অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৭

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৭
নুসাইবা ইভানা

“ভাই কি বিয়া করলাম আমার টাচে বৌয়ের ফোবিয়া!”
“শা” লা দোষটা তো তোরই বাসর রাতে বেড়াল না মেরে বৌয়ের উপর আত্যাচার করলে ফোবিয়া হবে না?”
“ভাই তুই ডাক্তার তাই আমার ভরসা আছে একটা সলিউশন বের কর।নয়তো বৌয়ের সাথে এজন্মে বাসর সারতে পারবো বলে তো মনে হয় না৷”
“ভালো হইয়া যাও রেজা সারাক্ষণ কি মনে বাসর করার লাড্ডু ফুটে?”
“একটা মাত্র ফুলের মত বৌ তো বাসর করার স্বাদ তো জাগবেই আমি তো পুরুষ, বেডা আপু না।”
“এসব কথা সাইডে রাখ আগে বল এই সময়ে তুই কোথা থেকে টপকিয়েছিস?”
“আর বলিস না, জাহিনকে নিয়ে এক প্যাচে পড়েছি, সেই গিট্টু খুলতে আসছি ইমার্জেন্সি ছুটি নিয়ে।”
“দেখলি বিয়ে করলে ছেলেরা কেমন বৌকে ভয় পেতে শুরু করে?”
“ভয় না হারানোর ভয়। তোর খবর কি? কোন মেয়ে জুটলো নাকি সিঙ্গেল মরবি?”
“মনে হয় এজন্মে সিঙ্গেল মরতে হবে।”
“এবার তোর একটা বিহিত না করে যাবো না।”

“আগে নিজের বিহিত কর। বারবার এমন হলে হার্টে সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আছে। এমনিতেই ভাবির বয়স কম।”
“আমি এখন কি করবো কিভাবে এই ট্রামা থেকে বের করবো ওরে।”
“ভালোবাসা দিয়ে কাটাতে হবে এই ভয়। একদম ভিন্ন এক রেজা হয়ে যা। মনে কর তুই পাইলট রেজা চৌধুরী না তুই শুধুমাত্র তোর অর্ধাঙ্গিনীর। তার সাথে মিশে যা, বোঝার চেষ্টা কর তাকে দেখবি সে নিজেই তোকে কাছে চাইবে। ভালোবাসা যখন বাড়তে থাকে তখন ধীরে ধীরে তা মানুষকে তৃষ্ণাতুর করে তোলে ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়ার। তখন সব ভেদ করে মানুষ মিশে যায় একে-অপরের অস্তিত্বে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“কিন্তু আমি কিভাবে কি করবো বল? অনেক বাহানা করে দশ দিনের ছুটি মঞ্জুর করাতে পেরেছি৷ বুঝতে তো পারছিস এতোটুকু করার জন্য কত কি করতে হয়েছে৷ আচ্ছা কলেজে ভর্তি হতে হতে এখনো বেশ কয়েকমাস সময় বাকি আমি সুনয়নাকে আমার সাথে কানাডা যাওয়ার জন্য রাজি করাই?”
“তোর আইডিয়া ভালো কিন্তু তোর তো একদিন আমিরাতে স্টে করতে হয় ভাবির বয়স কম সে পারবে থাকতে?”
“সে ব্যবস্থা আমি করবো।”
“তাহলে পিছে লেগে পড়, বৌয়ের রাগ ভাঙ্গিয়ে ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে নিজের সাথে নেয়ার। তবে মনে রাখিস কিছুতেই এমন কিছু করবি না যাতে ভাবির প্যানিকআ্যাটাক হয়।”
“আচ্ছা রাখি ঢাকা ব্যাক করলে বাসায় আসিস৷ এখনো বাসার কেউ জানেনা আমি ফিরেছি।”
“জিয়ান একটা হোটেলে উঠেছে৷ রাতে তেমন ঘুম হয়নি সকালের দিকে ঘুম ভেঙেছে।”

জাহানারা বেগম বিচলিত,তার ভাই আতিফ সাহেবও চিন্তিত মেয়েটার হটাৎ কি হলো!
নয়নার শরীর কাঁপিয়ে জ্বর উঠেছে। ডাক্তার এসে মেডিসিন দিয়ে গেছে জ্বর মেপে দেখে একশ তিন৷
জাহানার বেগম তার ভাইকে বলল,”ভাই আমার মেয়েটার হটাৎ কি হলো?”
“চিন্তা করিস না সুস্থ হয়ে যাবে।”
আতিফ সাহেব ডাক্তারের সাথে সাথে বের হয়ে বললেন,”আমার মনে হয় আমার বোনের মেয়েটা অশরীরী কিছু দেখে ভয়ে পেয়েছে৷ আপনার কি মনে হয় এমন রোগ মেডিসিনে ভালো হবে?”
ডাক্তার কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন৷ আতিফ সাহেবের স্পষ্ট মনে আছে রাতের কথা ওটা মানুষ ছিলো না অশরীরী কিছু ছিলো সেটাই ধারনা করছেন আতিফ সাহেব। হাঁটা ধরলেন মসজিদে দিকে হুজুরের কাছ থেকে পানি পড়া এনে খাওয়ালে যদি জ্বর কমে সেই আশায়।

“নয়না জাহানারা বেগমের ঘা ঘেঁষে বসে আছে। রাতের তার সাথে যা হয়েছে সেসব কি সত্যি ছিলো নাকি নিছক কাল্পনিক স্বপ্ন? স্বপ্ন কি এতো বাস্তব হতে পারে! নয়না জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আম্মু তুমি কখন এমন স্বপ্ন দেখেছো যা পরবর্তীতে তোমার মনে হয়েছে সেটা স্বপ্ন ছিলো না সত্যি ছিলো।”
“তুই কি রাতে কোন বাজে স্বপ্ন দেখেছিস নয়না?”
“আমি যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটা বলো না আম্মু।”
“স্বপ্ন স্বপ্নই হয়, স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই। মেডিসিন খেয়েছিস একটু রেস্ট নে রাতে তো আদনানের গায়ে হলুদ আনন্দ করতে হবে তো।”
“জাহানারা বেগম রুম থেকে বের হতেই নয়না নিজের ফোন বের করে কল করলো জিয়ানকে।”
“সাথে সাথে রিসিভ! করেই বলে,তুমি ঠিক আছো পাখি?”
“নয়না বেশ অবাক হলো, আমি বেঠিক কেনো থাকবো? আপনি কি এমন কিছু করেছেন যাতে আমি ভালো না থাকি?”

“এসব কি বলো জান!”
” আপনি এখন কোথায়?”
“জিয়ান বলে,তুমি জানো না?”
“জানলে তো জিজ্ঞেস করতাম না৷”
“আমি তো অলওয়েজ তোমার মনের মধ্যে থাকি।”
“বাজে কথা রাখুন আর বলুন আপনি কি কাল রাতে আমাকে ছাদে নিয়ে গিয়েছিলেন?”
“তোমাকে আমি কিভাবে নিয়েছি! তোমার পা থাকতে আমি কিভাবে নিলাম!”
” কিভাবে আবার কোলে তুলে?”
“ওহহহ কই আমার তো মনে নেই? আসমান ছেড়ে জমিনে এসেছি তোমাকে কোলে নিতে! আরেহহহ বাহহহ বৌ আমার দিবাস্বপ্ন দেখে আমাকে নিয়ে, এই খুশি আমি কই রাখবো?”
“এই খুশি পকেটে রাখুন৷ আর বলুন আপনি কেন এসেছেন? আপনার জন্য আমার পছন্দের হেয়ারব্যান্ড ভেঙ্গে গেছে।”
“এইটুকু মাথায় এতো টেনশন নিওনা৷ বিয়েটা চুকে যাক তারপর তোমার সব অভিমান আমি ধুলোয় মিশিয়ে দিবো বেবি।”
নয়না রাগে কল কেটে দিলো৷ এই লোকটার সাথে কথা বলার কোন মানেই হয়না! কোন কথার সহজ উত্তর নেই প্লেন ড্রাইভারের ডিকশিনারিতে! নয়না ঘুমানোর চেষ্টা করছে এখন জেগে থাকলেই আজাইরা চিন্তা মাথায় আসবে৷

মেহনুরের মন খারাপ সেটা সে কাউকে প্রকাশ করতেও পারছে না৷ তার জমানো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতি আর তার মায়ের শেষ ইচ্ছে কোনটাই আর পূর্ন হবে না। কেনো রেজার সাথে চার বছর তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো! যোগাযোগ হলে হয়ত আমি তোমাকে আমার ফিলিংস বলতে পারতাম।তুমি আমার না, আমার হবেও না তবুও এই মন কেনো তোমাকে চায়! বাস্তবতা এতো নিষ্ঠুর কেনো? কফির মগে চুমুক দিতে দিতে সে ভাবছে এসব৷
“মিতা বেগম এসে বলে,তোকে একটা কথা বলতাম নূর।”
“আম্মি আমাকে কিছু বলতে তোমার অনুমতি নিতে হবে না। নিজের মনে করো বলো।”
“মিতা বেগম মেহনুরের পাশে বসে মেহনুরের হাতের উপর হাত রেখে বলে,আমি তোকে সারাজীবনের জন্য আমার কাছে রেখে দিতে চাই। তুই আমার জাহিনের বৌ হয়ে থেকে যাবি।”
“মেহনুর চুপসে গেলো। তার চোখ ভেঙে আসতে চাইছে অশ্রু বলতে ইচ্ছে করছে কেনো রেজার বৌ করতে চাইলে না?”

“তোকে এখন কিছু বলতে হবে না। তুই আস্তে ধীরে ভেবেচিন্তে তারপর বলিস৷ তোর উপর কোন প্রেশার নেই। ”
মেহনূর মিতা বেগমের কাঁধে মাথা রেখে বলে,”আমার আম্মু আমাকে ছেড়ে গেলো কেন আম্মি! সে তো জানতো সে ছাড়া আমার কেউ নেই।”
“সে চলে গেছে আমি তো আছি। আমি যতদিন বেঁচে আছি সব অবস্থায় তোর পাশে থাকবো।”
মান্নাত আজ অনেক সাহস করে নিজেকে শক্ত করেছে আজ সে সব সত্যি প্রকাশ করবে। জীবন তো সবার জন্যে ফুলের বিছানা হয় না, কিছু মানুষের জন্য কাঁটার বিছানাও হয়। আমি না হয় সেই কাঁটার যন্ত্রণা দ্বিতীয়বার সহ্য করে নেবো। আমি জানি এসব জানার পর আপনি কোনদিন আমাকে নিজের করে নিবেন না৷ আমি দূর হতে আপনাকে ভালোবাসবো৷ ভালোবাসলেই তো সবার সাথে ঘর বাঁধা যায় না। সবার কপালে সুখও লেখা থাকে না৷

নয়নার ঘুম ভাঙ্গলো শেষ বিকেলে। ঘুম থেকে উঠতেই দেখে তার কাজিনমহল তাকে ঘিরে রেখেছে।নয়না অবাক হয়ে বলে,”তোমরা এভাবে আমাকে দেখছো কেনো?”
“একজন বলল,নয়ন তোর জন্য বিশাল এক পার্সেল এসেছে। আচ্ছা তোর বর কি অনেক রিচ?”
নয়না ভ্রু কুঁচকে বলে,”এখানে আমার জন্য কে পার্সেল পাঠাবে? তোমাদের কারো হবে হয়ত।”
“উঁহু এখানে বড় করে লেখা আছে সুনয়না চৌধুরী। এই নে দেখ।”
নয়না বেশ আগ্রহ নিয়ে পার্সেল আনপ্যাক করলো৷ ভেতরের জিনিসগুলো দেখে সবার চোখ আসমানে!
নয়না একের পর এক হেয়ারব্যান্ড বের করছে৷ কাজিন মহল সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই গুনে দেখে হাজার খানেক বিভিন্ন আইটেমের হেয়ার ক্লিপ, হেয়ারব্যান্ড, চুলের কাটা মোটকথা যতরকমের চুল বাঁধার আইটেম আছে সব।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৬

“একজন বলল কিরে নয়না দুলাভাই বুঝি তোর চুল দেখে তোর প্রেমে পরেছে! তাই তো চুলের জন্য এতো এতো হেয়ারব্যান্ড পাঠিয়েছে। আহা প্রেম আজ একটা পাইলট জামাই নেই বলে।”
” জামাই নেই আফসোস না করে তোমার জিজুর গলায় ঝুলে পড়লেই তো হয়।”
” নয়নার বুঝতে বাকি নেই এটা ওই বদ লোকটার কাজ। ঝাড়ি খেয়েছে একটা চুলের কাটা ভাঙ্গার জন্য তাই আজ গুষ্টি শুদ্ধো পাঠিয়ে দিয়েছি! মফিজউদ্দিন চৌধুরী কোথাকার।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৩৮