অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৪
সাদিয়া শওকত বাবলি
ত্রয়ী চোখ বড়ো বড়ো করল। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
“সত্যি সত্যি আপনার মাথায় গু* এসে পড়ল?”
শীর্ষের গা ঘিন ঘিন করে উঠল। শেষে কিনা পাখিতে কাজ সেড়ে দিয়েছে তার মাথায়? ইসসস, কি বিশ্রী অভিজ্ঞতা! শীর্ষের নাক মুখ কুঁচকে এলো। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“বালির বস্তার বাচ্চা!”
ত্রয়ী নিজেই তো হতবাক এহেন ঘটনায়। তবে তা সে প্রকাশ করল না। বরং ভাব নিয়ে বলল,
“দেখেছেন বলেছিলাম না, বত্রিশটা দাঁত আমার মুখে। এ মুখ থেকে দেওয়া অভি’শাপ বিফলে যাওয়ার চান্স খুবই কম।”
“বত্রিশটা দাঁত তাই? দাঁড়া তুই…..”
কথাটা বলে শীর্ষ ব্যস্ত হয়ে তাকাল আশেপাশে। চোখে পড়লো রাস্তার ধারে একটি ভাঙা ইটের টুকরোর দিকে। শীর্ষ হন্তদন্ত হয়ে হাতে তুলে নিল সেটা। ত্রয়ীর দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
“আয়, এই ইট দিয়ে টাক মে’রে তোর সব দাঁত ফেলে দেই। যে দাঁতের জন্য আমার গায়ে অভিশাপ লাগবে, আমার মাথায় গু* পড়বে। সেই দাঁতই আমি রাখব না।”
ত্রয়ী আঁতকে উঠল। দ্রুত সরে গেল পিছনের দিকে। শীর্ষ যা ছেলে তাতে এই ইট দিয়ে টাক মে’রে তার দাঁত ফেলেও দিতে পারে। ত্রয়ী আমতা আমতা শুরু করল। এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“শুধু কি আমার দাঁতের দোষ? আপনার চুলের দোষও আছে। মেয়েদের মতো লম্বা লম্বা চুল রেখেছেন। সেগুলো আবার উসকোখুসকো। পাখি তো নিজের বাসা ভেবে প’টি করে চলে গেছে।”
এই টুকু বলে থামল ত্রয়ী। মুখ বাঁকিয়ে ফেল বলল,
“চুল দাঁড়িতেই চোখ মুখ ঢেকে গেছে। মনে হচ্ছে যেন কোনো পাগল পাখির বাসা মাথায় নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজকে তো পাখি মাথায় প’টি করে গেছে। দুইদিন পর দেখা যাবে মানুষ পাগল ভেবে পাগলা গারদে নিয়ে যাচ্ছে।”
কথাগুলো বলে আর এক মুহূর্তও দাঁড়াল না ত্রয়ী। যত্রতত্র পায়ে চলে গেল কলেজের দিকে। এখন এখানে থাকা মানেই বিপদ। সে যা বলেছে তাতে শীর্ষ যেকোনো সময় ঐ ইট দিয়ে তার মাথা ফাটিয়ে দিতে পারে। তবে এবার আর শীর্ষ গেল না ত্রয়ীর পিছু পিছু, দাঁড়িয়ে রইল ওখানেই। হাত বুলালো চুল দাঁড়িতে। সত্যিই তার চুল দাঁড়ি গুলো একটু বেশিই বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। এতদিন হন্যে হয়ে ত্রয়ীকে খুঁজতে খুঁজতে, তার কথা ভাবতে ভাবতে এগুলো কাঁটা হয়নি। সত্যি বলতে কাটাতেও ইচ্ছা হয়নি। তবে এখন এগুলো কাঁটা প্রয়োজন। অন্তত ত্রয়ীর নিকট নিজের সুদর্শনতা জহির করতে হলেও চুল দাঁড়িগুলো কাটা প্রয়োজন।
রিমার সাথে ঝগড়ার পর থেকেই শিলা অপেক্ষায় আছে সাহেদের। সাহেদ কলেজে আসার সংবাদ তার কর্ণে পৌঁছাতেই ছুটে গেল সাহেদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষের দিকে। দরজার নিকটে দাঁড়িয়ে শুধাল,
“স্যার, আসবো?”
সাহেদ নিজের টেবিলে বসে কি যেন কাজ করছিল। শিলার গলা পেয়ে একবার চোখ তুলে তাকাল সে। ফের আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিতে দিতে বলল,
“এসো।”
শিলা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল সাহেদের টেবিলের নিকটে। একটু সময় নিয়ে বলল,
“আপনার সাথে কিছু কথা ছিল, স্যার।”
“বলো।”
শিলা এলোমেলো দৃষ্টি ফেলল। ইতস্তত করে বলল,
“আসলে কথাটা কিভাবে বলব বুঝতে পারছি না। আর আপনিও কি না কি মনে করেন।”
সাহেদ নিজের কাজ থামিয়ে ফের তাকাল শিলার দিকে। অভয় দিয়ে বলল,
“তুমি নিসংকোচে বলো। সমস্যা নেই।”
শিলা মনে মনে হাসলো। তবে চোখে মুখে একটা ইতস্তত ভঙ্গি নিয়েই বলল,
“আমার বান্ধবী আছে না রিমা, ও আপনাকে পছন্দ করে। অবশ্য পছন্দ বললেও ভুল হবে, ওর ভিতরে আপনাকে নিয়ে জেদ কাজ করে।”
সাহেদ প্রথমে অবাক হলো শিলার কথা শুনে। এর মানে রিমাও তাকে পছন্দ করে। তবে পরক্ষণেই আবার মেয়েটা কি বলল? রিমার ভিতরে তাকে নিয়ে জেদ কাজ করে? এই কথার মানে কি? সাহেদের ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো। কপালে ভাঁজ ফেলে সে শুধাল,
“মানে?”
“মানে ওর ভিতরে আপনাকে ভালোবাসা, চাওয়া বা নিজের করে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার তুলনায় আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার আকাঙ্ক্ষা অধিক। ওদের বাড়িতে একটা মেয়ে থাকতো না ত্রয়ী….”
“হ্যা, শুনেছি মেয়েটা নাকি এখন চলে গেছে।”
“না, স্যার মেয়েটা চলে যায়নি। ওকে রিমা আর রিমার মা মিলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে শুধু আপনার জন্য।”
সাহেদ বিস্মিত হলো। হতবাক কণ্ঠে শুধাল,
“আমার জন্য!”
“হ্যা। আপনি তো প্রায়ই ত্রয়ীর সাথে কথা বলতেন। এটা রিমার সহ্য হতো না। ও চাইতো আপনি শুধু ওর সাথেই কথা বলুন, ওকেই দেখুন। এ বিষয় নিয়ে ত্রয়ীর প্রতি ওর একটা ক্ষোভ ছিল। সারাদিন উঠতে বসতে মেয়েটাকে অপমান করতো। এর মধ্যে আবার জানতে পারল ওর ভাইয়ের সাথে ত্রয়ীর একটা সম্পর্ক আছে। দুই মিলিয়ে ত্রয়ীর প্রতি ওর ক্ষোভ আরও বাড়লো এবং মেয়েটার বিরুদ্ধে ওর মাকেও খ্যাপিয়ে তুলল। তারপর দুজন মিলে মেয়েটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল।”
এই টুকু বলে থামল শিলা। চোখে মুখে বিষন্ন ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,
“বাবা মা হীন মেয়েটা। চার কূলে কেউ নেই। তারপর ততটা চটপটে কিংবা স্বভাবেরও না ত্রয়ী। সেই মেয়েটাকে বাড়ি একা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ও আর ওর মা মিলে। মেয়েটা কোথায় আছে, কিভাবে আছে নাকি ম’রে গেছে কেউ জানে না। শীর্ষ ভাই সেই ছয় মাস ধরে মেয়েটাকে খুঁজছেন কিন্তু কোথাও পাচ্ছেন না।”
সাহেদ মনোযোগ দিয়ে শুনলো সবটা। ভিতরে ভিতরে বিস্ময়ের চূড়ান্তে পৌঁছে গেল সে। রিমা এরকম মেয়ে! আর সে এরকম একটা মেয়েকে এক সময় ভালোবেসেছিল? যদিও মেয়েটার প্রতি এখনো কিছুটা দুর্বলতা তার রয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকের এসব শুনে দুর্বলতা তো দূরে থাক ঘৃণা হচ্ছে। সাথে নিজেকেও অপরাধী মনে হচ্ছে ভীষণ। আজ তার জন্যই ঐ অসহায়, বাবা-মা হীন নরম মেয়েটা বাড়ি ছাড়া। সে যদি রিমার জন্য বারবার ত্রয়ীর সাথে কথা বলতে না যেতো তবে রিমার বোধ হয় মেয়েটার প্রতি এতটাও ক্ষোভ জন্মাতো না। এখন মেয়েটা কোথায় আছে, কেমন আছে, কোনো বিপদে আপদে পড়েছে কিনা তাও কারো জানা নেই। আজ তার জন্যই হয়তো ত্রয়ী নামক ফুটফুটে অসহায় একটা মেয়ের জীবনটা শেষ হয়ে গেল।
শিলা সাহেদের মুখাবয়ব দেখে বুঝে নিল তার ভিতরটা। মনে মনে বিস্ব জয়ের হাসি হাসলো সে। রিমার নামে আজকে যা যা সে বলল তারপর আর সাহেদের ঐ মেয়েকে পছন্দ করা বা ভালোবাসার কোনো প্রশ্নই আসে না। অবশ্য সে মিথ্যাও তো কিছু বলেনি। যা বলেছে সবটাই সত্যি। সত্যিই তো রিমা এমনটা করেছে। বিনা দোষে ত্রয়ীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।
মধ্যদুপুর। আকাশে সূর্যটা তার আলো ছড়াচ্ছে তেজ নিয়ে। রবি একা একা শুয়ে আছে বিছানায়। শীর্ষ সেই যে সকালে ত্রয়ীর পিছু পিছু বেরিয়েছে এখনো ফিরনি। নয়ন আর আলভীও কোথায় যেন বেরিয়েছে। কক্ষে রবির একা উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তৃপ্তি এসে দাঁড়াল দরজার অভিমুখে। সকালের ঐ ঘটনার পর সেও কলেজে যায়নি। তৃপ্তি হাত উঁচিয়ে দরজায় টোকা দিল। গলা বাড়িয়ে বলল,
“আসবো?”
রবি বিছানায় উঠে বসলো। থমথমে কণ্ঠে জবাব দিল,
“এসো।”
তৃপ্তি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। রবি পূর্বের ন্যায়ই গম্ভীরতা ধরে রেখে শুধাল,
“কি চাই?”
তৃপ্তি মাথা নুইয়ে নিল। আমতা আমতা করে বলল,
“দুঃখিত।”
“কেন?”
“সকালে আপনার সামনে পা দেওয়ার জন্য। আমি পা না দিলে আপনিও পড়ে যেতেন না আর ব্যথাও পেতেন না।”
“এখন অনুতপ্ত?”
“হুম।”
“যদি আমি মাফ না করি।”
তৃপ্তি ছলছল নয়নে তাকাল। রবি ভরকে গেল। ব্যস্ত হয়ে বলল,
“আরে আরে কাঁদছো কেন? আমি তো তোমার সাথে মজা করছিলাম।”
তৃপ্তি নাক টানলো। ফের মাথা নুইয়ে বলল,
“আমি আসলেই বুঝতে পারিনি ঘটনাটা রক্তারক্তি পর্যন্ত গড়াবে। আমার সত্যিই এখন ভীষণ খারাপ লাগছে, কান্না পাচ্ছে। আমি অনুতপ্ত।”
রবির মায়া হলো মেয়েটার প্রতি। তাছাড়া এভাবে একটা মেয়েকে কাঁদাতেও ইচ্ছে হলো না তার। রবি নরম গলায়ই বলল,
“আচ্ছা কাঁদতে হবে না। আমি তোমাকে মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু এমনটা আর কখনো করবে না। শুধু আমার না কারো ক্ষেত্রেই এমনটা করবে না।”
“আচ্ছা।”
রাত্রি খুব বেশি নয়। ঘড়ির কাঁটায় টিক টিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত কেবল দশটা। কিন্তু মফস্বলে এই টুকু রাতেই চারদিকটা নীরব হয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে যেন মধ্যরাত এখন। ত্রয়ী নিজের খাওয়া দাওয়া শেষে মা চাচীদের সাথে সবকিছু গুছিয়ে তবেই কক্ষে এলো। কক্ষে প্রবেশ করে দরজাটা আটকে পিছন ঘুরতেই চোখে পড়ল শীর্ষকে। লোকটা বেশ আঁটসাট বেঁধে বিছানায় বসে আছে। সাথে সাথে ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার। শীর্ষকে কেমন আগের তুলনায় পরিস্কার পরিস্কার দেখাচ্ছে। মাথায়ও আর আগের মতো সেই লম্বা চুল নেই, দাঁড়ি গুলোও ছোট ছোট। লোকটা কি চুল দাঁড়ি কেটে ফেলেছে? ত্রয়ী এগিয়ে এলো তার দিকে। ভ্রু যুগল কুঁচকে রেখেই শুধাল,
“কি ব্যাপার? পাখির বাসা হঠাৎ এমন পরিস্কার দেখাচ্ছে কেন?”
“তোর পছন্দ নয় বলে কেটে ফেলেছিল।”
“আপনি কিভাবে জানলেন আপনার লম্বা চুল দাঁড়ি আমার পছন্দ নয়?”
“তোর কথা শুনে।”
ত্রয়ী আর এ বিষয়ে কথা বাড়াল না। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“আপনি এখানে এই রাতে কি করছেন?”
“এলাম তোকে দেখতে, তোর সাথে একটু সময় কাটাতে।”
“আপনার মাথায় কি কিছু নেই? আপনাকে এই রাতে এখানে কেউ দেখে ফেললে কি হবে ভেবে দেখেছেন?”
শীর্ষ ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিল,
“কি হবে? আমি আমার বউয়ের কক্ষে এসেছি এখানে কার কি বলার আছে?”
“কিসের বউ? কার বউ? আমি এই বিয়ে মানি না।”
“তোর এই কথার জন্য আরও একটা বাড়লো। এবার সাত বছরে সাতটা। সাতটা হওয়ার পর বলিস ‘আমি এই বিয়ে মানি না, এমনি এমনিই সাতটা হয়ে গেছে।”
ত্রয়ী কটমট করল। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“আজেবাজে কথা রেখে আমার রুম থেকে বের হন।”
“হবো না। কি করবি তুই?”
“দেখুন আমার কিন্তু মেজাজ গরম হচ্ছে।”
শীর্ষ দুষ্টু হাসলো। চোখে মুখে লাজুক ভাব ফুটিয়ে বলল,
“গরম হওয়ারই কথা। সামনে এত সুদর্শন হট একটা জামাই বসে আছে যে।”
“আপনাকে আমি….আমি….”
ত্রয়ীর সম্পূর্ণ কথাটা শেষ হওয়ার পূর্বেই তার এক হাত ধরল শীর্ষ। টেনে বসিয়ে দিল নিজের কোলে। আকস্মিক ঘটনায় হকচকিয়ে উঠল ত্রয়ী। দ্রুত উঠে যেতে চাইল শীর্ষের কোল থেকে। কিন্তু শীর্ষ তা হতে দিল না। শক্ত করে সে চেপে ধরল ত্রয়ীর সুঢৌল নরম কোমড় খানা। মিশিয়ে নিল নিজের সাথে। সাথে সাথে শিউরে উঠল মেয়েটা। হৃদস্পন্দন গাঢ় হলো তড়িঘড়ি করে। ত্রয়ী এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। আমতা আমতা করে বলল,
“কি করছেন কি ছাড়ুন আমাকে।”
শীর্ষ ছাড়লো না। বরং মুখ গুঁজল ত্রয়ীর ঘাড়ে। সেখানে নাক ঘষতে ঘষতে বলল,
“পুরুষ মানুষ একটু অধৈর্য প্রকৃতির হয়। জানিসই তো….”
এই টুকু বলে একটু থামল সে। পরপর ঘোর লাগা কণ্ঠে ফের বলে উঠল,
“তোকে সম্পূর্ণরূপে কাছে পেতে ইচ্ছা হচ্ছে বালির বস্তা।”
ত্রয়ী চমকাল। কি সব বলছে এই লোক? সম্পূর্ণরূপে কাছে পেতে ইচ্ছা হচ্ছে মানে কি? ঢোক গিললো মেয়েটা। নিজেকে শীর্ষের বাঁধন থেকে মুক্ত করতে ব্যস্ত হলো। শীর্ষ মুখ তুললো ত্রয়ীর ঘাড় থেকে। বাঁকা হেসে বলল,
“এখন আমি কি করব জানিস?”
“কি?”
“তোকে লম্বা একটা চু’মু খাব।”
কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও দেরি করল না শীর্ষ। ত্রয়ীর মাথার পিছনে এক হাত দিয়ে মেয়েটার মুখটা টেনে নিল নিজের মুখের কাছে। ত্রয়ী কোনো বাঁধা প্রদান করবে তার পূর্বেই তার নরম কোমল দুই ওষ্ঠ নিয়ে নিল নিজ ওষ্ঠের ভাঁজে। ত্রয়ীর সম্পূর্ণ শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। মনে হলো যেন শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল শীতল এক রক্তস্রোত। মেয়েটার প্রথম কিছুক্ষণ কেটে গেল ঘোরে। এরপর ঘোর কাটতেই সে কি’ল ঘু’ষি শুরু করল শীর্ষকে। দুই হাত তুলে নিজের থেকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল তাকে। কিন্তু হায়! শীর্ষের শক্তির সাথে কি আর সে পেরে ওঠে? এত চেষ্টা করেও নিজের থেকে এক চুলও সরাতে পারল না লোকটাকে। শেষে হাল ছেড়ে দিল সে। পরম আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে নিল।
আর সবচেয়ে বড়ো কথা হলো এতদিন পর শীর্ষের হঠাৎ এই স্পর্শ তার খারাপ লাগছে না। উপরে উপরে যতই চোটপাট দেখাক না কেন ভিতরে ভিতরে সে কেমন এক সুখ সুখ অনুভব করবে। বেশ কিছুটা সময় নিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করে ত্রয়ীকে ছাড়লো শীর্ষ। ফের মেয়েটার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বলল,
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১৩
“তোকে হারিয়ে একটা কথা অন্তত বুঝেছি আমি যে, মানুষের যখন যা করতে ইচ্ছা হয় করে ফেলা উচিত। নয়তো পরে পস্তাতে হয়। এই যেমন ধর বিয়ের পরপরই তোকে আমার কাছে পেতে ইচ্ছা হতো, ভালোবাসতে ইচ্ছা হতো, যখন তখন চু’মু খেতে ইচ্ছা হতো। কিন্তু আমি তখন নিজেকে সামলিয়েছি, ধৈর্য ধরেছি। ভেবেছি সবটা ঠিকঠাক করে তোকে সম্পূর্ণরূপে নিজের করে নেব। অথচ দেখ ততদিনে তুই আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলি। কিন্তু আমি যদি তোকে আগেই নিজের করে নিতাম, যখন যা ইচ্ছা হয় করতাম তাহলে আমার ভালোবাসা নিয়ে তোর মনে একটু হলেও কম সন্দেহ জাগতো। আমার মা বোন তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেও তুই অত সহজে আমাকে ছেড়ে আসতে পারতি না। অপেক্ষা করছি আমার তোর কাছে ছুটে আসার।”