অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬৮

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬৮
নুসাইবা ইভানা

তিনটা মাস ভালো কাটলো নয়নার৷ চৌধুরী বাড়িতে আর ফেরা হয়নি নয়নার৷ মাঝে,মাঝে নাজিম চৌধুরী আর মিতা বেগমের সাথে ফোনে কথা হয়। কলেজ আর নিজের বাসা সাথে আছে মিস্টার ড্রাইভারের ভালোবাসা। সব মিলিয়ে বিন্দাস জীবন কাটছে নয়নার। তবে ইন্টারে সাইন্স নেয়াটা উচিৎ হয়নি তার৷ সুখের জীবনে এই সাইন্স একটা বোঝা। কাউকে যদি সুখে থাকতে ভুতে কিলায় সেই ইন্টারে সাইন্স নেয়। বাপরে ফিজিক্স, ম্যাথ, দু’টো সাবজেক্ট যেনো গিলে খায় নয়নার শান্তি। বারান্দায় বসে দোলনায় পা দোলাচ্ছে নয়না৷ আকাশে অগণিত তারারা মিটিমিটি জ্বলছে৷ চাঁদের আলো যদিও ক্ষীণ তবে নয়নার মনটা বেশ ফুরফুরে৷ অবশেষে জিয়ানের আসার সময় হয়েছে৷ নয়না জিয়ানকে ভিডিও কল করলো৷

” জিয়ান কল রিসিভ করেই মুচকি হেসে বলে,হেই রঙ্গনা কি অবস্থা?
” নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,আপনাকে তো এই লুকে মারাত্মক হ্যান্ডসাম লাগছে।
“দেখতে হবে না শার্টটা কার পছন্দ করা৷
” কার জন্য কেনাকাটা করছেন? ডিয়ার হাসবেন্ড?
“আমার একমাত্র প্রিয়তমা অর্ধাঙ্গিনীর জন্য।
” আপনি আসলেই আসবেন?
“নাহহ নকলে আসবো।
” শার্টের বাটন লাগাও।
“মাত্র দু’টো খোলা বেব৷
” একটা লাগাও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“জিয়ান হাতে থাকা ব্যাগটা রেখে একটা বাটন বন্ধ করে নিলো। এবার চলবে?
” দৌঁড়াবে মিস্টার ড্রাইভার।
“আচ্ছা কেনাকাটা শেষ করে তোমাকে কল করবো।
” অপেক্ষা করবো কিন্তু আমি।
“এই জান৷ অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পরো৷ সকালে কথা হবে।
” উহু আমার ইচ্ছে করছে প্রেম করতে। নরম প্রেম।
“প্রেম বুঝি নরম, শক্ত আছে?
” হুম আছেই তো৷ আপনি বুঝবেন না মিস্টার পাইলট।
“জিয়ান শপিংমল থেকে বের হয়ে গাড়িতে এসে বসে বলে,সো মিসেস চৌধুরী আমি তোমার সাথে নরম প্রেম করতে চাই৷

” নয়নার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে দোলনাটা দুলছে। নয়না হেসে বলে,প্রেম করবা তুমি। প্রেম করার দ্বায়িত্ব ছেলেদের। আমরা তোমাদের প্রেম মত্ত হবো,,পাগল হবো লুটিয়ে পরবো তোমাদের বুকে।
“ওহহ আচ্ছা। কিন্তু আমি তো জানিনা নরম প্রেম আবার কি গো?
” কানে কানে বলি শোন,
“জিয়ান ফোনের স্কিনের একদম কাছে এসে বলে,বলো গো সুন্দরী বৌ।

” চোখ বন্ধ করো। গভীর ভাবে অনুভব করুন।আপনাদের রুফটফে আমি আপনার কোলে বসে আছি। আপনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে রেখেছেন , আমি আপনার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে। শহর জুড়ে ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির শীতল ফোঁটা ভিজেয়ে দিচ্ছে আমাদের। আপনি মৃদু স্বরে ডাকলেন, সুনয়না, আপনার এই ডাকে কেঁপে উঠলাম আমি, আপনি আমার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন৷ আমার ভেজা ঠোঁট আপনাকে চুম্বকের মত টানছে৷ ধীরে ধীরে আপনি আপনার ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসলেন,তারপর আমার কাঁপতে থাকা ভেজা ঠোঁট দুটো দখল করে নিলেন আপনার ঠোঁটের আড়ালে৷

“জিয়ান হুট করে চোখ খুলে বলে,ওরেহহহ দুষ্ট বৌ এই মধ্য রাতে আমাকে মাতাল করার ধান্দা? এটা কিন্তু ঠিক না৷
” নয়না জিয়ানের দিকে একভাবে তাকিয়ে থেকে বলে, আই নিড ইউর লিপস। এই মূহুর্তে আপনার ঠোঁটের স্পর্শ বাজে ভাবে মিস করছি। আমার হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠছে৷
“জিয়ান ডাকলো,সুনয়না,সুনয়না। শুনছো তুমি?
” নয়নার চোখের কোনে অশ্রু টলমল করছে।
“কি হলো তোমার? তুমি কি ভাবছো আমাকে বলো জান।
” জানিনা আমার খুব করে তোমাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। আমি কি মরে যাবো?
“জান এসব কথা বলবা না কখনো৷ এই তো আর একটা সপ্তাহ এরপর সত্যি সত্যি আমি তোমার কাছে থাকবো একদম কাছে৷ যতটা কাছাকাছি থাকলে তোমার নিশ্বাস আমার নিশ্বাসে মিলিত হয়। ঠিক ততটা কাছে৷
” নয়নার হুট করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো৷ জিয়ানকে বলল, এবার আসলে আমাকে নিয়ে যাবা কিন্তু।
“এবার হবে না জান৷ তবে পরবর্তীতে নিশ্চিত নিয়ে আসবো। নাহিদকে দ্বায়িত্ব দিয়ে আসবো ও কাগজপত্র সব রেডি করে রাখবে।

জাহিন এ ক’দিন একদম গায়েব। মাঝে মাঝেই জাহিন গায়েব হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল করে বেড়ায়। ধরতে গেলে তখন কারো সাথে সে যোগাযোগ করে না৷
” জাহিন বসে আছে মান্নাতের সাথে এক টেবিলে। মান্নাতের ঘৃণা হচ্ছে সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে তাকাতে। জাহিন কফি মগে চুমুক দিয়ে বলে,মিস্টার জন আপনার হবু স্ত্রীকে বলুন নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে। যারা চলে গেছে তাদের জন্য নিজের জীবন নষ্ট করতে মানা করুন।মাইকেল জন এরিক। জনের সাথে মান্নাতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বিয়েও করবে তারা৷ কিন্তু আজ যখন জাহিন তাকে তিক্ত সত্যিগুলো বলল ইচ্ছে করছে খু’ন করে ফেলতে জাহিনকে। কিন্তু এই মানুষটার জন্য সে এখনো বেঁচে আছে সুস্থ ভাবে। জন বলল, ঠিক আছে মান্নাত আর বাংলাদেশের কারো সাথে যোগাযোগ করবে না৷

“জাহিন কফিমগে শেষ চুমুক দিয়ে বলে,গুড বায় মিস মান্নাত৷ মনে রাখবেন জীবনের বেড়াজাল খুব কঠিন। জাল ছিঁড়তে গেলে আরো গভীর জালে আটকা পরে যেতে হয়। আমাকেই দেখুন গোয়েন্দা হয়ে জাল কাটতে যেয়েই তো গভীর জালে আটকা পরে এখন আমি গভীর জলের মাছ।গুড বায়।
” জাহিন সোজা এয়ারপোর্টে আসলো তিনমাস পর সে বাড়িতে ফিরবে।আজ তার ফ্লাইট।
অন্তর বসে আছে তুষির সাথে । এই তিনমাসে তাদের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা এগিয়েছে৷ অন্তর বলল,জাহিনের সাথে আমি তিনমাসে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারিনি৷
“এটা কেমন কথা, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম, ফেসবুক, সোশাল সাইডেও কি যোগাযোগ করা যায় না?
” জাহিন এমনই মাঝে মাঝে সব ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ট্রাভেল লাভার৷ প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পছন্দ করে৷ ও নিজ থেকে যোগাযোগ না করলে আর কোন ব্যবস্থা নেই।
“তবে খুব শীগ্রই দেশে ফিরবে হয়ত৷ কারন সামনে বড় একটা কেসের শুনানি। অন্তর বেখেয়ালে কথাটা বলে ফেলেছে।

” কিসের কেস? কেসের সাথে কি সম্পর্ক ওনার?
“আরেহহ ওর বিয়ে। বিয়ে তো জীবনের সবচেয়ে বড় কেস।
” আচ্ছা আপনি বিয়ে করবেন না?
“জেনে বুঝে কেস খাবো? আজীবন মেয়াদি হাজত বাস। এরচেয়ে সিঙ্গেল ভালো আছি৷
” তুষি কিছু বললো না৷ চুপচাপ থেকে বলল,আচ্ছা আজ তাহলে আসি।
“আপনি কি সত্যি সত্যি ভালোবাসতেন জাহিনকে? না মানে কোন ভাবে আপনার মনে ওরজন্য সফট কর্নার জন্মে ছিলো?
” তুষি অন্তরের দিকে তাকিয়ে বলে,লোভ জন্মেছিলো,এতো এতো চকোলেট আর গিফটের লোভ৷ তাই কোন ফিলিংস জন্মাতে পারেনি। যার জন্য সব ভালোবাসা উজার করে দিয়েছিলাম সেই তো ধোঁকা দিলো। বাদ দিন সেসব কথা এখন বাবা মায়ের পছন্দে সোজা বিয়ে করবো৷ আপনি দেখুন যত দ্রুত সম্ভব জাহিনের কান পর্যন্ত কথাটা পৌঁছে দিন৷

“একটু ওয়েট করুন বিল পরিশোধ করে আসছি। আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি বাসা পর্যন্ত।
” তুষি বাহিরে এসে দাঁড়ালো৷ এই কয়েকটা দিন তুষির দম বন্ধ হয়ে আসে। তার ভুলের জন্য নয়নার জীবনে কি বিপদ অপেক্ষা করছে? এসব ভেবে ভেবে ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। মানুষ ভুল করে একদিন সাফার করে চিরদিন।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬৭

সকালে ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেস বেলা হয়ে গেলো নয়নার৷ আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে,ওড়না জড়িয়ে নিলো গায়ে। হাই তুলতে তুলতে ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো৷ মোবাইল হাতে নিয়ে অবাক হলো নয়না জিয়ানের নাম্বার থেকে বিশ প্লাস মিসড কল! সাথে সাথে কল ব্যাক করলো। ফোন বন্ধ বলছে। নয়নার সুন্দর সকাল মূহুর্তে কালো মেঘে ডেকে গেলো। বারবার কল দিতে থাকলো কিন্তু বন্ধ ফোনে তো কল যায় না। নয়না ছুটে আসলো ড্রয়িংরুমে। কিছু বলবে কিন্তু কাকে বলবে? নীলাঞ্জন কাতরাচ্ছে সোফায়। নীলাঞ্জনা ইদানীং খুব অসুস্থ থাকে। তার পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হয়। ডাক্তার কবিরাজ দেখিয়েও এর থেকে মুক্তি পায়নি৷ নয়নার মাথা চক্কর দিচ্ছে৷ দু’চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে তার পুরো পৃথিবীটা ঘুরছে। কিছু বলতে চাইছে তার আগেই ঢলে পরলো ফ্লোরে।

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৬৯