আপনাতেই আমি পর্ব ২২
ইশিকা ইসলাম ইশা
তীব্রর সাথে একটা অপারেশন শেষ করে বের হয়েছে মাত্র রিদি আর আবির।রিদি মনোযোগ দিয়ে দেখেছে সবকিছু। প্রথমে ভয় পেলেও নিজেকে সামলেছে।
আমার কেবিনে আসুন আপনারা দুইজন। প্রশ্ন করব কিছু।আবির রিদি কেবিনে আসলে তীব্র অপারেশন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করে। আবির বলতে পারলেও রিদি পারল না!কারন তীব্র রিদিকে ইচ্ছে করে কঠিন পড়া ধরেছে।যা একবার দেখে শেখা সম্ভব নয়। তীব্র আবির কে চলে যেতে বলে।সাথে রিদিতা উঠতেই তীব্র বলে,
আপনি কয়টা প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছেন মিসেস রিদিতা???
রিদি হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।আমতা আমতা করে বলল ১টা।
আর আমি কয়টা প্রশ্ন করেছি??
৫টা।
বাকি ৪টা এখানে বসে রিভাইজ করে।আমাকে দিয়ে তবেই যাবেন।
রিদি কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকাল তীব্রর দিকে,
তীব্র বৌয়ের এমন কাঁদো কাঁদো মুখ দেখে মনে মনে হাসল।আহারে জানপাখিটা!! কিন্তু সেও বা কি করবে? মজনু হোক বা তীব্র বৌ তো তারই। সারাক্ষণ তার সামনে বসে থাকবে তার বৌ। তাছাড়া আজ রিদির আর ক্লাস ও নেই। বৌকে সারাক্ষণ দেখার এই সুযোগ সে কিছুতেই মিস করবে না।বৌ তার!তার কাছেই থাকুক।
রিদি উপায় না পেয়ে সেখানে বসে পড়ল।নোট দেখে পড়ায় মনোযোগ দিল। তীব্র বসল অপর পাশের সোফায়।সেখান থেকে রিদিকে দেখতে সুবিধা হচ্ছে তার।মনে মনে ভাবল পিচ্চি বৌকে সে বেশিই ভালোবাসে।বৌ তার আকর্ষন না,বৌ তার আসক্তি, নেশা তার ।এই নেশা কখনো কাটবে !! উহু কাটবে না!
রিদির পড়ার মাঝে মনে হচ্ছে তীব্র ওকে দেখছে।ঘার ঘুরিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে দেখল তীব্র মনোযোগ দিয়ে ফাইল দেখছে।মনের ভুল মনে করে রিদি আবারো পড়ায় মনোযোগ দিল।
একটু পরেই প্রবেশ করল ড: প্রিয়ন্তি টকটকে লাল লিপস্টিক দিয়েই মুখ ভর্তি মেকআপ।পড়নের শাড়িটাও একটু অশীল্ল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তীব্র তুমি এসেছ হসপিটালে বলো নি কেন??
তীব্র ফাইল দেখতে দেখতে বলল,
সময় পায় নি!কাজে এসেছি।
প্রিয়ন্তি কিছু বলার আগেই চোখ যায় রিদির দিকে।রিদি কে দেখে ভূ কুঁচকে বলে,
তুমি এখানে!!
রিদি তীব্রর দিকে তাকাল। তীব্র নিশ্চুপ হয়ে ফাইল দেখছে। তীব্র কিছু বলছে না দেখে রিদি যেই বলতে যাবে তীব্র বলে,
ওর থাকার কারন আছে তাই এখানে আছে।আপনার এখানে এখন থাকার কোন কারন আছে কি?মিস প্রিয়ন্তি।
প্রিয়ন্তি হচকচিয়ে তাকাল তীব্রর দিকে।আসলে এখানে সে তো তীব্রর কথা শুনে এসেছে। কয়েকদিন সে ছুটিতে ছিল তাই তীব্র যে আরো দুদিন আগে এসেছে তা জানতো না।না হলে প্রথম দিনই এন্ট্রি নিত সে।তীব্রর কথায় প্রিয়ন্তি বলল,
আসলে আমি জানতাম না তুমি এসেছ তীব্র!জানতে পেয়েই আজ ছুটে এসেছি।
তীব্র বলে,
ছুটে আসতে কে বলেছে আপনাকে? আস্তে ধীরে আসলেই পারতেন!
প্রিয়ন্তি মিষ্টি কন্ঠে বলে,
তুমি কি রাগ করেছো তীব্র??চল না কোথাও গিয়ে বসি।
এখানেও বসার জায়গা আছে!
না মানে বাইরে কোথাও বসি!
তীব্র বিরক্ত হল,
হসপিটালে আসলেই চিপকু গামের মতো লেগে থাকে এই মেয়ে।বসার সময় নেই মিস।আপনি আসতে পারেন!
প্রিয়ন্তি তীব্রর আরো একটু কাছে বলল,
আমরা কি একাকী সময় পার করতে পারি না তীব্র। শুধু তুমি আর আমি!!বলে তীব্রর হাত ধরে আবারো বলে ,আচ্ছা এই মেয়েটার জন্য কি তুমি!!!
তীব্র এবার ক্ষিপ্ত হল। একবার হাতের দিকে তাকিয়ে ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকালো প্রিয়ন্তির দিকে। প্রিয়ন্তির কথা থেমে গেল,ছেড়ে দিল হাত।অনেক সাহস করেই সে এগিয়েছিল তীব্রর দিকে কারন তীব্র আজ তার সাথে কথা বলছে।অন্য কোন দিন সে কাজ ছাড়া ১সেকেন্ড ও থাকে না।কথা বলা তো দূর।তীব্রর মুড ভালো দেখে এগিয়েছিল,সে ভেবেছিল আজ একান্ত কিছু সময় কাটাবে তাই তো আজ এমন অন্যরকম ভাবে এসেছে।শাড়ি পরে আকর্ষন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
তীব্র রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
মেয়েটা না ওর নাম রিদিতা তী….।রিদিতা।কল হার রিদিতা। আর আপনি আমাকে তুমি বলছেন যে!আপনার থেকে আমি বয়সে আর পেশার দুটো জায়গায় ই সিনিয়র।সো কলড মি স্যার।
আর একটা কথা মিস প্রিয়ন্তি ,তীব্রর ভালো মানুষি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকে না।মনে রাখবেন।
প্রিয়ন্তি তীব্রর ঠান্ডা হুমকিতে ভয় পায়।কলিজা শুকিয়ে যায়।রিদির কানে ওদের কথা আসলেও সে তাকাই না।নিজের মতো সিট এ মনোযোগ দেয়। তবে তীব্রর লাস্টের কথা শুনে তাকাই ওদের দিকে। প্রিয়ন্তি ম্যাম এর ভয়ার্ত মুখ দেখে আফসোস করল রিদি। প্রিয়ন্তি চোখ ঘুরিয়ে একবার রিদির দিকে তাকালো। স্টুডেন্ট এর সামনে অপমান হয়তো ইগো তে লাগল।তবে তীব্রর রিদির নাম না বলার জন্যে তাকে অপমান করাই তার ইগো হাট হল বেশি। সামান্য একটা স্টূডেন্ট এর সামনে এতো অপমান। প্রিয়ন্তি চুপচাপ বেরিয়ে গেল।রিদি তাকালো তীব্রর রাগী মুখের দিকে।নীল চোখ যেন মূহুর্তে লাল হয়ে গেছে।রিদি নিজেও ভয় পেল।তাই চুপচাপ বসে নিজের কাজে মন দিল।
তীব্র আবারো নিজের কাজে মনোযোগ দিল।রাগ হলেও সে শান্ত আছে।রিদি ভয়ে আর কিছু বলল না।হুট করেই তীব্র এসে রিদির পাশে বসল।রিদি চমকে উঠে বললো,
এখানে কি করছেন??
বসেছি।চোখে দেখো না!!
আপনার বসার জায়গার অভাব!!ওদিকে গিয়ে বসুন!
কেবিন আমার এখানেই বসব!
অসভ্য পুরুষ!দূরে গিয়ে বসুন!!
কি বললে!!
শুনেন নি! খবরদার যদি আমার দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছেন তো!! প্রিয়ন্তি ম্যামের মতো একদম আমাকে ভাবার চেষ্টা করবেন না।আমি বিবাহিত!!
আমি তো এতো কিছু ভাবি নি।তুমি যখন বলছ ভাবা যায়!! বিবাহিত হলেও চলবে আমার!!
রিদি রেগে গেল,
কয়টা লাগে আপনার!! খবরদার আমার সাথে অসভ্যতামি করেছেন তো!!
তো!!!.
আপনাতেই আমি পর্ব ২১
রিদি হাতের কাছে পানির গ্লাস নিয়ে বলল,
এটা দিয়ে পেট ফুটো করে দিব!!
তীব্র হাসল, ভীষণ মজা পেল যেন,
রিদি রাগে আরো লাল হল তীব্রর হাসি দেখে।রিদি বিরক্ত হয়ে বলল আমার হয়ে গেছে।এখন কি আমি যেতে পারি।
তীব্রর মুড ঠিক হল।তাই আর আটকে রাখল না।যেতে দিল।মনে মনে ভাবল “মাঝে মাঝে বৌয়ের সাথে একটু ঝরগা করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি।