আপনাতেই আমি পর্ব ১২
ইশিকা ইসলাম ইশা
জীবনে স্বপ্ন দেখা কখনো বন্ধ করা উচিত নয়।স্বপ্ন দেখলে আল্লাহ নিশ্চয়ই পূরন করতে সাহায্য করে।রিদির ছোট জীবনে একটা বড় স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া।আর আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দেয় নি বরং দু হাতে ঢেলে দিয়েছে।সে চান্স পেয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজে।এটা জানার পর থেকেই মজনু কে জরিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। মজনু উরফে তীব্র যদিও জানে তবুও মজনুর হিসেবে সে সল্প পড়ালেখা করেছে।তাই সে বার বার ইশারায় জিজ্ঞেস করছে কি এসেছে রেজাল্ট। কিন্তু রিদি খুশিতে কেঁদেই কূল পাচ্ছে না,আবার বলা।অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে বলে,
আমি চান্স পেয়েছি মজনু সাহেব!আমি পেরেছি আপনার কষ্ট সার্থক করতে।
মজনু রিদিকে কোলে নিয়ে ঘুরতে থাকে।রিদি খিলখিল করে হেসে উঠলো। এতোক্ষণ কান্না করে এখন হাসছে।
মজনু রিদিকে নামিয়ে খাতায় লিখে বলে,
আমি খুব খুশি বেগম সাহেবা। এভাবেই এগিয়ে যান “আমার জান”।
রিদি লেখাটা পড়ল এগিয়ে এসে হাত ধরল মজনুর। দুহাতে মজনুর দুহাত ধরে ঠোঁট ছোয়াল।মোহনীয় গলায় বলল,
“আমার জীবনে আসার জন্য ধন্যবাদ…”
আবারো ঠোঁট ছোয়াল অপর হাতে,
“ভরসার হাত আমার মাথায় রাখার জন্য ধন্যবাদ ”
গলা জড়িয়ে পা উঁচু করে ঠোঁট ছোঁয়াল কপালে,
“আমাকে এতো এতো ভালবাসার জন্যও ধন্যবাদ”
আমার কাছে এমন কিছু নেই যা দিয়ে আপনার দেওয়া এতো ভালোবাসা আমি পুষাতে পারব।যদি থাকত তাহলে আমি জান টাও দিয়ে দিতাম।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মজনু রিদির ঠোঁটে হাত দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।রিদি মজনুর দৃষ্টি দেখে জরিয়ে ধরল মিনমিন করে বলল,
বাপরে এমন রাগী লুক দেওয়ার কি আছে! শুধু বলেছিই তো!
মজনু রিদির চুলের মুঠি ধরে মুখটা উচু করে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।মজনু মুখে না বললেও চোখে কথা বলছে।রিদি পড়তে পারে সেই চোঁখের ভাষা,
আপনি এমন কথা কখনো বলবেন না।বললে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না বেগমজান।
রিদি চোখের ভাষা বুঝলেও আপাতত বর কে ঠান্ডা করতে হবে ভেবেই,ফট করেই ঠোঁট ছোয়াল মজনুর ঠোটে। মজনু থতমত খেয়ে হাত আলগা করতেই রিদি ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিতে গিয়েও পারল না। মজনু ধরে ফেলল।দুষ্টু হেসে এগিয়ে আসে জরিয়ে ধরলো।রিদি ছটফট করছে। মজনু সেসব তোয়াক্কা না করে মুখটা রিদির ঠোঁটের দিকে এগিয়ে নিতেই বাইরে থেকে ডাক দেয় রিদ….
রিদের কন্ঠ শুনে রিদি ছুটে চলে যায়। এদিকে মজনু উরফে তীব্র বিরক্ত হল।বৌটা তার চালাক হয়ে গেছে নেশা ধরিয়ে পালিয়ে যায়।ধুররর!!!আর এই সালা মশাই ও আসার সময় পেল না।ছ্য বৌয়ের আদর না পেলে জীবনটা বৃথা না!!
রিদ বোনের রেজাল্ট শুনে দ্বিতীয় বার খুশি হয়েছে।প্রথমে রিদির এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট।গোল্ডেন পেয়েছে এবার ঢাকা মেডিকেল চান্স।সেই খুশিতে মজনুকে জরিয়ে ধরে রিদ। মজনু ও পিঠে হাত রাখে। মজনু উরফে তীব্র জানে রিদের বয়স খুব বেশি না তবে বুঝদার ছেলে।ফুপির পেটের সন্তান হলেও একজন ও ফুপির মতো হয়নি।রিদ খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলে,
কি যে বলি না আপনাকে মজনু মিয়া।আপনি তো দেখছি ম্যাজিক ম্যান।আপনাকে আজ থেকে মজনু ভাই ডাকব। তীব্র সম্মতি দিল। রিদ খুশিতে বোনের বাসায় ই খাওয়া-দাওয়া করল।
রিদি তোর হাতের খাবার অনেক মিস করি!!
রিদি উদাস হয়ে বলল,
আমার বাড়িতেও তো আসতে পারো ভাইয়া।
রিদ রিদির উদাস মুখ দেখে বলল,
আরে এমন উদাস হস কেন??আমি আর আগের মতো বাসায় আসি না।খুব দরকার না হলে।না তুই থাকিস,না রুপ।তাই আর আসা হয় না।রুপের মেয়েকে সেদিন দেখলাম একদম রুপের মতো।মতো কিছুটা রাগি বটে।নিশ্চয় চাচার গুন পেয়েছে।মজনু কেশে উঠল।রিদি পানি এগিয়ে দিল।
মজনু ভাই আপনি ঠিক আছেন??
মজনু মাথা নাড়ায় সে ঠিক আছে।
রিদি মজনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় এরপর জিঙ্গেস করে,
মামু কেমন আছে??
রিদ খেতে খেতে বলে,
মামুর সাথে প্রায় দেখা হয় কাজের জন্য।ভালো আছে তাছাড়া মামুদের এতো এতো ব্যবসা দেখতে দেখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তীর ভাই আর মামুকে।
তীব্র চৌধুরী নাকি গায়েব হয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না।মামু এদিকে অস্থির হয়ে যায় মাঝে মাঝে। কয়দিন আগে অসুস্থ হয়েও পড়েছিল।তীব্র চৌধুরী খুব স্বার্থপর।মামুর অসুস্থতার জন্য শুধু সে দায়ী।
তীব্র উরফে মজনু নিজের নামে এতো কথা শুনেও চুপ থাকল। তবে বাবার অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি সে অবগত নয়।
দুপুরে খাবার থালাগুলো ধুয়ে ঘরেরই যাচ্ছিল রিদি, হঠাৎ ই আমেনা বেগম কে দেখে থেমে যায়,
আপনি!!!
আমি আসতে পারি না!!
রিদি হাসল, নেএী আমেনা বেগমের একজন চাকরের বৌয়ের সাথে দেখা করতে আসায় কৌতুহল হল আরকি!!
রিদি!!
এসব ছাড় তোকে নিতে এসেছি চল।
কোথায়??
কোথায় আবার বাসায়!
কার বাসায়??
কার বাসা মানে!ভুলে গেলি নাকি!
আপনি যে বাসার কথা বলছেন তা আমার জন্য একটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ ছাড়া কিছুই না।
বেশি কথা বলিস না রিদি চল আমার সাথে!!
কেন??কেন যাব আমি? আপনার কথা মতো বিয়ে করে চলে এসেছি তো!!কোন দাবি নিয়ে তো যাই নি।আর না কোনদিন যাব।
ভালোই জানিস বেশি কথা পছন্দ না আমার।চল আমার সাথে।
আপনি আমাকে জোর করতে পারবেন না ভুলে যাবেন না আমি অন্য কারো বৌ।
দেখ রিদি তোর ভালোর জন্যই তোকে যেতে বলছি।চল এসব বস্তিতে থাকতে হবে না তোকে।
এটা বস্তি না আমেনা বেগম এটাই আমার স্বর্গ।আপনার ঐ আলিশান বাড়িতে শুধু জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম।এখন আমি ভালো আছি দয়া করে আমাকে বিরক্ত করবেন না।
ঠাসসসসস….
আমার মুখের উপর কথা শিখেছিস!এতো সাহস কিভাবে হল।এই বস্তির ছেলের সাথে থেকে আমাকে সাহস দেখাচ্ছিস।তুই চিনিস আমি কে??চল আমার সাথে।রিদি যেতে না চাইলেও আমেনা বেগম টেনে নিয়ে যেতে থাকে।
ছাড়ো আমাকে!আমি যাব না। মজনু সাহেব..
হুট করেই থেমে যায় আমেনা বেগম।রিদিকে টেনেও যখন আসছে না তখন পিছনে ঘুরে দেখ মজনু রিদির এক হাত ধরে আছে। মজনু কে দেখে আমেনা বেগম ক্ষিপ্ত মেজাজে বলে,
ছাড় ওকে!!শর্ত মোতাবেক তোর ৮ মাসের সময় শেষ।তোর টাকা তুই পেয়ে যাবি। ছাড়…..
রিদির মায়ের কথা এসে বারি খায় মস্তিষ্কে “শর্ত মোতাবেক তোর ৮মাসের সময় শেষ” রিদি সল্প আওয়াজে উচ্চারণ করল,
“শর্ত”………….
মজনু তখনো রিদির হাত ধরে আছে।এবার ধীরে এগিয়ে এসে আমেনা বেগমের হাত থেকে রিদির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে টেনে বুকে চেপে ধরল।রিদি নিশ্চুপ হয়ে পড়ে রইলো মজনুর বুকে।তার মাথায় ঘুরছে শর্ত আর মন !!সেতো মজনুর স্পর্শে শান্ত।
আমেনা ক্ষিপ্ত মেজাজে বলল,
ওকে ছাড় ফক্কিনির বাচ্চা।তোর সাহস কতো তুই আমার হাত থেকে ওকে ছাড়িয়ে নিস।চিনিস আমাকে!!
জানে মেরে ফেলব!!
মজনু উরফে তীব্র রাগল না।আসলে রাগ হলো না।তবে ভাবল কিছু।ফুপিটা যদি জানত কার সামনে দাঁড়িয়ে সাহসের কথা বলছে তাহলে!!
তাহলে আবার কি!সে ফুপিকে সাহসের ডেফিনেশন বুঝিয়ে দিত না!অবশ্যই দিত!তীব্র বিশাল বড় আফসোস করল মনে মনে ফুপিকে সাহস এর ডিফিনেশন বুঝাতে না পেরে ।ফুপির দিকে থেকে চোখ সরিয়ে তাকল বৌয়ের দিকে।কিভাবে আদুরে বিড়ালের মতো শান্ত হয়ে মিশে আছে বুকে।বৌ এভাবে লেপ্টে থাকলে তার আদর পায় না বুঝি!! কিন্তু শাশুড়ি উরফে ফুপির সামনে তো আর আদর করতে পারে না। যদিও এসবে তার কিছু যায় আসে না। কিন্তু মজনু রুপে ব্যাপরটা খারাপ দেখাবে বোধহয় ভেবেই তো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে!
এই ফক্কিনির বাচ্চা ছাড় ওকে!!
মজনু বিরক্ত হল।কি ছাড়! ছাড় করছে!! এতো কিছু কি সে ছাড়ার জন্য করছে নাকি।বাললল!!আর এই লাবিব একটা কাজ এতো দেরি করে করে কেন?ধুরররর!!!!
এদিকে বৌ তার ভীষণ ভয় পেয়েছে। ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে। মজনু বুঝতে পারল বেশি চাপ নেওয়াই এমন হয়েছে।
আমেনা আবারো তেরে আসতে নিলে হাতের ফোন বেজে ওঠে। বিরক্ত হয়ে ফোন ধরতেই মুখের রং পাল্টে যায়।
কিহহহহহহ!!!!!!
……….
কিভাবে!!!
………….
আমি আসছি!
আমেনা চিন্তিত হয়ে চলে যায়।তীব্র হাসে।মনে মনে বলে আমার বৌকে ফুলের টোকাও যে দিবে তাদের জন্য নিজ হাতে শাস্তির ব্যবস্থা করব না আমি!!!এতোই সোজা তার বৌ কে নিয়ে যাওয়া! আপনার পরিকল্পনা আমি কখনো স্বার্থক হতে দিব না ফুপি+শাশুড়ি। তবে আমার বৌ ঠিকই বলে,
“রক্ত কথা বলে”……..বলেই ডেভিল হাসল।এবার তাকাল বৌয়ের দিকে।রিদি মজনুর বুকে নাক,মুখ চেপে দুহাতে পাঞ্জাবির দুপাশ ধরে আছে।রিদি বুকে ঠোঁট লাগিয়ে রাখায় বিরবির করে কিছু বললে ফিল করতে পারল মজনু। কিন্তু মুখটা নিচু করে শুনতে চেয়েও পারল না।তাই কোলে তুলে রুমে নিয়ে আসল। ভয়ে বিছনায় বসাতে চেয়েও বসল না রিদি।
রিদি আপাতত হুসে নাই।তার মাথায় আছে একটা কথা মা তাকে নিয়ে যাবে,মজনুর থেকে আলাদা করে দিব।মায়ের ভয়ংকর রুপের সাথে পরিচিত সে।তার হিসেবে তো মজনু শান্ত ,আর মা ভয়ংকর।বেচারি তো আর জনে না যাকে শান্ত ভাবছে সে কেমন ভয়ংকর।
মজনু বুঝল বৌয়ের ভয়।তবে এখন ভয় ভাংগাতে ইচ্ছে করল না।ধীরে ধীরে পিঠটা এলিয়ে দিল বিছানায়। রিদিকে নিজের উপর ভালোভাবে মিশিয়ে নিল যেন রিদি বাচ্চা।এবার মজনু মুখটা একটু এগিয়ে নিল পরপর অধর ছোয়াল কপালে। শুনতে পেল রিদির বিরবিরানি,
আমি যাব না…
মজনু সাহেকে ছেড়ে যাব না…
আমি যাব না….
আমি যাব না….
আমাকে যেতে দিয়েন না মজনু….
আমি যাব না…
মজনু শুনল।একহাতে জরিয়ে অন্য হাত মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবল ,
কখনো সত্যি টা জেনেও কি এতোটায় ভালোবাসবেন বেগমজান”!!!বেসেন কিন্তু!!আপনার ভালবাসা ছাড়া বেঁচে থাকতে পারব না তা নয়, আপনার ভালবাসা ছাড়া আমি বাঁচতে চাই না।
উহু…..
আপনাতেই আমি পর্ব ১১
এসব ছাড়াছাড়ি বাদ।আমি কখনো আপনাকে আমার থেকে দূরে থাকতে দিবো না।তাতে যা হোক।আমি প্রস্তুত!!!!!
মজনু মুখটা একটু নিচু করল।রিদি ঘুমাচ্ছে দেখে আদুরে গলায় ধীরে ধীরে বলল,
আমার আদুরে বৌ আপনি….
আপনাকে না ছাড়ব…
না ছাড়তে দিব!!!!