অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৫
সাদিয়া শওকত বাবলি
তবে হৃদয়ের ভয় কমেনি। এর মধ্যেই দোকানে চা খাওয়া পুরুষদের মধ্যে থেকে একজন ত্রয়ীর দিকে তাকিয়ে শুধাল,
“আপা যাইবেন কই?”
ত্রয়ীর ভয় বাড়লো আরও। অপরিচিত একজন পুরুষকে তাকে এমন প্রশ্ন করতে দেখে আর একটু জড়সড় হয়ে পড়ল সে। এমনিই পুরুষ মানুষ কোনো নারীকে দেখলে গলে গলে পড়তে শুরু করে। সেখানে সে একা একজন নারী, তাও অল্প বয়সী। ত্রয়ী ঢোক গিলল। ইতস্তত করে জবাব দিল,
“ময়…. ময়মনসিংহ।”
আরেকজন শুধাল,
“একা নাকি?”
“না…. মানে….”
ত্রয়ী পুরো উত্তরটা দিল না। চোখ ঘুরিয়ে তাকাল চারপাশে। রাত নেমেছে প্রকৃতিতে। স্টেশনের চত্বরজুড়ে সোডিয়ামের কৃত্রিম আলো জ্বললেও, সেই আলো রাতের অন্ধকারকে গিলে খেতে পারেনি। চারপাশে এখনো লোকজনের ভিড়, ব্যস্ততা। কেউ বাস ধরছে, কেউ অপেক্ষা করছে। কিন্তু ত্রয়ী জানে, এই ভিড় চিরস্থায়ী নয়। রাত যত বাড়বে, তত স্টেশন ফাঁকা হতে শুরু করবে। সরে যাবে ভদ্র মানুষেরা, পাল্টে যাবে পরিবেশের ভাষা। তারপর আসবে মাতাল, উচ্ছৃঙ্খল, চোখে লা’ল’সা পূর্ণ কিছু পুরুষ। যাদের কাছে একা একজন নারীর উপস্থিতি মানেই এক কা’ম লা’ল’শা’র আমন্ত্রণ। ত্রয়ীর নিজের অস্তিত্বকে হঠাৎ ভঙ্গুর মনে হতে লাগল। বুকের ভেতর হিম শীতল কিছু একটা জমতে শুরু করল যেন। কান্না পেল ভীষণ। একা একটি মেয়ে মানুষ এই রাত্রির অন্ধকার, এই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টির দংশন। সব কিছুকে কিভাবে মোকাবেলা করবে সে? ভয়, অস্বস্তি এবং আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে উঠল মেয়েটি। দ্রুত ঐ পুরুষদের নিকট থেকে উঠে গেল সে। জনগনের আনা গোনা একটু কম দেখে এক জায়গায় দাঁড়াল জড়সড় হয়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। স্টেশনটাও এখন আগের মতো আর জনসাধারণের আনাগোনায় গমগম করছে না। কৃত্রিম আলোর নিচে ধীরে ধীরে মানুষের ভিড় হালকা হতে শুরু করেছে। স্টেশনের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে ত্রয়ী একা, নিঃসঙ্গ। হঠাৎ করেই দুইজন পুরুষ এসে দাঁড়াল তার অভিমুখে। তাদের মধ্যে একজন ওষ্ঠে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে শুধাল,
“কি আপা, এখনো এই খানে? কেউ নিতে আসেনি বুঝি? তা যাবেন কোথায়? নাকি এসেছেন।”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকাল। একজন কালচে গাত্রবর্ণের, অন্যজন শ্যামলা। দুজনেই রুগ্ণ, গালের হাড় যেন ত্বকের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। চোখে লা’ল’সা, মুখে কুৎ’সি’ত হাসি। ত্রয়ী ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকাল চারদিকে। দেখতে পেল একটু দূরেই আরও তিনজন পুরুষ দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকেই। তাদের মধ্যে একজন ঐ চায়ের দোকানে ছিল। সম্ভবত তিনিই বাকিদের ডেকে এনেছেন। ত্রয়ীর বুকের ভিতরে যেন ঢেউ উঠল। হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল মুহূর্তেই। গলা শুকিয়ে এল, হাত-পা কেঁপে উঠল অজানা ভয়ে। ঠিক তখনই তার স্মরণে এলো ঝর্ণার কথা। ঝর্ণা বলেছিল, তার মা আলেয়া বেগম তাকে নিতে এসেছিলেন। ফোন নম্বরও দিয়ে গিয়েছেন।
সেই নম্বর তো এখনো আছে তার নিকট। ইচ্ছে করলেই সে কল করতে পারে আলেয়া বেগমকে। ছোট্ট এই জীবনে কম মানুষের দ্বারস্থ তো সে হয়নি। কম মানুষের নিকট সে আশ্রয় চায়নি। আর কম অবহেলা, অপমানও সহ্য করেনি। শেষ বারের মতো না হয় মায়ের কাছেই একটু আশ্রয় চাওয়া যাক। যদি তিনি গ্রহণ করেন তবে ভালো। না করলে জীবনটা না হয় এখানেই থামিয়ে দিবে। নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার চেয়ে না হয় আ’ত্ম’হ’ত্যা’র পথটাই বেছে নিবে। কিন্তু মাকে কলটা করবে কীভাবে? তখন কিছু না ভেবেই তো সিম কার্ডটা ভেঙে ফেলল। এখন হাতে মোবাইল থাকলেও তা দিয়ে কল করার কোনো উপায় নেই। ত্রয়ী দৃষ্টি ঘুরালো। হঠাৎ চোখ পড়ল নিকটেই একটি বিকাশের দোকানের উপর। ত্রয়ী দৌড়ে গেল সেখানে। দোকানে আরও তিনজন ক্রেতা রয়েছে। দোকানি তাদের সাথেই কথা বলতে ব্যস্ত। ত্রয়ী ঢোক গিলল। একটু ইতস্তত করে বলল,
“ভাইয়া, আপনার মোবাইল থেকে একটা কল করতে দিবেন?”
দোকানি খাতায় কার যেন নম্বার লিখছিল। মাথা না তুলেই বিরক্ত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“কেন, আপনার মোবাইল নেই?”
ত্রয়ী জোরপূর্বক হেসে জবাব দিল,
“আসলে আমার মোবাইলে চার্জ নেই। বন্ধ হয়ে গেছে। আপনার মোবাইল থেকে একটু কল করতে পারলে খুব উপকার হতো।”
এইটুকু বলে একটু থামল সে। পরপর আবার ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
“প্রয়োজনে আমি টাকা দেব। যত খরচ হয়, তার থেকে বেশি দেব।”
দোকানি এবার কপালে ভাঁজ ফেলে তাকাল ত্রয়ীর দিকে। কণ্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“নম্বর দিন।”
ত্রয়ী একটু হলেও আশার আলো খুঁজে পেল। তাড়াহুড়ো করে বলল নম্বরটা। দোকানি নম্বরে ডায়াল করে মোবাইলটা বাড়িয়ে দিল তার দিকে। ত্রয়ী মোবাইলটা হাতে নিয়ে কানের কাছে ধরল। রিং হচ্ছে। সময় যত গড়াচ্ছে ত্রয়ীর হৃদ কম্পন তত বাড়ছে। কত বছর পর সে মায়ের সাথে কথা বলবে! শেষ কবে তার সাথে কথা হয়েছে, মনে নেই। মায়ের কণ্ঠ কেমন তাও স্মৃতির অন্ধকারে ঢাকা পড়ে গেছে। এমনকি মায়ের মুখটাও স্পষ্ট মনে নেই ত্রয়ীর। কি নিষ্ঠুর ভাগ্য তার! মা বেঁচে আছেন, অথচ তার সাথে দেখা সাক্ষাৎ নেই। তার চেহারা স্মরণে নেই, তার কণ্ঠস্বর স্মরণে নেই। এমন ভাগ্য যেন সৃষ্টিকর্তা আর কাউকে না দেন। বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো ত্রয়ীর। ঠিক তখনই কলটা রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ভেসে এলো একটি সুমধুর কণ্ঠস্বর,
“হ্যালো, আসসালামুয়ালাইকুম। কে বলছেন?”
ঠিক কত বছর, কত দিন পর এই কণ্ঠস্বরটি শ্রবণ করল ত্রয়ী। তা সে নিজেও জানে না। কান দুটো যেন হিমেল এক স্রোতে অবশ হয়ে এলো। বুকের গহীন থেকে উঠে এলো অজস্র চাপা আবেগ। অক্ষি কোটর ভরে উঠল নোনাজলে। ত্রয়ী এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। হুট করেই কেঁদে উঠল ঝরঝর করে। চমকে উঠলেন আলেয়া বেগম। ব্যাকুল হয়ে শুধালেন,
“একি! আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে আপনার?”
ত্রয়ী বহু কষ্টে নিজেকে সামলাল। ভেজা কণ্ঠে বলল,
“মা… আমি, আমি ত্রয়ী। তোমার মেয়ে ত্রয়ী।”
আলেয়া বেগম যেন এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন। এই কণ্ঠস্বর, এই স্নিগ্ধ ডাক, কতদিন পর! কত প্রার্থনার পর! কত ব্যর্থ চেষ্টার পর অবশেষে শুনতে পেলেন তিনি। চোখ দুটো ছলছল করে উঠল তার। ভেজা কণ্ঠে বললেন,
“তুই… তুই আমাকে কল করেছিস? কত বছর পর! কেমন আছিস, মা?”
ত্রয়ীর ফুঁপিয়ে উঠল। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
“আমি ভালো নেই মা, একটুও না। তুমি আমাকে বাঁচাও।”
আলেয়া বেগম আঁতকে উঠলেন। অস্থির হয়ে বললেন,
“কেন, কি হয়েছে তোর? আর কোথায় তুই?”
ত্রয়ী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিল,
“আমি একটা স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি। কোথায় যাব, কি উদ্দেশ্যে যাব কিচ্ছু জানি না আমি, কিচ্ছু না।”
আলেয়া বেগম বিস্মিত হলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন জানালার ফাঁক গলিয়ে। বাইরেটা ইতোমধ্যে ঘুটঘুটে আঁধারে ছেয়ে গেছে। এই রাতে, এই আঁধারে ত্রয়ী একা একটা মেয়ে একটি স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছে ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠল আলেয়া বেগমের। ব্যগ্র কণ্ঠে বললেন,
“তুই এত রাতে একা স্টেশনে দাঁড়িয়ে আছিস!”
আলেয়া বেগম আর দেরি করলেন না। পা চালিয়ে ছুটে গেলেন বসার কক্ষের দিকে। সেখানে সোফায় বসে ব্যবসায়িক আলাপ করছিলেন সোহরাব হোসেন, সুমন হোসেন এবং তামিম। এই সোহরাব হোসেনের সাথেই দ্বিতীয়বারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন আলেয়া বেগম। আব্দুর রাজ্জাক সাহেবের অকালপ্রয়াণে জীবন যেন থমকে গিয়েছিল তাঁর। শোকে, দুঃখে একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। এরপর আশপাশের আপনজনেরা অনেক বুঝিয়ে, প্ররোচনার ছলে, একপ্রকার জোর করেই তাঁকে এই নতুন সম্পর্কে আবদ্ধ করে।
সোহরাব হোসেনেরও এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। তার আগের ঘরের সন্তান তামিম। তামিমের বয়স যখন মাত্র নয়, তখন এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মা’রা যান তার স্ত্রী। এরপর পরিবারের চাপে, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আলেয়া বেগমকে বিয়ে করতে রাজি হন। তবে এ বিয়ের পূর্বেই আলেয়া বেগম এবং সোহরাব হোসেনের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল যে তারা একে অন্যের সন্তানের প্রতি সমান স্নেহ ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। আলেয়া বেগম তামিমকে আপন সন্তানের মতো আদরে রাখবেন, বিনিময়ে সোহরাব হোসেনকেও ত্রয়ীর পিতা হয়ে উঠতে হবে। সেদিন পরিবারের চাপে ত্রয়ীকে তার দাদীর নিকট রেখে এলেও বাড়িতে ফিরে এক দন্ডও শান্তি পাননি আলেয়া বেগম। বারবার চোখের সম্মুখে ভেসে উঠছিল ত্রয়ীর কান্না, মা মা বলে চিৎকার করে তার পিছনে ছুটে আসা।
মেয়েটাকে ওভাবে ফেলে এসে কিছুতেই ঠিক হতে পারছিলেন না তিনি। নিজেকে ভীষণ বড়ো অপরাধী মনে হচ্ছিল, পাষান মনে হচ্ছিল। আলেয়া বেগম সেদিনই সোহরাব হোসেনকে কল করেন এবং চুক্তির কথা বলেন। সোহরাব হোসেন নরম মানুষ। তিনি জানেন বাবা ছাড়া এই পৃথিবীটা কতটা কঠিন। তিনিও ত্রয়ীর পিতা হতে রাজি হয়ে যান। কোনোরূপ বাক্য ব্যয় ব্যতীতই মেনে নেন এ চুক্তিকে। কিন্তু বিয়ের পর বারবার চেষ্টা করেও আলেয়া বেগম ত্রয়ীকে নিজের কাছে আনতে পারেননি। কতশতবার তিনি চেষ্টা করেছেন, ফোন করেছেন, ছুটে গিয়েছেন কিন্তু প্রতিবারই ত্রয়ীর দাদী তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সোহরাব হোসেন নিজেও কম চেষ্টা করেননি। মেয়েটিকে তিনি নিজের সন্তানের মতোই কাছে পেতে চেয়েছেন। কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছেন। আর যেহেতু ত্রয়ীর সাথে তার কোনো রক্তের সম্পর্কও নেই তাই তাকে নিজের নিকটে আনার ক্ষেত্রে ততটা জোরও খাটাতে পারেননি।
আলেয়া বেগম চঞ্চল ভঙ্গিতে প্রবেশ করলেন বসার কক্ষে। হাতে ধরা মোবাইলটি হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে দিলেন সোহরাব হোসেনের দিকে। কণ্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে বললেন,
“ত্রয়ী কল করেছে। দেখুন তো ও কোথায়! আমার মেয়েটা বোধহয় হারিয়ে গেছে।”
আলেয়া বেগমের কথায় চমকে উঠলেন সোহরাব হোসেন, সুমন হোসেন এবং তামিম। ত্রয়ীর কথা তারা অনেক শুনেছেন কিন্তু মেয়েটাকে স্বচক্ষে কখনো দেখা বা তার সাথে কথা বলতে সক্ষম হননি। সোহরাব হোসেন ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন। আলেয়া বেগমের হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে ধরলেন কানের কাছে। স্নেহভরা কণ্ঠে বললেন,
“আসসালামু আলাইকুম, মা। কেমন আছো তুমি?”
তার কথা শেষ হতে না হতেই তামিম মোবাইলটা ছিনিয়ে নিল। সেটা কানের কাছে ধরতে ধরতে বলল,
“কেমন আছো, ভালো আছি এসব বাক্যালাপ পরে হবে। আগে ও কোথায় আছে সেটা জেনে নেই।”
পরপর তামিম সরাসরিই ত্রয়ীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“তুমি এখন কোথায় আছো বলো?”
“একটা স্টেশনে।”
“কোন স্টেশন?”
“জানি না…”
“আশেপাশে তাকাও। দোকানপাটের সাইনবোর্ডে ঠিকানা লেখা আছে। পড়ে বলো।”
ত্রয়ী আশেপাশে তাকালো। অতঃপর ধীর কণ্ঠে বলল ঠিকানাটা। তামিম সবটা শুনে বলল,
“তুমি এখন যে জায়গায় আছো, ওখানেই থাকো। মোবাইলটা কাছাকাছি রেখো। আমাদের লোক যাচ্ছে, ওরা তোমাকে নিয়ে আসবে।”
এই টুকু বলে থামল সে। দম নিয়ে ফের বলল,
“সম্ভব হলে একটু ভিড়ভাট্টা আছে এমন জায়গায় দাঁড়াও। আজকাল কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। স্টেশনে তোমাকে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছু কাপুরুষ বিরক্ত করতে চলে আসতে পারে। আমি আপাতত রাখছি।”
তামিম কল কেটে দিল। ত্রয়ী মোবাইলটা দোকানিকে ফেরত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল ওখানেই। আপাতত ভিরপূর্ণ জায়গা বলতে এটাই আছে। তাছাড়া তামিম আবার কল করার কথা বলেছে। দোকানির নাম্বারে তারা কেউ কল করলে সে এখানে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারবে।
ত্রয়ীর দেওয়া ঠিকানার খুব কাছেই ছিল সুমন হোসেনের শালা অর্থাৎ লুৎফা বেগমের ভাই লিমন আহমেদের বাসা। সুমন হোসেন সাথে সাথে তাকে কল করলেন। যেতে বললেন ত্রয়ীকে আনার জন্য। এরপর তারাও আর সময় ব্যয় করলেন না। ঐ রাতেই তিন জনই রওনা দিলেন ঢাকার উদ্দেশে। আলেয়া বেগমও যেতে চাইলেন তাদের সাথে। কিন্তু এই রাতে তাঁকে সঙ্গে নিল না কেউ। তাছাড়া কালই তো আবার তারা সবাই ফিরে আসবে।
তামিমের কল কাটার ত্রিশ মিনিটও গড়ালো না। এর মধ্যেই একটি কল এলো দোকানির নম্বারে। ওপাশ থেকে বোধ হয় জিজ্ঞেস করা হলো,
“ত্রয়ী আছে? ত্রয়ীকে দিন।”
দোকানি বেশ রুক্ষ কণ্ঠেই জবাব দিল,
“ত্রয়ী কে? ত্রয়ীকে আমি চিনি না। এখানে ত্রয়ী বলতে কেউ নেই।”
ত্রয়ী পাশেই দাঁড়ানো ছিল। সে শুনলো সবটা এবং বুঝলো এটা তার কল। ত্রয়ী মেকি হাসলো। আমতা আমতা করে দোকানিকে বলল,
“আমি ত্রয়ী। এটা আমার কল। মোবাইলটা আবার একটু দিন। আমি কথা বলছি।”
দোকানি চোখে মুখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে মোবাইলটা দিল ত্রয়ীকে। ত্রয়ী কথা বলল। তার দাঁড়িয়ে থাকার নির্দিষ্ট স্থানের নাম বলে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল। মিনিট দুয়েকের মধ্যেই লিমন আহমেদ এসে দাঁড়াল সেখানে। আশেপাশে তাকিয়ে শুধাল,
অনুরাগে তুই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ পর্ব ৪
“ত্রয়ী কে?”
ত্রয়ী তাকালো তার দিকে। পরিপাটি পোশাকে আবৃত লোকটা। বয়সটা একদম কমও নয় আবার বেশিও নয়, এই ৩৫ থেকে ৪০ এর মধ্যে হবে বোধহয়। ত্রয়ী এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল তার অভিমুখে। মিনমিনে কণ্ঠে জবাব দিল,
“আমি ত্রয়ী।”