অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১৩
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা মন খারাপ করে ঘরের এককোণায় বসে ছিল৷ তার বিয়ের পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে৷ এই এক সপ্তাহ তার কাছে যেন ছিল এক সহস্র যুগের সমান। জীবনের সবথেকে কঠিন দিনগুলো সে কাটাচ্ছে এখন। আরিশা উদাস হয়েই বসে ছিল এমন সময় জাঈদ রুমে প্রবেশ করে আরিশার উদ্দ্যেশ্যে বলল,”সারাদিন কি ঘরে বসে থাক নাটক করার জন্য?”
আরিশা জাঈদের কথায় কোন পাত্তা দিল না। জাঈদ রেগে আরিশার কাছে এসে তাকে টান নিয়ে নিজের একদম কাছে এনে বলে,”আমি কিছু বলছি তোমায়, তুমি শুনতে পাচ্ছ?”
আরিশার ধ্যান ভাঙে। সে জাঈদের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”আপনার কথা শোনার কোন ইচ্ছা নেই।”
“এই, আমাকে চোখ রাঙাবে না। আমি তোমার হাতের রান্না খেতে চাই৷ যাও আমার জন্য কিছু রান্না করে আন।”
“আপনাকে পারলে তো আমি বিষ খাইয়ে দেই। ছাড়ুন তো!”
বলেই আরিশা জাঈদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোফায় এসে বসে। জাঈদ আরিশার এমন একগুঁয়েমি দেখে রাগে কাপছিল। সে বলে,”এর ফল তোমায় ভোগ করতেই হবে!”
বলেই সে রাগে গজগজ করতে করতে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। জাঈদকে বেরিয়ে যেতে দেখে আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আল্লাহ, এ কোন জালিমের সঙ্গে তুমি আমার ভাগ্য জড়িয়ে দিলে! কি অন্যায় করেছিলাম আমি? আমাকে এই জীবন থেকে মুক্তি দাও৷ এর থেকে তো মৃত্যুও ভালো!”
বলেই সে কাঁদতে শুরু করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আফিফা উদাস মনে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। যদিও তার মন মানসিকতা একদম ভালো নেই। নির্ঝরসহ পরিবারের বাকি লোকদের আপত্তির কারণে সে আরিশার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারছে না। আরিশার জন্য তার ভীষণ চিন্তা হচ্ছে। এক সপ্তাহ থেকে আরিশার কোন খবরই নেই তার কাছে৷ আফিফা তার বোনের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তা করছে। মনে মনে হাপিত্যেশ করে বলছে,”না জানি, আমার বোনটা এখন কি অবস্থায় আছে!”
আফিফার ভাবনার মাঝেই কেউ পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। আফিফা চমকে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে নির্ঝরকে দেখে অবাক স্বরে বলে,”আপনি!”
নির্ঝর হালকা হেসে বলে,”এখনও তোমার আপনি আপনি বলা গেল না। আমি ছাড়া আর কার সাহস আছে তোমায় স্পর্শ করার?”
আফিফাও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে একটু হাসি দেয় জোরপূর্বক। নির্ঝর হাতে একটা চিরুণী নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল আছড়াতে আছড়াতে বলে,”কোথাও যাচ্ছ নাকি?”
“হ্যাঁ, মেডিকেলে যাচ্ছি। আজ অনেক জরুরি ক্লাস আছে।”
নির্ঝর আফিফার কথা শুনে বিরক্তির সুরে বলে,”রোজ, রোজ কি তোমার মেডিকেলে না গেলেই নয়? বিয়ের পর তো ভালো ভাবে তোমার সাথে টাইমই স্পেন্ড করতে পারলাম না। কোথায় আমরা নিউলি ম্যারিড কাপল, এই সময় লাইফটা এনজয় করব। আর তুমি নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত!”
আফিফা বলে,”কি করবো বলুন? ক্লাসটা যে অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। আমাকে যেতে হবে।”
নির্ঝর আফিফাকে বারণ করে বলে,”আজ তোমায় কোথাও যেতে হবে না। চলো, আমি তোমায় নিয়ে ঘুরতে যাই। শুনেছি, সিলেটে অনেকেই হানিমুন করতে আসে। আমরাও নাহয় কোন সুন্দর স্থানে..”
আফিফা বলে ওঠে,”আজ সম্ভব নয়। আমি নাহয় অন্য কোনদিন সময় বের করে নেব।”
নির্ঝর নাছোড়বান্দা। সে বলে,”আমি যা বলছি তাই শোনো। তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে আমার কোন আপত্তি নেই৷ কিন্তু আমাদের দাম্পত্যের মধ্যে তোমার ক্যারিয়ারকে এনো না। এরকম করে কিন্তু তুমি স্বামীর অধিকার থেকে আমায় বঞ্চিত করছ।”
“আপনি ভুল বুঝছেন আমায়!”
“আমি একদম ঠিক বুঝেছি।”
আফিফা আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় নির্ঝর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আফিফাও তাকে বোঝানোর জন্য তার পেছন পেছন আসে। নির্ঝর ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়। আফিফাও তার পেছন পেছন সেখানে আসে। এমন সময় ছবি বেগম যিনি ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন তিনি বলে ওঠেন,”কি হয়েছে নির্ঝর দাদুভাই? তোমায় এমন লাগছে কেন?”
নির্ঝর কিছুই বলে না। আদৃতা হঠাৎ সেখানে চলে আসে। আবরাজ ও নিঝুম তাদের কাজের জন্য আবার লন্ডনে ফিরে গেছে। তবে আদৃতাকে রেখে গেছে। যদিও আদৃতা এখানে থাকতে চায়নি কিন্তু ছবি বেগম অনুরোধ করায় কিছু বলতেও পারে নি। সে এসেই বলে ওঠে,”কি ব্যাপার ব্রো? এত সকাল সকাল তুমি কোথায় যাচ্ছ?”
“একটু বাইরে বের হচ্ছি।”
“বাহ, ভালো তো। তাহলে তোমার ওয়াইফকেও সাথে নিয়ে যাও। বিয়ের পর তো সেরকম ঘোরার সময়ই পেলে না৷”
ছবি বেগমও আদৃতার তালে তাল মিলিয়ে বলেন,”তাই তো, আদৃতা দিদিভাই তো ঠিক কথাই বলেছে। নির্ঝর দাদুভাই, তুমি আফিফা দিদিভাইকে নিয়ে ঘুরে আসো কোথাও থেকে।”
নির্ঝর তাচ্ছিল্য স্বরে বলে,”কি যেন বলো না তুমি দাদি! তোমার নাতনী হলো একজন মেধাবী মেডিকেল স্টুডেন্ট। তাকে ঘুরতে নিয়ে গিয়ে আমি কি তার গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করতে পারি?”
বলেই সে বেরিয়ে যায়। ছবি বেগম বুঝতে পারেন কোন একটা ঝামেলা হয়েছে। তিনি আফিফার দিকে তাকিয়ে বলেন,”কি হয়েছে আফিফা দিদিভাই? তোমাদের মধ্যে কি কোন ঝামেলা হয়েছে?”
আফিফা কিছু না বলে মাথা নিচু করে মেডিকেলে যাওয়ার উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।
রাত্রি তখন ১২ টা, আরিশা রুমের মধ্যে চুপচাপ শুয়ে ছিল। জাঈদ সেই সকালে বেরিয়েছে এরপর এখনো অব্দি ফিরে আসে নি। সেসব নিয়ে আরিশার কোন ভাবান্তর নেই। দুপুর ও রাত্রে এই বাড়ির কাজের লোক এসে তাকে খাবার দিয়ে গেছে। সেও দিব্যি সেসব খেয়ে নিয়েছে৷ এখন আপাতত শুয়ে শুয়ে নিজের পরিবারের সবার কথা ভাবছিল। বিশেষ করে আফিফা ও নির্ঝরের কথা। তাদের কথা ভেবেই সে বিড়বিড় করে বলে,”তুমি এখন অনেক সুখী তাই না আপ্পি? আমি তো সবসময় তোমাকে সুখীই দেখতে চেয়েছি। হতে পারে তোমার সাথে আমার কোন রক্তের সম্পর্ক নেই৷ কিন্তু আমাদের মধ্যে যে আত্মিক সম্পর্ক আছে তা যে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি!”
এমন সময় হঠাৎ একটা শব্দ পেয়ে আরিশা উঠে বসে। জাঈদ টলতে টলতে রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়। অতঃপর আরিশাকে দেখেই তার দিকে এগোতে থাকে৷ জাঈদ যতোই আরিশার দিকে এগোচ্ছিল আরিশা তখন নাকে একটা বড্ড বাজে গন্ধ অনুভব করছিল৷ জাঈদ আরিশার একদম কাছে আসলে আরিশা নিজের মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে,”আপনি নেশা করেছেন!”
জাঈদ রেগে আরিশার চুলের মুঠো টেনে ধরে বলে,”বেশ করেছি, আমার বাপের টাকায় নেশা করেছি..তোর বাপের টাকায় নয়..উপস..সরি তোর তো বাপই নেই!”
জাঈদের কথা শুনে আরিশার মনের ক্ষত জেগে ওঠে৷ সে কেঁদে ফেলে। জাঈদ এতোটাই নেশাগ্রস্ত ছিল সে সেসবকে পাত্তা না দিয়ে আরো জোরে আরিশার চুল টেনে ধরে। আরিশা আর সহ্য করতে না পেরে বলে,”ছা…ছাড়ুন আমায়…”
জাঈদ যেন আজ নিজের মধ্যে ছিল না। নেশা তার হুশ কেড়ে নিচ্ছিল। নেশার ঘোরে সে আরিশার মধ্যে আফিফাকে দেখতে থাকে। অতঃপর বলে ওঠে,”আফিফা..তুমি এসেছ..আজ আমি তোমায় নিজের করে নেব। তুমি শুধু আমার..ঐ নির্ঝরের নও।”
বলেই সে আরিশাকে কাছে টেনে নিয়ে তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। আরিশা জাঈদকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু তার শক্তির সাথে পেরে ওঠে না। জাঈদ আরিশাকে নিজের আরো কাছে টেনে নেয়। আফিফা মনে করে তার ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। একসময় আরিশাকে কোলে তুলে নিয়ে তাকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। আরিশার পরনের সালোয়ার কামিজটা টেনে খুলতে থাকে। আরিশা কান্না করতে করতে অনুরোধ করে থেমে যেতে কিন্তু জাঈদ কোন কথাই শোনে না।
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ১২
সে আরিশাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে নিজের জামাকাপড়ও খুলতে শুরু করে। অতঃপর আরিশাকে সম্পুর্ণ নিজের আওতায় এনে নেয়৷ বাকি সময়টা আরিশার জন্য ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। সে ঐ অবস্থায় যন্ত্রণায় কাতড়াতে থাকে। পুরো ঘর তার আহাজারির শব্দে ভারী হয়ে ওঠে। জাঈদ নিজের খোয়াইশ মিটিয়ে আরিশার উপর থেকে সরে গিয়ে তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে বলে,”আফিফা..তুমি শুধু আমার আফিফা…”
আরিশা এমনিতেই অনেক কষ্টে ছিল তার উপর যখন বুঝতে পারে জাঈদ এতক্ষণ ধরে তাকে আফিফা মনে করে ভোগ করল তখন নিজের প্রতি ঘৃণায় তার ইচ্ছা করে মাটিতে মিশে যেতে।