অনুরাগে তুই পর্ব ১৯

অনুরাগে তুই পর্ব ১৯
সাদিয়া শওকত বাবলি

শীর্ষ কপাল কুঁচকাল। গম্ভীর কণ্ঠে শুধাল,
“এভাবে নতুন বউয়ের মতো ঘোমটা দিয়েছিস কেন? সমস্যা কি তোর?”
ত্রয়ী কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ কফি বানাচ্ছে সে। শীর্ষের কুঁচকানো ভ্রু যুগল আরও কুঁচকে এলো। কিছুটা রূঢ় স্বরে ফের শুধাল,
“কি হলো কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”
ত্রয়ী এবারেও উত্তর দিলো না। অস্তে ধীরে কফিটা বানিয়ে রাখলো চুলার পাশেই। না সে কফির মগটা শীর্ষের হাতে তুলে দিলো, আর না কোনো কথা বলল। মুখ বন্ধ রেখে মাথায় ঘোমটা অব্যহত রেখেই সে শীর্ষকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এলো রান্নাঘর থেকে। চঞ্চল পায়ে ছুটলো নিজ কক্ষের দিকে। শীর্ষ হতবাক হয়ে পড়লো। পর মুহুর্তেই তার চোখ মুখ শক্ত হয়ে উঠল ফের। বয়সে ছোট একটা মেয়ে কিনা তাকে ইগনোর করছে? এত বড়ো সাহস এর? দাঁতে দাঁত চাপলো শীর্ষ। বিরবিরিয়ে বলল,
“তোকে আমি পরে দেখে নেব বালির বস্তা।”
শীর্ষ আর কফিটা খেল না। ধরলোও না হাত দিয়ে। রাগে গজগজ করতে করতে পা বাড়ালো নিজ কক্ষের দিকে।

আকাশের সূর্যটা উজ্জ্বল হতে শুরু করেছে একটু একটু করে। রাতে নীরব হয়ে পড়া জনসাধারণ ছুটতে শুরু করেছে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে। ত্রয়ী তৈরি হয়ে গৃহের বাহিরে এলো কলেজে যাবে বলে। বাড়ির সামনে যেতেই মেয়েটার চোখে পড়লো শীর্ষকে। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে চেয়েই। ত্রয়ী তৎক্ষণাৎ ওড়না টেনে মাথায় ঘোমটা দিলো। মুখটা আড়াল করে তাকালো আশেপাশে। বাড়ির গাড়িটা দেখা যাচ্ছে না কোথাও। হয়তো রিমা তাকে নিবে না বলে আগে আগে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে। এখন আর তার রিকশা ছাড়া যাওয়ার উপায় নেই। কলেজের প্রথম দিন আব্দুর রহমান খান তাকে কিছু টাকা দিয়েছিল চলার জন্য এখন তা ভেঙেই রিকশা নিতে হবে‌। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো ত্রয়ী। শীর্ষের পাশ কাটিয়ে হাঁটা ধরল রিকশার খোঁজে। শীর্ষের দৃষ্টি তীক্ষ্ম থেকে তীক্ষ্মতর হলো। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দাঁড়া।”
ত্রয়ী দাঁড়াল। তবে পিছু ঘুরে গেল না শীর্ষের নিকট। ক্রোধে শীর্ষের শরীরটা রি রি করে উঠল। একটা পুচকে মেয়ে। তার উপর গাধা। সেই মেয়েটা নাকি গতকাল থেকে তাকে এড়িয়ে চলছে। তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। কত বড়ো সাহস এই মেয়ের। শীর্ষ লম্বা লম্বা পায়ে গিয়ে দাঁড়াল ত্রয়ীর মুখোমুখি। কটমট করে শুধাল,
“আমাকে এড়িয়ে চলছিস কেন?”
ত্রয়ী চুপ রইল। উত্তর দিলো না কোনো। শীর্ষ ফের ক্রোধ নিয়ে বলল,
“কি বলছি কথা কানে যাচ্ছে না? আমাকে এড়িয়ে চলার সাহস দিয়েছে কে তোকে?”
ত্রয়ী এবার ব্যাগ থেকে খাতা কলম বের করল। তাতে কিছু একটা লিখে এগিয়ে দিলো শীর্ষের দিকে। শীর্ষ কপালে ভাঁজ ফেলল। ত্রয়ীর হাত থেকে খাতাটা নিয়ে পড়তে শুরু করল লেখাগুলো। খাতায় বেশ গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,
“আপনিই না কাল আমাকে কথা বলতে বারণ করলেন? বললেন আপনার সামনে না যেতে। তাই আপনার সাথে কথাও বলছি না আর মুখও দেখাচ্ছি না।”

শীর্ষ বোকা বনে গেল। কাল সে রাগের মাথায় কি না কি বলে নিজেই বিভিন্ন কাজের চাপে ভুলে গিয়েছিল। আর এই মেয়ে কিনা এখনো সে কথা ধরেই বসে আছে। তার রাগের মাথায় বলা কথাগুলো তাকেই সুদে আসলে ফেরত দিচ্ছে। শীর্ষ হতবাক কণ্ঠে শুধাল,
“তুই এখনো আমার কালকের কথা ধরে বসে আছিস?”
ত্রয়ী উত্তর দিলো না। শীর্ষের হাত থেকে খাতা কলমটা নিয়ে তাতে আবার লিখে দিলো,
“হ্যা।”
একে তো মেজাজ গরম তার উপর এই মেয়ের ঢং। শীর্ষ রাগে দিশেহারা হয়ে খাতা কলম ধরে ছুড়ে মা’র’লো রাস্তায়। শাসিয়ে বলল,

“যা বলার মুখে বল। নয়তো এক থাপ্পড়ে তোর সবকটা দাঁত ফেলে দেব।”
ত্রয়ী ভীত হলো। শীর্ষ যা ছেলে তাতে তাকে থাপ্পড় দিতেও পারে। একটা মেয়ে হয়ে এই রাস্তার মধ্যে গালে থাপ্পড় পড়লে মান ইজ্জত বলে আর কিছু থাকবে না। তাছাড়া ঐ লোকের পুরুষালী শক্ত হাতের থাপ্পড় মেয়েটার নরম গালে পড়লে সে জ্ঞান হারাতেও বোধ হয় বেশি সময় নিবে না। ঢোক গিলল ত্রয়ী। মিনমিনিয়ে বলল,
“আবার রাগ করছেন কেন? আপনার কথাই তো রাখছি। আপনি যা যা বলেছিলেন তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি।”
“ঘোমটা খুলে কথা বল।”
ত্রয়ী ঘোমটা খুলল না। উলটো প্রশ্ন করল,
“কেন?”
“থাপ্রানোর আগে তোর নাটক বন্ধ কর। ঘোমটা খোল বেয়াদব।”
শীর্ষের ধমকে ঈষৎ কেঁপে উঠল মেয়েটা। তড়িঘড়ি করে ওড়নাটা টেনে ঘোমটা সরালো। শীর্ষ ভ্রু কুঁচকাল। দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

“এমনিতে তো আমার কোনো কথা শুনিস না তুই। পরশু ক্লাস না করে বাড়িতে ফিরতে বলেছিলাম শুনেছিলি তুই? তাহলে কাল রাগের মাথায় কি বলতে কি বলে ফেলেছি তা শুনছিস কেন?”
এইটুকু বলে থামল সে। ফের রাগের মাথায় বলল,
“তোকে আর আমার কোনো কথা শুনতে হবে না। বুঝেছিস?”
ত্রয়ী উপর নিচ মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যা সূচক জবাব দিলো। ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল শীর্ষ। থমথমে কণ্ঠে বলল,
“গাড়িতে ওঠ। কলেজে পৌঁছে দিচ্ছি।”
ত্রয়ী যেন কথাটা শুনেও শুনলো না। শীর্ষের কথাকে উপেক্ষা করেই পা চালালো সামনের দিকে। ভ্রু কুঁচকে এলো শীর্ষের। অবাক হয়ে সে বলল,
“ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস? তোকে না বললাম গাড়িতে উঠতে।”
ত্রয়ী দাঁড়াল। পিছন ঘুরে বলল,
“তার আগে না আপনি বললেন আপনার কোনো যেন না শুনি।”

শীর্ষ হতবাক হয়ে পড়লো। এ কোন মেয়ের পাল্লায় পড়লো সে? এমনও মানুষ হয়? একে বোকা বলবে, সহজ সরল বলবে নাকি চালাক বলবে, কোনটা? মেয়েটা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে তাকে পাগল করে তুলছে। মুখ থেকে যা বের করছে তা দ্বারাই মস্তিষ্ক বিক্ষিপ্ত করে দিচ্ছে। শীর্ষ আশেপাশে তাকালো। চোখে পড়লো রাস্তার ধারেই একটা ভাঙা অর্ধ ইট। ইটের টুকরোটা হাতে তুলে নিল সে। ক্রোধে গজগজ করতে করতে সে টুকরোটা হাতে তুলে দিলো ত্রয়ীর। গলা চড়িয়ে বলল,
“নে এটা নে। এটা দিয়ে একটা টাক মে’রে আমার মাথাটা ফাটিয়ে দে। তবুও তোর ঐ উদ্ভট কর্মকান্ড দিয়ে আমাকে পাগল করিস না।”
ত্রয়ী পলক ঝাপটালো। বোকা বোকা কণ্ঠে শুধাল,
“আমি আবার কি করলাম?”
“নাহ, তুই কিছু করিসনি। যা করার আমি করেছি। সব দোষ আমার। তোর মতো একটা গাধীর সাথে কথা বলতে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে।”
ত্রয়ী অপমানিত বোধ করল। এই লোকটা তাকে আগেও গাধী বলেছে। আজও বলল। মেয়েটা প্রতিবাদ করল। হালকা গলা উঁচিয়ে বলল,

“আমি মোটেই গাধী নই।”
“ঠিক তুই গাধী হতে যাবি কেন। গাধা তো আ…”
এই টুকু বলতেই থেমে গেল শীর্ষ। রাগের বশে শেষ পর্যন্ত কিনা নিজেকে নিজে গাধা বলতে যাচ্ছিল সে? উফফফ, এই মেয়টা তাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে। জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল শীর্ষ। নিজেকে কিঞ্চিৎ ধাতস্থ করে বলল,
“গাড়িতে ওঠ।”
এবার আর ত্রয়ী কোনো দ্বিরুক্তি করল না। চুপচাপ উঠে বসলো গাড়িতে। শীর্ষও উঠে বসলো ড্রাইভিং সিটে। গাড়িতে স্টার্ট দিয়ে মুহূর্তেই সাঁই সাঁই করে ছুটলো সামনের দিকে।
কিছুটা সময়ের ব্যবধানেই তারা এসে পৌঁছালো কলেজের সামনে। শীর্ষ গাড়িটা থামাতেই ত্রয়ী গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াল। কোনোরূপ বাক্যব্যয় না করেই হাঁটা ধরলো কলেজের দিকে। শীর্ষ পিছু ডকল তার।
“শোন।”
ত্রয়ী থমকে দাঁড়ালো। পিছু ঘুরে শুধাল,

“কিছু বলবেন?”
শীর্ষ সময় নিল একটু। অতঃপর থমথমে কণ্ঠে বলল,
“সাহেদের সাথে কথা বলবি না কোনো। এমনকি ও তোর সাথে কথা বলতে এলেও বলবি না।”
“কেন?”
“তোর কাছে এত কইফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই। তোকে ওর সাথে কথা বলতে বারণ করেছি ব্যস বলবি না।”
“কিন্তু উনি তো…..”
ত্রয়ী আর নিজের কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারল না। তার আগেই গাড়ি স্টার্ট করল শীর্ষ। মেয়েটার কোনো কথা না শুনেই ছুটে চললো অভিমুখে। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলল ত্রয়ী। শীর্ষের গমনপথের দিকে কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে চেয়ে থেকে ঢুকলো কলেজে। এদিকে ওদিকে আর সময় নষ্ট না করে সোজা চলে এলো ক্লাসে। একটা খালি সিট পেয়ে সেখানে বসতেই কয়েকটি ছেলে এসে দাঁড়ালো তার পাশে। তার মধ্য থেকে একটি ছেলে আবার শুধাল,
“তোমার নাম ত্রয়ী?”
ত্রয়ী চোখ তুলে তাকালো ছেলেটির দিকে। নম্র কণ্ঠে জবাব দিলো,
“জ্বী।”

“আমি রাকিব। শীর্ষ ভাইয়ের বন্ধুর ভাই। যাইহোক তুমি শীর্ষ ভাইয়ের কি হও?”
ত্রয়ী একটু ইতস্তত করল। সে ঠিক কি জবাব দিবে তৎক্ষণাৎ ভেবে পেল না। আশ্রিতা যে বলবে তাও কেমন একটা লাগছে। কলেজের মতো একটা স্থানে নিজের পরিচয় দিতে এমন একটি শব্দ ব্যবহার করা নিশ্চয়ই দৃষ্টিনন্দন নয়। মেয়েটা কিছুটা সময় নিয়ে ভাবলো। আমতা আমতা করে জবাব দিলো,
“আমি উনাদের বাড়িতে থাকি।”
“বাড়িতে থাকো সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু সম্পর্কে তার কি হও?”
“বোন।”
“ওহ তাহলে তো ভালোই হলো। শীর্ষ ভাইয়ের বন্ধু আমার ভাই। আর আমি তার বোনের বন্ধু। কি আমার সাথে বন্ধুত্ব করবে না তুমি?”
ত্রয়ী জোরপূর্বক হাসলো। ইতস্তত করে বলল,

“কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনি না।”
“ও আস্তে আস্তে চিনে যাবে।”
“তাহলে বন্ধুত্বটাও না হয় চেনার পরেই হবে। আমি অপরিচদের সাথে বন্ধুত্ব করি না।”
“কিন্তু আমি তো শীর্ষ ভাইকে চিনি। আর সেও আমাকে চিনেন।”
“তাহলে তার সাথে গিয়েই বন্ধুত্বটা করে নিন। আমি আপাতত আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে ইচ্ছুক নই।”
ত্রয়ীর নরম কণ্ঠেই বলল প্রতিটি কথা। রাকিব একটু দমে গেল। একটু সময় নিয়ে ভেবে আর কিছু বলবে তার আগেই ক্লাসে অধ্যাপক প্রবেশ করলেন। রাকিব এবং তার বন্ধুরা আর দাঁড়াল না ত্রয়ীর নিকটে। তবে চলে যাওয়ার পূর্বে বলে গেল,
“তোমার সাথে আবার পরে কথা হবে।”

চারদিকে হইহই রইরই পরিবেশ। মানুষ আর যানবাহনের সম্মিলিত কোলাহলে কান যেন বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম। এমনই এক কোলাহল পূর্ণ স্থানে মেহেরের কলেজটা অবস্থিত। আর সেই কলেজের সামনেই চোখমুখ কুঁচকে দাঁড়িয়ে রয়েছে আলভী। অনেক কষ্টে অনেককে ধরে এই মেয়েটার কলেজের ঠিকানাটা বের করেছে সে। কিন্তু সেই মেয়ে কোথায়? এখনো কলেজ থেকে বের হচ্ছে না কেন? যার কাছ থেকে মেয়েটার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিল সে তো বলেছিল এই সময়ের মধ্যে কলেজ শেষ হয়ে যাবে। আলভী বিরক্তি হলো। এক পলক হাত ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে ফের তাকালো কলেজের গেটের দিকে। সাথে সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল সে। ঐ তো আসছে মেয়েটা। জিন্সের সাথে আজ একটা লং কুর্তি জড়িয়েছে সে শরীরে। গলায় অবশ্য একটা ওড়না আছে। আর কাঁধে কাঁধ ব্যাগ। মেয়েটা কলেজের বাইরে এসে দাঁড়াল। কপাল কুঁচকে তাকালো এদিকে ওদিকে। হয়তো গাড়ি খুঁজছে। আলভী আর দেরি করল না। লম্বা লম্বা পায়ে গিয়ে দাঁড়াল মেহেরের মুখোমুখি। ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

“কেমন আছেন মেহের?”
মেহের ঠিক চিনে উঠতে পারল না আলভীকে। সেদিন রাতে অল্প সময়ের জন্য দেখেছিল তাকে। তাও ততটা ভালোভাবে খেয়াল করেনি। মেয়েটা কপাল কুঁচকে শুধাল,
“আপনি কে? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।”
আলভী ব্যথিত হলো। মেয়েটা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল তাকে? তবুও জোরপূর্বক ওষ্ঠে হাসি ধরে রাখলো সে। অতঃপর বলল,
“আমাকে চিনতে পারলেন না? আমি আলভী। আপনার জন্মদিনের রাতে ভুল করে আপনার রুমে ঢুকে পড়েছিলাম।”
শেষক্ত কথাগুলো একটু আস্তে বলল আলভী। তবে তাকে চিনতে পেরে মেহেরের কপালে বিরক্তির ভাঁজ ফুটে উঠল। তবুও ভদ্রতা বজায় রাখতে সে বলল,
“ওহ, আসলে সেদিন রাতে অল্প সময়ের জন্য দেখেছি তো আপনাকে তাই ঠিক চিনতে পারিনি।”
“সমস্যা নেই। কিন্তু আপনি এখানে? কোনো কাজ ছিল নাকি?”

সবটা জেনেও না জানার ভান ধরলো আলভী। মেহের নিজের কলেজের দিকে ইশারা করল। ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে বলল,
“এটা আমার কলেজ। কলেজে এসেছিলাম।”
“ওহ, আচ্ছা।”
আলভী আর কিছু বলবে তার আগেই একটি সাদা রঙা গাড়ি এসে থামল তাদের সামনে। মেহের এক পলক তাকালো গাড়িটার দিকে। অতঃপর আলভীর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার গাড়ি চলে এসেছে। আসছি আমি। ভালো থাকবেন।”
মেহের চলে গেল। হতাশার নিঃশ্বাস ফেলল আলভী। তারও বা আর কি করার আছে। মেহের যেহেতু চলে গেছে তখন আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ কি? সেও আর সময় নষ্ট না করে চলল বাড়ির পথে।

অনুরাগে তুই পর্ব ১৮

রাত্রি গভীর। চারদিকটা নীরব হয়ে পড়েছে। দোকান-পাঠ, বাড়িঘরের আলো নিভে অনেকটা অন্ধকারও হয়ে পড়েছে ইতোমধ্যে। রবি সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে কেবলই বাড়ি ফিরলো। দিনের আলোয় বাড়ি ফিরলে নির্ঘাত রাশেদ আহমেদের রা’ম দায়ে তার প্রাণটা হারাতে হতো। তাই এই রাতের আঁধারে ফেরা। ছোট বোন রাইমাকে আগে থেকেই মেসেজ করে দরজাটা খোলা রাখতে বলেছিল বিধায় বাড়িতে ঢুকতে তেমন কষ্ট হয়নি তার। ভিতরে ঢুকে চারদিকটা নীরবতায় ঘেরা দেখে একটু স্বস্তি পেল সে‌। তবে তার এই স্বস্তি টিকলো না বেশিক্ষণ। বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই তার কানে এসে বারি খেলো,
“অবশেষে বাড়িতে ফিরলেন তাহলে মহারাজ। আপনার প্রজা যে সেই কাল থেকে আপনার অপেক্ষা করছে।”

অনুরাগে তুই পর্ব ২০