অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১২
সাদিয়া শওকত বাবলি
এগিয়ে এসে ত্রয়ীর হাত থেকে টেনে নিল বইটি। অতঃপর নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“কি সব বই পড়ছিল? তুই পড়বি জীববিদ্যা নয়তো শারীরিক শিক্ষা। তা না এসব ছাইপাশ পড়ছিস।”
ত্রয়ীর ভিতরটা লাজে হাঁসফাঁস করে উঠল। এই লোক কি লাজ লজ্জা সব ঢাকায় রেখে তারপরে বরিশালে এসেছেন? মেয়েটা টান মে’রে বইটা নিয়ে নিল শীর্ষের হাত থেকে। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“আমি জীববিদ্যার ছাত্রী নই, আর শারীরিক শিক্ষারও ছাত্রী নই।”
শীর্ষ কপাল টানটান করল। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
“তাও তো ঠিক। যাক ব্যাপার না। তুই একদম চিন্তা করিস না। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমি তোকে জীববিদ্যা, শারীরিক শিক্ষা সব শিখিয়ে দেব।”
ত্রয়ী দাঁতে দাঁত পিষলো। কটমট করে বলল,
“আপনার আমাকে এসব ছাইপাশ শেখাতে হবে না। আপনি দয়া করে এই রুম থেকে এখন যান। আমার থেকে দূরে সরুন। আমাকে একটু শান্তি দিন।”
শীর্ষ এবার ত্রয়ীর চেয়ারটা টেনে ঘুরিয়ে নিল নিজের দিকে। হাঁটু গেড়ে বসলো তার অভিমুখে। বাঁকা হেসে বলল,
“দূরে সরবো কি? এখন তো আরও কাছে আসতে হবে। নয়তো ছয় বছরে ছয়টা বাচ্চা নেব কিভাবে? এখন এক সেকেন্ড অপচয় করা মানেও আমার বাচ্চাদের পৃথিবীতে আসতে এক সেকেন্ড দেরি।”
“দেখুন আপনি কিন্তু এখন বেশি করছেন। আপনি আমার রুম থেকে যাবেন নাকি?”
“যাব না। কি করবি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ত্রয়ীর হৃদয়ে ক্রোধের রাজ। ফোঁস ফোঁস করে কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলল সে। শীর্ষকে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। একে কিছু বলে লাভ আছে কি? উলটো সে এক বললে শীর্ষ বলতে তিন। তার থেকে তারই এখান থেকে চলে যাওয়া ভালো। সে চলে গেলে দেখা যাবে তার পিছু পিছু শীর্ষও এ কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। ত্রয়ী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। কোনোরূপ বাক্যব্যয় ব্যতীতই হনহন করে বেরিয়ে গেল কক্ষ ছেড়ে। শীর্ষ প্রথমে একটু ভরকে গেলেও পরক্ষণেই আবার সামলে নিল নিজেকে। ত্রয়ীর পিছু পিছু পা বাড়াতে বাড়াতে বলল,
“আরে, আরে কোথায় যাচ্ছিস? স্বামীকে এভাবে কক্ষে একা ফেলে গেলে তোর গায়ে পা’প লাগবে পা’প।”
রাত্রি কিছুটা উর্দ্ধে। শীর্ষরা কেবল রাতের খাবারের পাঠ চুকিয়ে এসে প্রবেশ করল তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে। গত কয়েকদিন এ কক্ষে শীর্ষ, রবি এবং আলভী তিন জন একসাথে ঘুমালেও আজ ঘুমাবে শীর্ষ এবং আলভী দুজন। নয়ন আসার পর তাদের জন্য আরও একটি কক্ষ দেওয়া হয়েছে। তাই আর এক কক্ষে তিনজন না থেকে দুইজন দুইজন করে থাকবে বলে ঠিক করেছে তারা।
কক্ষে প্রবেশ করেই আলভী ওয়াশরুমের দিকে গেল। আর শীর্ষ বসলো বিছানায়। তখনই তাদের কক্ষের দরজায় টোকা পড়ল। সাথে আবার ভেসে এলো তামিমের গলা,
“আসবো?”
প্রায় সাথে সাথেই শীর্ষ জবাব দিল,
“আসুন।”
তামিম দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। এগিয়ে গিয়ে শীর্ষের পাশে বসতে বসতে বলল,
“কি অবস্থা আপনাদের? এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো? আমিও অসুস্থ মানুষ। ঠিকভাবে আপনাদের তদারকিও করতে পারছি না।”
“আরে, এভাবে বলবেন না। আমাদের এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। আর তাদারকির কথা বলছেন? আপনি তদারকি করতে না পারলেও আপনার বাড়ির লোক করছেন। তাদের আপ্যায়নে আমরা আপ্লুত। উলটো আমরা আরও এতদিন থেকে বোধ হয় আপনাদের বিরক্ত করেছি।”
“কিসব যে বলেন! আমরা মোটেও বিরক্ত হচ্ছি না। উলটো আপনাদের আপ্যায়ন করতে পেরে আমরা আরও খুশি। আপনারা আমার জীবন বাঁচিয়েছেন। আপনাদের কাছে আমি সারাজীবনের জন্য ঋনী।”
“এসব ঋনী টিনি বলে দয়া করে নিজেকে ছোট করবেন না। আমরা শুধুমাত্র আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। এ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। দম ফেলে ফের বলল,
“তবে একটা কথা….”
“কি?”
শীর্ষ ইতস্তত শুরু করল। আমতা আমতা করে বলল,
“বিষয়টা ঠিক আপনি কিভাবে নিবেন আমি জানি না। তবে আমাদের মনে হয় আরও কিছুদিন আপনাদের বাড়িতে থাকা হবে। আসলে একটা কাজে ফেঁ’সে গিয়েছি। নয়তো সেই কবেই চলে যেতাম। আর এমন ভাবে ফে’সে’ছি যে কাজটা সম্পূর্ণ না করেও যেতে পারছি না।”
“এতে এতটা ইতস্তত করার কি আছে? আমরা কি আপনাদের যেতে বলেছি নাকি? আপনারা যতদিন খুশি এখানে থাকুন। সমস্যা নেই।”
শীর্ষ ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“আচ্ছা।”
তামিমও শীর্ষের সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো একটু খানি। এরপর স্বল্প সময় নিয়ে বলল,
“একটা কথা ছিল আপনার সাথে।”
“বলুন।”
“আপনি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তরটা দিলেন না। আমার বোনের ছবি আপনার মোবাইলে কিভাবে গেল বললেন না।”
শীর্ষ তামিমের কথার উত্তর দিল না। বরং উলটো প্রশ্ন করল,
“ত্রয়ী কি আপনার আপন বোন?”
তামিম চুপ করে রইল। কি উত্তর দিবে সে? ত্রয়ী তো তার আপন বোন নয়। ধরতে গেলে তার সাথে কোনো রক্তের সম্পর্কও নেই মেয়েটির। ত্রয়ী তার সৎ মায়ের আগের স্বামীর সন্তান। তামিমকে চুপ করে থাকতে দেখে শীর্ষ বলল,
“আমার জানা মতে ত্রয়ীর কোনো ভাই-বোন নেই। ওর বাবা ওকে ছোট রেখেই সড়ক দুর্ঘটনায় মা’রা গিয়েছেন। মা-ও অন্যত্র বিয়ে করে চলে গেছেন।”
তামিম অবাক হলো। ত্রয়ীর সম্পর্কে এই লোক এতকিছু জানে কিভাবে? তবে কি শীর্ষ আগে থেকেই ত্রয়ীকে চিনে? তামিম অবাক কণ্ঠেই শুধাল,
“আপনি ত্রয়ীকে আগে থেকেই চিনেন?”
“হ্যা, খুব ভালো করেই চিনি।”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। একটু সময় নিয়ে ফের বলল,
“আমি জানি না ত্রয়ীকে আপনারা কোথায়, কি অবস্থায় এবং কিভাবে পেয়েছেন। তবে আপনাদের কাছে আসার পূর্বে মেয়েটি আমার কাছে ছিল, আমার সুখ হয়ে ছিল। এরপর আমার অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুলে মেয়েটির নিকট মস্ত বড়ো এক অপরাধী হয়ে উঠলাম। সে আমাকে ছেড়ে এলো।”
এই টুকু বলে থামল শীর্ষ। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“যাক, সে ব্যাখ্যায় আমি আপাতত না হয় নাই গেলাম। কারণ সে ব্যাখ্যায় যেতে গেলে আমি, আমার পরিবার এবং আমার সাথে ত্রয়ীর সম্পর্ক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসবে। আমি এখনই আপনাদের অভিমুখে সবটা বলার জন্য প্রস্তুত নই। আমাকে আর দুটো দিন সময় দিন তারপরে শুধু আপনি নন, আপনার পরিবারের সকলের অভিমুখে দাঁড়িয়েই আমি সবটা ব্যাখ্যা করব।”
তামিম চুপচাপ শুনলো সবটা এবং বুঝলো শীর্ষের সাথে ত্রয়ীর কোনো গভীর সম্পর্ক ছিল। থাকতেও পারে। তারা তো আর ত্রয়ীর অতীত সম্পর্কে তেমন কিছু জানে না। আর কখনো জিজ্ঞেসও করেনি। হতে পারে শীর্ষের কথাগুলোই সত্যি। তাদের কাছে আসার পূর্বে ত্রয়ী শীর্ষের কাছেই ছিল। তামিম বিচক্ষণ এবং বুঝদার মানুষ। সে আর শীর্ষকে এ বিষয় নিয়ে জোরজবরদস্তি করল না। ছেলেটা যখন দুই একদিন সময় চাইছে তখন সময়টা দেওয়া উচিত। তাছাড়া তামিম শীর্ষকে যতদূর চিনেছে তাতে লোকটা ভালো বেশ। তার দ্বারা ত্রয়ীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। আর শীর্ষকে বোধ হয় এখন তার এবং ত্রয়ীর সম্পর্কের সমীকরণ এবং মেয়েটাকে কোথায় কিভাবে পেয়েছে বলে দেওয়া উচিত। লুকিয়ে রেখে কি লাভ? শীর্ষের কথা যদি সত্যি হয়, ত্রয়ীর সাথে যদি তার কোনো সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে এমনিই জেনে যাবে। সুতরাং আগেভাগে সবটা বলে দেওয়টা শ্রেয়। এতে শীর্ষ এবং তার মধ্যে বোঝাপড়াটাও ভালো হবে। তামিম একটু সময় নিল। অতঃপর আস্তে ধীরে বলতে লাগল,
“আপনারা যাকে আমার মা হিসেবে জানেন অর্থাৎ আলেয়া বেগম। তিনি আসলে আমার আপন মা নন, সৎ মা। ত্রয়ী তার সন্তান। আমার মা মা’রা যাওয়ার পর বাবা ত্রয়ীর মাকে বিয়ে করে এনেছিলেন। সেই থেকে উনিই আমার লালন -পালন, দেখাশোনা করছেন।”
এই টুকু বলে থামল তামিম। ছোট একটা নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করল সেদিন রাতের সব ঘটনা। ত্রয়ীকে তারা কোথায়, কিভাবে পেয়েছিল, কিভাবে এখানে এনেছে সবটা। শীর্ষ মনযোগ দিয়ে শুনলো তামিমের কথাগুলো। এখন তার নিকট সব পরিস্কার। যাক মেয়েটা অন্তত একটা ভালো কাজ করেছে। তার কাছে ফিরে না গেলেও নিজের মা-কে তো কল করেছে। নয়তো ঐ রাতে তার সাথে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারতো। ঐ রাতে যদি ত্রয়ী আলেয়া বেগমকে কল না করতো আর তারা গিয়ে মেয়েটাকে উদ্ধার না করতো তবে আজ বোধহয় শীর্ষ ত্রয়ীকে খুঁজেই পেতো না। সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতো। শীর্ষ দুই হাতে ধরল তামিমের দুই হাত। কৃতজ্ঞতার স্বরে বলল,
“আপনারা যে আমার কত বড়ো উপকার করেছেন তা আপনারা নিজেরাও জানে না। আপনাদের নিকট আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”
সকালের সময়। চারদিকটা সূর্যের উজ্জ্বল আলোয় ভরে উঠেছে। মেহের একদম কলেজের জন্য তৈরি হয়ে বেরিয়েছে নিজ কক্ষ থেকে। তবে নিচে নেমেই বসার কক্ষে সে দেখা পেল কিছু জনমানবের। তার বাবাও বসে আছে সেখানে। হয়তো লোকগুলো তার বাবার কাছে কোনো কাজের এর জন্য এসেছে। এমন প্রায়ই আসে। মেহের ততটা পাত্তা দিল না। কলেজ ব্যাগটা কাঁধে নিয়েই বসার কক্ষ থেকে হেঁটে যাচ্ছিল। এরমধ্যে হঠাৎ তার কানে একটি বাক্য এসে বারি খেল,
“এ মাসে কর্মচারীদের বেতন অর্ধেক দিবে। আর কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলবে এ মাসে বাজারে প্রডাক্ট তেমন চলেনি। অনেক লসে পড়তে হয়েছে। তাই শ্রমিকদের বেতনও কম দেওয়া হয়েছে।”
কথাটা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে উঠে একজন বলল,
“কিন্তু, স্যার। এ মাসে তো আমাদের কোনো লস হয়নি। উলটো আরও লাভ হয়েছে।”
“তা আমরা জানি। ওরা তো জানে না। আমরা ওদের যা বুঝাবো ওরা তাই বুঝবে।”
সরোয়ার চৌধুরীর কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে অন্য আরেকজন বলল,
“শুধু শুধু এদের বেতন আটকে রেখে লাভ কি? আজ না হোক কাল এদের সম্পূর্ণ বেতন তো পরিশোধ করতেই হবে। তার থেকে এ মাসেই দিয়ে দিন। পরে তো এদের মাসিক বেতন আবার এই বকেয়া বেতন মিলে অনেক টাকা হবে।”
সরোয়ার চৌধুরী হাসলেন। ওষ্ঠ বাঁকিয়ে বললেন,
“ওদের এই বকেয়া বেতন পরিশোধ করব তোমাকে কে বলল? সময় আসতে দাও তখন দেখো কি করি। যাই হোক, এ কাজের জন্য তোমরাও বকশিশ পাবে। আমার সঙ্গ দেওয়ার জন্য তোমাদের খালি হাত ফেরাবো না।”
বকশিশের কথা শুনে চোখ মুখ চকচক করে উঠল উপস্থিত সকলের। তারা আর কেউ সরোয়ার চৌধুরীর কথার উপরে কোনো প্রতিবাদ করল না। তবে পা জোড়া থেমে গেল মেহেরের। নিজের কানকে এই মুহূর্তে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। এই মাত্র এই কথাগুলো তার বাবাই বলল তো নাকি অন্য কেউ? তার বাবা এইভাবে তাদেরই কারখানার শ্রমিকদের হক মে’রে খায়? এ তার বাবার কেমন রূপ? তবে কি আলভীই সত্যিই বলেছিল? তার বাবা তাদের সামনে যেভাবে থাকে আসলে সে তেমন নয়। সে দুর্নীতিগ্রস্ত, ঠক, প্রতারক। মেহেরের পা জোড়া আর চলতে চাইল না। লজ্জায়, ঘৃণা এবং অবিশ্বাসের দাপটে কাঁপন ধরল পুরো শরীরে।
আকাশে স্থান পাওয়া সূর্যটা তার তেজ বাড়িয়েছে আরও। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চারদিকের ব্যস্ততা। শিলা একা একা বসে রয়েছে তাদেরই কলেজ ক্যাম্পাসে। অপেক্ষা রিমার আসার। মেয়েটাকে বলেছিল শীর্ষকে তার ভালোবাসার কথা জানাতে। জানিয়েছে কিনা কে জানে। শিলার ভাবনার মধ্যেই সে অনুভব করল কেউ এসে বসেছে তার পাশে। পাশ ফিরে রিমাকে আবিষ্কার করতেই আনন্দিত হলো সে। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
“তুই এসেছিস? আমি সেই কখন থেকে তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”
রিমা আলতো হাসলো। মাথা নাড়িয়ে জবাব দিল,
“আজ একটু দেরি হয়ে গেল। রাস্তায় যা জ্যাম। তা তোর কি অবস্থা? কেমন আছিস?”
“এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তোর?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
একটু বলে থামল শিলা। কিছুটা ইতস্তত করে শুধাল,
“শীর্ষ ভাইয়াকে বলেছিলি আমার কথা?”
রিমা কিছুটা দোটানায় পড়ল। শীর্ষকে তো সে অবশ্যই শিলার কথা বলেছে কিন্তু তার ভাই যে এখনো ত্রয়ীর জন্যই পা’গ’ল। শিলার বিষয়ে কোনো কথা শুনতেই সে নারাজ। এই কথাগুলো এখন সে শিলাকে কিভাবে বলবে? বললে দেখা যাবে শিলা কষ্ট পাবে। আবার না বললেও তো ঝামেলা। শিলা শীর্ষের আশায় বুক বেঁধে থাকবে। তাকে এক তরফা ভালোবেসে যাবে। যাক, তার বলার কাজ বলে দিক। পরে যা হবার হবে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল রিমা। এরপর বলল,
“বলেছিলাম। কিন্তু শীর্ষ ভাই এখনো ত্রয়ীর জন্যই পা’গ’ল। সে তোর বিষয়ে কোনো কথাই শুনতে চায় না। আমি বলি কি শিলা, তুই শীর্ষ ভাইয়াকে ভুলে যা। শুধু শুধু তার পিছনে পড়ে থেকে আর কি লাভ? তাছাড়া শীর্ষ ভাইয়ার সাথে ত্রয়ীর বিয়ে হয়েছে।”
“তুই-ই তো বলেছিলি তোরা ত্রয়ীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিস। এখন আর শীর্ষ ভাইয়ের সাথে ওর সম্পর্ক নেই। শীর্ষ ভাইকে আমি পেলেও পেতে পারি।”
“তা বলেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি সে এখনো ঐ মেয়েটার জন্যই পা’গ’ল। ঐ মেয়েটাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। দেখ শিলা, কারো মনের উপরে তো আমাদের হাত নেই। আর শীর্ষ ভাইয়ার তোকে ভালোবাসে না। তুই তাকে ভুলে যা।”
‘ভুলে যা’ বললেই কি সব ভোলা সম্ভব নাকি? আর যদি শীর্ষকে সে ভুলেই যাবে তাহলে রিমার সাথে বন্ধুত্বটা কেন করল? ক্রোধে শরীরটা রি রি করে উঠল শিলার। এর মধ্যেই রিমা শুধাল,
“তুই আমার বিষয়টা সাহেদ স্যারকে বলবি কবে?”
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১১
শিলার ক্রোধ যেন আরও বাড়লো। এই মেয়েটা শীর্ষকে তাকে পাইয়ে দিতে পারল না অথচ এখন বলছে সাহেদের কাছে তার ভালোবাসার কথা বলে দিতে। শিলা যদি তার ভালোবাসার মানুষকে না পায় তবে রিমা কেন পাবে? ভালোবাসার মানুষকে না পেয়ে শিলাকে যদি কাঁদতে হয়, কষ্ট পেতে হয়। তবে সে কষ্ট রিমাকেও পেতে হবে। কারণ রিমাই তো এতদিন শীর্ষকে নিয়ে তাকে ভরসা দিয়ে এসেছে। একমাত্র রিমার ভরসাতেই সে এতদূর এগিয়েছে। নয়তো এতটাও এগুতো না। শিলা চোখ মুখ শক্ত করল। কণ্ঠে কাঠিন্য এটে বলল,
“আমি কাউকে কিছু বলতে পারব না।”