অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৪
সাদিয়া শওকত বাবলি
সেই পুরনো ভঙ্গি, সেই চিরচেনা মুখের আদল। এই রমণীকে কি সে এত সহজে ভুলতে পারে? শীর্ষ তাড়াহুড়ো করে কল করল নয়নের নম্বরে। প্রায় সাথে সাথেই কলটা ধরল নয়ন। বিনয়ী কণ্ঠে বলল,
“আসসালামুয়ালাইকুম, স্যার।”
শীর্ষ অস্থির হয়ে উঠল। কোনো মতে সালামের জবাবটা দিয়ে বলল,
“নয়ন, একটু আগে ফেসবুকে যে ছবিগুলো তুই শেয়ার করেছিস ওগুলো কোথায় দাঁড়িয়ে তুলেছিস?”
“কেন, বরিশালে স্যার।”
শীর্ষ দাঁতে দাঁত চাপলো। চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“বরিশালে তা তো আমিও জানি। কিন্তু বরিশালের কোথায়?”
নয়ন আশেপাশে তাকাল। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
“জায়গার নাম তো জানি না। তবে তামিমদের বাড়ির কাছেই।”
“আচ্ছা, তোদের ফেরার দরকার নেই। ওখানেই থাক। আমি আসছি।”
নয়নের দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বলল,
“কিন্তু স্যার, আমাদের চাকরি….”
“চুলোয় যাক তোদের চাকরি। বউকেই যদি ফিরে না পাই, তাকে কাছে না পাই চাকরি দিয়ে কি করব? বা*ল ফালাব?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কথাগুলো বলতে বলতে কল কেটে দিল শীর্ষ। ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে পড়ল অফিস থেকে। প্রথমে নিজের গাড়িটা নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা করলেও সে ভাবনায় ইতি টানলো দ্রুত। গাড়ি নিয়ে গেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হবে। আর জ্যামে পড়লে তো কথাই নেই। তার থেকে বাইক নিয়ে যাওয়া ভালো। জ্যামে পড়লেও একটু ফাঁক ফোকর পেলেই বেরিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু শীর্ষের তো নিজস্ব বাইক নেই। সে দ্রুত কল করল আলভীকে। তার বাড়িতে গিয়ে বাইক আর হেলমেট নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ল বরিশালের উদ্দেশ্যে।
শীর্ষ কল কেটে দেওয়ার পর নয়ন, রবি আর আলভী কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইল। শীর্ষ যেহেতু তাদের আজ ঢাকায় ফিরতে বারণ করেছে সেহেতু আজ রাতটা তাদের বরিশালেই কাটাতে হবে। কিন্তু কোথায় কাটাবে? তামিমদের বাড়িতে ফিরে যাওয়াটাও এখন অস্বস্তিকর এবং লজ্জাজনক। তারা আলভীদের কত করে বলল একটা দিন তাদের বাড়িতে থাকার জন্য। আলভীরা একটা দিন তো দূরে থাক বিকাল পর্যন্তই থাকল না। চাকরির অজুহাত দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে এলো। এখন কোন মুখ নিয়ে আবার সে বাড়িতে যাবে? আর এখানে কোনো আবাসিক হোটেলও নেই যে সেখানে থাকবে। তামিমদের বাড়িটা বরিশাল মূল শহর ছাড়িয়ে একটু ভিতরে। মফস্বল এলাকা, এখানে দুই চারটা ভাতের হোটেল দেখা যায় এই বেশি। তবে এখান থেকে বরিশাল মূল শহরের দূরত্ব প্রায় এক ঘন্টা। ওখানে গেলে রাত্রিযাপনের জন্য হয়তো কোনো হোটেল পাওয়া যাবে। আপাতত সেখানেই যাওয়া যাক। তারপর শীর্ষ এলে তার সাথে আলোচনা করে না হয় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
ত্রয়ী এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে তামিমদের সুবিশাল বাড়িটির অভিমুখে। এ বাড়িটি এখন এক প্রকার তারই। লিখিত কোনো দলিলে এ বাড়ি তার না হলেও অনুভবের দিক দিয়ে তার। ত্রয়ীর জীবনে যখন চারদিক থেকে অন্ধকার ধেয়ে এসেছিল, চেনা পরিচিত সকল মানুষেরা ছুঁড়ে ফেলেছিল রাস্তায় তখন এই বাড়ির মানুষগুলোই তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিল, দিয়েছিল নতুন সুন্দর একটি জীবন। এই বাড়িতে ঠাঁই নেওয়ার পর থেকে এখন অবধি ত্রয়ীর কখনো মনে হয়নি সে আশ্রিতা কিংবা অনাথ। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল ত্রয়ী। হাত উঁচিয়ে বাজালো কলিং বেলটা। প্রায় সাথে সাথেই দরজাটা খুলে গেল। দরজা খুলেছেন লুৎফা বেগম। ত্রয়ীকে দেখে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। দরজার সামনে থেকে সরে যেতে যেতে বললেন,
“এসেছিস তুই? তোর মা তো তোর চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছেন।”
“চিন্তা কেন করছেন? আমি তো প্রতিদিন এই সময়েই কলেজ থেকে বাড়ি ফিরি।”
“তারপরেও চিন্তা এসে যায়। একজন তো এক্সিডেন্ট করে হাত, পা ভেঙে বাড়ি ফিরেছে। এই সময় তুইও বাইরে। তোর না আবার কোনো বিপদ আপদ ঘটে। বুঝিস তো মায়ের মন।”
এই টুকু বলে ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন লুৎফা বেগম। হতাশ কণ্ঠে বললেন,
“আল্লাহ জানেন আমার ছেলেটা কোথায়। ও তো আরও বেপরোয়া ধাঁচের।”
ত্রয়ী গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করল। কপাল কুঁচকে শুধাল,
“কে আবার এক্সিডেন্ট করে বাড়ি ফিরেছে?”
“কেন, তামিম।”
ত্রয়ী অবাক হলো। পরক্ষণেই আবার অস্থির হয়ে শুধাল,
“তামিম ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছেন? কোথায় উনি?”
“ওর রুমে।”
ত্রয়ী আর দাঁড়াল না। কাঁধে কলেজ ব্যাগ নিয়েই ছুটলো তামিমের কক্ষের দিকে।
তামিম শুয়ে ছিল বিছানায়। তার পাশে আলেয়া বেগম বসে বসে ছেলের গায়ে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন। আর তৃপ্তি পাশেই একটা সোফা দখল করে বসে আছে। বিরক্ত ভঙ্গিতে তাকাচ্ছে এদিক ওদিক। এর মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে কক্ষে প্রবেশ করল ত্রয়ী। ছুটে গেল তামিমের দিকে। ব্যগ্র কণ্ঠে শুধাল,
“তোমার এই অবস্থা কেন ভাইয়া? এক্সিডেন্ট কিভাবে করলে?”
কথাগুলো বলতে বলতেই মেয়েটা দুই হাতে ধরল তামিমের ব্যান্ডেজ করা হাতটা। সাথে সাথে চ্যাঁচিয়ে উঠল তামিম। হাতটা সরিয়ে নিতে নিতে বলল,
“তুই কি আমার হাতটা আর একটু ভেঙে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিস, ত্রয়ী? এমনিই ভাঙা হাত, সেটা নিয়ে আবার টানাটানি শুরু করেছিস।”
ত্রয়ী অপ্রস্তুত হলো। আমতা আমতা করে বলল,
“দুঃখিত ভাইয়া। আসলে তোমার এই অবস্থা দেখে অত খেয়াল ছিল না।”
কথাগুলো বলতে বলতেই মেয়েটার গলা ধরে এলো। অক্ষিকোটর ভরে উঠল নোনাজলে। তামিম চোখ বড়ো বড়ো করল। এক আঙ্গুল তুলে বলল,
“এই কাঁদবি না, একদম কাঁদবি না। ছিঁচকাদুনে একটা। যখনই দেখবো শুধু কাঁদতে থাকে। আচ্ছা, একটা কথা বলে তো। এত কান্না, এত চোখের পানি তুই পাস কোথায়? চোখ না যেন সমুদ্র।”
ছেলের কথা শুনে মুখ বাঁকালেন আলেয়া বেগম। তৃপ্তির দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
“ত্রয়ী তো তবুও ভাইয়ের এমন অবস্থা দেখে কাঁদছে। আর ঐ আরেকটাকে দেখ। তোর অসুস্থতা দেখে যেন সে আরও বিরক্ত হয়েছে। কেমন চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।”
আলেয়া বেগমের কথায় ফুঁসে উঠল তৃপ্তি। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“একদম বাজে কথা বলবে না, মা। আমি মোটেই ভাইয়ার অসুস্থতা দেখে বিরক্ত হইনি। আমি বিরক্ত হয়েছি ভাইয়ার সাথে আসা ঐ বিটকেল লোকটার জন্য। ভাইয়াকে তারা বাঁচিয়ে বাড়িতে দিতে এসেছে ভালো কথা। এসে একটু দেখেশুনে বসবে না। বসলো তো বসলো একদম আমার ফেস প্যাকের উপরে গিয়ে।”
এই টুকু বলে থামল সে। ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল,
“তুই আমাকে যে ফেস প্যাকটা বানিয়ে দিয়েছিলি, যার জন্য আজ আমি কলেজেও যাইনি। ঐ বিটকেল লোকটা আমার সে ফেস প্যাকটা নষ্ট করে দিয়ে গেছে, আপু। আমি একটুও মুখে লাগাতে পারিনি।”
আলেয়া বেগম তেতে গেলেন। রুক্ষ কণ্ঠে বললেন,
“ওর ভাইয়ের এক্সিডেন্ট করে জীবন নিয়ে টানাটানি বেঁধে যাচ্ছে। আর ও আছে ফেস প্যাক নিয়ে। এমন থা’প্প’ড় মা’র’ব না। দাঁত সব কয়টা নিচে পড়ে যাবে। বেয়াদব মেয়ে। কখন, কোথায়, কি কথা বলতে হয় তাও শিখেনি। বড়ো হয়েছে শুধু হাত-পায়ে। মাথায় বুদ্ধি সুদ্ধি হয়নি মোটেই। গর্দভ একটা।”
“আহ, মা ওকে বকো না। ও ছোট মানুষ, একটু বোঝে কম।”
তামিমের কথায় সায় জানাল ত্রয়ীও। তৃপ্তি এমনি অবুঝ নয়। তবে পরিবারের সবার ছোট এবং সবার অতি আদরে মাঝে মাঝে একটু অবুঝের ন্যায় আচরণ করে ফেলে। ত্রয়ী তাকালো তৃপ্তির দিকে। ওষ্ঠে আলতো হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,
“থাক বোনু মন খারাপ করিস না। আমি তোকে আবার বানিয়ে দেব।”
“সত্যি!”
“একদম।”
রাত খুব বেশি নয়। ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক ধ্বনি তুলে জানান দিচ্ছে রাত দশটা। শীর্ষ কেবল এসে পৌঁছাল বরিশালে। এসেই কোনোদিক বিবেচনা না করে উঠল রবি, আলভীদের পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করে রাখা হোটেলে। বরিশালে এসেই এই রাতে ত্রয়ীকে খুঁজতে বেরিয়ে যাওয়াটা বোকামি ব্যতীত আর কিছুই হবে না। ত্রয়ী নিশ্চয়ই এই রাতে বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নেই যে শীর্ষ যাবে আর তাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আসবে। তাছাড়া ত্রয়ী এখানে কোন বাড়িতে, কার বাড়িতে থাকে তাও জানা নেই কারো যে ছুটে সেখানে যাবে। তার থেকে আজ রাতটা হোটেলে কাটিয়ে আগামীকাল সকালে ত্রয়ীকে খুঁজতে যাওয়াটাই ভালো হবে।
গ্রাম বা মফস্বলে যেন একটু তাড়াতাড়িই রাত নামে। এই রাত দশটাতেই চারদিক নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আশেপাশের বেশিরভাগ মানুষই বোধ হয় ঘুমিয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। ত্রয়ীও খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে। তবে দুই চোখে ঘুম নেই তার। অন্ধকার কক্ষে শুয়ে শুয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে শুধু। সারাদিন সবার মধ্যে বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততায় নিজের অতীতটাকে, নিজের কষ্টগুলোকে একটু ভুলে থাকলেও রাতের আঁধারে আর তা ভুলে থাকতে পারে না। বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই হৃদয়ে হানা দেয় বিভীষিকাময় সেই অতীত। তখন কষ্ট হয়, দম বন্ধ লাগে। একাকীত্ব যেন ঘিরে ধরে চারদিক থেকে। ত্রয়ী বিছানায় শুয়ে থেকেই ছাদের দিকে দৃষ্টি দিল। ভাবতে লাগল তার অতীত নিয়ে।
প্রায় ছয় মাস পূর্বে, এক ভ’য়ংক’র বিকালে ফাহমিদা বেগম আর রিমা মিলে ত্রয়ীকে তীব্র অপমানে জর্জরিত করে খান বাড়ি থেকে বের করে দেন।
তাদের ব্যবহার এমন ছিল যেন সে কোনো মানুষই নয়। দীর্ঘদিন ধরে পালিত কু’কু’র’টা’কে’ও হয়তো ঐ পড়ন্ত বিকেলে একাকী বাড়ি থেকে বের করে দিতে পারতো না তার মালিক। কিন্তু ত্রয়ী মানুষ হয়েও কু’কু’রে’র থেকেও অধিক লাঞ্ছিত হয়েছিল ঐদিন। তবে শেষ পর্যন্ত তার উপর একটু দয়া করেছিল রিমা। গ্রামের বাসে তুলে দিয়ে এলো তাকে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে কি করবে ত্রয়ী? কার কাছে যাবে সে? সেখানে হয়তো আরও বেশি অপমান, লাঞ্ছনা অপেক্ষা করছে তার জন্য। গ্রামের মানুষেরা তার মতো একাকী একটি মেয়েকে পেলে শান্তিতে থাকতে দেবে না কোনোমতেই। গ্রামে যাওয়ার সাথে সাথে দেখা যাবে আশেপাশের মানুষ তার নামে নিন্দা, বদ’নাম করা শুরু করে দিয়েছে, দুঃশ্চরিত্র পুরুষরা উত্যক্ত করা শুরু করেছে। এতদিন না হয় তার দাদী তাকে এসব থেকে বাঁচিয়েছে কিন্তু এখন বাঁচাবে কে? ত্রয়ী আর গ্রামে গেল না। বাস ছাড়ার পূর্বেই নেমে পড়ল। শীর্ষ নামক তার স্বামীকে একটি শেষ মেসেজ করে সিম কার্ডটাও ভেঙে ফেলল। অতঃপর স্টেশনের ভীর ঠেলে গিয়ে দাঁড়াল এক কোনে।
এরপর, এরপর কি করবে সে? গ্রামে তো গেল না। এখন কোথায় যাবে? চারপাশে হাজার হাজার মানুষ আছে, শহর আছে, আলো আছে। কিন্তু ত্রয়ীর আপন বলতে কেউ নেই। তার জীবনে আলো নেই। ত্রয়ী একবার ভাবলো এ জীবনই সে আর রাখবে না। কি লাভ এই অভি’শপ্ত জীবন রেখে? যে জীবনের কোনায় কোনায় শুধু দুঃখ, অবহেলা, লাঞ্ছনা। তবে শেষ পর্যন্ত আ’ত্ম’হ’ত্যা করার মতো সাহসও সে করে উঠতে পারল না। আ’ত্ম’হ’ত্যা করতেও যে অনেক সাহসের প্রয়োজন। ত্রয়ী ভীতু নারী, এত সাহস তার ভিতরে নেই। তাছাড়া আ’ত্ম’হ’ত্যা মহাপাপ। এ বানী সে কিভাবে উপেক্ষা করে? ইহজনমে তো সে সুখের দেখা পেলই না।
এরপর আ’ত্ম’হ’ত্যা করলে দেখা যাবে পরকালেও সে একটু শান্তি পাবে না। ত্রয়ী চারদিকে তাকালো। কত মানুষ স্টেশনে। কেউ যাচ্ছে তো কেউ আসছে। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন পন্য সামগ্রী বিক্রি করছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ভূট্টার খই, শসা, বাদাম, চানাচুর নিয়ে এদিক ওদিক ছুটছে। ত্রয়ীর হৃদয় ভীত হলো। এমনিই একা একা চলাচলের অভ্যাস নেই তার। তার উপর এই শহরের হালচাল কিছুই বোঝে না সে। জন্ম থেকে গ্রামে বড়ো হয়েছে। তারপর শহরে এলেও তার দৌড় শুধু ঐ শীর্ষদের বাড়ি আর কলেজ এই টুকুই ছিল। ভয়ে, আতঙ্কে ত্রয়ীর গলা শুকিয়ে এলো। পাশেই একটি চায়ের দোকানের অভিমুখে গিয়ে দাঁড়াল সে। দোকানে বেশ কয়েকজন পুরুষ চা পান করছে। ত্রয়ী তাদের পাশ কাটিয়ে এক কোনে দাঁড়াল। ইতস্তত করে দোকানিকে বলল,
“আমাকে একটু পানি দিবেন, ভাইয়া?”
“মাগনা দিতে পারুম না। পানি খাইতে হইলে একটা বোতল কেনা লাগবো।”
কি আশ্চর্যকর দুনিয়া! এখানে একটু পানি খেতে হলেও অর্থের প্রয়োজন হয়। এই দুনিয়ায় একা একা কিভাবে লড়াই করে টিকে থাকবে সে? তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। নিজের ব্যাগ ঘেটে বিশ টাকা বের করে এগিয়ে দিল দোকানির দিকে। অতঃপর বলল,
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৩
“একটা পানি দিন।”
দোকানি ছোট বোতলের একটি পানি দিল ত্রয়ীকে। ত্রয়ী পাশেই একটা খালি কাঠের বেঞ্চ দেখে বসলো সেখানে। বোতলের ছিপি খুলে কিছু পানি ঢাললো গলার মধ্যে। এখন একটু শান্তি লাগছে। তবে হৃদয়ের ভয় কমেনি। এর মধ্যেই দোকানে চা খাওয়া পুরুষদের মধ্যে থেকে একজন ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে শুধাল,
“আপা যাইবেন কই?”