অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১২

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১২
ইয়াসমিন খন্দকার

আরহাম নিজের রুমে এসে আয়নায় নিজেকে দেখছে। তার পরণে একটি সাদা শেরওয়ানি। নিজেকে দেখে আরহাম দীর্ঘ শ্বাস ফেলছে। আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা তারপরই সায়রার সাথে তার বিয়ে। কিন্তু আরহাম কেন জানি এই বিয়েটা নিয়ে খুশি হতে পারছে না। তার বারবার আরুশির চেহারাটাই মনে পড়ছে৷ আরহাম নিজের এই ভাবনায় এতদিন বিরক্ত হলেও আজ কেন জানি তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আরহাম স্বগতোক্তি করে বলে,”তাহলে কি আমি আরুশিকে…কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব৷ শুরু থেকেই তো ও আমার শত্রু৷ ওকে আমি দুচোখে সহ্য করতে পারি না তাহলে…”

এমন সময় আয়নায় আরহামের প্রতিবিম্ব যেন তাকে বলে ওঠে,”নিজের অনুভূতিকে অস্বীকার করে কি তুই সুখী হতে পারবি আরহাম?”
“মানে? কি বলতে চাইছ তুমি?”
“সেটাই বলতে চাইছি যেটা তুই বুঝতে পারছিস না। তুই সায়রাকে বিয়ে করতে পারবি না৷ কারণ তুই আরুশিকে ভালোবাসিস…”
আরহাম কানে হাত দিয়ে বলে,”না, এটা হতে পারে না।”
বলেই সে একটি ফুলদানি হাতে তুলে নিয়ে আয়নার দিকে ছুড়ে মা*রে। আয়না ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আরহাম চিৎকার করে বলে ওঠে,”আমি আরুশিকে ভালোবাসি না..বাসি না ওকে ভালো…”
এমন সময় হঠাৎ করে আফিফা খান সেখানে উপস্থিত হন। আরহামের বলা কথাটা তিনি শুনে নেন। সাথে সাথেই বলে ওঠেন,”আরহাম! এসব কি বলছ তুমি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরহাম নিজের মায়ের দিকে করুণ চোখে তাকায়। আফিফা খান এগিয়ে এসে আরহামের কাঁধে হাত রেখে বলেন,”তুমি ঠিক আছ তো? আর আরুকে নিয়ে কি বলছিলে? ওকে ভালোবাসো না মানে? আরহাম আজ তোমার বিয়ে সায়রার সাথে আর তুমি..”
আরহাম বলে ওঠে,”আমি জানি না, মম। কিছু জানি না আমি। আজ কেন জানি আরুশির কথা আমার খুব মনে পড়ছে। আমি বুঝতে পারছি না এমনটা কেন হচ্ছে কিন্তু..”
“আরহাম, আস্তে…তুমি বুঝতে পারছ কেউ যদি এসব কথা শুনে ফেলে তাহলে এর ফল কি হবে। গোটা পরিবারে এক প্রলয়ংকরী ঝড় উঠবে।”
“কিন্তু মম…”

“কোন কিন্তু নয়। তোমার যদি আরুশির প্রতি কোন অনুভূতি থেকে থাকে তাহলে তোমার সেটা আমাকে আগেই বলা উচিৎ ছিল। আমি তোমাকে এই বিয়েটা ঠিক হবার আগে বারবার জিজ্ঞেস করেছি যে,তোমার প্রতি কারো কোন অনুভূতি আছে নাকি। কিন্তু তুমি তখন আমায় কিছু বলো নি। যদিও আমি জানি, তোমার ড্যাড বিয়েটা নিয়ে অনেক তাড়াহুড়ো করেছে। কিন্তু তবুও তো তোমার হাতে সময় ছিল তাইনা?”
“আমি যে নিজের ফিলিংস নিয়ে ভীষণ কনফিউজড মম। কিন্তু আমি এটা শিওর, সায়রার সাথে বিয়ে হলে আমি সুখী হতে পারব না। আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা সম্ভব নয় আর..”

“এসব কথা যদি তোমার ড্যাড জানতে পারে তাহলে কি হবে একবার ভেবে দেখেছ? এমনিতেই তোমার ড্যাড আরুকে তেমন একটা পছন্দ করে না। তাছাড়া তুমি ফ্যামিলির সম্মানের ব্যাপারে তো ভাবো।”
“মম, তুমিও ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর। আজ যদি বিয়েটা হয় তাহলে আমি বা সায়রা কেউ কখনো সুখী হতে পারব না।”
“আমি বুঝতে পারছি সেটা কিন্তু…আচ্ছা তুমি একটা কাজ করো, আরুর সাথে গিয়ে কথা বলো। ওর ইচ্ছাটাও তো জানা দরকার। ও যদি তোমাকে ভালোবাসে তাহলে আমি ভেবে দেখব কি করা যায়।”
“আচ্ছা, মম। আমি যাচ্ছি।”
“হ্যাঁ, দ্রুত যাও। আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে কাজিও চলে এসেছে। একটু পরই তোমার খোঁজ শুরু হবে। তাই তোমার যা করার খুব দ্রুত কর‍তে হবে।”
আরহাম নিজের রুম থেকে বেরিয়ে চারিদিকে আরুশিকে খুঁজতে থাকে।

সায়রা নিজের মায়ের বিয়ের বেনারসি পড়ে বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে নিয়েছে। সায়ন চৌধুরী নিজের মেয়ের সাথে দেখা করতে এসে একদম থমকে গেছেন। তাঁর চোখ দিয়ে না চাইতেও অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সায়রা নিজের বাবাকে দেখামাত্রই সামনে এগিয়ে এসে বলে,”বাবা, আমায় কেমন লাগছে?”
সায়ন চৌধুরী সায়রাকে নিজের বুকে জড়িয়ে নেন। অতঃপর বলেন,”একদম তোমার মায়ের মতো। আজ তোমায় দেখে আমার তোমার মায়ের কথা ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে।”
“আমি জানি বাবা, তুমি মাকে ভীষণ ভালোবাসতে।”
“তোমার মায়ের পর তোমাকেই আমি সবথেকে বেশি ভালোবেসেছি সায়রা। কিন্তু আজ তোমাকেও অন্য কারো হাতে তুলে দিতে হবে। এই কথাটা ভেবেই আমার বুক চিরে যাচ্ছে।”
এমন সময় সায়ন চৌধুরীর বোন সন্ধ্যা চৌধুরী সেখানে চলে এসে বলেন,”বাহ, বাবা মেয়েকে তো আজ ভীষণ ইমোশনাল লাগছে।”
সন্ধ্যা চৌধুরীকে দেখামাত্রই সায়রা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। সন্ধ্যা চৌধুরী ভাতিজিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে বলেন,”সবসময় সুখী থাকো সায়রা। তোমার সুখে কারো নজর না লাগুক।”
কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্যের সাক্ষী হচ্ছিল আমান। তার হাতে মুষ্টিবদ্ধ আছে কিছু ঘুমের ওষুধ। সে আজ শেষবারের মতো সায়রাকে দেখতে এসেছে। আমান সায়রাকে বধূর সাজে দেখে বলে,”তোমাকে অন্য কারো জন্য বধূ সাজতে দেখব এটা আমার থেকে দুঃস্বপ্নের থেকে কম নয়। অনেক সহ্য করেছি আমি কিন্তু আর নয়। এবার আমার একটু শান্তি লাগবে আর এটা আমায় দেবে সেই শান্তি।”
বলেই সে নিজের হাতে থাকা ঘুমের ওষুধের দিকে তাকায়।

আরহাম পাগলের মতো চারিদিকে আরুশিকে খুঁজছিল। হঠাৎ করে আরুশিকে দেখতে পায়। আরুশি চুপচাপ এককোণে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছিল। আরহাম কোন কিছু না ভেবে আরুশিকে নিয়ে একটা রুমে চলে আসে এবং তার মুখ চেপে ধরে বলে,”তোমার‍ যা বলার পরে বলো কিন্তু আগে আমি যা বলছি তা শোনো।”
আরুশি উম…উম করতে থাকে। আরহাম আরুশির দিকে আবেগঘন চোখে তাকিয়ে বলে,”এমন কেন তুমি আরুশি? অন্য ছেলেদের সাথে তো হেসে হেসে কথা বলো৷ রাজীব ভাই, আমান সবার সাথে কত ভালো ব্যবহার করো। কত মনযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনো অথচ আমার কথা শোনার কোন সময় নেই তোমার কাছে..”
“…”

“তুমি যদি শুনতে না চাও তবুও আজ তোমায় আমার কথা শুনতে হবে। আমি তোমায় ভালোবাসি আরুশি। ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি। জানি এটা উপলব্ধি করতে আমার অনেক দেরি হয়ে গেছে কিন্তু..যখন বুঝতে পারলাম তখন আমার আর এছাড়া কোন উপায় ছিল না। আমি জানি, আমার স্বীকারোক্তি শুনে তুমি আমার উপর ভীষণ রেগে যাববে। ভাববে যে,অন্য একটা মেয়েকে বিয়ের আসরে বসিয়ে রেখে এসে আমি তোমায় এই কথা কিভাবে বলতে পারি। কিন্তু কি করবো বলো? ভীষণ বোকা আমি। তাই তো নিজের মনের কথা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেল।”
আরুশি নিজেকে আরহামের থেকে সারিয়ে নিয়ে বলে,”এসব কি আবোলতাবোল কথা বলছেন আপনি? আমায় ভালোবাসেন মানে? আপনার মাথা কি খারাপ হয়ে গেল মিস্টার আরহাম? আজকে আপনার সাথে অন্য কারো বিয়ে আর আপনি…জানি আমার সাথে আপনার শত্রুতা আছে। আমাকে আপনি সহ্যই করতে পারেন না। কিন্তু তাই বলে এভাবে আমায় সবার সাথে ছোট করার প্ল্যান করবেন?”

“তুমি ভুল বুঝছ আরুশি..আমি..”
“আমি কোন ভুল বুঝছি না। আপনার এসব ড্রামা করার শখ হলে অন্য কোথাও গিয়ে করুন। আমায় এসব ড্রামায় জড়াবেন না।”
“আমার অনুভূতিকে তোমার ড্রামা মনে হচ্ছে?”
“হ্যাঁ, হচ্ছে। আর আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন তো।”
বলেই আরুশি আরহামকে পাশ কাটিয়ে দরজার কাছে যায়। কিন্তু দরজা খুলতে গিয়ে টের পায় দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করা। আরুশি বলে ওঠে,”এখন এই দরজাটা কেন খুলছে না। কি প্ল্যান করেছেন টা কি আপনি? এভাবে কি আপনি আমায় বদনাম করতে চান?”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১১

আরহাম বলে,”এসব তুমি কি বলছ আরুশি আমি তো শুধু তোমাকে নিজের মনের কথা..”
এমন সময় হঠাৎ করে দরজা খুলে যায়। দরজা খুলতেই আরুশি ও আরহাম দেখতে পায় পরিবারের সবাই তাদের সামনে দাঁড়িয়ে।

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৩