আপনাতেই আমি পর্ব ২১

আপনাতেই আমি পর্ব ২১
ইশিকা ইসলাম ইশা

বেকানো বিল্ডিং এর নিজস্ব রুমে বসে আছে তীব্র।লাবিব বসকে শান্ত হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল,
বস রুমের সব নতুন করে সেট করা হয়েছে।
তীব্র সেই কথার প্রতি উওরে বলল,
ডক্টর কি বলেছে??
লাবিব হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।ডক্টর!!ডক্টর এর সাথে কি তার কথা হওয়ার কথা ছিল!! মনে পড়ছে না।তীব্র লাবিবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল।
মেয়েটার কথা বলছি!!
লাবিব অবাক হল।তীব্র লাবিবের এমন হতভম্ব আর অবাক হওয়ার বিষয়টিতে বিরক্ত হল।কটমট করে বলল,
১০মিনিট পর সব ইনফরমেশন চায়।
লাবিব চটজলদি উঠে দাঁড়ালো।ঠিক ১০ মিনিট পর এসে দাড়াল তীব্রর সামনে,0০0
বস রিদি গলায় চাপ লাগার ফলে কথা বলতে একটু কষ্ট হবে। কিছুদিনের মধ্যেই সেরে যাবে। এখনো কথা বলতে পারবে কিন্তু এতে একটু আস্তে বলতে হবে।

লাবিব থামল। তাকিয়ে দেখল বসের মুখ ভঙ্গি।এর মাঝেই প্রবেশ করে মেলিনা।মেলিনাকে দেখে ভু কুঁচকে তাকাল লাবিব।এতো অপমান করার পরেও এই মেয়ে আবারো হাজির। লাবিবের বিরক্ত লাগল।মান সম্মান নাই নাকি!মেলিনার দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বসের দিকে তাকাল।তীব্রর দৃষ্টি ল্যাপটপের স্কিন এ।একধ্যানে তাকিয়ে দেখছে কিছু।মেলিনা অভিমানে মুখ ফুলিয়ে বসল তীব্রর পাশে। কিন্তু তীব্রর কোন পাওা নেয়।সে সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দেখছে রিদিকে।রিদিকে দেখেই আশেপাশে খেয়াল নাই।রিদি তখন বাইরে রুপালির, রিদ আর রাদিফের সাথে কথা বলছে।হালকা আওয়াজ হওয়াই ভালো ভাবে বুঝল না।তবে রাদিফের কথায় স্পষ্ট বুঝল রাদিফ পছন্দ করে রিদিকে।রিদির মুখে ভয়ের ছাপ দেখে ভু কুঁচকে তাকাল।তীব্রর এসব গবেষনার মাঝেই মেলিনা তীব্র কে সিডিউস করতে নিজের দিকে টানতে থাকে। কিন্তু তীব্র কে একবিন্দু ও নাড়াতে পারল না। সিসিটিভি তে রিদিকে আর দেখতে পেল না তীব্র।এতেই সে বিরক্ত হল।মেলিনা নামের কেউ নেই এমন ভেবেই বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল তীব্র।মেলিনা নাছোর বান্দার মতো তার সাথে লেপ্টে থাকতে চাইছে।বেলকনি থেকে রিদিকে দেখেই দেখতে লাগল তীব্র।জানেনা কি দেখছে। কিন্তু ভালো লাগছে।রিদিকে দেখতে।মনের ভেতর অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ইচ্ছে করছে ছুয়ে দিতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিদির দৃষ্টি তার উপর পড়লেও সে তাকিয়ে ই আছে রিদির দিকে।তীব্রর তাকানোতে রিদির ভয়ার্ত মুখটা দেখে ভালো লাগলো তীব্রর।রিদির মুখভঙ্গি দেখে বুঝল মেলিনার করা কাজে সে আবাক হয়েছে।হয়তো সে খারাপ ও ভাবছে।ভাবুক তার কি!!
তবে রিদির চিৎকার করে বলা কথাটাই মুখে হাসি ফুটল তীব্রর।যা নজরে আসল না।তাই তো এতোক্ষণ চুপচাপ ছিল।চোখের ভাষা বুঝতে পারল যেন। কোথাও তো মায়া আছে তীব্রর প্রতি ।কেন থাকবে এই মায়া?কেন ওর আঘাতে সে কষ্ট পাবে?সে তো নিজেই এতো কঠিন ভাবে আঘাত করল তাকে।তার তো এখন তীব্র নামক ব্যাক্তিকে ঘৃনা করার কথা। তাহলে কেন দেখাচ্ছে এই মায়া।কথা বলতে কষ্ট হলেও সে কেন চেচালো।তীব্রর এতো এতো ভাবনার কারনে মেলিনার কথা এখনো কানে যায় নি।তবে মেলিনার ছোয়াই বিরক্ত হয়ে সরিয়ে দিল। কিন্তু ছেছেরা মেয়ে আবারো তার কাছে আসতে চাইছে রেগে থাপ্পর মারে।যার ফলে ঙ্গান হারিয়ে ফেলে মেলিনা। তীব্র চরম বিরক্ত হল।যাকে কঠিন আঘাত করল সে মরল না।আর সামান্য থাপ্পর এ অঙ্গান।ধূররররর….

বিরক্ত হয়েই ফোন করল লাবিব কে,
রিদি কোথায়??
সরাসরি রিদির নাম শুনে ভরকে গেল লাবিব,
রিদি কোথায় তা তো সে জানে না।লাবিব কিছু বলার আগেই তীব্র বলল,
২ মিনিটে কল করে বল রিদি কোথায়??
লাবিব দু মিনিটের জায়গায় ৪মিনিট পর কল করল,
বলল রিদি বাগানের দিকে বসে আছে।তীব্র শুনেই ছুটে আসল।লাবিব নিচেই ছিল। তীব্র বিরক্ত কন্ঠে বলল উপরের টাকে সামলা।
তীব্র দূর থেকে রিদির কান্নামাখা মুখটা দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বসল রিদির পাশে।রিদি বুঝতে যখন পারল তখন রিদির চোখে ভয় দেখে রাগ হলো তীব্রর।সে কি কিছু করেছে এখন যে তাকে ভয় পেতে হবে??
তীব্র সামনে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।রিদির দিকে ফিরতেই রিদির ভয়ার্ত মুখেরকথা শুনে কোথাও যেন খারাপ লাগল।
এগিয়ে দিল ফাস্ট এইড বক্স। কিন্তু রিদি যখন করতে চাইলো না। ইচ্ছে করেই ভয় দেখালো।রিদি ক্ষত পরিষ্কার করলেও যথাসম্ভব চেষ্টা করছে যেন রিদির হাতের ছোয়া না লাগে। কিন্তু সে তো সামান্য ছোয়াতেই যেন শিহরিত হল।

তীব্র ভাবল কিছুক্ষন !!আচ্ছা সে কি চায় মেয়েটাকে। আকর্ষন কাজ করছে!মানে একবার তাকে পেলেই কি এসব অশান্তি থেকে মুক্তি পাবে??এই রাগ,এই খারাপ লাগা,এই তীব্র ব্যাথা বুকের মাঝে,এই ক্ষিপ্ত মেজাজ।এতোকিছু নিতে পারছে না সে।এক রাতের জন্য পেলেই কি সে এসব থেকে মুক্তি পাবে। ভাবনা থেকেই যখন রিদিকে বলল তখন রিদির জবাব সে চুপচাপ শুনল। আফসোস করে বলল
এতো ছোট মেয়ে রেট বুঝবে কেন??উফফফ কি যন্ত্রণা??
তবে রিদির কথাগুলো শুনে মেজাজ ক্ষিপ্ত হলেও রাগ হল না তীব্রর।প্রথম কারো এতো কথা শুনেও রাগ হলো না বরং সে ট্যাঠা মেজাজে ভাবল পতিতালয় তো মেয়েদের জন্যও খোলা উঠিত।মেলিনা সহ সব মেয়ে তো তার রুপ দেখেই তাকে পেতে চাই।

দুনিয়াতে এতো থাকতে এই মেয়ের জন্য সে এমন ফিল করবে কেন??অসহ্য লাগছে না এসব তার?সে কি এতো ভালো মানুষ যে ভালোবাসা নামক জঙ্জালে জড়াবে!!
হলুদের ফাংশন হলেও তীব্র ভেতরে না গিয়ে সেখানে বসে থেকেই রিদির যাওয়া দেখল।সে ভাবল অনেক ভাবল।মেয়েটা তাকে ফাসিয়েছে বুঝল।তীব্র তবুও মানতে চাইল না।রিদ যখন রিদি কে নিয়ে গেল। অদ্ভুত ভাবেই শূন্যতা অনুভব করল।তবে নিজেকে এতোটা পাওা দিল না। কিন্তু আর এই বাসায় থাকা সম্ভব হল না।সেই রাতেই চলে গেল আমেরিকা।
অদূর আমেরিকা থেকেও রিদি যখন মাথা থেকে নামল না।তখন তীব্র ফিরে এলো।দুই মাস থেকে ফিরে আসলেও ১মাস দেশে থেকেই রিদির আশেপাশে থেকেছে।নিজে সব জেনেছে।জেনেছে কিছু সত্য,জেনেছে কিছু রহস্য, উদঘাটন করতে পেরেছে কিছু ঘটনা।ফাইনালি বাড়িতে ফিরে বিয়ে নিয়ে চলা কথা তার কোন ধ্যান নাই।বিয়ে, কন্যা এসবে তার কোন ইচ্ছে নেই।বিয়েও সে করে নি। কিন্তু পরে রুপালির ব্যবহার তাকে অবাক করেছে। রুপালি নিঃসন্দেহে সুন্দর। কিন্তু সে তো কারো নেশায় আসক্ত।পারছে না তো প্রিয় মানুষ টা ছাড়া অন্য কাউকে স্পর্শ করতে।
এরপর তীব্র দেশে থেকেই রিদির আশেপাশে থাকতে লাগল।তীব্র বুঝল রিদির আশেপাশে সে শান্ত।
এক কথায় সে ভালো থাকে।

৬টা মাস ধরে রিদির জন্যই তো চাকরের কাজ ও করেছে সে।তবে রিদির সঙ্গ যেন সব ব্যাথার মলম হয়ে গেছে।যদিও তার আশেপাশে সবাই ছন্দবেশে তার ই লোক।
রিদির উপর হওয়া অন্যায় অত্যাচার ও কমিয়েছে।ছক কষেছে নতুন খেলার। মজনু সেজে তার বেগমজানের মজনু সাহেব হয়েছে।তার ভালবাসায় সিক্ত করেছে নিজেকে। পূর্ন করেছে নিজেকে।কঠোর পরিশ্রম এর ফল হিসেবে পেয়েছে রিদির অমূল্য ভালবাসা।যার জন্য সে প্রায় ২বছর ধরে অপেক্ষা করেছে।সব নিজের প্ল্যান মতোই হয়েছে।তবে সে এই সব কিছু রিদির জন্যই করছে।তীব্রর জন্য রিদির মনে মায়া ছিল আগেই জানত তীব্র। কিন্তু মজনু হিসেবে ভালবাসা যেন উজারকৃত পবিত্র ভালবাসা।এই ভালবাসা টুকুই তো তার চায়।

আপনাতেই আমি পর্ব ২০

ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।তীব্র ভাবনা থেকে বের হয়ে রিদির দিকে তাকালো।রিদি এখনো বিড়াল ছানার মতো গুটি সুটি মেরে আছে তীব্রর সাথে।তীব্র রিদিকে শুইয়ে দিল বিছানায়।নীজেও রিদির পাশে শুয়ে গলায় মুখ গুজল রিদি ঘুমের ঘোরেই ছাড়াতে চাইলে শক্ত করে চেপে ধরলো রিদিকে।বৌ ঘুমিয়েছে না!এবার সেও শান্তি মত ঘুমাবে!!!

আপনাতেই আমি পর্ব ২২