অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৫
ইয়াসমিন খন্দকার
আরহাম ও আরুশির বিয়ে হয়ে যায়। এই বিয়ে হবার পর আরিশা খন্দকার জাঈদ শেখকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,”অনেক হয়েছে। এখন এখান থেকে চলো।”
আরুশি আরিশা খন্দকারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আম্মু..আমার কথা শোনো।”
“ব্যস, আমি আর তোর কোন কথা শুনব না আরু। যদি কখনো প্রমাণ করতে পারিস যে তুই সত্যিই নির্দোষ তাহলে আমার সাথে কথা বলতে আসিস।”
বলেই তিনি বেরিয়ে যান। জাঈদ শেখ আরুশির মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”তুমি একদম চিন্তা করো না আরু। তোমার মা এখন একটু রেগে আছে তোমার উপর তাই এমন বলছে৷ তবে দেখবে, ওর রাগ কমে গেলে ঠিকই সব স্বাভাবিক হবে। আর তোমার কোন সাহায্যে লাগবে নির্ভয়ে তোমার পাপাকে বলবে। আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি।”
আরুশি আবেগপ্রবণ হয়ে জাঈদ শেখকে জড়িয়ে ধরে। জাঈদ শেখ নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,”নিজের খেয়াল রেখো।”
আফিফা খান এগিয়ে এসে জাঈদকে আশ্বাস দিয়ে বলে,”তুমি একদম চিন্তা করো না আর বোনুকেও নিশ্চিন্তে থাকতে বলো। আমি আরুর খেয়াল রাখব।”
জাঈদ শেখ এবার একটু ভরসা পান। অতঃপর সেও বিদায় নেয়। আফিফা খান আরুশিকে বলেন,”আমার সাথে ভেতরে চলো।”
আরহাম একটু দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। আফিফা খান তাকে ইশারা করে কাছে আসতে বলে। আরহাম কাছে আসার পরই তিনি আরহাম ও আরুশিকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে বলেন,”যেই পরিস্থিতিতেই হোক না কেন,তোমাদের বিয়েটা হয়ে গেছে। এটা আর অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই নিজেদের মধ্যে আর ভুল বোঝাবুঝি না বাড়িয়ে সবকিছু ঠিক করে নাও।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নিঝুম খানও এগিয়ে এসে বলেন,”হ্যাঁ, আফিফা একদম ঠিক বলেছে। আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তোমায় পরামর্শ দিতে পারি আরুশি,রাগ ও জেদের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিও না। নাহলে অনেক পস্তাবে পরে। ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সামলানোর চেষ্টা করো। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।”
আমান ঢুলতে ঢুলতে বাইরে আসে। আরহাম ও সায়রার বিয়ে মেনে নিতে না পেরে সে ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিয়েছিল। যদিওবা খুব বেশি একটা খায়নি তবে এর ফলে সে এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল এবং এত সময় ধরে অনুপস্থিত ছিল। জ্ঞান ফেরার পর সে বাইরের শব্দ শুনে বেরিয়ে আসে এবং কিছু লোকের কথাবার্তা শুনে সবটা জানতে পারে। তার মধ্যে এখন অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করছে। একদিকে সে আরহাম ও আরুশির বিয়ে হওয়ায় খুশি কারণ সায়রার সাথে আরহামের বিয়ে হয়নি৷ তাই তার কাছে একটা সুযোগ আছে নিজের ভালোবাসা ফিরে পাবার কিন্তু একইসাথে তার দুশ্চিন্তাও হচ্ছে এটা নিয়ে যে,সায়রা এখন কেমন আছে। এত অপমান আর কষ্ট সহ্য করার পর কি সে আর কখনো তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখবে?
আফিফা খান আমানকে দেখে বলেন,”আমান, তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ।”
আমান হাই তুলে বলে,”ঘুমাচ্ছিলাম মম।”
“ওহ আচ্ছা, তোমার শরীর ঠিক আছে তো?”
“হ্যাঁ, ঠিক আছি।”
“আজ কি কি হয়েছে সব জানো নিশ্চয়ই।”
“হুম,শুনলাম তো।”
“শোনো, তোমার কিন্তু এখন অনেক দায়িত্ব। তুমি আরহামের একমাত্র ভাই বলে কথা। তোমাদের ড্যাড কিন্তু এই বিয়েটা মেনে নেয় নি। তাছাড়া সায়নরাও রাগ করে চলে গেছে৷ আরহামের এখন যা অবস্থা ওকে কেউই সহ্য করতে পারবে না। কারণ সবাই ওর উপর রেগে আছে। এক্ষেত্রে যা করার তোমাকেই করতে হবে।”
“আচ্ছা, মম তুমি চিন্তা করো না। আমি সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা করবো।”
“কিচ্ছু ঠিক হবে না, কিচ্ছু না। আর আজ যা হয়েছে তার জন্য আপনিও সমান ভাবে দায়ী মিস্টার আরহাম।”
শক্ত কণ্ঠে কথাগুলো বলে আরুশি। আফিফা খান তাদের একটা ঘরে একসাথে থাকতে বলেছেন৷ কিন্তু এখন ঘরে মূলত তাদের ঝগড়া চলছে। আরহাম আরুশিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”তুমি ভুল ভাবছ। আমার কোন দায় নেই এখানে।”
“আপনার কোন দায় নেই? আমায় কি বোকা ভাবেন? আমি সবটাই বুঝতে পারছি। আপনার আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গিয়ে আমায় প্রপোজ করা, তারপর ঠিক সেই সময় মারিয়ার এসব ছবি দেখানো..এসব নিশ্চয়ই আপনাদের পূর্ব পরিকল্পনার অংশ তাই না?”
“লুক, এটা ঠিক যে আমি তোমাকে ভালোবাসি। সেই শুরু থেকেই৷ জানি না, কখন তোমায় এত ভালোবেসে ফেললাম কিন্তু আজ যা কিছু হয়েছে তাতে আমার সত্যি কোন দায় নেই। তুমি কেন ভাবছ যে যা হলো তার ভুক্তভোগী তুমি শুধু একা? আমাকেও এর যথেষ্ট ফল ভোগ করতে হয়েছে। তোমার মম যেমন তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ঠিক তেমনি আমার ড্যাডও আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আর এখন আমাদের একসাথে মিলে সবকিছু ঠিক করতে হবে৷ নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করে কোন লাভ হবে না।”
“ওহ তাই বুঝি? ধন্যবাদ, কিন্তু আপনার কোন সাহায্য আমার লাগবে না। আমি আপনাকে মোটেও বিশ্বাস করি না। আমার নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার কাজটা আমি নিজেই করতে পারব না। আর আপনি যদি সত্যিই আমায় সাহায্য করতে চান,তাহলে প্লিজ কিছু করতে আসবেন না এটাই সবথেকে বড় সাহায্য হবে।”
আরহাম এবার আরুশির দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বলে,”এই নাও, এই পানিটুকু খেয়ে নাও। আজ সারারাত তো আরো অনেক ঝগড়া করতে হবে এটা খেয়ে নিলে এনার্জি পাবে।”
“আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?”
“তোমার সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক?”
আরুশি এবার রেগে আরহামের দিকে এগোতে নিতেই হঠাৎ করে পা ফসকে পড়ে যেতে নেয় এমন সময় আরহাম আরুশিকে আগলে নেয়। অতঃপর মৃদু হেসে বলে,”সাবধানে চলাফেরা করো।”
আরুশি আরহামের দিকে রাগী চোখে তাকায়। কিন্তু আরহামের চোখে চোখ রাখতেই তার রাগ অনেকখানিই উবে যায়। আরহাম আরুশিকে দাঁড় করায়। অতঃপর টেবিলের উপর থেকে একটা ভাতের থালা নিয়ে আসে। আফিফা খান এটা রেখে গেছেন। আরহাম আরুশির মুখের উপর ভাতের প্লেট ধরে বলে,”এই নাও,খেয়ে নাও।”
“খাবো না।”
“তুমি যদি না খাও তাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন নিজেকে নিরপরাধ প্রমান করবে কিভাবে?”
“আপনার আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।”
“আমি না ভাবলে কে ভাববে? আমি স্বামী হই তোমার..”
“স্বামী? কিসের স্বামী? আমি এই বিয়েটা মানি না।”
“তুমি মানো বা না মানো তুমি আমার স্ত্রী আর এটাই সত্য। সত্যকে অস্বীকার করে তুমি কোন লাভ পাবে না।”
বলেই আরহাম সুযোগ বুঝে আরুশিকে নিজের হাতে ভাত খাইয়ে দেয়। আরুশি হতবাক হয়। আরহাম আরুশির হাতে প্লেট ধরিয়ে দিয়ে বলে,”বাকিটা নিজের হাতে খেয়ে নাও।”
আরুশি আর কোন উপায় না দেখে খেতে শুরু করে।
আরিশা খন্দকার বিছানার এককোণে বসে কাঁদতে থাকে৷ জাঈদ শেখ এসে তার কাধে হাত রাখতেই তিনি জাঈদ শেখকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। জাঈদ শেখ বলেন,”মেয়েটাকে কথা শুনিয়ে যখন এতই কষ্ট পেয়েছ তাহলে কেন এত কড়া কথা শোনালে ওকে? কেনই বা জোরপূর্বক বিয়েটা করতে বললে? এই পরিস্থিতিতে আমাদের ওর পাশে থাকা উচিৎ ছিল৷ এভাবে ওর হাত ছেড়ে দেয়া উচিৎ হয়নি।”
অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ৩ পর্ব ১৪
“কি করবো বলো? আমি চাই নি, কেউ আমার দিকে আঙুল তুলে বলুক, আরু আমার নিজের মেয়ে নয় জন্য ওকে আমি যোগ্যভাবে মানুষ করিনি। আমি নিজেও তো ওকে বিশ্বাস করতে চাই কিন্তু ছবিগুলো দেখার পর..”
“থাক। আর চাপ নিও না। আমার নিজের মেয়ের উপর ভরসা আছে। আমি নিশ্চিত ও সব সত্যটা সামনে আনবেই। কিন্তু এই বিয়েটা ঠিক হয়নি। আমি আরুকে যতোটা চিনি ও কখনো আরহামকে মেনে নিতে পারবে না।”
আরিশা বলে ওঠেন,”মেনে নেবে ও। আমি নিশ্চিত। কারণ বিয়ের সম্পর্ক কোন সাধারণ সম্পর্ক নয় এই সম্পর্কে সবাইকে বাধা পড়তে হয়। যেভাবে একসময় আমরা বাধা পড়েছিলাম।”