আপনাতেই আমি পর্ব ১৩

আপনাতেই আমি পর্ব ১৩
ইশিকা ইসলাম ইশা

চারদিকে শুনশান নীরবতা শহরের তুলনায় গ্রাম অধিক শান্ত বিশেষ করে রাতে। তেমনিই গ্রামিন পরিবেশে চাঁদের আলোও মনে হয় যেন বেশি উজ্জ্বল শহরের থেকে।সেই উজ্জ্বল জোৎস্না আলোতে চন্দ্র বিলাস করছে রিদি মজনু। বারান্দায় একটা দোলনা করেছে মজনু,তাতেই বসে চন্দ্র বিলাস করছে দুইজন। দুইজনেই চুপচাপ আছে।
রিদি মজনুর দিকে তাকিয়ে দেখল সে তার দিকে তাকিয়ে আছে,রিদি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে বলল,
মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে আপনার??
মজনু না বুঝে ভু কুঁচকে তাকাল ইশারায় বলল কিসের??
আমাকে বিয়ে করার!!
মজনু থমকানো দৃষ্টিতে তাকালো দিদির দিকে।রিদি বলতে শুরু করল,আম্মা যে বলল আপনার আমাকে বিয়ে করার ৮মাস শেষ।
মজনু অসহায় চোখে তাকাল,খাতা কলম নিয়ে লিখল কিছু,

আমার কাছে কোন অপশন ছিল না বেগম সাহেবা। বিশ্বাস করুন!আপনার মায়ের শর্ত মোতাবেক আপনার ১৮বছর হওয়া পর্যন্ত আপনি আমার বৌ হয়ে থাকবেন।আমি ভালোবাসি আপনাকে বেগম সাহেবা।আপনাকে পেতে আপনার মায়ের শর্ত মেনে নিয়েছি।তবে বিশ্বাস করুন আমার লক্ষ্য আপনাকে নিজের করে পাওয়া ছিল তা ৮মাসের জন্য না সারাজীবন এর জন্য।
রিদি তাকালো মজনুর দিকে চোখ মিথ্যা না বললেও আপাতত সে মানতে পারছে না।
আচ্ছা মজনু সাহেব!আম্মা আমাকে নিয়ে চলে যেতে চাইছে কেন??
যদিও তীব্র জানে কেন তার ফুপি রিদির ১৮হওয়ার অপেক্ষা করছে কিন্তু মজনু হিসেবে সে অস্বীকার করল সে জানে না।
রিদি আবারো বলল,
আমার মনে হয়,আমি মরে গেলে সব ঝামে……………
আহহহহহহহহ………
রিদি মজনুর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
ইসসস এভাবে কেউ কামড়ে ধ……..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদি থেমে যায় মজনুর লাল হয়ে আসা চোখ দেখে।রিদি ভরকে যায়।কিসের আর জোৎস্না বিলাশ মজনু রেগে দোলনা থেকে নেমে চলে যায়।
রিদি উঠলো না।দোলনায় শরীর এলিয়ে শুয়ে রইলো।দোলনা বেশ বড় হওয়াই আরামে শোয়া যায়। গলায় হাত দিতেই জ্বলে উঠলো। কিছুক্ষণ পর কাগজের টুকরা ছুরে মারল মজনু।রিদি কাগজ টা নিয়ে পড়ল,
মরবেন কেন??আমাকেই মেরে ফেলুন!!
রিদি হাসল,
উহু….ভুল হয়ে গেছে তো! আমি মরব না প্রমেস।অনেক বছর বাঁচব !আপনার বেগমজান হয়ে।
রিদির কথায় মন গলল না মজনুর।তার এখনো অনেক রাগ হয়ে আছে। মজনু উরফে তীব্র তো ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। তখনি ঠাসস করে দিতো কিন্তু মজনুর চরিত্র বহাল রাখতে মারতে আর পারল না। তাছাড়া রিদিকে ঢোকা দিলেও ব্যাথা তার হয়।কি এক অশান্তিতে আছে সে। মজনু খাতায় লিখল,
বাঁচতে হবে না।মরে যান।আমি তো ভালো না।আমি তো আপনাকে শর্ত দিয়ে বিয়ে করেছি।আমার চোখে তো আপনি ভালবাসা দেখতে পান না।

রিদি হাসল,
সত্যি মরে গেলে পরে কিন্তু পাবেন না।
ছ্যাত করে উঠলো তীব্রর ভেতরে।এতে তীব্র বেশ বিরক্ত।বৌয়ের কিছু হওয়ার কথা শুনলে এমন ছ্যাত করে উঠতে হবে কেন এই মনকে!!এই মনের কি আর কোন কাজ নাই সারাক্ষণ বৌ বৌ করে। বালললল সব!!!তার মন আজকাল তার কন্ট্রোল এ থাকে না।ধুর!!!! সে কি বৌকে কিছু হতে দিবে!!যার জন্য এতো কিছু করছে তাকে মরতে দিবে!!এতো সোজা!!তীব্র চৌধুরীর কলিজায় হাত বাড়ালে সে কি সেই হাত সোকেশে রেখে দিবে সাজিয়ে!হাতের মালিক সহ করবে পাঠিয়ে দিবে না!! তীব্র রেগে রিদির কাছে দোলনায় গিয়ে রিদির উপর শুয়ে পড়ল।রিদি এতো ভারি শরির নিজের উপর নিতে হিমশিম খেল।
এভাবে মেরে ফেলবেন নাকি??
মজনু কিছু বলল না বরং আরো শক্ত হলো।
রিদি বুঝল মজনু কে এখন বলললেও সে সরবে না।নিজে সহ্য করে হাতটা মজনুর মাথায় রাখল ধীরে ধীরে হাত চালাল মজনুর চুলে।মজনুর রাগ কমল মনে হয়।মুখ উঠিয়ে একবার রিদিকে দেখে ঠোঁট ছোয়াল কামড় দেওয়া জায়গায়।রিদি কেঁপে উঠলো।সরাতে চাইলে সরল না মজনু। গলায় মুখ গুঁজে সেভাবেই সুয়ে থাকল।রিদির শরীর শিহরিত হলেও কিছু করার নাই। চুপচাপ পড়ে রইলো সেভাবে।একসময় ঘুমিয়ে পড়ল। রিদি ঘুমিয়ে পড়েছে তীব্র উঠে বসল। বৌয়ের শাস্তি আপাতত শেষ। কিন্তু এখানে ঘুমানো যাবে না।তাই রিদিকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে আসল।এরপর রোজকার মতো রিদিকে বুকে টেনে ঘুমিয়ে পড়ল।

শহরে পারি জমিয়েছে রিদিতা মজনু।রিদির ভর্তি,কলেজ, পড়াশুনার জন্য ঢাকা শহরে আসতেই হচ্ছে। কোথায় থাকবে,কি করবে জানে না রিদি। মজনু বলেছে,”আমি সব সামলে নিবে শুধু ভরসা রাখেন বেগমজান”।রিদি ও আর কোন প্রশ্ন করে নি সে নিজের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করে মজনু কে। তাছাড়া মজনু বলেছে সেখানে পৌঁছে সব বলবে।
রিদির পাশে দাঁড়িয়ে আছে মজনু। চোখে মুখে একরাশ বিরক্ত।বাসের ঠেলাঠেলিতে সে বেজায় বিরক্ত।যদিও মজনু অনেকবার বলেছে প্রাইভেট গাড়ি করে যাবে কিন্তু রিদি মানা করেছে।এতো টাকা খরচ করে প্রাইভেট গাড়ি করার কোন দরকার নেই। একটু কষ্ট করে বাসেই যেতে পারবে।যদিও তীব্রর কাছে পুরো বাস খালি করা কোন সমস্যা না। সমস্যা হল এতে রিদির মনে ডাউট হবে।তাই ঠেলাঠেলি করে ভেতরে ঢুকলেও বসার সিট পায়নি।তাই বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছিল। মজনু বিরক্ত জীবনে কোনদিন বাসে চড়েছে বলে জানা নেই।বাসে অনেক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।ধাক্কাধাক্কিতে রিদিতা এদিক ওদিক হচ্ছে।মজনু টেনে রিদিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়।

পাঞ্জাবির দুটো বোতাম খোলার কারনে মুখ গিয়ে ঠেকেছে লোমস বুকে।নাকে বাড়ি খাচ্ছে মোহনীয় ঘ্রান। মজনুর শরীরের ঘ্রাণ সবচেয়ে পছন্দের ঘ্রান রিদিতার।তাই বুকে মুখ লুকিয়েই আছে।মজনু ও দু হাতে আগলে নিয়ে আছে।অন্যকারো সামান্য ছোঁয়াও আর গায়ে লাগছে না।সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দুহাতে জড়িয়ে ধরেছে রিদিতা। মজনু একটু পরেই টেনে একটা সিটে বসিয়ে দেয় রিদিতাকে।রিদিতা পাশে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে বসে আছে।আর তার পাশেই বডিগাড এর মতো দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় মানুষ।রিদিতার একহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অন্যহাতে সিটের মাথা ধরে দাড়িয়ে আছে। পাশের মেয়েটা বার বার ওদের দিকে তাকাচ্ছে। হয়তো ভাবছে ছেলেটা মেয়েটাকে এমন ভাবে আগলে রাখতে যেন সে ছোট বাচ্চা।রিদিতা ব্যাপারটা দেখে আড়ালে হাসল। একটু পরেই মেয়েটা উঠে দাড়াই।রিদি তাকাল মেয়েটার দিকে।মেয়েটার চোখ মুখে আতঙ্ক। হঠাৎ কি হল!!!মেয়েটা রিদিতার পাশ থেকে উঠে ভীর ঠেলে পেছনে চলে গেল ।রিদি আবাক হল।বাস তো থামে নি তাহলে এই মেয়েটা এভাবে ভয়ে উঠে গেল কেন??মেয়েটা উঠতেই মজনু ইশারায় রিদিকে সরতে বলল রিদি সরে বসতেই রিদির পাশে বসে পড়ল।চোখে ,মুখে চরম বিরক্ত।রিদি হাসল।মাথা এলিয়ে দিল মজনুর কাধে।সাথে সাথেই আগলে নিয়ে ইশারায় বললো,
কিছু লাগবে??শরীর খারাপ করছে??
রিদি না বললে আবারো আগলে নিল।।ইশশশ জীবনের এতোগুলো বছর পর আগলে রাখার মানুষ পেয়েছে সে।ভেবেই হাসল রিদিতা।

বাস থামতেই সব যাএী রা নেমে যাচ্ছে।রিদিরা নেমে আসল। মজনু ব্যগ নিয়ে একটা রিসকা ডেকে আনল।ঠিকানা দেখাতেই রিসকা আলা বিনা বাক্যে যেতে চাইল।রিসকায় উঠে রিদিকে এক হাতে জরিয়ে ধরল। রিদি আশেপাশে ফিসফিস করে বলল,
কি করছেন ছাড়ুন।সবাই দেখবে।তছাড়া আমি পড়ব না।
কিন্তু মজনুর কোন হেলদোল নেই।আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইল রিদি। দিদি দেখল যান্ত্রিক শহর।ভীর ঠেলে রিসকা নির্জন রাস্তায় চলছে। আশেপাশে শুধু গাছ আর গাছ।রিসকা থেকে সামনে একটা বিশাল বড় বাড়ি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই বাড়ির আশেপাশে আর কোন বাড়ি নেই।আমি মজনুর দিকে তাকালাম,
আমরা কি এই বিশাল বাড়িতে থাকব??এতো বড় বাড়ি কার??
মজনু পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে দেয়,

আমি আগে এই বাড়িতেই কাজ করতাম।এই বাড়ির লোকজন এখানে থাকে না তারা দেশের বাইরে থাকে।যখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যায় তখন ওনি আপনাদের বাসার ঠিকানা দিয়ে বলে এই বাসায় গিয়ে তার নাম বললে কাজ দিবে।ওনি আরো বলেন যদি কখনো কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকে তবে এই বাড়িতে যেন থাকি আর আমাকে চাবি ও দেয়। কিন্তু আমি তো আমার ঠিকানা পেয়েছি তাই আর আসতে হয়নি।”আপনি ই আমার শেষ ঠিকানা।আপনার পর আর কোন ঠিকানা নেয় আমার”
আমি ওনাকে ই মেইল করে বলেছিলাম ছিলাম।ওনি বলেছেন আমি এই বাড়ির যত্ন করলে তারা মাসে মাসে আমাকে কিছু টাকা পাঠাবেন।এতে আমরা থাকতেও পারব আর টাকা দিয়ে সংসার ও চলবে।আর আপনার পড়াশোনার যাবতীয় খরচের জন্য আমি কাজের চেষ্টা করব।

আমি জানতাম আপনি আমাকে এসব জিঙ্গসা করবেন তাই আগেই চিঠি লিখে রেখেছি।
রিদিতা অবাক হল । মজনুর ভালবাসার প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে অবাক হয়।এতো ভালোবাসা তার কপালে ছিল জানলে কতোই হিংসা করত নিজেকে। রিদিতা কিছু বলার আগেই গাড়ি থামল বিশাল বাড়ির সামনে।মজনু সাবধানে রিদিতা কে নামিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে দিল।রিদিতা কে ভেতরে যেতে বলে রিসকা আলার টাকা দিতে গেল।রিদিতাকে ভেতরে যেতে দেখে মজনু উরফে তীব্র রিকশা আলা উরফে তার গাড কে বলল,
ভেতরে অল ওকে??
জি বস!!
রিদিতা ভেতরে ঢুকে বেশ অবাক হয় এটা বাড়ি না রাজমহল।নিশ্চয় এই বাড়ির মালিক ভীষন ধনী।এতো বড় আর সুন্দর বাড়িতে সে থাকবে ভেবেই অবাক হল। মজনু ভেতরে ঢুকে দেখল রিদিতার আবাক হওয়া।এটা কার বাসা সেটা আর বললাম না।জানেনেই তো।
মজনু রিদির হাতে একটা কাগজ দিল,

আপনাতেই আমি পর্ব ১২

রিদি পড়ে,
কোন রুমটা আপনার পছন্দ বেছে নিন।
রিদি আরো অবাক হল!!মানে সে রুম ও পছন্দ করতে পারবে!!রিদি মজনুর সাথে ঘুরে দোতলায় একটা বেলকনি যুক্ত রুম পছন্দ করল। মজনু কিছুটা অবাক হল।বৌ তার রুম ই পছন্দ করেছে দেখে।এতে মজনু কিছুটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।বৌ তার কথা বিশ্বাস করেছে এতেই খুশি।

আপনাতেই আমি পর্ব ১৪