অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৪
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহা তড়িঘড়ি করে রিয়াশাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। তাদের বাড়ির সামনে এসেই দরজায় দাঁড়িয়ে কলিংবেল বাজালো। কিছু সময় পর আরহার মা মিসেস রুমি এসে দরজা খুলে দিলেন। আরহাকে দেখেই তিনি হাসিমুখে বললেন,”আরহা, তুমি এসো ভেতরে এসো।”
আরহা শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করল,”আসসালামু আলাইকুম, আন্টি, রিয়ু কোথায়? ওর কি কোন সমস্যা হয়েছে? ওর কল পেয়েছিলাম তো..”
“রিয়াশা? ও তো..”
তিনি আর কিছু বলার আগেই রিয়াশা দৌড়ে এসে আরহাকে দেখে বলে ওঠে,”তুই এসে গেছিস বান্ধবী? আয় তোর সাথে জরুরি কথা আছে।”
বলেই আরহাকে একদম টানতে টানতে নিজের রুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে সে। মিসেস রুমি বলে ওঠেন,”সাবধানে রিয়াশা..উফ এই মেয়েটার মাথায় যে কি চলে!”
রিয়াশা আরহাকে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে। আরহা আবারো জিজ্ঞেস করে,”কি হয়েছে রিয়াশা? এভাবে আমাকে জরুরি তলব করলি কেন?”
রিয়াশা বলে,”তোকে একটা জিনিস দেখতে চাই।”
“কি দেখাবি?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
রিয়াশা খুব সাবধানে নিজের ব্যাগ থেকে একটা কাগজের খাম বের করে আরহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এটা!”
“কি আছে এখানে?”
“খুলেই দেখ।”
আরহা খুলে দেখে ভেতরে একটা কনসার্টের টিকেট। সে বলে ওঠে,”এটা তো মনে হচ্ছে কোন কনসার্টের টিকেট।”
“হ্যাঁ, এটা দেখানোর জন্যই তো তোকে ডাকলাম।”
“কি? একটা সামান্য কনসার্টের টিকিট দেখানোর জন্য আমায় এভাবে ডেকে আনলি!”
“আরে পাগলী এটা কোন সামান্য কনসার্টের টিকেট না রে। জানিস এই কনসার্টে কে আসবে?”
“কে?”
“আমার আরমান ডার্লিং।”
আরহা বলে,”ওহ, তাই তো বলি তোর এত এক্সাটমেন্ট কেন।”
“এক্সাইটেড হবো না? জানিস, এই কনসার্টে উনি নাকি নিজের কিছু ফ্যানের সাথে দেখা করবেন আর তাদের নিজের হাতের অটোগ্রাফও দেবেন। আই উইশ, আমি যদি কোনভাবে পেতাম!”
“ভালো তো, তাহলে যা।”
“আরে যাব তো কিন্তু একটা সমস্যা আছে।”
“কি সমস্যা?”
“এই কনসার্টটা রাত ১২ টার পর আর এত রাতে তো আব্বু আর ভাইয়া আমাকে কোন ভাবেই বাইরে যেতে দিবে না।”
“তো তুই কি করতে চাচ্ছিস?”
“আমি চাই তুইও আমার সাথে চল এই কনসার্টে। আমরা দুজনে মিলে প্রথমে গ্রুপ স্টাডি করার কথা বলে মিমের বাড়িতে যাব। তারপর রাতে ওর বাড়িতে থাকব এটা বলে কনসার্টে যাব!”
আরহা বলে ওঠে,”অসম্ভব! আমি বাড়িতে মিথ্যা বলতে পারবো না। যদি সবাই জেনে যায় অনেক রাগ করবে। তাছাড়া এসব কনসার্টে আমার কোন আগ্রহও নেই।”
রিয়াশা আকুতিভরা কন্ঠে বলে,”প্লিজ আরহা..তুই না করিস না। তুই আমার একমাত্র ভরসা। তুই তো জানিস আমি আরমান খানের কতো বড় ফ্যান! ওনার অটোগ্রাফ পাওয়ার এই সুযোগ আমি কিছুতেই হাতছাড়া করতে পারব না। তুই কোন ভাবে একটু ম্যানেজ করে নে।”
“কিন্তু যদি কোন সমস্যা হয়?”
“কোন সমস্যা হবে না। আমি আছি তো। আমি সব ম্যানেজ করে নেব।”
“কিন্তু…”
“আর কোন কিন্তু নয়। তুই আমার জানের জিগরি দোস্ত না? আমার কথা শুনবি না। ”
আরহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, দেখি কি করা যায়।”
“এসব দেখাদেখির টাইম নেই। তুই যাবি ফাইনাল। কালকে রাতেই এই কনসার্ট। আগে থেকে বাড়িতে বলে রাখিস মিমের বাড়িতে গ্রুপ স্টাডি করতে যাব। তাহলে আর সমস্যা হবে না।”
রিয়াশার জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে আরহা বলে,”আচ্ছা।”
রিয়াশা আরহাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”থ্যাক ইউ আরহা। ইউ আর দা বেস্ট।”
এমন সময় হঠাৎ করে রিয়াশা রুমে কেউ কড়া নাড়ে। রিয়াশা নিজের রুমের দরজা খুলেই মাশরাফিকে দেখে। মাশরাফিকে ভীষণ গম্ভীর লাগছিল। রিয়াশা ভয় পেয়ে যায় যে মাশরাফি সব শুনে ফেললো নাকি। তাই সে বলে ওঠে,”ভাইয়া..তুমি..কিছু বলবে?”
“কার সাথে কথা বলছিলিস তুই? তোর ঘর থেকে আওয়াজ শুনে এলাম।”
“আমি তো..”
এরমধ্যেই মাশরাফির নজর যায় আরহার দিকে। আরহার পরনে সাধারণ সাদা একটা সালোয়ার কামিজ, চেহারার বাহ্যিক কোন মেকআপ সামগ্রী নেই। অথচ এত সাধারণ সাজেও তাকে কতই না অপূর্ব লাগছে। মাশরাফি হা হয়ে তাকিয়ে থাকে আরহার দিকে। আরহার দৃষ্টি তখনো নতজানু। রিয়াশা বলে,”আমি তো আরহার সাথে কিছু জরুরি কথা বলছিলাম। তুই আয় না, ভেতরে আয়।”
মাশরাফির কি হলো সে জানে না, হয়তো আরহার টানেই সে ভেতরে চলে এসে একদম তার মুখোমুখি দাঁড়াল। আরহা এবার চোখ তুলে তাকালো মাশরাফির দিকে। আর তাতেই মাশরাফির হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় হলো। আরহাও কিছুটা বিব্রতবোধ করল। এরইমধ্যে রিয়াশা এগিয়ে এসে বললো,”তুই এসে ভালোই হলো ভাইয়া। তুই তো আমাকে আর আমিনা আপুকে নিজের জয় উপলক্ষে ট্রিট দিলি কিন্তু আরহাকে তো দিস নি। এবার ওর ট্রিটের টাকাটা আমায় দিয়ে দে, আমি ওকে ট্রিট দিয়ে দেব।”
আরহা বলে,”না, ভাইয়া এর কোন প্রয়োজন নেই….”
মাশরাফি বলে,”কেন প্রয়োজন থাকবে না? সবাইকে যখন ট্রিট দিয়েছি তোমাকেও দেব, সবথেকে স্পেশাল ট্রিট টা তো তোমাকেই দেব।”
কথাটা শুনেই এবার আরহা একদম মাশরাফির চোখের দিকে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করে তার মনের কথা। মাশরাফি আবার বলে ওঠে,”নাকি তোমার ভাইয়া আমার প্রতিপক্ষ ছিল জন্য তুমি ট্রিট নিবে না।”
আরহা শান্তস্বরে বলে,”না, ভাইয়া এমন না। আমি তো..”
“বুঝেছি। যদি এমন না হয় তাহলে এখন আমার সাথে চলো। তোমায় ট্রিট দিয়ে আসি।”
আরহা কি বলবে বুঝতে পারছিল না। রিয়াশা বলে,”হ্যাঁ, ভাইয়া যাও ওকে নিয়ে গিয়ে এখনই ট্রিট দিয়ে আসো। এরপর বাড়িতে গিয়ে তো পড়ার টেবিলে বসবে তারপর আর উঠবেই না আমাদের হবু ডাক্তার ম্যাম।”
মাশরাফি আরহাকে আবার জিজ্ঞেস করে,”তুমি কি যেতে ইচ্ছুক?”
আরহা হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। কারণ তার মনে হচ্ছিল এত বিনয়ীভাবে জিজ্ঞেস করার পর যদি সে নেতিবাচক উত্তর দিত তাহলে সেটা অভদ্রতা হতো।
মাশরাফি বলে,”তাহলে চলো।”
রিয়াশা আরহার ঘাড়ে টোকা দিয়ে বলে,”হুম যা। আর যেটা বলেছি সেটা মনে রাখিস।”
আরহা মাশরাফির সাথে রওনা দেয়। মাশরাফি বাড়ির বাইরে এসে আরহাকে বলে,”চলো পাশের রেস্টুরেন্টেই যাই।”
“আচ্ছা।”
আরহা ও মাশরাফি দুজনে একসাথে পাশের একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে মাশরাফি আরহার দিকে মেনু কার্ড দিয়ে বলে,”এখান থেকে যা যা পছন্দ অর্ডার দাও। একদম লজ্জা পাবে না।”
আরহা নিজের পছন্দমতো কিছু খাবার অর্ডার দেয়। অতঃপর অর্ডার অনুযায়ী খাবার আসতেই খাওয়া শুরু করে। সে বেশ ধীরগতিতে খাচ্ছিল। মাশরাফি কফি খেতে খেতে আরহাকেই দেখে যাচ্ছিল। আরহাকে দেখে যেন তার দুই চোখের শখ মেটাচ্ছিল। এই মেয়েটাকে যতোই দেখে ততোই ভালো লাগে। ঐ দৃষ্টিতে ছিল না কোন কামনা, ছিল কেবল একরাশ মুগ্ধতা।
খাওয়া শেষ হবার পর আরহার মুখে কিছু দাগ লেগে থাকায় মাশরাফি নিজের হাতে সেটা মুছে দেয়। যার ফলে তার হৃদস্পন্দন অনেক বেড়ে যায়। আরহাও অবাক চোখে মাশরাফির দিকে তাকায়। মাশরাফি পরিবেশ স্বাভাবিক করতে বলে,”আসলে..মুখে..”
“কোন ব্যাপার না ভাইয়া।”
এরপর দুজনে উঠে দাড়ায়। রেস্টুরেন্টের বিল পে করে আরহাকে নিয়ে মাশরাফি বাইরে আসতে নেবে এমন সময় জাঈদের মুখোমুখি হয়। যাই তাদের দুজনকে একসাথে দেখে ভীষণ রেগে যায়। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়ে আরহাকে বলে,”তুই কি করছিস এখানে?”
আরহা ভয়ে শিটিয়ে যায়।
মাশরাফি বলে,”আমি বলছি..”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৫৩
“আমি আমার বোনের সাথে কথা বলছি। তুই মাঝখানে ঢুকবি না। সিস, তোকে আমি বলেছি না এভাবে যারতার সাথে না মিশতে। তুই আমার কথা শুনলি না কেন?”
“ব্রো আসলে..”
“চুপচাপ আমার সাথে এখনই বাড়িতে চল। আর এই ভুল যেন দ্বিতীয় বার না হয়। ”