অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭০

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭০
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহা সবার সামনে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে। সে জানতো এই সত্য একদিন সামনে আসবে। তাই তো সবাইকে নিজে থেকে সবকিছু বলতে চাইছিল। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে সব সত্য যে সামনে চলে আসবে সে ভাবে নি। এখন কিভাবে সবার চোখে চোখ রাখবে সে?
জাঈদ এগিয়ে এসে আরহার সামনে দাঁড়ায়। আরহার কাধে হাত রেখে বলে,”তুমি সবাইকে সত্য টা বলো, সিস। এসব কিছু মিথ্যা তাই না? আমি জানি, আমার বোনু এসবে জড়িত থাকতে পারে না। ও কেন শুধু শুধু চাচ্চুকে মারতে চাইবে? চাচ্চুকে কত ভালোবাসত ও।”
আরহা কিছু বলে না। সায়রাও বলেন,”আরহা, আমি জানি তুমি কিছু করো নি। তোমার চাচ্চুকে তুমি মারতে পারো না৷ সবাইকে সব সত্যটা বলে দাও।”

আকাশ চেচিয়ে উঠে বলে,”তোমরা বুঝতে পারছ না, ওর এই নীরবতাই ওর সম্মতির লক্ষণ দিচ্ছে।”
জাঈদ আকাশকে চোখ রাঙিয়ে বলে,”তুই ছোট ছোটর মতো থাক। আমার সিস এসবে জড়িত নয়। ও এখনই নিজের মুখে সব সত্য বলবে দেখে নিস। আর ঐ মাশরাফি তো নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছে। এখন নিশ্চয়ই এসব কিছু নতুন চাল। সিস, তুমি কিছু বলছ না কেন? সমস্ত সত্যটা বলো সবাইকে।”
আরহা কান্নারত স্বরে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে,”চাচি, তুমি আমায় বিশ্বাস করো..আমি চাচ্চুকে..”
সায়রা বলেন,”আমি জানি, তোর চাচ্চু তোকে কত ভালোবাসত, তুইও তো তোর চাচ্চুকে নিজের বাবার পরের স্থান দিয়েছিলি। তাকে কেন মারবি তুই। এসব কিছু মিথ্যা।”
আরুশি কিছু বলার চেষ্টা করছিল কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে বলার সুযোগই পাচ্ছিল না। আমিনা বলে,”আরহা, তুমি বলো এই ভিডিওটা কি মিথ্যা? আমার বাবার মৃত্যুর জন্য কি তুমি দায়ী নও?”
আরহা চোখ বন্ধ করে বলে ওঠে,”এই ভিডিওটা সত্য৷ কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি ইচ্ছা করে চাচ্চুর মাথায় ফুলের টব ফেলি নি। ওটা তো আমার হাত লেগে..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরহার কথা শেষ হবার আগেই আমিনা এগিয়ে এসে তাকে এলোপাতাড়ি থা*প্পড় মা*রতে থাকে। আর বলে,”খুনি..তুমি একটা খু/নি..আমার বাবাকে মে*রে ফেলেছ তুমি। তোমারো এই দুনিয়ায় বেচে থাকার কোন অধিকার নেই..”
বলেই আরহার গলা চেপে ধরে। জাঈদ এগিয়ে এসে আমিনাকে আরহার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। আরহা ছুটে সায়রার কাছে গিয়ে বলে,”চাচি, তুমি তো আমায় বিশ্বাস করো৷ আমি সত্যি ইচ্ছা করে কিছু করিনি।”
জাঈদ বলে,”তাহলে মাশরাফি কেন নিজের ঘাড়ে সব দোষ নিল? সত্যটা আমাদের বলো সিস।”
“উনি আমাকে বাঁচানোর জন্যই সব দোষটা নিজের ঘাড়ে নিয়েছিলেন। উনি কিছু করেন নি ভাইয়া।”
আরহাম খান এতক্ষণ চুপ ছিলেন। এবার তিনি এগিয়ে এসে রাগী গলায় বলেন,”এতদিন ধরে সত্যটা কেন তুমি আমাদের থেকে লুকিয়েছ আরহা? বিনা অপরাধে মাশরাফি এত শাস্তি পেলে তখনো তুমি চুপ ছিলে। এত স্বার্থপর তুমি?”

“পাপা..বিশ্বাস করো, আমি সব সত্যটা অনেক আগেই তোমাদের জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মাশরাফি ভাইয়া আমায় সবটা গোপন রাখতে বলেছিল। উনি ওনার কসম দিয়েছিল..উনি চান নি তোমরা সবাই আমায় ভুল বোঝো।”
আকাশ রাগী স্বরে বলে,”তোমার মতো খু*নিকে ভুল বোঝার কি আছে? এতদিন ধরে আমি নিজের বাবার খু*নির সাথে এক ছাদের তলায় থেকেছি এটা ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
জাঈদ বলে ওঠে,”আরহা তো বললো, ও ইচ্ছা করে চাচ্চুকে মেরে ফেলেনি আর না ইচ্ছা করে এতদিন সত্যটা লুকিয়েছে৷ তাহলে কেন তোমরা সবাই ওকে এভাবে দোষারোপ করছ?”
আমিনা বলে,”এই যুক্তি তোমার মাশরাফি ভাইয়ার বেলায় কোথায় ছিল জাঈদ? তখন তো ওনার কোন কথা না শুনেই থানায় গিয়ে মামলা করে এলে। তাহলে নিজের বোনের বেলায় কেন ছাড় দিচ্ছ? এখন কেন তোমার গলার স্বর বদলে গেছে।”

“আমিনা! আরহা, আমার বোন। আমরা ছোটবেলা সবাই ছোটবেলা থেকে ওকে নিজের চোখে বড় হতে দেখেছি৷ ও যে এমন কিছু করতে পারে না সেটা তুমিও জানো।”
“নাহ, আমি কিছু জানি না। ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত সত্য তো এটাই যে আরহার জন্যই আমার আব্বু মারা গেছেন। আর ওকে আমি নিজের চোখের সামনে যত দেখব ততই বেশি করে মনে পড়ে যাবে যে,ওর জন্যই আমার আব্বু আমাদের মাঝে নেই। তাই ওকে আমি মেনে নিতে পারবো না।”
বলেই সে আরহাম খানের সামনে গিয়ে বলে,”বড় আব্বু, তুমিই তো বলেছিলে যে,তোমার ভাইয়ের খু*নিকে তুমি উচিৎ শাস্তি দেবে। সে যদি তোমার সন্তান হয় তাও ছাড় দেবে না। তাহলে এবার সেই কথা রাখো। আর যদি না রাখো তাহলে বলে দাও, আমি অন্তত নিজের বাবার খু*নিকে নিজের চোখের সামনে দেখতে পারবো না। আমি বেরিয়ে যাব এই বাড়ি থেকে।”

সায়রা বলে ওঠেন,”এসব কি বলছিস তুই আমিনা? তুই প্রেগন্যান্ট, এই অবস্থায় কোথায় যাবি তুই?”
“যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব। কিন্তু নিজের বাবার খু*নির সাথে এক ছাদের তলায় আমি থাকতে পারবো না।”
আকাশও এগিয়ে এসে বলে,”আমিও। আমিও আপুর সাথে বেরিয়ে যাব এই বাড়ি থেকে যদি আরহা এই বাড়িতে থাকে।”
আরুশি বলে ওঠেন,”আমি বুঝতে পারছি, তোমাদের এখন যা মানসিক অবস্থা তাতে এরকম রেগে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে রাগের মাথায় আমাদের কোন সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ নয়। রাগের মাথায় নেয়া সিদ্ধান্তগুলো ভুলই হয়। তাই ঠান্ডা মাথায় বসে..”

এমন সময় আরহাম খান বলে ওঠেন,”এখানে মাথা ঠান্ডা করার মতো কিছু নেই আরুশি। ওরা তো ভুল কিছু বলছে না। আরহার জন্যই আমার ভাই মারা গেছে। ও যতোই আমার মেয়ে হোক, তাতে তো এই সত্যটা মিথ্যা হয়ে যায় না।”
জাঈদ বলে ওঠে,”পাপা, এসব কি বলছ তুমি?”
আফিফা খান এতক্ষণ চুপ ছিলেন৷ তিনি আরহামকে বলেন,”ওরা নাহয় ছোট কিন্তু তুমি তো বড়। এভাবে রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিও না যাতে পরে পস্তাতে হয়।”

“এখানে পস্তানোর কিছু নেই, মম। আরহা যা অপরাধ করেছে তার শাস্তি ওকে পেতেই হবে। মাশরাফি যখন কোন অন্যায় না করে এত শাস্তি ভোগ করেছে তখন আসল অপরাধী শাস্তি পাবে না, এটা কিভাবে হয়? আরহা, তুমি নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে। আমি থানায় গিয়ে তোমার নামে মামলাও করব তারপর যদি তুমি দোষী প্রমাণিত হও সেই অনুযায়ী শাস্তি পাবে আর যদি নিরপরাধ হও..তাহলে হয়তো আইনি শাস্তি পাবে না কিন্তু এই বাড়িতে তোমার আর কোন স্থান হবে না। আজ থেকে আমাদের সাথে তোমার আর কোন সম্পর্ক থাকবে না। আমি ভেবে নেবো, আমার মেয়ে মারা গেছে।”
“পাপা!”

অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে আরহা। নির্ঝর খান বলে ওঠেন,”আরহাম, শান্ত হও, যেই ভুল আমি করেছিলাম তার পুনরাবৃত্তি তুমি করো না। নিজের মেয়েকে এভাবে পর করে দিও না।”
“আমার যা শোনানোর তা আমি শুনিয়ে দিয়েছি। এরপর আমার আর কিছু বলার নেই।”
আফিফা খান কিছু বলতে যাবেন এমন সময় আরুশি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন,”শুনলেন না, আপনার ছেলের কথা? ওর যা শোনানোর ও শুনিয়ে দিয়েছে। এবার, আমিও আমার কথা বলছি। ও নিজের মেয়েকে পর করে দিতে পারে কিন্তু আমি পারবো না। যদি আমার মেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে আমিও ওর সাথে যাব। ওকে আমি একা ছাড়বো না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৬৯

জাঈদ বলে,”এসব তুমি কি বলছ মাম্মা?”
“ঠিকই বলছি, তুই যখন ছোট ছিলি তখন তোকে আমি একা মানুষ করেছি সেভাবে আরহাকেও আমি একা সামলাতে পারব।”
বলেই তিনি আরহার সামনে এগিয়ে এসে তার হাত ধরে বলে,”চলো আমার সাথে। ভয় পাবেনা একদম। তোমার মাম্মা তোমার পাশে আছে।”
আরহাম খান বলেন,”যার যার বেরিয়ে যাবার বেরিয়ে যাও। আমি কাউকেই আটকাবো না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ৭১