অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৩
ইয়াসমিন খন্দকার
আমিনা জাঈদকে নিয়ে নিচে এসে অন্দরমহলের সবার সামনে উপস্থিত হয়। অতঃপর জাঈদকে বলে,”খেলায় হারজিত তো থাকবেই, এসব নিয়ে এত মন খারাপের কি আছে? তার থেকে বরং চলো আমরা সবাই মিলে মজা করি।”
জাঈদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”তোমার কি মনে হয় এরকম পরিস্থিতিতে আমি মজা করার মুডে আছি? তোমার মজা করার মুড থাকলে ঐ মাশরাফিকে গিয়ে বলো। ওর এখন ভীষণই মুড আছে মজা করার।”
এমন সময় আরহাম এগিয়ে এসে বলেন,”জাঈদ, এত মন খারাপ করার মতো কিছু হয় নি৷ জীবনে হার এবং জয় দুটোকেই স্বাভাবিক ভাবে নিতে হয়। আজ তুমি হেরেছ কিন্তু ভবিষ্যতে তো আবার জিততেও পারো। মনে রেখো, জীবন পুষ্পশয্যা নয় এখানে সহজে কোন কিছু পাওয়া যাবে না। সহজে পেয়ে গেলে কোন কিছুর মূল্যও থাকে না৷ এজন্য তুমি নিজেকে শক্ত করো আর আমার কথা মন দিয়ে শোনো, রাগ ঝেড়ে ফেলে সবার সাথে আনন্দ মজা করো। মনে রেখো, এই সুন্দর স্মৃতিগুলোকে একদিন তুমি ভীষণ মিস করবে। আজ হয়তো সব পরিবার, পরিজন পাশে আছে বলে কিছু মনে হচ্ছে না। কিন্তু একদিন দেখবে, সবাইকে ভীষণ মিস করবে তুমি। তখন জীবনে সফলতা থাকলেও আপনজনের অভাব টের পাবে হারে হারে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরুশিও সমর্থন প্রকাশ করে বলেন,”তোমার বাবা একদম ঠিক বলেছে জাঈদ। পরিবারের সাথে আনন্দ করা, প্রতিটা সম্পর্কের মূল্য দেয়ার মাঝেই জীবনের আসল খুশি লুকিয়ে। তুমি কত লাকি, তোমার এত সুন্দর একটা বোন, এত ভালো দুটো কাজিন আর এত বড় একটা পরিবার আছে। অথচ জানো, আমি একটা সিঙ্গেল ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় একটা বড় পরিবারকে ভীষণ মিস করেছি। অথচ তুমি এত ভালো সাপোর্টিভ ফ্যামিলি পেয়েও তার মূল্য দিচ্ছ না।”
জাঈদ এবার কিছুটা নিজের ভুল উপলব্ধি করতে পারে ও বলে,”তোমরা হয়তো ঠিকই বলছ..আমি একটু বেশি মেজাজ গরম করে ফেলেছি। আসলে এভাবে হারটা মানতে পারি নি।”
এমন সময় আরহা এগিয়ে এসে স্বভাবচরিত শান্ত স্বরে বলে ওঠে,”খেলার রেজাল্ট যাই হোক না কেন, আমার কাছে আমার ব্রো সবসময় চ্যাম্পিয়ন!”
জাঈদ খুশিতে জড়িয়ে ধরে নিজের বোন আরহাকে ও বলে,”ধন্যবাদ সিস। তোর এই কথা গুলোই আমাকে অনেক ভরসা দেয়। ”
আকাশও এসে বলে,”হ্যাঁ, ভাইয়া। তুমি আমার আইডল। আমি আমার সব বন্ধুদের কাছে তোমার কত প্রশংসা করি জানো? আমি নিশ্চিত এরপরের ম্যাচে তুমি অনেক বড় একটা জয় পাবে।”
জাঈদ বলে,”এরপর হয়তো আমি আর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব না?”
আমিনা অবাক স্বরে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,”কেন? এই কথা কেন বলছ?”
“কারণ সামনেই আমার ফাইনাল এক্সাম, এরপর আমাকে গ্রাজুয়েশনের জন্য বিদেশে যেতে হবে। তোমরা তো জানোই, আমার বিদেশেই ভালো একটা ক্যারিয়ার গঠন করে ওখানেই সেটেল্ড হবার ইচ্ছা।”
শান্ত কিন্তু আবেগপ্রবণ আরহা এই কথাটা শুনে বলে,”তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে যাবে ব্রো?”
জাঈদ আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”ধুর, আমি আমার সিসকে ছাড়া ভালো থাকব নাকি? তুই ভালো করে পড়াশোনা কর, একজন প্রতিষ্ঠিত ডক্টর হ। তারপর তুইও চলে আসিস আমার কাছে। এমনিতেও এই দেশে ভালো কোন স্কোপ নেই। আমাদের বিদেশে গিয়েই সেটেল্ড হওয়া বেটার।”
জাঈদের এসব কথা শুনে আফিফা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাকায় তার দিকে৷ আফিফার চোখে একটা চাপা বেদনা যা সে প্রকাশ করে না। আকাশ অবশ্য বলে ওঠে,”আমিও তোমার সাথে একমত ভাইয়া। আমিও বিদেশে গিয়ে ল নিয়ে পড়ব ভাবছি। আপাতত তো আমার এডমিশন পিরিয়ড চলছে তবে আমি চাই বিদেশে গিয়ে ল নিয়ে পড়তে।”
জাঈদ বলে,”একদম ঠিক ডিশিসন নিয়েছ তুমি জাঈদ।”
সায়রা বলে ওঠে,”এখনো নিজের কাপড় চোপড় নিজে ধুতে পারে না, মহারাজ আবার নাকি বিদেশে যাবে! ওখানে নিজের খাবারও নিজেকে রান্না করে খেতে হবে। বুঝেছ?”
আকাশ বলে ওঠে,”কোন ব্যাপার না। আমি সবটা ম্যানেজ করে নেবো। মানুষ অভ্যাসের দাস, সময়ের সাথে সব শিখে নেয়। কি তাই না আব্বু?”
সায়রা আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় আমান বলে ওঠেন,”তুমি যা চাও তাই হবে বাবু। তুমি যদি পড়াশোনার জন্য বাইরে যেতে চাও তাহলে এই নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই।”
সায়রা বলে ওঠেন,”এসব কি বলছ টা কি তুমি? এই বয়সে ওকে একা বিদেশে পাঠিয়ে দেবে? ও একা সবকিছু সামলাবে কিভাবে? আর আমরাও বা ওকে ছাড়া একা এখানে কিভাবে থাকবো?”
“দেখো সায়রা, ভুলে যেও না, তুমি নিজেও কিন্তু বিদেশে মানুষ হয়েছ। তুমি জানো, ওখানে কত বেশি সুযোগ সুবিধা। আমি চাই, আমার ছেলে জীবনে সফল হোক। সেজন্য যা করা লাগে আমি করবো।”
আকাশ নিজের বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আব্বু। তুমি আমার ব্যাপারটা বুঝেছ।”
এরমধ্যে আমিনা বলে ওঠে,”তোমরা যে যেখানে পারো যাও কিন্তু আমি একদম সাচ্চা দেশপ্রেমিক। আমি তো নিজের দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না।”
জাঈদ বলে উঠল,”এই যে এসে গেছেন আমাদের বঙ্গপ্রেমী, তো পাকা বুড়ি আপনি দেশেই থাকুন, আপনাকে এমনিতেও কেউ বিদেশে নেবে না। কি যোগ্যতা আছে আপনার বিদেশে যাওয়ার? পড়েছেন তো আর্টস নিয়ে, ভার্সিটিতে ইংলিশ নিয়ে পড়ছেন! এসব দিয়ে আর বিদেশে কি ক্যারিয়ার গড়বেন! ওখানে এমনিই সবাই ইংরেজি জানে। সর্বোচ্চ এই দেশে একজন ইংরেজি টিচার হতে পারবেন।”
কথাটা আমিনার মনে আঘাত করে। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”হ্যাঁ, ঠিক বলেছ তুমি। তোমরা সবাই কত গুণী, তুমি হবু ইঞ্জিনিয়ার, আরহা কত মেধাবী, সাইন্সে পড়ে ও নিশ্চয়ই ভালো ডাক্তার হবে,আমার ভাইও তো অনেক মেধাবী ও একজন ভালো লইয়্যার হতে পারবে। এই পরিবারে আমিই একমাত্র যার কোন গুণ নেই তেমন..না আমি পড়াশোনায় তেমন ভালো।”
বলেই সে বিষন্ন মুখে স্থান ত্যাগ করে। জাঈদ তাকে আটকানোর চেষ্টা করে বলে,”আমিনা, ওয়েট..আমি এভাবে বলতে চাইনি৷ আমি তো জাস্ট মজা করে….”
এমন সময় আরুশি বলে ওঠেন,”এই কাজটা তুমি একদম ঠিক করলে না জাঈদ। আমিনা তোমার মন ভালো করার চেষ্টা করছিল আর তুমি ওকে এভাবে কষ্ট দিলে। জানোই তো, ও এই বিষয় নিয়ে কিরকম হীনমন্যতায় ভোগে। তবুও কেন এই নিয়ে কথা বললে।”
“মাম্মা, আমি তো..আচ্ছা, আমি ওর রাগ ভাঙানোর ব্যবস্থা করছি।”
বলেই জাঈদ রওনা দেয় পিছন পিছন। কিন্তু আমিনা নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। সে যেমন চঞ্চল, রেগে গেলে বা কষ্ট পেলে তেমনই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাই তো রুমে মন খারাপ করে বসে রইলো। জাঈদের হাজার ডাকার পরও শুনল না। জাঈদ বলল,”আমার কথাটা শোনো, আমিনা। আমি এভাবে কিছু বলতে চাই নি।”
কিন্তু আমিনা কোন উত্তরই দেয় না। এরমধ্যে হঠাৎ করে আরহার ফোন বেজে ওঠে। সে ফোন রিসিভ করে বিপরীত দিক থেকে রিয়াশা বলে ওঠে,”আমাদের বাসায় আয় একটু..”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫২
“আমি এখন যেতে পারবো না। একটু সমস্যা…”
“প্লিজ আরহা আয় এদিকে অনেক বড় একটা কান্ড ঘটে গেছে।”
আরহা ভয় পেয়ে গেল রিয়াশার কথা শুনে ভাবলো নিশ্চয়ই রিয়াশা আবার কোন গণ্ডগোল করেছে। তাই বললো,”ঠিকাছে আমি আসছি।”