অন্তঃদহন পর্ব ২৭ (২)

অন্তঃদহন পর্ব ২৭ (২)
DRM Shohag

প্রায় সাতমিনিট পেরিয়েছে, আকাশ যেভাবে সন্ধ্যাকে ধরে রেখেছিল, এখনো সেভাবেই আছে। সন্ধ্যা আকাশের কথা শুনেছে। সে চুপচাপ থেকেছে। দিনে আকাশের করা আচরণে সে ভ’য় পেলেও এখন, আকাশের এই ঠাণ্ডা মে’জা’জে কথা বলায় সন্ধ্যা স্বাভাবিক হয়েছে। আকাশের ব্যবহার রীতিমতো তাকে ভীষণ অবাক করছে। সে ভাবতো, আকাশ তাকে ভুলে গিয়েছে, কিন্তু আকাশের ব্যবহার তো উল্টো কথা বলে।
সে যে আকাশের একটু হলেও দুর্বলতা, এটুকু বুঝতে পেরেছে সন্ধ্যা। সে তো বাচ্চা নয়।

ভাবনার মাঝেই আকাশ বা হাতে সন্ধ্যার ঘাড়ে পড়ে থাকা কিছু চুল সরিয়ে দেয়। সময় ব্য’য় না করে মুখ নামিয়ে কাঁধ বরাবর ঠোঁট রাখে। সন্ধ্যা বুঝতে পারে। অদ্ভুদ একটা ঝাঁকুনি খায়। আকাশ বুঝতে পেরে নিঃশব্দে হাসলো। এরপর কাঁধ থেকে একটু উপর দিকে গলায় ঠোঁট চেপে রাখে।
সন্ধ্যা ঢোক গিলল। দু’হাতে পরনের ড্রেস চেপে ধরে। একটু আগে আকাশের বলা হাসবেন্ড শব্দটি সন্ধ্যার মস্তিষ্কজুড়ে ঘুরছে। সাথে আকাশের পাঞ্জাবির বোতাম খোলার দৃশ্য।
আকাশ থামেনি। সন্ধ্যার বাম কাঁধে এটুকু সময়ে গুণে গুণে ১২ টা চুমু খেয়েছে। সন্ধ্যার জমে যাওয়া বুঝতে পেরে আকাশ আবার-ও হাসলো। শান্ত সন্ধ্যাকে দেখে স্বস্তি পেল। দৃষ্টি সন্ধ্যার কাঁধে। জামাটা কাঁধ থেকে নিচ দিকে কিছুটা সরে গিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আকাশ সন্ধ্যাকে আরেকটু জ্বালাতে সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদুস্বরে বলে,
– সন্ধ্যামালতীর যে কালো এতো পছন্দ, জানতাম না। আজ জেনে নিলাম।
সন্ধ্যা প্রথমে বুঝতে না পারলেও একটু পর-ই আকাশের কথাটা বুঝতে পেরে দু’হাতে আকাশকে ধাক্কা দেয়। আকাশ বুঝতে পারেনি, হঠাৎ ধাক্কা খেয়ে দু’পা পিছিয়ে যায়। বিরক্ত চোখে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যা চোখ পাকিয়ে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। কি পরিমাণ অ’স’ভ্য লোক ভাবা যায়! সন্ধ্যার মনে আছে, এক বছর আগে-ও সন্ধ্যা পুকুরে পড়ে গেলে আকাশ এটা নিয়ে কমেন্ট করেছিল।
সন্ধ্যার ভাবনার মাঝেই আকাশ এগিয়ে এসে ডান হাতে সন্ধ্যা জামা টেনে দৃশ্যমান কালো ফিতা ঢেকে দিল। সন্ধ্যা ল’জ্জায় চোখমুখ খিঁচে নেয়। মাথা নিচু করে নেয়।
আকাশ দু’পা পিছিয়ে গিয়ে সন্ধ্যার দিকে চেয়ে হেসে বলে,

– যে কয়দিন দেখলাম, শুধু কালো-ই দেখলাম। আমার-ও সাদার পাশাপাশি বেশ পছন্দের কালার কালো, সাদা- কালোর কম্বিনেশন জমবে ভালো!
ল’জ্জায় সন্ধ্যার কান গরম হয়ে উঠলো। দু’হাতে কাঁধের জামা টানলো। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে তার।
মনে মনে সেই সভাপতিকে একটা গা’লি-ও দিল। তার ওড়না নিয়েছে বলেই তার আজ এতো দু’র্দ’শা!
আকাশ দেখল, সন্ধ্যা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝল, সন্ধ্যা ল’জ্জা পাচ্ছে। মিটিমিটি হাসলো। এরপর একটু এগিয়ে এসে গলা ঝেড়ে বলে,

– জানো তো, মনের কথা চেপে রাখতে নেই। তুমি-ও আমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারো, তোমার পছন্দের কালার। যেহেতু আমি তোমার হাসবেন্ড। আমাকেই সব কিনে দিতে হবে। আমি খুব সেনসিটিভ হাসবেন্ড,, তোমার পছন্দকে অবশ্যই প্রায়োরিটি দিব। সাথে আমার পছন্দের কালার অ্যাড করে দিব।
সন্ধ্যার ইচ্ছে করল, আকাশের গালে ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দিতে। মনে মনে বিড়বিড় করল,
– অ’স’ভ্যের দাদা।
আকাশ পকেট থেকে তার ফোন বের করে বায়ানের নাম্বারে কল করে। ফোন লাউডে দেয়। ওপাশ থেকে বায়ান আকাশকে সালাম দেয়। আকাশ গলা ঝেড়ে বলে,
– বায়ান দ্রুত মার্কেটে যাও। আমি আমার বউয়ের পছন্দের কাপড়ের পছন্দের কালার জেনে গিয়েছি। এক্ষুনি সব কিনতে হবে।
বায়ান বলে,

– কি কিনতে হবে স্যার?
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায় আকাশের দিকে।
আকাশ সন্ধ্যার দিকে চেয়ে একটু হেসে বলে,
– সাদা, কালো…..
এটুকু বলতেই সন্ধ্যা পা উঁচু করে আকাশের কান থেকে ফোন কেড়ে নেয়। রে’গে তাকায় আকাশের দিকে। কি পরিমাণ বে’হা’য়া লোক হলে তার এসব কাপড় একটি ছেলে মানুষকে দিয়ে কেনাচ্ছে। আকাশ চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। আফসোসের সুরে বলে,

– ফোন দাও। বায়ান ওয়েট করছে। আমিও ওয়েট করছি তোমাকে ইম্পর্ট্যান্ট কাপড় কিনে দেয়ার জন্য। আর কত ওয়েট করব, বলো? দেখি দাও, ফোন দাও।
সন্ধ্যা দ্রুত কল কেটে দিয়ে ফোনসহ হাত পিছনে রেখেছে। আকাশ এগিয়ে আসলে সন্ধ্যা পিছিয়ে যায়। আকাশ এগিয়ে এসে সন্ধ্যার পিছন থেকে তার ফোন নিতে গেলে সন্ধ্যা বা হাতে আকাশকে ঠেলে সরাতে চায়, কিন্তু আকাশকে নাড়াতে পারলো না।
না পেরে আকশের ফোন ছুড়ে ফেলে। আকাশ হতভম্ব হয়ে যায়। তার ফোনে ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস এর অভাব নেই। আর এই মেয়ে পুরো ইন্না-লিল্লাহ করে দিল তার ফোনের।
ফোনটি ঘরের কোণায় একটি টেবিলের সাথে লেগে আবার-ও ছিটকে আকাশের পা থেকে কিছুটা দূরত্বে এসে পড়েছে।

সন্ধ্যা ঢোক গিলল। ফোন মনে হয় ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু তবুও সন্ধ্যার মনে হলো, সে ঠিক-ই করেছে। এরকম অ’স’ভ্য লোকদের এভাবেই শায়েস্তা করতে হয়। সন্ধ্যা উল্টো ঘুরে বেডের দিকে যেতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার হাত টেনে তার দিকে ফিরিয়ে ধমকে বলে,
– কি করলে এটা?
সন্ধ্যা ভীত চোখে তাকায়। আকাশ সন্ধ্যার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে নিজেকে শান্ত করল। আবার তাকে ভ’য় পেয়ে পালাই পালাই করলে আরেক জ্বালা। সন্ধ্যার হাত ছেড়ে দেয়। এগিয়ে গিয়ে ফোন তুলে দেখল আলো অন হচ্ছে। কিন্তু উপরের গ্লাস ভেঙে চুরচুর হয়ে গিয়েছে। ফোন অন হচ্ছে দেখে আকাশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ফোন একেবারে ন’ষ্ট হয়ে গেলে মারাত্মক ঝামেলা হতো।
সন্ধ্যা বেড এর উপর থেকে তার ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরোতে নিলে আকাশ সন্ধ্যার হাত টেনে মনে মনে হেসে বলে,

– না খেয়ে কোথায় যাচ্ছো? আমার ছোট বউয়ের হাতের রান্না। টেস্ট করে বলো, কেমন হয়েছে? এসো।
এই বলে আকাশ সন্ধ্যার হাত ধরে টেনে বেডের সামনে দাঁড় করায়। এরপর টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্যাকেট আনতে যায়।
সন্ধ্যা কটমট দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। সন্ধ্যা এতোক্ষণে খুব ভালোই বুঝেছে, আকাশ বিয়ে-টিয়ে করেনি। কিন্তু তাকে ভুলভাল বলে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চায়।
আকাশ সন্ধ্যার দৃষ্টি খেয়াল করে মনে মনে আবার-ও হাসলো। এরপর সন্ধ্যার দিকে খাবারের প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

– রিভিউ দিতে হবে কিন্তু। নয়তো আমার ছোট বউ অভিমান করবে, ও খুব অভিমানী বুঝলে?
সন্ধ্যা দাঁত কটমট করল। কি যে রা’গ লাগছে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল। আকাশের দিকে চেয়ে ভদ্রতাসূচক হেসে খাবারের প্যাকেট টি নিল। আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে। সন্ধ্যা যে হাসবে, এটা বোধয় সে আশা করেনি। সন্ধ্যা হাতের প্যাকেট টি বেডের উপর রেখে তার ফোনে কিছু একটা টাইপ করে আকাশের দিকে তাক করে। আকাশ সন্ধ্যার ফোনের স্ক্রিনে তাকালো, যেখানে লেখা,,

– অবশ্যই রিভিউ দিব। আমার সৌম্য ভাইয়ার পরে, আরেকটি ভাইয়াকে খুঁজে পেয়েছি। যে ভাইয়ার বউ আমার জন্য এতো ক’ষ্ট করে রান্না করে পাঠিয়েছে, আমি রিভিউ না দিলে কি হয়! আপনি এক কাজ করুন, ভাবিকে একটা কল করে বলুন, আমি তার খাবারের রিভিউ দিতে রাজি হয়েছি।
লেখাগুলো পড়ে আকাশ বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় সন্ধ্যার দিকে। এই ইনোসেন্ট মেয়ের মনে কত ভ’য়া’নক চিন্তাভাবনা চলে, ভাবা যায়?
সন্ধ্যা আকাশের দৃষ্টি পাত্তা দিল না। সে মোক্ষম জবাব দিতে পেরে শান্তি পাচ্ছে। ফোন রেখে বেডের উপর বসে। প্যাকেটের ভেতর থেকে একটি বক্স বের করে। বোতলের পানি দিয়ে ডান হাত ধুয়ে ভাত মাখায়। ক্ষুধা লেগেছে খুব। সেই সকালে খেয়েছিল। এরপর শুধু চকলেট খেয়েছিল। ভাত মাখাতে মাখাতে ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকায়, তখন-ই আকাশ ঝড়ের বেগে এসে ডান হাতে সন্ধ্যার গাল চেপে ধরে বলে,

– এই মেয়ে এই, আমি তোমার কোন জনমের ভাই লাগি? এসব ফা’ল’তু ভাইবোনের কোনো জায়গা নেই আমার লাইফে। এসব জ’ঘ’ণ্য শব্দ আর একদিন ইউস করলে, তোমার সব দাঁত ভেঙে, চানাচুর ভাজা করে খাবো। বুঝেছ?
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় তাকায়। দাঁত ভেঙে চানাচুর ভাজা খায়, এমন উদ্ভট কথা জীবনের প্রথম শুনল। সন্ধ্যা কি রিয়েকশন দিবে, সেটাই বুঝতে পারছে না। গালে একটু ব্য’থা পেলেও আকাশের এক্সপ্রেশন দেখে তার হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে হাসলো না। মুখে ব্য’থার ছাপ ফুটে ওঠে। আকাশ খেয়াল করতেই সন্ধ্যার গাল ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। চোখ বুজে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
সন্ধ্যার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে সারাদিনের কর্মকান্ড ভেবে আকাশ হতাশ। এটা বউ না-কি অন্যকিছু? একদিনেই তার অবস্থা পুরো নাজেহাল করে ছেড়েছে। এতো খামচি, ধাক্কা, থুতু, সব খেয়ে এখন তাকে শুনতে হচ্ছে ভাইয়া ডাক? এই ছিল কপালে?

সন্ধ্যা আড়চোখে আকাশের দিকে তাকালো। চোখ নামিয়ে মুখে ভাত নেয়। তখন-ই আকাশ একটি চেয়ার টেনে এনে সন্ধ্যার সামনে বসে। মুখের সামনে আকাশকে দেখে সন্ধ্যা অবাক হয়। আকাশ ডান বা বাম পায়ের উপর তুলে চেয়ারে হেলান দেয়। দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে সন্ধ্যার দিকে তাকায়। সন্ধ্যা বিব্রতবোধ করে। এভাবে মুখের সামনে বসেছে কেন? সন্ধ্যা চোখ নামিয়ে নিয়ে মুখের খাবার গিলে নেয়। দ্বিতীয়বার খাবার মুখে নিয়ে সামনে তাকালে দেখল আকাশ এখনো তার দিকে তাকিয়ে আছে। সন্ধ্যা কেমন হাসফাস করে। বিরক্ত লাগছে তার। পাশ থেকে ফোন তুলে বা হাতে সেখানে টাইপ করে আকাশের দিকে ধরে। আকাশ ফোনের দিকে তাকালো। যেখানে লেখা,

– আপনি বলেছিলেন, আপনি আমার থেকে ১০ হাত দূরে থাকবেন। কিন্তু আপনি তো এক হাত দূরত্ব-ও মেইনটেইন করছেন না!
আকাশ লেখাটি পড়ে একটু হাসলো। সন্ধ্যা প্রশ্নাত্মক চোখে চেয়ে আছে আকাশের দিকে। আকাশ বা পা নাড়াতে নাড়াতে ডান হাতে গাল চুলকে সিরিয়াস মুডে বলে,
– বলেছিলাম না-কি? প্রুফ কোথায়? প্রুফ ছাড়া আকাশ নওয়ান কোনো কাজ করেনা। আছে প্রুপ? থাকলে দ্রুত দেখাও।
সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে। কি পরিমাণ পল্টিবাজ এই লোক, ভাবা যায়?
আকাশ আবার-ও দু’হাত আড়াআড়িভাবে গুঁজে বাঁকা হেসে বলে,
– প্রুপ ছাড়া কথা বলার জন্য তোমার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। শাস্তিটা অবশ্যই সম্মানের সাথে দেয়া হবে। চিন্তা কর না সন্ধ্যামালতী।

সন্ধ্যা রে’গে তাকায় আকাশের দিকে। এরকম অ’স’হ্যকর লোক তার জীবনে আর দু’টো দেখেনি সে। বিরক্তি নিয়ে তার ফোন বেডের উপর শব্দ করে রেখে মাথা নিচু করে খাওয়ায় মন দেয়। মনে মনে আকাশের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে। আবার ভাবলো, এখন তো সে-ও আকাশের গুষ্টির মধ্যে অ্যাড হয়ে গিয়েছে। ভেবে আর-ও বিরক্ত হলো। এখন তাকে ভেবে ভেবে এই আকাশকে কথা শোনাতে হবে।
আকাশ সন্ধ্যার অবস্থা দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে। পকেট থেকে ফোন বের করে বায়ান এর নাম্বারে মেসেজ করে,
– কিছু সাদা, কালো জর্জেট ওড়না আনো বায়ান। ফার্স্ট।
মেসেজটি সেন্ড করে আবার-ও হাসলো। এই সাদা, কালো নিয়ে সন্ধ্যার রিয়েকশন টা মারাত্মক ছিল! সন্ধ্যার দিকে চেয়ে বিড়বিড় করল,

– জোশ! কিন্তু তেজী! ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার!
কিছুক্ষণ পর বায়ান আকাশের ফোনে কল করলে আকাশ কল রিসিভ করে। বায়ান মার্কেটে গিয়ে আকাশকে কল করেছে। সে আসলে বুঝতে পারছে না, আকাশ তাকে কেমন ওড়না নিতে বলেছে। নিতে বললেও কার জন্য? মেয়েদের জন্য কি? সে তো এসব কেনেনি কখনো। এই প্রথম আকাশের থেকে এমন উদ্ভট কাজ পেয়ে বেচারা একটু হতাশ। আকাশ ফোন রিসিভ করলে বলে,
– স্যার আপনার কথা বুঝিনি। মানে কার ওড়না? আপনি কি পাঞ্জাবির সাথে ওড়না পরবেন স্যার? কিন্তু আপনি তো এসব পরেন না। বলছিলাম কি স্যার, ওড়না না পরাই ভালো। কেমন যেন হাফ লেডিস হাফ লেডিস লাগে।
আকাশ রে’গে এক কড়া ধমক দেয়,

– বায়ান?
ওপাশে বায়ান ঝাঁকি দিয়ে ওঠে।
সন্ধ্যার খাওয়া প্রায় শেষ। বাটিতে দু’টো গরুর মাংস, সাথে কিছু ঝোল আছে। আকাশের এমন ধমকে বেচারি ঝাঁকি দিয়ে ওঠে। ফলে কোলের উপর রাখা বাটি ছিটকে পড়তে নেয়, সন্ধ্যা বাটি ধরতে চায়, সামনের দিকে কিছুটা হেলে যায়। বাটি তো ধরতে পারলো-ই না। উল্টে সন্ধ্যা ঠাস করে আকাশের উপর উপুড় হয়ে পড়ে যায়। সাথে বাটির ভেতরে অবশিষ্ট ঝোল সব আকাশের পাঞ্জাবির উপর পড়ে, সন্ধ্যার জামাতে-ও মাখামাখি হয়ে যায়। সন্ধ্যা আকাশ দু’জনেই হতভম্ব হয়ে যায়।

আকাশ মাথা নিচু করে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। সন্ধ্যার মাথা তার কাঁধের কাছে। সন্ধ্যা অপরাধীর ন্যায় আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ কি বলবে বুঝল না। যদি-ও ব্যাপারটি এক্সিডেন্ট ছিল। কিন্তু উপর থেকে মনে হচ্ছে, তার এক ধমকে সন্ধ্যা তার কোলে এসে পড়েছে। কথাটা ভাবতেই আকাশ বেশ মজা পায়। মনে মনে হাসলো।
সন্ধ্যা ঢোক গিলে আকাশের উপর থেকে উঠে দাঁড়াতে চায়, তার আগেই আকাশ বা হাত সন্ধ্যার কোমরে রেখে সন্ধ্যাকে সোজা করে বসিয়ে দেয়। দু’জনের কাপড়ের অবস্থা যা তা! দেখল আকাশ। ফোন কেটে গিয়েছে। আকাশ বায়ানের নাম্বারে মেসেজ করল,
– একটি পাঞ্জাবি, সাথে একটি থ্রি পিস আনবে। আর মেয়েদের একজোড়া জুতো। বুঝেছ?
সাথে কালার-ও বলে দেয়।
বায়ান রিপ্লে করে,

– জ্বি স্যার! কিন্তু জামা আর জুতোর সাইজ টা কত স্যার?
সন্ধ্যা আকাশের কোল থেকে উঠতে চাইছে। আকাশের হাত সরাতে চাইলে আকাশ আর-ও শক্ত করে চেপে ধরে সন্ধ্যাকে। অতঃপর বলে,
– তোমার সাইজ কত?
কথাটা শুনতেই সন্ধ্যা আকাশের দিকে রেগে তাকায়। এরকম অ’স’ভ্য লোক সে জীবনেও দেখেনি। জীবনে ভালো কথা বলে না। উল্টাপাল্টা কথা ছাড়া যেন কথা-ই বলতে পারেনা। আকাশ ভ্রু কুঁচকে তকায় সন্ধ্যার দিকে। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে থেকেই বায়ানের নাম্বারে কল করে বলে,
আকাশ খুব সূক্ষ্ণভাবে সন্ধ্যাকে পরোখ করে একটি সাইজ বায়ানকে বলে দেয়। এরপর বলে,

– আর এক প্যাকেট পোলি-ও আনবে। আমার কাছে এক পোলি-ও রোগী আছে। যে ধমক খেয়ে ঠাস ঠাস করে পড়ে যায়।
কথাটা বলে কল কাটলো। এরপর সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
– নিশ্চয়ই তোমার ভাই তোমায় না খাইয়ে না খাইয়ে পোলিও রোগী বানিয়ে ফেলেছে।
রা’গে সন্ধ্যার নিজের মাথার চুল নিজের-ই ছিঁড়তে ইচ্ছে করল। তার কোমরে রাখা আকাশের হাতে দু’হাতে খামচে ধরলে আকাশ দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়। সন্ধ্যা ছাড়া পেয়ে আকাশের কোল থেকে নেমে দূরে সরে দাঁড়ায়। আকাশ তার হাতের দিকে তাকালো। বউটা তাকে খামচেই আধম’রা করল। ইশ!
এরপর সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে অসহায় কণ্ঠে বলে,

– তুমি তো মারাত্মক পা’ষা’ণ নারী সন্ধ্যামালতী!
সন্ধ্যা আকাশের দিকেই তাকিয়ে ছিল। আকাশ তাকাতেই চোখ সরিয়ে নেয়। আকাশ মৃদু হাসলো। সন্ধ্যা ওয়াশরুমে যায় হাত ধোয়ার জন্য।
কিছুক্ষণ পর,

আকাশের ফোনে কল আসে। বায়ানের ফোন পেয়ে আকাশ ঘর থেকে বেরোনোর জন্য কয়েক পা এগোয়। সন্ধ্যা আকাশকে যেতে দেখে সে-ও বেডের উপর থেকে তার ফোন নিয়ে আকাশের পিছে দৌড় দেয়, এই ঘর থেকে বেরোতে পারলেই সে বাঁচে। পায়ের শব্দ পেয়ে আকাশের পা থেমে যায়। সন্ধ্যা বুঝতে পারেনি। হঠাৎ আকাশ থেমে যাওয়ায় সন্ধ্যা আকাশের সাথে ধাক্কা খেয়ে দু’পা পিছিয়ে যায়। আকাশের পিঠে কপাল বরাবর ধাক্কা খেয়েছে। ডান হাত তুলে কপাল ঘষে। আকাশ উল্টো ঘুরে দাঁড়ায়। সন্ধ্যাকে কপাল ঘষতে দেখল। দু’পা এগিয়ে গিয়ে রে’গে বলে,
– প্রবলেম কি তোমার? খাচ্ছিলাম তোমায়? কিছুই তো করলাম না। তাহলে পালাতে চাইছ কেন?
সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। সে কখন পালাতে চাইলো। সে এই রুম থেকে বেরোবে না? তাকে রেখেই তো চলে যাচ্ছিল। আবার তাকেই রা’গ দেখাচ্ছে।

আকাশ বায়ানের নাম্বারে কল করে রুম নম্বর বলে, এই রুমে কাপড়ের ব্যাগ দিয়ে যেতে বলে। মিনিট তিন পর বায়ান দরজায় নক করলে আকাশ দরজা খুলে বায়ানের থেকে ব্যাগটি নিয়ে আবার-ও দরজা আটকে দেয়। জামা আর জুতোর প্যাকেটটি সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে,
– চেঞ্জ করে এসো।

সন্ধ্যা প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায়। বুঝল না। ভাবলো, কি চেঞ্জ করে আসবে? আকাশ বায়ানকে জামা, পাঞ্জাবি আনার কথা মেসেজে বলায় সন্ধ্যা আর-ও বুঝতে পারছে না। আকাশের রা’গ লাগছে। এতোক্ষণ ঠিক-ই ছিল। এই যে একটু আগে সন্ধ্যার এভাবে দৌড়ানোয় সে ভেবেছে সন্ধ্যা আবার তার থেকে পালাতে চাইছিল, এতেই মে’জা’জ খারাপ হয়েছে। সন্ধ্যাকে চুপচাপ দেখে আকাশ আবার-ও গম্ভীর গলায় বলে,
– আচ্ছা ঠিক আছে, আমি-ই চেঞ্জ করিয়ে দিচ্ছি।
কথাটা শুনতেই সন্ধ্যা টান মেরে আকাশের হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে নেয়। সন্ধ্যা আন্দাজ করতে পেরেছে, তাদের জামায় তরকারি ভরেছে বলে হয়তো আকাশ কিছু এনেছে।
আকাশের হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে সন্ধ্যা দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়। আকাশ এবার হাসলো।

সন্ধ্যা, আকাশ দু’জনেই চেঞ্জ করে রুম থেকে বেরিয়েছে। আকাশের বা হাতে তিনটে ব্যাগ। যেটার একটায় আকাশের পাঞ্জাবি, আরেকটায় সন্ধ্যার জামা। আরেকটিতে সন্ধ্যার কলেজ জুতো। সন্ধ্যার হাত থেকে টেনে জোর করে নিয়েছে ব্যাগ দু’টো।
রুম থেকে বেরিয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে আকাশ। সন্ধ্যা সামনের দিকে যেতে নিলে সৌম্য এগিয়ে এসে বলে,
– তুই কোথায় ছিলি বোনু? কিছু খেয়েছিস?
সন্ধ্যা তার ভাইকে দেখে মৃদু হাসলো। মাথা নেড়ে বোঝালো সে খেয়েছে।
সৌম্য মাত্র-ই ইরার রুম থেকে বেরিয়েছে। বেরিয়ে আকাশের পাশে সন্ধ্যাকে দেখে এগিয়ে আসে। অবাক হয় সন্ধ্যার পরনে জামা দেখে। সন্ধ্যার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল, অথচ এখন তার পরনে পার্পেল কালার এর একটি জর্জেট জামা। মাথায় ওড়না টানা। পায়ে সেইম কালার এর জুতো। সৌম্য অবাক হয়ে বলে,

– তোর ড্রেস কোথায়? এই জামা কোথায় পেলি?
আকাশ সৌম্য’র কথাটা শুনে সাথে সাথে কল হোল্ড করে দেয়। এরপর একটু এগিয়ে এসে বলে,
– সন্ধ্যা আমার সাথে ছিল। ১০২ নম্বর কেবিন নিয়েছিলাম। ওর জামা আমি চেঞ্জ করিয়ে দিয়েছি। শুধু ও জামা চেঞ্জ করেনি। আমি-ও করেছি। আই মিন পাঞ্জাবি চেঞ্জ করেছি। প্রায় বছর ঘুরে বউকে কাছে পেলাম তো, তাই সময় ন’ষ্ট করতে চাইছি না আর কি। সেকেন্ড বারের মতো কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ট করলাম। আর কিছু শুনতে চাও? ও হ্যাঁ, গোসল বাসায় গিয়ে-ই সেরে নিব। তাই চুলগুলো শুকনো। হসপিটালের ওয়াশরুমে কমফোর্ট না।
আকাশের কথা শুনে সন্ধ্যা, সৌম্য দু’জনেই বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে সৌম্য’র দিকে। সৌম্য’কে চুপ দেখে আকাশ আবার-ও বলে,

– আর কিছু শুনতে চাইলে বলো?
সৌম্য বাকহারা হয়ে তাকিয়ে আছে। সে আকাশকে ভুল করে খু’নি ভেবেছিল। আসমানী নওয়ান ভুল তো ঠিক-ই ভেঙে দিয়েছে। সৌম্য মনে মনে ভীষণ অনুতপ্ত ছিল আকাশকে ভুল বোঝার জন্য। সে স্যরি-ও বলবে ভেবেছিল। কিন্তু সৌম্য’র এখন মনে হচ্ছে আকাশ খু’নির চেয়ে-ও ভ’য়ং’কর! ঠিক কোন লেভেলের মানুষ এসব বলতে পারে?
আকাশ সৌম্য’র দৃষ্টি দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

– আমার উত্তর শুনে এরকম দৃষ্টি দেয়ার কোনো মানে নেই। তোমার কোয়শ্চন যেমন, আমার উত্তর তেমন! আর কিছু জানতে চাইলে বলো। আমার উত্তর দিতে প্রবলেম নেই।
সৌম্য’র কি বলা উচিৎ? দৃষ্টি ফিরিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকালে দেখল সন্ধ্যা তার দিকেই চেয়ে আছে। দু’জনেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। দু’ভাইবোন এ জীবনে এতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছে বলে তাদের মনে পড়ে না। সন্ধ্যার কান্না পাচ্ছে ল’জ্জায়। সে আর এখানে দাঁড়ালো না। সৌম্য’কে পাশ কাটিয়ে দ্রুত কেবিনের দিকে এগোয়, যেখানে আসমানী নওয়ান সহ সবাই আছে।
সৌম্য হতাশ! কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না সে।
আকাশ বাঁকা হাসলো। দু’ভাইবোনকে আচ্ছা মতো জব্দ করেছে। মনটা ফুরফুরে লাগছে। তার সন্ধ্যামালতীকে যেমন তার থেকে কেড়ে এনেছিল। সন্ধ্যামালতী-ও তাকে কাঁদিয়ে এসেছিল। এবার বুঝুক মজা। আকাশ আবার-ও ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে চলে যায়।

ইরার মামা আর তার ছেলে ইহাব সিলেট চলে গিয়েছে। সৌম্য হসপিটালে থাকবে। আসমানী নওয়ান, তার বোন তারা, শিমু, ইরার মা আর সন্ধ্যা সবাইকে নিয়ে আকাশ তাদের বাড়ি যাবে। যদি-ও ইরার মা থাকতে চেয়েছিল। সৌম্য বলেছে লাগবে না। তারা যেন তার বোনুকে দেখে রাখে, তাহলেই হবে। সৌম্য’র কথা শুনে সবাই হেসেছিল। সন্ধ্যা কি পরের মেয়ে যে, সৌম্য বলবে, তারপর তারা সন্ধ্যাকে দেখে রাখবে? বোনের প্রতি খুব সিরিয়াস!
আসমানী নওয়ান হেসে বলেছিল, – পা’গ’ল ছেলে!
আকাশ সন্ধ্যাদের বাড়িতে রেখে হসপিটালে আসবে। সৌম্য নিষেধ করলে-ও আকাশ পাত্তা দেয়নি। একদম একা একা থাকার ব্যাপারটি আকাশের ভালো লাগেনি। কখন কি প্রয়োজন পড়ে! যদিও অরুণকে হসপিটালে রেখে যাচ্ছে। আকাশ-ই রেখেছে। অরুণের জন্য তার বাসায় আপাতত জায়গা নেই। বে’য়া’দ’ব টার নজর খারাপ। আকাশ একচুল বিশ্বাস করেনা।

বায়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক গাড়িতে সবার জায়গা হবে না। আকাশ আসতে বলেছে। আসমানী নওয়ান, ইরার মা, শিমুর মা সকলে কথা বলতে বলতে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। শিমু আগেই গাড়ির সামনের সিটে বসে পড়েছে।

সন্ধ্যা ধীর পায়ে এগোচ্ছে। ডান হাতে আসমানী নওয়ানের হাত ধরতে গেলে পিছন থেকে আকাশ সন্ধ্যা বা হাত ধরে টেনে পিছনে দাঁড় করিয়ে রাখা তার গাড়ির সামনে আনে। সন্ধ্যা চোখ বড় বড় করে তাকায়। কিছু বোঝার আগেই আকাশ ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা খুলে সন্ধ্যাকে সিটে বসিয়ে দেয়। পুরো ব্যাপারটা এতো দ্রুত হলো, সন্ধ্যার একদম মাথার উপর দিয়ে গেল। আকাশ সন্ধ্যার দিকে কিছুটা ঝুঁকে সিল্টবেল্ট লাগাতে নিলে সন্ধ্যা দু’হাতে আকাশকে ঠেলে সরাতে চায়। ভ’য় পেয়ে গিয়েছে সে। আকাশকে ভাবলেশহীন দেখে আকাশের গলায় দু’হাতে খামচে দেয় সন্ধ্যা। আকাশ সন্ধ্যার দু’হাত তার গলা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলে,

– তোমার বিয়ে হয়েছে আমার সাথে। হাত ধরতে চাও আমার মায়ের। এসব কি সন্ধ্যামালতী?
সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। মানে সে এখন তার খালার হাত-ও ধরতে পারবে না? তার ভাইয়ের সাথে-ও ল’জ্জায় কথা বলতে পারেনি আকাশের জন্য। রে’গে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ পাত্তা দিল না। সে সিল্টবেল্ট বেঁধে দিয়ে গাড়ি দরজা লাগিয়ে দেয়।
এরপর একটি দোকান থেকে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় খাবার কিনে নেয়। যার মধ্যে আটটি স্প্রিট কিনেছে। দু’টো স্প্রিট শিমুকে দিয়ে বায়ানকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে। আসমানী নওয়ান দেখেছে, সন্ধ্যাকে আকাশ নিয়ে গিয়েছে। তাই আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।

আকাশ তার গাড়িতে উঠে বসে গাড়ির ড্যাশবোর্ডের উপর একটি বড় প্যাকেট রাখে, যার ভেতরে অনেকগুলো রুটি-কলা, আর ছয়টি স্প্রিট। সন্ধ্যা দেখল। গুণতে পারলো না, তবে দেখেই বুঝলো অনেকগুলো। প্রশ্ন জাগলো, এতো রুটি-কলা কে খায়?
আকাশ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বা হাত স্টিয়ারিং এ রাখে। ডান হাতে একটি স্প্রিট ঢকঢক করে খায়। আকাশ পর পর তিনটে স্প্রিট একনাগারে খেয়ে ফেলল। এক সেকেন্ড এর জন্য-ও নিঃশ্বাস নেয়নি হয়তো। অনেকগুলো মাস পর আজ তার এই পছন্দের একটি জিনিস ফুরফুরে মনে খাচ্ছে।
সন্ধ্যা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। এভাবে কেউ স্প্রিট খায়, সে আজকেই প্রথম দেখল। আকাশ সন্ধ্যার দৃষ্টি দেখে একটু হাসলো।
দিনে ২০ টি স্প্রিট খাওয়ার রেকর্ড-ও আছে তার। ভার্সিটি লাইফে বেশি খেয়েছে। এখন অল্প-ই খাওয়া হয়।
আরেকটি স্প্রিট নিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলে,

– ট্রাই করে দেখ।
সন্ধ্যা সাথে সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে জানালার দিকে তাকায়। আকাশ চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। কিছু বললো না। এটা-ও এক ঢোকে খেয়ে ফেলল। বাকি দু’টো স্প্রিট সন্ধ্যার কোলের উপর রেখে গাড়ির স্টিয়ারিং ঘোরায়। একটু পর বলে,

– সৌম্য’র বোন পোলিও রোগী, কেউ কিছু দিলে খেতে হয়। ম্যানার্স শেখালাম, এবার খাও।
সন্ধ্যা কটমট দৃষ্টিতে তাকায় আকাশের দিকে। দু’হাতে দু’টো স্প্রিট শক্ত করে ধরল। স্প্রিট তার পছন্দের লিস্টে আছে। মাঝে মাঝে খায়। কিন্তু এই দু’টো খাবে না। এই দু’টো এই আকাশের মাথায় ঢালবে সে। তার ভাইয়ের সামনে কতগুলো ফা’ল’তু কথা বলেছে! ভাবলেই সন্ধ্যার হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আর আকাশের মাথার সব চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে।
আকাশ ঘাড় বাঁকিয়ে একবার তাকালো। সন্ধ্যার সাথে চোখাচোখি হলে সন্ধ্যা আবার-ও জানালার দিকে তাকায়। আকাশ গাড়ির কাচ নামিয়ে দেয়। সাথে সাথে দমকা ঠান্ডা হাওয়া এসে সন্ধ্যার মুখে ধাক্কা খায়। সন্ধ্যার ভালো লাগলো।
আকাশ একটু হেসে বলে,

– বাড়িতে লেট করে ফিরছি। ছোট বউয়ের রা’গ ভাঙানোর জন্য কিছু ট্রাই করি।
সন্ধ্যা দু’হাত গাড়ির জানালায় রেখে হাতের উপর মাথা রেখেছে। মৃদু বাতাস হাতে-মুখে লাগছে, ভীষণ ভালো লাগছে তার। আকাশের কথা শুনে বিরক্ত হলো। মনে মনে আওড়ালো,
– নাটকবাজ, মিথ্যুক!
রাস্তাটি ফাঁকা। আকাশ গলা ঝেড়ে গান ধরলো একটা,

তোমারে আমি যে কত ভালোবাসি গো
বোঝাবো কেমনে বোঝাবো
তোমারে না পেলে জানি আমি জানি গো
মরিবো অকালে মরিবো
ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে গো
পাশে থেকো জীবনে মরণে
আমি তোমারি প্রেমও ভিখারি
ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে গো
পাশে থেকো জীবনে মরণে…….
একটু গেয়ে আকাশ থামে, সাথে গাড়ির ব্রেক কষে।
আকাশের গলা আহামরি সুরেলা না হলেও, একেবারে খারাপ নয়। সন্ধ্যা চোখ বুজে আকাশের গানটি শুনছিল। হঠাৎ আকাশ গান সহ গাড়ি থামানোয় সন্ধ্যা প্রশ্নাত্মক চোখে তাকায় আকাশের দিকে। আকাশ ভ্রু নাচিয়ে একটু হেসে বলে,
– বাসায় পৌঁছে গিয়েছি। তুমি চাইলে লং ড্রাইভে যেতে পারি!
সন্ধ্যা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। চোখ সরিয়ে নেয়। আকাশ গাড়ি থেকে নেমে সন্ধ্যার পাশের দরজা খুলে দিলে সন্ধ্যা বেরিয়ে আসে। আকাশ ফোন কথা বলছে। সন্ধ্যা দাঁড়ালো না। দ্রুতপায়ে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। পিছন পিছন আকাশ যায়। দৃষ্টি সন্ধ্যার পানে।

আকাশ বাড়িতে এসে সময় ন’ষ্ট করেনি। সর্বপ্রথম শাওয়ার নেয়, তারপর পুরো একঘণ্টা ল্যাপটপে কিছু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করেছে। রাতের খাবার খেয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়। আশেপাশে তাকিয়ে সন্ধ্যাকে খুঁজলে পায় না। ঘড়িতে একবার সময় দেখল। রাত একটার কাছাকাছি। ঘুমিয়েছে হয়তো। তাই দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে দরজা আটকে দেয়।
এগিয়ে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে তখনকার কিনে রাখা রুটি-কলা সব বের করে। আশেপাশে তাকিয়ে ডান হাতের দু’আঙুল মুখে ভেতর নিয়ে বেশ জোরেসোরে একটি সিটি বাজায়। সাথে সাথে কোথা থেকে পাঁচটি কুকুর দৌড়ে আসে। আকাশ হাতের রুটি সবগুলো একটি একটি করে কু’কু’রের দিকে বাড়িয়ে দেয়। কলাগুলো তাদের সামনে রেখে গাড়ির সামনে উঠে বসে। পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেটে আগুন ধরালো।

সন্ধ্যার ঘুম আসছিল না বলে সে বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছিল। আকাশের এতোক্ষণের কার্যকলাপ দেখে বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। কু’কু’রদের এই রুটি-কলা খাওয়ানোর অভ্যাস সে তার সৌম্য ভাইয়ার ভেতরে দেখেছে। আর আজ আকাশের দেখল। যদি-ও আকাশের ধরন টা ছিল অন্যরকম। সন্ধ্যার ভীষণ ভালো লাগলো। কিন্তু লাস্টে এসে আকাশের সিগারেট খাওয়া দেখে তার ভালো লাগায় এক বালতি জল ঢেলে পড়লো।
আকাশ কু’কু’র গুলোর দিকে চেয়ে সিগারেট টেনে অর্ধেকটা শেষ করে ফেলেছে। ডান পা সামান্য উঁচু করে ডান হাত ডান পায়ের উপর রাখে। হাতে আধখাওয়া সিগারেট।
আকাশ মাথা উঁচু করে খোলা আকাশের পানে তাকায়। বিশাল আকাশের নিচে বসে, এক নগণ্য, ছোট্ট আকাশ তার সন্ধ্যাকে ভেবে একটু হাসলো।
তখনকার গাওয়া গানের আরেকটু অংশ গাইলো,

অন্তঃদহন পর্ব ২৭

বুকের-ই ভিতরে আন্ধরো কুঠিরে
তুমি ওগো চান্দের বাতি
চোখের-ই মণিতে, সয়নে স্বপনে
আছো তুমি দিবস ও রাতি।
ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে গো
পাশে থেকো জীবনে মরণে
আমি তোমারই প্রেমও ভিখারি
ভালোবেসে ঠাঁই দিও পরাণে।

অন্তঃদহন পর্ব ২৮