অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৬
ইয়াসমিন খন্দকার
আরিশা নিজের পরিবারের সবার কথা অনুযায়ী একটি ক্যাফেতে এসে দাঁড়িয়েছে ঈশান এর সাথে দেখা করার জন্য। অনেক সময় ধরে আরিশা অপেক্ষা করছিল ঈশানের জন্য। কিন্তু ঈশানের আসার কোন নাম নেই৷ আরিশা এবার বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালো এমন সময় একটা ছেলে দৌড়াতে দৌড়াতে আরিশার পাশে এসে বসলো। আরিশা ছেলেটাকে দেখেই বলল,”আপনি কি ঈশান?”
ঈশান বললো,”জ্বি, আমিই ঈশান। আপনি নিশ্চয়ই আরিশা?”
আরিশা মাথা নাড়ায়। ঈশান বলে,”আপনি জানেন, আপনার আর আমার পরিবার আমাদের বিয়ে দিতে চাইছে।”
“হ্যাঁ, সেজন্যই তো এখানে আসা।”
“চলুন কফি খেতে খেতে কথা বলি। অনেক আলাপ আছে।”
ঈশান আরিশার সাথে বসে। অতঃপর বলে,”আপনার কি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?”
আরিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,”না, তবে অনেক কিছু জানানোর আছে আমার ব্যাপারে। আমি চাই, আপনি আমার ব্যাপারে সবটা জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।”
“হ্যাঁ, জানান কি জানাতে চান।”
“আমার এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল।”
ঈশান স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,”এটা জানি আমি। আপনার বাবা আমার বাবার ভালো বন্ধু। তাই এই সত্যটা আমার থেকে লুকানো হয়নি। আর আমি সবটা জেনেই এখানে এসেছি আপনাকে বিয়ে করতে।”
“তবে এর থেকেও বড় একটা সত্য আছে যেটা আপনার জানা নেই আর সেটা হলো…”
কথাটা বলতে গিয়ে আরিশা হঠাৎ করে থেমে যায়। কারণ ওয়েটার কফি নিয়ে চলে এসেছে৷ আর এই ওয়েটার আর কেউ নয়, জাঈদ। জাঈদকে দেখেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি!”
জাঈদও অবাক হয় আরিশাকে দেখে। আরিশার সঙ্গে অন্য একটি ছেলেকে বসে থাকতে দেখে যেন তার গায়ে আগুন জ্বেলে ওঠে৷ তবে সে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,”আমি এখন এই ক্যাফেতেই ওয়েটার হিসেবে কাজ করি।”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
বলেই ঠান্ডা মাথায় কফিটা দিয়ে চলে যায়। ঈশান বলে ওঠে,”আপনি কি চেনেন নাকি ওনাকে?”
আরিশা সহসা বলে ওঠে,”হ্যাঁ, মানে, এমনি পরিচিত আরকি৷ যাইহোক, আপনাকে যেটা বলতে চাইছিলাম। যেহেতু আমার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছে তাই এটা আপনাকে জানানো আমার দায়িত্ব। আসলে, কয়েক বছর আগে আমার জরায়ুতে টিউমার হয়েছিল৷ সেই টিউমার অপসারণ করার জন্য আমার জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়। আর এজন্য আমার পক্ষে আর মা হওয়া সম্ভব না। তাই আপনাকে কখনো সন্তান সুখ দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
কথাটা শুনে ঈশানের মুখ কিছুটা কাচুমাচু হয়ে যায়৷ তবে সে হেসে বলে,”ব্যাপারটা দুঃখজনক। আচ্ছা, আমি একটু আসছি৷ এসে আপনার সাথে বাকি কথা বলছি।”
বলেই ঈশান উঠে দাঁড়ায় এবং ওয়াশরুমের দিকে যায়। আরিশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,”নিশ্চয়ই উনি এই কথাটা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না, তাই একটু অস্বস্তি বোধ করছেন।”
এমন ভাবনা থেকেই আরিশা ছটফট করতে থাকে।
এদিকে ঈশান ওয়াশরুমে এসে নিজের ফোন বের করে নিজের বাবা রুহুল কবিরকে ফোন করে। কিছু সময় পর রুহুল কবির ফোন রিসিভ করে বলে ওঠেন,”কি হলো ঈশান? এই সময় কল দিলে কেন? আলমগীরের মেয়ের সাথে দেখা করেছ তুমি? ওকে পছন্দ হয়েছে? অবশ্য না হলেও কিছু করার নেই। কারণ এই মেয়েকেই তোমাকে বিয়ে করতে হবে।”
ঈশান রাগী কন্ঠে বলে,”আমি পারবো না ড্যাড। শুধুমাত্র তুমি বলেছিলে জন্য আমি মেয়েটাকে দেখতে এসেছিলাম। একেই তো মেয়েটার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল তাছাড়াও দেখতেও তেমন সুন্দর নয়। তার উপর তো এখন আমি শুনছি ও কোনদিন মাও হতে পারবে না। এই মেয়েকে বিয়ে করে কি আমি শোপিস করে সাজিয়ে রাখব নাকি?”
রুহুল কবির বলে ওঠেন,”এই বোকা ছেলে, একদম চুপ করো৷ এই বিয়েটা তোমায় করতেই হবে। কেন বুঝতে পারছ না, ওই মেয়েটা হলো সোনার ডিম পাড়া হাঁস। ওর বাবা হলো বর্তমান এমপি। এখন যদি তুমি ওকে বিয়ে করো, তাহলে পরবর্তী ইলেকশনে তার জামাই হিসেবে তুমি দাড়াতে পারবে। আমি যা করছি তোমার ভালোর জন্যই তো করছি।”
“কিন্তু তাই বলে এই মেয়েকে বিয়ে..আমার পাশে কি ওকে মানায়?”
“আরে, তুমি শুধু একবার বিয়েটা করে নাও। তারপর চাইলে বাইরে কয়েকটা রিলেশন চালাবে। সমস্যা কি? আর এমনিতেও একবার তুমি শুধু এমপি হয়ে যাও, তারপর ঐ মেয়েকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে তোমার যোগ্য কোন মেয়ের সাথে তোমার বিয়ে দেব আমি।”
“সত্যি বলছ কি তুমি? নাকি আমায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছ?”
“আমি কেন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেব তোমায়? তুমি আমার নিজের ছেলে। আমি নিজে রাজনৈতিক জীবনে সফলতা পাইনি শুধু ঐ আলমগীর খন্দকারের জন্য। সারাজীবন পার্টির জন্য খেটে গেলাম কিন্তু কোন লাভ হলো। তাই সোজা আঙুলে যখন ঘি উঠল না তখন একটু আঙুল বেকিয়েই দেখি। তুমি আমার কথামতো কাজ করো,এতে তুমিই সবথেকে বেশি লাভবান হবে। বিশ্বাস করো।”
“বেশ, তুমি যখন বলছ তখন আমি তাই করবো৷ আপাতত তাহলে মেয়েটাকে বলে দিচ্ছি, আমি এই বিয়েতে রাজি৷ নাকি?”
“হুম, তাই করো।”
বলেই ঈশান ফোন কেটে দেয় একটা বিরক্তির চাহনি দেয়। এদিকে আড়াল থেকে একটা ছায়ামূর্তি সরে যায় যে তাদের সব কথা শুনেছে। এ আর কেউ নয় জাঈদ। জাঈদ তো রাগে কাপছে পুরো৷ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,”আমার আরিশার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। এই ঈশান আর এর বাপকে এবার আমি শায়েস্তা করবো৷ তার সাথে আরিশাকেও এবার আমি নিজের করে নেবো। শ্বশুরজির গুডবুকে নাম লেখানোর এর থেকে ভালো কোন উপায় তো আর নেই।”
ঈশান এসে আরিশার সামনে বসে বলে,”আমি বুঝতে পারছি, আপনার নিজেকে নিয়ে হীন্যমনতায় ভোগা অনেক স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে এই ব্যাপারটা কোন ম্যাটারস করেনা। আমি শুধু একজন যোগ্য জীবনসঙ্গী দরকার। আর আপনি যেভাবে শুরুতেই আমায় সবকিছু খুলে বললেন, তাতে আমি বুঝে গেছি আপনি কতোটা অনেস্ট এবং লয়াল। তাই আপনার মতো জেমস আমি হারাতে চাই না।”
ঈশানের এমন কথায় আরিশা মুগ্ধ হয়ে যায়। আরিশা মনে মনে ভাবে,”এত ভালো মনের মানুষও হয়।”
ঈশান বলে,”এখন আপনি বলুন, আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে তো?”
আরিশা কিছুটা লাজুক হাসি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ঈশান বলে,”আপনার এই নীরবতাকেই আমি তাহলে সম্মতির লক্ষণ ধরে নেবো। আপনার বাবাকে আমার সালাম দেবেন আর নিজের মতামত জানিয়ে দেবেন। আমি তাহলে এখন আসি।”
বলেই ঈশান চলে যায়। এদিকে আরিশা আফিফাকে ফোন করে। আফিফা বলে,”কিরে বোনু! তুই ঐ ঈশানের সাথে দেখা করলি?”
“হ্যাঁ।”
“তুই ওকে সব খুলে বলেছিস তো? উনি কি বলল?”
আরিশা সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে আফিফা বলে,”এই ছেলেই তোর জন্য উপযুক্ত আরিশা৷ যার চিন্তাভাবনা এতোটা উঁচু তার সাথে তুই অবশ্যই সুখী হবি। আল্লাহ বুঝি তোর ভাগ্যে সুখ লিখে রেখেছিল। তাই তো এত ভালো একটা ছেলের সাথে তোর দেখা করিয়ে দিল। আরো ভালো হতো যদি ঐ জাঈদের সাথে তোর দেখা হবার আগেই ঈশানের সাথে হতো। যাইহোক, তুই আঙ্কেল আন্টিকে গিয়ে বল তুই এই বিয়েতে রাজি। আর নারাজি দেখাস না। এই ছেলেকে হারালে পরে আফসোস করতে হবে।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৫
“আচ্ছা, ঠিকাছে।”
বলেই আরিশা ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়। জাঈদ বলে,”তুমি যতই আমায় খারাপ ভাবো, তোমার কোন ক্ষতি আমি হতে দেব না আরিশা। ঐ ঈশানের হাত থেকে আমি তোমায় রক্ষা করবোই।”