অশ্রুবন্দি শেষ পর্ব 

অশ্রুবন্দি শেষ পর্ব 
ইসরাত জাহান ফারিয়া

গাঢ় কুয়াশার অস্তিত্ব জানান দিতে শুরু করেছে নাম মাত্র বিকেলের সমাপ্তি ঘটতেই। এরপর থেকেই আকাশের রং পালাবদলের কার্যক্রম চলমান। মন খারাপ করা আঁশটে রঙে ঢেকে যাওয়া মেঘগুলো অদ্ভুত বিষণ্ণতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়ে ঝরঝর করে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। সেই শব্দে চারিপাশে বিভোর। হিসাব সংক্রান্ত সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে সন্ধ্যার পর একটু ফুরসত পেয়েছে ইহসান। পুরো মার্কেটের সমস্ত ফ্লোরই আজ বন্ধ। শুধু রেস্ট্ররন্ট আর কনভেনশন হল গুলোই খোলা ছিল। একে আজ শুক্রবার, তার উপর বিরুপ আবহাওয়া।

স্টাফরাও ছুটি চাইছিল, কাস্টমারের আনাগোনা না থাকায় ইহসান ছুটি মঞ্জুর করে ওদের বিদায় করে দিয়েছে ঠিক, তবে নিজেই রয়ে গেছে। মেয়ে সঙ্গে না থাকলে সেও এতক্ষণে বেরিয়ে পড়তো। কিন্তু বাচ্চাটাকে নিয়ে এই বৃষ্টিতে বেরুনো মানে ভয়াবহ অসুখের দিকে ঠেলে দেওয়া। যার কোনো মানে হয় না বলেই রয়ে যাওয়া। এই মুহূর্তে আজওয়াকে সে খাওয়াতে বসেছে। খাবার চামচে করে মেয়ের মুখে তুলে দিতে দিতে স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের ওপাড়ে ভিজতে থাকা শহরটা দেখাচ্ছে। খুব মনোযোগী শ্রোতার মতো আজওয়াও তার পাপার কথা শুনছে, হাত নাড়ানো দেখছে, তার দেওয়া খাবার গিলে নিচ্ছে চুপচাপ। ধীরেসুস্থে মেয়ের খাওয়া শেষ করে ওয়াইপস দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে দেয় ওকে। পুরো সময়টাতে একটুও জ্বালাতন করল না আজওয়া। তার এতো বাধ্য মেয়েটা! ব্যাপারটা উপলব্ধি করে ইহসানের মনটাতে ফিনফিনে হাওয়ার মতো শীতলতায় ছেয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গলায় আবেগ ঢেলে ভীষণ আদর নিয়ে সে মেয়েকে ডাকে, “আম্মাজান?”
অতি পরিচিত ভরাট কণ্ঠের ডাকটা শুনেই ছটফটিয়ে উঠে আজওয়া, প্রশ্নোক্ত চোখে তাকায়। ইহসান জ্বলজ্বলে চোখে মেয়ের উৎফুল্লতা দেখে নিজের ডানহাতটা রাখে মেয়ের মাথায়। উদ্দেশ্য আদর করে দেওয়া। তবে তাকে বিস্মিত করে দিয়ে আজওয়া হাতটা নামিয়ে দিয়ে ওকে ভর করে উঠে দাঁড়ায়। এরপর নিজের ছোট্ট আঙুলগুলো দিয়ে ইহসানের মাথায় আঁকিবুঁকি করতে থাকল একইভাবে, যেভাবে ইহসান তার মাথায় হাত বোলায়! ওর কান্ড
দেখে ইহসান থমকে যায় একমুহূর্তের জন্য, অদ্ভুত এক ব্যথায় তার ভেতরটা কেমন করে উঠে। সে শব্দ হারিয়ে ফেলে, কোনো কথাই বলতে পারে না৷ অনেকক্ষণ পর বিমর্ষ ভাব কাটিয়ে মেয়েকে আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলে, “এত বড়ো হয়ে যাচ্ছেন কেন আম্মাজান? আপনি বড়ো
হয়ে গেলে আমি আপনাকে এই ছোট্ট বুকটাতে ঢুকাতে পারব না তো, কেন বড়ো হয়ে যাচ্ছেন?”

আজওয়া তার কথার মমার্থ কিছুই ধরতে পারে না৷ তবে বড্ড আদর করে দেয় সে তার পাপাকে। নাকে নাক ঠেকিয়ে চোখমুখ কুঁচকে সে ইহসানের চোখের পাতায় হাতড়ায়। হেসে ফেলে ইহসান। গুমোট মস্তিষ্কের অহেতুক চিন্তাগুলোতে ইস্তফা দিয়ে গলা খাকারি দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে সে। খেদযুক্ত কণ্ঠে বলে, “ভাইকে সঙ্গে করে আনা হলো না, সে নিশ্চয় খুব রাগ করবে! ইদানীং
তো ভাইয়ের নাকের ডগায় রাগ থাকে!”

কথাটা শুনে আজওয়া এমন মুখভঙ্গি করল যে, মনে হলো ভাইকে সঙ্গে নিয়ে না আসায় এসে তারা ঠিক করেনি এবং সে আসলেই ভীষণ দুঃখিত! ইহসান ওর চোখের ভাষা নিজের মতো বুঝে নিয়ে ছোট্ট করে বলল, “সমস্যা নেই, পরেরবার নিয়ে আসব! তবে মাম্মাকে আনব না। ওই মহিলা খুব ক্যাচক্যাচ করে! ও বাদ আমাদের টিম থেকে, ওকে?” পরক্ষণেই একটু চিন্তিত গলায় বলল, “কিন্তু যতই ক্যাচক্যাচ করুক ওই মহিলাটা ও তো আমার সৃজা! না
নিয়ে এলে নিশ্চয় খুব মন খারাপ করবে! উহু! রেখে আসা যাবে না, একদম উচিৎ হবে না! তাছাড়া পাপা যেখানে,
মাম্মাও সেখানেই থাকবে, তাই না?”

এমন সময়ই অভাবনীয় একটা কান্ড ঘটল। আধো আধো স্বরে ম…উমম মা, আআব্ব…বা বলে ডেকে উঠল আজওয়া এবং ডাকতেই থাকল একনাগাড়ে। বলা বাহুল্য বাচ্চাদের বুলি আরো আগে ফুটলেও মা-বাবা বা অন্য কোনো সম্বোধন তাদের স্পষ্ট নয়। এই নিয়ে সৃজার কত আফসোস! তাই এই অসময়ে মেয়ের মুখে এমন সম্বোধন শুনে ইহসান এতই বিস্মিত হলো যে সে, বাকহারা গেল কিছু সময়ের জন্য! সম্বিৎ ফিরে আসার পর সে মেয়ের দিকে এক পৃথিবী মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ছোট্ট দেহটা বুকে আগলে নিয়ে বলে, “আমার পুরো জন্মটা সার্থক হয়ে গেছে আম্মাজান! বেজন্মা আমিটার সব কলঙ্ক আপনারা ঘুচিয়ে দিয়েছেন আজ। আমার অপবিত্র রক্তকে আপনাদের সত্তায় ধারণ করে যে বাবা হিসেবে যে পূর্ণতা আমাকে দিয়েছেন, কীভাবে আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব আম্মাজান?”
মেয়ের পায়ে শ’খানেক চুমু বর্ষণের পর সে কল লাগাল সৃজাকে। রিসিভ হতেই উত্তেজিত কণ্ঠে বলতে শুরু করে,

“একটা কথাও বলবি না, মন দিয়ে শুনবি শুধু!”
উ..মম্মা..মা…আআব্ব…ম্মাআ…
একনাগাড়ে, অনেকবার! সৃজার মনে হলো ঝরঝরে বৃষ্টি নামা এই শীতের সন্ধ্যাটা তার পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর সন্ধ্যা! যা এর আগে কখনোই ওর জীবনে আসেনি। ওর
চোখ ভরে উঠল অশ্রুতে, ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠল সুখময় হাসি। স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিমায় ফোনের স্ক্রিনেই মেয়ের গালে সে অসংখ্য চুমু খেল। ইচ্ছে করল স্ক্রিনের ভেতর থেকেই মেয়েটাকে টেনে বের করে বুকে ঢুকিয়ে নেয়! খোদা! মা হওয়া এত সুখের কেন? এত সুন্দর কেন? যদি এত স্নিগ্ধ একটা টানের সম্পর্কই হয়; তাহলে তারা দু’বোন কেন
মা’কে খুব বেশিদিন পেল না? সবকিছু বুঝে উঠার আগেই
কেন নিয়ে যাওয়া হলো তাঁকে?

ফোনক্রিনে মৌন সৃজাকে দেখেই বিষয়টা হয়তো আন্দাজ করতে পারল ইহসান। তাই সে প্রসঙ্গ বদলের প্রয়োজন অনুভব করল। বেশ আগ্রহ নিয়ে সে আজ সারা দুপুর-বিকেলের গল্প করল। এত ব্যস্ততার মাঝেও মেয়েকে সে একা ছাড়েনি, সারাক্ষণ কোলে নিয়েই কাজ করেছে। আর মেয়েটাও কারো কাছে যায়নি। স্টাফদের কেউ জোর করেও কোলে নিতে পারেনি। অপরিচিত মুখ দেখেই কান্নাকাটি! পাপার পাঞ্জাবির কলারই সে ছাড়েনি একটা মুহূর্তের জন্য! ইহসান ফিরিস্তি দিতে থাকে সৃজাকে। বিনিময়ে ওদিকে ইজহানজাদী, আযরান ও তার বড়ো আব্বা ইজহান শেখের খবরটাও নিয়ে নেয় সে। এরপর ফিরতে একটু দেরি হবে সেটা জানাতেই সৃজা ভীষণ রেগে যায়। এমনিতেই মেয়ে তার কাছে নেই, খালি খালি লাগছে ভেতরটা! ওই কিউটের ডিব্বাটা এলে তবেই না মেয়েকে চেপে ধরে মন ভরে ‘মা’ ডাক শুনে নেবে সে। এই লোকটা কেন দেরি করতে চাইছে? সৃজা আগুন চোখে তাকিয়ে থাকে। ইহসান খুব হাসে ওর রাগ দেখে। বলে, “বৃষ্টিবিলাস করতে করতেই তাহলে ফিরে আসি? জ্বর-টর হলে পরে কিন্তু বকঝকা করতে পারবি না।”

উত্তেজনায় মাথায়ই ছিল না যে, বাইরে আবার বৃষ্টি নেমেছে। এখন মনে পড়তেই কিছুটা বেআক্কল বলে মনে হলো নিজেকে সৃজার। ভার কণ্ঠে জবাব দিলো, “কোনো প্রয়োজন নেই। বৃষ্টি থামলেই এসো। একটুখানিও যদি ভিজো, তোমাদের বাপ-বেটিকে বাসায় ঢুকতেই দেওয়া হবে না।”
ইহসান ঠাট্টার সুরে বলল, “রাত কাটাব কোথায় তাহলে?”
“খোলা একটা আকাশ আছে কী করতে?”
“এত নিষ্ঠুর? বুক কাঁপবে না অসহায় বাপ-বেটিকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে দেখলে? কী পাষাণ রে তুই সৃজা?”
সৃজাও তাল মিলিয়ে জবায় দেয়, “আমি পাষাণী?
তুমি তাহলে কী? তুমি একটা… ”
কথা শেষ হওয়ার আগেই ওকে থামিয়ে বলে ইহসান, “আমি কী? কী আমি? বল, বল..জানি কিছুই বলতে পারবি না। কারণ আমি ওসব পাষাণটাষাণ নই। বরং কোমল স্বভাবের মানুষ। যার মনটা দয়ামায়া আর ভালোবাসা দিয়ে ভর্তি!”

ঠিকই বলেছে লোকটা। তবুও তর্কে হারতে রাজি নয় সৃজা। ঝগড়ার করার জন্য কোনো অপবাদ খুঁজে না পেয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল, “তুমি পাষাণ হতে যাবে কেন? তুমি তো তার চেয়েও দশকাঠি উপরে! মেয়েমানুষ হাত করায় ওস্তাদ! আমার দুধের শিশুটার মাথা খেয়ে বসে আছ! সারাদিন কাছে রাখি আমি, খাওয়াই আমি, বেশি আদর দিই আমি অথচ বাগে আনতে পারিনি, সে বাপকে চোখে হারায়, বাপ বলতে পাগল! কেন এই দ্বিমুখীতা তোমার মেয়ের?”

“মেয়ে তার বাপকে ভালোবাসবে, চোখে হারাবে
এটাই স্বাভাবিক! বরং ওসব না করাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু তোর এত জ্বলে কেন? এই, তুই আংকেলকে কম ভালোবাসতি নাকি? তুই তো দেখছি টু মাচ হিপ্রোকেট!”
আগে থেকেই মেজাজ খারাপ ছিল সৃজার। এবার
তার মেজাজ আরো খারাপ পর্যায়ে চলে গেল। ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, “বাচাল লোক কথা কম বলে আমার মেয়েকে ফেরত দিয়ে যাও। বিকেলে দিয়ে যাবে বলে নিয়ে গেলে, অথচ সন্ধ্যা পার করে ফেলেছ! এখন আবার বৃষ্টির দোহাই! এমনিতেই খেতে চায় না মেয়েটা, এখন কতক্ষণ না খাইয়ে রেখেছ কে জানে! আর কোনোদিন মেয়ে দেব না তোমাকে!”

বলে আচমকা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল সৃজা।
অবুঝের মতো কান্ড! কথায় না পেরে এই অবস্থা নাকি মেয়ের বিরহে মায়ের এমন দশা বুঝে উঠতে সময় লাগল ইহসানের। কতক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকার পর
সে যখন মূল ঘটনাটা ধরতে পারল, ঘর কাঁপিয়ে
হেসে উঠে বলল, “সিরিয়াসলি?”
জীবন থেকে হাসি-আনন্দ বিদায় নিয়েছে কবেই।
আজকাল মন থেকে খুব একটা খুশি অনুভব করে না ইহসান। বহুদিন পর কেন যেন প্রাণবন্ত ঘটনা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে তার। সে কিছুতেই নিজেকে সংবরণ করতে পারছে না। হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হওয়ার উপক্রম। এই সৃজাটা, তার বউটা, তার বাচ্চাদের মা; সে তার মেয়ের মুখে মা ডাক শুনতে পারছে না, ফিডিং করাতে পারছে না বলে তাকে বকাঝকা করছে, রাগে-দুঃখে কান্না করছে!

কী অদ্ভুত নেচার এটা! এদিকে আজওয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। একদিকে মাম্মার কান্নাকাটি অন্যদিকে পাপার হাসি তাকে বিভ্রান্ত করছে। সে পাপাকে ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে করতে তার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করলে ইহসান হাসতে হাসতেই মেয়ের দিকে তাকায়। বলে, “মাম্মার দু দু চাই?”
অবুঝ চোখে তাকিয়ে থাকা আজওয়া কী জবাব দেবে যেন বুঝেই পায় না। ওদিকে সৃজা ক্ষেপে উঠে, “এই, কী বললে তুমি? কী বললে? লজ্জা নেই তোমার উল্টাপাল্টা কথা বলে বেড়াচ্ছ বাচ্চাটাকে? চরম বেয়াদব তুমি!”
“জি না বেগম, আমার লজ্জা আছে। আর আছে বলেই হাসাহাসিতে ব্যাপারটা কাটিয়ে দিচ্ছি! একবার ফেরা হোক, এই বেয়াদব বেয়াদবির চূড়ান্ত সীমা দেখাবে তোকে।”

রাগে তোঁতলে উঠে সৃজা, ‘‘তোমাকে দেখে নেব আমি।”
“ফিরি আগে, এরপর রাতে না-হয় মন ভরে দেখে নিবি যা দেখার। আমি কিন্তু একটুও মানা করব না, লজ্জাও পাব না। তোর মতো আমি তোকে বঞ্চিত করব না।”
বেহায়া, লাগামহীন আরো কতগুলো কথা বলে শব্দ করে হেসে ফেলে ইহসান। প্রথমে রাগান্বিত হলেও একটু থামে সৃজা। অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে সুন্দর হাসির মানুষটার দিলে। বহুদিন পর এভাবে ইহসানকে সে হাসতে দেখছে। তাই আর কথা বাড়ায় না সে। শান্ত হয়ে দেখতে থাকে লোকটাকে। ইহসানের হাসির দমক কমে আসতেই সৃজা একটু অস্বস্তি, একটু মুগ্ধতা নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “এত হাসির কারণটা কী, জানতে পারি মহাশয়?”

“লাউঞ্জে বসে আছি, পুরোনো বেয়াদবির কথা মনে পড়ছে মহাশয়া!”
পুরোনো বেয়াদবির কথা বলতে কী বোঝাতে চাইছে সেটা ধারণা করতে পেরে সৃজার গালে রঙের ছোঁয়া পড়ে। কানের পৃষ্ঠ লাল হয়ে উঠে। ওর রক্তিম মুখটা দেখে ইহসান আরো বেশি করে হাসতে থাকে, সঙ্গে সৃজা নিজেও এবার হেসে ফেলে। কারণ হাসি সংক্রামক।

সময় তখন রাত আটটার কাছাকাছি। ঘন্টাখানিক ধরে চলা বর্ষণ ধারা থামি থামি ভাব দেখে ইহসান প্রস্তুতি নিচ্ছে বেরিয়ে যাওয়ার। আজওয়া ঘুমিয়ে, কাঁচা ঘুম ভাঙালে খুব জ্বালাতন করে। তাছাড়া ইহসানের ইচ্ছেও হচ্ছে না তাকে জাগানোর। কিন্তু বাড়ি তো যেতেই হবে! মেয়ের ঘুমটা যাতে না ভেঙে যায় সেজন্য সে খুব সাবধানে মেয়ের পিঠে হাত রেখে আস্তে করে তাকে কোলে তুলে নিতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তেই একজন নাইটগার্ড এসে জানাল, কেউ একজন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। ইহসানের মনে হলো গার্ড তার সঙ্গে ফাজলামো করছে। এই বৃষ্টির রাতে যেখানে কাকপক্ষীও ঘর থেকে বেরুয় না, সেখানে কোন পাগল আসবে তার সঙ্গে দেখা করতে? বড্ড বিরক্তি নিয়ে কপাল কুঁচকে সে প্রশ্ন করে, “নাম কী তার? কী চায় আমার এখানে?”
“চেহারাছবি সুন্দর পোলাডার! ব্রো বইলা ডাকতেছিল আপনারে। এর আগে একবার এইখানে আইসা কফি খাইয়া গেছিল! সম্ভবত আপনের কোনো ভাই!”

ইহসানের কপালের সূক্ষ্ম ভাঁজ আরো গাঢ় হয়। সেইসঙ্গে দৃঢ় হয় চোয়াল। বুঝতে কষ্ট হয় না কার কথা বলছে গার্ড! সে একটুও অবাক হয় না জানের আচরণে। জানোয়ারটা খুব খামখেয়ালি। শীত, বৃষ্টি এসবকে সে গোণায় ধরে না। যখন তার যেটা ইচ্ছে করবে, মর্জিতে যেটা চাইবে সেটাই তার কাছে গুরুত্ব পায়। এতে বিপরীত মানুষটার কী এলো, গেল সে জানতে ইচ্ছুক নয় মোটেও। তবে তার মতো ইহসানও ইচ্ছুক নয় ওর মর্জির গুরুত্ব দিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে। তবে তন্নতন্ন করেখোঁজ করা স্বত্তেও হদিস না পাওয়া ইনজান শেখ কোন গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইছে, এর পেছনে স্বার্থ কী, সেটা জানার জন্যই নিজের রাগটাকে সংযত করার চেষ্টা করে মেয়ের গায়ে পাতলা কম্বলটা ভালো করে টেনে দিয়ে এরপর লাউঞ্জ থেকে বেরিয়ে এলো।

আরসালান ইনজান শেখের পরণে ফর্মাল প্যান্ট
আর শার্ট। হাতা কনুই অবধি ভাঁজ করে গোটানো, ডান হাতে ঘড়ি। সুন্দর করে কাটা চুল আর ছাঁটানো দাঁড়িতে খুবই পরিপাটি দেখাচ্ছে তাকে। এককাপ ক্যাপাচিনো নিয়ে ছোটো ছোটো চুমুকে সে কফি পান করছে। ওর এমন রুপ আগে কখনো দেখেছে কি-না ইহসান মনে করার চেষ্টা করে দেখল, কস্মিনকালেও এমন কিছু সে দেখেনি। আক্রোশটা ধামাচাপা দিয়ে গলা খাকারি দিয়ে বিপরীত দিকের একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতেই কফির মগটা ধীরেসুস্থে টেবিলে রেখে তার দিকে তাকিয়ে হাসলো আরসালান।
ইহসান নিজেও হাসলো, “চেহারা ছবি, হাসি মারাত্মক আপনার। তবে পচে যাওয়া ভেতরটার জন্য যখন কেউ আপনার সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে তখন মাঝেমধ্যে নিজের পরিচয়টা ভুলে যেতে বাধ্য হোই।”
“তবুও সত্যিটা তো অস্বীকার করা যায় না!”

“এই সত্যিটাও কখনো অস্বীকার করা যায় না যে, শত হলেও আপনি আমার মায়ের বৈধ সন্তান! আমাদের মতো অবৈধ নন। অথচ বৈধ আপনি নিজে কীভাবে অবহেলিত হয়েছেন, কীসে কীসে বঞ্চিত হয়েছেন সেসব ঘটনা মস্তিষ্কে জায়গা দিয়ে একটা জীবনের সমস্তটা ক্ষয় করে ফেলছেন! শুনেছি, মানুষ দুঃখে পড়ে খাঁটি সোনা হতে চায়, তবে আপনি কেন কয়লা হতে চাইছেন? জীবনের সঙ্গে এত হিপ্রোকেসি কেন আপনার ইনজান শেখ?”
আরসালান ইনজান শেখ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ভাইয়ের পানে। যাকে তার খুব পছন্দ হলেও
সম্পর্কটা খুব বিরোধের। যার সবকিছু কেড়ে নিতে গিয়ে দিনশেষে ব্যর্থ সে। তবে এবার ব্যর্থতাকে সফলতায় রুপান্তর করার অদম্য এক বাসনা তাকে দিনকে দিন অস্থির করে তুলছে! সে আবারও খুব সুন্দর হেসে বলল, “জীবনের সঙ্গে হিপ্রোক্রেসি মানে? হিপ্রোক্রেসি আমার রক্তে। এটা তো সবাই জানে।”

একদমই পাত্তা দিলো না ইহসান ওকে। বরং জিজ্ঞেস করল, “তো কোন গর্ত থেকে বেরুনো হলো?”
আরসালান একচোখ টিপে রহস্যময় হেসে বলল, “এভাবে অপমান করে না। প্রতিবেশীকে সম্মান দিতে জানতে হয়।”
প্রতিবেশী মানে? জান সৃজাদের প্রতিবেশী? মানে
তার আন্দাজই ঠিক! জানোয়ারটা এতদিন
তাদের আশেপাশেই ছিল। অথচ সে পাগল হয়ে গেছিল ওর খোঁজ জানতে! ক্রোধে কাঁপতে লাগল ইহসান। আরসালান ওকে রাগতে দেখে বলল, “তোমার ভাষ্যমতে আমি কয়লা, জাতে উঠার জন্য সোনা নয় হীরে হাসিল করতে চাই। কিন্তু যা বুঝলাম, এত সহজ নয় হীরেটাকে বাগে আনা। এজন্যই আবার সাহায্য চাইতে এসেছি।”
এবারে হাসলো ইহসান নিজেই, “বাপের টাকায় ক্ষমতার জোর দেখিয়ে আর কত? বুঝতে হবে সব জায়গায় সবকিছু চলে না।”

“ক্ষমতা এবং টাকা দুটো একে অপরের পরিপূরক।
এ দুটো জিনিসসহ বাপ নামক মানুষটা যখন বেঁচে থাকে, তখন সেগুলোর সদ্ব্যবহার করে না কারা জানো? এক. বোকার হদ্দরা, আর দুই. তোমাদের মতো সো কোল্ড বুদ্ধিমানেরা। যাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সম্মান, ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশোধের পোকাও কিলবিল করে অথচ সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে গেলে নাক সিঁটকাও। এজন্যই এখনো অবধি কারো বালটাও ফেলতে পারোনি। তবে নিজে সদ্ব্যবহার করো না বলে আমিও করতে পারব না এমন তত্ত্ব তো কোথাও লেখা নেই, ব্রো!”

ইহসানের ধৈর্য ফুরিয়ে এলো। উঠে এসে ওর নাক বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো। আরসালান ভাবল, লোডশেডিং হয়েছে এখানে বোধহয়, নয়তো চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেল কেন? কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল তার ঝিম ধরা মাথাটা সচল হতে, সে স্বাভাবিক হতে। নাকে হাত দিয়ে দেখল ব্যথায় অসাড় হয়ে গেছে জায়গাটা। মনে হয় হাড় ভেঙে গেছে। চোখমুখ লাল হয়ে উঠেছে। নিজের ব্যথা সে খুব একটা প্রকাশ করে না। কেন করবে? সে তো দুর্বল নয়, আর কাতরও নয় কারো সিমপ্যাথি নিতে। তবে দু’জন মানুষের বেলায় এ হিসাব ভিন্ন, কোনো সূত্র মানে না। তাদের কাছে সে অন্যরকম। তাদের চোখে নিজের জন্য যেকোনো প্রকার অনুভূতি দেখামাত্রই সে সুখে কতবার যে মরে, হিসাব রাখা দায়। চট করে ইহসানের দিকে ঝুঁকে এসে ওর একটা হাত টেনে নিয়ে বলে, “দেখো আমার খুব লেগেছে! মনে হয় হাড় ভেঙে গেছে। চেক করে দেখো রক্তও বের হবে…”

ইহসান দ্বিতীয়বারের মতো আবারও একটা ঘুষি বসিয়ে দেয় সেই স্থানে। আগের চেয়ে বেশি লাগলেও এবার টু শব্দও করে না আরসালান। বরং একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নাক থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তটুকু মুছে নিয়ে ভাবলেশহীন স্বরে বলে, “তুমি জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি?”
“না জানি না, জানতে চাইও না। কারণ তোর ভালোবাসা কিংবা তোর পরিচয় কোনোটাই আমি চাই না। আরো অনেক আগেই ভুলে গেছি তুই আমার কে! এখন তোকে নিজের হাতে মারতেও আমার হাত কাঁপবে না। নিজের মতো অন্যকেও যেমনভাবে অশান্তিতে রাখছিস, তোর শান্তি কখনো হবে না জান!”

লাগবে না শান্তি, তার লাগবে এলিজা দোয়া রেহমানকে। তার ভাইয়ের বোনটাকে, যে তার পাঠানো শায়েরিগুলোকে পাগলের প্রলাপ আখ্যা দিয়ে তুচ্ছভাবে অপমান করে। অথচ রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে একেকটা শায়েরি সে কতটা যত্ন করে লিখে এই মেয়েটাকে পাঠাবে বলে, কতবার রিচেক দেয় ছন্দ ভুল হলো কি-না, বানান ভুল হলো কি-না এই ভেবে! পুরো সময়টাতে অদ্ভুত এক আনন্দ আর সুতীব্র যন্ত্রণা উপভোগ করতে হয় তাকে। যন্ত্রণাটা হয় ঠিক তার বুকে, তার মস্তিষ্কে! নীতিন বলে, এসব নাকি প্রেমে পড়ার লক্ষ্মণ! অথচ তার মন জানে, এটা প্রেম ভালোবাসা নামক সস্তা কোনো আবেগ না, এটা শুধুই চাহিদা! যে চাহিদার নিকট বাকিসব তুচ্ছ! তাকে এলিজা রেহমান তাকে কি না বলে পার্ভাট? সে অপ্রসন্ন চোখে তাকায় ইহসানের দিকে। হিসহিসিয়ে বলে, “আমি ভুলতে পারছি না তোমার বোনকে।”

“ও মনে রাখার মতোই মেয়ে!”
আর কতবার চাইলে এই মেয়েটাকে মিলবে? আর কতবার ধর্ণা দেবে সে? দু’বার নিজে দিলো, একবার তার বাপও দিলো। তাও নাকচ করছে। অথচ কোনো খারাপ কাজ করেনি সে, কারো সঙ্গ নেয়নি, কাছে গেলে যদি ক্ষতি করে দেয় সেজন্য দূরত্ব বজায় রেখে চলে এলিজ দোয়া রেহমানের থেকে। পাশাপাশি বাসায় থেকেও সে কোনোদিন জেদী মেয়েটার সামনে যায়নি। এমনকি দু’বার যে আকাশ নামক ক্যাচড়াটার সঙ্গে এলিজ বাসে চড়েছে, গ্রন্থাগারে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়েছে সেসবও সে সহ্য করে নিয়েছে। এতকিছুর পরেও গোঁ ধরে বসে আছে তার ভাই আর এলিজা রেহমান! যাদের গালি শুনলেও তার ভালো লাগে! টেবিলে থাবা মেরে সে দাঁতে দাঁত চেপে তীক্ষ্ণ স্বরে বলে, “কেন দেবে না তুমি ওকে, কেন হতে চায় না ও আমার? আমি ওর মাকে মেরেছি, আমি খারাপ তাই? তো তোমার বোন কী? আমাকে বলে আমি নাকি জা*! এত ভালো হলে মুখের ভাষা এমন কেন?”

ইহসান ঘৃণার দৃষ্টি ছুঁড়ে উঠে গেল। যার মানে সে ইচ্ছুক নয় ওর কথার জবাব দিতে। এই নিয়ে তৃতীয়বার প্রত্যাখিত আরসালানের নিজেকে পাগল পাগল লাগে। আচমকাই সে একটা চেয়ার তুলে আছড়ে ভাঙে টেবিলে। ভয়ানক শব্দে কেঁপে উঠে তিন হাজার বর্গফুটের রেঁস্তোরাটা। ইহসানের সম্বিৎ ফিরে আজওয়ার কান্নায়। সে তাকিয়ে দেখে গার্ড ওকে কোলে নিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ইহসান বুঝতে পারল না ওকে কেন নিয়ে এসেছে এখানে, চিলের মতো ছুটে এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে একটা প্রচন্ড জোরে ধমক দিতেই ভয়ে সেখান থেকে দ্রুত পগার পার হয়ে গেল গার্ড। ইহসান আজওয়াকে অভয় দেয় এটা-সেটা বলে। একটু পানি খাইয়ে, শান্ত করার প্রচেষ্টা করে,

আরসালান সূঁচালো দৃষ্টিতে বাবা-মেয়েকে দেখে। হিংসাত্মক মনোভাব তাকে পুড়িয়ে দিতে থাকে। ট্যাঁ ট্যাঁ করা বাচ্চাটাকে এক আছাড় মেরে চুপ করিয়ে দিতে ইচ্ছে করে তার। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে রাম ধমক দিতেই গুটিয়ে যায় আজওয়া। ইহসান চায়নি মেয়ের সামনে কিছু করতে, কিন্তু নিজেকে সামলাতেও পারে না। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে ওর মাথায় গান ঠেকিয়ে রক্তবর্ণ চোখে তাকায়। বলে, “মেরে দেই? মেরে দেই তোকে? এরপর পুঁতে ফেলি? এটাই তো করার কথা ছিল আমার! তাহলে আর কোনো আফসোস নিয়ে বাঁচতে হবে না আমাকে…”

ট্রিগার চাপামাত্রই বলামাত্র ইহসান টের পেল তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে এক ঝটকায় গানটা নিয়ে নিয়েছে আরসালান। ইহসানের দিকে তাচ্ছিল্যপূর্ণ চোখে তাকিয়ে বাঁকা হাসে সে। ইহসানের কপালে ভাঁজ পড়ে। ও চোখ বুজে ফেলে। তার বাচ্চাটা আছে এখানে, ওর সামনে অপ্রীতিকর কিছু করতে চায় না সে। কিছুতেই না। কিন্তু ইনজান যদি ওর কিছু করে বসে? সে আবারো চোখ খুলে বোঝার চেষ্টা করল জানকে! দেখল গানটা নিজেই নিজের মাথায় ঠেকিয়ে আক্রোশ নিয়ে তাকিয়ে আরসালান। ইহসান প্রত্যাশা করেনি এমনটা। সে চোঝ বন্ধ করে, চোয়াল শক্ত করে বলে উঠে, ”মরে যা তুই জান!”

একদম ঘোরগ্রস্ত মানুষের ন্যায় ট্রিগারে আঙুল রাখে
আরসালান। প্রচন্ড ক্রোধ আর ক্ষোভে সে তার চিন্তাশক্তি হারিয়েছে। সে জানে, ইহসান তাকে ভালোবাসে। মুখে যতই বলুক, নিজের হাতে কখনোই তাকে মারতে পারবে না। এর আগেও তো চেষ্টা করেছে, পেরেছে কী? তাই নিজেই মরে যাওয়া হোক। নিজের চোখে তার মৃত্যু দেখুক তার ভাই, একটা শিক্ষা অন্তত হবে! বুঝবে যে, এলিজা রেহমানের থেকে আরসালানই তার আপন। আর এই আপন মানুষটা আসলেই তার বোনকে চেয়েছিল! বোন! বোন! বোন! কথাটা মাথায় আসতেই তৎক্ষনাৎ আরসালানের মনে পড়ে একজন তাকে বলেছিল, মরে যাওয়া সহজ, বেঁচে থাকা খুব কঠিন। এই কাঠিন্যতার মধ্যে পিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকে যারা, তারাই পুরুষ। আর তুমি কাপুরুষ।
কাপুরুষ! সে মরে গেলে আরো একটা দোষ বাড়বে, তাকে আবার কাপুরুষ বলবে এলিজা দোয়া রেহমান৷ না, সে এভাবে, এত সহজে মরবে না। হুট করে তার কী হয়, পিস্তলের সব ক’টা গুলির সবগুলোই সে এলোপাথাড়ি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বেরিয়ে গেল রেঁস্তোরা থেকে। আসার পথে তীব্র গলায় বলেও গেল, “মরার আগে এবার খারাপের চূড়ান্তটা করব আমি। জাস্ট ওয়েট এন্ড সী!”

অরবিট টাওয়ার কর্তৃপক্ষের লোকেরা স্পষ্ট শুনেছে গুলির শব্দ। তারা হুড়মুড় করে ছুটে এসেছে। তাদের ধারণা কোনো ছিনতাইকারী বা সন্ত্রাসী এসে এ কাজ করেছে। থানাপুলিশে খবর দিতে চেয়েছিল তারা। ইহসান কিছু বলেনি। মেয়েকে নিয়ে আলুথালু অবস্থায়ই বেরিয়ে আসে। বাইরে তীব্র শীতের প্রকোপ। মানুষের আনাগোনা কম। অফিস, দোকানপাট অধিকাংশই বন্ধ। লোকজন, গাড়িটাড়িও তেমন চোখে পড়ছে না। ক্রন্দনরত মেয়েকে নিয়ে রাস্তার একপাশে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে মেয়ের কান্না থামানোর চেষ্টা করতে করতে ভাবে, ইনজান আসলেই তার ভাই, যাকে সে ভালোবাসে। কিন্তু জানের উপর ঘৃণার পাল্লাটা এতই ভারী যে ভালোবাসার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। ঢাকা পড়ে গেছে অতল গহ্বরে, যেখান থেকে ভালোবাসাটা ফিরে আসার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায়।

অশ্রুবন্দি পর্ব ৮৮

অথচ! তীব্র বিষাক্ত অনুভূতি নিয়ে সে আজ কেন যেন নিজের মৃত্যু কামনা করল, সৃজার চোখে চোখ মেলানোর দায়ে! সৃষ্টিকর্তা অবশ্য ওর প্রার্থনা সঙ্গে সঙ্গেই কবুল করে দিতে চাইল। আশপাশে নজর দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না বলে ইহসান বুঝতেও পারেনি ততক্ষণে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছে ছয়জন অস্ত্রধারী লোক। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মেয়েকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নিজেকে স্থির করার চেষ্টা করে যখন ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরতে চাইল, তখনি মাথার পেছনদিকে প্রচন্ড আঘাত অনুভব করে বসল। আঘাতের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, নিঃশ্বাসটা গাঢ় হয়ে পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে থমকে গেল কিছু মুহূর্তের ব্যবধানে।

সমাপ্ত 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here