অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৩
ইয়াসমিন খন্দকার
আরুশি ও আরহাম দুজনেই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে পরিবারের বাকি সদস্যদের দিকে। অন্য সবার দৃষ্টিও তাদের দিকেই নিবদ্ধ। আচমকা নির্ঝর খান এগিয়ে এসে বলেন,”এসব কিছুর মানে কি আরহাম? আজ তোমার সাথে সায়রার বিয়ে আর তুমি এইভাবে বদ্ধ রুমে আরুশির সাথে কি করছ?”
আরহাম কিছু বলতে পারে না। যা দেখে নির্ঝর খান রেগে গিয়ে বলেন,”চুপ করে আছ কেন? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”
এমন সময় সায়রার ফুফু সন্ধ্যা চৌধুরী বলে ওঠেন,”কি বলবে আপনার ছেলে? ওর কিছু বলার মুখ আছে নাকি? আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে ওর বলা সব কথা শুনেছি। ছি,আমার তো ভাবতেও লজ্জা লাগছে। ভাগ্য ভালো, বিয়ের আগেই সব জানাজানি হয়ে গেল। নাহলে তো সায়রার জীবনটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেত।”
তত্মধ্যে আরিশা খন্দকার এবং আফিফা খানও সেখানে চলে আসেন। আরিশা এসেই ছুটে এগিয়ে আসেন আরুশির দিকে। জাঈদও আসেন তার পিছনে। আরিশা খন্দকার এসেই নিজের মেয়ের হাত ধারণা বলেন,”এসবের মানে কি আরু? কি বলছে সবাই? আমি জানি,আমার আরু কোন ভুল করতে পারে না। সবাই মিথ্যা বলছে তাই না? আরহামের সাথে তোর কোন সম্পর্ক নেই।”
আরুশি বলে ওঠে,”হ্যাঁ, আম্মু। ওনার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। সবাই ভুল ভাবছে।”
সন্ধ্যা চৌধুরী বলে ওঠেন,”এই মেয়ে, তোমার লজ্জা বলে কিছু নেই? এত কিছু ঘটে যাবার পরেও কোন মুখে এসব বলছ?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সায়ন চৌধুরী নিজের বোনকে থামাতে বলেন,”সন্ধ্যা, তুই একটু চুপ থাক। আমাকে ব্যাপারটা বুঝতে দে।”
“আর কি বুঝবে তুমি ভাইয়া? তোমার এই বোঝার কারণেই আজ সায়রার জীবনটা নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। আমি আগেই বলেছিলাম, এত তাড়াহুড়ো করে বিয়ে ঠিক না করতে। এখন দেখলে তো, এর ফল কি হলো। এরা সবাই মিলে কিভাবে সায়রার সাথে প্রতারণা করছিল। ভাগ্যিস বিয়ের আগে সবটা আমাদের সামনে এলো নাহলে তো দেখা যেত বিয়ের পর এরা পরকীয়া করত আর আমাদের সায়রার জীবনটা একেবারে শেষ হয়ে যেত।”
আরুশি বলে ওঠে,”আপনারা সবাই ভুল ভাবছেন। আমাকে একবার ব্যাপারটা ক্লিয়ার করে দিন।”
এমন সময় হঠাৎ করে মারিয়া সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,”সবাইকে আর কত টুপি পড়াবি আরুশি? এবার অন্তত সত্যটা সবাইকে বলে দে। তোর জন্য যে নাহলে একটা নিরপরাধ মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।”
মারিয়ার কথা শুনে আরুশি হতবাক স্বরে বলে,”এসব তুই কি বলছিস মারিয়া?”
মারিয়া এগিয়ে এসে সবার উদ্দ্যেশ্যে হাতজোড় করে বলে,”প্রথমেই আমি আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এতদিন ধরে সবটা জানার পরেও আপনাদের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্য। কিন্তু কি করবো বলুন, নিজের বন্ধুত্বের খাতিরেই এতদিন চুপ থেকেছি। কিন্তু আজ আর পারছি না। কারণ একজন মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের এত বড় সর্বনাশ আমি দেখতে পারব না। আসল সত্যিটা হচ্ছে, আরহাম আর আরুশি অনেকদিন থেকেই সম্পর্কে আছে, ওরা একে অপরকে ভালোবাসে।”
আরুশি বলে ওঠে,”এসব কি যা তা বলছিস তুই মারিয়া? এসব মিথ্যা কথা কেন বলছিস তুই? আমার আর মিস্টার আরহামের মধ্যে কিছু নেই এটা তুইও খুব ভালো করে জানিস।”
মারিয়া এবার নিজের ফোন বের করে আরহাম ও আরুশির তোলা ঘনিষ্ঠ ছবিগুলো বের করে সবাইকে দেখায়। বলে,”আমি জানতাম, আমার মুখের কথায় এখানে কেউ কিছু বিশ্বাস করবেন না। তাই এই নিন, দেখুন সবাই। আরুশি তুইও দেখ, এরপরও কি তুই সত্যিটা অস্বীকার করবি? নাকি বললি যে ছবিগুলো মিথ্যা।”
সায়রা নিজের ঘরে চুপচাপ বসে ছিল৷ কিন্তু বাইরে এত চেচামেচির আওয়াজ শুনে সে বের হয়ে এলো। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতেই সে মারিয়ার ফোনে ছবিগুলো দেখে স্তব্ধ হয়ে গেল।
এদিকে নিজের প্রিয় বান্ধবীর থেকে এহেন বড় আঘাত পাবে তা কখনো কল্পনা করে নি আরুশি। সে এগিয়ে গিয়ে মারিয়ার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”এসব কি করছিস তুই মারিয়া? তুই নিজেও জানিস এসব সত্য নয়। তাহলে কেন এমন করছিস?”
সন্ধ্যা চৌধুরী বলে ওঠেন,”এই মেয়ে তোমার লজ্জা বলে কিছু নেই, তাইনা? এত কিছুর পরেও কোন মুখে এসব কথা বলছ?”
আরিশা খন্দকার আরুশির কাছে ছুটে এসে তার গালে হাত রেখে বলেন,”আমি আমার আরুকে বিশ্বাস করি। নিশ্চয়ই এই ছবিগুলো এডিটিং তাই না আরু? আজকাল তো এভাবে নকল ছবি তৈরি করা যায় ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে। এসবও নিশ্চয়ই সেভাবেই তৈরি করা তাই না আরু?”
মারিয়া বলে,”কি হলো আরু? আন্টিকে সত্যিটা খুলে বল, এসব ছবি কি মিথ্যা?”
আরুশি বলে,”না, এই ছবিগুলো সত্যিকারের কিন্তু…”
আরিশা খন্দকার আরুশির গাল থেকে হাত নামিয়ে দেন। অতঃপর ধীরে ধীরে তার থেকে দূরে সরে আসেন। তিনি পড়ে যেতে নিতেই জাঈদ শেখ এসে তাকে আগলে নেন। আফিফা খানও এগিয়ে আসেন। আরিশার উদ্দ্যেশ্যে বলেন,”তুই নিজেকে সামলা বোনু, আরহাম ও আরুশির সম্পর্কের ব্যাপারে আমিও আজকেই জানতে পারলাম। আরহাম আমাকে সবটা বলেছে। আমি যদি আগেই সব জানতে পারতাম তাহলে ব্যাপারটাকে এতদূর গড়াতেই দিতাম না কিন্তু..”
নির্ঝর খান বলে ওঠেন,”কি? তুমি সব জানতে আফিফা? সব জেনেও আমায় কিছু বলো নি৷ এভাবে প্রতারণা করলে আমার সাথে?”
“তুমি ভুল ভাবছ..”
সন্ধ্যা চৌধুরী বলে ওঠেন,”বাহ, আমি তো ভেবেছিলাম শুধু এরা দুজন মিলে আমাদের ঠকিয়েছে কিন্তু এখন তো দেখতে পাচ্ছি পুরো ফ্যামিলিটাই এমন।”
সায়ন চৌধুরী বলে ওঠেন,”আপনাদের আত্মীয় হিসেবে অনেক সম্মান করতাম, নিজের আপন ভাবতাম। কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে যে এভাবে ঠকে যেতে হবে তা কখনো ভাবিনি..”
নির্ঝর খান বলে ওঠেন,”সায়ন আমার কথাটা শোনো..”
সায়রা এবার বধূর সাজে এগিয়ে আসে। আজ তার কত খুশি হবার কথা ছিল। কিন্তু এত আঘাত, এত অপমান তার মুখটাকে মলিন করে দিয়েছে। সায়রা এগিয়ে এসে বলে,”আর কিচ্ছু শোনার নেই মামা। তোমার ছেলে যে এভাবে আমার সাথে প্রতারণা করবে সেটা আমি ভাবি নি। আরে আমি কোথায় পাগল হয়ে গেছিলাম ওনায় বিয়ে করতে? কেন উনি আমার সাথে এমনটা করলেন? কি ক্ষতি করেছিলাম আমি ওনার? আমি তো শুধু নানাভাইয়ের কথা ভেবে এই বিয়ে রাজি হয়ছিলাম আর উনি..”
সায়রা নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বলে,”ভাগ্যিস, বিয়ের আগেই সবটা জানাজানি হয়ে গেল। নাহলে আমার জীবনটা যে নষ্ট হয়ে যেত তার দায় কে নিত?”
নির্ঝর খান বলেন,”এভাবে কেন বলছ সায়রা? তোমার মামা থাকতে তোমার জীবন নষ্ট হবে না৷ আরহামের সাথেই তোমার বিয়ে হবে আর এক্ষুনি..”
“মামা..প্লিজ। আপনি আমার অনেক উপকার করেছেন। আর কিছু আপনাকে করতে হবে না। আপনার ছেলেকে বিয়ে করার জন্য আমি মরে যাচ্ছি না। আর নাতো আমার জন্য কোন ভালো পাত্রর অভাব হবে এই দুনিয়াতে যার জন্য আমাকে আজ এখানে আপনার ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে। তার থেকে ভালো, আপনার ছেলে যেই মেয়েকে পছন্দ করেছে তার সাথেই আপনার ছেলের বিয়েটা দিয়ে দিন।”
বলেই সে আরহাম ও আরুশির দিকে এগিয়ে যায়। আরুশি কিছু বলার চেষ্টা করতেই সায়রা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আপনাকে কিছু বলতে হবে না। আমি আপনার বা আপনার প্রেমিকের থেকে কিছু শুনতে ইচ্ছুক নই৷ শুধু একটা কথাই বলতে চাই, আপনারা যেটা করেছেন সেটা প্রতারণা। আর প্রতারকরা কখনো সুখী হতে পারে না।”
বলেই সায়রা সায়ন চৌধুরী ও সন্ধ্যা চৌধুরীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,”তোমরা এখনই এখান থেকে চলো। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকতে চাই না।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১২
নির্ঝর খান বলেন,”আমার কথাটা একবার শোনো সায়রা।”
“আমি আর কার কোন কথা শুনব না। আমার জীবন নষ্ট করার অধিকার আমি কাউকে দেই নি, কাউকে না।”
বলেই সে শক্ত কন্ঠে মাথা উচু করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। তার পেছনে তার বাবা ও ফুফুও।