অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩৭
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে থাকে। আরিশা যতোই এগিয়ে আসছিল জামিলা শেখের নিঃশ্বাস যেন ঠিক ততোই গলায় আটকে যাচ্ছিল। আরিশা একদম জামিলা শেখ এর সামনাসামনি এসে বলে,”অনেক হিসাব-নিকাশ এখনো বাকি আছে,কি বলেন?”
জামিলা শেখ ভাবতে থাকেন,”এই মেয়েটা বেঁচে গেল কিভাবে? এত উপর থেকে পড়েও মরল না। এর তো কই মাছের প্রাণ দেখছি।”
আফিফা এসে আরিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”বোনু, তুই ঠিক আছিস তো? আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম যে এই জানোয়া*রগুলো তোর কোন বড় ক্ষতি না করে দেয়।”
আরিশা আফিফাকে ভরসা দিয়ে বলে,”তুমি এত চিন্তা কোরো না, আপ্পি। রাখে আল্লাহ তো মারে কে।”
বলেই সে একবার জামিলা শেখ ও একবার জাঈদের দিকে তাকিয়ে বলে,”যদিওবা কিছু শয়তান চেষ্টা করছিল আমায় শেষ করে দেওয়ার কিন্তু তাদের সেই উদ্দ্যেশ্য সফল হয়নি। তারা পারে নি আমায় শেষ করতে।”
আলমগীর খন্দকার বুঝে যান এই সময় পরিস্থিতি তার অনুকূলে। তাই তিনি এগিয়ে এসে আরিশার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”মা, তুমি একদম ভয় পেয়ো না। তোমার সাথে যা যা অন্যায় হয়েছে সবকিছু ক্যামেরার সামনে বলো। সারাদেশ শুনুক, তোমার প্রতি হওয়া সব অন্যায়ের কথা।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আরিশা আলমগীর খন্দকারের দিকে তাকায়। অতঃপর ক্যামেরার সামনে বলতে শুরু করে,”গতকাল সন্ধ্যার দিকে মিস্টার জাঈদ শেখ আমায় সিলেটি পাহাড়ি এলাকার দিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন দেখা করার জন্য। আমি তার কথামতো সেখানে যাই তার সাথে দেখা করতে। তার শর্তমতে নিজের পরিবারের কাউকে কিছু জানাই নি আর এটাই আমার সবথেকে বড় ভুল ছিল। আমি ওখানে যাওয়ার পর জামিলা শেখ সেখানে চলে আসেন। আর উনি এসে বলেন, এটা আমার জন্য একটা ফাঁদ পাতা হয়েছিল আর এটা বলার পরই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন পাহাড় থেকে। তবে সৌভাগ্যবশত, আমি একেবারে খাদে পড়ে যাইনি, কিছুটা নিচেই সমতল ভূমিতে পড়েছিলাম এবং মাথায় সামান্য আঘাত পেয়েছিলাম। সেখান থেকে চা-বাগানের কিছু শ্রমিক আমায় উদ্ধার করে তারাই আমায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি হাসপাতাল থেকেই সরাসরি এখানে এসেছি।”
জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”মিথ্যা, মিথ্যা এই সব কিছু মিথ্যা। আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।”
জাহাঙ্গীর শেখ এগিয়ে এসে জামিলা শেখকে থা*প্পড় মা*রেন। জামিলা শেখ হতবাক হয়ে যান। জাহাঙ্গীর শেখ রাগে ফুসতে ফুসতে বলেন,”তোমার আর তোমার ছেলের জন্য আমার এতদিনের সুনাম সব ধ্বংস হয়ে গেল। তোমরা যে এত নিচে নামবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি।”
জামিলা শেখ করুণ স্বরে বলে ওঠেন,”এসব তুমি কি বলছ? তুমিও আর সবার মতো এই বাইরের মেয়ের কথা বিশ্বাস করছ?”
জাহাঙ্গীর শেখ তো ভীষণ রেগে গেছেন। কারণ তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে যে ধ্বস নামতে চলেছে এটা তিনি বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন। তবুও শেষ মুহুর্তে রাজনৈতিক চাল চেলে যাতে ড্যামেজ কিছুটা হলেও কন্ট্রোল করা যায় তাই তিনি বলেন,”আমি কখনোই তোমাদের মতো অপরাধীদের পাশে থাকব না, সে তোমরা আমার যতোই আপন হও। আমি যদি আগেই জানতাম যে তোমরা আরিশার উপর এত অন্যায় করছ তাহলে আগেই কিছু করতাম। আমার অগোচরে যে এত কিছু হয়ে গেছে সেটা আমি জানতামই না। ইন্সপেক্টর,আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? গ্রেফতার করুন এদের। আর দেখবেন এদের যেন কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি হয়। আজ থেকে এদের মা-ছেলের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমার পদবীও যেন এরা আর ব্যবহার না করে। আমি যত দ্রুত সম্ভব এই মহিলাকে তালাক দেব আর জাঈদকেও ত্যায্যপুত্র করে নিজের সব সম্পত্তি, অংশীদারত্ব থেকে ওকে মুছে ফেলব।”
জামিলা শেখ হতবাক হয়ে যান নিজের স্বামীর কথা শুনে। এদিকে জাঈদের অবস্থাও অনেকটা একই। কয়েকজন মহিলা পুলিশ এগিয়ে এসে জামিলা শেখের হাতে হাতকড়া পড়িয়ে তাকে টানতে থাকেন।
এদিকে জাঈদকে কিছু পুলিশ সদস্য গ্রেফতার করতে গেলে সে তাদের পাশ কাটিয়ে আরিশার সামনে এসে বলে,”আরিশা, বিশ্বাস করো, যা কিছু হয়েছে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি তো তোমার ক্ষতি করার কথা চিন্তাই করতে পারি না। আমি তো কাল তোমার সাথে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতেই তোমায় ডেকেছিলাম কিন্তু হোটেলে একটা শরবত..”
আরিশা ঠাস করে জাঈদের গালে একটা থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। জাঈদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আরিশা রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,”ব্যস,অনেক নাটক করেছেন। আর নাটক করবেন না। আপনার দিকে তাকাতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। আপনাকে তো বিশ্বাস করেই আমি কাল পাহাড়ি এলাকায় গিয়েছিলাম। সেই বিশ্বাসের কি মর্যাদা দিলেন আপনি? এখন যান জেলে গিয়ে পচে মরুন।”
আরিশার কথা শুনে জাঈদের মতো কঠিন মানুষের চোখেও পানি চলে আসে। এদিকে জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”আমার ছেলে সত্যিই নির্দোষ৷ ও কিছু করে নি,যা করার আমিই করেছি। আমিই ওর শরবতে..”
পুলিশ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”কে দোষী আর কে নির্দোষ সেটা নাহয় কোর্টে প্রমাণিত হবে।”
অতঃপর জাঈদ ও জামিলাকে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়। জাঈদ যতক্ষণ পারা যায় আরিশার দিকে তাকিয়ে ছিল। আরিশার চোখের ঘৃণা, অবিশ্বাস সবকিছু তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল। তাকে তার অতীতের করা অন্যায়গুলো মনে করিয়ে দিচ্ছিল।
এরমধ্যে আফিফা এগিয়ে এসে আরিশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া যে তুই একদম ঠিক আছিস। এবার ঐসব অপরাধীদের শিক্ষা পাওয়ার পালা।”
আরিশার মন তবুও যেন খচখচ করছিল। জাঈদের চোখ দেখে কেন জানিনা তার মনে হচ্ছিল জাঈদ সত্যি কথাই বলছে। আরিশা নিজের এই ভাবনার উপর বিরক্ত হয়ে স্বগোতক্তি করে বলে,”আমি আর ওনার কথা ভাবব না। উনি একজন অপরাধী,উনি আমায় মারতে চেয়েছেন।”
টিভির সামনে বসে এতক্ষণ ধরে নিউজ দেখে চলেছেন রাহেলা খন্দকার। তার শ্বাশুড়ি সিতারা বেগম তার কাছে এসে বললেন,”কি হয়েছে বৌমা? এত মনোযোগ দিয়ে কি দেখছ?”
রাহেলা খন্দকার বলেন,”আম্মা,আপনাকে আমি একটা মেয়ের ব্যাপারে বলেছিলাম না, যে কিছুদিন আগে আমায় সাহায্য করেছিল রাস্তায়।”
“হুম, বলেছিলে তো। মেয়েটাকে নাকি তোমার কাছে অনেক আপন মনে হয়েছে।”
“দেখুন টিভিতে নিউজটা দেখাচ্ছে। আপনার ছেলে আজ এই মেয়েটাকে সাহায্য করেছে।”
“কি বলছ তুমি? আলমগীর তো নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু করার ছেলে নয়।”
“ঐ মেয়েটা আপনার ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর শেখের পুত্রবধূ ছিল। মেয়েটাকে ওর শ্বাশুড়ি ও স্বামী মিলে মে*রে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তবে মেয়েটা বেচে ফিরে এসে ওদের মুখোশ খুলে ফেলেছে।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৩৬
“ওহ এই ব্যাপার।।সেইজন্যই আলমগীর ছুটে গেছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। সামনেই তো ইলেকশন। এই ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই এমন নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। নিজের মেয়েকে হারানোর পর তুমি যখন ভেঙে পড়েছিলে তখনো ও নিজের রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত ছিল। কি আর বলবো ওর কথা।”
“এসব বাদ দিন, আম্মা। আমার তো মেয়েটার জন্য খুব খারাপ লাগছে। কতই বা বয়েস হবে? এই বয়সে এত কিছু দেখতে হলো। আমি মেয়েটার সাথে দেখা করতে চাই। ওর সাথে দেখা করে ওর কথা শুনতে চাই। ওকে দেখলেই আমার ভীষণ আপন মনে হয় আম্মা।”