অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩১

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩১
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশা চুপচাপ বসে আছে ঈশিতাদের বাড়ির ভেতরে এসে। ঈশিতা আরিশার পাশে বসে বলে,”কি হয়েছে আরিশা? তোমায় এমন লাগছে কেন?”
আরিশা হতাশ স্বরে বলে,”ঐ লোকটা কেন আমার সামনে এলো আপু? আমার ঐ লোকটাকে একদম সহ্য হয়না।”
“ঐ লোকটা বলতে তুমি কাকে বোঝাচ্ছ? তখন রাস্তায় যেই ছেলেটাকে দেখলাম? কে ঐ ছেলেটা?”
আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”ঐ ছেলেটাই সেই ব্যক্তি যার জন্য আজ আমার এই অবস্থা। যার জন্য আমার জীবনটা এলোমেলো হয়েছে, যার জন্য আজ আমাদের পরিবারটা ভেঙে গেছে।”
ঈশিতা বলে,”তার মানে ঐ ছেলেটাই তোমায় জোরপূর্বক বিয়ে করেছিল?”
আরিশা দুদিকে মাথা নাড়ায়। ঈশিতা রাগান্বিত স্বরে বলে,”কথাটা তুমি আমায় আগে বললে না কেন? তারপর আমি ঐ ছেলেকে দেখে নিতাম। খচ্চর ছেলে কোথাকার!”
“বাদ দিন, আপু। আমি তো ওনার বিচার পুরোপুরি আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি এখন তাহলে একটু বিশ্রাম নাও। আমি আসছি।”
বলেই ঈশিতা চলে যায়। ঈশিতা যাওয়ার পর আরিশা জাঈদের বলা কথাগুলোই ভাবতে থাকে। তার ক্ষমা চাওয়া, ফিরে আসার অনুরোধ আরিশাকে ভাবায়। কিছু সময় এসব নিয়ে ভাবার পর আরিশা বলে,”নাহ, আমি এসব নিয়ে ভাবব না। সবই ঐ লোকটার নাটক। ওনাকে বিশ্বাস করলে আমার জীবনটা ধ্বংস হয়ে যাবে। ওনার মতো মানুষকে কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না। আমি ঘৃণা করি ওনাকে শুধুই ঘৃণা।”

আবরাজ তার হাতে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখে বিন্দু বিন্দু জল। নিঝুম, ছবি বেগম, নির্ঝর সবাই প্রশ্নাত্মক চোখে আবরাজের দিকেই তাকিয়ে। নিঝুম বলে ওঠে,”কি এসেছে রিপোর্টে? ”
ছবি বেগমও বলেন,”হ্যাঁ, চুপ করে আছিস কেন? রিপোর্টে কি এসেছে বল! আমাদের সবার যে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে।”
আবরাজ চোখের জল মুছে বলে,”সালমাই আমাদের সন্তান, নিঝুম। এই রিপোর্টে সেটা প্রমাণিত।”
এবার নিঝুমও কাঁদতে শুরু করে। কিছুটা দূরে বসা সালমার চোখেও জল। নিঝুম সালমার কাছে গিয়ে বসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমি জানতাম..যখন ওকে প্রথম স্পর্শ করি তখনই অনুভব করতে পেরেচ ছিলাম যে ও আমার আপন।”
নির্ঝর এগিয়ে এসে বলে,”আমার বোন..”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ছবি বেগমও খুশিতে গদোগদো হয়ে বলেন,”এত দিন পর আমার আসল নাতনীর খোঁজ পেলাম। তোমাদের দাদা যদি এই দিনটা দেখে যেতে পারতেন! লোকটার সারাটা জীবন মিথ্যা ভেবেই কেটে গেলো!”
দূর থেকে এসব দৃশ্য দেখে আদৃতা জ্বলছিল৷ সে বলে ওঠে,”এসব সত্য হতে পারে না? এতদিন আমি তোমাদের মেয়ে ছিলাম..আর আজ এই কোন সত্য সব কিছু এলোমেলো করে দিল? এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমার যায়গা কিছুতেই এই মেয়েটা দখল করতে পারে না। আমি সেটা কিছুতেই হতে দেব না।”
সালমার পালিত বাবা বলেন,”আপনেরা তো নিজেদের পুরিরে ফেরত পাইলেন, এবার আমাদের পুরিরেও আমাদের কাছে ফেরত দেন।””

ছবি বেগম সাথে সাথেই বলেন,”হ্যাঁ, ঐ তো আপনাদের মেয়ে আদৃতা। ওকে নিয়ে যান আপনাদের সাথে।”
আদৃতা ক্রোধান্বিত স্বরে বলে,”আমি কোথাও যাব না,ওনাদের সাথে। আমি ওনাদের মা-বাবা বলে মানি না।”
“সে তুমি মানো বা না মানো ওনারাই তোমার আসল বাবা মা। তুমি এতদিন নিঝুম আর আবরাজের মেয়ে হিসেবে বড় হলেও তোমার এই পরিচয় তো সত্য না। তাই, জেদ না দেখিয়ে রিয়্যালিটি মেনে নেয়ার চেষ্টা করো।”
আদৃতা তখনও রাগে ফোসফাস করছিল। আবরাজ ও নিঝুম তাদের মেয়ে সালমাকে আগলে নিয়ে বলে,”চলো, আজ তুমি তোমার আসল বাড়িতে যাবে।”
সালমা অবাক স্বরে বলে,”আসল বাড়ি?”
“হুম।”

আদৃতার যেন এসব দৃশ্য একদম সহ্য হচ্ছিল না। সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় আফিফা সেখানে চলে আসে। আফিফা এই হাসপাতালেই পড়াশোনা করে। সে এখানে এসেছিল কিছু কাজে। বাড়ির সবাইকে এখানে দেখে সে থমকে যায়। কিন্তু তাদের সবার উপর রেগে থাকায় কাউকে কিছু না বলেই এড়িয়ে যেতে চায়। এমন সময় ছবি বেগম তার পথ আটকে বলে,”এখনও রেগে আছিস আমাদের উপর?”
উত্তরে আফিফা কিছু বলে না। ছবি বেগম বলেন,”যাই হোক, একটা আনন্দের কথা শোন। আমাদের পরিবারের অনেক বড় একটা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। আবরাজ আর নিঝুমের আসল মেয়ে আদৃতা নয় জানিস। জন্মের পর ওদের বাচ্চা অদল-বদল হয়ে গেছিল৷ এই যে ওদের আসল মেয়ে সালমা।”
কথাটা শুনে আফিফা অবাক হয়ে যায়। ছবি বেগম তাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। অতঃপর বলে,”এতদিন পর আমাদের পরিবারটা এক হয়েছে। তুই একটা কাজ কর, তোর মা-বাবাকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আয়।”
আফিফা বলে,”না, দাদি। এটা সম্ভব নয়। তুমি জানো, কেন আমরা বাড়ি ছেড়ে এসেছি৷ আরিশার সাথে তোমরা.।।”
ছবি বেগম বলেন,”আরিশাকেও নিয়ে আয় তোরা। আরিশার উপরে আমরা যে কারণে রেগে ছিলাম সেটা তো রইল না।।এই আদৃতা তো আমাদের বাড়ির মেয়েই নয়।”

আফিফা বিদ্রুপের স্বরে বলে,”আজ আদৃতা তোমাদের বাড়ির মেয়ে নয় জন্য তুমি এসব বলছ? যদি হতো তাহলে বলতা? বলতা না। তাই আমি এখন ফিরবো না। আর তোমাদের অনেক অভিনন্দন নিজেদের বাড়ির আসল মেয়েকে খুঁজে পাওয়ার জন্য।”
এমন সময় নির্ঝর আফিফার সামনে এসে বলে,”তুমি প্লিজ ফিরে এসো আফিফা। আমি তোমাকে অনেক মিস করছি। আমি সবকিছুর জন্য ক্ষমা..”
“তোমার ক্ষমা তোমার কাছেই রাখো। তুমিই তো বলেছিলে তোমার আর আরিশার মধ্যে একজনকে বেছে নিতে। আমি আরিশাকে বেছে নিয়েছি৷ এখন তাই তোমার এসব বলার কোন অধিকার নেই।”
“অভিমান করেছ?”
“না, অভিমান না। এটাই আমি ভেবে চিন্তে বলছি। যাইহোক, তোমার আসল বোনকে বাড়িতে নিয়ে যাও।”
বলেই আফিফা চলে যায়৷ তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নির্ঝর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ছবি বেগম বলেন,”চিন্তা করিস না, ও ঠিকই ফিরবে দেখিস। অভিমান কাটুক।”
এদিকে আদৃতা বলে,”আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমরা সবাই এক হবে, তাই না? তোমাদের পরিবারকে আমি কিছুতেই এক হতে দেব না। তোমাদের মধ্যে আমি ভাঙন সৃষ্টি করবোই।”

সালমাকে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে এসেছে খান পরিবারের সবাই। সালমাকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেই নিঝুম বলে,”দেখো, এইটাই তোমার আসল বাড়ি। তুমি এই বাড়িরই মেয়ে।”
সালমা অবাক হয়ে চারিদিকে দেখতে থাকে। ছবি বেগম বলেন,”দেখো দিদিভাই, মন ভড়ে দেখো। এই সবকিছুই তো তোমার। এই বাড়ির উত্তরাধিকার তো তোমরাই।”
সালমা সব কিছু দেখছিল এমন সময় আদৃতা চলে আসে বাড়ির মধ্যে। সে এসেই বলে,”এই মেয়েটাকে এখন তোমতরা এতোটা তোল্লাই দিচ্ছ? আমাকে এত তাড়াতাড়ি পর করে দিলে?”
আদৃতাকে দেখে আবরাজ বলে,”তোমাকে আমরা পর করে দেই নি৷ তুমি তো এখনও আমার কাছে মেয়ের মতোই।”
“মেয়ের মতো..কিন্তু মেয়ে তো নই..”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩০

আবরাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ছবি বেগম এগিয়ে গিয়ে বলেন,”তোমাকে যতটুকু অধিকার দেওয়া হয়েছে ততটুকু অধিকার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকো। ভুলে যেও না, এটাও তোমার প্রতি দয়া দেখিয়ে করা হচ্ছে।”
আদৃতা রেগে বলে,”কাউকে আমায় দয়া দেখাতে হবে না। আমার অধিকার আমি নিজেই বুঝে নেব।”
বলেই সে হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে থাকে। এমন সময় তার আসল মা-বাবা তার সামনে আসলে সে বলে,”আপনাদের আমি কখনোই মেনে নেবো না, কখনোই না।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩২