আত্মার আগলে পর্ব ২

আত্মার আগলে পর্ব ২
সানজিদা আক্তার মুন্নী

মেহনূর নিজের দিকে একবার তাকায়। অতঃপর দাঁত চেপে এহসানের দিকে তাকিয়ে বলে,
— আমার কাপড় কে চেঞ্জ করেছে?
এহসান সোজাসাপটা উত্তর দেয়,
— আমি।
মেহনূরের আত্মা কেঁপে উঠে! চিৎকার করে বলে,
— তোর এত বড় সাহস হয় কী করে আমার অনুমতি ছাড়া আমায় স্পর্শ করা! বল।
এহসান কঠোর গলায় বলে,
— নিজের সীমা পার করিস না, মেহনূর। আমি তোর স্বামী। সম্মান দিয়ে কথা বল, আর তোর সর্বাঙ্গে স্পর্শ করার তাগিদ আছে আমার!
মেহনূর পাগল হয়ে যাচ্ছে। নিজের মাথা নিজে চেপে ধরে বলে,

— আমি মানি না এই বিয়ে, মানি না এই স্পর্শের অধিকার! আমি চাই না কোনো নোংরা হাত আমার শরীরের পবিত্রতা নষ্ট করুক। আমি সবসময় কোনো পবিত্র হাতের স্পর্শ পেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এখন…
এ বলেই ডুকরে কেঁদে ওঠে মেহনূর!
এহসান মেহনূরের চোখের জল জোর করে মুছতে মুছতে বলে,
— চিন্তা করিস না। এই হাত এখনও তো শরীরে স্পর্শ করেনি। তোকে কাপড় চেঞ্জ একজন মহিলাই করিয়ে দিয়েছে! তবে এটা ভাবিস না, এই হাত তোর শরীরে স্পর্শ করবে না। এই নোংরা হাত তোর সর্বাঙ্গে বিচরণ করবে, দেখিস।
মেহনূর এহসানের এমন কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। উল্টো আরও তেজি গলায় বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— আমার বাপ-চাচাও কিন্তু কম যায় না, এহসান তালুকদার। আপনি আমায় এভাবে বিয়ে করলেই কি হবে? পেয়ে তো যাবেন না। এতক্ষণে হয়তো এই খবরটি তাদের কানে পৌঁছে গেছে। নিশ্চয়ই তারা আমায় এখান থেকে, এই জাহান্নাম থেকে উদ্ধার করবেন।
মেহনূরের এত আত্মবিশ্বাস দেখে এহসান দাঁত কেলিয়ে হেসে ফিসফিসিয়ে বলে,
— এত ভরসা করা ঠিক নয়। আমি তোর বাপ-চাচাকে আগেই ঠাইট দিয়ে রেখেছি! এ কথা বলে দিয়েছি যে, যদি তারা কোনো রকম দন্দ ফাঁকায়, তবে তাদের আদরের মেয়ে মেহনূর, মানে তুই, একেবারে শেষ…
এ বলে এহসান হাসতে থাকে।
মেহনূর চিৎকার করে,
— তুই এক…
আর কিছু বলতে পারে না। তার আগেই দরজায় কড়া নাড়ে! এহসান বলে উঠে,

— চলে আসো।
দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন মনিরুল তালুকদার আর তার বেগম, সাথে তার বড় ছেলে এমরান আর তার বেগম আমেনা এবং এশা।
মেহনূর তাদের দেখে নিজের মধ্যেে প্রান ফিরে পায় কোনো কিছু পরোয়া না করে এক লাফে উঠে যায় বিছানা থেকে।
মনিরুল সাহেবের সামনে যায় গিয়ে তার হাত নিজের হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে অভিযোগি গলায় বলে,
— বড় দাদা, দেখুন না। এহসান চাচা কী শুরু করেছেন? এসব কি হয়, বলুন না বড় দাদা। আমি কী করে উনার স্ত্রী হতে পারি? বলুন না বড় দাদা, বলুন না!
মনিরুল সাহেব মেহনূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
— এসব সবই তোর বাপ-চাচার বোকামির ফল, রে মেহনূর। এখানে আমার কিছু করার নাই, রে।
মেহনূর আঁতকে উঠে উনার হাত ছেড়ে দেয়। তারপর এনিশা বেগমের হাত ধরে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে,
— বড় দাদু, তুমি কিছু বলো। এটা তো অন্যায়। ও বড় দাদি, আমি তোমার নাতনি না? তুমি আমার দাদু না? তাহলে এটা কী করে সম্ভব, বলো ও বড় দাদু!
উনিও মাথা নিচু করে নেন।
মেহনূর এমরানের কাছে যায় আর বলে,

— বড় চাচা, তুমি কিছু বলো। এটা কি ঠিক? বলো, এহসান চাচা কি ভুল করেনি?
— ও চাচিআম্মা, তুমি বলো না। এটা ভুল না খারাপ না!
তারাও কিছু বলেন না।
মেহনূর এশার কাছে যায়। ওর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
— এশা, তুই তো কিছু বল। এশা, তুই তো কিছু বল। এশা, এটা তো আমার জন্য কলঙ্কের। বল, এশা! এশা, বল না। তুই তো আমার সব। তুই কি আমার পাশে থাকবি না?
এশা কি বলবে? মেহনূরের এমন আকুতি শুনে সে নিজেও কান্না করে দেয়। নিজের ভাইজানের প্রতি ঘৃণার পাহাড় জমেছে। মেহনূর তো তার কলিজার টুকরো। সেই ছোটকাল থেকে তাদের বন্ধুত্ব। যখন মেহনূরের মা ক্যান্সারে মারা যান, তখন এভাবে কেঁদেছিল। আর আজ এভাবে কাঁদতে দেখলো মেহনূরকে! নিজের প্রিয় বান্ধবীকে কাঁদতে দেখে নিজেও চোখের জল ছেড়ে বলে,
— আ-আমার কিছু করার নেই রে জান। আমি সত্যি এতটা জঘন্য কিছু কখনো সমর্থন করি না।
তখন মনিরুল সাহেব বলেন,

— দেখ মেহনূর, একটা একদমই হালাল। তাই এতে আমি কিছু করতে পারব না, নারে। এটা এহসান আর তোর বাপ চাচার মধ্যে চুক্তি “!
মেহনূরের এমন আকুতি মিনতি দেখে “! নিজের অন্তরও কাঁদছে তার”! মনিরুল সাহেব যতই নিজের ছোট ভাইকে দেখতে না পারেন তবে তার নাতি নাতিন দের যথেষ্ট ভালোবাসেন “! আর তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেহনূর কে “! কিন্তু উনার তো কিছু করার নেই মেহনূরের বাপ দাদারাই তো এই জঘন্য চুক্তি করেছে “! অবশ্য এই প্রস্তাবটা নিজেই দিয়েছিলেন এটা মনে করে যে ওরা কখনোই রাজি হবে না মেহনূর কে এহসানের হাতে তুলে দিতে কিন্তু ঐ মানুষ গুলো এটাও মেনে নিয়েছে”!
সবাই ক্ষক ত্যাগ করেন একে একে। মেহনূর এমন উক্তি শুনে পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কি করে এমন একটা কান্ড করার পর সবাই এত শান্ত করতে পারে “! লজ্জা লাগছে এদের একসময় আপন ভাবতো সে নিজের উপর লজ্জা লাগছে “!
তখনই এশা চলে যেতে নিলে এশার হাত খাবলে জড়িয়ে ধরে বলে,

— না, না, না। তুই আমায় ছেড়ে যাবি না।
এশা আমতা আমতা করে বলে,
— আ-আ… আমি তোদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে থেকে কী করব বল।
এতে মেহনূর চিৎকার করে বলে,
— তোর ভাই একটা পশু। উনার সাথে আমার কিছু নেই। তুই যাবি না আমায় ছেড়ে। তুই তো কসম করেছিস, কখনো আমায় একা করে যাবি না। তাহলে বল না কেনো যাবি।
মেহনূরের পাগলামি দেখে এশা নিজেকে সামলাতে পারে না। তাও মেহনূরের গাল আলতো করে ছুঁয়ে বলে,
— থাকবো। সারাজীবন থাকব তোর। যাব না আমি তোকে ছেড়ে।
মেহনূর এশাকে বলে,
— আমায় বাড়ি যেতে দে, এশা। আমি বাড়ি যাব। আমার ছোট ভাইজানকে তোর ভাই অনেক মেরেছে। আমার ছোট ভাইজান এর অনেক কষ্ট হচ্ছে “!এশা আমার ভাইজানকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। এশা, তুই আমায় নিয়ে যা।
তখনই বাজখাঁই কণ্ঠে এহসান বলেন,

— ব্যাস, অনেক হয়েছে। এশা, তুই তোর কক্ষে যা!
মেহনূর এশাকে আরও শক্ত করে ধরে বলে,
— না, না, না। তুই যাবি না।
এশা পড়ে যায় বিপদে। কী করবে? একদিকে ভাইজানের আদেশ, আরেক দিকে প্রাণপ্রিয় বান্ধবী!
এর মধ্যে আবারও এহসান চিৎকার করে বলে,
— এশা, তুই যাবি।
এতটা ভয়ংকর চিৎকারে মেহনূর ভয়ে এশাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এশা যায় না। সাহস নিয়ে এহসানকে বলে,
— তা-তা কি একটু ভাইজান…
এহসান এ কথা শুনে।অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় এশার দিকে। “এশার মনে হয়, এখন চলে যাওয়া-টাই উওম!” ভাইজান নিশ্চয়ই পারবে মেহনূরকে সামলাতে? আর স্বামী স্ত্রীর মধ্যে থাকাটা এখন ঠিক নয়!
তাই এশা মেহনূরকে ছেড়ে আলগোছে চলে যায় “!”মেহনূর পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কোনোদিন এমন পরিস্থিতির শিকার হবে, কখনো কল্পনাও করেনি!” এতটা নিষ্ঠুরতার শিকার হবে কখনো কল্পনা করেনি সে!
কানে খট করে শব্দ আসে, তখন ধ্যান ভাঙে মেহনূরের। “এহসান দরজা লাগিয়ে তার দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু মেহনূর এটা দেখে ঘাবড়ে না গিয়ে উল্টো, এহসনের সামনে গিয়ে নিজের দুহাত জোর করে কান্না করতে করতে আকুতি করে বলে,”

— “আ..আ আপনি দয়া করে আমায় তালাক দিয়ে দিন! আপনার স্ত্রী হওয়ার মতো কলঙ্কে কলঙ্কিত হয়ে বাঁচতে পারব না আমি এই সমাজে! তালাক দিয়ে দিন আমায়!”
এহসান মেহনূরের হাত নিজের দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে বলে,
— “যেদিন থেকে নিয়ত করেছি তোকে বিয়ে করব, সেদিন থেকেই তুই আমার সব কলঙ্কে কলঙ্কিত! আর এমন হাজারটা কলঙ্ক নিয়েই তোকে বাঁচতে হবে সারাজীবন!”
মেহনূর এক ঝটকায় নিজের হাত সরিয়ে নেয় এহসানের থেকে আর দাঁত চেপে বলে
, — “আপনি একটা অমানুষ!”
এহসান এসবে পাত্তা না দিয়ে বলে,
— “চুপচাপ ওযু করে নামাজ পড়, অনেক আগে এশার আযান হয়ে গেছে!”

এ বলে ক্যাবিনেট থেকে টুপি নিয়ে, চাদর খানা মেলে গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে, উদ্দেশ্য মসজিদে যাওয়া। কিন্তু যাওয়ার সময় বেলকনির দরজা আর রুমের দরজা লক করে যায়।
মেহনূর কি করবে বুঝতে পারছে না! তার পরিবারে মানুষগুলো হয়তো অস্থির হয়ে গেছে! আর তার ভাইজান এখন কি করছে, আল্লাহই ভালো জানেন! তবে সে নিজের মাথায় গেঁথে নেয়, এই বাড়ি থেকে বের তাকে হতেই হবে, আর সে নিজের বাড়ি যাবেই যাবে!
কিন্তু সবকিছুর আগে নামাজ পড়াটা জরুরি! তাই রুমের বাথরুমে গেলো, ওযু করে এসে অনেক খুঁজে খুঁজে জায়নামাজ পেলো, সেটা বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ালো!
যখন নামাজ শেষে মুনাজাত শুরু করলো, কিন্তু ঐ যে কথায় আছে না, আমরা যাকে নিজের সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপন মনে করি, তার কাছে কষ্টের কথা বলতে গেলে মনে হয় যেন কলিজা ফেটে যাবে। তেমনি নিজের রবের কাছে হাত তুলে বুক ডুকরে কেঁদে উঠে মেহনূর
আর বলে,

— হে দয়াময়, আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আপনি আমার সব গুনাহ মাফ করে দিন, মাবুদ আপনি ছাড়া যে আমার কেউ নেই!
আপনি আমার রব, আমি আপনার বান্দা। আপনি তো বলেছেন,
“তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।”
(সূরা গাফির: ৬০)
হে আল্লাহ, আমার জন্য সব সহজ করুন, আমাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিন। আমার ইজ্জত আর পবিত্রতা রক্ষা করুন। আপনি আমার সব সমস্যার সমাধান করুন। আমাকে শক্তি ও ধৈর্য দিন।
মেহনূরের চোখ থেকে অঝোর ধারায় জল গড়াচ্ছে!
মুনাজাত শেষ করে “! শুধু “لا إله إلا أنت سبحانك إني كنت من الظالمين”
(লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ-জালেমিন) দোয়া একধারে পড়ে যাচ্ছে! কারণ সে আঁচ করতে পারছে ভয়ংকর কিছুই হবে এরপর থেকে!
তখনই দরজা খুলার শব্দে দরজার দিকে তাকায়! ভেবেছিলো সেই ঘৃণিত পুরুষ এসেছে, তবে সে নয়, এশা এসেছে। লক্ষ্য করলো হাতে খাবারের প্লেট!
এশা মেহনূরের সামনে এসে হাঁটু ঘিরে বসে আর খাবারের প্লেটের উপর ঢাকনা সরিয়ে বলে,

— খাইয়ে দেই আমি।
মেহনূর শান্ত গলায় বলে,
— তোর মনে হয় আমার এ খাবার গলা দিয়ে নামবে, এশা?
এশা মেহনূরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— কি করব বল, আমি অসহায়। যদি এই পরিবারে ক্ষমতা আমার কাছে থাকতো, তাহলে আমি নিজে তোকে বাড়ি নিয়ে যেতাম! খেয়ে নে না জান, গতরাত থেকেই কিছু খাসনি, ভাইজান বলল।
মেহনূর দাঁত চেপে বলে,
— আমি এই খাবার খাব না, প্রয়োজনে খিদের যন্ত্রণায় মরে যাব, কিন্তু তাও এই নিকৃষ্ট খাবার আমি খাব না, নিয়ে যা, এশা, নিয়ে যা।
তখনি রুমের দরজা ঠেলে এহসান ঢুকে! মাথা থেকে টুপি খুলে রেখে বলে,

— এশা, তুই যা, ও আমার দায়িত্ব, তাই ওকে খাওয়ার খাবানোর দায়িত্ব টাও আমার।
ভাইজান এর আদেশ শুনে এশা আলগোছে চলে যায়! অতঃপর এহসান মেহনূরের দিকে এগিয়ে আসে, মেহনূর কিছু বলে না! দাঁত চেপে স্থীর বসে তাকে! এহসান ওর সামনে এসে জায়নামাজের উপরে অংশ বাজ করে নেয়, অতঃপর ওখানে বসে প্লেটের খাবার মাখাতে মাখাতে বলে,
— চুপচাপ হা কর, আমি কোনো জোরজবরি করতে চাই না।
মেহনূর দাঁত চেপে বলে,
— আমি খাব না তো বলেছি, তাহলে আমি খাব।
এহসান এসবে পাত্তা না দিয়ে প্লেটে মেঝেতে রাখে আর মেহনূরের গাল চেপে ধরে নিজের বাম হাত! মেহনূরের গালখানা ছিঁড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে, এতটা শক্ত করে ধরেছে এহসান তাকে! মেহনূরের গাল চেপে ধরে খাবার ঢুকিয়ে দেয় মুখে! এভাবে কয়েক লোমকা ভাত খাবানোর পর কিছু না বলে উঠে যায়, অতঃপর এক গ্লাস পানি মেহনূরে সামনে রেখে রুম থেকে চলে যায়!
নিচে এসে দেখতে পায় যে সবাই একসাথে বসে আছে সোফায়! এশা কে ইশারা দিতেই এশা এহসানের হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে নেয় আর একটা পানির বাটি এগিয়ে দেয়, এতে এহসান হাত ধুয়ে সবার সামনে যায়! তখনি তার বাবা মুস্তফা বলেন,

— এহসান, তুমি সবসময় নিজের মর্যি মতো কাজ করছো, আমি সবার সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করলেও তোমার বেলায় করিনি, কারণ আমি জানতাম তুমি সব বুঝেশুনেই করো বা করবে! কিন্তু আমার এ বিষয়টা খুব বাজে লাগছে যে মেহনূরের বাপ চাচার উপর জিদ মেটাতে গিয়ে তুমি তার জীবন নষ্ট করে দিলে!
এহসান শান্ত সুরে বলে,
— ওকে তো আমি বিয়ে করতে চাইনি, ওর বাপ চাচা আমার হাতে ওর হাতে তুলে দেওয়ার চুক্তি করেছে, তার বদলে ওরা ঐ পশ্চিম বনের সব জমি নিয়েছে, কিন্তু তারপর ওরা ওকে আমার হাতে তুলে দেয়নি, তাই আমি নিজেই নিয়ে নিয়েছি নিজের জিনিস! বুঝলে আব্বা? এতে অন্যায় নেই “!
এমরান তখন বলেন,
— আমরা বুঝেছি, কিন্তু মেহনূরকে দিয়ে তুই কি করবি? তুই যদি বলতি ওর চেয়ে উওম কাউকে তোর জন্য এনে দিতাম!
এহসান কাঠ গলায় বলে,

— আমার মেহনূরের চেয়ে উওম কাউকে প্রয়োজন নেই, আমার শুধু মেহনূরে কেই প্রয়োজন!
এনাম বলেন,
— কিন্তু ও তোর ভাতিজি হয়ে কি করে তুই ওর সাথে তাকবি বল?
এহসান সোজাসাপটা উত্তর দেয়,
— ও আমার ভাতিজি, ফুফু, খালা যাই হোক, এখন ও আমার বিবাহিত স্ত্রীর, আমার হালাল নারী, তাই ওর সাথে থাকব আমি যে করিই হোক!
এ বলে সোজা সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায়! রুমে গিয়ে দেখে মেহনূর বেলকনির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! বুঝে যায় নিশ্চয়ই পালানোর পথ খুঁজছে!
তাই ওর নিকট গিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলে,
— পালানোর সুযোগ করছিস?

একমনে পালানোর প্ল্যান করছিল এখানে দাঁড়িয়ে, মেহনূর হঠাৎ পেছন থেকে এহসানের কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায়, তবে নিজেকে সামলিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলে,
— হ্যাঁ করছি, তোর কি তাতে, শয়তান পুরুষ!
এতে এহসান টাশ করে মেহনূরের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়! এতটা জোরে থাপ্পড় খেয়ে মেহনূরের দুনিয়া ঘুরতে থাকে! চোখে অন্ধকারি শুধু ভেসে উঠে! যখন এই থাপ্পড়ের ঢাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়, তখনই এহসান ওর বাম হাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে! আর দাঁত চেপে বলে,

আত্মার আগলে পর্ব ১

— এর পর থেকে যদি আমায় অসভ্যের মতো সম্মোধন করেছিস, তাহলে এমন হাজারটা চড় পড়বে তোর গালে, বেয়াদব নারী, নিজের স্বামীর সাথে কথা বলার ধরন শিখিসনি!
মেহনূর শুধু আহত চোখে এহসানের দিকে তাকিয়ে থাকে! এহসান মেহনূরকে কোলে তুলে নেয় আর বিছানায় শুয়ে দেয়! মেহনূর এখনো পাথর হয়ে আছে!

আত্মার আগলে পর্ব ৩