আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৭ (২)
অরাত্রিকা রহমান
সোরায়ার কলেজ~
সকালবেলার টানা তিন ক্লাস শেষে টিফিনের ঘন্টা বাজতেই পুরো কলেজ যেন হইচইয়ে ফেটে পড়ল। কিন্তু এই ভিড়ের বাইরে একেবারে শান্ত, ফাঁকা একটা ক্লাসরুমে ঢুকে বসেছে সোরায়া আর জুঁই। সোরায়ার হাতে একটা স্যান্ডউইচ—ক্যান্টিন থেকে কিনে এনেছে। অন্যদিকে জুঁই ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করে টেবিলের উপর রাখল। ঢাকনা খোলার সাথে সাথেই ঘরে ভেসে এল বিরিয়ানির মন মাতানো গন্ধ।
জুঁই মুখে খাবার চিবুতে চিবুতে গম্ভীর ভঙ্গি করে বলল—
“নবীন বরণে তুই শাড়ি পরবি তো সোরা?”
সোরায়া থ হয়ে গেল। স্যান্ডউইচ হাতে নিয়ে একটু দ্বিধা নিয়ে বলল—“জানি না রে… দেখা যাক কি পরা যায়।”
জুঁই চামচটা আঙুলে ঘুরিয়ে একেবারে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল— “না না, কোনো দেখা যাক না। তুই শাড়িই পরবি। এইটাই ফাইনাল।”
সোরায়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—
“আচ্ছা বাবা, তুই যা বলবি তাই। তবে শাড়ি পরতে আমার মোটেই ভালো লাগে না। মোটা মোটা লাগে, পেট বের হয়ে থাকে এটা আরো বিরক্তি কর লাগে। আমি সামলাতে ও পারি না।”
জুঁই খিলখিলিয়ে হেসে ফেলল—”আরে! তুই আবার কই মোটা?!”
সোরায়া স্যান্ডউইচ নামিয়ে টেবিলের উপর কনুই ভর দিয়ে বলল—“এত ডায়েট করব ভাবি, তাও করা হয় না। প্রতিদিন ওই আনহেলদি খাবার খেয়ে আমার প্রাণ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ঘাসপাতা, স্যালাড, জুস—আরে এগুলো মানুষ খায় নাকি? মনে হয় গরুর খাদ্যাভ্যাস হয়ে গেছে।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এবার জুঁই খিলখিলিয়ে হেসে টিফিন বক্সটা সোরায়ার দিকে ঠেলে দিল,
“এই নে, বিরিয়ানি খাঁ, আম্মু বানিয়েছে তবে একটু আন-হেলদি।”
সোরায়া বক্সটার দিকে তাকিয়ে কপালে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলল—
“এইসব আনহেলদি খাবারগুলো ঠিক সুন্দর ছেলেদের মতো। দেখতে সুন্দর, খেতে মজা… কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।”
জুঁই হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠল। হাসতে হাসতে হাত দিয়ে পেট চেপে ধরল—
“হাহাহা! সোরা, তোর মুখ থেকে এরকম ডায়লগ বের হয় কিভাবে বল তো? খাবার আর ছেলেদের তুলনা? ওয়াও!”
সোরায়াও হেসে ফেলল, তবে একটু কৃত্রিম ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল—
“যা খুশি বল। আমি সত্যি বলেছি।”
হঠাৎ একই ক্লাসের পিছনের দরজাটা কড়মড় শব্দ করে খুলতেই ভেতরে ঢুকলো দ্বাদশ শ্রেণীর পাঁচজন মেয়ে। ক্লাসরুমটা তখন প্রায় খালি, সামনের বেঞ্চে বসে আছে শুধু সোরায়া আর জুঁই। কোলাহল থেকে দূরে এই নিস্তব্ধ ঘরটায় ওরা আরামে বসেছিল, কিন্তু সিনিয়রদের প্রবেশেই পরিবেশটা বদলে গেল। মেয়েগুলো নিজেদের মধ্যে হেসে-খেলে ঢুকল, যেন অনেক বড় কোনো সিক্রেট নিয়ে কথা বলছে। পেছনের বেঞ্চে বসেই প্রথমজন ফিসফিস করে বলল—
প্রথম মেয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি, চোখ টিপে বলল,
– “আরে বাবা, আজকের ইংলিশ ক্লাসে দেখেছিস মাহির স্যার কেমন লতার দিকে তাকাচ্ছিল?”
দ্বিতীয় মেয়ে লতার কাঁধে খোঁচা দিয়ে, ঠোঁটে দুষ্টু হাসি,
– “দেখেছি, দেখেছি! সব সময় তোকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। খেয়াল করেছিস? যেকোনো প্রশ্ন করলে তোকেই জিজ্ঞেস করে।”
তার কথায় বাকিরা খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে। সেই হাসির মধ্যে মিশে থাকে একধরনের টিপ্পনী, কটাক্ষ, আর মজার ছলে ঠাট্টা করার আনন্দ।
লতা চোখ বড় করে, বিরক্তির ভান করে বলল,
– “আহ্, কি যে বলিস না তোরা! এসব বাজে কথা। কিছুই না।”
কিন্তু মুখে অস্বীকার করলেও ওর ঠোঁটের কোণে হালকা লাজুক হাসি লুকিয়ে যায়নি। গালে লালচে আভা ফুটে ওঠে।
সে কথা সবাই টের পেয়েই আরও জোরে হেসে ওঠে।
তৃতীয় মেয়ে হাততালি দিয়ে বলল,
– “হাহাহা, এই লুকোচুরি আর কদিন লুকোনো যাবে? এবার পুরো কলেজই জেনে যাবে।”
ওদের হাসির শব্দে চারপাশ কাঁপতে লাগল।
সামনের বেঞ্চে বসা সোরায়া এসব কথা শুনে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিল। ওর চোখে মনে হচ্ছিল আগুন জ্বলছে। স্যারের প্রতি এমন খোঁচা, গুজব, কটাক্ষ—সব ওর কাছে অসহনীয় লাগছিল। হঠাৎ ও জোরে হাত দিয়ে বেঞ্চে চাপড় মেরে উঠে দাঁড়াল। শব্দটা পুরো ক্লাসে প্রতিধ্বনিত হলো। পেছনের মেয়েগুলো প্রথমে চমকে তাকাল, তারপর চোখ সরু করে ওর দিকে মনোযোগ দিল।
সোরায়া উচ্চস্বরে, জুঁইকে শুনিয়ে কিন্তু আসলে ওদের উদ্দেশ্য করে,
– “দোস্ত একটা সত্যি কথা কি জানিস? পাগলের সুখ আসলেই মনে মনে। যা ভেবে ভালো লাগে, তাই ভেবে খুশি থাকে।” ওর গলায় কড়া সুর, চোখে বিরক্তির ঝলক।
সিনিয়রদের মধ্যে একজন ঠোঁট বাঁকিয়ে এগিয়ে এলো।
চতুর্থ মেয়ে ভ্রু কুঁচকে, আঙুল তুলে বলল,
–” এই যে মেয়ে, তুমি! এইমাত্র যা বললে, সেটা কি আমাদের উদ্দেশ্য করে বলেছো?
জুঁই আতঙ্কিত মুখ, সোরায়াকে চুপ করাতে ফিসফিস করে,
– “দোস্ত, ঝামেলা করিস না… বাদ দে, চল।”
কিন্তু সোরায়ার চোখে তখন দৃঢ়তা। সে সরাসরি তাকাল ওদের চোখে। সোরায়া কঠিন গলায় বলল,
– “হ্যাঁ, তোমাদেরই বলেছি। স্যারকে নিয়ে বাজে গুজব ছড়ানো বন্ধ কর। নিজের শিক্ষকের প্রতি এতটুকু সম্মান নেই তোমাদের? স্যারের একটা প্রস্টিজ আছে কলেজে।”
তার দৃঢ় কথায় সিনিয়রদের মুখে প্রথমে অবাক ভাব,তারপরই কুটিল হাসি ফুটে উঠলো।
লতা সামনে এসে, চোখ টিপে সোরায় উদ্দেশ্যে বলল-
– “ওরে বাবা! এ তো দেখি , স্যারের চামচি! তুমি তো সেই, যে স্যারের গায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলি সেদিন। হুম? এখন এত বড় বড় কথা শোনাচ্ছো?”
সোরায়া ঠান্ডা গলায়, কিন্তু চোখে বিদ্যুৎ ঝেড়ে বলল,
– “সেটা ছিল দুর্ঘটনা। আর তোমাদের এই গুজব পুরোপুরি ইচ্ছাকৃত বানোয়াট। দুটো ব্যাপার একেবারেই আলাদা। এতে স্যার এর সম্মানহানি হবে।”
লতা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, ঠোঁট বাঁকিয়ে উত্তর করল,
– “সম্মান মাই ফুট! মাত্র দুই দিনের মেয়েও এসে স্যারের গায়ে পড়ে, আর এখন সম্মান শেখাচ্ছে! ওই ফালতু টিচারের মতো লোকের দরকার নেই একেবারেই এই কলেজে। একটু ভালো দেখতে বলে সবাই এই কয়দিনে পাগল হয়ে গেছে নতুন স্যারের উপর।”
এবার সোরায়ার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। ওর চোখ লাল হয়ে উঠল। মাহিরের চরিত্র নিয়ে কথা বলাটা একদম তার পছন্দ হয়নি। সোরায়া তীক্ষ্ণ গলায় প্রতিবাদ করে বলল-
– “গায়ে পড়া ছিল দুর্ঘটনা। কিন্তু শুকরিয়া, আমি লতিকার মতো স্যারের সাথে নিজেকে জড়িয়ে গুজব ছড়াচ্ছি না, মিস লতা।”
এই কথায় চারপাশে হঠাৎ নীরবতা নেমে এলো। বাকিদের মুখে অবাক ভাব। তারপর আবার ফিসফিস করে হাসি—
কিন্তু এবার সেই হাসিতে কুটিলতা আর রাগ মিশে ছিল।
লতা চোখ সরু করে, রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে থাকে সোরায়ার কথায়। সে এগিয়ে এলো সোরায়ার একদম সামনে। ওর চোখে যেন বিষ মাখানো আগুন, ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের রেখা। জুঁই ভয় পেয়ে সাথে সাথে দাঁড়াল, সোরায়ার হাত ধরে টানতে লাগল।
জুঁই আকুতি ভরা গলায়: – প্লিজ আপু, ভুল বুঝছেন। আসলে ও ওইভাবে বলতে চায়নি। চল সোরায়া, চলো…”
কিন্তু সোরায়া হাত ছাড়িয়ে দিল। তার মুখে একগুঁয়ে জেদ, চোখে দৃঢ়তা। সোরায়া দাঁতে দাঁত চেপে, সোজাসুজি তাকিয়ে বলল– “ও ভুল বলছে। আমি তোমাদের সব মিন করেই বলেছি। লজ্জা নেই তোমাদের? নিজের স্যারকে নিয়ে নোংরা গুজব ছড়াচ্ছো!”
এমন সময় ক্লাসরুমের দরজার সামনে একটা ছায়া দেখা যায়। মাহির স্যার, যে একটু আগে টিফিন শেষ করে হাত ধুতে যাচ্ছিল, আওয়াজে দাঁড়িয়ে পড়েন ক্লাসরুম টার সামনে। ভিতরের দৃশ্যটা দেখে কপাল কুঁচকে যায় মাহিরের। ভেতরে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী আর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, আর তার চোখে পড়ে সামনের দিকে দাঁড়ানো সোরায়া। মাহির মনে মনে, রাগ চেপে আওড়ালো-
– “এই মেয়ে এখানে কী করছে? আর বড় ক্লাসের মেয়েগুলো এভাবে ঘিরে আছে কেন ওকে?”
কিন্তু ভেতরের মেয়েরা এখনো খেয়াল করেনি মাহির দাঁড়িয়ে আছে।
লতা তাচ্ছিল্যের সুরে, সোরায়াকে উস্কে দিতে অপ্রয়োজনীয় কথা জিজ্ঞেস করে,
– “এত ছোট তুমি স্যার স্যার করছ! স্যারের সাথে আসলেই কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে নাকি তোমার?”
সোরায়া অজান্তেই ফাঁদে পা দিয়ে তাদেরকে বুঝাতে এবং নিজের জমিন শক্ত করতে বলল,
– “হ্যাঁ আছে! উনি আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন। মাঝে মাঝে কথাও হয়। তোমাদের মতো তো না, যাদের সাথে স্যারের কোনো সম্পর্কই নেই, জানেও না!”
এই কথা শুনেই দরজার পাশে দাঁড়ানো মাহিরের চোখ লাল হয়ে যায়। তার ভেতরে ভীষণ রাগ জমে ওঠে।
মাহির মনে মনে, গম্ভীর ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে,
– “এ কীসব আজেবাজে কথা বলছে! আমি তো ওকে ভালো করে চিনিই না। আর এখন যদি সবাই ভাবে আমি স্টুডেন্টদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়াই, তাহলে আমার সম্মান একেবারে ধুলোয় মিশে যাবে।”
তার মুঠো শক্ত হয়ে ওঠে, দৃষ্টিতে ঝলসে ওঠে ক্ষোভ। হঠাৎই দরজাটা জোরে ঠেলে ভেতরে ঢুকল মাহির। দরজা ঠেলতেই “ঠাস!” শব্দে সবাই একসাথে চমকে উঠল। দ্বাদশ শ্রেণীর সিনিয়ররা একসাথে আঁতকে উঠল। হাসি-ঠাট্টা যেন মুহূর্তেই গলার ভেতর আটকে গেল। পরিবেশে চাপা নীরবতা নেমে এলো। সোরায়া প্রথমেই তাকাল মাহিরের দিকে। তার চোখদুটো যেন জ্বলন্ত কয়লার মতো লাল, চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরা। একেকটা দৃষ্টি যেন ছুরির মতো বিদ্ধ করছিল ভেতরের সবাইকে। মাহিরের সেই চোখে এমন এক আগুন ছিল—যা দেখে কারও দাঁড়ানোর সাহস থাকবার কথা নয়।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়—সবাই ভয়ে সরে গেলেও, সোরায়া নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বুকের ভেতর ধুকপুকানি চললেও, মুখে তার ভয়ের কোনো ছাপ ফুটল না।
মাহির গম্ভীর, প্রচণ্ড রাগে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লো-
– “এখানে কি হচ্ছে?”
এক মুহূর্তের জন্যও কারও গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না।
বাকি সিনিয়রদের চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট, চোখ বড় বড়, ঠোঁট শুকনো।
শুধু লতা সামলে নিয়ে আমতা আমতা করে বলল—
লতা গলায় কাঁপন, চোখ নিচু করে:– “স্যার… কিছু না… তেমন কিছু হয়নি এখানে। শুধু… এই মেয়েটা আপনার ব্যাপারে…।”
কথা শেষ হওয়ার আগেই টিফিন টাইম শেষের ঘণ্টা বেজে উঠল। “ট্রিন ট্রিন ট্রিন” শব্দ যেন সবাইকে আরও চেপে ধরল।
লতা দ্রুত বিষয়টা গিলতে চাইলো। তাড়াহুড়ো করে বলল—
– “স্যার, ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। আমরা যাই, আমাদের ক্লাস আছে।” এই বলে সে দ্রুত দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। বাকি চারজনও তাকে অনুসরণ করে প্রায় দৌড়ের মতো গতিতে নিজেদের ক্লাসে চলে গেল।
এখন পুরো ফাঁকা ক্লাসে দাঁড়িয়ে আছে কেবল সোরায়া আর জুঁই। মাহির সোজা তাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার চোখ এখনও রাগে জ্বলছে।
মাহির কঠোর গলায়, সোরায়ার দিকে তাকিয়ে:–
“আজকের কলেজ শেষে মাঠে গিয়ে দাঁড়াবে। কথা আছে আমার তোমার সাথে।”
তারপর ঠান্ডা চোখে ঘুরে তাকাল জুঁইর দিকে। মাহির আদেশমূলক গলায় বলল:– “আর তোমাকে বলছি—তুমি আসবে না ওর সাথে।”
এই কথাটা এতটা দৃঢ়তা নিয়ে বলা হলো, যে জুঁইর শরীর শিউরে উঠল। মুহূর্তের মধ্যেই মাহির দরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল, তার পায়ের শব্দ করিডোর জুড়ে প্রতিধ্বনিত হলো ।ঘরটা আবার নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কিন্তু সোরায়ার বুকের ভেতর তখন ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, চোখ নিচু।
তার মনে এক অদ্ভুত ভয় ঢুকে গেল—
“এভাবে একা ডেকে উনি আমাকে কি বলবেন? আমি কি কোনো বড় ভুল করে ফেললাম? উনি কি ভাবছেন আমার সম্পর্কে? উনার চোখে এত রাগ কেন ছিল…”
সোরায়ার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে উঠল। বুকের ভেতর প্রশ্নের পর প্রশ্ন জমা হতে লাগল, কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
ঢাবি ক্যাম্পাস~
সকালের ক্লাসগুলো শেষ, ক্যাম্পাসের পুরো পরিবেশ শান্ত। রিমি আর মিরায়া ধীরে ধীরে ক্যাম্পাসের মূল গেটের দিকে হাঁটছে। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব কম, বাতাসে হালকা গন্ধ, গাছের ছায়া পথের পাশে দীর্ঘ হয়ে গেছে।
রিমি হালকা হাসি দিয়ে মিরায়ার দিকে তাকিয়ে বলল—“মিরা, তুই তো এখন সরাসরি বাড়ি যাবি তাই না?”
মিরায়া ধীরে ধীরে মাথা নাড়ল। চোখে হালকা অবসাদ, কিন্তু ঠিকঠাক উত্তরে বলল—“হ্যাঁ, বাড়ি ফিরব রে। আজকে আর কোনো কাজ নেই আমার।”
রিমি স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, হালকা হাসি ফোটাচ্ছে মুখে—
“আসলে, তোর বাড়ির দিকেই আমার একটা কাজ আছে। একসাথে যাই চল, পরে যেখানে নামার কথা, সেখানে নেমে যাব আমি।”
মিরায়া কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল—“তোর আমার বাড়ির দিকে কাজ! কী কাজ? আগে তো বললি না।”
রিমি হালকা ইতস্তত বোধ করে, কিন্তু চোখে মজা ফোটাতে বলল—“বললে কিছু মনে করবি না তো?…”
মিরায়া ভড়কে গিয়ে অভিমানী চোঁখে তাকিয়ে বলল— “এমন কি কথা বলবি, যাতে আমি কিছু মনে করতে পারি? তাড়াতাড়ি বল।”
রিমি হেসে বলল, চোখে একটু কৌতুক—“আসলে, আমি একটা ক্যাফেতে লাইভ গান পারফর্ম করি। আজকে সিডিউল আছে।”
মিরায়া চমকে চোখ বড় করে জিজ্ঞেস করল— “কি! তুই গান গাইতে পারিস? লাইভ পারফরমেন্সও করিস? কী বাজিয়ে পারফর্ম করিস রে? আমি তো শুনেছি লাইভ পারফরমেন্সে কোন না কোন ইন্সট্রুমেন্ট প্লে করতে জানতে হয়।” (অতিরিক্ত উৎসাহিত হয়ে)।
রিমি হাসিমুখে উত্তর দিল—“গিটার দিয়ে। গান বাজাই আমি।”
মিরায়া অবাক হয়ে আরেকবার বলল—“এত বড় কথা আজকে আমাকে বললি? আগে কেন বললি না? আমি আর কথা বলবো না তোর সাথে।”
রিমি হালকা কৌতুক ভরে উত্তর দিল—“আরে রে, আগে বলার সুযোগ হয়নি। এই বিষয়ে তো তেমন কথাই হয়নি। তাই তোকে জানাইনি। আজ তো জানলি চল, দেরি হয়ে যাবে আর দাঁড়ালে। রাগ করে না জান।”
মিরায়ার চোখে আগ্রহ, রিমির মুখে লুকানো আনন্দ।
দুজনেই হেসে ফেলল। ক্যাম্পাসের শান্ত পথ পেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দুজনের কথোপকথন যেন আরও মধুর হয়ে উঠল।
রিকশা ঠিক করলো তারা। একে একে উঠে রিকশায় বসল।
কিছু সময় পর~
পরবর্তী সময়ে রিক্সা চলতে থাকার এক পর্যায়ে একটা মোড়ে রিমি রিক্সা থামাতে বলে। মিরায়া একটু অবাক হয়ে বলল- “কিরে এখানে থামাতে বললি যে? এখানেই নেমে যাবি?”
রিমিও সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়ে বলল- “হ্যাঁ রে, ওই যে সামনে একটা ক্যাফেটারিয়া দেখছিস ওইটা তেই কাজ করি (আঙ্গুল তাক করে)।”
মিরায়া রিমির দেখানো দিকে চোখ দেয় ওই ক্যাফেটারিয়ায়। তারপর দুইজন দুইজনকে বিদায় জানিয়ে আলাদা হয় নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। রিমি নিজের কাজের পথে আর মিরায়া বাড়ির পথে।
চৌধুরী বাড়ি~
মিরায়া বাড়িতে ঢুকতেই রামিলা চৌধুরীকে ড্রয়িং রুমে দেখতে পায়। সে দ্রুত তার কাছে গিয়ে সোফায় পাশের জায়গায় বসে পড়ে। রামিলা চৌধুরী বই পড়ছিলেন। মিরায়াকে দেখে হাতের বইটা টি-টেবিলের উপরের রেখে মিরায়াকে এক হাতে জড়িয়ে ধরেন। রামিলা চৌধুরী ধীরে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে মাথায় চুমু দিয়ে বললেন-
“এইতো এখন বাড়িটা বাড়ি বলে মনে হচ্ছে।”
মিরায়া একটু দূরে সড়ে গিয়ে বলল- “মানে? এতক্ষন বুঝি বাড়ি বাড়ি ছিল না?”
রামিলা চৌধুরী হালকা হেঁসে বললেন-“বাড়িতে মানুষ না থাকলে বাড়ি কি বাড়ি মনে হয় বল? সকালে তোরা যে যার যার মতো বের হয়ে যাস। বাড়িতে আমি একা থাকি। বাড়ি ফাঁকা থাকলে মন কি আর মানে বল?”
মিরায়া রামিলা চৌধুরীর কথা শুনে একটু চুপ হয়ে গেল। কিন্তু পর মুহূর্তেই আবার বলে উঠলো-
“কেন মামনি? সব সময় তো এমনি হয়। তুমি তো এটাই বাড়িতে থাকতে, হঠাৎ আজ এমন বলছো কেন?”
রামিলা চৌধুরীর চোখের কোণ খানিকটা ভিজে গেল। তিনি আবেগ সামলাতে না পেরে মিরায়াকে মনে থাকা কথাটা বলেই দিলেন-
“আমার কিছুই ভালো লাগছে না রে মা। আমার ছেলেটা এত বছর পর দেশে ফিরলো। বাড়িটা যেন আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছিল তোদের সবার উপস্থিতি তে। কিন্তু রায়ানও কাজের জন্য চলে গেল, এখনো কোনো খবর নেই কবে ফিরবে কে জানে। ঠিক মতো পৌঁছেছে কি না তারও খোঁজ নেই।”
মিরায়া রামিলা চৌধুরীর চিন্তার কারণটা বুঝতে পারছে। তার নিজেরও বেশ চিন্তা হচ্ছে কিন্তু মুখে প্রকাশ করতেও নারাজ আবার মেনে নিতেও। মিরায়া এবার রায়ানের কথা ওঠাতে সুযোগ পেয়েছে একটু নিজের মনের প্রশ্ন গুলো করার। মিরায়া একটু শান্ত ও স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলল-
“আচ্ছা মামণি, এতোই যখন চিন্তা হচ্ছে একটা কল কেন করছো না? তার খবর টা তো শুনতে পারতে ফোন করলে।”
রামিলা চৌধুরী এবার হালকা হেসে উত্তরে বললেন-
“আরে বোকা মেয়ে আমেরিকায় কি বাংলাদেশের নাম্বার চলবে নাকি যে ফোন করে খোঁজ নিবো?”
মিরায়ার ধ্যান ফিরল সাথে সাথে-“ওহ্ তাই তো।” এই নাম্বারে তো আর কথা বলা সম্ভব নয় এটা বুঝতে পেরে মিরায়া পাল্টা প্রশ্ন করলো-
“তাহলে মামণি উনার আমেরিকান নাম্বার এ কল করো। তাহলেও তো হয়।” (সামান্য উত্তেজিত গলায় যেন উপায় খুঁজতে ব্যস্ত)।
রামিলা চৌধুরী হতাশা নিয়ে বললেন-
“নাম্বার তো নেই। রায়ানের সাথে সবসময় ভিডিও কলে কথা হতো। ব্যস্ততার মাঝে সপ্তাহে বা মাসে একবার করে কল করতো তাই আর তাকে দেখে কথা বলার সুযোগে নাম্বার এর প্রয়োজন পড়েনি।”
মিরায়াও এক মুহূর্তের জন্য আশা ছেড়ে দিয়ে আবার উত্তেজিত গলায় বলল –
“তাহলে মামণি অনলাইনেই কল দেও।”
রামিলা চৌধুরী হাঁফ ছেড়ে বললেন-
“সকাল থেকে অনেক বার চেষ্টা করেছি ঢুকছেই না। তাই তো আরো চিন্তা হচ্ছে। অনলাইনে এখনো আসেনি কানেক্ট হচ্ছে না।”
মিরায়াও এবার বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। মিরায়া কৌতুহলি হয়ে রামিলা চৌধুরীকে অনুরোধ করল-
“মামণি আইডি টা আমাকে একটু দেবে? আমি দেখি একবার চেষ্টা করে।”
রামিলা চৌধুরী একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন-
“তোর কাছে ওর আইডি নেই?”
মিরায়ার রায়ানের সাথে যা কথা হতো না মুখোমুখি আর না হয় ফোনেই, তাই আর কখনো প্রয়োজন পড়েনি অনলাইন প্লাটফর্ম এ অ্যাড হওয়ার। মিরায়া চুপসে যাওয়া মুখ ডানে বামে নাড়িয়ে বলল- “নাহ্ মামণি, নেই।”
রামিলা চৌধুরী অবাক হয়ে বলে উঠেন-
“এত দিনে এইটাও নিস নি? কি করেছিস তাহলে এত সময় বাইরে একসাথে টইটই করে?”
মিরায়া রামিলা চৌধুরীর কাছে এমন কিছু শুনবে আশা করেনি। সে সামান্য লজ্জায় পড়ে যায়। আর মনে মনে রায়ানের উপর সেসব দিনের রাগ ঝাড়তে ঝাড়তে বলতে থাকে-
“সেসব তোমার ছেলে কে জিজ্ঞেস করো কি করেছে
আমার সাথে। ঘুরানো, খাওয়ানো, উতলাই পড়া যত্ন আর নির্লজ্জের মতো কি সব কথা বলে আমাকে লজ্জায় ফেলা- এই করেছে তোমার ছেলে। অন্য কিছুর সময় কোথায় পেলাম!”
রামিলা চৌধুরীকে মিরায়া একটু অন্য ভঙ্গিতে বুঝাতে বলে-
“মামণি আসলে রায়ান ভাইয়ার সাথে তেমন সহজভাবে এখনো কথা হয়নি তাই আইডি টাও নেওয়া হয় নি। প্রয়োজন হবে কখনো তাও মাথায় আসেনি। তুমি এখন দাও না তাহলেই তো হয়।”
রামিলা চৌধুরী ছেলের বউয়ের তার স্বামীর প্রতি এই অদ্ভুত অদৃশ্য টানটা বুঝে পেরে একটু মুচকি হেঁসে নিজের ফোন থেকে রায়ানের আইডিটা বের করে মিরায়াকে দেন। মিরায়াও কৌতুহলি মনে রায়ানের আইডি লিংক টা নিয়ে প্রথমবারের মতো আইডিতে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় সম্পূর্ণ আইডি খালি। কিছুই নেই রায়ানের সম্পর্কে, এমনকি বাড়তি একটা ছবিও নেই। শুধু প্রোফাইলের ছবি আর কভার ছবি আছে। কভার ছবিটা আমেরিকায় তোলা বোঝা যাচ্ছে ব্যাকগ্রাউন্ড দেখেই। রায়ান বাইক রাইডিং এর ড্রেসআপ এ নিজের বাইকের উপর বসে আছে ছবিতে। মিরায়া না চাইতেও কয়েকবার জুম করে দেখলো রায়ানের ছবি টা। পাশে রামিলা চৌধুরী বিষয়টা খেয়াল করে মজার ছলে মিরায়ার কাছে ঝুঁকে প্রশ্ন করলেন-
“আমার ছেলেটা হেন্ডসাম আছে, তাই না রে?”
মিরায়া রায়ানের ছবির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হালকা মিষ্টি হেঁসে আনমনে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিল-
“হুম, অনেক বেশি হেন্ডসাম। একটু বেশিই।”
নিজের কথা বলে ফেলেই চোখ বড় বড় করে নিলো কি বলল এই মাত্র তা যেন মাথার ধরছে না। রামিলা চৌধুরী এইদিকে মুচকি হেঁসে যাচ্ছেন। মিরায়া আমতা আমতা করে বলল-
“আ…আমি ওইভাবে বলি না। উনি হেন্ডসাম তবে এতোও না। আমি ভুলে…।”
মিরায়াকে আর কথা বলতে না দিয়ে রামিলা চৌধুরী বলে উঠলেন – “হয়েছে হয়েছে, এই ভাবে বলেছিস, না ওই ভাবে তা জেনে আমার কাজ নেই। ঘরে যা, ফ্রেশ হয়ে নে গিয়ে।”
মিরায়া সোফা থেকে না উঠে উল্টো প্রশ্ন করল-
“মামণি তোমার ছেলের আইডিতে কিছু নাই কেন? এতো সোজাসাপ্টা সব। আমি তো ভেবেছিলাম এতো বড় মাপের ব্যক্তিত্ব আইডি বেশ ইন্টারেস্টিং হবে।”
রামিলা চৌধুরী ছেলের প্রশংশায় ছেলের বউকে একটু নরম করতে বললেন –
“আমার ছেলে এমনি সরল সোজা। বেশ লাজুক প্রকৃতির। খুব কারো সাথে কথাই বলতো না প্রথম দেখাতে তো আরো না। অনেক ইনোসেন্ট। সবাই বলতো রামিলা তোর ছেলে হয়েছে একখান মাশাআল্লাহ।”
মিরায়া হাসার ভান করে মাথা নাড়িয়ে আগের সবকিছু ভাবতে লাগলো। সে রামিলা চৌধুরীর বলা কথার সাথে রায়ানের কোনো মিলই পেল না মনে মনে ভাবছে আর বলে যাচ্ছে-
“কিহ্!..সরল? ইনোসেন্ট? এমন ঠোঁটকাটা নির্লজ্জ লোক নাকি ইনোসেন্ট। প্রথম দেখাতে কথাই না বলা ব্যক্তি, আমার সাথে প্রথম দিন দেখা হওয়ার পর থেকে ননস্টপ ফ্লার্ট করে যাচ্ছিল। আর কি? লাজুক! হাহ্! রাতের বেলায় চুম্মা চাটি ভরা মুভি দেখা মানুষ নাকি লাজুক। মামণি গো, তোমার ছেলেকে তুমি একটুও চিনো না। সবার সামনে যেমন সবার আড়ালে আমার সাথে ঠিক উল্টো। আরে না না আড়ালে কি এই লোক সবার সামনেও আমার সাথে তাই করে। হঠাৎ রাস্তায় কোমর ধরে টানবে একবার, বাইকে হাত জোর করে বুকে নিয়ে রাখবে একবার আবার রেস্টুরেন্ট পুরোটা বুক করে বলে সে হোটেল বুক করেনি সেখানে খাট নেই। কি পরিমান অসভ্য অশ্লীল একটা লোক। ধুর ছাই। সব আবার মনে পড়ে গেলো।”
রামিলা চৌধুরী মিরায়ার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললেন-
“কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি?”
মিরায়া হঠাৎ চমকে উঠে। সে বলল- “মামণি আমার কেমন যেন লাগছে ঘরে যাই। ফ্রেশ হয়ে নেই গিয়ে।”
এই বলে দ্রুত সিড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। রামিলা চৌধুরী পিছন থেকে বললেন- “রায়ানের খবর পেলে জানাবি কিন্তু চেষ্টা করিস যোগাযোগ করার।”
মিরায়া উঠতে উঠতে বলল-“আচ্ছা মামণি।”
তারপর নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগটা ছুড়ে ফেলে ফ্রেশ হতে না গিয়ে সোজা বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ল ফোন নিয়ে। রায়ানের আইডিতে যদিও ঘাটার মতো কিছু নেই তবু মিরায়া বার বার রায়ানের আইডিতে গিয়ে প্রোফাইল পিকচার আর কভার পিকচার টা জুম করে দেখছিল। রায়ানের বাইকের উপর ছবিটা দেখে মিরায়া মুচকি হেঁসে একটু তাচ্ছিল করে বলে উঠলো-
“ইস্! ছেলে মানুষ হয়েও এতো সুন্দর হওয়ার দেমাক দেখাচ্ছেন বুঝি কোনো প্রকার যোগাযোগ না করে, মিস্টার অশ্লীল?”
আত্মার অঙ্গীকারে অভিমোহ পর্ব ৩৭
হালকা হেঁসে মিরায়া রায়ানের ফ্রেন্ড লিস্ট টা দেখলো রুদ্র, রামিলা চৌধুরী আর মাহির ছাড়া আর কেউ নেই। সেটাই স্বাভাবিক এতো সময় কোথায়? এত কম বয়সে একজন সফল ব্যবসায়ী হওয়ার পিছনে অনেক কঠোর পরিশ্রম আছে সময় নষ্ট করার সময় রায়ানের কাছে কখনোই ছিল না। রাইয়ানের ফ্রেন্ডলিস্টে বাড়ির মানুষ ছাড়া অন্য কাউকে না দেখে মিরায়া অবাক হলেও বেশ খুশি হয়। রিমির কথা শোনার পর সে ভাবছিল- “সত্যিই তো, কত মেয়েই হয়তো তাকে পছন্দ করে আমেরিকায়। আর এই দিকে আমি বাংলাদেশের সাধারণ বাঙালি মেয়ে।” তবে এখন রায়ানের আইডিতে কোনো মেয়ের অস্তিত্ব না দেখে মিরায়া খুশি মনে রায়ানকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট স্যান্ড করে নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল।