অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৮

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৮
নুসাইবা ইভানা

“সব হারানোর পর মানুষের আর পাওয়ার কিছুই থাকে না। নিঃস্ব মানুষকে বারবার নিঃস্ব করা যায় না।
“জাহিন মাথা উঁচু করে মান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলে, আপনার কথা ঠিক। তবে আপনি হয়তো জানেন না, মানুষ পুরোপুরি নিঃস্ব হয় না। নিঃস্ব হতে হতেও তার কাছে থেকে যায় জীবন। সে জানে না কবে এই জীবন থেকে সে মুক্তি পাবে।”

“ওটাকে থাকা বলে না। ওটাকে বলে বোঝা।”
“মিস মান্নাত, এত কথা বলার কিছু নেই। সেদিন তো সব আপনাকে বলেই এসেছিলাম। তাহলে আপনি কেন দেশে আসলেন? যদি নিজের জীবন প্রিয় হয়ে থাকে, তাহলে আজকেই চলে যাবেন। যাওয়ার ব্যবস্থা আমি করে দেব।”
“আপনি জঘন্য একজন মানুষ। কীভাবে পারলেন আমার বাবা-মায়ের খুনিকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিতে?”
জাহিন মান্নাতের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে, “পানিটা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করুন। টাকা না খেলেও তারা কোনো শাস্তি পেত না। হ্যাঁ, আমাদের তথ্য অনুযায়ী তারা গ্রেফতার হতো। কয়েকদিন কেস চলত। এরপর তারা আবার বেরিয়ে যেত। এরপর তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠত।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তাই বলে, এ দেশে খুনিরা এভাবেই ঘুরে বেড়াবে?”
“এ দেশে এমনই হয়। অপরাধী যত শক্তিশালী, তাদের বিচার তত দুধভাত। আপনাকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছি। আপনার ওপর ওদের ক্ষোভ। আপনি বেঁচে আছেন জানতে পারলে আপনাকে ছাড়বে না। রাজনীতির চালে মানুষের জীবন কিছুই না। এই মহড়ায় যারা পড়ে, তারা বাঁচতে পারে না।”
“আমার বাবার দোষটা কী ছিল?”

“সবচেয়ে বড় দোষ, সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। সরকারি চাকরি করতে হলে সরকারের হুকুম মানতে হয়, হোক সেটা ঠিক বা ভুল। এই যে দেখুন, আমাকে কতজনকে গুম করতে হয়েছে। কিছু তো করার নেই, তাই না? এটাই আমার ডিউটি। কিছু করতে গেলে আমার মতো একজনকে মারা তাদের জন্য কোনো বড় ব্যাপার না।”
মান্নাত জাহিনের দিকে তাকিয়ে বলে, “অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে আবার বুক ফুলিয়ে সে-সব বলছেন! আমি সব রেকর্ড করেছি, আজই থানায় জমা দেব।”

জাহিন নিজের পকেট থেকে রিভলভার বের করে মান্নাতের দিকে তাক করে বলে, “এক চাপে আপনার অধ্যায় ক্লোজ করে ফেলতে পারি। ভালোয় ভালোয় আজই চলে যাবেন।” বলেই মান্নাতের ফোন থেকে সব ডিলিট করে দিল।
“আর হ্যাঁ, ফ্লাইটের সময় না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকবেন। ঠিক সময় আমার লোক আপনাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবে।” বলেই সিগারেট ধরিয়ে চলে গেল।
মান্নাত সেভাবেই বসে আছে। কী হলো এটা! এই মানুষটা তার চিন্তার চেয়েও জঘন্য। অন্তরের ফোনে এতগুলো কল দিলাম, টেক্সট করলাম। সেন্ট হচ্ছে না কেন! একজন সিবিআই অফিসার এতটা জঘন্য হতে পারে! মান্নাত নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।

দিনের পর দিন একই বিছানায় পাশাপাশি থেকেও একজন মানুষ আরেকজন মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারে না। একই ছাদের নিচে থেকেও তাদের মধ্যে থেকে যায় শত মাইলের দূরত্ব।
নয়না চা বানাচ্ছিল। মেহনুরের কথা শুনে পেছন ফিরে বলে, “সব ডিপেন্ড করে মনের ওপর। মানুষ মন থেকে না চাইলে তো সম্পর্ক সামনে এগোয় না, তাই না?”
“আমি তোমার বড়, নাকি তুমি আমার বড়?”
“বয়সে আপনি আমার বড়। সম্পর্কে আমি আপনার বড়। তবে এসব ছেড়ে আপনি চাইলেও আমাদের অন্য একটা সম্পর্ক তৈরি হতে পারত।”

“যার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছ, সে তোমার সাথে সম্পর্ক গড়বে!”
“কেউ কিছু কেড়ে নিতে পারে না। যার ভাগ্যে যা আছে, তা সে পাবেই।”
“তোমার ভাগ্যে রেজা কিছুতেই থাকতে পারে না, সে ডিজার্ভ করে বেটার।”
“হয়তো উনি আমার চেয়ে ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে। কিন্তু দিনশেষে তো মানুষটা আমার। আর তাছাড়া আমরা একে অপরে সন্তুষ্ট এতে।”

“কথা ছাড়া আর কিছু শেখোনি? ইঁচড়েপাকা মেয়ে।”
নয়না দুধে চায়ের পাতা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে, মেহনুরের হাত ধরে বলে, “আপু, আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন। এটা আপনার মনে আমাকে নিয়ে তৈরি হওয়া ঘৃণা, আমার জন্য আপনার মনে নেগেটিভিটি ছড়িয়ে রেখেছে। আমি আপনার ছোট, তবুও একটা কথা বলতে চাই। আপনি নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন, যে কারণে সে আপনার না। আপনি নিজেকে নিজের জন্য ভালোবাসুন। নিজের সাথে রিলেশন মজবুত করুন। ইনশা আল্লাহ, আপনার জীবনে ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।”

মেহনুর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বের হয়ে গেল কিচেন থেকে।
নয়না চা কাপে ঢেলে নিয়ে আসল। এক কাপ মিতা বেগমকে দিয়ে, বাকি দু’কাপ নিজেদের জন্য রুমে নিয়ে এল। জিয়ানকে দেখে বলে, “একি, তুমি শার্ট খুলে দাঁড়িয়ে আছ কেন!” চোখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নয়না।
জিয়ান নয়নার কোমড় ধরে নিজের দিকে এনে বলে, “শার্টলেস আর দেখোনি বেবি? এমন ভাবে লজ্জা পাচ্ছ, মনে হচ্ছে এর আগে কখনো দেখোনি! আগে তো ড্যাবড্যাব করে গিলে খেতে আমার বডি।”

“ছিহ, কী জঘন্য কথা মিস্টার প্লেন ড্রাইভার। আমি এসব করতাম!”
“উঁহু, আমার বাটার মাশরুম করতো। সে কী বলেছিল জানো? দেখার মতো জিনিস চোখের সামনে থাকলে দেখব না!” কথা বলতে বলতে জিয়ান পার্পল কালারের একটা ফরমাল শার্ট পরে নিল।
নয়না জিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, “এমন নায়ক সেজে কোথায় যাচ্ছ?”
“একটু কাজ আছে বাটার মাশরুম। এই যাব আর আসব, মাত্র এক ঘণ্টার কাজ।”
“চা আনলাম, খাবে না?”

জিয়ান চা নিয়ে চুমুক দিয়ে বলে, “লা জবাব বেবি। যদিও একটু ঠান্ডা হয়ে গেছে।”
“হবেই তো বেব, আমি বানিয়েছি না। আমরা ক’টা বাজে বের হব বাসা থেকে?”
“পাঁচটায় বা ছ’টায়। টেনশন নিও না, প্যাকিং তো করা শেষ। আমি যাব আর আসব যাস্ট।”
নয়না জিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে, “থেকে যাও না। এখন বের হতে হবে না।”
জিয়ান নয়নাকে কোলে তুলে নিয়ে বলে, “বউ, এভাবে বেঁধে রাখতে চাইছ কেন? আদর খেতে ইচ্ছে করছে নাকি?”
নয়না জিয়ানের নাক টেনে বলে, “একদম ভুলভাল চিন্তা বাদ দাও। থেকে যাও, দশটা চুমু খাওয়াব।”

জিয়ান নয়নার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে, “একশটা চুমু খাব এসে। আর… সিলেট গিয়ে তো হিসেবে ছাড়া খাব।”
জিয়ান নয়নাকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ বুঝিয়ে, বের হয়ে গেল বাসা থেকে। নয়নার মনের মধ্যে কেমন যেন করছে। মনে হচ্ছে এই বোধহয় শেষ দেখা তাদের। কেমন হাহাকার ছড়িয়ে পড়েছে হৃদয় জুড়ে। বুকের মধ্যে হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে, “আল্লাহ, ওনার হেফাজত করুন।” হুট করে সব কেমন অন্ধকার হয়ে গেল। হাসিখুশি মুখটা মলিনতায় ছেয়ে গেল। মুহূর্তেই মনটা বিষাদে রূপান্তরিত হল।

জিয়ান বের হওয়ার ঠিক আধঘণ্টা পর জাহিন বাসায় প্রবেশ করে। বাসায় এসে সোজা চলে যায় মিতা বেগমের কাছে। মিতা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে, “অনেক ভেবে আমি তোমার সিদ্ধান্তে একমত হলাম। বিয়ের তোড়জোড় শুরু করো। আমি মেহনুরকে বিয়ে করতে রাজি।”
মিতা বেগম খুশি হয়ে গেলেন। জাহিনের হাত ধরে বলে, “তুই সত্যি বলছিস?”
“হুম, সত্যি। ভাবছি বাবার বিজনেসটাও জয়েন করব। অনেক তো ঘুরলাম। এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার পালা।”
“আমি খুবই খুশি হলাম। শোন, জিয়ান সিলেট থেকে ফিরে আসলেই তোদের আকদ সেরে ফেলব।”
“ভাইয়া সিলেট যাচ্ছে?”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৭

“হ্যাঁ। নয়নাকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে। তিনদিন থাকবে। তোর বাবা ইন্ডিয়া থেকে আগামীকাল ফিরবে। একথা শুনলে তোর বাবাও অনেক খুশি হবে।”
“এখন বলো তো, কী রান্না হয়েছে আজ? খুব খিদে পেয়েছে।”
“তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। দেখি কী রান্না হল। এখনো তো রান্না শেষ হওয়ার কথা না। মাত্র বারোটা বাজে।”

অর্ধাঙ্গিনী পর্ব ৭৯

1 COMMENT

  1. Khub sundor uponnash. Next part gula chai.
    Emn ordhek porte valo lage na.. plz next part gula taratari diben.❤️❤️❤️

Comments are closed.