অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ২
সাদিয়া শওকত বাবলি
কল রিসিভ করে কানের কাছে ধরে বলল,
“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম।”
ওপাশ থেকে কি বলল শোনা গেল না। তবে এপাশ থেকে যুবকটি যতটা সম্ভব নিজের কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে বলল,
“এখানে এসেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি তো তাই বাড়িতে কল করা হয়ে ওঠেনি। তোমরা চিন্তা করো না, মাকেও চিন্তা করতে বারণ করো। আমি ঠিক আছি।”
যুবকটি কথা চালিয়ে যেতে লাগল। খুব সহজ এবং নরম তার কণ্ঠে তোলা প্রতিটি ধ্বনি। হয়তো ভীষণ কাছের কারো সাথে কথা বলছে। যুবকটি আরও কিছুক্ষণ কথা বলে কল কাটলো। শীর্ষের দিকে তাকিয়ে বলল,
“বাড়ির লোকেরা কল করেছিল। কাল থেকে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে ভীষণ চিন্তায় ছিল তারা। মা নাকি কান্নাকাটিই শুরু করে দিয়েছিলেন। তাই আমিও আর আমার এ অবস্থার কথা বলিনি।”
“কিন্তু বলা উচিত ছিল। এত বড়ো একটি দুর্ঘটনা বাড়ির লোকদের থেকে লুকানো উচিত হয়নি।”
“কি করব বলুন? বাড়ির লোকেরা আমার এ অবস্থার কথা জানতে পারলে আরও চিন্তা করতেন। হয়তো ছুটেই চলে আসতেন এখানে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“এই মুহূর্তে তারা ছুটে চলে আসলে খারাপ হতো না। সব সুস্থতা কিন্তু হাসপাতাল, নার্স এবং ঔষধে আসে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজের বাড়ির লোকদের, আপনজনদের যত্ন, ভালোবাসা এবং সেবার ভূমিকাও থাকে। আর তাছাড়া ডাক্তাররা আপনি একটু সুস্থ হলেই এই ধরুন এক দুই সপ্তাহের মধ্যে ছাড়পত্র দিয়ে দিবে। কিন্তু আপনার যা অবস্থা তাতে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হতে হতে প্রায় এক মাস লেগে যাবে। সেক্ষেত্রে আপনার এই অবস্থার কথা বাড়ির লোকদের জানানো উচিত ছিল।”
যুবকটি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
“দেখি, কি করা যায়।”
শীর্ষ আলতো হাসলো। কিছু মনে পড়ার ভঙ্গিতে বলল,
“এই দেখুন আপনার সাথে এত কথা হলো অথচ আপনার নাম পরিচয় কিছুই জিজ্ঞেস করা হলো না। আপনার নাম কি? বাড়ি কোথায়? হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন কিভাবে?”
“আমার নাম ইফতেখার তামিম। বাড়ি বরিশাল। ব্যবসার একটি কাজে ঢাকায় এসেছিলাম। তবে ঢাকায় ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি অনুভব করি আমার গাড়িতে কোনো সমস্যা হচ্ছে। গাড়িটা কোথাও থামাবো কিংবা কারো সাহায্য নেব তার পূর্বেই দেখি ব্রেক কাজ করছে না। মহাসড়কে গাড়ি চলাকালীন সময়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে একজন মানুষের মানসিক অবস্থা কিরূপ হতে পারে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। আমিও ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল। তবুও নিজেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। সেই চেষ্টা করতে করতেই গাড়িটা হঠাৎ গিয়ে ধাক্কা খায় রাস্তার পাশের একটি গাছের সাথে। তারপরের ঘটনা আমার থেকে ভালো আপনারাই জানেন।”
শীর্ষ হাত রাখলো তামিমের কাঁধে। অভয় দিয়ে বলল,
“যাক চিন্তা করবেন না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।”
“হুম।”
নিশিথের আঁধার ঘনিয়েছে চারদিকে। তবে ব্যস্ত নগরীটা এখনো নিস্তব্ধতায় ঢেকে যায়নি। ঐ তো শোনা যাচ্ছে জনমানবের কোলাহল, যানবাহনের ধ্বনি। আলভী, রবি এবং নয়ন সন্ধ্যায় অফিস শেষে জমায়েত বসিয়েছে শীর্ষের ফ্ল্যাটে। প্রায়ই এখানে আসে তারা। কখনো আড্ডা দিতে, কখনো শীর্ষকে জ্বালাতে, আবার কখনো শীর্ষকে সঙ্গ দিতে। তেমনি আজও এসেছে। নয়ন, রবি এবং আলভী নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন কথা বললেও চুপচাপ বসে রয়েছে শীর্ষ। তার মুখে কোনো নেই। এমনিও ত্রয়ী ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে সে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রয়োজন ব্যতীত খুব একটা কথা বলে না বা বলতে ইচ্ছে হয় না। রবি ভ্রু কুঁচকে তাকালো শীর্ষের দিকে। ভ্রু কুঁচকে শুধাল,
“কি যে তুই ওমন ছ্যাঁ’কা খাওয়া ছেলেপেলের মতো বসে আছিস কেন?”
আলভী ওষ্ঠ বাঁকালো। কণ্ঠে কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক সুর নিয়ে বলল,
“ছ্যাঁ’কা খাওয়া ছেলেপেলের মতো কি রে? ও তো ছ্যাঁ’কা খাওয়া ছেলেপেলেই। ওর বউ ওকে ছেড়ে চলে গেছে। মন ভেঙ্গে দিয়েছে। ছ্যাঁ’কা খেতে এরপর আর কি বাকি থাকে?”
রবি হাত রাখলো শীর্ষের কাঁধে। অভয় দিয়ে বলল,
“আরে বন্ধু তুই চিন্তা করিস না। দেখবি ভাবী ঠিক তোর কাছে ফিরে আসবে।”
রবির কথায় সায় জানিয়ে আলভী বলল,
“একদম, অপেক্ষা কর। এমনও হতে পারে ভাবী তোর জন্য কিছু সারপ্রাইজ নিয়ে হঠাৎ ফিরে এলো।”
শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। সন্দিহান কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
“সারপ্রাইজ মানে?”
“সারপ্রাইজ মানে একের বদলে দুই হয়েও ফিরে আসতে পারে।”
“একের বদলে দুই!”
“হ্যা, বউ সাথে আবার বাচ্চাও।”
“বউকেই খুঁজে পাচ্ছি না, আর তো বাচ্চা।”
“আরে এত চিন্তা করছিস কেন? হতে পারে কিছুদিন পর তোর বউ নিজেই ফিরে এলো একটা বাচ্চা নিয়ে। ঐ নাটক সিনেমায় হয় না, বউ ছেড়ে চলে যায়। তারপর বহুদিন পর একটি বাচ্চা নিয়ে ফিরে আসে।”
“তেমন কিছুই হবে না।”
“কেন?”
শীর্ষ বিরক্ত হলো। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“বউয়ের সাথে বাচ্চা হওয়ার মতো কিছু হয়-ই-নি আমার যে বাচ্চা হবে।”
শীর্ষের কথায় অবাক হলো সবাই। রবি অবাক কণ্ঠেই শুধাল,
“বিয়ের পর এক বাড়িতে একসাথে বেশ অনেকদিনই তো ছিলি তোরা। এর মধ্যে কিছুই হয়নি?”
“এক বাড়িতে ছিলাম। একসাথে না।”
“ঐ তো একই। এক বাড়িতে তো ছিলি। তাও প্রায় পাশাপাশি কক্ষে। তার….”
আলভী পুরো কথাটি শেষ করার পূর্বেই মুখ খুলল নয়ন। কোনোরূপ চিন্তা ভাবনা না করেই সে বলল,
“আপনার মেইন পয়েন্টে কি কোনো সমস্যা আছে, স্যার?”
এই টুকু বলে থামল সে। দম ফেলে ফের বলল,
“আপনি একদম চিন্তা করবেন না, স্যার। আপনার জন্য রয়েছে কলিকাতা হারবাল। আমার পরিচিত একজনেরও এমন সমস্যা ছিল। উনি কলিকাতা হারবালের শরণাপন্ন হওয়ার পরপরই সব ঠিক হয়ে গেছে।”
শীর্ষ হতবাক হয়ে পড়লো। এরা কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত কিনা তার নামে বদ’নাম করে দিল? তাও মেইন পয়েন্টে সমস্যার মতো বদ’নাম? এই কথা কোনোভাবে ত্রয়ী শুনলে মান সম্মান বলে তো আর কিছু থাকবে না। শীর্ষ কটমট করে তাকালো নয়নের দিকে। চুপসে গেল বেচারা। আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে…. লজ্জা নয়, সংসার বাঁচাতে হলে কলিকাতা হারবাল সম্পর্কে জানতে হবে।”
শীর্ষের মেজাজ বিগড়াল এবার। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“সংসার বাঁচাতে হলে জানতে হবে? জানবো তো। ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিলে কোন কলিকাতা হারাবাল তোকে চাকরি দেয় সেটাই জানাবো, দাঁড়া তুই বেয়াদব।”
নয়ন ঢোক গিললো। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
“আপনি আমার সাথে এমনটা করতে পারেন না, স্যার। আমি তো আপনার ভালো ভেবেই….”
নয়ন কথাটি সম্পূর্ণ করার পূর্বেই উঠে গেল শীর্ষ। এই ব’জ্জা’ত গুলোর কথা এই মুহূর্তে শুনতে ইচ্ছে করছে না তার। শীর্ষ এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল তার কক্ষের সাথে লাগোয়া বারান্দায়। তাকালো রাতের কৃত্রিম আলোয় ঝলমলে রূপ ধারণ করা ব্যস্ত শহরটির দিকে। এই পৃথিবীতে তার সব আছে, তবুও যেন কেউ নেই। মাঝে মাঝে নিজেকে ভীষণ একা লাগে শীর্ষের। ছুটে যেতে ইচ্ছে হয় নিজের বাড়িতে, নিজের বাবা-মা, বোনদের নিকট। তবে যখনই আবার তার মা এবং বোনের কীর্তিকলাপের কথা স্মরণে আসে তখন হৃদয়টা তিক্ততায় ভরে উঠে, আর ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় না ঐ বাড়িতে। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো শীর্ষের। বাইরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই মৃদু স্বরে আওড়ালো,
“তুইও হারিয়ে গেলি আর সাথে করে আমার জীবনের সব রূপ, রস, রঙও নিয়ে গেলি। তুই চলে যাওয়ার পর থেকে আমার সুন্দর, হাসিখুশি জীবনটা কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে রে, ত্রয়ী। কোথাও শান্তি পাচ্ছি না আর। বেঁচেও যেন ম’রে গেছি আমি।”
থামলো শীর্ষ। বসে পড়ল বারান্দার মেঝেতে। মলিন কণ্ঠে ফের বলল,
“তুই কবে ফিরবি আমার জীবনে? কবে এক মুঠো রঙ নিয়ে ছুটে এসে আবার রাঙিয়ে দিবি আমার জীবনটাকে? কবে একটু ভালোবাসবি আমায়? কবে আমি আবার একটু শান্তির মুখ দেখবো?”
আকাশে উজ্জ্বল সূর্যের ঘনঘটা। রিমাদের ক্লাস নিচ্ছে সাহেদ। রিমার প্রতি আগের মতো আর তেমন টান নেই তার। সেই মাস ছয়েক পূর্বে রিমার কাছে যখন ত্রয়ীর বিষয়ে সে জিজ্ঞেস করেছিল। তখন রিমার উত্তরগুলো তার হৃদয় বিষিয়ে তুলেছিল। রিমাকে খুব কাছ থেকে সাহেদ না চিনলেও শীর্ষকে মোটামুটি চিনতো। ভেবেছিল শীর্ষ যেহেতু ভালো রিমাও ভালো হবে। হাজার হলেও দুইজন ভাই-বোন। কিন্তু রিমার সেদিনকার জবাব গুলো সাহেদের হৃদয়ে মেয়েটির সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করতে বাধ্য করেছে। তারপর থেকে রিমার দিকে নজর রাখতে শুরু করেছে সে। এবং সময়ের পরিক্রমায় রিমার আচরণ, সহপাঠীদের প্রতি তার বিরূপ ব্যবহার সাহেদের হৃদয় থেকে রিমাকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিয়েছে। যদিও সে এখনো ত্রয়ীর শীর্ষদের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কারণ জানে না। শুধু এই টুকুই জানে ত্রয়ী ও বাড়ি, এ শহর ছেড়ে চলে গেছে। যেহেতু ত্রয়ীর সাথে তার তেমন সম্পর্ক ছিল না কিংবা মেয়েটির প্রতি সেরকম অনুভূতিও ছিল না তাই আর বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি সাহেদ। হতে পারে ত্রয়ীর কোনো ব্যক্তিগত কারণ রয়েছে তাই সে এ শহর ছেড়ে চলে গেছে।
সাহেদ একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষে পাঠদান দিল। অতঃপর শিক্ষার্থীদের থেকে বিদায় নিয়ে পা দিল দরজার দিকে। ঠিক তখনই পিছন থেকে ভেসে এলো,
“স্যার।”
সাহেদ থমকে দাঁড়াল। পিছন ঘুরে আবিষ্কার করল রিমা এবং শিলাকে। সাহেদ সৌজন্যসূচক হাসলো। নম্র কণ্ঠেই শুধাল,
“কিছু বলবে?”
রিমা একটু ইতস্তত করে জবাব দিল,
“জ্বি স্যার।”
“হ্যা, বলো।”
“আপনি কি কোনোভাবে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট, স্যার?”
“না, আমি তোমার উপরে অসন্তুষ্ট হতে যাব কেন?”
“না মানে আপনি আগের মতো আর আমার সাথে কথা বলেন না, কেমন এড়িয়ে চলেন তাই জিজ্ঞেস করলাম আর কি।”
“ওটা তোমার ভুল ধারণা। তুমি আমার ছাত্রী। একজন ছাত্রীর সাথে শিক্ষকের যেমন সম্পর্ক হওয়া উচিত আমি ততটুকুই পালন করছি। আমি তোমার সাথে কম কথা বলা বা এড়িয়ে চলছি না।”
সাহেদের কথায় রিমা হোঁচট খেল যেন। এই লোক তাকে শুধুমাত্র একজন ছাত্রী ভাবে? রিমার হৃদয় ভারী হলো। সাহেদের থেকে এমনটা সে কখনোই আশা করেনি। সে সর্বদাই আশা রেখেছে সাহেদ তাকে ভালোবাসে, তাকে ভালোবাসার রমনী ভাবে। রিমার চোখ মুখে আঁধার নেমে এলো। মৃদু স্বরে সে শুধাল,
“আমি শুধুই আপনার একজন ছাত্রী?”
“তা নয়তো কি?”
রিমা এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেল না। হৃদয়ে উত্তাল ঝড় উঠল তার। তার ভালোবাসার মানুষটা তাকে ভালো বাসে না। এর চেয়ে জঘন্য সংবাদ আর কি হতে পারে? তবে কি সবটাই তার ভুল ছিল? সে কি সাহেদকে ভালোবেসে ভুল করেছে? শুধু এক তরফাই ভালোবেসে গেছে? রিমার গলা ধরে এলো। কোনো মতে নিজেকে সামলে জবাব দিল,
“না, কিছু না।”
এই টুকু বলেই রিমা এলোমেলো পায়ে হাঁটা ধরল সামনের দিকে। শিলাও এলো তার পিছু পিছু। একটু সময় নিয়ে সে শুধাল,
“শীর্ষ ভাই তোদের বাড়িতে ফিরবে কবে?”
রিমা জবাব দিল না কোনো। এমনিই হৃদয়ের অবস্থা নাজুক তার। এর মধ্যে আবার এই মেয়ের এই প্রশ্ন। এমন সময়ে বান্ধবীর এই প্রশ্নে রিমা একটু বিরক্তও হলো বটে। কোনোরূপ কোনো বাক্যব্যয় না করে ধুপধাপ পা ফেলে সে বেরিয়ে গেল কলেজ থেকে।
সময় প্রবাহমান। সময়ের এই প্রবাহমান ধারায় কেটে গেছে প্রায় সাতদিন। তামিম এখন মোটামোটি সুস্থ। হাসপাতাল থেকেও ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে। সে খবর শুনেই শীর্ষ, রবি, আলভী এবং নয়ন এক যোগে হানা দিয়েছে হাসপাতালে, তামিমের জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে। তামিম তাদের দেখেই এক গাল হাসলো। বিছানায় উঠে বসে বলল,
“আপনারা এসেছেন? আমিও আপনাদের খুঁজছিলাম। জরুরি কথা ছিল আপনাদের সাথে।”
শীর্ষ, রবি, নয়ন এবং আলভী বসলো তামিমের পাশেই। শীর্ষ স্বাভাবিকভাবেই জবাব দিল,
“হ্যা, বলুন।”
“আসলে কিভাবে যে বলি। আপনারা এমনিই আমার জন্য অনেক করেছেন।”
রবি হাত রাখলো তামিমের কাঁধে। অভয় দিয়ে বলল,
“আরে এত ইতস্তত করছেন কেন? বলে ফেলুন তো।”
তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো তামিম। একটু সময় নিয়ে বলল,
“আমি তো এখন মোটামোটি সুস্থ। হাসপাতাল থেকেও ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছে নিশ্চয়ই শুনেছেন। তাছাড়া এক সপ্তাহ হয়ে গেছে এখন বাড়িতে না ফিরলেও সবাই চিন্তা করবেন। এমনিই আমি আমার অসুস্থতার কথা বাড়ির কাউকে জানাইনি।”
এই টুকু বলে থামল তামিম। দম ফেলে ফের বলল,
“কিন্তু আমি তো এতটাও সুস্থ নই যে এতটা পথ একা মানুষ গাড়ি চালিয়ে যাব। কোথায় আবার কি ঘটে যায় কে জানে! আপনাদের মধ্যে কেউ যদি একটু কষ্ট করে আমার সাথে যেত আমার ভীষণ উপকার হতো।”
শীর্ষ হাসলো তামিমের কথায়। তামিমের অন্য কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
“আরে এই কথা বলতে এত ইতস্তত বোধ? শুধু একজন নয়। আমরা সবাই যাব আপনার সাথে, আপনাকে পৌঁছে দিতে। এই অবস্থায় আমরাও তো আপনাকে একা ছাড়তে পারি না। আমাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে না?”
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ১
“সত্যিই আপনারা সবাই আমার সাথে যাবেন?”
“অবশ্যই।”
“কিন্তু আমার গাড়িটা?”
“ওটা ইতোমধ্যে আমরা সাড়িয়ে নিয়েছি।”