আত্মার আগলে পর্ব ১
সানজিদা আক্তার মুন্নী
— আমি বিয়ে করব না, আমি কবুল বলব না! আমি এত বড় কলঙ্কের অধিকারীনী কখনোই হতে পারব না!
মেয়েটি একে একে এই শব্দগুলো উচ্চারণ করে । তার চোখে অশ্রু জমে, আছে”! সে চিৎকার করে, এ কথা গুলো বলে”! , তবে তার এই কথাগুলো শুনে সামনে বসে থাকা লোকটির কিছুই যায় আসে না।
লোকটি তখন নির্বিকারভাবে পকেট থেকে ফোন বের করে, একটুও দ্বিধা না করে মেয়েটির সামনে ভিডিও ক্লিপ তুলে ধরে। তারপর দাঁত চেপে হুমকির সুরে বলে
— যদি বিয়ে না করো, তবে তোমার ভালোবাসার ছোট ভাইজান আর এ দুনিয়ার আলো দেখতে পারবে না, বুঝলে!
মেয়েটির বুকের ভেতরটা যেন মুহূর্তে ছিঁড়ে যায়। নিজের ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ চোখে ভেসে ওঠে। আতঙ্কে কেঁপে ওঠে সে, নিজের আত্মা যেন একদম শুষে নিল এই মুহুর্তে কেউ। কান্না গলায় চেপে বলে,
— আল্লাহর দোহাই লাগে, আমার ভাইজানকে আর কিছু করবেন না। আমি সব করব। আপনি যা বলবেন, আমি সব করব, সব!
লোকটি আয়েশে ফোনটি পকেটে ঢুকিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বলে,
— সব তো করতেই হবে তোমায়। তবে আগে বিয়েটা করে নাও। তাড়াতাড়ি সাইন করো আর কবুল বলো।
মেয়েটি চারপাশে তাকায়, তার চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে নারী গার্ডরা”! এরাও মেয়ে কিন্তু চোখের সামনে অন্য একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে দেখেও কিছু বলছে না “! উল্টো এরাই তাকে এখানে অপহরন করে নিয়ে এসেছে “! আর রুমে শুধু কাজি এবং সেই লোক আর কেউ নেই “!
কাজি যখন রেজিস্ট্রি পেপার এগিয়ে দেন, তখন তার হাত কাঁপতে থাকে। কাঁপা কাঁপা হাতে সাইন করে “! এটা শুধু সাইন ছিল না, এটা তার জীবনের এক কলঙ্ক। যেই কলঙ্কের বোঝা সারা জীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হবে।
তখন কাজি বলেন,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
— মা, কবুল বলে ফেলো।
মেয়েটির গলা চেপে ওঠে। কষ্টের মাঝে হাজারো শব্দ লুকিয়ে আছে, কিন্তু “কবুল” শব্দটি যেন বেরোতেই চায় না। চোখের সামনে ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহ ভাসছে বারবার , চোখে অশ্রু বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে থামছেই না । কিন্তু অবশেষে সে গলা দিয়ে অনেক কষ্টে একবার “কবুল” বলে”!
এই “কবুল” শব্দটি মনে হয় তার সারা জীবনের এক অভিশাপ। এক সময় এই শব্দ টি ছিলো তার ভাবনায় নতুন কিছুর সূচনা “! কিন্তু আজ সেটা এক কলঙ্কের সূচনায় পরিনত হলো “!
আবারও ভিতরে নিজের কষ্টে কে চেপে ধরে, তিনবার “কবুল” বলে।
মেয়েটি এখন আর নিজেকে সামলাতে পারে না। তার শরীর ভেঙে পড়তে চায়, মনটা আর কুলিয়ে উঠতে চায় না। সারা পৃথিবী যেনো।অন্ধকার হয়ে গেছে। সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তবে কাঙ্ক্ষিত লোকটি ঠিকই তাকে আগলে ধরে। মনে হয় তার অন্ধকার পৃথিবী থেকে একটুও শান্তি নেই। কোলে তুলে, সাবধানে তাকে নিয়ে উক্ত মহল থেকে বেরিয়ে আসে এবং গাড়িতে তুলে নেয়।
গাড়িটি দ্রুত ছুটে যায় অজানা এক গন্তব্যে,
২ ঘণ্টা পর…
জ্ঞান ফেরার পর সে নিজেকে একটি বিলাসবহুল ঘরে আবিষ্কার করে। চারপাশে সোনালি রঙের ঝাড়বাতি, মখমলের পর্দা, আর নরম বিছানার ছোঁয়া। মুহূর্তেই বুঝে যায়, সে কোথায়। এটা “বড় তালুকদার মঞ্জিল।” এখানে সে শতবার এসেছে। হাজার বার এসেছে “! কিন্তু আজ এই মহল তার খুব অচেনা আর ভয়ংকর মনে হচ্ছে।
তবে নিজের দিকে পরখ করলো যখন খেয়াল করলো “! ওর নিজের পড়নে বোরখা নেই, সাদা একটি থ্রী পিস । আর মাথায় বেন্ডেজ করা হাতে বেন্ডেজ করা “! তার মন আতঙ্কে আবারও ভরে গেল। কী হয়েছে তার সঙ্গে?এসব নিয়ে যখন বিচিলিতে হয়ে আশেপাশে তাকায় “!
তখনি চোখে পড়ে একজনের উপর, যে সোফায় আরামে বসে আছে”! লোকটির পরনে কালো পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা গলায় একখানা সাদা চাদর বাঁজ করে ঝুলানো। আর সেই লোকটি গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারি দিকে।
“! নিজের অজান্তেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে,
–“এ… এহসান চাচা!”
লোকটি ধীরে ধীরে উঠে তার দিকে এগিয়ে আসে।সেই লোকটির চেহারায় এক অদ্ভুত ভঙ্গি।
লোকটি তার সামনে এসে স্থির হয়ে বসে শান্ত অথচ কঠোর কণ্ঠে বলে,
— “আগে আমি তোমার চাচা ছিলাম। এখন আমি তোমার স্বামী। আর আমি তোমার আপন দাদার সন্তান নই।”
এই কথায় শুনে সে স্থবির হয়ে যায়। কী বলবে, বুঝতে পারে না। সবকিছু মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আজ তার এই দিনটাও দেখতে হচ্ছে, যাকে কিনা সবসময় চাচা ভেবে এলো, সেই তাঁকে বাজেভাবে চক্রান্ত করে বিয়ে করল! আর তার এমন একজনের সাথে বিয়ে হলো, যে কিনা বর্তমানে তার আপন পরিবারে ঘোর শত্রু!
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অনেক কষ্টে সে ঐ লোকের ন্যায় তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে,
— “আমি কি আপনার কোনো নিকৃষ্ট খেলার অংশ? নাকি আমার বাপ-চাচার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো মাধ্যম?”
লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
— “তুমি কোনো খেলার মতো তুচ্ছও নও। আবার তুমি প্রতিশোধের কোনো উপকরণও নও।”
তার ঠোঁট কাঁপে। তবুও সে সাহস করে বলে,
— “তাহলে কি আমি…”
লোকটি এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে। এরপর গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— “তুমি সে যে রয়েছে আমার #আত্মার_আগলে ”
এতে সে এত কিছুর মধ্যেও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— “ইয়া আল্লাহ! এ কী শুনালেন? আপনাদের মতো মানুষরূপী কুকুরদেরও আত্মা আছে?”
এতে সেই ব্যক্তি একটুও রাগ দেখায় না। উল্টো তাকে তাচ্ছিল্য করে বলে,
— “একদম নিজের বাপ-দাদার মতো হয়েছিস—স্বার্থপর, আর মীরজাফর! আমরা যদি পশু হই, তো তোর বাপ-চাচাও পশু। যতই হোক, এক রক্ত!”
— “আর যাই হোক, আমার বাপ-চাচারা পথে-ঘাটে যেখানে ইচ্ছে সেখানে খুন তো করে না! তাই আপনাদের সাথে তুলনা করবেন না।”
— “তোর বাপ-চাচা খুনি না হলেও স্বার্থপর মীরজাফ ঠিকই! আর তুই সেই মীরজাফরদের সন্তান!”
— “ওহহ, বুঝেছি। তা এখন কী আমায় মেরে ফেলবেন? নাকি ভোগ করে মারবেন? কোনটা?”
লোকটি তার একদম নিকটে চলে আসে। আর নিজের শাহাদাত আঙুল তার ঠোঁটে রেখে ফিসফিসিয়ে বলে,
— “হুশ! চুপ। এভাবে বলতে নেই! তুই তো আমার #আত্মার_আগলের একাংশ। তোকে মেরে ফেললে আমি আর বেঁচে রইব কই? আর রইল ভোগের কথা—তুই কোনো ভোগের জিনিস নস। কিন্তু ভোগ আমি তোকেই করব, তবে ভোগ করে ফেলে দেব না, সারাজীবন রেখে দেব।”
এমন কথা শুনে সে নিজের চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিশ্বাস নেয়। অতঃপর চোখ খুলে লোকটির আঙুল নিজের থেকে সরিয়ে দাঁত চেপে বলে,
— “ভুলে যাবেন না, আমিও মুস্তফা তালুকদারের নাতনি। আর আপনাদেরই এক রক্ত। তাই আমার দিকে হাত বাড়ালে হাত কেটে রেখে দেব!”
লোকটা আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
— “বলেছিলাম না, একদম বাপ-দাদার মতো হয়েছিস! । যারা কিনা কাজের বেলায় লুকিয়ে থাকে, কথার রাজ্যে রাজত্ব করে “! আর বাকি রইল তোর দিকে হাত বাড়ানোর কথা “!হাত তো অনেক আগের কথা। তোর সাথে সংসার করে ছয়-সাতটা সন্তানের বাপ হয়ে দেখাব ইনশাআল্লাহ!”
সবকিছুর আগে
চলুন পরিচয় জেনে নেই!
এই যে অচেনা রমনী, তার নাম মাহজাবিন মেহনূর। তাকে আমরা মেহনূর বলেই ডাকবো। ছোট তালুকদার মঞ্জিলের মধ্য মনি, তাদের বাড়ির পরিবেশ এমন যে, একে একে বহু বছর ধরে নামেই যেন রয়েছে ইতিহাস। তার বয়স ১৯, এবং বর্তমানে মাদ্রাসায় আলেম জামাতে পড়াশোনা শেষ করেছে। জীবনটা ঠিক মাধুর্যের মতো, কিন্তু তার মধ্যে এক শূন্যতা রয়েছে আর তা হলো ওর মা নেই, তবে বাবা আছেন। ওর বাবা, মাজহারুল তালুকদার, এককথায় একজন সম্মানিত ব্যক্তি। যার পদচারণায় গ্রামে শোনা যায় সম্মান, শ্রদ্ধা, আর এক নীরব শক্তি। তবে গ্রামের সবার মধ্যে নয়
মেহনূর তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। বড় ভাই, মেহরাজ তালুকদার, একজন ডাক্তার, বর্তমানে দেশের বাইরে, যেখানে জীবনের নানা রহস্য তাকে তার লক্ষ্য পেতে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। ছোট ভাই, মেহরুব তালুকদার, পরিবারের ব্যবসা পরিচালনায় সম্পূর্ণভাবে জড়িত। সে যেন তার বাপ-দাদার স্বপ্নের উত্তরাধিকার, সব ধরনের ব্যবসায় অংশগ্রহণ করে নিজের অবদান রাখছে—এ এক অদৃশ্য যুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই।
মেহনূরের বাবা এবং তার চাচারা ৬ জন, যার মধ্যে তার বাবা সবচেয়ে বড়, অভিভাবকের মতো। তাদের মধ্যে প্রতিটি ব্যক্তিই এক একটা শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী,
তার চাচাদের মধ্যে: ১. তৌফিক আজিজ তালুকদার (দ্বিতীয় নাম্বার চাচা), যিনি কখনও অন্ধকারে, আবার কখনও আলোতে, সব সময় এক শক্তিশালী পরিকল্পনার অধিকারী। ২. আবু তাজিম তালুকদার (তৃতীয় নাম্বার চাচা), যার দিকে তাকালে মনে হয়, প্রকৃতির রহস্যও তার হাতে খেলা করে। ৩. সাইফুল ইসলাম তালুকদার (চতুর্থ নাম্বার চাচা), যার চুপচাপ অবস্থান সত্ত্বেও অনেকে তাকে অবাক হওয়ার মতো কিছু বলতে জানে না। ৪. রফিকুল ইসলাম তালুকদার (পঞ্চম নাম্বার চাচা), যার চুপিসাড়াচালনায় কখনো শকুনি হয়ে ওঠে, কখনো সহানুভূতির প্রতীক। ৫. মনসুর আহমেদ তালুকদার (ছয় নাম্বার চাচা), যার রাগি তার সব “!
তবে, তার ফুফু বর্তমানে নেই
তার দাদা, মুস্তফা তালুকদার, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, যিনি বর্তমানে গ্রামের দ্বিতীয় গ্রাম প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। “তবে আমি জানি এখন আপনাদের কাছে একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেন তাকে “দ্বিতীয় গ্রাম প্রধান” বলা হলো, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, গল্পে জানতে পারবেন “! মেহনূর আর তার ভাই সহ তার চাচাতো ভাই বোন ১৫ জন “!
মেহনূরের পরিবার একটি জমিদারি পরিবারের অংশ, যেখানে তাদের প্রধান ব্যবসা কৃষি ও ভূমি পরিচালনা। তারা জমি চাষ,মাছ চাষ, পোল্ট্রি ফার্ম, এবং বাণিজ্যিক পণ্য বিক্রির সাথে জড়িত। তার বাবা ও চাচারা স্থানীয় বাজারে কৃষিজ পণ্য, মাছ, মাংস বিক্রি করেন এবং হাজারো কারখানাও চালান। জমির উন্নয়ন এবং নির্মাণ কাজও তারা করেন”!
শুধু কি গ্রামে মুস্তফা তালুকদারের গ্রাম দিয়ে হবে না? নয়! তাই তো, তার ছোট দুই ছেলে—তাদের বড় ব্যবসায়িক কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। তবে, এই জমিদারি পরিবারের মাঝে, আবার কিছু অদৃশ্য খুনাখুনি রয়েছে—নিজেদের মধ্যে, কিন্তু নিজেদের পরিবারের মধ্য নয় “!
এই যে অচেনা লোক, তার নাম এহসান তালুকদার। বয়স ২৮, কিন্তু বয়সের চেয়ে তার জীবনের সঙ্গতি এবং অর্জনই তাকে আলাদা করে দাঁড় করিয়েছে। এক হাতে নিজের বিশাল ব্যবসা সামলায়, আর অন্য হাতে বড় তালুকদার মঞ্জিলের সমস্ত কার্যক্রমও পরিচালনা করে। তার মধ্যে —এখানে রাজনীতি, ব্যবসা, আর ব্যক্তিগত জীবন একসাথে গেঁথে গেছে। তবে, এখানেই শেষ নয়; তার জীবন এক অদৃশ্য যুদ্ধের মতো!
এহসানের বাবা, মুনিরুল তালুকদার, একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। মুস্তফা তালুকদারের বড় ভাই, তিনি গ্রামের প্রধান মাত্বব্বর, যিনি শুধু গ্রাম প্রধানের দায়িত্বেই সীমাবদ্ধ নন, বরং তিনি গ্রামের উন্নয়ন, ন্যায়বিচার এবং সমাজের প্রতিটি সমস্যার সাথে যুক্ত। একসময়, মুস্তফা আর মনিরুল দুই ভাইয়ের পরিবার ছিল এক আনন্দময় পরিবার, কিন্তু কিছু কারণে আজ তাদের সম্পর্ক শুধুই শত্রুতা, বিদ্বেষ, আর খুনাখুনির মধ্যে রূপান্তরিত হয়েছে। এক সময়ের স্নেহময় সম্পর্ক এখন এক খন্ড মৃতদেহের মতো, যার প্রতিটি কনুই ছড়িয়ে পড়ে তাদের জীবনে। এহসান মেহনূরের চাচা সম্পর্কে।
এহসান, এনাম ও এমরান—তিন ভাই আর এক বোন। তাদের নাম,মা এনিসা বেগমের আকারে রাখা।তাদের, সবার মধ্যে সবচেয়ে ছোট এহসান, আর তার ছোট বোন ছিল এশা সুলতানা।
এশা সুলতানা, যে কিনা মেহনূরের সাথে পড়াশোনা করছে, তার সম্পর্কটা ছিল আরো জটিল। দু পরিবারের মধ্যে হাজারো বিবাদ থাকলেও, তারা গোপনেই ভালো বন্ধু ছিল। তবে, পরিবারদের ভিতরে ছিল এক কঠিন লুকানো দ্বন্দ্ব।
এহসানের বাবা, মনিরুল তালুকদার, গ্রামে প্রধান মাত্বব্বর। গ্রামে তাদের শব্দ এক বিশাল দাপট, কারণ তারা শুধু শক্তিশালী নয়, বরং ব্যবসা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও প্রভাবশালী। তাদের পরিবারের ব্যবসা ছিল অনেক বড়; জমি, পাট, চিনি মিল—সবই ছিল তাদের হাতে। গ্রামের মানুষ তাদের কথা মেনেই চলে, আর তাদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে সাহস পেত না কেউ। সেই শক্তির কারণে, মনিরুল তালুকদারের পরিবারের নাম ছিল সবার মুখে। এই বড় তালুকদার মঞ্জিলের কেউ যদি দশটা খুন করেও বসে, গ্রামের মানুষ এর সামনে কিন্তু তাও কেউ একটা শব্দও বের করবে না, মুখ থেকে “!এত দাপট তাদের।
বর্তমান 🌸🌸🌸
মেহনূর এহসানের এতটা জঘন্য কথা শুনে রাগে ফেটে পড়ে। তীব্র ক্রোধে সে এহসানের কলার চেপে ধরে, দাঁত চেপে বলে,
— “লজ্জা করে না নিজের ভাতিজিকে বিয়ে করতে? লজ্জা লাগে না এমন বেশরম কথা বলতে? একটুও লজ্জা করে না? একটুও করে না?!”
এহসান আবারও তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে, অপমানের সুরে বলে,
— “নাহ, লজ্জা করে না। নিজের বউয়ের সাথে বেশরমি কথা বলতে লজ্জা কাপুরুষদের করে আমার না “! আমি তো আর তোর বাপ চাচার মতো কাপুরুষ না তাই লজ্জা করে না “!আর নিজের বউয়ের সাথে যদি বেশরমি কথা না বলি, তবে কি পড়ার লোকের সাথে বেশরমি কথা বলব বল?!”
মেহনূর চিৎকারে করে উঠে , তার চোখে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে,
— “আপনি একটা নিচ মানুষ! এতটা নিচ, এতটা নিচ, এতটা নিচ যে নিজের ভাতিজাকে বিয়ে করেছেন! তাও জোর করে !”
এহসান মেহনূরের থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিতে নিতে বলে
— “আলি (রা.) কিন্তু ফাতেমার (রা.) চাচা ছিলেন।”
এতে মেহনূর এতটাই রেগে যায়, তার শরীর কেঁপে ওঠে। সে এহসানের থুতনি নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরে, চোখে ক্ষোভের আগুন নিয়ে বলে,
— “খবরদার! এতটা নোংরা মুখে আলি (রা.) আর ফাতেমার (রা.) মতো পবিত্র মানুষের নাম নিবেন না! মুখ ঝলসে যাবে!”
এহসান মেহনূরের হাত নিজের থেকে সরিয়ে, মেহনূরের হাত চেপে ধরে, দাঁত চেপে বলে
— “এই এহসান তালুকদারের শরীলে স্পর্শ করা তো দূরের কথা, কেউ একটা লোমও স্পর্শ করার সাহস পায়নি আজ অব্দি। কিন্তু তুই এই এহসান তালুকদারের কলার চেপে ধরেছিস, থুতনিও চেপে ধরেছিস! শুধু তোর ছোয়া আমার জন্য হালাল বলে আজ তোকে ছেড়ে দিলাম, নয়তো!
মেহনূর নিজের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, দাঁত চেপে বলে,
— “নয়তো কি? নয়তো কি?! আপনি একটা পশু, একটা জানোয়ার!”
এহসান মেহনূরের হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরে, বলে
— “নয়তো, এই দুই হাত এখন এই মাটিতে থাকতো, শরীলে নয়! আর আমি পশু জানোয়ার যাই হই, এই পশুরি #আত্মার_আগলে তোকে সারাজীবন তাকাতে হবে, মনে রাখিস!”