তু আমি তো প্রস্তুত না। ইয়ানা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,,,,,

” লোকে কিছু বলবে না লোকে আর ও বাহবা দিবে আপনার ধৈর্য নিয়ে। আমার কোনো অধিকারের ও প্রয়োজন নেই শুধু একটু দুরে সরুন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে”
ইয়ানার এই অবস্থা দেখে অগ্নির প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসাটা ওর ধাঁচে নেই। ইয়ানাকে আরেকটু ঘায়েল করার জন্য অগ্নি নেশালো গলায় বলে,,,,,
” বুঝলে ইয়ানা আজ বাসরটা করেই ফেলব। আর তাছাড়া তুমি যখন এইসব অধিকার নিয়ে সামনে আসো তখন প্রচন্ড খারাপ লাগে। তুমি এত অধিকার দেখাও কিন্তু আমি নিজের অধিকারটা দেখাই না এইটা ঠিক বলো? বুঝতেই পারছো আমার প্রথম বাসর তাই আমি খুব এক্সাইটেড। তাহলে শুরু করি কি বলো?

ইয়ানা অগ্নির কথা শুনে একদম শান্ত হয়ে পড়ে। হঠাৎ মাথায় কিছু একটা আসতেই চোখ বন্ধ করে অগ্নির মেইন পয়েন্টে ঘুসি মারে। আকস্মিক আঘাতে অগ্নি ব্যাথায় নাক মুখ কুচকে ফেলে। এরপর ইয়ানার উপর থেকে সরে গিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।
ইয়ানার যেনো এতক্ষনে প্রান ফিরে এলো। আর একটু সময় থাকলে নির্ঘাত হার্ট আ্যাটাক করত। বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস টানে। হঠাৎ অগ্নির দিকে তাকাতেই ভড়কে যায়। নিজের কাজের কথা মাথায় আসতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ভুল জায়গায় ভুল জিনিস প্রয়োগ করেছে ।
ইয়ানা ভয়ে শুকনো ঢুক গিলে বলে,,,,,
” সরি সরি আমি বুঝতে পারে নি। বেশি ব্যাথা পেয়েছেন? ”
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নি রেগে ওর দিকে তাকায় । মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে কাচা চিবিয়ে খাবে। রাগে ওর পুরো শরীর কাঁপছে। এখন এসে জিজ্ঞাসা করছে ব্যাথা পেয়েছি কি না?
নিজের রাগের খেই হারিয়ে ধমক দিয়ে বলে,,,,,
” যাস্ট সেট আপ স্টুপিড গার্ল। বুদ্ধি কি হাটুর নিচে নিয়ে ঘুরো। নিজের হাতে নিজের ভবিষ্যত প্রজন্ম অন্ধকার করতে চাইছো?”

আপাযত অগ্নির কোনো কথা মাথায় ডুকছে না। মূলত সে ভয় পাচ্ছে। ফর্সা হওয়ার কারনে অগ্নির পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।
ইয়ানা — আমি ইচ্ছে করে দেই নি। কিভাবে হয়ে গেছে বুঝতে পারি নি স্যার বিশ্বাস করুন। আমার ফ্রেন্ড তারা বলেছে কোনো ছেলে যদি তর ইজ্জতের উপর হাত বাড়ায় তাহলে মাঝ বরাবর আঘাত করবি দেখবি সেই ছেলের শক্তি সেখানেই শেষ। আমি তো যাস্ট সেটা কাজে লাগাচ্ছিলাম।
ইয়ানার কথা শুনে অগ্নির চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।
অগ্নি —- আমি তোমার ইজ্জতের দিকে হাত বাড়িয়েছিলাম লাইক সিরিয়াসলি ইয়ানা ? আমি তোমার লিগ্যালি হাজবেন্ড ইডিয়েট। আমি তোমার সাথে মজা করছিলাম শুধু আহাম্মক মেয়ে।
ইয়ানা — আমি জানতাম নাকি আপনি মজা করছিলেন। সে যাই হোক যা হওয়ার হয়ে গেছে আসুন মলম লাগিয়ে দেই ব্যাথা কমে যাবে।

নিজের কথা শেষ করে নিজেই চোখ বড় বড় করে ফেলে।
এরপর মুখে হাত রেখে বলে,,,, সরি সরি ভুলে বলে ফেলেছি এই নিন আপনি লাগিয়ে নিন।
অগ্নি ইয়ানার দিকে কটমট চোখে তাকায়। ইয়ানা মলম এগিয়ে দিতেই অগ্নি হেচকা টানে বিছানায় ফেলে দেয় এরপর ড্র‍য়ার থেকে হ্যান্ডকাফ বের করে ইয়ানার দুই হাত বেধে দেয়।
অগ্নির এহেন কান্ডে ইয়ানা ভড়কে যায়। কি করতে চাইছে এই লোক? ইয়ানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি ইয়ানার মুখে কস্টিপ দিয়ে দেয়।

এরপর অগ্নি বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়। মুখে লেগে আছে একটা বাকা হাসি।
ইয়ানা পা ছুড়াছুঁড়ি করে শুধু মুখ দিয়ে উমম উমম শব্দ করছে। ইয়ানার দিকে তাকিয়ে অগ্নি বলে,,,,,
” এইভাবে শব্দ করো না সুইটহার্ট লোকে শুনলে অন্য কিছু ভাববে। কিন্তু আমি তো জেন্টাল বয়। তোমার অপকর্মের শাস্তি এইটা। এইভাবে সারারাত থাকো। গুড নাইট সুইটহার্ট।
ইয়ানা অসহায় চোখ নিয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। অগ্নি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইয়ানার পাশে শুয়ে পড়ে।
ইয়ানার ইচ্ছে করছে অগ্নিকে চিবিয়ে খেতে। কেমন অসভ্য ভুলে না হয় ভুল যায়গায় আঘাত করে ফেলেছে তাই বলে এইভাবে বেধে রাখবে।
ইয়ানা মুচড়ামুচড়ি করতে থাকে হ্যান্ডকাফ খোলার জন্য।
ইয়ানার অস্থিরতা দেখে অগ্নি ঘুম ঘুম চোখে বলে,,,,,

” এমন করো না সুইটহার্ট আমার ঘুমের ডিস্ট্রাব হচ্ছে। ”
ইয়ানা দাত কিড়মিড়িয়ে অগ্নির দিকে তাকায়। শালা দানবের দানব এইভাবে বেধে রেখে বলে নড়াচড়া কম করতে । বের করছি তর ঘুম। এরপর ইয়ানা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে নড়তে থাকে।
অগ্নি শুয়া থেকে উঠে ইয়ানার দিকে ঝুকে বলে,,,,,
” কি সমস্যা ঘুমাতে দিবেন না আমাকে? বুঝে শুনে কাজ করবেন মিসেস অগ্নি চৌধুরি । আমি ঘুমাতে না পারলে বাকিটা সামথিং সামথিং। তাই চুপচাপ নিজেও ঘুমান আর আমাকে ও ঘুমাতে দিন।
অগ্নির মুখে মিসেস অগ্নি চৌধুরি সম্মোধন শুনে ইয়ানা স্তব্ধ হয়ে যায়। এই ডাকটার মধ্যে মনে হচ্ছে হাজারটা মায়া মিশ্রিত।

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৬

কিছুক্ষন পর ইয়ানা অপলক দৃষ্টিতে অগ্নির ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকায়। অজান্তেই ধীরে ধীরে এক অদৃশ্য মায়া জন্মাতে থাকে। এই মুখশ্রী কি সত্যি এতটা শান্ত? নাকি মুখশের আড়ালে আরেকটা মুখশ্রী আছে যা ইয়ানার অজানা। এই লোকটা ইয়ানার রন্ধ্রে গন্ধে মিশে যাচ্ছে কেনো এইভাবে? তবে কি এইটা স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্কের এক অশেষ রহমত। ভালোবেসে ঠকে যাবে নাতো আবার?

অনুভবে তুমি সিজন ২ পর্ব ৮